জ্যোতি ও অভিজ্ঞতা লাভের জন্য পৃথিবীতে খ্রীষ্টের (আপন বলিয়া স্বীকার করা) অনুগামীগণের সহিত কোন সংশ্রব না রাখিয়া অনেকেই কেবল খ্রীষ্টের উপরে নির্ভর করিতে চাহে। কিন্তু আমাদের শিক্ষার নিমিত্ত খ্রীষ্ট যে সকল শিক্ষা ও দৃষ্টান্ত দিয়াছেন, তদ্দ্বারা তিনি ইহার তীব্র প্রতিবাদ করিয়াছেন । খ্রীষ্ট পৌলকে একটী বিশেষ প্রয়োজনীয় কার্য্যের যোগ্য পাত্র করিবার জন্য সোজাই তাঁহার সম্মুখে আনিয়াছিলেন ; তথাপি তিনি তাঁহাকে তখনও সত্য সম্বন্ধে শিক্ষা দেন নাই । তাঁহার গতিরোধের পর, প্রভু যখনই তাঁহাকে চেতনা দান করিলেন, তখনই তিনি বলিয়া উঠিলেন ; — “প্রভু আমি কি করিব ?” তখন ত্রাণকর্তা তাঁহার কর্ত্তব্য সম্বন্ধে সোজাই বলিয়া না দিয়া মণ্ডলীর কাছে যাইতে বলিলেন, যেন কি করিতে হইবে, তাঁহারা তাঁহাকে তাহা বলিয়া দিতে পারেন । যীশু পাপীর বন্ধু, তাঁহার হৃদয় সর্বদাই উন্মুক্ত রহিয়াছে, মানবের দুঃখে তিনি সর্বদাই দুঃখিত; স্বর্গের ও পৃথিবীর সমস্ত কর্ত্তৃত্ব তাঁহাকে দত্ত হইয়াছে ; কিন্ত মানবের পরিত্রাণের ও দীপ্তি লাভের নিমিত্ত যে উপায় নির্দ্ধারিত হইয়াছে, তিনি তাহার অবমাননা করিতে চাহেন না । জগতে দীপ্তি দানার্থে তিনি মণ্ডলীর উপরে যে ক্ষমতা দান করিয়াছেন, সেই ক্ষমতার প্রতি সম্মান প্রদর্শনার্থে তিনি শৌলকে মণ্ডলীর নিকট যাইতে বলিলেন । পৃথিবীতে মণ্ডলী খ্রীষ্টের সুগঠিত দেহ বা প্রতিষ্ঠান ; এই জন্য তিনি চাহেন যে, তাঁহার এই বিধানে সকলে সম্মান প্রদর্শন করে । শৌলের ব্যাপারে অননিয় যেমন খ্রীষ্টের নিদর্শন, তেমনি খ্রীষ্টের প্রতিনিধিরুপে যে পুরোহিতগণ পৃথিবীতে কার্য্য করেন, উনি তাঁহাদেরও নিদর্শনস্বরূপ । CCh 199.3
পৌলের মনপরিবর্ত্তনে আমাদিগকে এমন অত্যাবশ্যক মতবাদ সকল দান করা হইয়াছে, যাহা আমাদের কখনও বিস্মৃত হইয়া কর্ত্তব্য নহে । যে স্থানে মণ্ডলী আছে, সেই স্থানে, ধর্মসংক্রান্ত ব্যাপারে, গঠিত ও স্বীকৃত মণ্ডলীর নির্দেশ ভিন্ন, অন্য কোন অভিঙ্জ্ঞতায় ও কার্য্য সম্পাদনে জগতের মুক্তিকর্ত্তা অনুমতি দান করেন না । CCh 200.1
গঠিত মণ্ডলীর কার্য্য ও ক্ষমতার সহিত ঈশ্বরের পুত্র নিজেকে অভিন্ন করিয়া দিয়াছিলেন । তাঁহার নিরুপিত প্রতিনিধিগণের দ্বারা আশীর্ব্বাদ আসিবে, ইহাই ছিল তাঁহার বিধান ; এইরূপে যে প্রণালী দ্বারা তাঁহার আশীর্ব্বাদ আইসে, তাহার সহিত মানবের সংযোগ বিধান করা হইয়াছিল । পবিত্রগণকে তাড়না করা সম্বন্ধে পৌল নিজেকে সম্পূর্ণ ন্যায়বান বলিয়া মনে করিলেও, তাঁহার নির্ম্মম কার্য্য সম্বন্ধে ঈশ্বরের আত্মা দ্বারা যখন তাঁহার জ্ঞান জন্মিল, তখন দোষী সাব্যস্ত হইয়া শিক্ষার নিমিত্ত শিষ্যগণের আশ্রয় গ্রহণ করিতে বাধ্য হইলেন ।83T 432, 433; CCh 200.2
মণ্ডলীর সকল সভ্য যদি ঈশ্বরের পুত্র ও কন্যা হয়, তাহা হইলে জগতের দীপ্তি হইবার পূর্বে, তাহাদের এক নিয়মানুবর্ত্তিতার মধ্য দিয়া যাইতে হইবে । নর-নারিগণ যে পর্য্যন্ত অন্ধকারে থাকে এবং অন্ধকারে থাকিতে ভালবাসে, জ্যোতির প্রবাহ করিবেন না । যাহারা নিজেদের অভাভ অনুভব করিয়া গভীর চিন্তা, অশেষ উদ্যম, অবিরত প্রার্থনা ও অবিশ্রান্ত কার্য্যে নিজেদিগকে উদ্দীপিত করে, তাহারাই ঐশ্বরিক সাহায্য প্রাপ্ত হইবে । প্রত্যেকেরই নিজের সম্বন্ধে যেমন অনেক কিছু না শিখিবার, তেমনি অনেক কিছু শিখিবারও আছে । পুরাতন অভ্যাস ও রীতিনীতিগুলি দূর করিয়া দিতে হইবে, এবং এই সকল ভুল-ভ্রান্তি সংশোধনের নিমিত্ত প্রবল চেষ্টা করিয়া ও ঈশ্বরের অনুগ্রহে সত্যের নীতিগুলি পূর্ণরূপে পালন করিয়া বিজয়ী হইতে হইবে ।94T, 485, 486; CCh 201.1