যেসব লােকেরা ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করে তাদের উপর থেকে তখন জন নিরাপত্তা আইন তুলে নেওয়া হবে। তবে তা একই সময়ে তাদের ধ্বংস করার জন্য বিভিন্ন দেশে একই সঙ্গে একটি জাগরণ শুরু হবে। সেই আদেশে বর্ণিত সময় যতই সন্নিকট হতে থাকবে, তখন জনগণ ষড়যন্ত্রে মেতে উঠবে সেই জন-সপ্রদায়ের মূল উৎপাটন করতে । এটি এমন দৃঢ় সংকল্প বন্ধ হবে যে এক রাতেই, নিষ্পত্তিমূলক আধারে সম্পূর্ণ স্তব্ধ করে দিতে চাইবে সেই ভিন্ন মত পােষণকারীদের ও দোষারােপকারীদের কণ্ঠস্বর । GrHBen 197.1
ঈশ্বরের লােকজন কেউ থাকবে কারাকক্ষে--কেউ থাকবে নির্জন আবাস-বনে-জঙ্গলে ও পাহাড়-পর্বতে এবং ঐশ্বরিক নিরাপত্তার জন্য প্রার্থনা করবে, অন্যদিকে মন্দ দূতগণের দল আদেশ করবে প্রতিটি এলাকায় সেনাবাহিনীর দলকে প্রস্তুত হতে যেন তাদের মৃত্যু কার্যকর করতে পারে। এ সেই সময় যখন সর্বশেষ চরম দুর্দশা উপস্থিত হবে, তখন ইস্রায়েলের ঈশ্বর তাঁর মনােনীতদের উদ্ধার কার্যে হস্তক্ষেপ করবেন। সদাপ্রভু বলেন, “পবিত্র উৎসব-রাত্রির ন্যায় তােমাদের গীত হইবে, এবং লােকে যেমন সদাপ্রভুর পৰ্বতে ইস্রায়েলের শৈলের কাছে গমন কালে বাশী বাজায়, দ্রুপ তােমাদের চিত্তের আনন্দ হইবে। সদাপ্রভু প্রচণ্ড ক্রোধ, সর্বগ্রাসক অগ্নিশিখা, বাত্যা, ঝটিকা ও করকা দ্বারা আপনার প্রতাপান্বিত রব শুনাইবেন, ও আপনার হস্ত বিতারণ দেখাইবেন ।” যিশাইয় ৩০:২৯, ৩০। হর্ষধ্বনি, বিদ্রুপ বাক্য, অভিশাপ পূর্বক দুষ্ট জনতার দল দৌড়াচ্ছে তাদের শিকারকে জব্দ করতে, দেখ, এমন সময় গভীর অন্ধকার রাতের আঁধারের চেয়েও অধিক গভীরতা পৃথিবীকে আচ্ছাদিত করল। তখন একটি মেঘধনু, ঈশ্বরের মহিমা সিংহাসনের উজ্জ্বলতায় উদ্ভাসিত স্বর্গ থেকে প্রসারিত মনে হচ্ছিল, সেই প্রার্থনারত লােকদেরকে একটি বৃত্তাকারে ঘিরে রাখল । ক্রুদ্ধ জনতাকে হঠাৎ বন্দী করা হল। তাদের বিদ্রুপ উপহাস পালিয়ে গেল । তাদের জিজ্ঞাসার আক্রোশ মন থেকে মুছে গেল । ভয়ানক পূর্বাভাসে তারা স্তম্ভিত হয়ে ঈশ্বরের নিয়মের নিদর্শনের সামনে দণ্ডায়মান এবং আশা করছে কিভাবে এই অতি শক্তিশালী উজ্জ্বলতার তেজ থেকে রেহাই পাওয়া যায় । GrHBen 197.2
ঈশ্বরের লােকদের একটি স্পষ্ট ও সুমধুর স্বর শােনা গেল, বলছে, “উর্ধ্ব দিকে দৃষ্টিপাত কর”, এবং যখন তাদের চক্ষু আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করল, তারা ধনুকের মত একটি প্রতিজ্ঞা দেখতে পেল । আকাশ কালাে ও ভয়াবহ মেঘে আচ্ছাদিত করে ছিন্নভিন্ন হয়েছে, স্তিফানের মত তারা স্বর্গের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে এবং দেখছে ঈশ্বরের মহিমা এবং তাঁর পুত্র সিংহাসনে উপবিষ্ট । তাঁর স্বগীয় মহিমায় তারা তাঁর ক্রুশীয় যন্ত্রণা ভােগের চিহ্নগুলাে চিনতে পারল; এবং তাঁর মুখ থেকে তাঁর নিবেদন শুনতে পেল যা তাঁর পিতা ও স্বর্গীয় দূতগণের সামনে করছিলেন: “আমার ইচ্ছা এই, আমি যেখানে থাকি, তুমি আমায় যাহাদিগকে দিয়াছ, তাহারাও যেন সেখানে আমার সঙ্গে থাকে ।” যােহন ১৭:২৪ পদ। পরে আর একটি কণ্ঠস্বর, সংগীতের ধ্বনি ও বিজয়ােল্লাস শােনা গেল, বলছে: “তারা এসেছে। তারা এসেছে! পবিত্র, অক্ষত, অকলুষিত। তারা আমার ধৈর্যের কথা রক্ষা করেছে; তারা দূতগণের সঙ্গে যাতায়াত ও গমনাগমন করবে;” এবং সেই বিবর্ণ কম্পিত ঠোট তাদের যারা দৃঢ়রূপে নিজেদের বিশ্বাস রক্ষা করেছিল এখন তারা বিজয়ােল্লাস করছে। GrHBen 197.3
মধ্যরাতে ঈশ্বর তাঁর লােকদের উদ্ধার কাজের ক্ষমতা প্রদর্শন করছেন । সূর্য উদিত হল, তাঁর সর্বশক্তিতে আলাে বিকিরণ করল। অদ্ভুত লক্ষণগুলাে ও আশ্চর্য কার্যগুলাে একের পর এক সংঘটিত হতে থাকল। দুষ্ট লােকেরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে অবাক চোখে চেয়ে দেখছে কি সব ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। অন্যদিকে ধার্মিকেরা স্বশ্রদ্ধা ভরে, মনের আনন্দে দেখছে তাদের মুক্তির সাক্ষ্যগুলাে। মনে হচ্ছিল যেন স্বয়ং প্রকৃতির সব কিছু তাদের গতানুগতিক কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে । জল প্রবাহের স্রোতধারা বন্ধ হয়েছে। ঘন কালাে মেঘ সৃষ্টি হল এবং তা একে অন্যের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত । সেই ক্রুদ্ধ আকাশে একটি উন্মুক্ত জায়গা দেখা গেল এক অবর্ণনীয় প্রতাপে পরিপূর্ণ, সেখান থেকে সদাপ্রভুর রব শােনা গেল, সে যেন অনেক জলের কল্লোল ধ্বনি, বলছে, “হইয়াছে” । প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৭ পদ। GrHBen 198.1
সেই রবে আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী কম্পমান হল । “এক ভূমিকম্প হইল, পৃথিবীতে মনুষ্যের উৎপত্তিকাল অবধি যেমন কখনও হয় নাই, এমন প্রচণ্ড মহাভূমিকম্প হইল।” ১৮ পদ। আকাশ মণ্ডল উন্মুক্ত হচ্ছিল এবং বন্ধ হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল যেন ঈশ্বরের সিংহাসন থেকে প্রতাপে পরিপূর্ণ হয়ে বিদ্যুতের ন্যায় প্রকাশিত হচ্ছিল। নল-খাপড়া যেমন বাতাসে দোলে তেমনি যেন পাহাড় পর্বতগুলাে দুলছিল এবং অসমান পাথররাশি যেন চারিদিকে ছিন্ন। ভিন্ন ভাবে নিক্ষিপ্ত হচ্ছিল। প্রচণ্ড ঝড়ের গান শােনা গেল । সমুদ্রে উত্তাল তরঙ্গ প্রচণ্ড ক্রোধ যেন দিয়াবল তাঁর ধ্বংস যজ্ঞ সাধনে যা5ে। সমস্ত পৃথিবী যেন উত্তাল সমুদ্র ঢেউয়ের মত ফুলে উঠেছে। তাঁর উপরিভাগ চূর্ণ-বিচূর্ণ হচ্ছে। মনে হল যেন পৃথিবীর সব জলের উনুইগুলাের মুখ উন্মােচন করা হল। পর্বতমালা নিমগ্ন হচ্ছে লােক বসতিপূর্ণ দ্বীপসমূহ বিলীন হচেতু। পােতাশ্রয়গুলাে যেন সলোময় মত পাপ-পঙ্কিলতায় পরিপূর্ণ, ক্রুদ্ধ জলরাশি সেসব গ্রাস করছে। সে মহতী বাবিলকে ঈশ্বরের সামনে স্মরণ করা হল, “যেন ঈশ্বরের ক্রোধের রােষমন্দিরাতে পূর্ণ পানপাত্র তাহাকে দেওয়া যায়। আর সেই বড় বড় শিলা এক একটি, “এক এক তালন্ত পরিমিত,” আকাশ হত মনুষ্যদের উপর পতিত হল, তাদের ধ্বংস করার জন্য। ১৯ ও ২১ পদ। আর পৃথিবীর দাম্ভিক নগরীগুলাে পতিত হল। পৃথিবীর মহত ব্যক্তিরা তাদের অর্থ সম্পদ ব্যয় করছে। সুরম্য প্রাসাদ নির্মাণে যেন তারা নিজেরা আরও গৌরবান্বিত হতে পারেন, আর সে সবই তাদের চোখের সামনে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। কারাগারের দেয়াল সকল চুরমার হয়ে পড়ে গেল যারা তাদের বিশ্বাস রক্ষা করেছিল, সেই ঈশ্বরের। লােকেরা বন্দিদশা থেকে মুক্তি হল । GrHBen 198.2
কবর সকল খুলে গেল এবং “মৃত্তিকার ধূলিতে নিদ্রিত লােকদের মধ্যে অনেকে জাগরিত হইবে—কেহ কেহ অনন্ত জীবনের উদ্দেশে, এবং কেহ কেহ লজ্জার ও অনন্ত ঘৃণার উদ্দেশে।” দানিয়েল ১২:২ পদ। আর যারা তৃতীয়। দূতের বার্তায় বিশ্বাস রেখে মৃত্যুবরণ করেছে তারা গৌরবের সাথে কবর থেকে উঠে আসছে, ঈশ্বরের শাস্তির ব্যবস্থা শুনতে তাদের সঙ্গে আছে, যারা তাঁর ব্যবস্থা পালন করেছে । “যাহারা তাহাকে বিদ্ধ করিয়াছিল, তাহারাও দেখিবে ।” (প্রকাশিত বাক্য ১:৭ পদ) এবং অন্যরা যারা যীশুর মরণ যন্ত্রণার সময় উপহাস ও বিদ্রুপ করেছিল, এবং যারা তাঁর সত্য ও তাঁর লােকদের উপর চরম হিংসাত্মক প্রতিপক্ষ ছিল, তাদেরও কবর থেকে উত্থাপিত করা হল যেন খ্রীষ্টকে তাঁর প্রতাপে ও গৌরবে দেখে ন্যায্য ও বিশ্বস্ত সম্মানে ভূষিত করা হয় । GrHBen 199.1
তখনও আকাশে ঘন কালাে মেঘে আচ্ছাদিত; মাঝে মাঝে সূর্যকে দেখা যায়, মনে হয় যেন যিহােবার প্রতিফল দাতার চোখ তাদের নিরীক্ষণ করছে । আকাশ থেকে তীব্র বজ্র ও বিদ্যুতের ক্রমাগত আঘাতে স্তুপাকার হচ্ছে, পৃথিবীকে যেন আচ্ছাদিত করেছে অগ্নি শিখায়। বজ্রপাতের ভয়ঙ্কর গর্জন, উচ্চধ্বনি, রহস্যপূর্ণ ও বিস্ময়কর ঘােষণা করা হল দুষ্টদের শেষ বিচার। যে বাক্য বলা হয়েছে তা সবার বােধগম্য ছিল না; কিন্তু তারা ভ্রান্ত শিক্ষকদের দ্বারা নিশ্চিত বুঝতে পারল । যারা ছিল বেপরােয়া, দাম্ভিক, নিষ্ঠুর, মহােল্লাসিত, ঈশ্বরের আজ্ঞা পালনকারী লােকদের উপর তাদের নির্মম ও নৃশংস, এখন তারা ভয়ে বিহ্বল, আতঙ্কগ্রন্থ ও কম্পিত। তাদের আর্তনাদের স্বর শােনা যাচ্ছে আকাশে বাতাসে। দিয়াবলেরা খ্রীষ্টের ঈশ্বরত্ব স্বীকার করছে এবং তাঁর মহিমা ও ক্ষমতা দেখে ভয়ে কাপছে, অন্যদিকে লােকজন অনুগ্রহের জন্য মিনতি করছে, দুর্দশাগ্রস্থরাও ভয়ে অবলুণ্ঠিত হচ্ছে । GrHBen 199.2
পুরাকালে ভাববাদীগণ বলেছেন যেমন তারা ঈশ্বরের দিন সম্বন্ধে পবিত্র দর্শনে দেখেছেন: “হাহাকার কর, কেননা সদাপ্রভুর দিন নিকটবর্তী; সৰ্ব্বশক্তিমানের নিকট হইতে বিনাশের ন্যায় উহা আসিতেছে।” যিশাইয় ১৩:৬। “তােমরা শৈলে পশিয়া যাও, ও ধুলিতে লুকাও, সদাপ্রভুর ভয়ানকত্ব প্রযুক্ত ও তাহার মহিমার আদরণীয়তা প্রযুক্ত। সামান্য লােকের উচ্চ দৃষ্টি অবনত হইবে, মান্য লােকদের গর্ব খর্ব হইবে, আর সেই দিন কেবল সদাপ্রভুই উন্নত হইবেন। বস্তুতঃ যাহা কিছু গর্বিত ও উদ্ধত এবং যাহা কিছু উচ্চীকৃত, সেই সমস্তের প্রতিকূলে বাহিনীগণের সদাপ্রভুর এক দিন আসিতেছে; সে সকল নত হইবে।” “সেই দিন মনুষ্য ভজনার্থে নির্মিত আপনার রৌপ্যময় প্রতিমা ও স্বর্ণময় প্রতিমা সকল ইন্দুরের ও চামচিকার কাছে নিক্ষেপ করিবে; আর গিরি-গহবরে ও শৈলগণের ফাটালে পশিবে, সদাপ্রভুর ভয়ানকত্ব প্রযুক্ত, ও তাহার মহিমার আদরনীয়তা প্রযুক্ত, যখন তিনি পৃথিবীকে বিকম্পিত করিতে উঠিবেন।” যিশাইয় ২:১০-১২, ২০, ২১। GrHBen 199.3
সেই মেঘের ফাক দিয়ে দেখা গেল একটি তারার আলােকরশ্মি যার উজ্জ্বলতা চারগুণ বৃদ্ধি পেল সেই অন্ধকারের তুলনায়। ইহা বিশ্বাসীদের আশা ও আনন্দের কথা বলে, তবে তা ঈশ্বরের আজ্ঞা লঙ্ঘনকারীদের জন্য নিদারুণ পীড়নকর ও অভিশাপের । যারা তাদের সর্বস্ব খ্রীষ্টের জন্য ত্যাগ করেছে তারা এখন নিরাপদ, ঈশ্বরের গুপ্ত স্থানে আইে। তারা পৃথিবীতে পরীক্ষিত হয়েছেন এবং সত্যের জন্য অবজ্ঞাত হয়েছেন, যিনি তাদের জন্য মৃত্যুবরণ করেছেন সেই খ্রীষ্টের জন্য তাদের সততা সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হল । একটি বিস্ময়কর পরিবর্তন তাদের ভিতর দেখা গেল যারা মৃত্যু পর্যন্ত তাদের সততা ধরে রেখেছে, বিশ্বাস রক্ষা করেছে । হঠাৎ তারা সেই অন্ধকার থেকে মুক্ত হল এবং যে সমস্ত মানুষ দিয়াবলে পরিণত হয়েছিল, তাদের নিষ্ঠুর অত্যাচার উৎপীড়ন থেকে তাদের মুখমণ্ডল সম্প্রতি বিবর্ণ, উদ্বিগ্ন, খেপাটে চাহনিযুক্ত, এখন তা বিস্ময়ে, প্রেমে ও বিশ্বাসে উদ্দীপ্ত । তাদের কণ্ঠস্বর বিজয়ােল্লাস গীতে জেগে উঠেছে, “ঈশ্বর আমাদের পক্ষে আশ্রয় ও বল । তিনি সঙ্কটকালে অতি সুপ্রাপ্য সহায় । অতএব আমরা ভয় করিব না-- যদ্যপি পৃথিবী পরিবর্তিত হয়, যদ্যপি পৰ্বতগণ উলিয়া সমুদ্রের গর্ভে পড়ে । তাহার জল গর্জন করুক, উচ্চ হউক, তাহার আস্ফালনে পর্বতগণ কম্পিত হউক । গীতসংহিতা ৪৬:১-৩। GrHBen 200.1
যখন এই প্রত্যাশাযুক্ত পবিত্র বাক্যগুলাে স্বর্গে ঈশ্বরের উদ্দেশে উপরে উহ, আকাশে মেঘ ঘন পুঞ্জীভূত হচ্ছে এবং তারকাময় আকাশমণ্ডলে দৃষ্টিগােচর হচ্ছে, পক্ষান্তরে একদিকে অবর্ণনীয় গৌরব অন্যদিকে ঘনকাল ও ক্রুদ্ধ আকাশ। সেই স্বর্গীয় পবিত্র নগরীর প্রতাপ তােরণ দিয়ে দূর থেকে উদ্ভাসিত হচ্ছিল। পরে আকাশে একটি হস্ত দ্বারা দুটি প্রস্তর ফলক একত্রে ভাজ করে রাখতে দেখা গেল। ভাববাদী বলছে, “আর স্বর্গ তাহার ধর্মশীলতা জ্ঞাত করিবে, কেননা ঈশ্বর স্বয়ং বিচারকর্তা।” গীতসংহিতা ৫০:৬ পদ। সেই পবিত্র আজ্ঞা ঈশ্বরের ধার্মিকতা, মেঘগর্জন ও বিদ্যুতের মাঝে সীনয় পর্বতে ঘােষণা করা হয়েছিল জীবন পরিচালনার পথ প্রদর্শক হিসাবে, আর এখন তা প্রকাশিত হল লােকদের মধ্যে বিচারের মানদণ্ডরূপে। হতটি প্রস্তুর দু’খানি খুলল এবং সেখানে ঈশ্বরের ব্যবস্থা দশ আজ্ঞা দেখা গেল, মনে হল যেন জ্বলন্ত আগুনে লিখিত ব্যবস্থা। শব্দগুলাে এমন প্রাঞ্জল ভাষায় লিখিত তা সকলের জন্য সহজবােধ্য। স্মরণশক্তি ফিরে এল কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস মতবিরােধীতার অন্ধত্ব সবার মন থেকে দ্রুত পালিয়ে গেল । ঈশ্বরের দশটি অজ্ঞা সংক্ষিপ্ত, সহজবােধ্য ও নির্ভরযােগ্য, পৃথিবীর সমস্ত সৃষ্টির দৃষ্টিগােচর প্রকাশিত হল । GrHBen 200.2
যারা ঈশ্বরের পবিত্র আজ্ঞাসমূহ পদতলে দলিত করেছিল, তাদের আতঙ্ক ও বিতৃষ্ণা ভাষায় অবর্ণনীয়। আর সদাপ্রভু তাদের নিজের আজ্ঞাসকল দিলেন; যেন তাঁর সঙ্গে লােকেরা তাদের চরিত্রকে তুলনা করে এবং তাদের দুর্বলতার প্রতি মনােযােগী হয় তথাপিও তাদের পরিবর্তন ও সংশােধনের জন্য সময় ছিল । কিন্তু পৃথিবীর সুযােগ সুবিধা অর্জনের নিমিও তারা ঈশ্বরের আজ্ঞায় কর্ণপাত করে নাই এবং অন্যদের পাপ কার্যে লিপ্ত হওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছে। ঈশ্বরের লােকদের তাঁর পবিত্র শাব্বাথ অপবিত্র করতে তারা যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়েছে তাদের বাধ্য করতে। তারা যে ব্যবস্থা অবজ্ঞা করেছে এখন সেই ব্যবস্থাই তাদের দোষী সাব্যস্থ করছে। স্বাতন্ত্র্য আচরণে এখন তারা বিস্মিত, এখন আর কোন অজুহাত খুজে পাচ্ছে না। তারাই মনােনয়ন করেছিল তারা কার সেবা এবং ভজনা করবে, তখন তােমরা ফিরিয়া আসিবে, এবং ধার্মিক ও দুষ্টের মধ্যে, যে ঈশ্বরের সেবা করে ও যে তাহার সেবা না করে, উভয়ের মধ্যে প্রভেদ দেখিবে ।” মালাখি ৩:১৮ পদ। GrHBen 201.1
ঈশ্বরের ব্যবস্থার শত্রু যারা, রাজন্যবর্গ থেকে শুরু করে তাদের সর্বনিন। পদস্থ লােকজন, এখন সত্য এবং দায়িত্ব সম্বন্ধে তাদের আছে নতুন ধারণা। সম্প্রতি তারা দেখতে পেল চতুর্থ আজ্ঞার শাব্বাথ জীবন্ত ঈশ্বরের মুদ্রা। সম্প্রতি তারা আরও দেখছে যে তাদের মিথ্যা শাব্বাথের বৈশিষ্ট্য এবং তা বালির উপর তাদের ইমারতের ভিত্তি স্থাপন করেছে। তারা বুঝতে পেরেছে যে তারা স্বয়ং জীবন্ত ঈশ্বরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত। ধর্মীয় গুরুরা জনগণকে সর্বনাশের দিকে নিয়ে এসেছে, যখন তাদের দায়িত্ব ছিল জনগণকে স্বর্গ দ্বারে পৌঁছে দেওয়া। শেষ বিচার দিনের আগ পর্যন্ত জানা যাবে না পবিত্র দায়িত্ব কত গুরুত্বপূর্ণ এবং অবিশ্বস্তদের কেমন ভয়ানক পরিণতি হবে । শুধুমাত্র অনন্ত কালেই আমরা সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারব একটি আত্মা হারানাের ক্ষতি । নরক যাতনা কত যে ভয়াবহ হবে তাদের, যাদের ঈশ্বর বলবেন, দূর হও দুষ্ট দাস। GrHBen 201.2
ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর স্বর্গ থেকে শােনা যাচ্ছে, ঘােষণা করছেন যীশুর আগমনের দিন ও ক্ষণ এবং তাঁর লােকদের জন্য ঘােষণা করছেন চিরস্থায়ী ব্যবস্থা। বিকট বজ্রধ্বনির ন্যায় তাঁর কণ্ঠস্বর পৃথিবীতে তরঙ্গায়িত অবর্ণনীয় হবে । ঈশ্বরের ইস্রায়েল সন্তানগণ তাদের চোখ এক দৃষ্টিতে ঊধ্বদিকে নিবদ্ধ রেখে দাড়িয়ে শুনতে থাকবে। তাদের মুখমণ্ডল ঈশ্বরের গৌরবে আলােকিত হয়ে জ্যোতি বের হচ্ছিল যেমন কিনা মােশি সীনয় পর্বত থেকে নেমে এলে তাঁর মুখমণ্ডল থেকে আলাে বিকিরণ হচ্ছিল। দুষ্ট লােকেরা ধার্মিক লােকদের মুখমণ্ডলের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে পারছিল না। যারা তাদের জীবনে ঈশ্বরকে সম্মান প্রদর্শন করেছিলেন তাঁর শাব্বাথ দিন পবিত্ররূপে পালন করেছিলেন, যখন তাদের পুরস্কার ঘােষণা করা হল তখন এক মহান বিজয়ােল্লাস শােনা গেল । GrHBen 201.3
তৎক্ষণাৎ পূর্ব আকাশে মানুষের মুষ্টির মত এক টুকরা ছােট কালাে মেঘ দেখা গেল । এটি সেই মেঘ টুকরা যা ত্রাণকর্তাকে পরিবেষ্টিত করেছে, দূর থেকে মনে হয় অন্ধকার তা আচ্ছাদন করছে। ঈশ্বরের লােকেরা অবগত আছে যে এটিই হবে মনুষ্যপুত্রের আগমনের চিহ্ন। তারা সশ্রদ্ধ নীরবতায় উপরের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে যেমন তা পৃথিবীর সন্নিকটে আসছে, আস্তে আস্তে অধিক আলােকিত ও অধিক গৌরবান্বিত হল, যতক্ষণ না এটি বৃহৎ একটি শুভ মেঘে পরিণত হল, এর উৎস একটি গৌরবান্বিত গ্রাসকারী অগ্নির ন্যায় এবং এর উপরে ঈশ্বরের চিরস্থায়ী ব্যবস্থার রংধনু। যীশু একজন ক্ষমতাবান বিজয়ীর বেশে আরােহণ করে আছেন। যীশু আসছেন স্বর্গ ও পৃথিবীর অধিপতি/বিজয়ীরূপে জীবিত ও মৃতদের বিচার করতে, তবে তিনি এখন আর সেই “যাতনাভােগী মনুষ্য” নয়, অপমান ও দুঃখের তিক্তরস পান করতে নয় । “তিনি বিশ্বাস্য ও সত্যময়” “ধর্মশীলতায় বিচার ও যুদ্ধ করেন” এবং “স্বর্গস্থ সৈন্যগণ” (প্রকাশিত বাক্য ৯:১১, ১৪ পদ) তাকে অনুসরণ করে। পবিত্র দূতগণের মুখে ঈশ্বরের স্বর্গীয় গীতগান সহকারে এক বৃহৎ অগণিত জনতা তাঁর শােভা মাত্রায় অংশ গ্রহণ করল। আকাশমণ্ডল মনে হল উজ্জ্বলরূপ ধারণ করল-“অত গুণ অজুত এবং সহস্রের সহস্র।” মানুষের এমন ভাষা নাই যে সেই দৃশ্য বর্ণনা করতে পারে; মানুষের হৃদয় আকাশে সেই উজ্জ্বলতা ধারণ করতে অপারগ। “আকাশমণ্ডল তাহার প্রভায় সমাচ্ছন্ন, পৃথিবী তাহার প্রশংসায় পরিপূর্ণ। তাহার তেজ দীপ্তির তুল্য। হবকুক ৩:৩, ৪ পদ। যেমন সেই জীবন্ত মেঘ কাছে আসছিল, প্রতিটি চক্ষু জীবনের রাজপুত্রকে দেখতে পেল । এখন নাই কোন কাটার মুকুট, নাই কোন ক্ষতচিহ্ন সেই পবিত্র মস্তক; কিন্তু উজ্জ্বল গৌরবে পূর্ণ তাঁর ললাট । তাঁর মুখমণ্ডল থেকে দুপুরের উজ্জ্বল সূর্যরশ্মির তীব্র আলােতে ঝলমল করছে। আর তাহার পরিচ্ছদে ও উরুদেশ এই নাম লেখা আছে-- “রাজাদের রাজা ও প্রভুদের প্রভু।” প্রকাশিত বাক্য ১৯:১৬ পদ । GrHBen 202.1
তাঁর সম্মুখে “সকলের মুখ বিষাদে ম্লান;” ঈশ্বরের অনুগ্রহকে অগ্রাহ্য। করায় অনন্তকালের হতাশায় আচ্ছাদিত করেছে। “আর হৃদয় গলিত ও জানুতে জানুতে ঠেকাঠেকি হইল’... ও মনুষ্যমাত্রের মুখ কালিমাযুক্ত” হল । যিরমিয় ৩০:৬; নহুম ২:১০ পদ। ধার্মিকরা ভয়ে চেঁচাচ্ছে: “কে এখানে দাড়িয়ে থাকতে পারবে?” দূতগণের গীত নিস্তব্ধ হল এবং একটি সশ্রদ্ধ নিরবতা আচ্ছাদন করল। পরে যীশুর কণ্ঠস্বর শােনা গেল, বলছেন: “আমার অনুগ্রহ তােমাদের জন্য যথেষ্ট। ধার্মিকদের মুখমণ্ডলে উজ্জ্বলতা ফিরে এল, আনন্দে তাদের হৃদয় পূর্ণ হল । দূতগণ অধিক উচ্চস্বরে গীত গান শুরু করল যতই তারা পৃথিবীর কাছে আসছিল । GrHBen 202.2
অগ্নি শিখায় আচ্ছাদিত হয়ে রাজাধিরাজ মেঘের উপর নামলেন । আকাশমণ্ডল ছিন্ন ভিন্ন হল, পৃথিবী তাঁর সম্মুখে কম্পমান হল, প্রতিটি পাহাড়পর্বত ও দ্বীপ তাঁর অবস্থান থেকে সড়ে পড়ল । “আমাদের ঈশ্বর আসিবেন, নীরব থাকিবেন না; তাহার অগ্রে অগ্নিগ্রাস করিবে, তাহার চারিদিকে অত্যন্ত ঝড় বহিবে । তিনি ঊর্ধ্বস্থিত স্বর্গকে ডাকিবেন, পৃথিবীকেও ডাকিবেন, স্বীয় প্রজাদের বিচার জন্য।” গীতসংহিতা ৫০:৩,৪ পদ। GrHBen 203.1
“আর পৃথিবীর রাজারা ও মহতেরা ও সহস্রপতিগণ ও ধনবানেরা ও বিক্রমবর্গ এবং সমস্ত দাস ও স্বাধীন লােক গুহাতে ও পৰ্বতীয় শৈলে আপনাদিগকে লুকাইল, আর পর্বত ও শৈল সকলকে কহিতে লাগিল, আমাদের উপরে পতিত হও, যিনি সিংহাসনে বসিয়া আছেন, তাঁহার সম্মুখ হইতে এবং মেষশাবকের ক্রোধ হইতে আমাদিগকে লুকাইয়া রাখ; কেননা তাহাদের ক্রোধের মহাদিন আসিয়া পড়িল, আর কে দাড়াইতে পারে? প্রকাশিত বাক্য ৬:১৫-১৭ পদ। GrHBen 203.2
উপহাসমূলক ঠাট্টার অবসান হল। মিথ্যাবাদীদের ওষ্ঠ চির নীরবতায় শান্ত হল । সংঘাতের হস্ত, যুদ্ধের আলােড়ন, “তুমুল যুদ্ধে সজ্জিত ব্যক্তির সমস্ত সজ্জা ও রক্তে লুণ্ঠিত বস্ত্র” (যিশাইয় ৯:৫ পদ) সবই নিস্ক্রিয় ও শান্ত। কিছুই শােনা গেল না শুধু মাত্র বিনীত আবেদনের রব এবং রােদন ও বিলাপের স্বর/ধ্বনি ভেসে আসছিল। সম্প্রতি যারা উপহাস করেছে তাদের ওষ্ঠ এমন কান্নায় বিভাের: “তাঁর বিচারের দিন উপস্থিত; কে সেই দিনে দাড়াতে সক্ষম?” দুষ্টরা মিনতি করছিল যেন পর্বতের পাথরগুলাে তাদের আচ্ছাদন করে, তাঁর মুখ দেখার চেয়ে, যাকে তারা অবজ্ঞা করেছে, ত্যাজ্য ও অগ্রাহ্য করেছে। GrHBen 203.3
তারা অবগত আছে যে সেই কষ্ঠ মৃতদের কর্ণভেদ করেছে। কতবারই তাদের সহজ ও সরল ভাষায়, কোমল স্বারে পরিবর্তনের জন্য আহবান করা। হয়েছে। একজন বন্ধুর, একজন ভাইয়ের, একজন ত্রাণকর্তার কাছ থেকে কতবারই না তারা মর্মস্পর্শী সনির্বন্ধ অনুরােধ শুনেছে। অন্য আর কাউকে এমন দোষী সাব্যস্ত করা হবে না, যেমন তাঁর অনুগ্রহকে অগ্রাহ্য করেই, তাদের চেয়ে তারা নিন্দার দায়ে ভীষণভাবে অভিযুক্ত হবে, যে স্বর তাদের বারংবার আবেদন জানিয়েছেন : “তােমরা ফির, আপন আপন কুপথ হইতে ফির; কারণ হে ইসায়েল-কূল, তােমরা কেন মরিবে?” যিহিষ্কেল ৩৩:১১ পদ। আহ্ তাদের কাছে কেমন এক অপরিচিতের কণ্ঠস্বর! যীশু বলেন, “আমি ডাকিলে তােমরা অসম্মত হইলে, আমি হস্ত বিস্তার করিলে কেহ মনােযােগ করিলে না; কিন্তু তােমরা আমার সমস্ত পরামর্শ অগ্রাহ্য করিলে, আমার অনুযােগ শুনিতে চাহিলে ” হিতােপদেশ ১:২৪, ২৫ পদ। যে সতর্কবাণী তারা অগ্রাহ্য করেছিল, আমন্ত্রণ অবহেলা করেছিল, সুযােগের অপব্যবহার করেছিল, এখন ঐ কণ্ঠস্বর তাদের স্মরণশক্তিকে জাগিয়ে তুলেই যা তারা মুছে ফেলতে বাধ্য হবে। GrHBen 203.4
খ্রীষ্টের দুঃখভােগের সময় যারা তাকে উপহাস করেছিল সেখানে তাদের দেখা পাওয়া গেল। যখন প্রধান পুরোহিত ঘােষণা করেছিলেন “এখন অবধি তােমরা মনুষ্যপুত্রকে পরাক্রমের দক্ষিণ পার্শ্বে বসিয়া থাকিতে এবং আকাশের মেঘরথে আসিতে দেখিবে” (মথি ২৬:৬৪ পদ)। তখন যাতনা ভােগকারীর কথা তাদের অন্তরে শিহরণ জাগালাে। এখন তারা খ্রীষ্টকে তাঁর পরাক্রমে দেখতে পেল এবং তারা আরও কিছুক্ষণের মধ্যে দেখবে তাঁর অবস্থান পরাক্রমের দক্ষিণ পার্শ্বে । GrHBen 204.1
যারা যীশু খ্রীষ্টকে ঈশ্বরের পুত্র হিসাবে মানতে নারাজ ও তাকে উপহাস করেছিল এখন তারা নির্বাক, শব্দহীন। এখানে দেখা গেল সেই গর্বিত, উব্ধত হেরােদকে যে যীশুর রাজকীয় উপাধির জন্য বিদ্রুপ করে সৈন্যদেরকে হুকুম দিয়েছিল তাকে রাজা হিসাবে অভিবাদ জানাতে। ঐ দু’জন সৈন্যও সেখানে উপস্থিত যারা তাদের অপবিত্র হাতে খ্রীষ্টকে রাজবস্ত্রে ভূষিত করেছিল এবং তাঁর অপ্রতিরােধী হাতে রাজদণ্ড তুলে দিয়েছিল, এবং ঈশ্বর নিন্দারূপ ঠাট্টা, বিদ্রুপ, উপহাস, মিথ্যা অভিনয় পূর্বক তাঁর সম্মুখে প্রণিপাত করেছিল। সেই সমস্ত লােক যারা জীবনের অধিপতিকে আঘাত করেছিল, থুথু দিয়েছিল এখন খ্রীষ্টের তীক্ষ্ম দৃষ্টি থেকে ঘুরে দাঁড়াল এবং উপায় খুঁজছে কিভাবে তাঁর উপস্থিতির মহা পরাক্রমী মহিমা থেকে পালাতে পারে। যারা তাঁর হস্তদ্বয়ে ও পায়ে পেরেক বিদ্ধ করেছিল, সেই সৈন্য যে তাঁর কুক্ষিদেশে বর্ষা বিদ্ধ করেছিল, এখন ভয়ভীতিতে, অনুশােচনায়, মনস্তাপে সেই ক্ষত চিহ্ন দেখল। GrHBen 204.2
এখন পুরােহিতগণ ও রাজন্যবর্গ বিস্ময়পূর্ণ স্বাতন্ত্রে কালভেরীর সেই ঘটনা স্মরণ করছে। ভয়ে, আতঙ্কের কাঁপানিতে তারা এখন স্মরণ করছে শয়তানের বিজয়ােল্লাসে তারা কতই না আনন্দিত হয়েছিল এবং হর্ষে মাথা নেড়ে চিৎকার করেছিল: “ঐ ব্যক্তি অন্য অন্য লােককে রক্ষা করিত, আপনাকে রক্ষা করিতে পারে না; ও ত ইস্রায়েলের রাজা! এখন ক্রুশ হইতে নামিয়া আইলুক; তাহা হইলে আমরা উহার উপরে বিশ্বাস করিব।” মথি ২৭:৪২, ৪৩। পদ । GrHBen 204.3
স্পষ্ট তারা স্মরণ করছে, ত্রাণকর্তার সেই দৃষ্টান্ত কথা যে কৃষকেরা তাদের গৃহস্বামীর প্রাপ্য দ্রাক্ষারসের অংশ দিতে অস্বীকার করেছিল এবং তাঁর দাসদের অপমাণিত করেছিল এবং তাঁর নিজ পুত্রকে হত্যা করেছিল; এবং তারা স্মরণ করতে পারছে যে বাক্য তারা উচ্চারণ করেছিল: দ্রাক্ষাক্ষেত্র স্বামী “সেই দুষ্টদিগকে নিদারুণরূপে বিনষ্ট করবেন।” মথি ২১:৪১ পদ। সেই অবিশ্বস্ত লােকেরা পুরােহিত এবং যাজকগণ তালের পাপ ও শাস্তির কারণ দেখছে তাদের নিজেদের কৃত কর্মের ফল এবং নিজেদের ধ্বংস । এখন সেখানে মর্ত মানুষের বিলাপ ধ্বনি শােনা গেল । সেই উচ্চকণ্ঠ “উহাকে ক্রুশে দাও, উহাকে ক্রুশে দাও”--যা ধ্বনিত হচ্ছিল যিরূশালেমের রাস্তায় রাস্তায়, এর চেয়েও অধিক উচ্চ স্বরে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাদের বীভৎস, হতাশাযুক্ত আর্তনাদ, “এ সেই ঈশ্ব-পুত্র! তিনিই বাস্তবিক, সত্য মশীহ!” তারা রাজাধিরাজের সম্মুখে থেকে পালাবার পথ। খুঁজছে। তারা পর্বতের গভীর গুহায় পালাতে চেষ্টা করল, কিন্তু সব বস্তুই ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল, আলের প্রচেষ্টা বৃথা গেল । GrHBen 204.4
যেসব লােক সত্যকে পরিত্যাগ করে তাদের সবার জীবনে এমন একটা সময় আসে যখন তাদের বিবেক কথা বলে—তাদের মনে পড়ে সেই ভণ্ডামীর কষ্টদায়ক স্মৃতিগুলাে এবং আত্মা তখন মিথ্যা অনুতাপ করে। সেই দিনের জনশ্রুতির সঙ্গে এই সবের কি তুলনা করা যায় যখন “ঝটিকার ন্যায় তােমাদের উপর ভয় উপস্থিত হইবে।” যখন “ঘূর্ণবায়ুর ন্যায় তােমাদের বিপদ আসিবে”: হিতােপদেশ ১:২৭ পদ। যারা খ্রীষ্টকে এবং তাঁর বিশ্বস্ত লােকদের যে প্রতাপে ও গৌরবে ভূষিত করা হচ্ছে তাঁর স্বাক্ষী সেই আতকের মাঝে তারা সাধুগণের আনন্দ সঙ্গীত বর্ণনা করছে: “এই দেখ, ইনিই আমাদের ঈশ্বর; আমরা ইহারই অপেক্ষায় ছিলাম, ইনি আমাদিগকে ত্রাণ করিবেন।” যিশাইয় ২৫:৯ পদ। পৃথিবীর ঘূর্ণিপাকের মধ্যে, বিদ্যুতের আলােক রশ্মির ঝলকে, বজ্রপাতের গর্জনে, তারই মধ্যে ঈশ্ব-পুত্রের কণ্ঠস্বর ডাকছেন নিদ্রাগত ধার্মিকদের । তিনি ধার্মিকদের কবরের দিকে দৃষ্টিপাত করলেন, পরে হাত স্বর্গের দিকে উত্তোলন করে, তিনি ডাকছেন: “জাগ, জাগ, জাগ, তােমরা যারা মৃত্তিকায়। ঘুমিয়ে আছ, ওঠ!” পৃথিবীর সমস্ত জায়গায় পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর কি দক্ষিণে, সমস্ত মৃত লােক তাঁর কণ্ঠস্বর শুনতে পাবে, তারাই জীবিত হয়ে জেগে উঠবে । সমুদয় পৃথিবী, সর্বকালের, সর্বযুগের, সর্ববৃহত এক বৃত্ত তৈরি করবে সমস্ত জাতি, বংশ, ভাষা এবং জনতা নিয়ে তাদের পদদলিত হবে সমুদয় পৃথিবী। মৃত্যুনামক কারাগার থেকে তারা বের হয়ে আসবে, অবিনম্বর গৌরবের পােশাকে সজ্জিত হয়ে, উচ্চরবে বলছে: “মৃত্যু তােমার জয় কোথায়? মৃত্যু, তােমার হুল কোথায়?” ১ করিন্থীয় ১৫:৫৫ পদ। জীবিত ধার্মিকেরা ও পুনরুত্থিত সাধুগণ তালের কণ্ঠ একত্ৰিকৃত করে এক দীর্ঘ, বিজয়ােল্লাস ধ্বনি করে । GrHBen 205.1
যেমন সশরীরে তারা সমাধিপ্রাপ্ত হয়েছিলেন, একই গঠনে তারা কবর থেকে উঠে আসলেন। আদম, সেই হীনতার মধ্যে সবার চেয়ে উচ্চ, বৃহৎ গঠন। ও আকারের কিন্তু ঈশ্বরপুত্রের চেয়ে আকারে কিছুটা ছােট। পরবর্তী বংশধরদের সঙ্গে আদম তাঁর গঠনে এক লক্ষ্যণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে আছে; এখানে মূল্যায়ন করা যায় যে এই মানুষর আকার খর্বকার হ.। কিন্তু প্রত্যেকেই উত্থাপিত হয়েছে অনন্ত যৌবনে সজীব ও বলিষ্ট হয়ে । আদিতে, মনুষ্য ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি হয়েছিল, শুধু তাঁর চরিত্রেই নয়, কিন্তু শারীরিক আকার ও গঠনেও। পাপ মনুষ্যদের মধ্য হতে সেই সাদৃশ্য ও প্রতিমূর্তি কলঙ্কিত করেছিল এবং নিশ্চিহ্ন করে মুছে ফেলছিল; খ্রীষ্ট এসেছেন যা কিছু হারিয়ে ফেলা হয়েছিল, নিশ্চিহ্ন হয়েছিল, তা পুনস্থাপন করতে। তিনি এই নশ্বর দেহে তাঁর পবিত্র গৌরব স্থাপন করবেন। এই মরণশীল, কলুষিত আকার, বিকৃত সৌন্দর্য, একবার যা পাপের পঙ্কিলতায় দূষিত হয়েছে, তা আবার খাটি, নিস্পাপ, মনােরম ও অমরত্ব ধারণ করে। সব ময়লা, কালিমা, অযােগ্যতা ও বিকলঙ্গতা কবরে সমাধিস্থ করা হবে । বহু যুগ পূর্বে যে জীবনবৃক্ষ এদন থেকে হারিয়ে গিয়েছিল তা পুনস্থাপন করা হবে, আর মুক্তিপ্রাপ্তরা পূর্ণ গঠনে “বৃদ্ধি পাবে” (মালাখি ৪:২) তাদের প্রকৃত ও আদর্শ গৌরবে । পূর্বের রয়ে যাওয়া অভিযুক্ত পাপের চিহ্ন সকল মুছে ফেলা হবে এবং খ্রীষ্টের অবিকল সাদৃশ্য, প্রতিমূর্তি প্রকাশ পাবে, “ঈশ্বর প্রভুর মনােরম সৌন্দর্য্য” দেহ, মন, আত্মায় প্রতিফলিত হবে ঈশ্বরের প্রকৃত প্রতিচ্ছবি । আহা, এ কেমন বিস্ময়কর মুক্তিদান! যার বিষয়ে অনেক বলা হয়েছিল, অধীর আগ্রহে মনােবাঞ্ছা করা হয়েছিল, উৎসুক প্রত্যাশায় ও পূর্বজ্ঞানে ধ্যান করা হয়েছিল, কিন্তু কখনও পূর্ণজ্ঞানে বােধগম্য হয়। নাই । GrHBen 205.2
জীবিত ধার্মিকেরা রূপান্তরিত হবে “এক মুহূর্তের মধ্যে, চক্ষুর পলকে ।” ঈশ্বরের রবে তারা গৌরবান্বিত হয়েছিল; এখন তারা অমরত্ব ধারণ করল এবং পুনরুত্থিত ধার্মিকদের সঙ্গে, প্রভুর সঙ্গে আকাশে মিলিত হল । দূতগণ “তাঁর মনােনীতদের সংগ্রহ করল পৃথিবীর চারিদিক থেকে, এক প্রান্ত হইতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত।” পবিত্র দূতগণ ছােট ছােট শিশুদেরকে তাদের নিজ নিজ মায়ের কোলে দিল । যে বন্ধুবর্গ ও স্বজনের মৃত্যুতে বহুদিন পর্যন্ত পৃথক ছিল এখন আর বিয়ােগ হবে না এবং বিজয়ােল্লাসে তারা ঊধ্বদিকে ঈশ্বরের নগরীর দিকে জড়াে হচ্ছে। GrHBen 206.1
মেঘরথের প্রত্যেক পাশে পক্ষ আছে এবং নীচে জীবন্ত চাকা; যখন রথটি ঊধ্বদিকে অগ্রসর হল চাকাগুলাে এবং পক্ষসমূহ উচ্চরবে চেচিয়ে বলল: ‘পবিত্র’, যেমন তারা ঊধ্বদিকে নীত হতে থাকল সেই উচ্চরবে বলল, “পবিত্র”, এবং দূতগণ উচচরবে বলল, “পবিত্র, পবিত্র পবিত্র, ঈশ্বর প্রভু সর্বশক্তিমান।” মুক্তিপ্রাপ্তরা চিৎকার করে বলল, “হাল্লেলুইয়া”! যখন রথটি আকাশের দিকে, ঊধ্বদিকে, নতুন যিরূশালেমের উদ্দেশ্যে ধেয়ে চলল । GrHBen 206.2
ত্রাণকর্তা ঈশ্বরের নগরীতে প্রবেশ করার পূর্বে তাঁর অনুচরদের বিজয় পদক প্রদান করলেন এবং বিভূষিত করলেন রাজ নগরীর সদস্যপদের পদমর্যাদামূলক প্রতীক। আকর্ষণীয় উজ্জ্বল পদমর্যাদাগুলাের চিত্র উপরে অঙ্কিত হল, দেখতে রাজার চারপাশে এক একটি শূন্য সমচতুর্ভূজ যার চিত্রগুলাে উর্ধ্ব দিকে উত্তোলিত হচ্ছে, সাধুদের ও দূতগণের মহত্ব ও গৌরবের চেয়েও উচ্চ শিখরে যাদের মুখমণ্ডলের উজ্জ্বলতার সময় প্রেমে পূর্ণ। সেই অগণিত জনসমুদ্রের মধ্যে প্রত্যেকের দৃষ্টি খ্রীষ্টের উপর আবদ্ধ, প্রত্যেক চোখ তাঁর গৌরব অবলােকন করছে, তাঁর মুখমণ্ডল অন্যসব লােকের চেয়ে অধিক বিকৃত হয়ে.ই এবং তাঁর আকৃতি সব মনুষ্য সন্তানদের চেয়ে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।” মুক্তি প্রাপ্তদের মস্তকে, যীশু তাঁর নিজ অধিকার বলে গৌরব মুকুট পরিয়ে দিচ্ছেন। প্রত্যেক মুকুটে তাঁর জন্য নতুন এক নাম” (প্রকাশিত বাক্য ২:১৭) এবং খোদাই করা, “সদাপ্রভুর পবিত্রতা” । প্রত্যেক হস্ত বিজয়ীর করতলে রাখা হল এবং উজ্জ্বল বীণাটি রাখা হল । তারপরে পরিচালক দূতগণ তাদের বীণায় সুরতুলল এবং প্রত্যেক হস্ত নিজ নিজ বীণায় সমৃদ্ধশালী সুর, সুশ্রাব্য তাল। তুলল। প্রত্যেক অন্তরকে অবর্ণনীয় রােমাঞ্চিত ভাবাবেগেপূর্ণ করল এবং প্রত্যেক কষ্ঠ উত্তোলিত হল কৃতজ্ঞতার প্রশংসায়: যিনি আমাদের প্রেম করেন ও নিজ রক্তে আমাদের পাপ হইতে আমাদিগকে মুক্ত করিয়াছেন, এবং আমাদিগকে রাজস্বরূপ ও আপন ঈশ্বর ও পিতার যাজক করিয়াছেন, তাহার মহিমায় ও পরাক্রম যুগ পর্যায়ে যুগে যুগে হউক । প্রকাশিত বাক্য ১:৫, ৬। GrHBen 206.3
মুক্তিপ্রাপ্ত জনসমুদ্রের সামনেই পবিত্র নগরী । যীশু মনি-মুক্তা খচিত তােরণটি সম্প্রসারিত করে খুললেন এবং জাতিগণ যারা বিশ্বাস রক্ষা করেছিল তারা নগরীতে প্রবেশ করল। তারা ঈশ্বরের স্বর্গোদ্যান দেখতে পেল, আদমের পাপের পূর্ব বাসস্থান। পরে সেই স্বর বাজনার সুমধুর সুরের চেয়েও অধিক উত্তম যা মনুষ্য কর্ণ কখনও শ্রবণ করেনি, তা শুনতে পাওয়া গেল, বলছে: “তােমাদের সংঘর্ষের এখানেই শেষ” আইস আমার পিতার আশীর্বাদের পাত্ররা, তােমাদের জন্য যে রাজ্য জগতের পাওনাবধি প্রস্তুত করা হয়েছে তাহার অধিকারী হও।” GrHBen 207.1
ত্রাণকর্তার প্রার্থনা তাঁর শিষ্যদের জন্য এখন তা পূর্ণ হল: “আমি যেখানে থাকব তারাও যেন সেখানে থাকতে পারে যাদের তুমি আমাকে দিয়াছ, আমার সঙ্গে থাকতে পারে আমি যেখানে থাকি।” ২৫ অধ্যায়। আপন প্রতাপের সাক্ষাতে নির্দোষ অবস্থায় সানন্দে উপস্থিত করিতে পারেন” (যিহুদা ২৪) খ্রীষ্ট তাঁর পিতার কাতে তাদের উপস্থাপন কমা,ইন যাদের তিনি নিজ রক্ত দ্বারা ক্রয় করেছেন, প্রকাশ করেছেন: “আমি এখানে এবং যে সন্তানদিগকে তুমি আমাকে দিয়াছ।” “তুমি যাদের আমাকে দিয়াই আমি তাদের রক্ষা করছি।” এ কেমন বিস্ময়কর পরিত্রাণকারী অপূর্ব প্রেম! যখন সেই অনন্ত পিতা মুক্তি প্রাপ্তদের উপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করবেন, তাঁর সাদৃশ্যও প্রতিমূর্তি ধারণ করবে পাপের লড়াই শেষ, পাপের কালিমা মুছে গেল, মানুষ আবার স্বর্গীয় সুখ অনুভব করছে এই সেই আনন্দ উল্লাসের সময়। GrHBen 207.2
অবর্ণনীয় প্রেমে যীশু তাঁর বিশ্বস্ত দের আহ্বান করছেন তাদের প্রভুর আনন্দের সহভাগী হতে। ত্রাণকর্তার পরম আনন্দ যখন তিনি দেখেন স্বর্গীয় মহিমায় সেই সমস্ত আত্মাদের, যারা তাঁর মৃত্যু যন্ত্রণা, লাঞ্ছনা, অবস্থার জন্য আজ মুক্তি লাভ করল । এবং মুক্তিপ্রাপ্তরা তাঁর আনন্দের সহভাগী, তারা আরও দেখতে পেল মুক্তি প্রাপ্তদের মধ্যে তাদেরকে যারা খ্ৰীষ্টকে জয় করেছে তাদের। নিবেদন, প্রার্থনা, শ্রম এবং প্রেমের বলির মাধ্যমে। যখন তারা বৃহৎ শুক্লবর্ণ সিংহাসনের চারিদিকে একত্রিত হলেন, তাদের হৃদয় অনির্বচনীয় আনন্দে পূর্ণ হল, তাদেরকে দেখতে পেল যাদের আত্ম তারা খ্রীষ্টের জন্য জয় করেছে, এবং তাদেরকে দেখল যারা অন্যদেরকে লাভ করেছে এবং এইসব লােকেরা আবার অন্যদেরকে সবাই এখন বিশ্রামের আশ্রয় স্থানে, সেখানে তালের নিজ নিজ মুকুট খ্রীষ্টের চরণে রাখল এবং তাঁর প্রশংসায় মসগুল অসীম অনন্তের বৃত্তে । GrHBen 207.3
ঈশ্বরের নগরাত যখন মুক্তিপ্রাপ্তদের আবান করা হল, তখন আকাশ বাতাস ধ্বনিত হল সশ্রদ্ধ ভজনায়, বিজয় উল্লাসে। দু’জন আদম একত্রে মিলিত হল । ঈশ্ব-পুত্র তাঁর হস্ত সম্প্রসারিত করে দাড়িয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন মনুষ্য জাতির আদি পিতাকে বরণ করার জন্য যাকে তিনিই সৃষ্টি করেছেন, যে নিজ নির্মাতার বিরুদ্ধে পাপ করেছিল, এবং যার পাপের কারণে মুক্তিকর্তাকে ক্রুশের মৃত্যুর চিহ্ন সকল বহন করতে হচেছ। যখন আদম বুঝতে পারল সেই নিষ্ঠুর পেরেকের ক্ষত চিহ্ন সকল, সে প্রভুর কোলে পরে আলিঙ্গন করেনি, তবে বি, সশ্রদ্ধা ভরে তাঁর চরণে পড়ে, করুণ স্বরে বলল: “মূল্যবান, মহামূল্যবান সেই মেষশাবক যিনি হত হয়েছেন?” স্নেহপূর্ণ হস্তে মুক্তিকর্তা তাকে তুলালন এবং আবার আম গ্রণ জানালেন এদন গৃহাকে অবলােকন করতে যেখান থেকে বহুযুগ পূর্বে তাকে বিতাড়িত করা হয়েছিল। আদমকে এখন থেকে বহিষ্কারের পরে পৃথিবীতে আদমের জীবন দুঃখ-কষ্টে পূর্ণ হয়েছিল। প্রতিটি ঝড়ে পড়া মৃত পাতা, প্রতিটি বলিদানের বস্তু/প্রাণী, প্রকৃতি থেকে প্রতিটি বিয়ােগ-ব্যথা, মানব জাতির পবিত্রতার প্রতিটি কলঙ্ক, তাঁর পাপের সদ্য স্মরণীয় বস্তু ছিল । যেমন তিনি দেখতে ছিলেন পাপের বদ্ধি হচ্ছে, অনুশােচনা বিবেকের দংশনে সে ভীষণভাবে যন্ত্রণা পাচ্ছিলেন, তাঁর সাবধানতার/সতর্কতার উত্তরে, সে সব পাপের জন্য নিজেকে ভৎসনা করেছিল, কারণ সেই সব পাপের কারণ। প্রায় হাজার বছর ধৈর্য্যের সঙ্গে বিনয়ী ভাবে পাপের শাস্তি ভােগ করেছিলেন । বিশ্বস্ততা সহকারে সে পাপের জন্য অনুশােচনা করেছেন, এবং বিশ্বাস করেন প্রতিভাত ত্রাণকর্তার প্রশংসনীয় ভূমিকার উপর তিনি পুনরুদ্ধার আশা মনে রেখে মৃত্যুবরণ করেন। মনুষ্যের অযােগ্যতা ও পাপে পতন থেকে ঈশ-পুত্র তাকে মুক্ত করেন; এখন প্রায়শ্চিত্তের মাধ্যমে আদম তাঁর পূর্বের কর্তৃত্ব ফিরে পেলেন। GrHBen 208.1
সে নিজ হাতে যে সব গাছগুলি বহন করেছে এবং সেই সকল ফুল যা সে খুব পছন্দ করতাে এবং যত্ন নিত, তাঁর মন এখন সেই বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারছে; তিনি বুঝতে পারলেন যে এ সেই এদন উদ্যানের পুনঃস্থাপন, অধিক সুন্দর ও মনােরম, যেখান থেকে তিনি বিতাড়িত হয়েছিলেন। ত্রাণকর্তা তাকে পরিচালিত করলেন সেই জীবন বৃক্ষের কাছে এবং সেই গৌরবময় ফল ছিলেন এবং আদমকে তা আস্বাদন করতে বললেন। আদম ত্রাণকর্তার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন এবং দেখলেন তাঁর নিজ পরিবারে অগণিত নােক মুক্তি GrHBen 208.2
লাভ করেছে এবং ঈশ্বরের পরম দেশে প্রবেশ করেছে। পরে তিনি তাঁর উজ্জ্বল চাকচিক্যময় মুকুটটি যীশুর চরণে রাখলেন এবং মুক্তিকর্তাকে বুকে আলিঙ্গন করলেন। তিনি স্বর্ণময় বীণা নিলেন এবং স্বার্গে বিজয় সঙ্গীতে প্রতিধ্বনিত হল: “মূল্যবান, মূল্যবান, মহামূল্যবান সে মেষশাবক যা হত হয়েছিল এবং আবার জীবিত হল!” আদমের পরিবার এগিয়ে এলাে এবং তাদের নিজ নিজ মুকুটগুলাে ত্রাণকর্তার চরণে রেখে তাঁর সম্মুখে জানুপাত করল পরম শ্রদ্ধায় । GrHBen 209.1
তার এই পুনর্মিলন অনুষ্ঠানের স্বাক্ষী হল স্বর্গ দূতগণ যারা একবার আদমের পাপে পতনের সময় রােদন করেছিল এবং আনন্দিত হয়েছিলেন যীশুর পুনরুত্থানে, স্বর্গে আরােহণ, ও কবরের দ্বার সকল মুক্ত করে দিয়েছিলেন সকলের জন্য যারা তাঁর নামে বিশ্বাস করেছিল। তারা এখন অবলােকন করছে পরিত্রাণ কার্য সম্পন্ন হয়েছে এবং তারা নিজের ধ্বনি সেই প্রশংসা সঙ্গীতের সঙ্গে যােগ করল। GrHBen 209.2
সিংহাসনের সামনে নদী স্ফটিকের মত চকচকে, যেন অগ্নিমিশ্রিত কাচময় সমুদ্র ঈশ্বরের গৌরবে তা উজ্জ্বল দীপ্তিময়, এক সুবৃহৎ দল সেখানে একত্রিত হয়েছে যারা “সেই পশু ও তাহার প্রতিমা ও তাহার নামের সংখ্যার উপরে বিজয়ী হইয়াছে।” “তাহাদের হস্তে ঈশ্বরের বীণা,” সেই মেষশাবকসহ সিয়ােন পর্বতে দাড়িয়ে আছে, তারা এক লক্ষ চুয়াল্লিশ সহস্র লােক, তারা। মনুষ্যদের মধ্যে থেকে মুক্তি লাভ করেইে; পরে বহু জলের কল্লোল ও মহা মেঘধ্বনির ন্যায় রব শােনা গেল, “বীণাবাদকদল আপন আপন বীণা বাজাইতেছেন, এবং তারা সিংহাসনের সম্মুখে নূতন একটি গীত গান করছে যা কোন মনুষ্য শিখতে পারে নাই শুধু এক লক্ষ চুয়াল্লিশ সহস্র লােক ব্যতিত । এই সেই মােশী ও মেষশাবকের গীত-মুক্তি প্রাপ্তির গীত । অন্য কেহ নয়, শুধুমাত্র এক লক্ষ চুয়াল্লিশ সহস্র লােক এই গান করতে পারে; কারণ গীতটি তাদের অভিজ্ঞতার সঙ্গীত এই অভিজ্ঞতা অন্য কেহ কখনও অর্জন করতে পারে নাই । “যে কোন স্থানে মেষশাবক গমন করেন, সেই স্থানে ইহারা তাহার অনুগামী হয়।” এই লােকেরা জীবিতদের মধ্য হতে, এই পৃথিবী হতে, রূপান্তরিত হয়ে, এবং তাদের গণনা করা হয়, “ইহারা ঈশ্বরের ও মেষশাবকের নিমিত্ত অগ্রিমাংশ।” প্রকাশিত বাক্য ১৫:২,৩; ১৪:১-৫। “ইহারা সেই লােক, যাহারা” সেই মহাক্লেশের মধ্য হতে এসেছে; তারা এমন সঙ্কট কালের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে যা মনুষ্য জাতির স্থিতিকাল অবধি কখনও হয় নাই; তারা যাকোবের সঙ্কটকালের নিদারুণ যন্ত্রণা ভােগ করেছে; তারা যখন ঈশ্বরের শেষ বিচারে উপস্থিত হয়েছিলেন তখন তাদের পক্ষে মধ্যস্থকারী কোন উকিল পাওয়া যায়নি। কিন্তু তারা মুক্তি পেয়েছে কারণ তারা “মেষশাবকের রক্তে আপন আপন বস্ত্র ধৌত করিয়াছে, ও শুক্লবর্ণ করিয়াছে।” “তাহাদের মুখে কোন মিথ্যা কথা পাওয়া যায় নাই; তাহারা ঈশ্বরের সম্মুখে নির্দোষ।” এইজন্য ইহারা ঈশ্বরের সিংহাসনের সম্মুখে আছে; এবং ইহারা দিবারাত্র তাহার মন্দিরে তাহার আরাধনা করে, আর যিনি সিংহাসনে বসিয়া আছেন, তিনি ইহাদের উপরে আপন তাম্বু বিস্তার করিবেন। তারা অবলােকন করেছে পৃথিবী তুর্ভিক্ষ ও মহামারী দ্বারা ধ্বংস প্রাপ্ত হয়েছে, সূৰ্য তাঁর নিদারুন উত্তাপ বৃদ্ধি করে মনুষ্যদের ঘৃণা করেছে; এবং তারা নিজেরাও সেই যন্ত্রণার, কষ্টের, ক্ষুধা, তৃষ্ণার শিকার হয়েছেন। কিন্তু “ইহারা আর কখনও ক্ষুধিত হইবে না, আর কখনও তৃষ্ণার্ত হইবে না এবং ইহাদিগেতে রৌদ্র বা কোন উত্তাপ লাগিবে না; কারণ সিংহাসনের মধ্যস্থিত মেষশাবক ইহাদিগকে পালন করিবেন এবং জীবন জলের উনুইয়ের নিকটে গমন করাইবেন, আর ঈর ইহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন।” প্রকাশিত বাক্য ৭:১৪-১৭। GrHBen 209.3
সর্বযুগে ত্রাণকর্তা তাঁর মনােনীতদের কষ্ট দুঃখ, প্রলােভন ও পরীক্ষার বিদ্যালয়ে শিক্ষা দিয়েছেন, উপদেশ ও বাধ্যতা শিখিয়েছেন। তারা পৃথিবীতে সরু পথে চলেছে; তাঁর দুর্দশার অগ্নিকুণ্ডে পরিশােধিত হয়েছে । যীশুর জন্য তারা প্রতিপক্ষ, ঘৃণিত, কলঙ্কিত হয়েছে। তারা যন্ত্রণাদায়ক সংঘর্ষে তাঁর অনুসরণ করেছে; তারা নিজেদেরকে অস্বীকার করেছে এবং তিক্ত, নিরুৎসাহিত অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। তাদের এই কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতার মাঝে মন্দের ভয়াবহতা, ক্ষমতা, অপবাদ, অভিশাপ, শিক্ষাগ্রহণ করেছে; তারা এর প্রতি ঘৃণ্য ও বিতৃষ্ণার বিষয় হিসাবে দেখেছেন। একটি বিশাল আত্মত্যাগের অনুভূতি তৈরিতে তাদের মর্মকে বিনয়ী করেছে, তাদের নিজ দৃষ্টিতে এবং তাদের হৃদয় কৃতজ্ঞতায় পূর্ণ হয়েছে এবং প্রশংসা করেছে সেই পরিহুিতিতে যে কখনও পতিত হয় নাই, সে তা কখনও উপলব্ধি করতে পারবে না। তারা সবকিছু ভালবেসেছে কারণ তারা অধিক পাপের ক্ষমা পেয়েছে । তারা খ্রীষ্টের দুঃখ ভােগের অংশীদার হয়েছে, তারা এখন তাঁর গৌরবেরও অংশীদার হবার জন্য উপযুক্ত। GrHBen 210.1
চিলেকোঠা থেকে, জীর্ণ গােয়াল ঘর থেকে, অন্ধকার কারাকক্ষ থেকে, রাজমজুরদের ভারা থেকে, পাহাড়-পর্বত থেকে, মরুভূমি থেকে, পৃথিবীর গুহা থেকে সমুদ্রের গভীর গিরিগুহা থেকে ঈশ্বরের উত্তরাধিকারীদের আগমন হয়েছে। পৃথিবীতে তারা ছিল “দীনহীন, ক্লিষ্ট, উপদ্রত।” বহু সংখ্যক লােক কলকের বােঝা নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে কারণ তারা শয়তানের প্রতারণামূলক দীসমূহ মেনে নিতে দৃঢ়রূপে অস্বীকার করতে অবিচল ছিল। মানুষের বিচারে তাদেরকে জঘন্যতম অপরাধী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু এখন “ঈশ্বর স্বয়ং বিচার কর্তা।” গীতসংহিতা ৫০৪৬। এখন পৃথিবীর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হল । তিনি “আপন প্রজাদের দুর্ণাম দূর করিবেন ।” যিশাইয় ২৫:৮। “আর তাহাদিগকে বলা যাইবে, পবিত্র প্রজা, সদাপ্রভুর মুক্ত লােক।” তিনি তাদের। জন্য প্রস্তুত করেছেন “ভস্মের পরিবর্তে শিরােভূষণ, শােকের পরিবর্তে আনন্দতৈল, অবসন্ন আত্মার পরিবর্তে প্রশংসাস্বরূপ পরিচ্ছদ।” যিশাইয় ৬২:১২; ৬১:৩। তারা আর কখনও দুর্বল, ক্লিষ্ট, ছিন্নভিন্ন বা নিষ্ঠুরতার অত্যাচারের শিকার হবে না। এখন থেকে তারা অনন্তকাল প্রভুর সঙ্গে থাকবে । তারা সিংহাসনের সম্মুখে দায়মান রাজকীয় সম্রান্ত পরিচ্ছদ ভুষিত, যে পােশাক পৃথিবীর সর্বোচ্চ সম্মানিত ব্যক্তি কখনও পরিধান করে নাই। তাদেরকে যে মহিমান্বিত মুকুটে ভূষিত করা হল, তা পৃথিবীর স্থিতিকাল অবধি কোন রাজা বা শাসনকর্তার মস্তকে ভূষিত করা হয় নাই। ব্যথার ও রােদনের দিন চিরকালের জন্য বিলীন হল । গৌরবের রাজা সকলের মুখ হতে চক্ষুর জল মুছে দিলেন; দুঃখ ও বেদনা আর নাই। বৃক্ষশাখার দোলনের মধ্যে তারা স্পষ্ট কণ্ঠে সুমধুর স্বরে, সমতালে প্রশংসা গীত করছে; প্রতিটি কণ্ঠ সেই সঙ্গীত করছে, যে পর্যন্ত না তার ধ্বনিতে আকাশ বাতাস বিভাের হল: “পরিত্রাণ আমাদের ঈশ্বরের, যিনি সিংহাসনে বসিয়া আছেন, এবং মেষশাবকের দান।” আর প্রত্যেক স্বর্গবাসী তাদের সঙ্গে কণ্ঠ মিলান: “আমেন; ধন্যবাদ ও গৌরব ও জ্ঞান ও প্রশংসা ও সমাদর ও পরাক্রম ও শক্তি যুগপর্যায়ের যুগে যুগে আমাদের ঈশ্বরের প্রতি বর্তৃক ।” প্রকাশিত বাক্য ৭:১০,১২ । GrHBen 210.2
এ জীবনে আমরা পরিত্রাণ পরিকল্পনার বিস্ময়কর মূলমন্ত্র শুধু বুঝতে শুরু করতে পারি। আমাদের সীমিত বােধশক্তিতে আমরা শুধু বুঝতে পারি লজ্জা ও গৌরব, জীবন ও মৃত্যু, দয়া ও ন্যায়বিচার, যা মিলিত হয়েছে ঐ ক্রুশে; তবে আমাদের মানুষিক শক্তিতে সর্বশেষ চেষ্টায় তাঁর পূর্ণ তাৎপর্য উপলব্ধি করতে অসমর্থ । মুক্তিতথ্যর প্রেমের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ও উচ্চতা ও গভীরতা কিন্তু অস্পষ্ট/ঈষৎ অজ্ঞান মাত্র । পরিত্রাণ পরিকল্পনা সম্পূর্ণ বােধগম্য হবে না, যদিও মুক্তিপ্রাপ্তরা তা অবলােকন করে যেমন তারা পর্যবেক্ষণ করেছে, জ্ঞানে যা তারা জেনেছে। যদিও পৃথিবীর কষ্ট-দুঃখ, ব্যাথা-বেদনা, পরীক্ষা প্রলােভনের শেষ হয়েছে এবং সমস্যার নিরসন হয়েছে তবুও ঈশ্বরের প্রজারা অনন্তকাল যাবৎ সর্বদাই নতুন সত্য সতত স্বতন্ত্র, বুদ্ধিমান, জ্ঞানী তাঁর পরিত্রাণ সম্বন্ধে সচেতন থাকবে। GrHBen 211.1
অসীম অনন্তকাল পর্যন্ত খ্রীষ্টের ক্রুশই হবে মুক্তিপ্রাপ্তদের ধ্যান, গবেষণা, অনুসন্ধানের ও সঙ্গীতের বিষয় । খ্রীষ্টের মহিমায় তারা খ্রীষ্টাকে দেখবে ক্রুশবিদ্ধ। তারা কখনও একথা ভুলতে পারবে না যে যার ক্ষমতায় এই অগণিত নিখিল বিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে এবং যিনি ধারণ প্রতিপালন করছেন, নিখিল মহাশূন্যে, ঈশ্বরের প্রিয় পাত্র, স্বর্গের মহত্ত্ব, তাকে সরাফগণ ও উজ্জ্বল দূতগণ ভজনা করে মােহিত হয় তিনি নিজেকে অবনত করলেন যেন পতিত মানব জাতিকে উচ্চে তুলতে পারেন; তিনি পাপের অপরাধ ও অপমান সহ্য করলেন, পিতার কাছ থেকে দূরে থাকলেন, যতক্ষণ না হারানাে পৃথিবীর আর্তনাদ তাঁর হৃদয় ছিন্ন ভিন্ন করল এবং তাঁর জীবনকে চূর্ণবিচূর্ণ করল কালভেরীর শে। নিখিল বিশ্বের নির্মাতা, নিয়তির অধিপতি, তাঁর নিজ ক্ষমতা বর্জন করলেন এবং মানব প্রেমে নিজেকে নত করলেন, বিশ্বের প্রশংসায় ও ভজনায় ও বিস্ময়ে আন্দোলিত হলেন । মুক্তিপ্রাপ্ত জাতি যখন মুক্তিকর্তার দিকে দৃষ্টিপাত করবেন এবং দেখতে পাবেন, পিতার অনন্ত গৌরবে তাঁর সিংহাসনের দিকে দৃষ্টিপাত করবেন, যা অনন্তকাল থেকে অনন্তকাল পর্যন্ত এবং জানবে যে তাঁর রাজ্যের আর কোন শেষ নাই। তারা ভাবাবিষ্ট হয়ে গেয়ে উঠবে: “মূল্যবান, মহা মূল্যবান সেই মেষশাবক, যাকে হত হতে হয়েছিল, এবং যিনি তাঁর নিজের অতি মূল্যবান রক্ত দিয়ে আমাদেরকে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে মুক্ত করেছে!” GrHBen 211.2
ক্রুশের রহস্য অন্য সব রহস্য বর্ণনা করে । কালভেরীর স্রোতধারা আলােকে ঈশ্বরের চরিত্র, আমাদেরকে সশ্রদ্ধ হয়ে ভক্তিতে, সুন্দর ও আকর্ষণীয়তায় পূর্ণ করে,হ। পিতামাতার স্নেহ দেখা যায় দয়া, ম্রতা, পবিত্রতা, ন্যায়বিচার ও ক্ষমতায় মিশ্রিত । যখন আমরা তাঁর সিংহাসনের মহত্ত্ব দেখি, আমরা তাঁর চরিত্র উচ্চ ও উত্তোলিত দেখতে পাই, এটি করুণার প্রকাশ ও উপলব্ধি, যা পূর্বে কখনও হয় নাই, প্রিয়পাত্র করার তাৎপর্যের উপাধি, “আমাদের পিতা।” GrHBen 212.1
ইহা লক্ষ্যণীয় যে তিনি যে জ্ঞানে অসীম, আমাদের পরিত্রাণের জন্য আর কোন পরিকল্পনা করতে পারেন না, শুধু তাঁর নিজ পুত্রকে দান করা ছাড়া । পৃথিবীর লােকদের আনন্দই হল এই বলিদানের মূল্য, সঙ্গে মুক্তিপণ, পবিত্র, সুখী ও অমরত্ব। মুক্তিকর্তার অন্ধকারের অধিপতির সঙ্গে সংঘর্ষের পরিণাম মুক্তিপ্রাপ্তদের আনন্দ, ঈশ্বরের মহিমা, সতত যুগ পর্যায়ের যুগে যুগে প্রবাহিত হওয়া। আর এটিই হল আত্মার মূল্য যেন পিতা পরিতৃপ্ত হতে পারেন, যে মূল্য পরিশােধ করা হল; এবং খ্রীষ্ট নিজেই মহান আত্মদানের ফল লক্ষ করতে পেরে পরিতৃপ্ত । GrHBen 212.2
*****