খ্রীষ্ট যখন তাঁর শিষ্যদেরকে পবিত্র আত্মা দানের প্রতিজ্ঞা করলেন, সে সময় তিনি জগতে তাঁর পরিচর্যা কাজের একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে পড়েছিলেন। তিনি ক্রুশের ছায়াতলে দাঁড়িয়ে ছিলেন এবং সকলের পাপ বহনকারী ছিলেন তাঁর উপরে অভিযোগের এক বিরাট বোঝা চেপে বসেছিল। নিজেকে উৎসের্গর জন্য দান করার আগে তিনি তাঁর শিষ্যদেরকে এমন এক অপরিহার্য ও পরিপূর্ণ উপহার সম্পর্কে নির্দেশনা দেন যা তিনি তাঁদের উপরে ন্যস্ত করতে চলেছিলেন — যে উপহারটি খ্রীষ্টের অনুগ্রহের এক অশেষ উৎস তাঁদের হাতের নাগালে নিয়ে আসবে। “আর আমি পিতার নিকটে নিবেদন করিব,” তিনি বলেন, “এবং তিনি আর এক সহায় তোমাদিগকে দিবেন, যেন তিনি চিরকাল তোমাদের সঙ্গে থাকেন; তিনি সত্যের আত্মা; জগৎ তাঁহাকে গ্রহণ করিতে পারে না, কেননা সে তাঁহাকে দেখে না, তাঁহাকে জানেও না; তোমরা তাঁহাকে জান, কারণ তিনি তোমাদের নিকটে অবস্থিতি করেন ও তোমাদের অন্তরে থাকিবেন।” যোহন ১৪:১৬, ১৭। ত্রাণকর্তা এমন এক সময়ের কথা বলছিলেন যখন পবিত্র আত্মা তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে অনেক পরাক্রমের কাজ করবেন। যে মন্দতা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে নিজেকে শক্তিশালী করেছে তাকে পবিত্র আত্মার স্বর্গীয় ক্ষমতা দ্বারা প্রতিরোধ করা প্রয়োজন ছিল। AABen 39.1
পঞ্চাশত্তমীর দিনে পবিত্র আত্মার অবতরণের ফল কী ছিল? এক উত্থিত ত্রাণকর্তার আনন্দমুখর সুসমাচার পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে বসবাসকারী মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। শিষ্যরা পরিত্রাণের অনুগ্রহের বার্তা ঘোষণা করার ফলে সমস্ত অন্তর সেই বার্তার শক্তির সামনে অবনত হয়। চতুর্দিক থেকে কাতারে কাতারে মানুষ এসে মন পরিবর্তন করে মন্ডলীতে যুক্ত হয়। পিছিয়ে পড়া মানুষেরা আবারও তাদের মন পরিবর্তন করে। পাপীরা মহামূল্য মুক্তোর খোঁজে বিশ্বাসীদের সাথে সম্মিলিত হয়। যারা সুসমাচারের সবচেয়ে তিক্ত প্রতিদ্ব›দ্বী ছিল তারাই অনেকে সুসমাচারের বিজয়ী বীরে পরিণত হয়। এই ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণতা পায়, “যে উছোট খাইল, সেও দায়ূদের সদৃশ হইবে . .সদাপ্রভুর যে দূত তাহাদের অগ্রগামী, তাঁহার সদৃশ হইবে।” সখরিয় ১২:৮।প্রত্যেক খ্রীষ্টিয়ান তার ভাইয়ের মধ্যে স্বর্গীয় প্রেম ও দয়ার এক প্রত্যাদেশ দেখতে পান। একটি মাত্র আগ্রহের বিষয় সৃষ্টি হয়; একটি মাত্র লক্ষ্য অন্য সব চিন্তা ও পরিকল্পনাকে পেছনে ফেলে দেয়। বিশ্বাসীদের একমাত্র আকাঙ্ক্ষা ছিল খ্রীষ্টের সদৃশ স্বভাব ধারণ করা এবং তাঁর রাজ্যের বৃদ্ধির জন্য কাজ করা। AABen 39.2
“প্রেরিতেরা মহাপরাক্রমে প্রভু যীশুর পুনরুত্থান বিষয়ে সাক্ষ্য দিতেন, এবং তাহাদের সকলের উপরে মহা অনুগ্রহ ছিল।” প্রেরিত ৪:৩৩। তাঁদের শ্রমের কারণে মন্ডলীতে যুক্ত হন মনোনীত পরিচর্যাকারীরা, যারা সত্যের বাক্য গ্রহণ করে অন্যদের কাছে সেই আশা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রত্যয়ী হন, যে আশা তাদের অন্তরকে শান্তি ও আনন্দে পূর্ণ করেছিল। কোন ধরনের হুমকিই তাদেরকে বাধা দিতে বা ভয় দেখাতে পারেনি। সদাপ্রভু তাদের মধ্য দিয়ে কথা বলেছেন এবং তারা যেখানেই গেছেন সেখানেই দরিদ্রদের কাছে সুসমাচার প্রচার করেছেন এবং স্বর্গীয় অনুগ্রহের দ্বারা আশ্চর্য কাজ করেছেন। AABen 40.1
কাজেই মানুষ যখন নিজেকে ঈশ্বরের আত্মার কাছে সমর্পণ করে তখন তিনিও পরাক্রমের সাথে কাজ করেন। AABen 40.2
পবিত্র আত্মার প্রতিজ্ঞা কোন বিশেষ বয়স বা জাতিগোষ্ঠীর মানুষের প্রতি সীমাবদ্ধ নয়। খ্রীষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন যে, কালের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত তাঁর আত্মার স্বর্গীয় আবেশ তাঁর শিষ্যদের সাথে সাথে থাকবে। পঞ্চাশত্তমীর দিন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত যারা নিজেদেরকে পরিপূর্ণভাবে প্রভুর কাছে ও তাঁর পরিচর্যায় সমর্পণ করেছে তাদের কাছে সেই সহায় উপস্থিত হয়েছেন। যারা খ্রীষ্টকে তাদের ব্যক্তিগত ত্রাণকর্তা হিসেবে গ্রহণ করেছে তাদের সকলের কাছে পবিত্র আত্মা একজন পরামর্শ দানকারী, শুদ্ধকারী, পথ নির্দেশক ও সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন। বিশ্বাসীরা ঈশ্বরের সাথে যত ঘনিষ্ঠভাবে চলবেন তত স্পষ্টভাবে তারা ত্রাণকর্তার প্রেম ও তাঁর পরিত্রাণের অনুগ্রহের সাক্ষ্য দান করতে পারবেন। যে সকল নারী ও পুরুষ দীর্ঘ কয়েক শতাব্দী যাবৎ নির্যাতিত ও পরীক্ষিত হয়েছেন তারা এই পৃথিবীতে চিহ্ন কাজ ও অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন। স্বর্গের দূতগণ ও মানুষের সামনে তারা পরিত্রাণের প্রেমের রূপান্তরকারী শক্তি উন্মোচিত করেছেন। AABen 40.3
পঞ্চাশত্তমীর দিনে যারা স্বর্গ থেকে শক্তিপ্রাপ্ত হয়েছিলেন তারা যে এরপর থেকে পরীক্ষা ও প্রলোভন থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ছিলেন তা নয়। বরং সত্য ও ধার্মিকতার পক্ষে সাক্ষ্য বহন করার জন্য তাদেরকে সত্যের বিপক্ষের কাছে বারবার আঘাত পেতে হয়েছে, যারা তাদের খ্রীষ্টের সহভাগিতা থেকে প্রতিবারই বঞ্চিত করতে চেয়েছে। তারা তাদের ঈশ্বরদত্ত সমস্ত ক্ষমতায় উজ্জীবিত হয়ে যীশু খ্রীষ্টেতে তাঁর স্বভাববিশিষ্ট মানুষ হয়ে জীবন ধারণ করতে চেয়েছেন। প্রতিদিন তারা নতুনীকৃত অনুগ্রহ লাভের জন্য প্রার্থনা করেছেন, যেন তারা প্রতিনিয়ত নিজেদেরকে আরও বেশি নিখুঁত করে তুলতে পারেন। পবিত্র আত্মার পরিচর্যার অধীনে থাকলে সবচেয়ে দুর্বল মানুষটিও ঈশ্বরের প্রতি তার বিশ্বাসের চর্চা করার মাধ্যমে তার উপরে আরোপিত ক্ষমতায় বলীয়ান হয়ে উঠতে পারেন এবং পবিত্রীকৃত, পুনঃশোধিত ও শুদ্ধ হয়ে উঠতে পারেন। নম্রতায় নিজেদেরকে পবিত্র আত্মার অধীনস্থ করার মধ্য দিয়ে তারা ঈশ্বরের আশীর্বাদে পরিপূর্ণ হন এবং তাঁর স্বভাব ধারণে সক্ষম হন। AABen 41.1
খ্রীষ্ট তাঁর প্রস্থানের সময় পবিত্র আত্মাকে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করার যে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তা সময়ের আবর্তনে মোটেও পরিবর্তিত হয়নি। ঈশ্বরের দিক থেকে কোন প্রতিবন্ধকতার কারণে তাঁর অনুগ্রহ পার্থিব মানুষের উপরে বর্ষিত হয়নি তা নয়। যেমনটা প্রতিজ্ঞা করা হয়েছিল তার পূর্ণ রূপ যদি দেখা না যায় তাহলে বুঝতে হবে সেই প্রতিজ্ঞার দানকে মানুষ যথাযথভাবে গ্রহণ করেনি। যদি সকলেই ইচ্ছুক হত তাহলে প্রত্যেকেই পবিত্র আত্মা দ্বারা পূর্ণ হত। পবিত্র আত্মার প্রয়োজনকে যেখানে ছোট করে দেখা হয়, সেখানে দেখা দেয় আত্মিক খরা, আত্মিক অন্ধকারাচ্ছন্নতা, আত্মিক অধঃপতন এবং মৃত্যু। যখনই ছোট ছোট বিষয়গুলো আমাদের মনোযোগ কেড়ে নেয়, তখন শত অনুশোচনা ও মন পরিবর্তন সত্ত্বেও মন্ডলীর বৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির জন্য ও এর সাথে সম্পৃক্ত সমস্ত কিছুর উপরে আশীর্বাদ আনয়নের জন্য প্রয়োজনীয় স্বর্গীয় শক্তির অভাব দেখা দেয়। AABen 41.2
যেহেতু পবিত্র আত্মার মধ্য দিয়ে আমরা শক্তিপ্রাপ্ত হই, তাহলে কেন এই দানের জন্য আমরা ক্ষুধিত ও তৃষিত হই না? কেন আমরা তা নিয়ে কথা বলি না, প্রার্থনা করি না এবং প্রচার করি না? পিতামাতা তাদের সন্তানদেরকে কোন উপহার দেওয়ার জন্য যতটা আন্তরিক ইচ্ছা প্রকাশ করেন, প্রভু তার চেয়েও বেশি উদগ্রীব থাকেন তাঁকে যারা সেবা করে তাদেরকে পবিত্র আত্মার উপহার দেওয়ার জন্য। প্রতিদিন পবিত্র আত্মার উপহার লাভের জন্য প্রত্যেক পরিচর্যাকারীর উচিত প্রভুর কাছে যাচ্ঞা করা। যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানে খ্রীষ্টিয়ান কর্মীরা রয়েছেন তাদের উচিত এক সাথে মিলিত হয়ে প্রভুর কাছে স্বর্গীয় প্রজ্ঞা যাচ্ঞা করা যেন তারা বিজ্ঞতার সাথে পরিকল্পনা করতে পারেন ও তা বাস্তবে রূপ দিতে পারেন। বিশেষ করে তাদের এই প্রার্থনা করা উচিত যেন ঈশ্বর তাঁর নির্বাচিত প্রতিনিধিদেরকে প্রচার কাজে পবিত্র আত্মায় প্রচুর পরিমাণে পরিপূর্ণ করেন। ঈশ্বরের পরিচর্যাকারীদের সাথে পবিত্র আত্মার উপস্থিতি তাদেরকে এমন এক শক্তিতে সত্যের সাক্ষ্য প্রদান করতে সক্ষম করে যা সারা জগতের সমস্ত সম্মান বা মহিমাও দিতে পারে না। AABen 41.3
ঈশ্বরের অভিষিক্ত পরিচর্যাকারীরা যেখানেই থাকেন না কেন সেখানে পবিত্র আত্মা অবস্থান করেন। শিষ্যদের কাছে যে বাক্য প্রকাশিত হয়েছিল সেগুলো আমাদের কাছেও প্রকাশিত হয়েছে। সেই সহায় যেমন তাদের জন্য ছিলেন তেমনি আমাদের জন্যও আছেন। পবিত্র আত্মা সেই শক্তিকে আরও পূর্ণতা দেন যা শত পরিশ্রমেও অটল থাকে, যে কোন পরিস্থিতিতে এই পৃথিবীর সমস্ত ঘৃণার মুখোমুখি হয়েও আত্মার মল্লযুদ্ধে জয়ী হয় এবং তাদের নিজেদের ভুল ও ব্যর্থতাগুলো উপলব্ধি করতে সাহায্য করে। দুঃখ ও বেদনায় যখন চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসে এবং ভবিষ্যতকে মনে হয় সুদূর পরাহত, যখন নিজেদেরকে খুব একা ও অসহায় লাগে — এমনই সময়ে বিশ্বাসে কৃত প্রার্থনার উত্তরে পবিত্র আত্মা আমাদের অন্তরে সান্ত্বনা দান করেন। AABen 42.1
একজন মানুষ চরম প্রতিক‚লতার মধ্যেও আত্মার আনন্দে উদ্ভাসিত হওয়ার মানেই যে তিনি একজন খ্রীষ্টিয়ান এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় না। পবিত্রতা কোন নিবিড় আনন্দোচ্ছাস নয়; বরং তা ঈশ্বরের ইচ্ছার কাছে পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ; ঈশ্বরের মুখ হতে নির্গত প্রতিটি বাক্যে জীবন ধারণ; আমাদের স্বর্গস্থ পিতার ইচ্ছা অনুসারে সর্ম সাধন; আলোতে ও অন্ধকারে সমস্ত পরীক্ষায় ও প্রলোভনে ঈশ্বরের উপরে নির্ভরতা; দৃষ্টিতে নয়, বরং বিশ্বাসে পথ চলা; কোন প্রশ্নব করা করে পূর্ণ আস্থায় ঈশ্বরের উপরে নির্ভর করা এবং তাঁর প্রেমে নিমগড়ব হওয়া। AABen 42.2
পবিত্র আত্মা আসলে কী, তা ব্যাখ্যা করতে পারাটা আমাদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় নয়। খ্রীষ্ট আমাদেরকে বলছেন যে, পবিত্র আত্মা হলেন সান্ত্বনা দানকারী, “সত্যের সেই আত্মা, যিনি পিতার নিকট হইতে বাহির হইয়া আইসেন।” পবিত্র আত্মা সম্পর্কে খুব স্পষ্টভাবে এই কথা ঘোষণা করা হয়েছে যে, সকল মানুষকে সত্যের পথে নির্দেশনা দানের সময় “তিনি আপনা হইতে কিছু বলিবেন না।” যোহন ১৫:২৬; ১৬:১৩। AABen 42.3
পবিত্র আত্মার বৈশিষ্ট্য যেন এক নিগূঢ় রহস্য। মানুষ তা ব্যাখ্যা করতে পারে না, কারণ প্রভু তাদের কাছে তা উন্মোচন করেননি। যে সব মানুষের কল্পনাশক্তি প্রবল তারা বাক্যের বিভিন্ন অংশ জোড়াতালি দিয়ে পবিত্র আত্মা সম্পর্কে মানবীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ব্যাখ্যা দানের চেষ্টা করেন, কিন্তু এই দর্শন গ্রহণ করলে মন্ডলী কখনোই আরও শক্তিশালী হবে না। যে নিগূঢ় রহস্য মানুষের জ্ঞানের পরিক্রমায় অনেক বেশি গভীর, সেসবের ব্যাপারে নিশ্চুপ থাকাই মঙ্গল। AABen 43.1
পবিত্র আত্মার কাজ সম্পর্কে খ্রীষ্টের বক্তব্যে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা রয়েছে: “আর তিনি আসিয়া পাপের সম্বন্ধে, ধার্মিকতার সম্বন্ধে ও বিচারের সম্বন্ধে, জগৎকে দোষী করিবেন।” যোহন ১৬:৮। পবিত্র আত্মা তাদের পাপের জন্য দোষী করে থাকেন। পাপীরা যদি পবিত্র আত্মার এই অভিযোগে সাড়া দেয়, তাহলে তিনি তাদের মধ্যে অনুশোচনা তৈরি করেন এবং ঈশ্বরীয় বিধান মান্য করার তাগিদ তাদের অন্তরে জাগিয়ে তোলেন। AABen 43.2
ধার্মিকতা লাভের জন্য ক্ষুধিত ও তৃষিত অনুশোচনাকারী পাপীদের সামনে পবিত্র আত্মা ঈশ্বরের সেই মেষশাবককে উপস্থাপন করেন যাকে এই জগতের পাপের ভার বহনের জন্য তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। “তিনি আমাকে মহিমান্বিত করিবেন; কেননা যাহা আমার, তাহাই লইয়া তোমাদিগকে জানাইবেন,” খ্রীষ্ট বলছেন। “কিন্তু সেই সহায়, পবিত্র আত্মা, যাঁহাকে পিতা আমার নামে পাঠাইয়া দিবেন, তিনি সকল বিষয়ে তোমাদিগকে শিক্ষা দিবেন, এবং আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা বলিয়াছি, সেই সকল স্মরণ করাইয়া দিবেন।” যোহন ১৬:১৪; ১৪:২৬। AABen 43.3
পবিত্র আত্মাকে প্রেরণ করা হয়েছে পুনর্জীবন দানকারী প্রতিনিধি হিসেবে, যেন আমাদের ত্রাণকর্তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আনীত পরিত্রাণ কার্যকরী হয়। পবিত্র আত্মা চানকালভেরীতে ক্রুশের উপরে যে আত্মত্যাগ খ্রীষ্ট করেছিলেন তা যেন মানুষের দৃষ্টিগোচর হয়, জগতের জন্য ঈশ্বরের ভালবাসা যেন প্রকাশ পায় এবং অনুতপ্ত আত্মাাদের সামনে যেন শাস্ত্রের মূল্যবান রতড়বগুলো যেন উন্মোচিত হয়। AABen 43.4
পাপের জন্য অভিযুক্ত করে এবং ধার্মিকতার আদর্শ উপস্থাপন করার মধ্য দিয়ে পবিত্র আত্মা পাপী মানুষদেরকে এই জগতের সমস্ত আকর্ষণ থেকে মুক্ত করে তাদের অন্তরে পবিত্রতা অর্জনের আকাঙ্ক্ষা তৈরি করতে চান। “পরন্তু তিনি, সত্যের আত্মা, যখন আসিবেন, তখন পথ দেখাইয়া তোমাদিগকে সমস্ত সত্যে লইয়া যাইবেন” (যোহন ১৬:১৩), এ কথা ত্রাণকর্তা ঘোষণা করেছেন। যদি মানুষ পরিবর্তিত হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে তখন তাদের সম্পূর্ণ সত্তাকে পবিত্রীকৃত করা হবে। পবিত্র আত্মা তাদের উপরে ঈশ্বরীয় বৈশিষ্ট্য আরোপ করবেন এবং তাদের আত্মাকে মুদ্রাঙ্কিত করবেন। তাঁর শক্তিতে জীবন চলার পথ এতটাই সরল হয়ে উঠবে যে, সেখানে আর কেউ ভ্রান্ত হবে না। AABen 44.1
আদি থেকেই ঈশ্বর তাঁর পবিত্র আত্মাকে মানবীয় মাধ্যমের দ্বারা পতিত মানব জাতির জন্য তাঁর পরিকল্পনা সাধনের জন্য ব্যবহার করে আসছেন। আদিপিতাদের জীবনে এই বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। মোশীর সময়ে প্রান্তরে স্থির ইস্রায়েলের মন্ডলীতেও ঈশ্বর “আপন মঙ্গলময় আত্মা তাহাদিগকে দান” করলেন। নহিমিয় ৯:২০। প্রেরিতদের যুগেও তিনি তাঁর মন্ডলীর জন্য পবিত্র আত্মার সাহায্যে অনেক পরাক্রমের কাজ সাধন করেছেন। যে শক্তি আদিপিতাদেরকে অটল রেখেছিল, কালেব ও যিহোশূয়কে বিশ্বাস ও সাহস যুগিয়েছিল এবং প্রৈরিতিক মন্ডলীর কাজকে কার্যকর করেছিল, তা প্রতিটি যুগে যুগে এখন পর্যন্ত ঈশ্বরের বিশ্বস্ত সন্তানদেরকে ধরে রেখেছে। পবিত্র আত্মার শক্তিতে বলীয়ান হয়েই অন্ধকার যুগে ওয়ালডেনসীয় খ্রীষ্টিয়ানরা রিফর্মেশনের জন্য পথ প্রস্তুত করতে সাহায্য করেছিলেন। সেই একই শক্তির দ্বারা মহতী নারী ও পুরুষরা আধুনিক মিশন কার্যক্রম ও সকল জাতি ও রাষ্ট্রের জন্য বিভিন্ন ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করার কার্যক্রমে সফল হতে পেরেছেন। AABen 44.2
আর আজও ঈশ্বর সারা জগতকে তাঁর পরিকল্পনা জ্ঞাত করার জন্য তাঁর মন্ডলীকে ব্যবহার করছেন। আজ ক্রুশের সুসমাচার শহর থেকে শহরে, দেশ থেকে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে, খ্রীষ্টের দ্বিতীয় আগমনের জন্য পথ প্রস্তুত করা হচ্ছে। ঈশ্বরের বিধানকে উচ্চীকৃত করা হচ্ছে। সর্বশক্তিমানের আত্মা মানুষের অন্তরে অন্তরে ছড়িয়ে পড়ছেন এবং যারা এর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে সাড়া দিচ্ছেন তারা ঈশ্বরের পক্ষে ও তাঁর সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য বহনকারী হচ্ছেন। অনেক জায়গাতেই অভিষিক্ত নারী ও পুরুষেরা সেই জ্যোতির কথা অন্যদেরকে জানাচ্ছেন যা তাদেরকে খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে পরিত্রাণের লাভের সরল পথ দেখিয়েছে। পঞ্চাশত্তমীর দিনে পবিত্র আত্মায় বাপ্তিস্ম পেয়ে যারা আত্মার জ্যোতি চারপাশে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন, তাদের মত করেই আজও অসংখ্য মানুষ আত্মার জ্যোতির বিচ্ছুরণ ঘটাচ্ছেন এবং তারা প্রতিনিয়ত আরও বেশি করে আত্মার শক্তিতে বলীয়ন হচ্ছেন। এভাবেই পুরো পৃথিবী ঈশ্বরের মহিমায় আলোকিত হয়ে উঠবে। AABen 44.3
অন্যদিকে, এমন অনেকে আছেন যারা বিদ্যমান সুযোগগুলোকে বিজ্ঞতার সাথে ব্যবহার করার বদলে অপেক্ষা করে আছেন কোন বিশেষ আত্মিক উদ্দীপনার মৌসুম আসার জন্য, যার মাধ্যমে অন্যদেরকে আলোকিত করার জন্য তাদের সক্ষমতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। তারা বর্তমান দায়িত্ব ও সুযোগগুলোকে অবহেলা করেন এবং তাদের দীপ্তি ধীরে ধীরে নিভে যেতে দেন। অথচ তারা এমন এক সময়ের কথা ভেবে অপেক্ষা করতে থাকেন যখন তারা নিজেদের কোন পরিশ্রম ছাড়াই বিশেষ আশীর্বাদ প্রাপ্ত হবেন, যার মাধ্যমে তারা রূপান্তরিত হবেন এবং পরিচর্যা কাজের জন্য উপযুক্ত হবেন। AABen 45.1
এ কথা সত্য যে, শেষ কালে যখন এই পৃথিবীতে ঈশ্বরের সমস্ত কাজ শেষ হবে তখন পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণায় খাঁটি বিশ্বাসীদের সম্পাদিত সমস্ত প্রচেষ্টা ও পরিশ্রম স্বর্গীয় আশীর্বাদ লাভের মধ্য দিয়ে গৃহীত হবে। প্রাচ্যে বীজ বোনা আগে ও ফসল কাটার পরে যে বৃষ্টি হয় তার সাথে তুলনা করে ইব্রীয় ভাববাদীগণ ঈশ্বরের মন্ডলীতে অবারিত ধারায় আত্মিক অনুগ্রহ লাভের কথা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। প্রেরিতদের কালে আত্মার সেচন ছিল বীজ বপনের সময়ে হওয়া বৃষ্টির সমতুল্য এবং তার ফল ছিল অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল। শেষ কাল পর্যন্ত আত্মা সত্যিই মন্ডলীর সাথে অবস্থিতি করবেন। AABen 45.2
কিন্তু এই জগতের ফসল উত্তোলনের সময় এগিয়ে আসার সাথে সাথে, মনুষ্য সন্তানের আসন্ন আগমনের সময় মন্ডলীর জন্য প্রতিজ্ঞাত আত্মিক অনুগ্রহ সেচনের সময় এগিয়ে আসছে। আত্মার এই সেচন হবে ফসল উত্তোলনের পর হওয়া বৃষ্টির মত; আর তার মধ্য দিয়ে খ্রীষ্টিয়ানেরা ফসল উত্তোলনের প্রভুর কাছে দ্বিতীয় বৃষ্টির সময় তাদের আবেদন জানানোর জন্য সমর্থ হবেন। এর উত্তরে “সদাপ্রভু লোকদিগকে প্রচুর বৃষ্টি দিবেন।” “তিনি তোমাদিগকে যথাপরিমাণে অগ্রিম বৃষ্টি দিলেন, এবং প্রথমতঃ তোমাদের নিমিত্ত অগ্রিম ও উত্তর বর্ষার জল বর্ষাইলেন।” সখরিয় ১০:১; যোয়েল ২:২৩। AABen 45.3
কিন্তু আজকের দিনে ঈশ্বরের মন্ডলীর সদস্যরা যতক্ষণ না সমস্ত আত্মিক বৃদ্ধির উৎসের সাথে একটি সক্রিয় যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হচ্ছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা ফসল উত্তোলনের সময়ের জন্য প্রস্তুত হবেন না। তারা যদি বাতি প্রস্তুত করে জ্বালিয়ে না রাখেন, তাহলে প্রয়োজনের সময় বাড়তি অনুগ্রহটুকু পাওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। AABen 46.1
কেবলমাত্র যারা প্রতিনিয়ত সজীব অনুগ্রহ পাচ্ছেন তারাই তাদের দৈনিক প্রয়োজন মেটাতে পারবেন এবং এই ক্ষমতাকে ব্যবহার করতে পারবেন। ভবিষ্যতে কোন এক সময়ে আত্মিক ক্ষমতা লাভ করে অলৌকিক কাজ করার চিন্তা না করে তারা প্রতিদিন প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখছেন যেন ঈশ্বর তাদেরকে তাঁর কাজের জন্য মৃৎপাত্র হিসেবে ব্যবহার করেন। তাদের হাতের নাগালে পরিচর্যার যে সুযোগ আছে সেটাকেই তারা প্রতিনিয়ত কাজে লাগাচ্ছেন। প্রতিদিন তারা যেখানেই যাচ্ছেন, হোক সেটা ঘরে ছোট কোন কাজের মধ্য দিয়ে কিংবা প্রকাশ্যে কোন বড় কাজের মধ্য দিয়ে, সেখানেই তারা তাদের প্রভুর জন্য সাক্ষ্য বহন করছেন। AABen 46.2
প্রভুর খাঁটি পরিচর্যাকারীর জন্য এক দারুন সান্ত্বনা এই যে, খ্রীষ্ট যখন এই জগতে মানুষ হিসেবে জীবন ধারণ করেছেন তখন তাঁরও প্রতিদিন নতুন করে অনুগ্রহ লাভ করার প্রয়োজন হত; আর ঈশ্বরের সাথে এই যোগাযোগ রক্ষার মধ্য দিয়েই তিনি আরও শক্তিশালী হয়েছেন এবং অন্যদেরকেও আশীর্বাদ দান করেছেন। পিতার কাছে প্রার্থনায় নত ঈশ্বর—পুত্রকে দেখুন! যদিও তিনি ঈশ্বরের পুত্র, তিনি প্রার্থনার মধ্য দিয়ে তাঁর বিশ্বাসকে মজবুত করেছেন এবং স্বর্গের সাথে তাঁর যোগাযোগ রক্ষা করার মধ্য দিয়ে তিনি নিজেকে বলবান করেছেন মন্দতাকে প্রতিহত করার জন্য এবং মানুষের প্রয়োজন মেটাতে পরিচর্যা কাজ করার জন্য। মানব জাতির জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা হিসেবে তিনি জানেন পাপ ও প্রলোভনে ভরা এই পৃথিবীতে সমস্ত মন্দতার মাঝে বাস করেও কারা সত্যিকারভাবে তাঁর সেবা করার জন্য আকাঙ্ক্ষা করে। তিনি জানেন যাদেরকে তিনি দূত হিসেবে প্রেরণ করতে চান তারা দুর্বল ও বারবার ভুল করা মানুষ। কিন্তু যারা নিজেদেরকে তাঁর পরিচর্যায় সম্পূর্ণভাবে নিয়োজিত করে তাদেরকে তিনি তাঁর স্বর্গীয় অনুগ্রহ দানের প্রতিজ্ঞা করেছেন। তাঁর নিজ প্রতিজ্ঞা আমাদেরকে এই নিশ্চয়তা দেয় যে, ঈশ্বরের উপরে যদি আমরা একাগ্রচিত্তে বিশ্বাস স্থাপন করি — যে বিশ্বাস সম্পূর্ণভাবে ঈশ্বরের উপরে নির্ভর করতে শেখায় ও তাঁর কাজের প্রতি নিজেকে সম্পূর্ণ নিয়োজিত করতে শেখায় — তাহলে মানুষ পাপের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পবিত্র আত্মায় সহায় লাভ করবে। AABen 46.3
যে সকল পরিচর্যাকারী খ্রীষ্টের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করেন তারা সকলে সেই ক্ষমতা গ্রহণ ও ব্যবহার করতে সক্ষম হবেন যা ঈশ্বর তাঁর মন্ডলীকে জগতের ফসল উত্তোলনের সময় তাঁর মন্ডলীকে দান করার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। প্রতি ভোরে সুসমাচার শ্রবণের মধ্য দিয়ে প্রভুর সামনে জানু নত করে নিজেকে নম্র ও শুদ্ধ করার প্রক্রিয়ায় তিনি তাঁদেরকে তাঁর পবিত্র আত্মার উপস্থিতি দান করেন, যা প্রতিনিয়ত নতুনীকরণ হয়ে নব শক্তি সঞ্চার করছে। প্রভুর জন্য দায়িত্ব পালনের জন্য এগিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে তাঁরা পবিত্র আত্মার অদেখা সহায়কে এই নিশ্চয়তা দান করছেন যে, তাঁরা “প্রভুতে সহকর্মী।” AABen 47.1