অদৃশ্য জগতের সাথে দৃশ্যমান জগতের যােগাযােগ, ঈশ্বরের দূতগণের পরিচর্যাকার্য, এবং মন্দ আত্মাগণের প্রতিনিধির বিষয় শাস্ত্রে পরিষ্কাররূপে প্রকাশিত হয়েছে এবং মানব ইতিহাসের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যরূপে বয়ন করা রয়েছে। মন্দ আত্মাগণের অস্তিত্ব অবিশ্বাস করার একটি ক্রমবর্ধমান প্রবণতা রয়েছে, যখন পবিত্র দূতগণ যারা “যাহারা পরিত্রাণের অধিকারী হইবে... তাহালের পরিচর্যার জন্য প্রেরিত”, (ইব্রীয় ১:১৪) অনেকে তাদের মৃতলের আত্মা বলে মনে করে থাকে। কিন্তু শাস্ত্র কেবলমাত্র ভাল ও মন্দ দূতগণের অস্তিত্ব সম্পর্কেই শিক্ষা দেয় না তবে বর্তমান প্রশ্নাতীত প্রমাণ এই যে, তারা মৃত ব্যক্তিদের বিদেহী আত্মাগণ নহে। GrHBen 33.1
মানুষ সৃষ্টির পূর্বে দুতগণের অস্তিত্ব ছিল; কারণ যখন পৃথিবীর ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছিল, “তকালে প্রভাতীয় নক্ষত্রগণ একসঙ্গে আনন্দরব করিল, ঈশ্বরের পুত্রগণ সকলে জয়ধ্বনি করিল।” ইয়ােব ৩৮:৭। মানুষের পাপে পতনের পর, জীবন বৃক্ষের প্রহরার জন্য দূতগণকে প্রেরণ করা হয়েছিল এবং এটি ছিল মানব সত্ত্বার মৃত্যুর পূর্বে। প্রকৃতিগতভাবে, দূতপণের স্থান মনুষ্যদের উর্ধ্বে কেননা গীতরচক বলেন, “দূতগণ তাপেক্ষা তাহাকে অল্পই ন্যূন করিয়াছ।” গীতসংহিতা ৮৪৫। GrHBen 33.2
সংখ্যা পরাক্রম এবং মহিমা স্বর্গীয় স্বতন্ত্র ঈশ্বরের সরকারের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক এবং পরিত্রাণ কাজের সঙ্গে তাদের ভূমিকা সম্পর্কে পবিত্র শাত্রের মাধ্যমে আমাদের জানানাে হয়েছে, “সদাপ্রভু স্বর্গে আপন সিংহাসন স্থাপন করিয়াছেন, তাঁহার রাজ্য কর্তৃত্ব কার সমস্তের উপরে।” আর ভাববাদী বলেন, “আমি সিংহাসনের চারিদিকে অনেক দূতের রব শুনিলাম।” রাজাদের রাজার কক্ষের মধ্যে তারা অপেক্ষারত— “তাহার বাক্যের রব শুনিলাম।” গীতসংহিতা ১০৩:১৯-২১; প্রকাশিত বাক্য ৫:১১। ভাববাদী দানিয়েল সহস্র স্বর্গীয় হিকদের দেখিলেন। প্রেরিত পৌল তাঁদের বষয় ঘােষণা করেন, “অযুতের অযুত,” “অগণিত লােক।” দানিয়েল ৭:১০; ইব্রীয় ১২:২২ । ঈশ্বরের বার্তাবাহকরূপে তাঁরা “বিদ্যুতার আভার সদৃশ্য যাতায়াত করে (যিহিষ্কেল ১:১৪), তাঁদের প্রতাপ অমল তেজময় এবং তারা অমল দ্রুত গমন। করে। যে দূত ত্রাণকর্তার কবরের নিকটে আবির্ভূত হয়েছিলেন, তাঁর দৃশ্য “বিদ্যুতের ন্যায়, এবং তাহার বস্তু হিমের ন্যায়, শুভ্রবর্ণ,” যার ভয়ে প্রহরীগণ কাঁপতে লাগল আর তারা “মৃতবৎ হইয়া পড়িল।” মথি ২৮:৩, ৪। আর যখন উদ্ধত অশূররাজ সহরীর ঈশ্বরের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা করল এবং ইস্রায়েলকে বিনাশের ভয় দেখাল, “পরে সেই রাত্রিতে, সদাপ্রভুর দূত যাত্রা করিয়া অনূরীয়দের শিবিরে এক লক্ষ পঁচাশি সহস্র লােককে বধ করিলেন। সেখানে তিনি সনহেরীবের সৈন্যদের সমস্ত বল্যান বীর প্রধান লােককে ও সেনাপতিকে উচ্ছেদ করিলেন । “তাহাতে সহেরীর লজ্জিত হইয়া আপন দেশে ফিরিয়া গেল।” ২ রাজাবলি ১৯:৩৫; ২ বংশাবলি ৩২:২১। GrHBen 33.3
ঈশ্বরের সন্তানদের প্রতি অনুগ্রহের কার্য সম্পাদন করবার উদ্দেশে দূতগণকে প্রেরণ করা হয়। প্রতিজ্ঞাত আশীর্বাদের জন্য অব্রাহামকে; সদোমের তােরণে, অগ্নিময় ধ্বংস হতে ধার্মিখ লােটকে; মরুভূমির মধ্যে ক্ষুধার ক্লান্তির মরণােন্মুখখা অবস্থা থেকে এলিয়কে; শত্রুগণ কর্তৃক আবদ্ধ অবস্থায় রথ এবং অগ্নিময় অশ্ব দ্বারা ইলিশায়কে; পৌত্তলিক রাজার দরবারে ঐশ্বরিক জ্ঞান অন্বেষণের সময়, অথবা যখন সিংহদের শিকার হলেন যখন তখন দানিয়েলকে; হেরােদের অন্ধকারময় কারাকক্ষে পিতর যখন মৃত্যুর শিকার হলেন; ফিলিপীতে বন্দীদের কাছে; রাতে সমুদ্রের ঝড়ের সময় পৌলও তাঁর সঙ্গীগণের কাছে; সুসমাচার গ্রহণের জন্য কর্ণেলিয়াসের মন খুলে দিতে; পরজাতি অতিথিদের কাছে পরিত্রাণের সুসমাচার বার্তা দেবার জন্য এভাবে সর্বযুগে, পবিত্র দূতগণ ঈশ্বরের লােকদের পরিচর্যা করেছেন । GrHBen 34.1
খ্রীষ্টের প্রত্যেক অনুগামীর কাছে একজন ব্রক্ষণ দূত নিয়ােজিত আছে। এই স্বর্গীয় প্রহরীগণ দুষ্টদের ক্ষমতা হতে ধার্মিকদের রক্ষা করেন । এই শয়তান মনে মনে এই কথা উপলব্ধি করতে পেরেছিল আর বলেছিল: “ইয়ােব কি বিনা লাভে ঈশ্বরকে ভয় করে? তুমি তাহার চারিদিকে, তাহার বাটীর চারিদিকে ও তাহার সস্বের চারিদিকে কি বেড়া দেও নাই?” ইয়ােব ১:৯, ১০। প্রতিনিধি, যদ্বারা ঈশ্বর তাঁর লােকদের রক্ষা করেন, সে সম্পর্কে গীতরচকের কথায় বলা হয়েছে : “সদাপ্রভুর দূত যাহারা তাহাকে ভয় করে, তাহাদের চারিদিকে শিবির স্থাপন করেন, আর তাহাদিগকে উদ্ধার করেন।” গীতসংহিতা ৩৪:৭। যারা ত্রাণকর্তাকে বিশ্বাস করে, তাদের সম্পর্কে তিনি বলেন: “দেখিও, এই ক্ষুদ্রগণের মধ্যে একটিকেও তুচ্ছ করিও না; কেননা আমি তােমাদিগকে কহিতেছি, তাহাদের দূতগণ স্বর্গে সতু আমার স্বর্গ পিতার মুখ দর্শন করেন।” মথি ১৮:১০, ১১। যে দূতগণ ঈশ্বরের সন্তানদের পরিচর্যা কাজের জন্য নিযুক্ত তারা সর্বদা তাঁর সান্নিধ্যে আসেন । GrHBen 34.2
এইরূপে ঈশ্বরের লােকেরা, ক্ষতিসাধনকারী নিদ্রাহীন অন্ধকারের অধিপতির প্রতারণামূলক শক্তির কাছে অনাবৃত এবং তারা সকল প্রকার মন্দ শক্তি বিরুদ্ধে লিপ্ত, আর তাদের জন্য অবিরত স্বর্গীয় রক্ষদূতের তত্ত্বাবধান কাজ নিশ্চিত। নিরর্থক এরূপ নিশ্চয়তা দেয়া হয়নি। ঈশ্বর তাঁর সন্তানদের অনুগ্রহ ও সুরক্ষার প্রতিজ্ঞার নিশ্চয়তা দিয়েছেন, কারণ তাদের মন্দতার শক্তিশালী প্রতিনিধির সম্মুখীন হতে হবে তাঁর বহুসংখ্যক প্রতিনিধি, তারা স্থির সংকল্প এবং অক্লান্ত, তাদের ঈর্ষা ও বিদ্বেষ ও ক্ষমতা কোনটিই সহজে তুচ্ছ বা অবহেলা করা যায় না। GrHBen 34.3
মন্দ আত্মাগণ, আদিতে নিষ্পাপরূপে সৃষ্ট হয়েছিল, তারা স্বভাবে, ক্ষমতায় এবং প্রতাপে পবিত্র দূতদের সমান ছিল যা এখন শুও ঈশ্বরের বার্তাবাহকদের রয়েছে। কিন্তু পাপের মধ্য দিয়ে পতিত হয়ে, তারা ঈশ্বরের অসম্মান এবং মানব ধ্বংসের ক্ষেত্রে সংঘবদ্ধ হয়েছে। তারা বিদ্রোহে শয়তানের সঙ্গে সংযুক্ত হল এবং তাঁর সঙ্গে স্বর্গ হতে নিক্ষিপ্ত হল, তারা পরবর্তী যুগে তাঁর সঙ্গে ঐশ্বরিক আধিপত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তাঁর সঙ্গে সহযােগিতা করল। তাদের মিত্রসঙ্গী এবং সরকার ও তাদের বিভিন্ন মিত্র, তাদের বিজ্ঞতা এবং চাতুর্য এবং মনুষ্যের শান্তি এবং সুখের বিরুদ্ধে তাদের বিদ্বেষ পরায়ণ পরিকল্পনার বিষয়ে শাস্ত্র আমাদের কাছে ব্যক্ত করেছে । GrHBen 35.1
পুরাতন নিয়মের ইতিহাস তাদের স্থায়িত্ব এবং প্রতিনিধিত্বের বিষয়। সম্পর্কে মাঝে মধ্যে উল্লেখ করে; কিন্তু এটি ছিল, ঐ সময় যখন খ্রীষ্ট পৃথিবীতে ছিলেন ঐ একই মন্দ আত্মাগণ অতীব লক্ষ্যণীয় উপায়ে তাদের ক্ষমতা প্রকাশ করেছিল । খ্রীষ্ট মানুষের মুক্তির জন্য পরিকল্পিত উপায়ে এলেন, আর শয়তান জগতকে বশীভূত করতে ও তাঁর অধিকার জাহির করতে দৃঢ় সংকল্প হল । প্যালেস্টাইন দেশ ব্যতিরেকে পৃথিবীর প্রত্যেক অংশে প্রতিমা পূজা প্রতিষ্ঠা করতে সে কৃতকার্য হয়েছিল। কেবলমাত্র এই দেশ প্রলােভনকারীর প্রভাবে সমর্পিত হয়নি, যেখানে খ্রীষ্ট লােকদের ওপরে স্বর্গের আলাে বিকিরিত করলেন। এখানে দু’টি প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি প্রাধান্য দাবি করেছিল । যীশু তাঁর প্রেমের বাহু প্রসারিত করে দিয়ে তাদের আহবান করছিলেন যারা তাতে ক্ষমা এবং শান্তি খুঁজে পাবে । অন্ধকারের বাহিনী দেখল যে, তারা সীমাহীন নিয়ন্ত্রণ লাভ করতে পারেনি, আর তারা বুঝতে পারল যে, যদি খ্রীষ্টের উদ্দেশ্য সফল হয়, তবে তাদের নিয়ম-কানুন ত্বরায় শেষ হয়ে। যাবে। শয়তান একটি শৃঙ্খলিত সিংহের ন্যায় ক্রুদ্ধ হল এবং প্রকাশ্যে মানুষের দেহে ও মনে তাঁর ক্ষমতা প্রয়ােগ করল । GrHBen 35.2
মানুষ যে ভূত দ্বারা আক্রান্ত তা নতুন নিয়ম পরিষ্কাররূপে বলেছে । এভাবে যাতনাগ্রস্ত ব্যক্তিগণ কেবলমাত্র স্বাভাবিক কারণে পীড়াগ্রস্ত হয়নি। যাদের মধ্যে যীশু কাজ করে যাচ্ছিলেন ঐ বিষয়ে তাঁর প্রকৃত ধারণা ছিল, আর তিনি সরাসরিভাবে মন্দ আত্মাগণের উপস্থিতি এবং প্রতিনিধিকে উপলব্ধি করেছিলেন। GrHBen 35.3
তাদের সংখ্যা, ক্ষমতা এবং দারুণ বিদ্বেষ এক হৃদয়গ্রাহী দৃষ্টান্ত, এবং খ্রীষ্টের ক্ষমতা এবং অনুগ্রহের দৃষ্টান্তও শাস্ত্রে প্রদান করা হয়েছে, আর তা ছিল গাদারীয়দের দেশে মন্দ আত্মাকে সুস্থকরণ । ঐসব দুর্ভাগা ক্ষিপ্ত পাগল, অবজ্ঞাত, বিরহিত, মানসিক যন্ত্রণাগ্রস্ত, ফেনায়িত, বিক্ষিপ্ত, এইসব তাদের চিৎকার ধ্বনি দ্বারা বায়ুমণ্ডল পূর্ণ করে দিচ্ছিল, তাদের নিজেদের প্রতি নিজেরা বিদ্রোহ করছিল এবং যারা তাদের কাছে আসে তাদেরকে বিপদগ্রস্ত করছিল। রক্তক্ষরণ এবং বিকলাঙ্গ শরীর এবং বিক্ষিপ্ত মন একটি দৃশ্য উপস্থাপন করে যা অন্ধকারের অধিপতির কাছে আনন্দদায়ক । “আমার নাম বাহিনী, কারণ আমরা অনেকগুলি আছি।” মার্ক ৫৪৯। রােমীয় সৈন্যদের মধ্যে তিন থেকে পাচ হাজার সৈন্য নিয়ে একটি বাহিনী গঠিত হত । শয়তানের বাহিনীও দলে দলে বিভক্ত হয়ে চলত । তাদেরও বাহিনী বলা হত। GrHBen 35.4
যীশুর আদেশে মন্দ আত্মারা তাদের শিকারদের ছেড়ে দিল, আর তারা শান্ত হয়ে যীশুর চরণে বসল, তারা এখন তাঁর অনুগত, বুদ্ধিমান এবং নম্র ও ভদ্র। কিন্তু মন্দ আত্মাগণ বড় এক শূকর পাল সমুদ্রের মধ্যে নিয়ে যেতে অনুমতি দেওয়া হল; আর গাদারীয়বাসীদের কাছে এই ক্ষতি খ্রীষ্টের বর্ষিত আশীর্বাদকে ছাপিয়ে উঠল এবং স্বর্গীয় নিরাময় দানকারীকে অনুনয় বিনয় করা হল যেন তিনি চলে যান। এই ছিল পরিণাম যা শয়তানই ভােগ করার জন্য পরিকল্পনা করেছিল । তাদের ক্ষয় ক্ষতির দায়দায়িত্ব যীশুর ওপর চাপিয়ে দিয়ে সে লােকদের স্বার্থপর ভীতির সঞ্চার করল এবং তাঁর বাক্য শ্রবণে তাদের সম্মুখে বাধা সৃষ্টি করল । শয়তান সর্বদা ক্ষয় ক্ষতি, দুর্ভাগ্য, এবং দুঃখকষ্টের জন্য খ্রীষ্টানদের দোষী করছে যা প্রকৃতপক্ষে তাঁর এবং তাঁর প্রতিনিধিদের ওপরে বর্তায়। GrHBen 36.1
তবে খ্রীষ্টের উদ্দেশ্য বানচাল হয়ে যায়নি। তিনি মন্দ আত্মদেরকে শূকর পাল বিনষ্ট করার অনুমতি দিয়েছিলেন যা ছিল যিহূদীদের প্রতি একটি ভৎসনা স্বরূপ, যারা লাভের স্বার্থে ঐ সকল অশূচি পশু পালন করছিল। যদি খ্রীষ্ট মন্দ আত্মাদের ধরে না রাখতেন তবে কেবলমাত্র শূকর নয়, কিন্তু শূকর পালক এবং মালিকের দশাও শূকরদের ন্যায় হত । শূকর পালক এবং মালিককে রক্ষা করার ক্ষমতা ছিল একমাত্র তাঁর, তিনি করুণা ভরে তাঁর ক্ষমতা ব্যবহার করলেন । অধিকন্তু এই ঘটনা ঘটবার অনুমতি দেয়া হয়েছিল যেন শিষ্যগণ মানুষ এবং পশুদের ওপরে শয়তানের নিষ্ঠুর ক্ষমতার সাক্ষ্য প্রদান করে । ত্রাণকর্তা চাইলেন যেন তাঁর অনুগামীবর্গের শত্রুর সম্পর্কে একটি ধারণা থাকে, যার সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ হয়ে বসতে পারে, যেন তারা তাঁর চাতুরী দ্বারা প্রতারিত এবং পরাজিত না হয় । এটিও তাঁর ইচ্ছা ছিল যেন ঐ অঞ্চলের লােকেরা, শয়তানের ক্ষমতা চূর্ণ করতে এবং তাঁর বন্দীদের মুক্ত করতে দেখে । আর যদিও যীশু নিজে ছেড়ে গেলেন, লােকেরা এত আশ্চর্য উপায়ে মুক্ত হল, যে তারা তাদের উপকারকারীর করুণা ঘােষণা করার উদ্দেশে রয়ে গেল । GrHBen 36.2
শাস্ত্রে অন্যান্য একই প্রকার ঘটনা লিপিবদ্ধ করা রয়েছে। সুরফৈনীকীয় একজন স্ত্রীলােকের কন্যাকে একটি মন্দ আত্মায় পেয়েছিল, যাকে যীশু তাঁর বাক্য দ্বারা বের করেছিলেন । মার্ক ৭:২৬-৩০। “একজন ভূতগ্রস্থ, অন্ধ এবং গােগা” (মথি ১২:২২); একজন যুবককে বােবা আত্মায়। পেয়েছিল যে প্রায়ই তাকে “আগুনে জলে ছুড়ে মারত, যেন তাকে বিনষ্ট করতে পারে” (মার্ক ৯:১৭-২৭); এই পাগল ব্যক্তি যাকে “অশুচি ভূতের আত্মায় পাইয়াছিল” (লূক ৪:৩৩-৩৬), সে কফরহুমে বিশ্রামবারে ধর্মধামের নীরবতা ভঙ্গ করত সকলেই এই দয়ার্দ্র ত্রাণকর্তা কর্তৃক সুস্থ হল । প্রায় প্রতিটি ঘটনায় খ্রীষ্ট মন্দ আত্মাকে একজন জ্ঞানী সত্ত্বারূপে উদ্দেশ্য করে বলতেন, যেন সে তাঁর শিকারের মধ্য থেকে বের হয়ে আসে এবং সে তাকে আর যাতনা না দেয় । কফরনহুমের আরাধনাকারীগণ, তাঁর মহা ক্ষমতা দেখে, “তখন সকলে চমৎকৃত হইল, এবং পরস্পর বলাবলি করিতে লাগিল, এ কেমন কথা? ইনি ক্ষমতায় ও পরাক্রমে অশুচি আত্মাদিগকে আজ্ঞা করেন, আর তাহারা বাহির হইয়া যায় ।” লুক ৪:৩৬। GrHBen 36.3
ঐ সকল মন্দ আত্মা প্রাপ্ত ব্যক্তিগণ সাধারণত মহাযন্ত্রণা ভােগের একটি অবস্থাকে চিত্রিত করেছিল; তথাপি এগুলাে ছিল এই নিয়মের ব্যতম। অতিপ্রাকৃত ক্ষমতা লাভের খাতিরে; কেউ কেউ শয়তানের প্রভাবকে স্বাগতম জানাত। অবশ্য মন্দ আত্মার সঙ্গে এগুলাের কোন বিবাদ ছিল না। এই শ্রেণীর লােকদের মধ্যে তারা ছিল, যারা ভবিষ্যৎ কথনের (ভবিষৎবক্তা) আত্মা প্রাপ্ত হয়েছিল— শিমােন মাগুস, মায়াবী ইলুম, এবং সেই তরুণী কুমারী যে ফিলীপীতে পৌল এবং শীলের অনুসরণ করেছিল । GrHBen 37.1
প্রত্যক্ষ এবং পর্যাপ্ত শাস্ত্রমালার সাক্ষ্য থাকা সত্বেও যারা দিয়াবল এবং তাঁর দূতগণের শক্তির অতিত্বকে অস্বীকার করে, মন্দ আত্মার প্রভাব থেকে মহা বিপদ বলে তাদের আর কিছু নেই। আমরা যাবৎ তাদের ছলনা সম্পর্কে অবিদিত থাকব, তারা প্রায় অচিন্তনীয় সুযােগ নেবে; অনেকে তাদের পরামর্শের প্রতি মনােযােগ প্রদান করবে, যখন তারা নিজেরা মনে করবে, তারা তাদের নিজেদের জ্ঞান বুদ্ধির নির্দেশ অনুসারে চলছে। এই কারণে, যেমন আমরা শেষকালের দিকে অগ্রসর হচ্ছি, এই সময় শয়তান সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তি দিয়ে কাজ করবে যেন প্রতারিত করতে এবং ধ্বংস করতে পারে, সেজন্য সে সর্বস্থানে এমন ধর্মীয় বিশ্বাস ছাড়িয়ে দিচ্ছে যে, তাঁর যেন কোন অস্তিত্বই নেই। নিজেকে এবং তাঁর কাজের পদ্ধতি আড়াল করে রাখার এটি তাঁর কৌশল । GrHBen 37.2
আমরা তাঁর প্রতারণার কলাকৌশল জেনে ফেলি, এছাড়া বৃহত্তম ভয় বলে মহা প্রতারকে কাছে আর কিছু নেই। বরং তাঁর চিরত্র এবং উদ্দেশ্য গােপন করা ভাল, সে নিজেকে এমন কোন ভূমিকায় বা স্থানে দাড় করায় যেন, সে অবজ্ঞা বা বিদ্রুপ ছাড়াই মানসিক চাঞ্চল্য সক্রিয় করতে পারে । তাকে যদি হাস্যস্পদ বা বিরক্তিকর বস্তু, অঘটন, আধাপশু এবং আধামানব করে অঙ্কন করা হয়, তবে সে খুব সন্তুষ্ট হবে। সে সুখী যদি শুনতে পায় যে, যারা নিজেদের জ্ঞানী ও সবজ্ঞ মনে করে তাদের দ্বারা তাঁর নামটি কোন খেলায় ও বিদ্রুপাত্মক কথাবার্তায় ব্যবহার করা হয়। GrHBen 37.3
কারণ সে নিজেকে পূর্ণলক্ষতার মুখােস দ্বারা আচ্ছাদিত করেই যে, এই কারণে প্রশ্নটি এত ব্যাপকভাবে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে ঃ “এমন একটি সত্ত্বার কি কোন অস্তিত্ব আছে?” এটি তাঁর কৃতকার্যতার একটি প্রমাণ যে, যেসব যুক্তি শাস্ত্রের সরল সহজ সাক্ষ্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে যেগুলাে ধর্মীয় বিশ্বে সার্বজনীনভাবে গ্রহণ করা হয়। আর এর কারণ যারা তাঁর প্রভাব সম্পর্কে অচেতন শয়তান অতীব সহজ উপায়ে তাদের মন বশীভূত করতে পারে, ঈশ্বরের বাক্যে তাঁর ক্ষতিকর কার্যের বিষয় আমাদের অধিক দৃষ্টান্ত দেয়, আর তা আমাদের সামনে তাঁর গােপন কর্মশক্তি উন্মােচন করবে, আর এভাবে আমাদেরকে তাঁর আকস্মিক আক্রমণের বিরুদ্ধেআমাদের ওপরে প্রহরী নিয়ােগ করবে । GrHBen 38.1
শয়তানের শক্তি এবং তাঁর বাহিনীর অপকারের ইচ্ছা কেবল আমাদেরকে ন্যায়সঙ্গতভাবে হুশিয়ারী করে দিতে পারে যদি আমরা আমাদের মুক্তিকর্তার সর্বোচ্চ শক্তিতে নিরাপদ আশ্রয় এবং মুক্তি খুঁজে পেতে পারি । যত্নসহকারে, আমাদের বাড়ী-ঘরে খীল, হুড়কো, এবং তালাচাবি লাগিয়ে আমাদের সম্পদ ও আমাদের নিজেদের দুষ্ট লােকদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারি; কিন্তু আমরা খুব অল্পই মন্দ দূতগণের বিষয় চিন্তা করি, যারা অবিরত আমাদের কাছে হানা দেবার চেষ্টা করছে, এবং যারা আমাদের ওপরে আক্রমণ করবে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের নিজেদের শক্তি কোন প্রতিরােধ পদ্ধতি নেই । সুযােগ পেলে তারা আমাদের অন্যমনস্ক করতে পারে আমাদের, শরীর বিকলাঙ্গ করতে পারে, আমাদের উৎপীড়ন করতে পারে, আমাদের সম্পদ ও আমাদের জীবন ধ্বংস করতে পারে । তাদের একমাত্র আনন্দ দুঃখ কষ্ট এবং ধ্বংসে। যারা ঐশ্বরিক দাবি প্রত্যাখ্যান করে শয়তানের প্রলােভনের কাছে নিজেদের সঁপে দেয় যে পর্যন্ত না ঈশ্বর তাদেরকে মন্দ আত্মার নিয়ন্ত্রণে ছেড়ে দেন, তাদের অবস্থা ভয়াবহ। কিন্তু যারা খ্রীষ্টের অনুসরণ করে, তারা চিরকাল তাঁর সতর্ক তত্ত্বাবধানের অধীন থাকে। তাদের রক্ষা করার জন্য স্বর্গ থেকে শক্তিশালী দূত প্রেরণ করা হয়। দুষ্ট ব্যক্তি ঈশ্বর প্রদত্ত কড়া প্রহরী বেষ্টনীর ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না, যা তিনি তাঁর লােকদের চারপার্শ্বে স্থাপন করেছেন। GrHBen 38.2
*****