মাতাপিতাগণ, আপনাদের সন্তানসন্ততিদের মনে খ্রীষ্টীয় আদর্শ তুলিয়া ধরিবেন ; তাহাদের অভিজ্ঞতার মধ্যে যীশুকে সংযুক্ত করিতে সাহায্য করিবেন ; সর্ব্বাপেক্ষা অধিক মাত্রায় ঈশ্বরের গৃহের সমাদর করিতে এবং হৃদয়ঙ্গম করিতে শিক্ষা দিবেন যে, যখন তাহারা সদাপ্রভুর গৃহে প্রবেশ করে, তখন হৃদয়ে এইরূপ স্নিগ্ধ ও বশ্যতাপূর্ণ চিন্তা লইয়া প্রবেশ করা উচিত যে, “ঈশ্বর এখানে আছেন ; এটা তাঁহার গৃহ । সুতরাং আমার চিন্তা বিশুদ্ধ ও উদ্দেশ্য সৎ হওয়া আবশ্যক । আমার হৃদয়ে কোন অহংকার, কিংবা, ঈর্ষা, কুসন্দেহ, বিদ্বেষ ও প্রতারণা থাকা উচিত নহে, কারণ আমি পবিত্র ঈশ্বরের সম্মুখে আসিতেছি । এই স্থানেই ঈশ্বর আপন লোকদের সহিত সাক্ষাত করেন ও তাহাদিগকে আশীর্ব্বাদ করেন । উন্নত ও পবিত্র ঈশ্বর,— যিনি অনন্ত নিবাসী, তিনি আমার প্রতি দৃষ্টি রাখেন, আমার হৃদয় অনুসন্ধান করেন এবং আমার জীবনের সর্ব্বাপেক্ষা গুপ্ত চিন্তা ও কার্য্য সমূহ অবগত আছেন ।” CCh 218.2
মাতাপিতাগণ ঈশ্বরের দাসগণের পরিশ্রমের যেরূপ মূল্যনিরুপণ করেন, যুবকযুবতিগণ তাহাদের কোমল তিক্ষানুভূতি সম্পন্ন মনে সেইরূপ শ্রদ্ধা পোষণ করিয়া থাকে । বহু পরিবারের নায়কগণ গৃহে আসিয়া কোন কোন বিষয়ের প্রশংসা করিয়া ও কোন কোন বিষয়ের নিন্দা করিয়া উপাসনাটীকে একটী তিব্র সমালোচনার বিষয় করিয়া লন । এইরূপে মানবের নিকটে দেয় ঈশ্বরের বার্তা সমালোচনার, বাদানুবাদের ও ছেব্লামুর বিষয় হইয়া পড়ে । এই সকল অসতর্ক ও অবজ্ঞাসূচক সমালোচনায় যুবকযুবতিগণের মনে যে রেখাপাত হয়, একমাত্র স্বর্গীয় পুস্তকেই তাহা প্রকাশিত হইবে । এই সকল বিষয় যুবকযুবতিগণ এত শীঘ্র লক্ষ্য করে ও বুঝিয়া ফেলে যে, মাতাপিতাগণ তাহা ধারণাও আনিতে পারেন না । তাহাদের নৈতিক বৃত্তি সমূহ এমন এক ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করে যে, তাহা আর কোন কালেও সম্পূর্ণরূপে পরিবর্ত্তিত হয় না । মাতাপিতাগণ তাহাদের সন্তান-সন্ততিগণের হৃদয়ের কাঠিন্য অবলোকন করিয়া ও তাহাদের নৈতিকবৃত্তিগুলি ঈশ্বরের দাবিদাওয়ার বশীভূত হইতে চাহেন না দেখিয়া বড়ই দুঃখ করিয়া থাকেন ।45T 493-497; CCh 219.1
ঈশ্বরের নামের প্রতিও সম্মান প্রদর্শন করা কর্ত্তব্য । হাল্কাভাবে বা চিন্তা না করিয়া কখনই ঈশ্বরের নাম উচ্চারণ করা বিধেয় নহে । এমন কি প্রার্থনার সময়েও বারংবার, কিংবা অনর্থক, ঈশ্বরের নাম লওয়া উচিত নহে । কারণ “তাঁহার নাম পবিত্র ও ভয়াবহ” (গীত ১১১:৯)। ঈশ্বরের নাম লইবার সময়ে দূতগণ মুখ আচ্ছাদন করিয়া থাকেন । সুতরাং পতিত ও পাপী মানব যে আমরা, আমাদের পাপীষ্ঠ ওষ্ঠাধরে কত ভয় ও ভক্তিভরে তাঁহার নাম লওয়া বিধেয় । CCh 219.2
ঈশ্বরের বাক্যের প্রতিও আমাদের শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা কর্ত্তব্য । মুদ্রিত শাস্ত্রীয় বাক্যের প্রতি সম্মান দেখান উচিত , কখনও সাধারণ কিংবা অসতর্ক ভাবে ইহা ব্যবহার করা উচিত নহে । তামাসা বা বা ব্যঙ্গচ্ছলে কখনও শাস্ত্র-বাক্য উদ্ধার করা বিহিত নহে । কারণ, “ঈশ্বরের প্রত্যেক বাক্য পরীক্ষাসিদ্ধ,” “তাহা মৃত্তিকার মুচিতে খাঁটা করা রৌপ্যের তুল্য, সাতবার পরিষ্কৃত রৌপ্যের তুল্য ।” (হিতো ৩০ : ৫ ;গীত ১২ : ৬ । CCh 220.1
সর্ব্বোপরি, সন্তানসন্ততিগণকে শিক্ষা দিতে হইবে যে, আজ্ঞাবহতায়ই প্রকৃত ভক্তি প্রদর্শিত হয় । অনাবশ্যক কোন কিছুই ঈশ্বর আদেশ করেন নাই, সুতরাং তাঁহার কথিত বাক্যে আজ্ঞাবহতা দেখাইলে তাঁহার প্রতি এরূপ প্রীতিজনক সম্মান প্রদর্শন করা হয় যে, অন্য কিছুতেই সেরুপ হয় না । CCh 220.2
ঈশ্বরের প্রতিনিধিগণের, শিক্ষকগণের ও মাতাপিতাগণের—যাঁহারা ঈশ্বরের পরিবর্ত্তে কথা বলেন ও কার্য্য করেন, তাঁহাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করিতে হইবে । তাহাদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করিলে—ঈশ্বরই তাহাতে সমাদৃত হন ।5Ed. 236, 243, 244; CCh 220.3
ঈশ্বরের বিশেষ উপস্থিতিতে যে স্থান পবিত্রীকৃত হই, সেই স্থানের প্রতি কিরূপ সম্মান প্রদর্শন করিতে হইবে, তৎসম্বন্ধে শাস্ত্রে যে সকল অমূল্য বাক্য রহিয়াছে, বৃদ্ধ বৃদ্ধা, যুবক যুবতি সকলেরই তাহা ধ্যান করা বিধেয় । প্রজ্জলিত ঝোপের পার্শ্বে থাকিয়া তিনি মোশিকে আদেশ দিয়াছিলেন, “তোমার পদ হইতে জুতা খুলিয়া ফেল, কেননা যে স্থানে তুমি দাঁড়াইয়া আছ, উহা পবিত্র ভুমি ।” (যাত্রা : ৫)। দূতগণের দর্শন লাভের পর যাকোবও উচৈচঃস্বরে বলিয়াছিলেন, “অবশ্য এই স্থানে সদাপ্রভু আছেন, আর আমি তাহা জ্ঞাত ছিলাম না । ......... এ নিতান্তই ঈশ্বরের গৃহ, এ স্বর্গের দ্বার ।” (আদি ২৮ :১৬, ১৭) ।6GW 178, 179; CCh 220.4
পবিত্র বিষয়াদি সম্বন্ধে ভক্তিভাবে কথা বলিয়া উপদেশের দ্বারা যেমন, দৃষ্টান্ত দ্বারাও তেমনি দেখাইবেন যে, আপনার বিশ্বাসের প্রতি আপনার শ্রদ্ধা অটল । শাস্ত্রীয় বাক্য উদ্ধারকালে তুচ্ছতাচ্ছিল্যরুপে কিংবা হালকাভাবে কোন কথা কস্নিনকালেও আপনার ওষ্ঠ হইতে নির্গত হইতে দিবেন না । যখন হস্তে বাইবেল ধারণ করেন, তখন যেন স্মরণে থাকে যে, আপনি পবিত্র ভূমিতে দাঁড়াইয়া আছেন । দূতগণ আপনার চতুর্দ্দিকে ঘেরিয়া আছেন, যদি আপনার অন্তঃকরণরুপ চক্ষু খোলা থাকিত, তবে আপনি তাঁহাদিগকে দেখিতে পাইতেন । আপনার আচার ব্যবহার এমন সুষ্ঠু হউক যে, আপনি যাহাদের সহিত মেলামেশা করেন, তাহাদের প্রত্যেকের মনে যেন এরূপ ধারণা জাগাইয়া দিতে পারেন যে, আপনি এক বিশুদ্ধ পবিত্র আবহাওয়ার মধ্যে অবস্থিতি করিতেছেন । একটী অনর্থক বাক্য, একটী তাচ্ছিল্যের হাসি, একটী আত্মাকে ভ্রান্তির দিকে লইয়া যাইতে পারে । ঈশ্বরের সহিত অবিরত যোগাযোগ রক্ষা না করার পরিণাম অতিশয় ভয়াবহ ।7FE 194, 195; CCh 220.5