Go to full page →

প্রকৃতিকে ঈশ্বর বলিয়া মান্য করাইবার নিমিত্ত শয়তানের পরিকল্পনা CCh 630

ঈশ্বরের অবিশ্রন্ত ও সরল-সোজা প্রতিনিধিত্ব অস্বীকার না করিলেও মৌলিক উপাদানের ও প্রাকৃতিক ব্যবস্থার উপরে নির্ভর করিয়া অনেকে ঈশ্বরের প্রত্যক্ষ প্রতিনিধিত্বে অন্তর্দৃষ্টি হারাইয়া ফেলে। তাহাদের (লোকদের) ধারণা এই যে, ঈশ্বর ব্যতীত প্রকৃতি স্বীয় পরিসীমার মধ্যে ও স্বীয় কার্য্যক্ষমতা বলে আপনিই কার্য্য করে। তাহারা মনে করে, প্রাকৃতিক ও অপ্রাকৃতিক বা অলৌকিকের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রহিয়াছে। ঈশ্বরের শক্তির সহিত সংযুক্ত না হইয়া সাধারণ ভাবে যাহা কিছু ঘটে, তাহাই প্রাকৃতিক বলিয়া নির্দ্দেশ করা হয় ঈশ্বর। প্রধান শক্তি আরোপিত হয় জড় পদার্থে, আর প্রকৃতিকে করা হয় ঈশ্বর। ইহাই মনে করা হয় যে, কোন কোন ব্যাপারে জড় পদার্থের প্রয়োজন হইয়া উহা এমন নির্দ্দিষ্ট নিয়মের অধীনে চলিতে থাকে, যাহাতে ঈশ্বর নিজেও কোন বাধা দিতে পারেন না ; উক্ত প্রকৃতি কোন কোন গুনে ভূষিত হইয়া প্রাকৃতিক নিয়মের বশতাপন্ন হয় এবং পরে ইহা এই সকল নিয়ম পালন করিতে এবং মূল আদেশানুযায়ী কার্য্য করিতে ব্যাপৃত থাকে। CCh 630.1

ইহা একটী মিথ্যা বিজ্ঞান ; ইহার সমর্থনার্থে ঈশ্বরের বাক্যে কোনই ইঙ্গিত নাই ; ঈশ্বর স্বীয় নিয়মাদি বাতিল করেন না, কিন্তু তিনি ঐ সকলের মাধ্যমে অবিরত কার্য্য করিয়া যাইতেছেন, এবং ঐ সকলকে স্বীয় যন্ত্ররূপে ব্যাবহার করিতেছেন। তাহারা (ঈশ্বরের প্রাকৃতিক নিয়মাদি) আপনা আপনি কার্য্য করিতেছে না ঈশ্বর প্রকৃতিতে অবিরত কার্য্য করিতেছেন। প্রকৃতি তাঁহার দাস, তিনি তাঁহার ইচ্ছামত ইহাকে পরিচালিত করেন। যিনি (ঈশ্বর) স্বীয় ইচ্ছানুসারে আপন সমুদয় কার্য্যের মধ্যে বিচরণ করেন, প্রকৃতি স্বীয় কার্য্যের মধ্য দিয়া সেই ঈশ্বরের কৌশলপূর্ণ উপস্থিত ও কার্য্যকরী প্রতিনিধিত্বের বিষয় সাক্ষ্য দান করে। প্রকৃতিতে নিহিত আদ্য শক্তির প্রভাবে পৃথিবী যে বৎসরের পর বৎসর বদান্যতা সহকারে ইহার ফলফলাদি দান করিতেছে এবং অবিরত সূর্য্যের চতুর্দ্দিকে পরিভ্রমণ করিতেছে তাহা নহে। অনন্ত শক্তির হস্ত অবিরত এই গ্রহটীকে পরিচালিত করিতেছে। ঈশ্বরের শক্তির ক্ষণিক প্রয়োগেই পৃথিবী আপন কক্ষপথে পরিভ্রমন করে। CCh 630.2

মানব-দেহ-যন্ত্রের গঠন কৌশল এরূপ অদ্ভুত যে উহা সম্পূর্ণরূপে বুঝিতে পারা এমন কি সর্ব্বাপেক্ষা বুদ্ধিমান লোকদের পক্ষেও অসম্ভব। দেহ-যন্ত্রটী একবার চালাইয়া দেওয়া হইয়াছে বলিয়া তাহারই ফলে যে উহা অবিরত চলিতেছে বা ক্রমাগত বহিতেছে, এমন নহে। ঈশ্বরেই আমাদের জীবন, গতি ও সত্ত্বা। প্রত্যেকটী শ্বাস-প্রশ্বাস, প্রত্যেকটী হৃদ্‌স্পন্দন চির-বিদ্যমান পরমেশ্বরের শক্তির ক্রমিক প্রমাণ। CCh 631.1

যিহোবার নিগূঢ়তত্ত্বের বিষয় প্রকৃতিতে যাহা কিছু প্রকাশিত হইয়াছে, সর্ব্বশ্রেষ্ঠ মনীষিগণও তাহা বুঝিতে পারে না। ঐশ্বরিক প্রত্যাদেশের এরূপ অনেক প্রশ্ন আছে, যাহার উত্তর অগাধ পণ্ডিতগণও দিতে অসমর্থ। আমরা যেন উত্তর দিতে পারি, এরূপ ভাবে ঐ সকল প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয় নাই, কিন্তু ঈশ্বরের সুগভীর নিগূঢ়তত্ত্বের দিকে আমাদের মনোযোগ যেন আকষিত হয়, আমরা যেন বুঝিতে পারি যে, আমাদের জ্ঞান সীমাবদ্ধ, এবং আমাদের দৈনিক জীবনের পরিস্থিতির মধ্যে এমন বহু জিনিষ আছে, যাহা আমাদের পক্ষে ধারণাতীত ; বস্তুতঃ ঈশ্বরের বিচার সকল কেমন বোধতীত, তাহার পথ সকল কেমন অননুসন্ধেয় ! তাঁহার প্রজ্ঞা ও জ্ঞান কেমন অগাধ ! 48T 259-261; CCh 631.2

এই জগতে যে শিক্ষা আরম্ভ হয়, মানব জীবনে তাহা সমাপ্ত হয় না : ইহা অনন্তকাল চলিতে থাকিবে, চিরকাল ইহার উন্নতি সাধিত হইতে থাকিবে, কস্মিন-কালেও ইহার শেষ হইবে না। ঈশ্বরের আশ্চর্য্য কার্য্যাবলী, বিশ্ব সৃষ্টি ও পালন-কার্য্য, তাঁহার অলৌকিক শক্তির প্রমাণ, এগুলি লোকের মনে প্রতিদিন নূতন নূতন সৌন্দর্য্য ফুটাইয়া তুলিবে। ঈশ্বরের সিংহাসন হইতে যে জ্যোতি বিকীর্ণ হইবে, তদ্দ্বারা দুর্ব্বোধ্য ভাব দূরীভুত হইয়া যাইবে, এবং পুর্বেব যাহা কখনও বুঝিতে পারা যায় নাই, তাহা সহজ-বোধ দেখিয়া লোকে বিস্ময়াবিষ্ট হইবে। 58T 328; CCh 631.3