Go to full page →

খাবার এবং মানসিকভাবে বেড়ে ওঠা EdBen 190

বুদ্ধিগতভাবে বেড়ে ওঠার সঙ্গে খাদ্যের সম্পর্কের প্রতি আগে থেকেই আরও বেশি মনােযােগী হতে হবে। মানসিক বিভ্রান্তি এবং স্থূলবুদ্ধি প্রায়ই ভুল খাবার গ্রহণের পরিণতি। EdBen 190.1

প্রায়ই সজোর অনুরােধ করা হচ্ছে যে, খাবার মনােনয়নে ক্ষুধা একটি রক্ষাকবচ স্বরূপ। সব সময় যদি স্বাস্থ্যনীতি পালন করা হয়, তবে এ কথা সত্য বলে প্রমাণিত হয়। কিন্তু কু-অভ্যাসের মাধ্যমে, বংশ পর্যায়ে ক্ষুধা এত লালসাপূর্ণ হয়েছে যে, তা সতত কোন না কোন ক্ষতিকারক বাসনা চরিতার্থে পরিণত হয়েছে। একটি পথ নির্দেশক হিসেবে এর প্রতি আর ভরসা রাখা যায় না। EdBen 190.2

স্বাস্থ্য-পাঠে ছাত্র-ছাত্রীদের বিভিন্ন খাবারের পুষ্টিমূল্য সম্পর্কে শিক্ষা দিতে হবে। দ্রবীভূত এবং উত্তেজনা সৃষ্টিকারী খাবারের কুফল এবং যার মধ্যে পুষ্টির অভাব রয়েছে, তাও তাদের ভালােভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে। চা এবং কফি, মেশিনে তৈরি সাদা আদা-ময়লার রুটি, আচার, নিকৃষ্ট শাকসজি, মিষ্টিযুক্ত খাবার, মসলাযুক্ত খাবার, কেক জাতীয় খাবার, উপযুক্ত পুষ্টির জোগান দিতে ব্যর্থ হয়। অনেক ছাত্র-ছাত্রী এ জাতীয় খাবার খেয়ে তাদের স্বাস্থ্য নষ্ট করেছে। অনেক ছােট ও পুঁচকে শিশু, যারা মন ও শরীরের দিক থেকে পরিশ্রমে অপারগ, তারাও একটি নিম্নমানের খাবারের শিকার। শস্য, ফলমূল, বিভিন্ন জাতের বাদাম, এবং শাকসজি, যদি সঠিক ভাবে মিশিয়ে খাদ্য তৈরি করা যায়, যার মধ্যে সব ধরনের পুষ্টি রয়েছে; তবে তা এমন খাদ্য পরিণত হয়, যা শারীরিক ও মানসিক শক্তি বাড়াতে সবচেয়ে ভালােভাবে সাহায্য করে । EdBen 190.3

কত প্রকারের খাদ্যপুষ্টি রয়েছে, কেবল তা দেখলেই চলবে না, কিন্তু খাবার গ্রহণকারীর শারীরিক ক্ষমতার বিষয়ও চিন্তা করতে হবে। প্রায়ই দৈহিক পরিশ্রমী ব্যক্তি যে খাবার অবাধে খেয়ে থাকে, তা মানসিক পরিশ্রমীরা এড়িয়ে চলবে। খাবারে উপযুক্ত মিশ্রণ হচ্ছে কিনা সেদিকেও নজর দিতে হবে। যারা মস্তিষ্কের অথবা চিন্তা ভাবনার কাজ করে থাকেন, তারা অন্ততপক্ষে শারীরিক পরিশ্রমীদের কিছু খাবার খেতে পারেন EdBen 190.4

আর বেশি খাওয়া, যা খুবই স্বাস্থ্যহানীকর হতে পারে, তা এড়িয়ে চলতে হবে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠনের জন্য যে যে খাবার প্রয়ােজন তার চেয়ে বেশি কিছু ব্যবহার করতে পারে না, আর যদি অতিরিক্ত হয়ে যায়, তবে তা দেহের বিভিন্ন যন্ত্রপাতিকে অত্যন্ত ভারাক্রান্ত করে তােলে। কেউ কেউ অতিরিক্ত বই পড়ার কারণে স্বাস্থ্য ভেঙ্গে ফেলেছে, তার আসল কারণ অতিভােজন। যদি স্বাস্থ্য-নীতি সমূহে সঠিক মনােযােগ দেয়া হয় তবে মানসিক ক্লান্তির বিপদ খুব অল্পই থাকে; কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে কথিত মানসিক ব্যর্থতার কারণ পেটকে অতিরিক্ত ভারী করা, যার দরুণ দৈহিক ক্লান্তি আসে এবং মনও দুর্বল হয়ে পড়ে। EdBen 190.5

অধিকাংশ ক্ষেত্রে দিনে তিনবার খাবার না খেয়ে বরং দু’ বার খাবার খাওয়ার অনুমােদন করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের আগে যদি খাবার খাওয়া হয় তবে তা আগের বার খাওয়া খাবারের হজমে বাধা সৃষ্টি করে। দেরি করে খাবার খেলেও, তা ঘুমাতে যাবার আগে হজম হয় না। এভাবে পেট পূর্ণ বিশ্রাম পায় না। ঘুমের ব্যঘাত সৃষ্টি হয়, মগজ এবং শিরা-উপশিরা ক্লান্ত হয়ে পড়ে, সকালে খাবার খাওয়ার ইচ্ছা নষ্ট হয়ে যায়, দিনের কাজ সম্পাদনে গােটা শরীর কেমন নির্জীব এবং অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। EdBen 191.1

খাবার ও ঘুমের নিয়মানুবর্তীতায় গুরুতর প্রতি অবহেলা করলে চলবে না। বিশ্রামের সময়ে শরীর গঠনের কাজ চলতে থাকে, এই কারণে এটি অপরিহার্য, বিশেষ করে তরুণ বয়সে ঘুম নিয়মিত এবং পর্যাপ্ত হতে হবে। EdBen 191.2

ব্যস্ততা সহকারে রাহু গ্রাসে খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে । অল্প সময়ের মধ্যে অল্পই খেতে হবে। আপনি যদি ভালাে করে চিবিয়ে খান তা হলে অল্প খাবার খাওয়াও আপনার পক্ষে ভালাে। EdBen 191.3

খাবার সময় হবে একটি সামাজিক মেলামেশা এবং নতুন তেজশক্তি লাভের সময়। যা কিছু বােঝাস্বরূপ এবং বিরক্তিস্বরূপ তা দূরীভূত হবে। সকল উত্তম বস্তুর দাতার প্রতি আস্থা রাখুন; তাঁর প্রতি সদয় হােন ও ধন্যবাদ জানান, এবং খাবার খাওয়ার সময় আলাপ-আলােচনা হবে। সময়ােপযােগি, এবং মধুর চিন্তা সমৃদ্ধ যা ক্লান্ত না করে বরং আপনাদের উচ্চে তুলে ধরবে । EdBen 191.4

মিতাচারী হওয়া এবং সমস্ত ব্যাপারে নিয়মানুবর্তীতা রক্ষা করায়। একটি চমৎকার শক্তি রয়েছে। এটি জীবনের চলার পথ বেশি সুন্দর করার কাজে মধুরতা এবং স্বভাবের শান্তভাব আনার অথবা স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক গুণাবলীর চেয়ে বেশি কিছু। একই সময়ে এভাবে লব্ধ আত্ম নিয়ন্ত্রণের শক্তি, যা কঠিন কাজ এবং বাস্তবতাসহ আঁকড়ে ধরার জন্য খুবই মূল্যবান হাতিয়ার, যা প্রত্যেক মানব সত্ত্বার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। EdBen 191.5

প্রজ্ঞার “পথ সকল মনােরঞ্জনের পথ, তাহার সমস্ত মার্গ শান্তিময় হিতােপদেশ ৩:১৭। আমাদের দেশের প্রত্যেক যুবক-যুবতি, একজন অভিষিক্ত রাজার উচ্চ লক্ষ্য অপেক্ষা, তাদের সামনের উচ্চতর সম্ভাবনাময় জ্ঞানী ব্যক্তির বাণীগুলাে ধ্যান করুক, “হে দেশ, ধন্য তুমি, যদি...তােমার অধ্যক্ষগণ উপযুক্ত সময়ে ভােজন করেন, বলবৃদ্ধির নিমিত্ত, মত্ততার নিমিত্ত নয়।” উপদেশক ১০:১৭ । EdBen 192.1