মানবগণ তাহাদের প্রতিবাসীকে প্রেম করে কিনা, তাহা প্রদর্শনার্থে ঈশ্বর অধুনা তাহাদিগকে এক সুবর্ণ সুযোগ দান করিয়াছেন । যে ব্যক্তি ইশরকে এবং তাহার সহ-মানবকে প্রকৃতই প্রেম করে, সে দীন-দরিদ্র, ক্লেশাপন্ন, আহত ও মৃতকল্প লোকদের প্রতি কৃপা প্রদর্শন করিয়া থাকে । প্রত্যেকের অবহেলিত কার্য্য সুসম্পন্ন করিতে এবং মানবজাতির মধ্যে সৃষ্টিকর্তার প্রতিমূর্ত্তি পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করিতে ঈশ্বর প্রত্যেক মাববকেই অনুরোধ করিতেছেন ।1WM; CCh 235.1
এই কার্য্য সম্পাদনার্থে উদ্যমের, আত্ম-ত্যাগের ও আত্মোৎসর্গের প্রয়োজন । কিন্ত ঈশ্বর আপনার একজাত পুত্রকে আমাদের নিমিত্ত দান করিয়া ত্যাগস্বীকারের যে চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করিয়াছেন, তাহার সহিত আমাদের নগণ্য ত্যাগস্বীকারের কী তুলনা হইতে পারে ?26T 283; CCh 235.2
উত্তরাধিকারসূত্রে অনন্ত জীবন লাভের সর্ত্তাবলী সম্বন্ধে আমাদের ত্রাণকর্তা অতি প্রাঞ্জল ভাষায় বর্ণনা করিয়াছেন । যাহারা আমাদের মনোযোগের, সহানুভূতির, ও প্রেমের ভিখারী, লূক ১০ : ৩০-৩৬ পদের আহত ও লুণ্ঠিত ব্যক্তি দ্বারা তাহাদিগকে য়নির্দেশ করে । সে সকল অভাবগ্রস্ত ও দুর্ভাগ্য মানব আমাদের দৃষ্টিপথে পতিত হয়,— তাহারা যে কেহই হউক না কেন,— আমরা যদি তাহাদের তুচ্ছ করি, তবে আমাদের অনন্ত জীবন লাভের কোনই আশা নাই ; কারণ আমরা ঈশ্বরের কোনই দাবী-দাওয়া পালন করিতেছি না । এই সকল দুঃস্থ লোক হয়তো আমাদের বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজন নহে বলিয়া আমরা তাহাদের প্রতি দয়ালু ও সহানুভূতিসম্পন্ন নহি । যে দ্বিতীয় আজ্ঞাটীতে শেষ ছয়টী আজ্ঞা ঝুলিতেছে, সহমানবের প্রতি সহানুভূতিহীন হইলে আপনি সেই আজ্ঞাটী লঙ্ঘন করিতেছেন । আবার এক আজ্ঞায় স্থলিত হইলে সকল আজ্ঞার জন্যই দায়ী হইতে হয় । দশ আজ্ঞার প্রথম চারিটী আজ্ঞায় ঈশ্বরের যে দাবীদাওয়া রহিয়াছে, যাহারা অভাবগ্রস্ত ও ক্লেশাপন্নদিগের প্রতি উদাসীন, তাহারা সেই সকল দাবীদাওয়া পালনের নিমিত্ত আপন আপন হৃদয় একাগ্র করে না । আর ইহাতে প্রতিমাগণ, হৃদয় ও প্রীতি সমূহ অধিকার করিয়া লয়, ফলে ঈশ্বর অবমানিত হইয়া হৃদয়ের উপরে আর একচ্ছত্র রাজত্ব করেন না ।33T 524; CCh 235.3
যেমন লৌহ-লেখনী দ্বারা প্রান্তরের উপরের লেখা হইয়া থাকে, তেমনি বিবেকের উপরে লেখা হইবে যে, যে বাক্তি দয়া , সহানুভূতি ও ধার্ম্মিকতার অবমাননা করে, যে কেহ দরিদ্রদিককে তুচ্ছ করে, ক্লেশাপন্ন মানবজাতির অভাব অভিযোগের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে, যে কেহ নির্ম্মম ও অভদ্র, চরিত্র গঠন কার্য্যে ঈশ্বর তাহার সহিত সহযোগিতা রক্ষা করিতে পারেন না । অন্যের প্রতি আমরা যখন কোমল সহানুভূতি-সম্পন্ন হই এবং তাহাদের অভাব মোচনের জন্য সর্ব্বপ্রকার সুযোগসুবিধা দান করি ও তাহাদের উপকার সাধন করি, তখনই অতি সহজে মনের ও অন্তঃকরণের উৎকর্ষ সাধিত হয় । আমাদের নিজেদের জন্য যত অধিক পারি, তত অধিক গ্রহণ করা ও দখলে রাখা আত্মার পক্ষে হানিকর । কিন্ত খ্রীষ্টের দলে থাকিয়া যাহারা ঈশ্বর-নির্দিষ্ট কার্য্যই করিবে, তাহারা খ্রীষ্টের যাবতীয় গুণাবলী ধারণ করিবে ।46T 262; CCh 236.1
খ্রীষ্ট, সামাজিক উচ্চপদ ও জাতিভেদ মানেন না, তিনি জাগতিক সম্মান ও ধনসম্পত্তি হেয় জ্ঞান করেন । কিন্ত চরিত্রের ও উদ্দেশ্যে সম্পাদনের উচ্চমূল্য দিয়া থাকেন । যাহারা সবল ও জগতের কাছে প্রীতির পাত্র, তিনি তাহাদের পক্ষ অবলম্বন করেন না । পতিত মানবের উদ্ধার কল্পে জীবন্ত ঈশ্বরের পুত্র আপনাকে অবনত করিলেন । অঙ্গীকারের ও আশ্বাসের বাক্য দ্বারা হারাণ ও ধবংসোম্মুখ ব্যক্তিগণকে রক্ষার নিমিত্ত তিনি প্রতি নিয়ত চেষ্টা করিতেছেন । ঈশ্বরের অনুগামীগণের মধ্যে কে দুঃস্থগণের প্রতি সদয় ব্যবহার করিবে ও পর দুঃখে দুঃখিত হইবে, স্বর্গীয় দূতগণ তাহা মনোযোগ পূর্ব্বক দেখিতেছেন । ঈশ্বরের প্রজাগণের মধ্যে কাহারা যীশুর প্রেম প্রদর্শন করিবে, দূতগণ তাহা সুক্ষভাবে সন্দর্শন করিতেছেন ।56T 268; CCh 236.2
আপনি কেবল পরোপকার করিবেন, ঈশ্বর মাত্র ইহাই চাহেন না, কিন্ত তিনি চাহেন, আপনার প্রফুল্ল বদন, আপনার আশার বাণী ও আপনার হস্ত দ্বারা আঁকড়াইয়া ধরণ । প্রভুর ক্লেশাপন্নদিগের সহিত সাক্ষাৎ করিতে গিয়া এমন অনেককে দেখিতে পাইবেন, যাহাদের মধ্য হইতে আশা চলিয়া গিয়াছে ; এইরূপ লোকদের হৃদয়ে আশার সঞ্চার করিয়া দিবেন । যাহাদের জীবন-খাদ্যের প্রয়োজন, ঈশ্বরের বাক্য হইতে তাহদিগকে জীবন-খাদ্য দান করিবেন । কেহ বা এমন আত্মিক-ব্যাধিগ্রস্ত, যাহার কোন জাগতিক মলম নাই, কিংবা চিকিৎসক তাহা সুস্থ করিতে পারে না ; এইরূপ লোকদের জন্য প্রার্থনা করিবেন ও তাহদিগকে যীশুর নিকটে লইয়া আসিবেন।66T 277; CCh 237.1