Go to full page →

মাতৃত্ব ও পিতৃত্ব CCh 375

মাতা হইতে উদ্যত প্রত্যেক নারীর পারিপার্শ্বিক অবস্থা যাহাই থাকুক না কেন, তাহার অবিরত সুখী, প্রফুল্লিত ও তৃপ্ত থাকা প্রয়োজন, কারন ইহাতে তাহার সন্তানগণের যেমন শারীরিক , তেমনি নৈতিক চরিত্রে তিনি ইহার দশগুণ ফল লাভ করিবেন । আর কেবল ইহাই যথেষ্ট নহে । অভ্যাসের দ্বারা আনন্দ-দায়ক চিন্তায় অভ্যস্ত হইয়া তিনি মনকে প্রফুল্ল করিয়া তুলিতে এবং অবশেষে নিজের প্রফুল্ল ভাবের দ্বারা পরিবারস্থ সকলের ও যাহাদের সংস্পর্শে তিনি আইসেন, তাহাদের সকলের মনে এক প্রসন্নভাব আনয়ম করিতে পারেন । আর তাহার শারীরিক স্বাস্থেরও বিলক্ষন উন্নতি সাধিত হইতে পারে । নৈরাশ্যেব ও বিষণ্ণতায় মগ্ন CCh 375.3

থাকিলে রক্ত যেরূপ নিষ্ক্রিয় ভাবে চালিত হইতে থাকে, প্রফুল্ল চিত্তে জীবন যাপন করিলে সেরূপ হয় না, কারন জীবন-উৎসে এই শক্তি সঞ্চারিত হয় । তাহার মনেরব প্রফুল্লতায় তাহার মানসিক ও নৈতিক স্বাস্থ্য সবল হইয়া উঠে । ইচ্ছাশক্তি মনের বিশ্বাসে বাঁধা দান করিতে পারে, আর ইহাতে স্নায়ুগুলি বেশ স্নিগ্ধ থাকে । যে জীবনী শক্তি মাতাপিতা হইতে সন্তানসন্ততিগণের প্রাপ্ত হওয়ার কথা ছিল, তাহা হইতে যাহারা বঞ্চিত হইয়াছে, তাহাদের এই বিষয়ে বিশেষ মনযোগী হওয়া কর্ত্তব্য । ফলতঃ দেহ রক্ষার নিয়মগুলিতে সবিশেষ মনোযোগ দান করিলে, অধিকতর উত্তম ফল লাভ করা যাইতে পারে । CCh 376.1

যে নারী মাতা হইতে আশা করেন, তাহার আত্মা ঈশ্বরের প্রেমে ভরপুর রাখা কর্ত্তব্য । তাহার মনে শান্তি থাকিবে ; খ্রীষ্টের বাক্যানুযায়ী জীবন যাপন করিয়া তিনি যিশুর প্রেমে বিশ্রাম লাভ করিবেন । তাহার স্মরণে রাখিতে হইবে যে, মাতা ঈশ্বরের একজন সহকার্য্যকারিণী । CCh 376.2

স্বামী ও স্ত্রীর পরস্পরের সহিত সহযোগিতা রক্ষা করিতে হইবা । সকল মাতাই যদি তাহাদের নিজেদিগকে ঈশ্বরের বেদীর উপরে উৎসর্গ করিতেন ও তাহাদের সন্তানসন্ততিদিগকে, জন্মের পূর্ব্বে হউক কিংবা পরেই হউক ঈশ্বরের সেবায় উৎসর্গ করিতেন, তাহা হইলে আমাদের এই জগৎটী কতই না সুখের স্থান হইত । CCh 376.3

বহু মাতাপিতা তাহাদের প্রভাবের ফলাফল ক্ষণস্থায়ী বলিয়া মনে করেন ; কিন্তু ঈশ্বর সেরূপ মনে করেন না। ঈশ্বরের দুতের দ্বারা প্রেরিত বার্ত্তা দুই দুই বার অতি গম্ভির ভাবে দেওয়ায় ইহাই প্রতীয়মান হয় যে, অইব বিষয়টী সম্বন্ধে আমাদের সর্ব্বাপেক্ষা মনোযোগ সহকারে চিন্তা করিয়া দেখা কর্ত্তব্য । CCh 376.4

ইব্রীয়মাতাকে (মানোহের স্ত্রী ) ঈশ্বর যাহা বলিয়াছেন। প্রত্যেক যুগের মাতাদিগকে তিনি তাহাই বলিতেছেন । সদাপ্রভুর দুত মানোহকে কহিলেন, ” আমি ঐ স্ত্রী যে সমস্ত কথা বলিয়াছি, সে সকল বিষয়ে সে সাবধান থাকুক ।” সন্তানের মঙ্গলে বাঁধা ঘটে মাতার কু-অভ্যাসে । তাহার বুভুক্ষা ও তাহার প্রবল মানসিক-ভাবগুলি নিয়মের বশীভূত রাখিতে হইবে । সন্তান লাভে মাতা যদি ঈশ্বরের ইচ্ছা পূর্ণ করিতে চাহেন, তবে তাহার কিছু ত্যাগ করিতে হইবে এবং কিছুর বিপরীতে চলিতে হইবে । CCh 376.5

তরুনতরুনিগণের নিমিত্ত জগতের সর্ব্বত্র নানা প্রকার পরীক্ষা ও প্রলোভন বিদ্যমান । স্বার্থপর ও ইন্দ্রিয়াসক্ত জীবন যাপনের দিকে বহু লোকের দৃষ্টি নিবদ্ধ । আমাদের নিকটে যাহা যাহা সুখের বিষয় বলিয়া মনে হইতেছে, সেই সকলের মধ্যে যে কত প্রকার বিপদ গুপ্ত রহিয়াছে এবং উহাদের পরিনাম ফল যে কি ভয়াবহ, তাহা তাহারা সম্যকরূপে হৃদয়ঙ্গম করিতে পারে না । ভোজনেচ্ছা ও কাম-প্রবৃত্তি চরিতার্থের ফলে তাহাদের শক্তি সমূহ ক্ষয় হইয়া যাইতেছে ; আর লক্ষ লক্ষ লোক যেমন এই জগতের জন্য তেমনি পরজগতের জন্য বিনষ্ট হইতেছে । মাতাপিতাগনের স্মরণে রাখিতে হইবে যে, তাহাদের সন্তানসন্ততিগণের এই সকল পরিক্ষার সম্মুখীন হইতেই হইবে । এ জন্য এমন কি সন্তানের জন্মের পূর্ব্বে হইতেই এরূপ ভাবে প্রস্তুত হইতে আরম্ভ করিতে হইবে, যেন সে মন্দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিয়া জয়ী হইতে পারে । CCh 377.1

সন্তানের জন্মের পূর্ব্বে মাতা যদি আত্ম-প্রশ্রয়িনী বা অমিতাচারিনী স্বার্থপরায়ণা, অধৈর্য্যশীলা ও অতিরিক্ত দাবী-কারিণী হন, তাহা হইলে সন্তানের স্বভাবে সেই সকল প্রকাশ পাইবে । এইরূপে বহু সন্তানসন্ততির মধ্যে এমন কতকগুলি মন্দ প্রবনতা জন্মাধিকার সুত্রে প্রবেশ করে, যে গুলির উপরে জয় লাভ করা প্রায় অসম্ভব হইয়া পড়ে । CCh 377.2

কিন্তু মাতা যদি অবিচলিত ভাবে যথার্থ মূলনীতিগুলি পালন করেন, তিনি যদি ধৈর্য্যশীলা ও আত্ম-ত্যাগিনী, দয়াবতী, মৃদুশিলা ও নিঃস্বার্থ-পরায়ণা হন, তাহা হইলে তাহার সন্তানও এই সকল সদ্ গুনের অধকারী হইতে পারে । CCh 377.3

শিশু সন্তান-সন্ততিগন মাতার দর্পন সদৃশ ; ইহাদিগের মধ্যে তিনি তাহার নিজের স্বভাব ও আচার ব্যবহার প্রতিবিম্বিত দেখিতে পান । সুতরাং এই সকল ক্ষুদ্র শিক্ষার্থিগণের সম্মুখে কথাবার্ত্তায় ও আচার ব্যবহারে তাঁহার কতই না সতর্কতা অবলম্বন করা কর্ত্তব্য । তিনি যে কোন গুণরাশি সন্তান-সন্ততিগণের স্বভাবের মধ্যে বিকশিত দেখিতে চাহেন, তাঁহার নিজের সেই সকল গুণের অনুধাবন করিতে হইবে । CCh 377.4