এক সহস্র বহুরর শেষে, খ্রীষ্ট আবার পৃথিবীতে ফিরে আসবেন । তিনি উদ্ধারপ্রাপ্তদের বাহিনীগণ সহ ও অনুচর স্বর্গদূতগণ সহ আসন। তিনি যেমন চরম মহিমা সহ অবতরণ করবেন তিনি দুষ্টদের তাদের নরক যন্ত্রণা গ্রহণ করার জন্য পুনরুখিত হতে আহ্বান করবেন। তারা সাগরের বালুকার ন্যায় অসংখ্য শক্তিশালী বাহিনী নিয়ে আসবে। যারা প্রথম পুনরুথানে পুনরুত্থিত হয়েছে তাদের সাথে কি তুলনা! ধার্মিকগণ চির যৌবন লাভ করবেও সৌন্দর্যময় বক্সে বস্ত্রান্বিত হবে। দুষ্টেরা রােগ-ব্যাধি আর মৃত্যুর চিহ্ন বহন করবে । GrHBen 223.1
ঐ বিশাল জনতার প্রত্যেক চোখ ঈশ্বরের পুত্রের মহিমা দেখাবে । একই স্বরে দুষ্টদের বাহিনী বিস্ময়ে বলে উঠবে, “ধন্য তিনি যিনি প্রভুর নামে আসিতেছেন!” এই উক্তি করার জন্য অনুপ্রাণিত হওয়ার অর্থ এই না যে তারা যীশুকে ভালবাসে। এই সত্য কথাটা অনিচ্ছুক ঠোট দিয়ে জোর করে বেরিয়ে অাসবে। যে ভাবে দুষ্টেরা তাদের কমে গিয়েছিল, একইভাবে খ্রীষ্টের শত্রুভাবাপন্ন হয়ে, এবং বিভ্রাহের একই মনােভাব নিয়ে সেভাবেই তারা বেরিয়ে আসবে। তাদের আর কোন সুযােগ দেয়া হবে না, তাদের পত জীবনের ভুলত্রুটি গুলাে সংশােধনের । এর দ্বারা তাঁর আর কোন লাভও হবে না। সারা জীবনে ব্যবস্থা লন তাদের হৃদয়কে নরম করতে পারেনি। তাদেরকে যদি দ্বিতীয়বার সুযােগ দেয়া হতাে, তাহলে প্রথমবারের মতই আবার তারা অধিকার করে নিত ঈশ্বরের আদেশ কৌশলে এড়িয়ে যেত এবং তাঁর বিরুদ্ধে চরম বিদ্রোহ করত । GrHBen 223.2
খ্রীষ্ট জৈতুন পর্বতের শিখরে অবতরণ করবেন, যেখান থেকে তাঁর পুনরুত্থানের পরে তিনি স্বর্গারোহণ করেছিলেন, এবং যেখানে স্বর্গদূতগণ তাঁর পুনরাগমনের প্রতিজ্ঞা পুনরুক্তি করেছিলেন । ভাববাদী বলেন, “আমার ঈশ্বর সদাপ্রভু আসিবেন, এবং তােমার সঙ্গে পবিত্রগণ সকলেই আসিবেন।” “আর সেই দিন তাঁহার চরণ সেই জৈতুন পৰ্ব্বতের উপরে দাঁড়াইবে, যাহা যিরূশালেমের সম্মুখে পূর্ব দিকে অবস্থিত; তাহ-ত জৈতুন পৰ্বতের মধ্যদেশ পূর্বদিকে ও পশ্চিমদিকে বিদীর্ণ হইয়া অতি বৃহৎ উপত্যকা হইয়া যাইবে, পৰ্বতের অর্ধেক উত্তরণির ও অর্ধেক পণিদিকে সরিয়া যাইবে। “আর সদাপ্রভু সমস্ত দেশের উপরে রাজা হইবেন; সেই দিন সদাপ্রভু অদ্বিতীয় হইবেন, এবং তাহার নামও অদ্বিতীয় হইবে।” সখরিয় ১৪:৫, ৪, ১। নূতন যিরুশালেম যেমন, এর তীব্র উজ্জ্বল জ্যোতিসহ, স্বর্গ থেকে নেমে আসবে, এবং এটি বিশুদ্ধ ও প্রস্তুত করা স্থানের উপরে বিশ্রাম নেবে, আর খ্রীষ্ট, তাঁর লােক ও স্বর্গদূতগণসহ, সেই পবিত্র নগরে প্রবেশ করবেন । GrHBen 223.3
এখন সর্বশক্তিমানের বিরুদ্ধে শেষ মহাযুদ্ধের জন্য শয়তান প্রস্তুত হবে । যখন তাঁর সমস্ত ক্ষমতা ও তাঁর প্রতারণার কাজ তাঁর কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছিল, মন্দতার রাজাকে দুর্দশা ও নিরানন্দতায় ফেলেছিল; কিন্তু যখনই দুষ্ট মৃতেরা জেগে উঠলাে ও সে তাঁর পক্ষে মহাজনতা দেখল তাঁর দূরাশা জেগে উঠলাে; এই মহাযুদ্ধ ছেড়ে না দেবার জন্য সে সিদ্ধান্ত নিল । সে তাঁর এই পতাকাতলে হারানাে মহা সৈন্যদলকে পরিচালিত করবে এবং তাদের মাধ্যমে পরিকল্পনা সম্পাদন করবে। দুষ্টের শয়তানের বন্দী । খ্রীষ্টকে প্রত্যাখান করে তারা বিদ্রোহী নেতার আইনকে গ্রহণ করেছে। তারা তাঁর পরামর্শ গ্রহণ করতে প্রস্তুত এবং তাঁর আহবানে সাড়া দিতে প্রস্তুত । তথাপি তাঁর প্রাথমিক ধূর্ততায় বিশ্বস্ত থেকে, সে নিজেকে শয়তান বলে স্বীকার করল না। সে নিজেকে এই পৃথিবীর রাজকুমার, সে এই পৃথিবীর মালিক বলে দাবী করল এবং উত্তরাধিকার অন্যায়ভাবে তাঁর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে বলে দাবি করল। সে নিজেকে তাঁর প্রতারিত প্রজাদের কাছে তাদের উদ্ধারকারী বলে উপস্থাপিত করল, তাদের নিশ্চয়তা দিল যে তাঁর ক্ষমতা তাদেরকে কবর থেকে জীবিত করে তুলে এনেছে এবং সে নিষ্ঠুর শাসকের কাছ থেকে তাদেরকে উদ্ধারের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । খ্রীষ্টের অনুপস্থিতিতে, শয়তান তাঁর দাবির পক্ষে আশ্চার্য কাজগুলাে করেছিল। সে দুর্বলদের বলবান করে, আর সবাইকে তাঁর নিজের আত্মা ও শক্তিতে উৎসাহিত করে। সে তাদেরকে সাধুদের শিবিরের বিরুদ্ধে পরিচালনা করে ও ঈশ্বরের নগর অধিকার করার জন্য এগিয়ে যেতে প্রস্তাব দেয়। সে লক্ষ লক্ষ অগণিত লােকারণ্য যাদেরকে মৃত্যু থেকে উত্থাপিত করা হয়েছে তাদেরকে চরম গর্বের সাথে দেখায় এবং ঘােষণা করে যে তাদের নেতা হিসেবে এই নগরকে সে পরাজিত করতে সমর্থ ও তাঁর সিংহাসন ও রাজ্য পুনরুদ্ধার করা,ত সমর্থ । GrHBen 224.1
এই মহালােকারণ্যের মধ্যে জলপ্লাবনের আপের দীর্ঘজীবি বংশের লােকেরা ছিল; অনেক উচ্চতা সম্পন্ন লেহিক গঠনের লােকেরা ও দৈত্যসম ও মেধা সম্পন্ন লােকেরা আছে যারা পতিত দূতদের কর্তৃত্ব মেনে নেয়, যারা তাদের সমস্ত দক্ষতা এবং জ্ঞান তাদেরকে উন্নত করার জন্য উৎসর্গ করে; মানুষ যাদের আশ্চর্য কাভার দক্ষতা, তাদের মেধা পৃথিবীকে পৌত্তলিকতায় পরিচালিত করেছিল, কিন্তু যাদের নিষ্ঠুরতা মন্দ আবিষ্কারসমূহ, পৃথিবীকে দূষিত কর-ই ও ঈশ্বরের প্রতিমূর্তির মর্যাদা হানি করার জন্য তাদেরকে তাঁর সৃষ্টির মধ্য থেকে মুছে ফেলে দিতে বাধ্য করছে তারাও এই মহালােকারণ্যের মধ্যে রয়েছে। রাজাগণ ও সেনাপতিগণ যারা জাতিগণকে জয় করেছিল, শৌর্যপূর্ণ লােকেরা আছে যারা যুদ্ধে কখনও পরাজিত হয়নি, গর্বিত, উচ্চকাঙ্খী যােদ্ধারা আছে যাদের অভিগমনে রাজ্যসকল কেঁপে উঠত। মৃত্যুতে এই অভিজ্ঞতার কোন পরিবর্তন নেই। তারা যেমন কবর থেকে উঠে আসে, তাদের চিন্তাসকল যেখানে শেষ হয়েছিল পুনরায় সেখান থেকে শুরু হয়। তারা যখন পতিত হয়েছিল তাদের জয় করার বাসনায় তারা পুনরুজ্জীবিত হয় । GrHBen 224.2
শয়তান তাঁর দূতগণ, তারপর ঐ রাজাগণ এবং বিজয়ীদের এবং বীরগণের সাথে পরামর্শ করে । তারা শক্তি ও তাদের পক্ষ্যের লােকদের প্রতি দৃষ্টিপাত করে ও ঘােষণা করে যে নগরের মধ্যের সৈন্যগণ তাদের সৈন্যগণের তুলনায় নগণ্য ও ওটা জয় করা যাবে। তারা নতুন যিরূশালেমের সম্পদ ও মহিমা অধিকার করার জন্যে পরিকল্পনা করে। তারা সকলে যুদ্ধ শুরু করার জন্য প্রস্তুত হয়; দক্ষ কারিগরগণ যুদ্ধের জন্য যুদ্ধাস্ত্র তৈরি করে ও তাদের সফলতার জন্য বিখ্যাত সেনাপতিগণ যুদ্ধাকাঙ্খী জনতাদের কোম্পানী ও ডিভিশনে সাজায় । GrHBen 225.1
পরিশেষে অগ্রসর হওয়ার জন্য হুকুম দেয়া হল ও অগণিত বাহিনী অগ্রসর হল, একটি সম্মিলিত বাহিনী, যেরূপ সৈন্য বাহিনী পৃথিবীতে বিজয়ীগণ কখনও জড় করতে পারেনি, এরূপ সর্ব যুগের সম্মিলিত শক্তির সাথে পৃথিবীতে যুদ্ধ শুরু হওয়ার সময় থেকে এ পর্যন্ত কোন যুদ্ধ সমকক্ষ হতে পারে নি। শয়তান, যােদ্ধাদের মধ্যে শক্তিশালী, দলকে পরিচালনা করে, ও তাঁর দূতগণ এই শেষ যুদ্ধের জন্য তাদের শক্তিকে একত্রিত করে । রাজাগণ ও যােদ্ধাগণ তাঁর সাথে, ও জানতাদের নিযুক্ত নেতাদের সাথে দলে দলে তাদের অনুসরণ করে । সৈন্য দলের শৃঙ্খলা, পদমর্যাদাধারীগণ পাশাপাশি পৃথিবীকে ভেঙ্গেচুরে অসমান পৃথিবীর উপর ঈশ্বরের নগর অভিমুখে অগ্রসর হয়। যীশুর আজ্ঞায় নূতন যিরূশালেমের গেট বন্ধ করা হয়, ও শয়তানের সৈন্যদল নগরকে ঘিরে ফেলে প্রচও আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হয় । GrHBen 225.2
এখন খ্রীষ্ট আবার তাঁর শত্রুদের সামনে আবির্ভূত হন। নগরের অনেক উপরে, মসৃণ সােনার ভিত্তির উপরে একটি সিংহাসন, উচ্চে ও উপরে ওঠানাে । সেই সিংহাসনের উপরে ঈশ্বরের পুত্র বসা, ও তাঁর চারপাশে তাঁর রাজ্যের প্রজাগণ বসা । খ্রষ্টের ক্ষমতা ও সম্মান কোন ভাষায় ও কোন কলমে লিখে বর্ণনা করতে পারেনা । অনন্তকালস্থায়ী পিতার মহিমা তাঁর পুত্রের চারদিকে আচ্ছাদিত করে আছে। তাঁর উপস্থিতির জ্যোতি ঈশ্বরের নগরকে পরিপূর্ণ করে আছে, এবং তেরণের বাইরে প্রবাহিত হয়ে, সমস্ত পৃথিবীকে তাঁর রশ্মিতে প্লবিত করে । দ্বিতীয় সারিতে থাকবে যারা একদা শয়তানের কারণে ঈর্ষান্বিত ছিল, কিন্তু যাদেরকে আগুন থেকে জ্বলন্ত কাঠ কয়লার মত তুলে নেয়া হয়েছে, যারা মিথ্যা ও অবিশ্বাসের মধ্যেও তাদের পরিত্রাণ কর্তাকে গভীর, প্রগাঢ়ভাবে অনুসরণ করেছে, যারা ঈশ্বরের ব্যবস্থাকে সম্মান করেছে যখন খ্রীষ্টান বিশ্ব এটাকে অমান্য করার জন্য ঘােষণা করেছে, এবং লক্ষ লক্ষ লােক, সর্বযুগে যারা তাদের বিশ্বাসের জন্য মৃত্যুবরণ করেছে। এবং এদের ছাড়াও “ইহার পরে আমি দৃষ্টি করিলাম, আর দেখ, প্রত্যেক জাতির ও বংশের ও প্রজাবৃন্দের ও ভাষার বিস্তর লােক, তাহা গণনা করিতে সমর্থ কেহ ছিল না...তাহারা শুক্লবত্র পরিহিত, ও তাহাদের হস্তে খর্জুরপত্র।” প্রকাশিত বাক্য ৭:৯। তাদের যুদ্ধ শেষ হয়েছে, তারা বিজয়ী হয়েছে। তারা দৌড়ের প্রতিযােগিতায় দৌড়েছে ও পুরস্কার পেয়েছে । তাদের হাতের খেজুরের পাতা তাদের বিজয়ীর প্রতীক, শুভ্র বস্ত্র খ্রীষ্টের শুচি শুভ পবিত্রতার প্রতীক যা এখন তাদের। GrHBen 225.3
পরিত্রাণপ্রাপ্তগণ একটি প্রশংসার গান তােলেন যা স্বর্গের আকাশে সর্বত্র ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হতে থাকে: “পরিত্রাণ আমাদের ঈশ্বরের, যিনি সিংহাসনে বসিয়া আ-জুন, এবং মেষশাবকের দান।” ১০ পদ। এবং স্বর্গদূতগণ ও করূবগণ ভক্তিতে তাদের স্বর মিলায় । পরিত্রাণপ্রাপ্তগণ যেমন শয়তানের ক্ষমতা ও চরম বিদ্বেষ দেখেছে, তারা দেখেছে, যা তারা ইতােপূর্বে দেখেনি যে খ্রীষ্টের ক্ষমতা ছাড়া কোন ক্ষমতাই তাদেরকে বিজয়ী করতে পারত না। সমস্ত জ্যোতিময় বাহিনী থাকা সত্ত্বেও তাদের কেউই নিজে নিজে পরিত্রাণ অর্জন করতে পারত না, যদি তাদের নিজেদের ক্ষমতায় ও ভাল কাজের মাধ্যমে অর্জন করতে হতাে। তারা যা করেছে অথবা কষ্ট ভােগ করেছে তাঁর কিছুই বলা হয়নি; কিন্তু প্রতিটি গানের প্রতিটি শব্দ, প্রতি গানের স্বরলিপি হল পরিত্রাণ আমাদের ঈশ্বরের ও মেষ শাবকের । GrHBen 226.1
পৃথিবীর ও স্বর্গের সম্মিলিত অধিবাসীদের সামনে ঈশ্বরের পুত্রের শেষ রাজ্যাভিষেক হবে । এবং এখন, মহা সম্মান ও ক্ষমতার বিনিয়ােগের মাধ্যমে, রাতাদের রাজা যারা তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও তাঁর লােকদের নির্যাতন করেছিল তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি ঘােষণা করেন, ঈশ্বরের ভাববাদী বলেন: “এক বৃহৎ শ্বেতবর্ণ সিংহাসন ও যিনি তাহার উপরে বসিয়া আছেন, তাহাকে দেখিতে পাইলাম, তাঁহার সম্মুখ হইতে পৃথিবী ও আকাশ পলায়ন করিল; তাহাদের নিমিত্ত আর স্থান পাওয়া গেল না,” আর আমি দেখিলাম, ক্ষুদ্র ও মহান সমস্ত মৃত লােক সেই সিংহাসনের সম্মুখে দাড়াইয়া আছে; পরে “কয়েকখান পুস্তক খােলা গেল,” এবং আর একখানি পুস্তক, অর্থাৎ জীবন-পুস্তক খােলা গেল, এবং মৃতেরা পুস্তকসমূহে লিখিত প্রমাণে “আপন আপন কার্যানুসারে বিচারিত হইল।” প্রকাশিত বাক্য ২০:১১-১২। GrHBen 226.2
যখন সকলের কর্মের নথিভুক্ত বইগুলাে খােলা হল, ও যীশুর চোখ দুষ্টদের দিকে তাকালেন, তারা যে সকল পাপ করেছে তাঁর প্রতিটি পাপ তাদের মনে পড়ল । তারা দেখে ঠিক কোথায় কোথায় তাদের পা সিদ্ধ ও পবিত্রতার পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে, তাদের অহংকার ও বিদ্রোহ, ঈশ্বরের ব্যবস্থা লঙ্ঘন, আকর্ষণীয় প্রলােভনগুলাে তাদেরকে কত দূরে নিয়ে গেছে, তাদের অসংযম পাপগুলাে করতে উৎসাহিত করেছে, আশীর্বাদকে বিকৃত করেছে, ঈশ্বরের বার্তাবাহককে অবজ্ঞা করেছে, সতর্কবাণী প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, জেদ অনুগ্রহের প্রবাহ প্রতিরােধ করেছে, আগুনের অক্ষরের লেখার মত সব অননুতাপীর হৃদয়ে আর্বিভাব ঘটে। GrHBen 226.3
সিংহাসনের উপরে ক্রুশকে প্রকাশ করা হয়েছে; ও আদমের প্রলােভন ও পতনের দৃশ্য, ও মহান পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনার সফল ধাপ গুলাে পূর্ণদৈর্ঘ্য দৃশ্যের ন্যায় দৃশ্যমান হয়। ত্রাণকর্তার হীনবস্থায় জন্ম; তাঁর শৈশবের সহজ সরল ও বাধ্যতার জীবন; যদ্দনে তাঁর বাপ্তিস্ম; প্রান্তরে তাঁর উপবাস ও প্রলােভন; তাঁর প্রকাশ্যে মানবের সেবা কাজ, স্বর্গের সবচেয়ে মূল্যবান আর্শীবাদ মানবের কাছে প্রকাশ; ভালবাসা ও করুণায় ভরা দিনগুলাে, প্রার্থনার রাতগুলাে এবং নির্জন পর্বতের বিনিদ্র রাত; হিংসা, ঘৃণা, ও অপকারের জন্য ষড়যন্ত্র যে গুলাে তাঁর উপকারের বদলে পরিশােধ করা হয়েছে । গেৎশিমানী বাগানে সমস্ত পৃথিবীর বিচূর্ণ পাপের ভারের দুঃখজনক, রহস্যময় যাতনা; খুনী দলের হাতে বিশ্বাসঘাতকেরা তাকে সমর্পণ; সেই ত্রাসের রাতে ভয়ঙ্কর ঘটনাসমূহ—অপ্রতিরােধী বন্দী, তাঁর সবচেয়ে প্রিয়তম শিষ্যদের দ্বারা পরিত্যক্ত অবস্থায়, নির্দয়ভাবে ও ত্বরিত গতিতে যিরূশালেমের পথে; ঈশ্বরের পুত্র অননিয়ের সামনে বিজয়ীবেশে প্রদর্শন, মহা যাজকের প্রাসাদে অভিযুক্ত করা, পিলাতের কক্ষে বিচার, ভীরু ও নিষ্ঠুর হেরােদের সামনে, বিদ্রুপ, অপমান, অত্যাচার ও মৃত্যুদণ্ড--সব কিছু জীবন্তভাবে দেখানাে হল । GrHBen 227.1
এবং এখন ঐ আন্দোলিত লােকারণ্যের সামনে শেষ দৃশ্য প্রকাশিত হল ধৈর্যশীল যাতণাগ্রস্থ কালভেরীর পথে চলছে; স্বর্গের রাজপুত্র ক্রশে ঝুলছে; দুষ্ট যাজকেরা ও উজ্জ্বল জনতা তাঁর নিদারুণ যন্ত্রণায় উপহাস ও বিদ্রুপ করই; অস্বাভাবিক অন্ধকার হওয়া; ভূমি-কম্পন, পাথরগুলাের বিচ্যুতি হওন, কবরগুলাে খুলে যাওয়া, বিশেষভাবে সেই মুহুর্ত যখন বিশ্বের উদ্ধারকর্তা তাঁর জীবন সমর্পণ করেন। GrHBen 227.2
এই দুঃখজনক দৃশ্য যেভাবে ঘটেছিল ঠিক সেভাবেই আবির্ভূত হল । শয়তান, তাঁর দূতেরা, ও তাঁর প্রজাদের তাদের নিজেদের কাজগুলাে প্রদর্শিত হওয়া থেকে বিরত রাখতে কোনই ক্ষমতা রইল না । প্রত্যেক অভিনেতার নিজ নিজ করা কাজের অংশগুলাে স্মরণে এল । হেরােদ, ইস্রায়েলের রাজাকে হত্যা করার অভিপ্রায়ে যে নিস্পাপ শিশুদের হত্যা করেছিল; হােরােদিয়াকে ভিত্তি করে, যার উপরে দোষী আত্মা ভর করে যােহন বাপ্তাইজকের রক্ত; দুর্বল, বলের গােলাম পিলাত; উপহাসকারী সৈন্যদল; যাজকগণ ও শাসকগণ ও উন্মও চিকারকারী জনতা, “তাহার রক্ত আমাদের উপরে ও আমাদের সন্ত নিদের উপরে বর্তুক!”—সবাই তাদের দোষের প্রাচুর্য প্রত্যক্ষ করল । যখন পরিত্রাণপ্রাপ্তগণ তাদের মাথার মুকুট ত্রাণকর্তার পায়ে রেখে বিস্ময়ে বলে উঠল “তিনি আমাদের জন্য মরেছিলেন!” তারা বৃথাই তখন স্বর্গীয় মহিমায় উদ্ভাসিত সূর্যের তেজস্কর তাঁর গৌরবময় চেহারা থেকে লুকানের চেষ্টা করল। GrHBen 227.3
মুক্তিপণের দ্বারা পরিত্রাণপ্রাপ্ত দলের মধ্যে খ্রীষ্টের শিষ্যেরা, সাহসী পৌল অত্যুৎসাহী পিতর, স্নেহের ও প্রিয়পাত্র যােহন, এবং তাদের সত্যবাদী ভ্রাতৃবৃন্দ, ও তাদের সাথে যীশুর জন্য প্রচুর শহীদেরা আছেন; সেখানে দেয়ালের বাইরে রয়েছে প্রত্যেক কুৎসিত ও ঘৃণাহ দ্রব্য, যাদের দ্বারা পরিত্রাণপ্রাপ্তগণ তাড়না, কারাগার ও খুন হয়েছে। সেখানে আছে নীরাে, নিষ্ঠুরতা ও অনাচারের দৈত্য, আনন্দেও নিজেকে উচ্চে বসিয়ে আত্মগরিমায় আছে, যাদেরকে সে একদা অত্যাচার করেছে, যাদের চরম কষ্টে সে শয়তানােচিত আনন্দ পেয়েছে। তাঁর মাও সেখানে আছে নিজের কাজের ফলের সাক্ষী হত্যার জন্য; দেখার জন্য যে কিভাবে মন্দ চরিত্রের ছাপ তাঁর ছেলের মধ্যে সংক্রামিত হয়েছে; কিভাবে আবেগ উৎসাহিত করেছে ও তাঁর প্রভাবের এবং আদর্শের দ্বারা উন্নয়ন ঘটেছে, যা অপরাধের ফল ধরে পৃথিবীকে কম্পিত করেছে। GrHBen 228.1
পােপের পুরােহিত ও বিশপগণ, তারা খ্রীষ্টের রাষ্ট্রদূত বলে দাবী করেন, তথাপি তারা চাপ দিয়ে শাস্তি দেয়ার দাতাল যন্ত্র অন্ধকারময় ভূর্গভস্থ কারাগারের ও খুঁটিতে বেঁধে আগুন ধরিয়ে দিয়ে তাঁর লােকাদের বিবেককে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহার করেছে। সেখানে অহংকারী বিশপগণ ছিল যারা নিজেদেরকে ঈশ্বরের উপরে উন্নত করেছে ও সর্বশক্তিমানের ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করতে দুঃসাহস করেছে। মণ্ডলীর ঐ সর ভানকারী ফাদারেরা ঈশ্বরের কাছে আত্মসর্মপণ করতে হবে কারণ তারা সানন্দ চিত্তে ক্ষমা লাভ করতে চাইবে। অনেক দেরীতে তারা বুঝতে পেরেছিল যে সর্বত্র ব্যক্তি তাঁর নিজের ব্যবস্থা সম্পকে অত্যন্ত উদ্যোগী এবং তিনি কোন ক্রমেই দোষীকে ছেড়ে লেবেন না। তারা এখন বুঝতে পারল যে তাঁর লােকদের দুঃখভােগের প্রতি খ্রীষ্টের আগ্রহ ভরা দৃষ্টি আছে; ও তারা তাঁর বাক্যের বৈধতা অনুভব করেন, “এই ক্ষুদ্রতমদিগের মধ্যে একজনের প্রতি যখন ইহা করিয়াছিলে তখন আমারই প্রতি করিয়াছিল।” মথি ২৫:৪০ । GrHBen 228.2
সমস্ত দুষ্ট বিশ্ব ঈশ্বরের কায়েদখানায় কৈফিয়ত দাবী করার জন্য স্বর্গীয় সরকারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহের অভিযােগ আনার জন্য দাঁড়ান। তাদের মধ্যে তাদের জন্য ওকালতি করার কেউ নেই; তারা ক্ষমার অযােগ্য; ও অনন্ত মৃত্যুর রায় তাদের বিরুদ্ধে ঘােষিত হয়। GrHBen 228.3
এটি এখন সবার কাছে স্পষ্ট যে পাপের বেতন উদার স্বাধীনতা ও অনন্ত জীবন নয়, কিন্তু এর অর্থ দাসত্ব, ধ্বংস ও মৃত্যু। দুষ্টেরা দেখে যে। তালের বিদ্রোহী জীবনের বিনিময়ে তারা কি হারিয়েছে । সীমাতিরিক্ত ও অনন্ত মহিমার ভার যখন তাদের প্রস্তাব করা হয়েছিল তখন প্রত্যাখাত হয়েছিল কিন্তু এখন এর প্রয়ােজনীয়তা কতই না প্রকট হয়ে দেখা দিল। “এই সমস্ত”, হারানাে আত্মাগণ কেঁদে উঠলাে, “আমি ইচ্ছে করলেই এটি পেতে পারতাম; কিন্তু এগুলােকে দূরে রাখতেই আমি পছন্দ করেছিলাম । ও কি অদ্ভুত মােহ । আমি শান্তি, সুখময়, ও সম্মানের বিনিময়ে চরম দুর্দশা, অখ্যাতি ও হতাশা বেছে নিয়েছি।” সকলে দেখতে পায় যে স্বর্গ থেকে তাদের বাদ পড়াটা ন্যায্য । তালের জীবন দিয়ে তারা ঘােষণা করে: “আমরা এই ব্যক্তিকে কোনক্রমে আমাদের উপর রাজত্ব করতে দেব না।” GrHBen 228.4
অভিভূত হওয়ার মত, দুষ্টেরা ঈশ্বরের পুত্রের রাজ্যাভিষেক দেখল, তাঁর হাতে স্বর্গীয় ব্যবস্থা ফলক, সংবিধি যা তারা অবজ্ঞা করেছে ও লঙ্ঘন করেছে। তারা মুক্তিপ্রাপ্তদের বিস্ময় অতিশয় আনন্দোচ্ছল উল্লাস ও আরাধনার আবেগ প্রকাশ প্রত্যক্ষ করে; এবং যেমন সুরের স্রোত ধারা নগরীর বাহিরের জনতার উপর দিয়ে বয়ে যায়, সকলে একবাক্যে বিস্ময়ে বলে ওঠে; “মহৎ ও আশ্চর্য তােমার ক্রিয়া সকল, হে প্রভু ঈশ্বর, সর্বশক্তিমান; ন্যায্য ও সত্য তােমার মার্গ সকল, হে জাতিগণের রাজন ।” প্রকাশিত বাক্য ১৫:৩। আর মাটিতে উপুড় হয়ে তারা জীবনের রাজপুত্রের ভজনা করে। GrHBen 229.1
খ্রীষ্টের মহিমা ও মর্যাদা দেখে শয়তান বিহ্বল হয়ে পড়ে। একদা যে একজন আচ্ছাদক করূব ছিল, সে এখন তাঁর পতনের দিনকে স্মরণ করল । একটি উজ্জ্বল করূব, “উষানন্দন:” কেমন পরিবর্তন, কেমন অধপতন । যে মন্ত্রণা সভায় ছিল যে কিনা একদা ছিল সম্মানিত ব্যক্তিত্ব; সে এখন চিরদিনের জন্য বহিভূত। এখন সে আরেক জনকে পিতার মহিমার কাছে আপনার মহিমা আচ্ছাদন করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে । উন্নত আকৃতির ও মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিত্বের একজন দূতকে খ্রষ্টের মাথায় মুকুট স্থাপন করতে দেখে, আর সে জানে যে এই মর্যাদাপূর্ণ স্থানে সে থাকতে পারত। GrHBen 229.2
ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বচসা ও খ্রষ্টের প্রতি ঈর্ষায় লিপ্ত হবার আগে তাঁর মধ্যে যে নিরপরাধ ও বিশুদ্ধতা, শান্তি ও সন্তুষ্টি ছিল যতক্ষণ পর্যন্ত না সে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে ঈর্ষার প্রশ্রয় দিয়েছিল তাঁর স্মৃতি তাকে তা স্মরণ করিয়ে দেয় । তাঁর অভিযােগগুলাে, তাঁর বিদ্রোহ, দূতগণের সহানুভূতি ও সমর্থন লাভ করার জন্য তাঁর প্রতারণা, তাঁর জেদ তাকে তাঁর পূর্বাবস্থায় ফিরে যেতে চেষ্টা না করা, যখন ঈশ্বর তাকে ক্ষমা করতে পারতেনসব তাঁর সামনে স্পষ্টাকারে আসে । মানুষের মধ্যে তাঁর কাজও এর পরিণাম মানুষকে তাঁর সহ মানুষের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়া, জীবনের ভয়ঙ্কর বিনাশ, রাজ্য সকলের উত্থান ও পতন, সিংহাসন গুলাের অদল-বদল, বিশৃঙ্খলা, সংঘর্ষ ও বিদ্রোহের দীর্ঘ কার্যকলাপ সে পুনরালোচনা করে। খ্রীষ্টের কাজের বিরােধীতা ও মানুষকে নিম থেকে আরও নিমে ডােবানাের নিরন্তর প্রচেষ্টাকে সে স্মরণ করে। সে দেখতে পায় যে যারা যীশুতে তাদের আস্থা স্থাপন করেছে তাদের বিরুদ্ধে তাঁর ধ্বংস করার নারকীয় ষড়যন্ত্র শক্তিহীন হয়েছে। শয়তান তাঁর পরিশ্রমের ফল, তাঁর রাজ্যের দিকে তাকায়। সে যেখানে কেবলমাত্র বিফলতা ও ধ্বংসাবশেষ দেখতে পায় । জনতাকে এই বিশ্বাসে পরিচালিত করে যে ঈশ্বরের নগর সহজ শিকার হবে; কিন্তু সে জানে যে এটা মিথ্যা। মহা সংঘর্ষ চলাকালে বারংবার সে পরাজয় ও হার মানতে বাধ্য হয়েছে। অনও সনাতনের শক্তি ও তাঁর পরাক্রম সম্বন্ধে সে ভালভাবেই জানে । GrHBen 229.3
মহা বিদ্রোহের লক্ষ্য ছিল আপনাকে ন্যায় সঙ্গত প্রমাণ করা ও স্বর্গীয় কর্তৃপক্ষকে বিদ্রোহের জন্য দায়ী করা । এই উদ্দেশ্যে সে এই শেষকালে তাঁর সমস্ত বুদ্ধিমত্তা প্রয়ােগ করেছে। সুচিন্তিতভাবে ও সুশৃঙ্খলতার সাথে, ও আশ্চর্যজনক, কৃতকার্যতার সাথে সে এই মহা জনতাকে যুগ যুগ ধরে মহা সংঘর্ষে তাঁর মিথ্যা জালিয়াতকে গ্রহণ করতে পরিচালিত করেছে। হাজার হাজার বছর ধরে এই প্রধান ষড়যন্ত্রকারী মিথ্যাকে সত্য বলে চালিয়ে এসেছে । কিন্তু এখন সেই সময় এসেছে যখন বিদ্রোহ শেষ পর্যন্ত পরাজিত এবং ইতিহাস ও শয়তানের চরিত্র প্রকাশিত হবে। যীশুকে সিংহাসনচ্যুত করার, তাঁর লােকদের ধ্বংস করার, ঈশ্বরের নগর দখল নেয়া, প্রধান প্রতারণাকারীর শেষ মহা প্রচেষ্টায় তাঁর মুখােশ উন্মােচিত হয়ে যাবে । যারা তাঁর সাথে সম্মিলিত হয়েছিল তারা তাঁর কারণে তাঁর চরম পরাজিত হওয়া প্রত্যক্ষ করবে । খ্রীষ্টের অনুগামীরা ও অনুগত দূতেরা ঈশ্বরের শাসনের বিরুদ্ধে তাঁর কলাকৌশল প্রত্যক্ষ করে। সে চিরন্তন ঘৃণার পাত্র হয়। GrHBen 230.1
শয়তান দেখে যে তাঁর স্বেচ্ছাচারী বিদ্রোহ তাকে স্বর্গের অযােগ্য করে। ফেলেছে, সে তাঁর শক্তিকে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে লড়বার জন্য প্রশিক্ষিত করে । স্বর্গের বিশুদ্ধতা, শান্তি ও ঐক্যতান তাঁর কাছে হল চরম যন্ত্রণাদায়ক । ঈশ্বরের দয়া ও ন্যায়বিচারের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযােগ এখন নিরব হল । সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে নিন্দা নিক্ষেপ করার তাঁর প্রচেষ্টা এখন নিজের ওপরেই বর্তায়। শয়তান এখন নত হয় ও তাঁর প্রতি ন্যায়বিচার স্বীকার করে। GrHBen 230.2
“হে প্রভু, কে না ভীত হইবে? এবং তােমার নামের গৌরব কে না করিবে? কেননা একমাত্র তুমিই সাধু, কেননা সমস্ত জাতি আসিয়া তােমার সম্মুখে ভজনা করবে, কেননা তােমার ধর্মক্রিয়া সকল প্রকাশিত হইয়াছে।” ৪ পদ। সত্য ও মিথ্যার দীর্ঘস্থায়ী মহা সংঘর্ষের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর এখন পরিষ্কার হয়েছে। বিদ্রোহের পরিণাম ঐশ্বরিক ব্যবস্থাকে পরিহার করার ফলের দৃশ্য এখন সমস্ত বুদ্ধিমান সৃষ্টের কাছে উন্মুক্ত করে দেয়া হল। শয়তানের শাসন কাজের সাথে ঈশ্বরের শাসন তুলনা করে এখন সমস্ত বিশ্বের কাছে দেখানো হল । শয়তানের নিজের কাজই এখন তাকে দোষী সাব্যস্ত করল । ঈশ্বরের বিজ্ঞতা, তাঁর ন্যায়বিচার ও তাঁর সদাশয়তা সম্পূর্ণভবে প্রমাণিত হয়েছে। দেখা গেল যে মহা সংঘর্ষে তাঁর যাবতীয় কাজ, যাবতীয় আচরণ তাঁর লােকদের ও তাঁর সৃষ্ট পৃথিবীর মঙ্গলের দিকে দৃষ্টি রেখেই পরিচালিত হয়েছে। “হে সদাপ্রভু, তােমার সমস্ত পদার্থ তােমার প্রশংসা করে, এবং তােমার সাধুগণ তােমার ধন্যবাদ করে ।” গীতসংহিতা ১৪৫:১০। পাপের ইতিহাস চিরকালের নিমিত্ত সাক্ষী হয়ে থাকবে এবং এ কথা বলবে যে বিদ্যমান ঈশ্বরের ব্যবস্থা সমস্ত সৃষ্ট জীবের মাঝে সানন্দ ও বন্ধন অটুট রেখেছে। মহা সংঘর্ষের সমস্ত ঘটনাগুলির পরিপ্রেক্ষিতে, সমস্ত বিশ্ব, তাঁর অনুগত ও বিদ্রোহী উভয়ই একই সুরে ঘােষণা করে: “ন্যায্য ও সত্য তােমার মার্গ সকল, হে জাতিগণের রাজন।” GrHBen 230.3
মানব জাতির জন্য পিতা ও পুত্রের মহান আত্মত্যাগ বিশ্বের কাছে। পরিষ্কার ভাবে উন্মুক্ত করা হল। তখন সময় উপস্থিত হল, যীশু খ্রীষ্ট তাঁর যথাস্থানে অধিষ্ঠিত হবেন এবং সমস্ত রাজ্য, ক্ষমতা, ও নামের ঊর্ধ্বে তিনি মহিমান্বিত হবেন । আনন্দ উল্লাসের সাথে তা তাঁর সম্মুখে উপস্থাপন করা হলযেন তিনি বহু সন্তানদের গৌরবের নিমিত্ত আনয়ন করেন- যেন তিনি প্রমাণ। করেন যে তিনি ক্রুশ সহ্য করেছেন, লজ্জা ও অপমানকে তুচ্ছজ্ঞান করেছেন । তাঁর যাতনা, ব্যথা-বেদনা, অপমান ও লজ্জা অচিন্তনীয় ও অবিশ্বাস্য ছিল, তবু তাতে সানন্দ ও মহিমা ছিল তাঁর থেকেও বেশী । তিনি মুক্তিপ্রাপ্তদের দিকে দৃষ্টি রাখলেন, তাদের মধ্যে তিনি নিজের প্রতিমূর্তি দেখতে পেলেন, প্রত্যেকের হৃদয়ে ঐশ্বরিক ছাপ দেখা গেল, প্রত্যেকের মুখে তাদের রাজার সাদৃশ্য খুঁজে পেলেন । তাদের মধ্যে মধ্যে তিনি লক্ষ্য করলেন যে তাঁর দুঃখ-কষ্ট, ব্যথাবেদনা ছাপ অংকিত হয়েছে এবং তাদের মধ্যে তা দেখে তিনি তৃপ্ত হলেন । “দেখ, আমার রক্ত দ্বারা ক্রীত: এদের নিমিত্তে আমি যাতনাগ্রস্থ হয়েছিলাম, এদের জন্যই আমি মৃত্যুবরণ করেছি, যেন তারা চিরকাল আমার সঙ্গে বসবাস করে। শুক্লবস্ত্র পরিহিত মুক্তিপ্রাপ্তদের কণ্ঠ থেকে সিংহাসন সম্বন্ধে প্রশংসার গীত ভেসে আসছিল: “মেষশাবক, যিনি হত হইয়াছিলেন, তিনিই পরাক্রম ও ধন ও জ্ঞান ও শক্তি ও সমাদর ও গৌরব ও ধন্যবাদ, এই সকল গ্রহণ করিবার যােগ্য।” প্রকাশিত বাক্য ৫:১২। GrHBen 231.1
বলার অপেক্ষা রাখে না যে শয়তান ঈশ্বরকে ন্যায়বিচারক বলে স্বীকার ও খ্রীষ্টের মহা ক্ষমতার কাছে নত হতে বাধ্য করানাের পরও সে অপরিবর্তিত থেকে যায়। তাঁর বিদ্রোহের মনােভাব, তীব্র জলস্রোতের মত, আবার ফেটে পড়ে। প্রবল উত্তেজনায়, সে এই মহা সংঘর্ষ ক্ষান্ত না করার জন্য স্থির সিদ্ধান্ত নেয় । সময় এল স্বর্গের রাজার বিরুদ্ধে শেষ প্রচণ্ড যুদ্ধের। সে ঝড়ের বেগে তাঁর প্রজাদের মধ্যে চলে যায় ও তাঁর আপন উন্মত্ততায় উৎসাহিত করার জন্য চেষ্টা চালায় এবং তাদেরকে উৎসাহিত করার জন্য প্রচেষ্টা চালায় এবং তাদেরকে তাৎক্ষণিক যুদ্ধের জন্য উত্তেজিত করে। কিন্তু অগণিত লক্ষ লক্ষ লােক যাদের সে বিদ্রোহে প্রলুব্ধ করেছিল, তাদের মধ্যে কেউই তাকে সর্বোত্তম বলে স্বীকার করে না। তার ক্ষমতা শেষ । ঈশ্বরকে যে ঘৃণায় ঘৃণা করতে দুষ্টদের সে উৎসাহিত করেছিল; কিন্তু তারা দেখে যে তাদের অবস্থা। আশাবিহীন, তারা সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে জয় লাভ করতে পারবে না। তাদের ক্রোধ শয়তানের ও প্রতারণার কাজে যারা তার দালাল ছিল তাদের বিরুদ্ধে জ্বলে উঠলাে, এবং দানবীয় উন্মত্তে তারা তাঁর প্রতি ফিরল । GrHBen 231.2
এইজন্য সদাপ্রভু এই কথা কহেন: “তুমি আপনার চিত্তকে ঈশ্বরের চিত্তের তুল্য বলিয়া মানিয়াছ; এই জন্য দেখ, আমি তোমার বিরুদ্ধে বিদেশীদিগকে আনিব, জাতিগণের মধ্যে তাহারা ভীমবিক্রান্ত, তাহারা তােমার জ্ঞানকান্তির বিরুদ্ধে আপন আপন খড়গ নিষ্কোষ করিবে ও তােমার দীপ্তি অপবিত্র করিবে । তাহারা তােমাকে কূপে নামাইবে; তুমি সমুদ্রগণের মধ্যস্থলে, নিহত লােকদের ন্যায় মরিবে ।” “...তাই আমি তােমাকে ঈশ্বরের পর্বত হইতে ভ্রষ্ট করিলাম, এবং হে আচ্ছাদক করূব, তােমাকে অগ্নিময় প্রস্তর সকলের মধ্য হইতে লুপ্ত করিলাম।” “.. আমি তােমাকে ভূমিতে নিক্ষেপ করিলাম, রাজগণের সম্মুখে রাখিলাম, যেন তাহারা তাহাকে দেখিতে পায় ।...তুমি ত্রাসস্বরূপ হইলে। এবং তুমি কোন কালে আর হইবে না।” যিহিকেল ২৮:৬-৮, ১৬-১৯ । GrHBen 232.1
“বস্তুতঃ তুমুল যুদ্ধে সজ্জিত ব্যক্তির সমস্ত সজ্জা ও রক্তে লুণ্ঠিত বস্ত্র সকল জলনীয় দ্রব্য হইবে, অগ্নির ভক্ষ্যস্বরূপ।” “কেননা জাতিমাত্রের বিরুদ্ধে সদাপ্রভুর ক্রোধ, তাহাদের সৈন্য সামন্তের বিরুদ্ধে তাহার প্রচণ্ড কোপ প্রজ্জ্বলিত হইল; তিনি তাহাদিগকে নিঃশেষে বিনষ্ট করিলেন, তাহাদিগকে বধে সমর্পণ করিলেন ।” “তিনি দুষ্টদের উপরে তাহাদের পাশ বর্ষণ করিবেন, অগ্নি, গন্ধক ও উত্তপ্ত বায়ু তাহাদের পান পাত্রে পেয় দ্রব্য।” যিশাইয় ৯:৫; ৩৪:২; গীতসংহিতা ১১:৬। স্বর্গ হতে ঈশ্বরের আগুন নামাবেন । পৃথিবী চিরে গেল । যুদ্ধাস্ত্র সকল এদের ক্ষমতা হারাল। প্রতিটি গহ্বর থেকে আগুনের লেলিহান জিহবা হাইতােলে গ্রাস করার জন্য ক্রোধান্মত্ত হয়ে এগিয়ে আসে । পাখর সকল আগুনে জ্বলে ওঠে সে দিন আসছে যখন হাপরের ন্যায় পুড়বে । প্রচণ্ড উত্তাপে পদার্থ সকল গলে গেল, পৃথিবীও এবং তাঁর মধ্যস্থিত যাবতীয় কর্মসকল পুড়ে গেল। মালাখী ৪:১; ২ পিতর ৩:১০। পৃথিবীর পৃষ্ঠকে একটি গলিত মহা বিস্তারের মত, আগুনে সিদ্ধ করা হদের মত দেখাল । এটাই অনৈশ্বরিক লােকদের বিচার ও সর্বনাশের সময়- “কেননা এ সদাপ্রভুর প্রতিশােধের দিন, এ সিয়ােনের বিবাদ সম্বন্ধীয় প্রতিফলদানের বৎসর ।” যিশাইয় ৩৪:৮ । GrHBen 232.2
“পাপীরা তাহাদের প্রতিফল পৃথিবীতে পাইবে।” হিতােপদেশ ১১:৩১। তারা “আর সেই যে দিন আসিতেছে, তাহা তাহাদিগকে পােড়াইয়া দিবে, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন ।” মালাখী ৪:১। কিছু কিছু লােক মুহূর্তের মধ্যেই ধ্বংস হবে, আবার অনেকে অনেকদিন যাতনা পাবে । সবাই শাস্তি পেয়েছে “তাহাদের কাৰ্যানুসারে।” ধার্মিকদের পাপ শয়তানের কাছে স্থানান্তর করা হয়েছে, সে কেবল তাঁর বিদ্রোহের পাপের জন্যই শাস্তি পাবে না, কিন্তু সে যে ঈশ্বরের লােকদের পাপ করিয়েছে তাঁর জন্যও তাকে শাস্তি পেতে হবে । সে যাদেরকে প্রতারণা করে পাপ করিয়েছে সে তাঁর চেয়েও বহুগুণে শাস্তি পাবে। তাঁর প্রতারণার দ্বারা যারা পতিত হয়েছিল তাদের সবার ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরও সে বেঁচে থাকবে ও যাতনা ভােগ করবে। পরিকারকরণ আগুনের শিখা দ্বারা দুষ্টের শেষ পর্যন্ত ধ্বংস হবে, গাছের মূল ও ডাল—— শয়তান মূল, তাঁর অনুসরণকারীরা ডাল। ব্যবহু লঙ্ঘনের পুরাে দণ্ড দেয়া হয়েছে, ন্যায় বিচারের দাবী পূরণ করা হয়েছে; এবং স্বর্গ ও পৃথিবী, সদাপ্রভুর ধার্মিকতার ঘােষণা প্রত্যক্ষ করে । GrHBen 232.3
শয়তানের ধ্বংস কার্য চিরতরে শেষ হয়ে গেছে । ছয় হাজার বছর ধরে সে তাঁর ইচ্ছানুসারে কাজ করেছে, যা পৃথিবীকে দুঃখে পূর্ণ করেছে, যা এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সর্বত্র শােকে ভরিয়েছে। সমস্ত সৃষ্ট বস্তু কষ্টে আর্তনাদ করেছে ও বেদনায় একসঙ্গে প্রসব যন্ত্রণা ভােগ করেছে। এখন ঈশ্বরের সৃষ্ট প্রাণী সকল অনন্তকালের জন্য তাঁর উপস্থিতি ও প্রলােভন থেকে মুক্ত হয়েছে। “সমস্ত পৃথিবী শান্ত ও সুস্থির হইয়াছে, সকলে উচ্চঃস্বরে আনন্দগান করিতেছে।” যিশাইয় ১৪:৭। এবং সমস্ত আনুগত্য বিশ্ব হতে প্রশংসা ও বিজয়ের ধ্বনি উত্থিত হচ্ছে। “বৃহৎ লােকারণ্যের রব,” “বহু জলের কল্লোল ও প্রবল মেঘগর্তনের ন্যায় এই বাণী শুনিলামঃ হাল্লিলুইয়া, কেননা আমাদের ঈশ্বর প্রভু, যিনি সর্বশক্তিমান, তিনি রাজত্ব গ্রহণ করিলেন ।” প্রকাশিত বাক্য ১৯:৬ পদ। GrHBen 233.1
যখন পৃথিবী বিনাশের আগুনে মােড়া ছিল, ধার্মিকেরা তখন পবিত্র নগরীতে নিরাপদে ছিল। যারা প্রথম পুনরুত্থানের ভাগী হয়েছিলেন, তাদের প্রতি দ্বিতীয় মৃত্যুর কোন শক্তি নেই । দুষ্টদের প্রতি ঈশ্বর যেমন গ্রাসকারী আগুন তেমনি তিনি তাঁর লােকদের কাছে সূর্য ও ঢাল উভয়ই । প্রকাশিত ২০:৬; গীত ৮৪:১১। GrHBen 233.2
পরে আমি “এক নূতন আকাশ ও এক নূতন পৃথিবী” দেখিলাম; কেননা প্রথম আকাশ ও প্রথম পৃথিবী বিলুপ্তি হইয়াছে।” প্রকাশিত বাক্য ২১ঃ১। দুষ্টলের গ্রাসকারী আগুন পৃথিবীকে বিশুদ্ধ করে। অভিশাপের প্রতিটি চিহ্ন মুছে গেছে। পাপের ভয়ঙ্কর পরিণাম হিসাবে অনন্ত জ্বলন্ত আগুনের নরক মুক্তিপণের বিনিময়ে পরিত্রাণ প্রাপ্তদের সামনে রাখা হবে না। GrHBen 233.3
একমাত্র একটি স্মারক থাকবে। আমাদের ত্রাণকর্তা ক্রুশের চিহ্ন চিরকাল ধরে বহন করবেন। তাঁর আহত মস্তকে তাঁর পার্শ্বদেশে, হস্ত পদদ্বয়ে, পাপের নিষ্ঠুর কার্যের দ্বারা আনিত চিহ্নবলি থেকে যায় । খ্রীষ্টকে তাঁর আপন মহিমায় দেখে ভাববাদী বলেন: “তাহার তেজ দীপ্তির তুল্য,...তাঁহার পরাক্রমের অন্তরাল।” হবক ৩:৪। এ বিদ্ধ করা পার্শ্বদেশ যেখান থেকে গাঢ় লাল রঙের রক্ত প্রবাহিত হয়েছিল, ওটা মানুষকে ঈশ্বরের সাথে পুনমিলন ঘটিয়েছে, সেখানেই ত্রাণকর্তার মহিমা, সেখানে তাঁর ক্ষমতার অন্তরাল।” “মুক্তিদানের উদ্ধার কার্যে পরাক্রমী, উদ্ধার কাজের জন্য উৎসর্গের মধ্যদিয়ে যে কারণে তিনি ঈশ্বরের অনুগ্রহ অবজ্ঞাকারীদের ন্যায়বিচার সম্পন্ন করতে সক্ষম। আর তাঁর অবমাননার প্রতীক হচ্ছে তাঁর সব্বোর্চ সম্মান; অনন্ত যুগ ধরে কালভেরীর ক্ষতি সকল তাঁর প্রশংসা দেখাবে, এবং তাঁর পরাক্রম ঘােষণা করবে । GrHBen 233.4
“আর হে পালের দুর্গ, হে সিয়ােন-কণ্যার গিরি, তােমারই কাছে [রাজ্য] আসিবেই আসিবে, হ্যাঁ, পুর্বকালীন কওঁত যিরূশালেম-কন্যার রাজ্য আসিবে।” মীখা ৪:৮। সময় এসেছে প্রথম যুগলকে অগ্নিশিখার জ্বলন্ত তরবারী দ্বারা এদন থেকে পৃথক করে দেয়ার সময় থেকে যার দিকে পবিত্র লােকেরা আগ্রহ সহকারে তাকিয়ে ছিলেন; “ঈশ্বরের নিজস্ব মুক্তির নিমিত্ত ।” ইফিষীয় ১:১৪ । আদিতে ঈশ্বর মানুষের জন্য এ পৃথিবীটা রাজত্ব ও বসবাসের জন্য দিয়েছিলেন, কিন্তু মানুষ শয়তানের দ্বারা প্রতারিত হয়ে রাজত্ব হারিয়ে ফেলে এবং শয়তান বহুদিন যাবত তা তাঁর কুক্ষিগত করে রাখে, কিন্তু ঈশ্বর পরিত্রাণ পরিকল্পনার মাধ্যমে তা পুনরুদ্ধার করেন । পাপের দ্বারা যা হারিয়েছিল, তা সবই পুনরুদ্ধার করেন। “কেননা আকাশমণ্ডলের সৃষ্টিকর্তা সদাপ্রভু, স্বয়ং ঈশ্বর, যিনি পৃথিবীকে সংগঠন করিয়া নির্মাণ করিয়াছেন, তাহা স্থাপন করিয়াছেন, ও অনর্থক সৃষ্টি না করিয়া বাসস্থানার্থে নির্মাণ করিয়াছেন, তিনি এই কথা কহেন, “আমিই সদাপ্রভু, আর কেহ নয়।” যিশাইয় ৪৫:১৮। সৃষ্টির আদিতে ঈশ্বর যে বাসনা করেছিলেন তা এখন পূর্ণতা লাভ করল, যেহেতু এ পৃথিবীকেই ঈশ্বর মুক্তিপ্রাপ্তদের জন্য চিরকালিন বাসস্থান হিসেবে তাদের কাছে হস্তান্তর করলেন । GrHBen 234.1
“ধার্মিকেরা দেশের অধিকারী হইবে, তাহারা নিয়ত তথায় বাস করিবে।” গীত ৩৭৪২৯। GrHBen 234.2
ভাবী উত্তরাধিকারী করে তৈরী করতে অতিরিক্ত বাস্তব মনে করে ভয়ে অনেকে একই সত্য আধ্যাত্মিকতায় পরিচালিত করেছে যা আমাদেরকে এটাকে আমাদের ঘর হিসেবে দেখতে পরিচালিত করেছে। যীশু তাঁর শিষ্যদেরকে নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন যে তিনি তাদের জন্য পিতার ঘরে স্থান প্রস্তুত করতে গিয়েছিলেন। যারা ঈশ্বরের বাক্যের শিক্ষা গ্রহণ করেন তারা স্বর্গীয় আবাসের সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ থাকবেন না। তথাপি, “চক্ষু যাহা দেখে নাই, কর্ণ যাহা শুনে নাই, এবং মনুষ্যের হৃদয়াকাশে যাহা উঠে নাই, যাহা ঈশ্বর, যাহারা তাঁহাকে প্রেম করে, তাহাদের জন্য প্রস্তুত করিয়াছেন।” ১ করিন্থিয় ২:৯। ধার্মিকদের জন্য পুরস্কার কোন মানবীয় ভাষায় বর্ণনা করা পর্যাপ্ত নয়। যারা এটা দেখবে কেবল তারাই তা জানবে । কোন সীমিত মস্তিকের মানুষ ঈশ্বরের পরমদেশের মহিমা হৃদয়ঙ্গম করতে পারে না। GrHBen 234.3
বাইবেলে উদ্বারপ্রাপ্তগণের উত্তরাধিকারকে একটি দেশে” বলে অভিহিত করা হয়েছে । ইব্রীয় ১১:১৪-১৬। স্বর্গীয় মেষপালক তাঁর মেষ পালকে জীবন জলের দিকে পরিচালিত করেন । জীবন বৃক্ষ প্রত্যেক মাসে তাঁর ফল উৎপন্ন করে, ও এই বৃক্ষের পাতাগুলাে জাতিগণের সেবাদানের জন্য। চির প্রবাহমান জলের ঝরণা আছে, যা কাচের ন্যায় স্বচ্ছ এবং যার পাশের দোলায়মান বৃক্ষ সকল ঈশ্বরের উদ্ধারপ্রাপ্তগণের জন্য প্রস্তুত পৃথসমূহে ছায়া নিক্ষেপ করে। সেখানে সুদূর প্রসারিত সমতল ভূমিগুলাে সৌন্দর্য্যে স্ফীত হওয়া পাহাড়ের গা স্পর্শ করে ও ঈশ্বরের পর্বতমালা তাদের উন্নত শিখরগুলাের রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে । ঐ সব শান্তিপূর্ণ সমতল ভূমিতে, ঐ জীবন্ত ঝরণা সকলের তীরে ঈশ্বরের লােকেরা, দীর্ঘ প্রতীক্ষিত তীর্থ যাত্রীগণ ও ভ্রমণকারীগণ, তাদের ঘর খুঁজে পাবেন । “আমার প্রজাগণ শান্তির আশ্রমে, নিঃশঙ্কতার আবাসে ও নিশ্চিন্ত-তাঁর বিশ্রাম-স্থানে বাস করিবে” “আর শুনা যাইবে নাতােমার দেশে উপদ্রবের কথা, তােমার সীমার মধ্যে ধ্বংস ও বিনাশের কথা; কিন্তু তুমি আপন প্রাচীরের নাম পরিত্রাণ রাখিবে, আপন পুরদ্বারের নাম প্রশংসা রাখিবে ।” “আর লােকেরা গৃহ নির্মাণ করিয়া তাহার মধ্যে বসতি করিবে, দ্রাক্ষা ক্ষেত্র প্রস্তুত করিয়া তাহার ফল ভােগ করিবে । তাহারা গৃহ নির্মাণ করিলে অন্যে বাস করিবে না, তাহারা রােপণ করিলে অন্যে ভােগ করিবে না; বস্তুতঃ আমার প্রজাদের আয়ু বৃক্ষের আয়ুর তুল্য হইবে; এবং আমার মনােনীত লােকেরা দীর্ঘকাল আপন আপন হার শ্রমফল ভােগ করিবে।” যিশাইয় ৩২:১৮; ৬০:১৮; ৬৫:২১, ২২ । GrHBen 234.4
সেখানে প্রান্তর ও জনশূন্য স্থান আমােদ করিবে, মরুভূমি উল্লাসিত হইবে, ও গােলাপের ন্যায় উৎফুল্ল হইবে । “কণ্টকবৃক্ষের পরিবর্তে দেবদারু, শ্যাকুলের পরিবর্তে গুলমেদি উৎপন্ন হইবে; আর তাহা সদাপ্রভুর কীর্তিস্বরূপ হইবে, লােপহীন নিত্যস্থায়ী চিহ্ন হইবে।” “আর কেন্দুয়াব্যাঘ্ৰ মেষশাবকের সহিত একত্র বাস করিবে; চিতাব্যাঘ্ৰ, ছাগবৎসের সহিত শয়ন করিবে; গােবৎস, যুবসিংহ ও হৃষ্টপুষ্ট পশু একত্র থাকিবে; এবং ক্ষুদ্র বালক তাহাদিগকে চালাইবে।” “সেই সকল আমার পবিত্র পর্বতের কোন স্থানে হিংসা কিংবা বিনাশ করিবে না; কারণ সমুদ্র যেমন জলে আচ্ছন্ন, তেমনি পৃথিবী সদাপ্রভুবিষয়ক জ্ঞানে পরিপূর্ণ হইবে।” যিশাইয় ৩৫:১; ৫৫:১৩; ১১:৬, ৯। GrHBen 235.1
স্বর্গের পরিবেশে ব্যথা থাকতে পারে না। সেখানে আর কোন অশ্রুজল, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার শােভাযাত্রা, শােককারীর ব্যাজ থাকবে না। আর তিনি তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শােক বা আর্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না; কারণ প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইল।” “আর নগরবাসী কেহ বলিবে না, আমি পীড়িত; তন্নিবাসী প্রজাদের অপরাধের ক্ষমা হইবে।” প্রকাশিত বাক্য ২১:৪; যিশাইয় ৩৩:২৪। GrHBen 235.2
সেখানে রয়েছে নতুন যিরুশালেম, মহিমান্বিত নতুন পৃথিবীর রাজধানী, “সদাপ্রভুর হস্তস্থিত ভূষণার্থক মুকুট, তােমার ঈশ্বরের করতলস্থিত রাজকিরীট হইবে।” “সে ঈশ্বরের প্রতাপ বিশিষ্ট; তাহার জ্যোতি বহুমূল্য মণির, স্ফটিকবৎ নির্মল সূৰ্য্যকান্তমণির তুল্য।” “আর জাতিগণ তাহার দীপ্তিতে গমনাগমন করিবে; এবং পৃথিবীর রাজারা তাহার মধ্যে আপন আপন প্রতাপ আনেন।” “আমি যিরূশালেমে উল্লাস করিব, আমার প্রজাগণে আমােদ করিব; এবং তাহার মধ্যে রােদনের শব্দ কি ক্রন্দনের শব্দ আর শুনা যাইবে না।” “দেখ, মনুষ্যদের সহিত ঈশ্বরের আবাস; তিনি তাহাদের সহিত বাস করিবেন, এবং তাহারা তাহার প্রজা হইবে ; এবং ঈশ্বর আপনি তাহাদের সঙ্গে থাকিবেন ও তাহাদের ঈশ্বর হইবেন।” যিশাইয় ৬২:৩; প্রকাশিত বাক্য ২১:১১, ২৪; যিশাইয় ৬৫:১৯; প্রকাশিত বাক্য ২১:৩। GrHBen 235.3
ঈশ্বরের নগরে “সেখানে আর রাত্রি হইবে না।” কারও বিশ্রামের প্রয়ােজন হবে না বা ইচ্ছা হবে না। ঈশ্বরের ইচ্ছা সাধন ও তাঁর নামের প্রশংসা করতে কোন ক্লান্তি হবে না । আমরা সতত প্রভাতের সতেজতা অনুভব করব এবং সতত তা শেষ হওয়া থেকে দূরে থাকব । GrHBen 236.1
প্রদীপের আলােকে কিংবা সূর্যের আলােকে লােকদের কিছু প্রয়ােজন হইবে না, কারণ “প্রভু ঈশ্বর তাহাদিগকে আলােকিত করিবেন; এবং তাহারা যুগপর্যায়ের যুগে যুগে রাজত্ব করিবে।” প্রকাশিত বাক্য ২২:৫। এমন এক উজ্জ্বলতা সূর্যের আলাের স্থান নেবে যা অপ্রীতিকরভাবে অতিশয় উজ্জ্বল নয়, অথচ তা অপরিমিতভাবে দ্বিপ্রহরের উজ্জ্বলতাকে অতিক্রম করে । ঈশ্বরের ও মেষশাবকের মহিমা পবিত্র নগরীকে অম্রিয়মান চিরতরুণ আলােকে প্রাবিত করে, মুক্তি প্রাপ্তগণ চিরস্থায়ী দিনের সূর্যহীন দীপ্তিতে পদচারণ করে বেড়ান। GrHBen 236.2
“আর আমি নগরের মধ্যে কোন মন্দির দেখিলাম না; কারণ সর্বশক্তিমান প্রভু ঈশ্বর এবং মেষশাবক স্বয়ং তাহার মন্দিরস্বরূপ।” প্রকাশিত বাক্য ২১:২২। ঈশ্বরের লােকেরা পিতা ও পুত্রের সঙ্গে খােলাখুলি কথােপকথন করতে সুযােগ প্রাপ্ত । “কারণ এখন আমরা দর্পণে অস্পষ্ট দেখিতেছি।” ১ করিন্থীয় ১৩:১২ । আমরা ঈশ্বরের প্রতিকৃতি আয়নাতে প্রতিফলিত হওয়ার মত, প্রকৃতির সৃষ্টির কার্যাবলী ও মনুষ্যদের সঙ্গে তাঁর মাঝখানের কোন নিস্প্রভ করে দেয়া পর্দা ছাড়াই দেখব । আমরা তাঁর সামনে দাঁড়াব ও তাঁর শ্রীমুখের মহিমা দেখব। GrHBen 236.3
সেখানে, পরিত্রাণপ্রাপ্তগণ জানবেন, এমনকি যেভাবে তারা জানেন । ঈশ্বর নিজে আত্মাতে যে ভালবাসা ও সহানুভূতি প্রােথিত করে রেখেছে সেখানে সেই প্রকৃত সত্য ও মধুরতা অনুশীলন করতে দেখা যাবে। পবিত্র প্রাণীদের সঙ্গে মিলন ও কথােপকথন; পবিত্র দূতগণের ও সর্বযুগের বিশ্বস্তদের, যারা মেষশাবকের রক্তের দ্বারা আপনাদের বস্ত্র ধৌত ও শুভ করেছেন, তাদের সঙ্গে মিষ্ট সমাজবদ্ধ জীবন যে পবিত্র “স্বর্গ ও পৃথিবীস্থ সমস্ত পিতৃকূল” (ইফিষীয় ৩:১৪) —এই সমস্ত মুক্তি প্রাপ্তগণের শান্তি স্থাপন করতে সাহায্য করে । GrHBen 236.4
সেখানে অমর মস্তিষ্ক সকল, অফুরন্ত আনন্দ নিয়ে সৃজনশীল শক্তির বিস্ময়, উদ্ধার কাজের প্রেমের রহস্যের বিষয়ে ধ্যান করবে। সেখানে কোন নিষ্ঠুরতা থাকবে না, ঈশ্বরকে ভুলে যেতে প্রলােভিত করার জন্য কোন প্রতারণাকারী শত্রু থাকবে না। প্রতিদিন মনােবৃত্তির বিকশিত হবে, প্রতিটি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে । জ্ঞান অর্জন মনকে ক্লান্ত অথবা কর্মশক্তিকে পরিশ্রান্ত করবে না। সেখানে মহােত্তম উদ্যম উদ্যোগ চালিয়ে নেয়া যাবে, সর্বোচ্চ উচ্চাকাঙ্খর নাগাল পাওয়া যাবে। সর্বোচ্চ বাসনা বাস্তবায়িত করা যাবে, তথাপি সেখানে জয় করার জন্য নতুন নতুন উচ্চতা, প্রশংসা করার জন্য নতুন নতুন বিস্ময়, হৃদয়ঙ্গম করার জন্য নতুন নতুন সত্য, মন আত্মা ও দেহের শক্তিগুলাে প্রয়ােগ করার জন্যে নুতন সতেজ বিষয়বস্তুগুলাে আবির্ভূত হবে । GrHBen 237.1
বিশ্বের যাবতীয় ঐশ্বর্য সম্পদ ঈশ্বরের মুক্তিপ্রাপ্তগণের অধ্যয়নের জন্যে উন্মুক্ত হবে। নশ্বরতার শৃঙ্খলমুক্ত হয়ে তারা দূরের পৃথিবীগুলাের দিকে শ্রান্তি হীন উড্ডয়নের তাদের পেখম মেলে, -যে পৃথিবীগুলাে মানবীয় দুঃখ ও ক্লেশেপূর্ণ দৃশ্যে বেদনায়, আবেগে রােমাঞ্চিত শিহরিত হয়, আবার কোন মুক্তিপ্রাপ্ত আত্মার খবর পেয়ে খুশীর সঙ্গীতে জেগে উঠেছে। বর্ণনাতীত হর্ষ নিয়ে। পৃথিবীর সন্তানেরা অপতিত প্রাণীদের গ্রহে আনন্দ ও জ্ঞানে প্রবেশ করেন, তারা যুগ যুগ ধরে ঈশ্বরের সৃষ্টি নৈপূণ্যে যে জ্ঞান ভাণ্ডার লাভ করেছে তা তারা সহভাগ করে। তারা অম্লান দৃষ্টি দিয়ে ঈশ্বরের সৃষ্টির মহিমা- আপনাদের নির্ধারিত ক্রমানুসারে ঈশ্বরত্বের সিংহাসনের চারদিকে প্রদক্ষিণকারী সূর্য ও তারা ও সৌরজগতের মহিমার দিকে অবাক হয়ে তাকান। ক্ষুদ্রতম থেকে বৃহত্তম, সব কিছুর ওপরে সৃষ্টিকর্তার নাম অঙ্কিত রয়েছে, ও সব কিছুর ওপরে তাঁর শক্তির প্রাচুর্যতা প্রকাশমান। GrHBen 237.2
অনন্তকালের বছরগুলাে গড়িয়ে চলতে চলতে ঈশ্বর ও খ্রীষ্টের আরও সমৃদ্ধশালী এবং আরাে অধিক গৌরবময়তা উদঘাটিত হবে । জ্ঞানে যেমন প্রগতিশীল, তেমনি স্নেহ ভালবাসা শ্রদ্ধা ভক্তি এবং সুখ সৌভাগ্য বৰ্দ্ধিত হবে । মানুষ যত ঈশ্বর সম্বন্ধে জানবে, তাদের তত অধিক শ্রদ্ধা বাড়বে । যীশু যখন তাদের সম্মুখে মুক্তির ঐশ্বর্যের প্রাচুর্য ও শয়তানের বিরুদ্ধে মহা সংঘর্ষে আশ্চর্যপূর্ণ সাফল্য প্রাপ্তি উন্মুক্ত করেন, তখন উদ্ধারপ্রাপ্তগণের হৃদয় আরাে ব্যগ্র ভক্তিতে পুলকিত হয়, এবং আরও উল্লাসপূর্ণ আনন্দে তারা স্বর্ণময় বীণা সঞ্চালন করেন এবং অযুতের অযুত ও সহস্রের সহস্র কণ্ঠ সমস্বরে প্রশংসাগীত বৃদ্ধি করতে মিলিত হয় । GrHBen 237.3
“পরে স্বর্গে ও পৃথিবীতে ও পৃথিবীর নীচে ও সমুদ্রের উপরে যে সকল সৃষ্ট বস্তু, এবং এই সকলের মধ্যে যাহা কিছু আছে, সমস্তেরই এই বাণী শুনিলাম, যিনি সিংহাসনে বসিয়া আছেন, তাহার প্রতি ও মেষশাবকের প্রতি ধন্যবাদ ও সমাদর ও গৌরব ও কর্তৃত্ব যুগপর্যায়ের যুগে যুগে বর্তৃক ।” প্রকাশিত বাক্য ৫:১৩। GrHBen 237.4
মহা সংঘর্ষের শেষ হল । পাপ আর পাপীরা আর নেই । সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড নির্মল হয়েছে। বিশাল সৃষ্টিকে ঘিরে ঐক্য ও সুখের হৃদস্পন্দন বাজছে । যিনি সমস্ত সৃষ্টি করেছেন তাহা হতে, জীবন ও দীপ্তি ও সুখ প্রবাহিত হচ্ছে, মহাশূন্যের সীমাহীন রাজ্যে । ক্ষুদ্রতম অনু থেকে শুরু করে বিশালতম দুনিয়া সর্বপ্রকার বস্তু জীবন্ত ও জড় পদার্থ তাদের অনাবৃত সৌন্দর্যে ও বিশুদ্ধ আনন্দে ঘােষণা করে যে, ঈশ্বর প্রেম। GrHBen 238.1
*****