খ্রীষ্ট, জাতিভেদ, পদভেদ ও ধর্ম্মভেদ মানিতেন না । অধ্যাপক ফরীশিগণের ইচ্ছা ছিল, যেন স্বর্গীয় দান সকল কেবল তাহাদের দেশের ও তাহাদের জাতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, পৃথিবীতে ঈশ্বরের অন্য যে সকল পরিবার বা বংশ আছে, তাহারা যেন সেই সকলের অধিকারী হইতে না পারে । কিন্ত খ্রীষ্ট বিচ্ছেদের সকল প্রাচীর ভাঙ্গিতে আসিয়াছিলেন । তিনি জগৎকে দেখাইতে আসিয়াছিলেন যে, বায়ু ও আলো কিংবা বর্ষার ধারা — যাহা পৃথিবীকে সতেজ করে, তাহা যেরূপ সীমাবদ্ধ নহে, তাঁহার অনুগ্রহ ও প্রেমের দানও তদ্রুপ সীমাবদ্ধ নহে । CCh 246.2
খ্রীষ্টের জীবন এমন একটী ধর্ম্মের প্রতিষ্ঠা করিয়াছে, যাহার মধ্যে জাতিভেদ নাই, যে ধর্ম্ম যিহূদি ও পরজাতি, স্বাধীন ও দাস, সকলকে এক সাধারণ ভ্রাতৃত্ব শৃঙ্খলে আবদ্ধ করিয়া ঈশ্বরের সম্মুখে সমান করিয়াছে । শঠতার কোন প্রশ্ন তাঁহার গতি রোধ করিতে পারে নাই । প্রতিবেশী ও বিদেশী, বন্ধু ও শত্রুর মধ্যে তিনি কোন পার্থক্য স্থাপন করেন নাই । জীবন জলের জন্য যে প্রাণ তৃষ্ণার্ত্ত, তাহাতেই তাঁহার হৃদয় অকৃষ্ট হইয়াছে । CCh 247.1
নগণ্য বলিয়া কোন মানবকেই তিনি তুচ্ছ করেন নাই, কিন্ত প্রত্যেক আত্মার জন্য তিনি আরোগ্যকারী রোগ-নিবারক ঔষধ দান করিতে চেষ্টা করিয়াছেন । তিনি যে কোন দলের মধ্যবর্ত্তী হইয়াছেন, সময় ও অবস্থানুযায়ী তাহাদিগকে যথোপযুক্ত শিক্ষা প্রদান করিয়াছেন । মানবগণ তাহাদের সহমানবের প্রতি যে সকল তুচ্ছতাচ্ছল্য বা অবমাননা প্রদর্শন করিয়া থাকে, তাহার প্রত্যেকটি ব্যবহারে, খ্রীষ্টের কেবল এই প্রীতিতি আরও অধিকতর মাত্রায় জন্মে যে, তাঁহার ঐশ্বরিক মানবীয় সহানুভূতি তাহাদের পক্ষে নিতান্ত আবশ্যক । কঠিনতম ও সর্ব্বাপেক্ষা আশাহীন লোকেরাও ঈশ্বরের সন্তানের যোগ্য চরিত্র লাভ করিয়া নির্দ্দোষ ও নিষ্কলঙ্ক হইতে পারে, তাহাদের সম্মুখে এই আশ্বাস স্থাপন করিয়া তিনি তাহদিগকে আশায় উদ্দীপিত করিবার জন্য সর্ব্বদা চেষ্টা করিয়াছেন ।29T 190,191; CCh 247.2
ঈশ্বরের সন্তানগণ খ্রীষ্টে এক বলিয়া জাতি, বর্ণ, পদমর্য্যাদা, ধনৈশ্বর্য্য, জন্মাধিকার, অথবা অর্জিজত বিদ্যার জন্য কেমন করিয়া যীশু জাতি ও সমাজ বৈষম্যের এবং সহমানব বৈষম্যের প্রশ্রয় দিতে পারেন ? খ্রীষ্টে বিশ্বাসীগণ সকলেই সমান, এই মূলতন্ত্রের মধ্যে একতার গুপ্ত রহস্য বিদ্যবান।3R.H. Dec. 22, 1891; CCh 247.3