শাস্ত্রে প্রদর্শিত পবিত্র দূতগণের পরিচর্যা কাজ খ্রীষ্টের প্রত্যেক অনুগামীর কাছে সান্ত্রনাদায়ক এবং মূল্যবান। কিন্তু এই বিষয়ের ওপরে বাইবেলের শিক্ষা দুর্বোধ্য এবং জনপ্রিয় ধর্মতত্ত্ব দ্বারা বিকৃত হয়ে পড়েছে । প্রাকৃতিক অমরত্বে ধর্মতত্ত্ব, প্রথমত, পৌত্তলিক দর্শন বিদ্যা থেকে আনয়ন করা হয়েছিল এবং মহা ধর্মভ্রষ্টতার অন্ধকারে খ্রীষ্টান বিশ্বাসে একত্রে এটি মিশ্রিত করা হয়েছিল, যা সত্যকে উচ্ছিন্ন করেছে, যা শাস্ত্রে এত সহজে শিক্ষা দেয়া হয়েছিল যে, “মৃতেরা কিছুই জানে না ।” অগণিত জনতা বিশ্বাস করেছে যে, মৃতব্যক্তিদের আত্মাগণই “সেবাকারী আত্মা, যারা পরিত্রাণের অধিকারী হবে, তাদের পরিচর্যার জন্য প্রেরিত হয়েছেন ।” আর এটি স্বর্গীয় দূতগণের অস্তিত্ব সম্পর্কে শাস্ত্রের সাক্ষ্য এবং একজন মানব সত্ত্বার মৃত্যুর পূর্বে মানব ইতিহাসের সঙ্গে তাদের যােগাযােগ সত্ত্বেও । GrHBen 115.1
মৃত্যুতে মানুষের সচেতনতার শিক্ষা বিশেষ করে এই বিশ্বাসে যে, মৃতগণের আত্মা জীবিতদের পরিচর্যা করতে ফিরে যায়, আর এটি আধুনিক আত্মিকদের পথ প্রস্তুত করেছে । মৃতগণ যদি ঈশ্বর এবং দূতগণের সান্নিধ্যে প্রবেশানুমতি লাভ করে থাকে এবং পূর্বে তাদেরকে যে অগাধ জ্ঞান লাভের সুযােগ দেয়া হয়েছিল তা যদি তারা ফিরে পায় তবে কেন তারা পৃথিবীতে ফিরে এসে জীবিতদের জ্ঞান দান করে না এবং তাদের শিক্ষা দেয় না? যদি জনপ্রিয় ধর্মগুরুদের দ্বারা যেমন শিক্ষা দেয়া হয় যে, মৃতদের আত্মা এই পৃথিবীতে তাদের বন্ধুদের চারপাশে বা ওপর দিয়ে ইতস্তত ঘােরাঘুরি করে বেড়ায়, তাহলে কেন তারা তাদের বন্ধুদের সাথে যােগাযােগ করে সমস্ত মন্দের বিরুদ্ধে তাদের সতর্ক করে দেয় না, অথবা দুঃখ-কষ্টে তাদের সান্ত্বনা দেয় না? মৃত্যুতে মানুষের চেতনায় যারা বিশ্বাস করে জ্যোতির্ময় আত্মাদের দ্বারা যােগাযােহকৃত স্বর্গীয় আলােকে তারা কিভাবে প্রত্যাখ্যান করতে পারে? এখানে একটি প্রণালী রয়েছে পবিত্র বলে বিবেচনা করা হয়, যার মাধ্যমে শয়তান তাঁর উদ্দেশ্য সম্পন্ন করার চেষ্টা করে। পতিত দূতগণ যারা তাঁর আদেশ পালন করে তারা আত্মিক জগৎ থেকে বার্তাবাহকরূপে আবির্ভূত হয় । তারা প্রকাশ্যে ব্যক্ত করে যে, তারা মৃত লােকদেরকে, জীবিতলােকদের সঙ্গে কথােপকথন করার জন্য নিয়ে আসে, দিয়াবলের অধিপতি তাদের মনের ওপরে তাঁর সম্মােহনকারী প্রভাব বিস্তার করে । মানুষের সম্মুখে তাদের পরলােকগত বন্ধুদের মূর্তি উপস্থিত করার শক্তি তাঁর রায়োই { কৃত্রিম বা নকল বস্তুই নিখুঁত; পরিচিত চেহারা, কথা, গলার স্বর, বিস্ময়কর স্বতন্ত্রতার সঙ্গে অবিকলরূপ সৃষ্টি করে থাকে । এই নিশ্চয়তা দ্বারা অনেকে সান্ত্বনা লাভ করে যে, তাদের প্রিয়জনেরা স্বর্গীয় শান্তি উপভােগ করছে, নিঃসন্দেহে কোন বিপদ নেই, তারা প্রতারক আত্মাগণ এবং দিয়াবলের কথায় কর্ণপাত করে।” GrHBen 115.2
যখন তারা এই বিশ্বাসে উপনীত হয়েছে যে, প্রকৃতপক্ষে মৃতেরা। তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য ফিরে আসে, যারা অপ্রস্তুত অবস্থায় কবরে চলে যায়, শয়তান তাদেরকে উপস্থিত করায়। তারা দাবী করে যে তারা স্বর্গে সুখে আছে এবং এমনকি সেখানে তারা উচ্চপদ অধিকার করে আছে, আর এভাবে খুব ব্যাপক ভাবে ভুল শিক্ষা দেয়া হয়ে থাকে যে, ধার্মিক ও দুষ্টদের মধ্যে কোন ব্যবধান তৈরি করা হয় নি । কখনাে কখনাে আত্মাগণের জগৎ থেকে আসা ভানকারী দর্শনার্থীরা এমন সতর্কবাণী উচ্চারণ করে যা সত্য বলে প্রমাণিত হয় । তারপর যখন আস্থা স্থাপিত হয়, তখন তারা এমন ধর্মশিক্ষা উপস্থাপন করে যা সরাসরি শাস্ত্রের ওপর বিশ্বাসের ভিত্তিকে দুর্বল করে দেয় । পৃথিবীতে তাদের বন্ধুরা মঙ্গলের জন্য গভীর আগ্রহ নিয়ে তারা অবিভূত হয়, তারা ধীরে ধীরে বিপজ্জনক ভুল প্রবেশ করায়, প্রকৃত ঘটনা হল যে তারা কিছু সত্য বলে এবং ভবিষ্যতে কি ঘটাবে তা বলে দেয় তাদের উক্তিগুলাে দৃশ্যত নির্ভরযােগ বলে মনে হয়; আর তাদের ভ্রান্ত শিক্ষাগুলাে তাৎক্ষনিকভাবে অসংখ্যলােক গ্রহণ করে, এবং নির্ভর যােগ্য বলে বিশ্বাস করে, যেন ওগুলাে বাইবেলের অতীব পবিত্র সত্য। ঈশ্বরের ব্যবস্থা। এক পার্শ্বে রেখে দেয়া হয়, অনুগ্রহের আত্মাকে তুচ্ছ করা হয়, নিয়মের রক্তকে অপবিত্র বস্তু বলে গণ্য করা হয় । আত্মাগণ খ্রীষ্টের পবিত্রতাকে অস্বীকার করে, এমনকি সৃষ্টিকর্তাকে তাদেরই সমস্থানে স্থাপন করে। এরূপে এক নতুন ছদ্মবেশ ধারণ করে মহা বিদ্রোহ এখনাে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে তাঁর সংগ্রাম চালিয়ে যায়, যা স্বর্গে সূচিত হয়েছিল এবং প্রায় ছয় হাজার বছর পর্যন্ত পৃথিবীতে চলছে। GrHBen 116.1
অনেকে আধ্যাত্মিক অভিব্যক্তিগুলাের কারণ ব্যাখ্যার জন্য মাধ্যমের অংশ হিসেবে হলনা ও হাতের কৌশল-চাতুরীগুলোকে পুরােপুরি আরােপ করতে সচেষ্ট হয়। কিন্তু তখন এটি সত্য যে, এই চাতুর্যের ফলাফল প্রায়ই খাটি বলই দেখান হয়, এবং অতি প্রাকৃত শক্তির প্রদর্শনীও লক্ষ্য করা যায় । রহস্যময় মােড়ক, যার মাধ্যমে আধুনিক আধ্যাত্মবাদ শুরু হয়লি যা মানুষের ফাকিবাজি অথবা চতুর্থ বা চালাকি ছিল না, তা ছিল সরাসরি মন্দ দূতদের কাজ, যারা অবশেষে নিজেদের সফল আত্ম-ধ্বংসকারী বিভ্রম হিসেবে প্রকাশ করে। অনেকে এই বিশ্বাস দ্বারা ফাঁদে আটকা পড়বে যে, আত্মিকবাদ কেবল একটি মানবীয় জুয়াচুরি; যখন প্রদর্শনের মাধ্যমে মুখােমুখি আনয়ন করা হল, তখন তারাতাকে অতি প্রাকৃতিক বলে শ্রদ্ধা না করে পারবে না। তারা প্রতারিত হবে এবং তারা ওগুলােকে ঈশ্বরের মহা ক্ষমতা বলে গ্রহণ করে নেবে । GrHBen 116.2
এই ব্যক্তিরা, শয়তান এবং তাঁর প্রতিনিধিদের দ্বারা এমসিদ্ধ আশ্চর্য কাজগুলাে দেখে শাস্ত্রের সাক্ষ্য উপেক্ষা করে। এটি ছিল পৈচাশিক বা অশুভ সাহায্য যার দ্বারা ফরৌণের যাদুকরেরা ঈশ্বরের কার্য নকল করতে সক্ষম হয়ে ছিল । পৌল সাক্ষ্য দেন যে, খ্রীষ্টের দ্বিতীয় আগমনের পূর্বে শয়তানের একই ধরণের অশুভ শক্তি সমূহ প্রদর্শিত হবে। প্রভুর দ্বিতীয় আগমন এ ভাবে হবে, “সেই ব্যক্তির আগমন শয়তানের কার্যসাধন অনুসারে মিথ্যার সমস্ত পরাক্রম ও নানা চিহ্ন ও অদ্ভুত লক্ষণ সহকারে হইবে এবং যাহারা বিনাশ পাইতেছে, তাহাদের সম্বন্ধে অধার্মিকতার সমস্ত প্রতারণা সহকারে হইবে । “২থিষলনীকীয় ২:৯, ১০ আর প্রেরিত যােহন, শেষকালের অলৌকিক কাজের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন: “আর সে মহং সহৎ চিহ্ন কার্য করে; এমন কি মনুষ্যদের সাক্ষাতে স্বর্গ হইতে পৃথিবীতে অগ্নি নামায়। এইরূপে সেই পশুর সাক্ষাতে যে সকল চিহ্নকার্য করিবার ক্ষমতা তাহাকে দত্ত হইয়াছে, তদ্বারা সে পৃথিবীনিবাসীদের ভ্রান্তি জন্মায়”(প্রকাশিত বাক্য ১৩:১৩, ১৪) এখানে কেবল প্রতারণা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী বলা হয়নি। মানুষ শয়তানের প্রতিনিধিদের আশ্চার্য কাজ করার শক্তি দ্বারা প্রতারিত হয়, তারা যে ভান করে তদ্বারা নয় । GrHBen 117.1
অন্ধকারের অধিপতি এতদিন যাবৎ প্রতারণা কাজের প্রতি তাঁর শ্রেষ্ঠ চিন্তাশক্তি অমিত রেখে, সর্বশ্রেণীর এবং সর্ব পরিস্থিতির লােকদের কাছে। দক্ষতার সাথে তা উপযােগী করে নেয় । কৃষ্টি এবং সংস্কৃতি রুচিসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গের কাছে সে আরাে সূক্ষ্ম এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পন্ন বিষয়ের মধ্যে আত্মিকবাদ উপস্থাপন করে, আর এভাবে সে অনেককে তাঁর ফাঁদে আটকাতে সক্ষম হয়। যে জ্ঞান আত্মিকবাদ সহভাগ করে সেই জ্ঞান সম্পর্কে যাকোব বর্ণনা করেছে, “সেই জ্ঞান এমন নয়, যাহা উপর হইতে নামিয়া আইসে বরং তাহা পার্থিব, প্রাণিক, পৈশাচিক।” যাকোব ৩:১৫। যা হােক, এই মহান প্রতারক এটি গুপ্ত রেখে তখনই ছদ্মবেশ ধারণ করে যখন তাঁর উদ্দেশ্য সাধনে উপযুক্ত হবে। যে ব্যক্তি পরীক্ষার প্রান্তরে খ্রীষ্টের সম্মুখে স্বর্গীয় সরাফগণের উজ্জ্বলতার বসন পরে প্রকাশিত হতে পারে সে একজন উজ্জ্বল দূতের ন্যায়, অতীব আকর্ষণীয় ব্যক্তিরূপে মানুষের কাছে আবির্ভাব হতে পারে । সে বিষয়বস্তুগুলােকে মহান করে উপস্থাপন করে বুদ্ধিবৃত্তির কাছে আবেদন করে; সে কল্পিত বস্তুতে আনন্দ করে নাটকীয় দৃশ্যগুলােকে পরমানন্দিত করায়; আর সে তাঁর প্রেম এবং পরপােকারের বাকপটু বর্ণনা দ্বারা আবেগ সংগ্রহ করে । সে অলীক কল্পনাকে সর্বোচ্চে স্থাপন করে, মানুষকে তাদের নিজেদের জ্ঞানে এতই গর্বিত করে যে, তারা তাদের অন্তরে তাঁর অনন্ত ঈশ্বরকে অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখে । ঐ শক্তিমান সত্তা যে বিশ্বের ত্রাণকর্তাকে অত্যুচ্চ পর্বতে নিয়ে পার্থিব সকল রাজ্যসমূহ এবং ঐ সকলের প্রতাপ তাঁর সম্মুখে আনয়ন করতে পারে, সে তাঁর প্রলােভনসমূহ মানুষের নিকট এমনভাবে আনয়ন করবে যেন সে যারা ঐশ্বরিক ক্ষমতার দ্বারা সুরক্ষিত নয়, তাদের বােধ শক্তিকে স্বেচছাচারী করে তুলতে পারে । GrHBen 117.2
শয়তান যেমন এদনে হবাকে তােষামােদী কথা দ্বারা ভুলিয়ে ছিল, তদ্রুপ সে এখন মানুষের মধ্যে নিষিদ্ধ জ্ঞান লাভের একটি বাসনা সৃষ্টি করে, আত্ম-প্রশংসা করার আবেগপূর্ণ উচ্চাকাঙ্খ দ্বারা ভুলাবার চেষ্টা করে। এটি ছিল এই সমস্ত মন্দ কিছু পােষণ করার পরিণতি যা তাঁর পতন ঘটিয়েছিল আর ঐ সবের মধ্য দিয়ে সে মানুষের বিনাশ ঘটায় । “তােমরা ঈশ্বরের সদৃশ হইয়া সদসদ-জ্ঞান প্রাপ্ত হইবে।” আদিপুস্তক ৩:৫। আত্মিকবাদ শিক্ষা দেয় যে মানুষ ক্রমবৃদ্ধির সৃষ্ট জীব; অর্থাৎ সে জন্ম থেকে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হতে থাকবে, এটাই তাঁর নিয়তি, এমন কি এমনকি অনন্তকাল ব্যাপী, ঈশ্বর পর্যন্ত।” পুনরায় “প্রতিটি মন নিজেই নিজের বিচার করবে, অন্যের নয়।” “বিচার সঠিক হবে, কারণ এটি নিজের বিচার ।... “তােমার মধ্যেই সিংহাসন।” একজন আধ্যাত্মবাদ বিষয়ক শিক্ষক বলেছিলেন, যেমন “আত্মিক বিবেক” তাঁর মধ্যে জাগরুক হয়েছিল: “আমার সহমানবগণ, সকলেই ছিল অপতিত উপদেবতা।” আর অন্য একজন বলেন: “যে কোন একজন ন্যায়পরায়ণ এবং নিস্পাপ ব্যক্তিই খ্রীষ্ট।” GrHBen 118.1
এভাবে অসীম ঈশ্বরের ধার্মিকতা এবং পবিত্রতার স্থানে, শ্ৰদ্ধার ব্যাপারে; তাঁর ব্যবস্থার নিখুঁত ধার্মিকতার স্থানে, মানুষের সিদ্ধির প্রকৃত নৈপুন্যকে শয়তান স্বয়ং মানুষের পাপময়তা ও ভুল করার স্বভাবকে একমাত্র শ্রদ্ধা ও বিচারের একমাত্র নিয়ম, অথবা চরিত্রের আদর্শ হিসেবে স্থাপন করে । এটি ক্রমােন্নতি, উৰ্দ্ধগতি নয় কিন্তু নিমগতি । GrHBen 118.2
এটি বুদ্ধিমত্তা এবং আত্মিক স্বভাব উভয়ের একটি নিয়ম যা দেখে আমরা পরিবর্তিত হই। মনকে যার উপর অবস্থান করতে দেয়া হয়, মন ধীরে ধীরে তাঁর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়। এটি তারই সাথে অঙ্গীভূত হয়ে যায় যা প্রেমে ও শ্রদ্ধা-ভক্তিতে অভ্যস্ত করে তােলে, মানুষ কখনাে তাঁর পবিত্রতা অথবা উত্তমতা বা সত্যের মান অপেক্ষা ঊর্ধ্বে ওঠবে না। যদি তাঁর সত্ত্বার। ধারণা উচ্চতম হয় তবে সে কখনাে অধিক ভাল কোন অবস্থায় কখনাে পৌছাতে পারবে না। বরং সে অবিরত কেবল নিচু থেকে অধিকতর নিচুতে ডুবে যেতে থাকবে । ঈশ্বরের অনুগ্রহই মানুষকে উন্নত করতে সক্ষম। নিজের জন্য তাঁর কেবল বাকী থাকে যা অপরিহার্যরূপে নিমগতিতে চলা। GrHBen 118.3
আত্ম-চরিতার্থকারী, আরামপ্রিয়, কামুকদের নিকট আত্মিকবাদ নিজেকে আরাে অধিক অপদ্রব্যমুক্ত, এবং বুদ্ধিমান অপেক্ষা অল্পই ধূর্ত, ছদ্মবেশ ধারীরূপে জাহির করে; স্পষ্টভাবে তারা দেখে যে তাদের ঝোকের সঙ্গে মিলে যায়। শয়তান মানব প্রকৃতির দূর্বলতার প্রতিটি লক্ষণ পরীক্ষা করে, সে ঐ পাপগুলাে চিহ্নিত করে যা প্রত্যেক স্বতন্ত্র ব্যক্তি করে থাকে এবং অতঃপর সে সতর্ক দৃষ্টি রাখে যেন, মন্দ কাজ করবার সুযােগের অভাব তাদের না হয় । যা বিধিসঙ্গত, সেখানেই মানুষকে অমিতাচারী হতে প্রলােভিত করে তাদেরকে অমিতাচারের মধ্য দিয়ে শারীরিক, মানসিক এবং নৈতিক শক্তিকে দুর্বল করে । সে মত্ততা চরিতার্থ করার মাধ্যমে সহস্র সহস্র লােকদের ধ্বংস করেছে, এরূপে মানুষের গােটা প্রকৃতিকে পশুবৎ করে তুলেছে। আর তাঁর কাজ সম্পন্ন করার উদ্দেশ্যে এই মনােভাব নিয়ে ঘােষণা করে যে, “প্রকৃত জ্ঞান মানুষকে সর্বোচ্চো স্থাপন করে;” সে, “জ্ঞান যা-ই হােক না কেন তা সঠিক; তা “ঈশ্বর দোষী করেন না;” আর যত “পাপ করা হােক না কেন তা সবই নিরপরাধ ।” লােকে যখন এইরূপ বিশ্বাস করতে প্রণােদিত হয় যে, ইচ্ছাই সর্বোচচ বিধান, আর স্বাধীনতা হল অনুমতিপত্র, আর মানুষ কেবল তাঁর নিজেরই কাছে জবাবদিহি করবে, কে চিন্তা করতে পারে, অবাক হতে পারে যে প্রত্যেকের হাতে সব দিকেই ভ্রষ্টতায় এবং নৈতিকতায় স্খলিত? অসংখ্য লােক আগ্রহ সহকারে এমন শিক্ষামালা গ্রহণ করে যা তাদের জন্য এমন স্বাধীনতা রেখে যায় যা পার্থিব আত্মাকে মান্য করতে তৎপর হয়। আত্মনিয়ন্ত্রণের বলগাসমূহ কাম কল্পনার স্কন্ধে স্থাপিত হয়, মন ও আত্মার শক্তিকে পাশবিক অপশক্তির অধীনে রাখা হয়। মন ও আত্মার শক্তিকে পাশবিক প্রবণতার কারাকক্ষে আবদ্ধ করা হয়, আর যারা নামধারী খ্রীষ্টিয়ান এইরূপ হাজার হাজার নর-নারীকে শয়তান মহা আনন্দে তাঁর জালের মধ্যে সঞ্চালিত করে । GrHBen 118.4
কিন্তু কোন ব্যক্তিরই আত্মিকবাদের মিথ্যা দারীগুলাে দ্বারা প্রতারিত হবার প্রয়ােজন নেই । ঈশ্বর পৃথিবীকে পর্যাপ্ত আলাে দিয়েছেন যেন তারা ফাঁদ আবিষ্কার করতে পারে। যেমন ইতােমধ্যে তত্ত্বটি দেখানাে হয়েছে যা আত্মিকবাদের সেই ভিত্তি গঠন করে, তা এখন শাস্ত্রের সহজতম উক্তিগুলাের সঙ্গে সংগ্রামরত। বাইবেল ঘােষণা করে যে, মৃতেরা কিছুই জানে না, তাদের চিন্তারাশি শেষ হয়ে গেছে; সূর্যের নীচে তাদের আর কিছুই করার নেই; পৃথিবীতে যারা তাদের প্রিয়জন ছিল, তাদের আনন্দ বেদনার কিছুই তারা জানে না । GrHBen 119.1
অধিকন্তু ঈশ্বর স্পষ্টভাবে নিষেধ করেছেন আমরা যেন পরলােকগত আত্মাগণের সঙ্গে ভানকারী যােগাযােগ না করি। কিন্তু পরিচিত আত্মাগণ” যাদের বলা হয় অন্য বিশ্ব থেকে আগত দর্শনার্থীগণ, বাইবেল অনুসারে তাদের বলা হয় “ভূতগণের আত্মা” (তুলনা করুন গণনা ২৫:১-৩; গীত ১০৬:২৮; ১ করিন্থীয় ১০:২০; প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৪)। পরিচিত আত্মগণের সঙ্গে সম্পর্ক কাজটি প্রভুর নিকট একটি ঘৃণার্থ বলে উচ্চারিত হয়েছিল এবং বিধিসম্মত ভাবে মৃত্যুর শাস্তির অধীন বলে নিষিদ্ধ ঘােষণা করা হয়েছিল । লেবীয় ১৯:৩১; ২০:২৭ । সেই ভূতুড়ে নামটি এখন অবজ্ঞা করা হয়। এই দাবিটি যে, মানুষ মন্দ আত্মার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মেলামেশা করতে পারে এটি অগকারময় যুগের একটি উপকথা বলে মনে করা হয়। কিন্তু আত্মিকবাদ যা সংখ্যায় শত সহস্র লােকদের এমন কি লক্ষ লক্ষ লােকদেরও পরিবর্তিত করে যা বিজ্ঞান চক্রের মধ্যে পথ করে নিয়েছে, যা ম-লীগুলােকে আক্রমণ করেছে। এবং আইন প্রণয়ন করার পরিষদের মধ্যে সুবিধা পেয়েছে এবং এমন কি রাজার দরবারেও এই অধুনালুপ্ত প্রতারণা একটি জাগরণ একটি নতুন প্রতারণায়, একটি নতুন ছদ্মবেশ, পুরাকালের একটি নিন্দিত ও নিষিদ্ধ যাদু ক্রিয়া । GrHBen 119.2
আত্মিকবাদের আসল চরিত্রের অন্য কোন প্রমাণ যদি না থাকে এটি খ্রীষ্টানদের পক্ষে যথেষ্ট হওয়া উচিত যে, আত্মা ধার্মিকতা এবং পাপের মধ্যে, খ্রীষ্টের উচ্চপদস্থ এবং পবিত্রতম প্রেরিতদের মধ্যে এবং শয়তানের দাসগণের অতীব দুষ্ট লােকদের মধ্যে কোন ব্যবধান সৃষ্টি করে না। সর্ব নিম্নশ্রেণীর লােকদের স্বর্গে প্রতিস্থাপন করে, এবং উন্নত স্তরে তুলে দিয়ে শয়তান জগতকে বলে :“তােমরা যতই অপরাধী হও না কেন; তােমরা ঈশ্বরকে এবং বাইবেলে বিশ্বাস কর আর না-ই কর, তাতে কিছুই যায় আসে না। তােমরা তােমাদের ইচ্ছেমত জীবনযাপন কর; স্বর্গ তােমাদের বাটী।” আত্মীকবাদ শিক্ষা শিক্ষকগণ কার্যত ঘােষণা করে: “যে কেহ দুষ্কর্ম করে সে সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে উত্তম তিনি তাহাদিগেতে প্রীতি; অথবা বিচারকর্তা ঈশ্বর কোথায়?” মালাখি ২:১৭। সদাপ্রভুর বাক্য বলে: “ধিক তাহাদিগকে, যাহারা মন্দকে ভাল, আর ভালকে মন্দ বলে, আলােকে আঁধার ও আধারকে আলাে বলিয়া ধরে।” যিশাইয় ৫:২০। GrHBen 120.1
প্রেরিতগণ যেমন এই সকল মিথ্যাবাদী আত্মার চরিত্র ধারণ করে পৃথিবীতে থাকাকালীন তারা পবিত্র আত্মা থেকে প্রাপ্ত যে তলিপি লিখেছিলেন তাঁর মধ্যে কিছু বিরােধ রয়ে গিয়েছিল। তারা বাইবেলের ঐশ্বরিক উৎপত্তি এবং আদিকরণ অস্বীকার করে এবং এরূপে খ্রীষ্টানের প্রত্যাশার ভিত্তি চুরমার করে দেয় এবং স্বর্গের পথ প্রদর্শক আলাে নিভিয়ে দেয়। শয়তান জগৎকে বিশ্বাস করানাের চেষ্টা করছে যে, বাইবেল শুধুমাত্র একখানি উপন্যাস মাত্র অথবা হতে পারে একখানা পুস্তক যা সমাজের অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য উপযুক্ত, তবে এখন তা সামান্য জ্ঞান করা হচ্ছে বা সেকেলে মনে করে এক পার্শ্বে ফেলে দেয়া হচ্ছে। আর ঈশ্বরের বাক্যের স্থান গ্রহণ করতে সে আধ্যাত্মিকতা প্রদর্শন অব্যহত রাখে। এখানে একটি প্রণালী যা সম্পূর্ণরূপে তাঁর নিয়ন্ত্রণে; এই মাধ্যমের দ্বারা সে জগতের বিশ্বাস জন্মাতে পারে সে কি করবে। যে গ্রন্থ তাঁর এবং তাঁর অনুসারীদের বিচার করবে, তা সে অন্ধকারে রেখে দেয়, সে যেমন চায় ঠিক সেভাবেই; আর বিশ্বের ত্রাণকর্তাকে সে এমন একজন ব্যক্তিরূপে তুলে ধরে যিনি একজন সাধারণ ব্যক্তি ছাড়া যেন আর কিছুই নন। আর যীশুর পুনরুত্থানকে অসত্য বলে প্রমাণ করার জন্য যাজকেরা এবং প্রাচীনেরা সেই সব রােমীয় সৈন্যদের দ্বারা মিথ্যা রটিয়েছিল যারা যীশুর কবর পাহারা দিয়েছিল, একইভাবে আধ্যাত্মি প্রদর্শনীতে বিশ্বাসীরা এটিকে এমন ভাবে ফুটিয়ে তােলার চেষ্টা করে যেন আমাদের পবিত্রতার জীবনে অলৌকিক কোন কাজ হয় নি । এভাবে যীশুকে পর্দার আড়ালে রাখার চেষ্টার পর, তারা তাদের নিজেদের অলৌকিক কাজের মনােযােগ দেবার আহ্বান করে এবং ঘােষণা করে যে, তাদের এই কাজগুলাে খ্রীষ্টের কাজকেও ছাড়িয়ে। যায় । GrHBen 120.2
একথা সত্য যে, আত্মিকবাদ এখন এর ধরণ পরিবর্তন করছে, এবং কিছু কিছু আপত্তিকর দিকগুলাে অবগুণ্ঠিত করে একজন খ্রীষ্টিয় সন্ন্যাসী বেশ ধারণ করে। কিন্তু প্রচার মঞ্চ থেকে তাদের উচ্চারিত বাক্যগুলাে এবং প্রকাশনাগুলাে বহু বছর পূর্বে জন সম্মুখে প্রকাশিত হয়েছে এবং এগুলাের মধ্যে তাদের প্রকৃত চিত্রের অবস্থান প্রকাশিত হয়েছে। এই শিক্ষামালা অস্বীকার বা গােপন করা যায় না । GrHBen 121.1
এমনকি এর বর্তমান আকারে পূর্বাপেক্ষা সহ্যসীমার অধিক যােগ্য, এটি প্রকৃতপক্ষে একটি অধিক বিপজ্জনক, কারণ এটি একটি অধিক চাতুর্যপূর্ণ প্রতারণা। এটি ইতােপূর্বে খ্রীষ্টকে এবং বাইবেলকে দোষারােপ ও অভিযুক্ত করেছে, এখন সে উভয়ই গ্রহণ করার কথা প্রকাশ্যে ব্যক্ত করছে। কিন্তু বাইবেল এমনভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যা অনবায়নকৃত অন্তঃকরণের কাছে সন্তোষজনক; যদিও এর গুরুগম্ভীর এবং প্রাণবন্ত সত্যসমূহ কোনই প্রভাব রাখেনি। প্রেম ঈশ্বরের সর্বপ্রধান গুণরূপে স্থাপিত রয়েছে, কিন্তু তা একটি দুর্বল ভাব প্রবণতার কাছে অসমাদৃত হয়ে ভাল ও মন্দের মধ্যে সামান্য ব্যবধান সৃষ্টি করে । ঈশ্বরের ন্যায় বিচার, পাপের প্রতি তাঁর প্রকাশে নিন্দা, তাঁর পবিত্র ব্যবস্থার প্রয়ােজনীয়তা সবই দৃষ্টি বহির্ভূত রাখা হয়েছে। লােকদের শিক্ষা দেয়া হয়েছে যে, দশ আজ্ঞা একখানি মৃত চিঠি মাত্র। আমােদদায়ক, সম্মােহক, রূপকথা বােধ শক্তিকে বন্দী করে এবং লােকদেরকে তাদের বিশ্বাসের ভিত্তি হিসেবে বাইবেলকে বর্জন করতে পরিচালিত করে। পূর্বের ন্যায় সত্যি সত্যিই এখনাে খ্রীষ্টকে অস্বীকার করা হয়েছে; কি✉ শয়তান মানুষের চক্ষুদ্বয়কে এমনভাবে অন্ধ করে দিয়েছে যে, প্রতারণাটি দেখা যায় । GrHBen 121.2
আত্মিকবাদের প্রতারণামূলক শক্তি এবং তাঁর আসন্ন প্রভাবের বিপদ সম্পর্কে খুব অল্প সংখ্যক লােকদেরই ধারণা রয়েছে। অনেকে কেবলমাত্র তাদের কৌতূহল চরিতার্থ করার জন্য অবৈধ হস্তক্ষেপ করে। এতে তাদের প্রকৃত বিশ্বাস নেই এবং তারা নিজেদেরকে আত্মসমূহের নিয়ন্ত্রণে বশীভূত হওয়ার কথা চিন্তা করে আতঙ্কিত হয়ে উঠবে। কিন্তু তারা নিষিদ্ধ ভূমিতে পদচারণা করে এবং ক্ষমতাশালীতার বিনাশকারী শক্তিকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রয়ােগ করে। তারা একবার যদি তাদের মন ও চিন্তারাশিকে তাঁর নির্দেশের প্রতি মনােনিবেশ করে, তাহলে সে তাদেরকে বন্দীরূপে ধরে বসবে । তাদের নিজেদের শক্তিবলে তাহলে সম্মােহনকারী, প্রলােভন-দায়ক যাদুর ফাদ ভেঙ্গে ফেলা অসম্ভব । বিশ্বাসের ঐশ্বরিক প্রার্থনার উত্তরেই কেবল ঈশ্বরের শক্তি রয়েছে, যা এই সব খাচায় বন্দী আত্মাগণকে উদ্ধার করতে পারে । GrHBen 121.3
যারা চরিত্রের পাপপূর্ণ আচরণ চরিতার্থ করে, বা স্বেচ্ছায় একটি জানা পাপ পােষণ করে রাখে সে শয়তানের প্রলােভনসমূহকে আহ্বান করতে থাকে। তারা ঈশ্বর এবং তাঁর প্রহরারত দূতগণের নিকট থেকে নিজেদের পৃথক করে; আর যখন দিয়াবল তাঁর প্রতারণাসমূহ উপস্থাপন করে তখন তারা নিজেদের প্রতিরােধ বিহীন হয়, এবং তাঁর একটি সহজ শিকারে পরিণত হয় । যারা নিজেদেরকে তাঁর শক্তির কাছে সমর্পিত করে, তারা তাদের শেষ পরিণতি কি হবে সে সম্পর্কে তারা সামান্য উপলব্ধি করে। তাদের সর্বনাশ সাধনের পর প্রলােভনকারী তাদেরকে তাঁর প্রতিনিধিরূপে নিয়ােগ করবে অন্যদের ধ্বংসের পথে নেবার জন্য । GrHBen 122.1
যিশাইয় ভাববাদী বলেন: “আর যখন তাহারা তােমাদিগকে বলে তােমরা ভূতড়িয়া ও গুণীদিগের নিকটে, যাহারা বিড় বিড় ও ফুসফুস করিয়া বকে, তাহাদের নিকটে অন্বেষণ কর, [তখন তােমরা বলিবে] প্রজাগণ কি আপনাদের ঈশ্বরের কাছে অম্বেষণ করিবে না ? যাহারা জীবিতদের জন্য কি মৃতদের কাছে [অন্বেষণ করিবে ? ব্যবস্থার কাছে ও সাক্ষ্যের কাছে অম্বেষণ কর]; ইহার অনুরূপ কথা যদি তাহারা না বলে, তবে তাহাদের পক্ষে অরুণােদয় নাই।” যিশাইয় ৮:১৯,২০। মানুষের চরিত্র ও মৃত ব্যক্তির অবস্থা সম্পর্কে শাস্ত্রে এত সহজ সরল ভাবে সত্য বলা আছে তা যদি মানুষ গ্রহণ করতে ইচ্ছুক না হয়ে থাকে, তাহলে শয়তানের ক্ষমতাসম্পন্ন কাজে, চিহ্ন সমূহে এবং মিথ্যা আশ্চর্য কাজে, আধ্যাত্মিবাদ প্রদর্শনীতে এবং তাঁর দাবীসমূহে তাদের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু বরং ইন্দ্রিয়পরায়ণ অন্তঃকরণের নিকট স্বাধীনতা এরূপ মনােজ্ঞ ও আনন্দদায়ক করে সমর্পণ না করে এবং যে পাপ তারা ভালােবাসে সেই পাপ পরিত্যাগ না করে, অসংখ্য লােক আলাের প্রতি তাদের চোখ বন্ধ রেখে, সতর্কবাণী না মেনেই অগ্রসর হয়, তখন শয়তান তাদের চারদিকে ফাঁদ পাতে আর তারা শয়তানের শিকার হয়। কারণ তাহারা পরিত্রাণ পাইবার নিমিত্ত সত্যের প্রেম গ্রহণ করে নাই।” সুতরাং “সেই জন্য ঈশ্বর তাহাদের কাছে ভ্রান্তির কার্যসাধন পাঠান, যাহাতে তাহারা সেই মিথ্যায় বিশ্বাস করিবে।” ২ থিষলনীকীয় ২:১০, ১১। GrHBen 122.2
যারা আত্মিকবাদের শিক্ষার প্রচ- বিরােধীতা করে তারা কেবলমাত্র মানুষকে নয় কিন্তু শয়তান এবং তাঁর দূতগণকেও প্রচ- আক্রমণ করে। তারা উহানে আধিপত্ত এবং ক্ষমতা এবং দুষ্ট আত্মাগণের বিরুদ্ধে প্রতিযােগিতায় নেমেছে। শয়তান এক ইঞ্চি স্থানও ছেড়ে দেবে না, যে পর্যন্ত না সে স্বর্গীয় বার্তাবাহকগণ কর্তৃক বিতাড়িত হয় । ঈশ্বরের লােকেরা তাঁর মােকাবিলা করতে সক্ষম হবে যেমন আমাদের ত্রাণকর্তা এইরূপ বাক্য ব্যবহার করেছিলেন: “কেননা লেখা আছে ।” শয়তান খ্রীষ্টের দিনে যেমন শাস্ত্রের উদ্ধৃতি দিতে পারত আজও সে তা পারে, আর সে শাস্ত্রের শিক্ষামালা বিকৃত করবে যেন সে তার প্রবঞ্চনা বজায় রাখতে পারে। যারা এই সঙ্কটকালে টিকে থাকতে চায় তাদের নিজেদেরকেই শাস্ত্রকলাপের সাক্ষ্যমালা বুঝতে হবে । GrHBen 122.3
অনেকে মন্দ আত্মা দ্বারা পরিচালিত হয়ে প্রিয়জন বা বন্ধুগণের ছদ্মবেশ ধারণ করে অতিশয় বিপজ্জনক ধর্মদ্রোহিতার আবেদন জানাবে । এই অলৌকিক লােকেরা তাদের মিথ্যা দাবীকে টিকিয়ে রাখারজন্য আমাদের কোমলতম সহানুভূতির প্রতি আহ্বান জানাবে এবং অনেক অলৌকিক কাজ করবে। আমাদের বাইবেলের সেই সকল সত্যগুলাে দ্বারা তাদের প্রতিরােধ জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে যেখানে বলা আছে, মৃতেরা কিছুই জানে না এবং যারা এভাবে আবির্ভূত হয় তারা দিয়াবলের আত্মা । GrHBen 123.1
আমাদের সম্মুখে “সেই পরীক্ষাকাল যাহা পৃথিবী নিবাসীদের পরীক্ষা করিবার জন্য সমস্ত জগতে উপস্থিত হইবে।” প্রকাশিত বাক্য ৩:১০ । যাদের বিশ্বাস ঈশ্বরের বাক্যের ওপর দৃঢ়রূপে স্থাপিত হয়নি তারা প্রতারিত হবে এবং পরাজিত হবে। শয়তান “সর্বপ্রকার অধার্মিকতার প্রতারণার সহিত কাজ করে যেন মনুষ্য- সন্তানগণকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং তাঁর প্রতারণাসমূহ যেন অবিরত বৃদ্ধি পায়। কিন্তু মানুষ যদি স্বেচ্ছায় তাঁর প্রলােভনের কাছে নিজেকে সপে দেয়, কেবলমাত্র তখনই প্রলোভন তাকে পেয়ে বসে। যারা একান্তভাবে সত্যর জ্ঞানের অন্বেষণ করে এবং আজ্ঞাবহতার মাধ্যমে তাঁর জীবন পবিত্ৰীকৃত করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে, তবে এভাবে সে নিজেকে সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত করতে পারে, এবং সত্যের ঈশ্বরে সে এক নিশ্চিত প্রতিরােধ খুঁজে পাবে । “তুমি আমার ধৈর্য্যের কথা রক্ষা করিয়াছ, এই কারণ আমিও তােমাকে সেই পরীক্ষাকাল হইতে রক্ষা করিব,” (১০ পদ)। এ হল ত্রাণকর্তার প্রতিজ্ঞা। তাতে নির্ভরকারী একটি আত্মাকেও তিনি শয়তান কর্তৃক পরাভূত হবার জন্য একাকী ফেলে রাখবেন বরং তাকে রক্ষা করার জন্য অতি সত্বর তিনি দূত পাঠাবেন। GrHBen 123.2
যিশাইয় ভাববাদী ভয়াবহ প্রতারণার প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন যা দুষ্টদের ওপর এসে পড়বে, যা তাদেরকে ঈশ্বরের বিচার হতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে; “আমরা মৃত্যুর সহিত নিয়ম করিয়াছি; পাতালের সহিত সন্ধি স্থির করিয়াছি; জল জলপ্রলয়রূপ কশা যখন উপনীত হইবে, তখন আমাদের কাছে আসিবে না, কেননা আমরা অলীকতাকে আপনাদের আশ্রয় করিয়াছি এবং মিথ্যা হালের আড়ালে লুকাইয়াছি।” যিশাইয় ২৮:১৫। এখানে। সেই শ্রেণীর লােকদের কথা বর্ণনা করা হয়েছে, যারা হৃদয়ের কঠোরতায় নিজেদের এই বলে সান্ত্বনা ও নিশ্চয়তা দেয় যে, পাপীদের জন্য কোন দ-াজ্ঞা নেই; ওগুলাে মানুষের তৈরী, কতটা কলুষিত সেটা কোন ব্যাপার নয়, ঈশ্বরের দূতদের মত হবার জন্য স্বর্গে নীত হবই। তথাপি তারা জোরালােভাবে মৃত্যুর কাছে অঙ্গীকার করে এবং নরকের সাথে চুক্তি করে সেই সত্যকে প্রতিরােধ করে যা সঙ্কটের দিনে ধার্মিকদের রক্ষার জন্য স্বর্গ কর্তৃক সরবারহ করা হয়েছে, আর তারা শয়তান কর্তৃক প্রদত্ত আধ্যাত্মবাদের ভাতিজনক ভান ও মিথ্যাসমূহের কাছে আশ্রয় নেয়। GrHBen 123.3
এই যুগের লােকদের অন্ধত্ব যা অবিশ্বাস্য, যা ব্যাখ্যা করা যায় না । সহস্র সহস্র লােক ঈশ্বরের বাক্য বিশ্বাসের অযােগ্য বলে প্রত্যাখ্যান করে এবং একান্ত বিশ্বাস সহকারে শয়তানের প্রতারণা গ্রহণ করে। যারা ভাববাদীদেরও প্রেরিতদের বিশ্বাসের পক্ষে তর্ক করে নাস্তিকরা ও উপহাসকারীরা তাদের গোড়ামী প্রত্যাখ্যান করে এবং তারা খ্রীষ্ট সম্পর্কিত শাস্ত্র এবং পরিত্রাণ পরিকল্পনাকে হাস্যকর ও ভাবগম্ভীর ভাবে ঘােষণার মাধ্যমে নিজেদেরকে বিপথে পরিচালিত করে, এবং সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের কাছে কুকর্মের শাস্তিকে পরিচয় করিয়ে দেয় । মহা পরিতাপের বিষয় হল, তারা ঈশ্বরের দাবি দাওয়া উপলব্ধি এবং স্বীকারকরণে এবং তাঁর ব্যবস্থা পালনের ব্যাপারে অত্যন্ত সংকীর্ণমনা, দুর্বল এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন হয়। তারা এতটাই নিশ্চয়তা প্রদর্শন করে যেন প্রকৃতপক্ষে তারা মৃত্যু এবং নরকের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছেযেন তারা তাদের এবং ঈশ্বরের প্রতিহিংসা পরায়ণতার মধ্যে একটি দুর্ভেদ্য ও অতি প্রাচীর নির্মান করেছে। কিছুই তাদের ভীতি সৃষ্টি করতে পারে না । তারা পরীক্ষকের কাছে এত সম্পূর্ণরূপে সমর্পিত হয়েছে, এবং তারা তাঁর সাথেএতটাই নিবিড়ভাবে একতাবদ্ধ হয়েছে, এবং তাঁর আত্মার সাথে পুখানুপুঙ্খভাবে এতটাই পরিপূরিত হয়েছে যে তাদের এমন কোন শক্তি নেই এবং এমন কোন আকাঙ্খ নেই যে তাঁর ফাঁদ ভেঙ্গে বেরিয়ে আসে । GrHBen 124.1
শয়তান দীর্ঘকাল যাবৎ বিশ্বকে প্রতারিত করার জন্য চূড়ান্ত প্রচেষ্টার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে আসছে । এদনে হবাকে প্রদত্ত নিশ্চয়তা প্রদান দ্বারা সে তাঁর কাজের ভিত্তি প্রদান করে আসছে: ” তুমি কোন ক্রমেই মরিবে না । যে দিন তােমরা তাহা খাইবে, সেই দিন তােমাদের চক্ষু খুলিয়া যাইবে, তাহাতে তােমরা ঈশ্বরের সদৃশ হইয়া সদসদ্ জ্ঞান প্রাপ্ত হইবে” । আদিপুস্তক ৩:৪, ৫। আধ্যাত্মিক উন্নয়নের মাধ্যমে সে একটু একটু করে তাঁর প্রতারণার মূল অস্ত্র তৈরী করে রেখেছে। সে এখনও তাঁর নকশাগুলাে পূর্ণ রূপদান করতে পারে নি; তবে এটি যুগের একেবারে শেষ পর্যায়ে পূর্ণতা পাবে। ভাববাদী বলেন: “পরে আমি দেখিলাম,... ভেকের ন্যায় তিনটি অশুচি আত্মা বাহির হইল । তাহারা ভূতদের আত্মা, নানা চিহ্ন-কার্য করে; তাহারা জগৎ সমুদয়ের রাজাদের নিকটে গিয়া সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের সেই মহাদিনের যুদ্ধার্থে তাহাদিগকে একত্র করে ।” প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৩, ১৪। যারা ঈশ্বরের বাক্যে বিশ্বাস করে কেবল তারা তাঁর শক্তি দ্বারা সুরক্ষিত থাকবে, তারা ব্যতিরেকে সমগ্র বিশ্ব এই প্রতারণার ন্যক্কারজনক স্থানে ভেসে যাবে । লােকেরা অতি দ্রুত এক অনিবার্য নিরাপত্তার দ্বারা শান্ত হয়ে আসছে, তারা একমাত্র ঈশ্বরের ক্রোধের বর্ষণ দ্বারা জাগরিত হবে। GrHBen 124.2
প্রভু ঈশ্বর বলেছেন: “আর আমি ন্যায়বিচারক মানরক্ষ্ম, ও ধার্মিকতাকে ওলােন সূত্র করিব; শিলাবৃষ্টি ঐ অলীকতারূপ আশ্রয় ফেলিয়া দিবে এবং বন্যা ঐ লুকাইবার স্থান ভাসাইয়া লইয়া যাইবে । আর মৃত্যুর সহিত কৃত তােমাদের নিয়ম বিলােপ করা যাইবে, ও পাতালের সহিত তােমাদের সন্ধি স্থির থাকিবে না; জলপ্রলয়রূপ কশা যখন উপনীত হইবে, তখন তােমরা তারা দলিত হইবে । যিশা ২৮:১৭, ১৮। GrHBen 124.3
*****