Go to full page →

১১শ অধ্যায়—শমরিয়ায় সুসমাচার প্রচার AABen 82

স্তিফানের মৃত্যুর পর যিরূশালেমের বিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে অত্যাচার ও নির্যাতন এতটাই প্রবল হয়ে উঠল যে, “প্রেরিতবর্গ ছাড়া অন্য সকলে যিহূদিয়ার ও শমরিয়ার জনপদে ছিন্নভিন্ন হইয়া পড়িল।”শৌল “মণ্ডলীর উচ্ছেদ সাধন করিতে লাগিলেন, ঘরে ঘরে প্রবেশ করিয়া পুরুষ ও স্ত্রীলোকদিগকে টানিয়া আনিয়া কারাগারে সমর্পণ করিতে লাগিলেন।” এই নিষ্ঠুর কৃতকর্ম সম্পর্কে তিনি পরবর্তীতে এক সময় বলেছিলেনঃ “আমিই ত মনে করিতাম যে, নাসরতীয় যীশুর নামের বিরুদ্ধে অনেক কার্য করা আমার কর্তব্য। আর আমি যিরূশালেমে তাহাই করিতাম; প্রধান যাজকদের নিকটে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হইয়া পবিত্রগণের মধ্যে অনেককে আমি কারাগারে বদ্ধ করিতাম.... আর সমস্ত সমাজ—গৃহে বার বার তাঁহাদিগকে শাস্তি দিয়া বলপূর্বক ধরমনিন্দা করাইতে চেষ্টা করিতাম এবং তাহাদের বিরুদ্ধে অতিমাত্র উন্মত্ত হইয়া বিদেশীয় নগর পরযন্তও তাঁহাদিগকে তাড়না করিতাম।” শৌলের নিজের উক্তি থেকেই জানা যায় যে, একমাত্র স্তিফানই তাঁর ক্রোধের শিকার নন, “তাঁহার প্রাণদণ্ডের সময়ে সম্মতি প্রকাশ করিতাম।” প্রেরিত ২৬:৯— ১১। AABen 82.1

এই সঙ্কটের সময় নীকদীম নির্ভয়ে এগিয়ে এসে ক্রূশবিদ্ধ ত্রাণকর্তার প্রতি তাঁর বিশ্বাসের কথা ঘোষণা করলেন। নীকদীম ছিলেন মহাসভার একজন সদস্য এবং অন্য আরও অনেকের সাথে তিনিও যীশুর ধর্মপ্রচারে আন্দোলিত হয়েছিলেন। যেহেতু তিনি যীশুর অভূতপূর্ব সমস্ত কাজের সাক্ষী ছিলেন, সে কারণে তিনি তাঁর অন্তরে এই চিন্তা গেঁথে নিয়েছিলেন যে , এই ধর্মগুরু অবশ্যই ঈশ্বর হত্র প্রেরিত। কিন্তু গালীলীয় এই নব্য ধর্মগুরুর প্রতি তাঁরসহমর্মিতার কথা তিনি জনসমক্ষে প্রকাশ করতে ভয় পাচ্ছিলেন বলে AABen 82.2

______________________________________«

এই অধ্যায়টি প্রেরিত ৮ অধ্যায়ে ইপর ভিত্তি করে রচিত

______________________________________«

রাতের অন্ধ্যকারে তাঁর সাথে দেখা করেছিলেন। এই সাক্ষাতে তার কাছে যীশু পরিত্রাণের পরিকল্পনা এবং জগতের তার কাজের উদ্দেশ্য ব্যক্ত করেছিলেন। নীকদীম এই সত্যকে নিজের অন্তরেই লিক্কায়িত রেখেছিলেন এবং তিন বছর ধরে তিনি বলতে গেলে একেবারেই নিষ্ক্রিয় ছিলেন। কিন্তু নীকদীম প্রকাশ্যে যীশূকে স্বীকার না করলেও মহাসভায় যীশুকে হত্যা করার জন্য যাজকেরা যে সমস্ত পরিকল্পনা করতেন সেগুলোকে তিনি আগে থেকেই বিভিন্নভাবে ব্যর্থ করে দিতেন। কিন্তু অবশেষে যখন খ্রীষ্টকে ক্রূশবিদ্ধ করা হল তখন নীকদীম জৈতুন পর্বতে সেই রাতে সাক্ষাতের সময় যীশুর বলা কথাগুলো স্মরণ করলেন, “আর মোশি যেমন প্রান্তরে সেই সর্পকে উচ্চে উঠাইয়াছিলেন , সেইরূপে মানুষ্যপুত্রকেও উচ্চীকৃত হইতে হইবে” (যোহন ৩ :১৪) ; আর তিনি যীশুকে তখন জগতের ত্রাণকর্তা হিসেবে চিনতে পারলেন। AABen 83.1

আরিমাথিয়ার যোষ্ফের সাথে নীকদীমও যীশুর দেহ কবরস্থ করার জন্য ব্যয়ভার বহন করেছিলেন। শিষ্যরা নিজেদেরকে তখন প্রকাশ্যে যীশুর অনুসারী হিসেবে স্বীকার করতে ভয় পাচ্ছিলেন, কিন্তু নীকদীম এবং যোষেফ সাহসিকতার সাথে তাঁদেরকে সহায়তা করার জন্য এগিয়ে এসেছিলেন। সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন প্রহরে এই দুই ধনী ও সম্মানীয় ব্যক্তি সহায়তা একান্তভাবে প্রয়োজন ছিল। দরিদ্র শীষ্যদের পক্ষে যা করা প্রায় অসম্ভব ছিল সেটাই এই দুই অনুসারী চমৎকারভাবে সম্পন্ন করলেন; উপরন্ত তাঁদের বিত্ত ও প্রভাবশালিতা তাদেরকে যাজক ও শাসনকর্তাদের তীব্র আক্রোশ থেকে রক্ষা করেছিলেন। AABen 83.2

যিহূদীরা যখন সদ্য জন্মপ্রাপ্ত মণ্ডলীকে ধ্বংস করে দিতে চাইছিল তখন নীকদীম তাকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে এসেছিলেন। আর কোন দ্বিধা বা সন্দেহ পুষে না রেখে তিনি শিষ্যদেরকে বিশ্বাসের উদ্দীপ্ত হতে উৎসাহ দিলেন এবং তার সম্পদ ব্যবহার করে তিনি যিরূশালেম মণ্ডলীকে সুসমাচার প্রচারের কাজে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তাকে ভর্ৎসনা ও নির্যাতন করেছে, এমনকি জাগতিক সম্পদের দিক থেকেও তিনি দরিদ্র হয়ে পড়েছেন; তথাপি তিনি তাঁর বিশ্বাস থেকে একটুকু টলে যাননি। AABen 83.3

যিরূশালেম মণ্ডলীর উপরে যে নির্যাতন নেমে এসেছিল তাঁর ফলে সুসমাচার প্রচারের কাজ দারুন প্রেরণা পাচ্ছিল। সেখানে সুসমাচারের পরিচর্যা চমৎকার সাফল্য অর্জন করেছিল। তবে শিষ্যরা সেখানে একিভূত থাকায় কিছুটা বিপদের আশঙ্কা ছিল, যেহেতু সারা জগতে সুসমাচার ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটির ব্যাপারে তাঁরা তখনও ততটা গুরুত্ব দিচ্ছিলেন না। পূরবপাক্ষিক পরিচর্যা ব্যতীত যে মন্দতার বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হয় না সে কথা ভুলে গিয়ে শিষ্যরা ভাবছিলেন শত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য তাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন যিরূশালেম মণ্ডলীকে রক্ষা করা। নতুন বিশ্বাসীদেরকে সুসমাচারের বার্তা নিয়ে যারা এখনো তা শোনেনি তাদের কাছে পৌঁছে যাওয়ার জন্য শীক্ষা না দিয়ে বরং তাঁরা এমন পথ বেছে নিয়েছিলেন যা তাদের প্রত্যেকের কাছে নিরাপদ ও সন্তোষজনক বলে মনে হচ্ছিল। ঈশ্বর এ সময় তাদের উপরে অত্যাচার ও নির্যাতন নেমে আসার অনুমতি দিলেন যেন তাঁর প্রতিনিধিরা বিভিন্ন দেশে ছরিয়ে পড়েন, যেখানে তাঁরা অন্যদের কাছে সুসমাচার ছড়িয়ে দিতে পারবেন। যিরূশালেম থেকে বিতাড়িত হয়ে বিশ্বাসীরা “চারদিকে ভ্রমণ করিয়া সুসমাচারের বাক্য প্রচার করিল।” AABen 83.4

এদের মধ্যে যাদেরকে ত্রাণকর্তা এই মহান আদেশ দিয়েছিলেন, “অতএব তোমরা গিয়ে সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর” (মথি ২৮: ১৯), তাদের মধ্যে অনেকেই সমাজের খুব সাধারণ স্তরের মানুষ ছিলেন, যারা তাদের প্রভুকে ভালবাসতে শিখেছিলেন এবং তাঁর নিঃস্বার্থ পরিচর্যার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করার জন্য প্রত্যয়ী ছিলেন। এই নম্র ব্যক্তিদের প্রতি এবং সেই সাথে যে শিষ্যরা তাঁর পরিচর্যা কালে তাঁর সাথে সাথে ছিলেন তাদের প্রতিও সমানভাবে আস্থা স্থাপন করা হয়েছিল। তাদেরকে সারা পৃতিবীর কাছে খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে পাওয়া পরিত্রাণের সুসমাচার মহান করে নিয়ে যাওয়ার জন্য দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। AABen 84.1

নির্যাতনের তোড়ে যখন তাঁরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেলেন সে সময় তাঁরা প্রচার কাজের জন্য পূর্ণ উদ্যমী ছিলেন। তাঁরা তাদের পরিচর্যা কাজের পূর্ণ দায়িত্ব উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁরা জানতেন যে, তাদের হাতেই দুর্ভিক্ষপীড়িত জগতের জন্য জীবন্রুটি রয়েছে; আর তাঁরা খ্রীষ্টের প্রেমে আবদ্ধ হয়ে এই রুটি প্রত্যেকটি ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন। প্রভু স্বয়ং তাদের মধ্য দিয়ে কাজ করছিলেন। যেখানেই তাঁরা যেতেন সেখানেই অসুস্থরা সুস্থ হত এবং দরিদ্রদের কাছে সুসমাচার প্রচার করা হত। AABen 84.2

এই সাতজন পরিচারকের মধ্যে একজন ছিলেন ফিলিপ, যিনি যিরূশালেম থেকে বিতাড়িতদের মধ্যেও একজন ছিলেন। তিনি “শামরিয়ার নগরে গিয়া লোকদের কাছে খ্রীষ্টকে প্রচার করিতে লাগিলেন। আর লোকসমূহ ফিলিপের কথা শুনিয়া ও তাঁহার কৃত চিহ্ন— কার্য সকল দেখিয়া একচিত্তে তাঁহার কথায় অবধান করিল। কারণ অশুচি আত্মাবিষ্ট অনেক লোক হইতে সেই সকল আত্মা উচ্ছেঃসস্বরে চেঁচাইয়া বাহির হইয়া আসিল, এবং অনেক পক্ষাঘাতী ও খঞ্জ সুস্থ হইল; তাহাতে ঐ নগরে বড়ই আনন্দ হইল।” AABen 84.3

যাকোরের কূপের কাছে শমরীয় যে নারীর কাছে যীশু যে বার্তা প্রকাশ করেছিলেন তাতে ফল এসেছিল। তাঁর কথা শোনার পর সেই নারী শহরের লোকদের কাছে গিয়া বলেছিল , “আইস, এক জন মানুষ্কে দেখ, আমি যাহা কিছু করিয়াছি, তিনি সকলই আমাকে বলিয়া দিলেন; তিনিই কি খ্রীষ্ট নহেন ?” তাঁরা সকলে তাঁর সাথে গেল, যীশুর কথা শুনল এবং তাকে বিশ্বাস করল। আরও কথা শোনার ইচ্ছায় তাঁরা তাকে থেকে যেতে বলল। তিনি সেখানে দুই দিন তাদের সাথে থাকলেন, “তখন আরও অনেক লোক তাঁহার বাক্য প্রযুক্ত বিশ্বাস করিল।” যোহন ৪:২৯, ৪১। AABen 85.1

যখন তাঁর শিষ্যরা যিরূশালেম থেকে হলেন তখন অনেকেই শমরিয়ায় নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পেলেন । শমরীয়ারা সুসমাচারের এই বার্তাবাহকদেরকে স্বাগত জানালেন এবং যিহূদী ধর্মান্তরিত যে লোকেরা এক সময় তাদের সবচেয়ে তিক্ত শত্রু ছিল তাদের মধ্য থেকেই প্রচুর ফল আসতে লাগল। AABen 85.2

শমরিয়ায় ফিলিপের কাজ দারুন সাফল্য অর্জন করেছিল,আর এতে উৎসাহিত হয়ে তিনি যিরূশালেম থেকে সহায়তা চাইলেন। এই প্রেরিত এখেল খ্রীষ্টের সেই বাক্যের অর্থ পরিপূর্ণভাবে অনুধাবন করতে পারছেন, “কিন্তু পবিত্র আত্মা তোমাদের উপরে আসিলে তোমরা শক্তি প্রাপ্ত হইবে; “কিন্তু পবিত্র আত্মা তোমাদের উপরে আসিলে তোমরা শক্তি প্রাপ্ত হইবে; আর পবিত্র আত্মা তোমাদের উপরে আসিলে তোমরা শক্তি প্রাপ্ত হইবে; আর তোমরা যিরূশালেমে, সমুদয় যিহূদিয়া ও শমরিয়া দেশে , এবং পৃথিবীর প্রাপ্ত পর্যন্ত আমার সাক্ষী হইবে।” প্রেরিত ১: ৮। AABen 85.3

ফিলিপ যখন শমরিয়ায় ছিলেন সে সময় তিনি স্বর্গদূত দ্বারা পরিচালিত হয়ে “দক্ষিণ দিকে, যে পথ যিরূশালেম হইতে ঘসার দিকে নামিয়া গিয়াছে, সেই পথে” গেলেন। তিনি এই আহ্বান নিয়ে কোন প্রশ্ন করেননি কিংবা তা মান্য করতে একতটুকু দ্বিধা করেননি; কারণ তিনি ঈস্বরের পূর্ণ সমর্পণের শিক্ষা পেয়েছিলেন। AABen 85.4

“আর দেখ, ইথিয়পিয়া দেশের এক ব্যাক্তি, ইথিয়পীয়দের কান্দাকি রাণীর অধীন উচ্চপদস্থ এক জন নপংসক, যিনি রাণীর সমস্ত ধনকোষের অধ্যক্ষ ছিলেন, তিনি ভজনা করিবার জন্য যিরূশালেমে আসিয়াছিলেন; পরে ফিরিয়া যাইতেছিলেন।” “এবং আপন রথে বসিয়া যিশাইয় ভাববাদীর গ্রন্থ পাঠ করিতেছিলেন।” এই ইথিওপীয় ব্যক্তিটি বেশ সম্মানীয় ও প্রভাবশালী ছিলেন। ঈশ্বর দেখেছিলেন যে, এই লোকটি যদি ধর্মান্তরিত হন তাহলে তিনি তাঁর জাগতিক প্রাভাব ও প্রতিপত্তি কাজে লাগিয়ে বহু মানুষকে সুসমাচারের এই আলোতে নিয়ে আসতে পারেন। ঈশ্বরের দূতগণ তাকে এই আলো অনুসন্ধানের কাজ ব্যাপৃত করেছিলেন এবং তিনি এমন একজনের কাছে এসে পৌঁছালেন যিনি তাকে এই আলোর সন্ধান দিতে পারেন। AABen 85.5

ফিলিপকে এই ইথিওপীয় ন্যক্তির কাছে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল এবং বলা হয়েছিল তিনি যে শাস্ত্রাংশটি থেকে ভবিষ্যদ্বাণী পাঠ করেছেন সেটি যেন তিনি তাকে ব্যাখ্যা করে বলেন। “নিকটে যাও,” প্রভুর আত্মা বললেন, “ঐ রথের সঙ্গ ধর।” ফিলিপ রথের কাছে এসে ঐ ইথিওপীয়কে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি যাহা পাঠ করিতেছেন, তাহা কি বুঝিতে পারিতেছেন? তিনি কহিলেন, কেহ আমাকে বুঝাইয়া না দিলে কেমন করিয়া বুঝিতে পারিব? পরে তিনি ফিলিপকে আপনার কাছে উঠিয়া বসিতে নিবেদন করিলেন।” তিনি যে শাস্ত্রাংশটি পড়ছিলেন সেখানে খ্রীষ্ট সম্পর্কে ভাববাদী যিশাইয়ের ভবিশষয়দ্বাণী লিখিত ছিলঃ “তিনি হত হইবার জন্য মেষের ন্যায় নীত হইলেন , এবং লোমচ্ছদকের সম্মুখে মেষশাবক যেমন নীরব থাকে , সেইরূপ তিনি মুখ খুলেন না। তাঁহার হীনাবস্থায় তাঁহার সম্বন্ধীয় বিচার অপনীত হইল, তাঁহার সমকালীন লোকদের বর্ণনা কে করিতে পারে ? যেহেতু তাঁহার জীবন পৃথিবী হইতে আপনীত হইল।” AABen 86.1

“ভাববাদী কাহার বিষয় এই কথা কহেন?” ইথিওপীয় লোকটি জিজ্ঞেস করলেন, “নিজের নিষয়ে, না অন্য কাহারও বিষয়ে?” তখন ফিলিপ তাঁর কাছে পরিত্রাণের নিগূঢ় সত্য প্রকাশ করলেন। সেই শাস্ত্রের ব্যাখ্যা করতে শুরু করে তিনি তাঁর কাছে “যীশু—বিষয়ক সুসমাচার প্রচার করিলেন।” AABen 86.2

শাস্ত্রের বাক্য তাঁর কাছে ব্যাখ্যা করাণে লোকটি অন্তরে অন্যন্ত উদ্দীপ্ত হয়ে উঠলেন; আর যখন ফিলিপ তাঁর কথা শেষ করলেন, ততক্ষণে তিনি এই আলো পরিপূর্ণভাবে গ্রহণের জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠছেন। তাঁর পার্থিব উঁচু অবস্থাঙ্কে তিনি সুসমাচার প্রত্যাখ্যান করার জন্য কোন অজুহাত হিসেবে গ্রাহ্যই করেননি। “পরে পথে যাইতে যাইতে তাঁহার কোন এক জলাশয়ের নিকটে উপস্থিত হইলেন; তখন নপুংসক কহিলেন, এই দেখুন, জল আছে; আমার বাপ্তাইজিত হইবার বাধাকি? ” ফিলিপ কহিলেন, সমস্ত অন্তঃকরণের সহিত যদি বিশ্বাস করেন , তবে হইতে পারেন। তাঁহাকে তিনি উত্তর করিয়া কহিলেন, যীশু খ্রীষ্ট যে ঈশ্বরের পুত্র, ইহা আমি বিশ্বাস করিতেছি।” পরে তিনি রথ থামাইয়া আজ্ঞা করিলেন, আর ফিলিপ ও নপংসক উভয়ে জলমধ্যে নামিলেন এবং ফিলিপ তাঁহাকে বাপ্তাইজ করিলেন। AABen 86.3

“আর যখন তাহারা জলের মধ্যে হইতে উঠিলেন, তখন প্রভুর আত্মা ফিলিপকে হরণ করিয়া লইয়া গেলেন, এবং নপংসক আর তাঁহাকে দেখিতে পাইলেন না, ফলে তিনি আনন্দ করিতে করিতে আপন পথে চলিয়া গেলেন। কিন্তু ফিলিপকে অসদোদে দেখিতে পাওয়া গেল; আর তিনি নগরে নগরে ভ্রমণ করিয়া সুসমাচার প্রচার করিতে করিতে শেষ কৈসরিয়াতে উপস্থিত হইলেন।” AABen 87.1

এই ইথিওপীয় একটি বিরাট জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি ছিলেন, যাদের ফিলিপের মত পরিচর্যাকারীর প্রয়োজন ছিল, কারণ ফিলিপ ঈশ্বরের রব শ্রবণ করেছিলেন এবং তিনি যেখানে যেতে আদেশ দিয়েছেন সেখানে গিয়েছিলেন। এমন অনেকে আছে যারা শাস্ত্র পাঠ করে কিন্তু তাঁর প্রকৃত অর্থ অনুধাবন করতে পারে না। সারা পৃথিবীতে নারী ও পুরুষেরা আত্মার জন্য এই সকল আত্মার প্রার্থনা, অশ্রু ও আর্তি স্বর্গে উত্থাপিত হচ্ছে। আরও অনেকে ঈশ্বরের রাজ্যের দ্বারপ্রান্তে এসে অপেক্ষামান রয়েছে। AABen 87.2

খ্রীষ্টের জ্যোতির অনুসন্ধান করেছেন এবং সুসমাচার গ্রহন করার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছেন এমন একজনের কাছে স্বর্গদূত ফিলিপকে পথ দেখিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন, আর আজ যারা পবিত্র আত্মাকে তাদের জিহ্বা পবিত্রকৃত করতে ও তাদের অন্তরকে নম্র করতে সুযোগ করে দেবেন তাদেরকে সস্বরগদূত প্রতিটি পদক্ষেপ ধরে ধরে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রস্তুত আছেন। যে স্বর্গদূতকে ফিলিপের কাছে পাঠানো হয়েছিল তিনি নিজেই ইথিওপীয় লোকটির কাছে পরিচর্যা করতে পারতেন, কিন্তু ঈশ্বর এভাবে কাজ করেন না। তার পরিকল্পনা অনুসারে একজন মানুষই আরেকজন মানুষের কাছে পরিচর্যা কাজ করবে। AABen 87.3

প্রথমে শিষ্যদেরকে যে আস্থায় আহ্বান করা হয়েছিল সেই একই আস্থায় প্রতিটি যুগের বিশ্বাসীদেরকে আহ্বান করা হচ্ছে । যারা সুসমাচার গ্রহণ করেছে তাদের প্রত্যেককেই এই জগতের কাছে প্রকাশ করার জন্য অমূল্য সত্য প্রদান করা হয়েছে। ঈশ্বেরের বিশ্ব লোকেরা সব সময়েই পূর্বপাক্ষিক প্রচার কাজে লিপ্ত ছিলেন এবং তাঁরা তাঁর নামের সম্মান রক্ষার্থে ও তাঁর পরিচর্যা কাজে নিজেদের সবটুকু তালন্ত বিলিয়ে দিয়েছেন। AABen 88.1

অতীতে খ্রীষ্টয়ানদের নিঃস্বার্থ শ্রম আমাদের জন্য দৃষ্টমূলক শিক্ষা এবং উদ্দীপনার বিষয়। ঈশ্বরের মণ্ডলীর সদস্যগণ ভাল কাজের জন্য উদ্দীপ্ত ছিলেন, যা তাদেরকে সমস্ত পার্থিব লক্ষ থেকে তাঁর সাথে পথ চলতে প্রেরণা যুগিয়েছে। সহানুভূতি ও সহমর্মিতায় পূর্ণ হয়ে তাঁরা দরিদ্রদের জন্য পরিচর্যা দেবেন এবং পাপীদেরকে ত্রাণকর্তার ভালবাসার কথা জানাবেন। এ ধরনের কাজের জন্য প্রচণ্ড পরিশ্রম ও কষ্ট সহ্য করতে হবে, কিন্তু এর ফলে তাদের জন্য সঞ্চিত হবে মহা পুরষ্কার। যারা আন্তরিকতার সাথে এই কাজ করবেন তারা ত্রাণকর্তার জন্য আত্মা জয় করতে সমর্থ হবেন, কারণ তাদের পরিচর্যার সাথে যে ঐস্বরিক শক্তি কাজ করে চলেছে তাকে রুদ্ধ করার ক্ষমতা কারও নেই। AABen 88.2

এই মহান আদেশ পালক করার কেবল অভিষেকপ্রাপ্ত পরিচর্যাকারীদের উপরেই ন্যস্ত হয়নি। যারা খ্রীষ্টকে গ্রহণ করেছেন তাদের প্রত্যেকেই অন্যদের পরিত্রাণ আনয়নের জন্য কাজ করতে আহ্বান জানানো হয়েছে। “আর আত্মা ও কন্যা কহিতেছেন, আইস। যে শুনে, সেও বলুক, আইস।” প্রকাশিত বাক্য ২২:১৭। এই আমন্ত্রণ পেয়েছে তাদেরও পর্বতে ও উপত্যকায় “এসো” বলে আহ্বান জানাতে হবে। AABen 88.3

আত্মা জয়ের কাজ শুধুমাত্র পরিচর্যাকারীদের জন্যই এমনটা ভাবা খুবই মারাত্মক ভুল। যে নম্র ও খাঁটি মনের বিশ্বাসীদের উপরে একটি মাত্র আত্মা জয়ের জন্য দ্রাক্ষাক্ষেত্রের মালিক আদেশ দিয়েছেন, তাদেরকে ছোট দায়িত্ব দেওয়ার মধ্য দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে যেন তাকে বড় কাজের দায়িত্ব দেওয়া যায়। যারা ঈশ্বরের মণ্ডলীতে নেতা হিসেবে অধিষ্ঠত তাদের অবশ্যই এ কথা অনুধাবন করা প্রয়োজন যে, যারা ত্রাণকর্তারর নামে অবশ্যই এ কথা অনুধাবন করা প্রয়োজন যে, যারা যারা ত্রাণকর্তার নামে বিশ্বাস করেছেন তাদের প্রত্যেককেই তাঁর আদেশ পালনের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। হস্তার্পণের মধ্য দিয়ে যারা পরিচর্যা কাজে আসেনি এমন অনেক মানুষকেও প্রভু তাঁর দ্রাক্ষাক্ষেত্রে ফল সংগ্রহের জন্য প্রেরণ করবেন। AABen 88.4

পরিত্রাণের বাণী শ্রবণ করেছেন এমন শত শত হাজার হাজার মানুষ এখনও নিষ্ক্রিয় অবস্থায় বসে আছে, যাদের এই মুহূর্তেই কিছু না কিছু করার আছে। তাদেরকে খ্রীষ্ট বলেছেন, “কি জন্য সমস্ত দিন এখানে নিষ্কর্মে দাঁড়াইয়া আছ?” তিনি তাদেরকে আরও বললেন, “তোমরাও দ্রাক্ষাক্ষেত্রে যাও। “মথি ২০:৬, ৭। কেন আরও বেশি মানুষ এই আহ্বানে সাড়া দিচ্ছে না? এর কারণ কি এই যে , তারা পুলপিটের দাঁড়িয়ে পরিচর্যার কাজ করে না বলেই নিজেদেরকে এই কাজ না করার জন্য অজুহাত দিচ্ছে? তাদেরকে বুঝতে হবে যে, পুলপিটের বাইরে যারা মণ্ডলীর সাধারণ বিশ্বাসীরা রয়েছেন তাদের মধ্যেও বড় মাপের কাজ করা হবে। AABen 89.1

দীর্ঘদিন যাবৎ ঈশ্বর অপেক্ষা করেছেন যেন পরিচর্যার আত্মা সমগ্র মণ্ডলীকে ব্যাপৃত করে । আর তাই এখন তিনি চান যেন মণ্ডলীর প্রত্যেকেই তাদের সাধ্য ও ক্ষমতা অনুসারে কাজ করে। ঈশ্বরের মণ্ডলীর সদস্যরা যখন তাদের কাজের ক্ষেত্রে কিংবা গৃহে তাদের নিরূপিত কাজটুকু করার মধ্য দিয়ে সুসমাচারের আদেশ পালণ করেন, তখন সমগ্র পৃথিবীর সতর্ক হয় যে, প্রভু যীশু মহা পরাক্রম ও মহা প্রতাপ সহকারে এই পৃথিবীতে ফিরে আসবেন। “আর সর্ব জাতির নিকটে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে; আর তখন শেষ উপস্থিত হইবে।” মথি ২৪:১৪। AABen 89.2