যিহোশূয় এবং স্বর্গীয় দূত সম্পর্কে সখরিয়ের দর্শনের কেবলই পরে, সরুব্বাবিলের প্রতি সদাপ্রভুর কার্য সম্পর্কে ভাববাদী বার্তা প্রাপ্ত হলেন। “পরে যে দূত আমার সহিত আলাপ করিতেছিলেন, তিনি পুনরায় আসিয়া আমাকে নিদ্রা হইতে জাগরিত মানুষের ন্যায় জাগাইলেন । আর তিনি আমাকে বলিলেন, কি দেখিতেছ? আমি কহিলাম, আমি দৃষ্টিপাত করিলাম, আর দেখ, এক দীপবৃক্ষ, সমস্তই স্বর্ণময়; তাহার মাথার উদ্ধে তৈলাধার, ও তাহার উপরে সাত প্রদীপ, এবং তাহার মাথার উপরে স্থিত প্রত্যেক প্রদীপের জন্য সাত বল; তাহার নিকট দুই জিতবৃক্ষ, একটী তৈলধারের দক্ষিণে ও একটী তাহার বামে।” PKBeng 500.1
“তখন যে দূত আমার সঙ্গে আলাপ করিতেছিলেন, আমি তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, হে আমার প্রভু, এ সকল কি? তিনি উত্তর করিয়া আমাকে বলিলেন, এই সরুব্বাবিলের প্রতি সদাপ্রভুর বাক্য, পরাক্রম দ্বারা নয় বল দ্বারা নয় কিন্তু আমার আত্মা দ্বারা, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন ।” PKBeng 500.2
“পরে আমি তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, দীপবৃক্ষটির দক্ষিণে ও বামে দুই দিকেস্থিত ঐ দুই জিতবৃক্ষের তাৎপর্য কি? দ্বিতীয় বার তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, স্বর্ণময় যে দুই নল আপনা হইতে স্বর্ণময় তৈল নির্গত করে, তৎপাশে জিত ফলের এই যে দুইটি শাখা আছে, ইহার তাৎপর্য্য কি? তখন তিনি কহিলেন, ইহারা সেই দুই তৈল-কুমার যাহারা সমস্ত ভূমণ্ডলের প্রভুর সামনে দাঁড়াইয়া থাকেন।” সখরিয় ৪:১-৬, ১১-১৪। PKBeng 500.3
এই দর্শনের মধ্যে যে দুইটি জিতবৃক্ষ ঈশ্বরের সামনে দণ্ডায়মান রয়েছে এর দ্বারা আপনা-আপনি দুইটি স্বর্ণময় নলের মধ্য দিয়ে দীপবৃক্ষের পাত্রের স্বর্ণময় তৈল শূন্য করার বিষয় প্রদর্শন করে থাকে । এটি হতে ধর্ম্মধামের দীপ সকল পূর্ণ করা হয়ে থাকে, মেঘ সর্বদা উজ্জ্বল আলো প্রদান করে থাকে। এই রূপে ঈশ্বরের সামনে দণ্ডায়মান অভিষিক্ত ব্যক্তি হতে স্বর্গীয় জ্যোতি পূর্ণমাত্রায় এবং প্রেম এবং ক্ষমতা তাঁর লোকদের ওপরে প্রদান করে থাকে, কেননা তারা যেন অন্যদের জ্যোতি আনন্দ এবং নূতন জীবনীশক্তি প্রদান করে। এরূপে যারা উন্নতি সাধন করেছে, তারাও যেন ঈশ্বরের প্রেমের কোষাগার হতে অন্যদের উন্নতি সাধন করেন। PKBeng 501.1
ঈশ্বরের গৃহ পুননির্মাণের মধ্যে, সরুব্বাবিল শতগুণ সঙ্কটের সামনেও কার্য করেছেন। প্রথম থেকে, “তখন দেশের লোকেরা যিহূদার লোকদের হস্ত দুর্ব্বল করিতে ও নির্ম্মাণ ব্যাপারে তাহদিগকে উদ্বিগ্ন করিতে লাগিল;” এবং “হস্ত ও বল প্রয়োগে তাহাদিগকে ঐ কৰ্ম্ম হইতে নিবৃত্ত করিল।” ইষ্রা ৪:৪, ২৬। কিন্তু ঈশ্বর নির্মাতাগণের জন্য বাঁধা প্রদান করলেন। এবং বর্তমানে তিনি তাঁর ভাববাদীর দ্বারা সরুব্বাবিলের জন্য বললেন, “হে বৃহৎ পৰ্ব্বত, তুমি কে? সরুব্বাবিলের সামনে তুমি সমভূমি হইবে, এবং ‘প্রীতি, প্রীতি, ইহার প্রতি,’’ এই হর্ষধ্বনির সাথে সে মস্তকস্বরূপ প্রস্তুরখানি বাহির করিয়া আনিবে।” সখরিয় ৪:৭। PKBeng 501.2
ঈশ্বরের লোকদের সমুদয় ইতিহাস ব্যাপিয়া মহা পৰ্ব্বত সম সমস্যা স্পষ্টতঃ অদম্য, যারা স্বর্গের উদ্দেশ্য সাধন করার জন্য চেষ্টা করে তাদের সামনে মরীচিকাব প্রতিভাত হয়। এরূপ সমস্যা সমূহ বিশ্বাসের পরীক্ষার জন্য ঈশ্বর অনুমোদন করেছেন। যখন আমরা পরীক্ষা দ্বারা বেষ্টিত হই তখন সর্বোপরি আমাদেরকে ঈশ্বরে এবং তাঁর আত্মার ক্ষমতার ওপরে নির্ভর করতে হবে। একটি জীবন্ত বিশ্বাসের চর্চা করা অর্থা একটি আধ্যাত্মিক শক্তি বৃদ্ধি করা এবং একটি অব্যর্থ নির্ভরতাকে বিকশিত করা। এটি এরূপ, আত্মা একটি জয়ী করার ক্ষমতায় পরিণত হয়। বিশ্বাস দাবি করার পূর্বে শয়তান খ্রীষ্টানের চলার পথে যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে থাকে তা অদৃশ্য হয়ে যাবে; কেননা স্বর্গীয় ক্ষমতা তার সাহায্যের জন্য উপস্থিত হবে। “তোমাদের অসাধ্য কিছুই থাকিবে না।” মথি ১৭:২১। PKBeng 501.3
জাগতিক জীবন যাত্রা শুরু হয়ে থাকে জাঁকজমকপূর্ণভাবে এবং অহঙ্কারের সাথে। ঈশ্বরের জীবন যাত্রার পথে দিনের ক্ষুদ্র বিষয়টিকেও শুরুতেই সত্যে ও ধার্মিকতায় চমৎকার বিজয় সাধন করে থাকে । কোন কোন সময়ে তাঁর কার্যকারীদের প্রশিক্ষণ দেয়ার নিমিত্তে হতাশা এবং স্পষ্ট ব্যর্থতার উপস্থিত করে থাকেন। এটি তাঁর উদ্দেশ্য যেহেতু তারা যেন সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সমর্থ হন। PKBeng 502.1
প্রায়ই লোকেরা বিহ্বলতার এবং সমস্যার সম্মুখীন হলে তারা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হত। কিন্তু যদি তারা শুরু হতে শেষ পর্যন্ত বিশ্বাসে স্থির থাকত ঈশ্বর তাদের পথ পরিষ্কার করতেন। যেমন তারা সমস্যা সমূহের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চালাবে কৃতকার্যতা তাদের কাছে উপস্থিত হবে। সরুব্বাবিলের বাটী নির্ভিক আত্মা এবং অবিচলিত বিশ্বাস এবং মহা পর্বত সম সমস্যার একটি সমাধা হবে; এবং যার হাত ভিত্তিমূল স্থাপন করেছেন, এমনকি “আবার তাহারই হস্ত ইহার সমাপ্ত করিবে।” “সে মস্ত কস্বরূপ প্রস্তরখানি বাহির করিয়া আনিবে।” সখরিয় ৪: ৯, ৭। PKBeng 502.2
মানুষের ক্ষমতা এবং মানুষের শক্তি ঈশ্বরের মণ্ডলী স্থাপন করেনি, এবং তারা তা ধ্বংস করতেও অসমর্থ। মানুষের শক্তি প্রস্তরের ওপরে নয় কিন্তু যীশু খ্রীষ্টর ওপরে, যুগান্তের প্রস্তরের ওপরে মণ্ডলীর ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত ছিল, “আর পাতালের পুরুদ্ধার সকল তাহার বিপক্ষে প্রবল হইবে না। মথি ১৬:১৮। ঈশ্বরের উপস্থিতিতে তাঁর কাজের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়। “তোমরা নির্ভর করিও না রাজন্যগণে, বা মনুষ্য সন্তানে, যাহার কাছে ত্রাণ নাই।” গীত ১৪৬:৩। “সুস্থির থাকিয়া বিশ্বাস করিলে তোমাদের পরাক্রম হইবে।” যিশাইয় ৩০:১৫। ঈশ্বরের গৌরবজনক, অনন্ত সত্যের নীতিসমূহের ওপর স্থাপিত, যা শেষ হবে না। এটি কেবল শক্তি থেকে শক্তিমন্ত হবে, “পরাক্রম দ্বারা নয়, বল দ্বারাও নয়, কিন্তু আমার আত্মা দ্বারা, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন।” সখরিয় ৪:৬। PKBeng 502.3
প্রতিজ্ঞা করা হয়েছিল, “সরুব্বাবিলের হস্ত এই গৃহের ভিত্তিমূল স্থাপন করিবে, আবার তাহারই হস্ত ইহা সমাপ্ত করিবে।” সখরিয় ৪:৯। “আর যিহূদীদের প্রাচীনবর্গ গাঁথনি করিয়া হগয় ভাববাদীর ও ইদ্দোর পুত্র সখরিয়ের ভাববাণী সহকারে কৃতকার্য হইলেন, এবং ইস্রায়েলের ঈশ্বরের আজ্ঞানুসারে ও পারস্য- রাজ কোরসের, দারিয়াবসের ও অতখস্তের আদেশানুসারে গাঁথনি করিয়া কার্য সমাপ্ত করিলেন। দারিয়াবস রাজার রাজত্বের ষষ্ঠ বছরে অদর মাসের তৃতীয় দিনে গৃহ সমাপ্ত হইল।” ইষ্রা ৬:১৪, ১৫। PKBeng 503.1
ক্ষণকাল পরেই পুনস্থাপিত মন্দির উসর্গ করা হল। “পরে ইস্রায়েল সন্তানগণ, যাজকেরা লেবিয়েরা ও বন্দিদশা হইতে আগত লোকদের অবশিষ্ট লোকেরা আনন্দে ঈশ্বরের সেই গৃহের প্রতিষ্ঠা করিল।” এবং “পরে প্রথম মাসের চতুর্দ্দশ দিনে- লোকেরা নিস্তার পর্ব্ব পালন করিল।” ইষ্রা ৬:১৬, ১৭, ১৯। PKBeng 503.2
দ্বিতীয় মন্দিরটি দেখতে জাঁকজমকের দিক দিয়ে প্রথমটির মত ছিল না, এমনকি স্বর্গীয় উপস্থিতির দৃশ্যতঃ নিদর্শন দ্বারাও পবিত্র করা হয়নি প্রথম মন্দিরটির ন্যায়। এমনকি এর উসর্গীকরণের সময়ে চিহ্নিত ও মহা ক্ষমতার দ্বারা প্রদর্শন করা হয়নি। সদ্য নির্ম্মিত ধর্ম্মধামের মধ্যে গৌরবময় মেঘ দৃষ্ট হয়নি। যজ্ঞবেদীর ওপরে উসর্গীকৃত যজ্ঞ ভষ্মিভূত হতে স্বর্গ থেকে অগ্নি বর্ষিত হয়নি। মহা পবিত্র স্থানে করূবদের মাঝে যে রহস্যময় জ্যোতি ছিল তা আর সেখানে বিদ্যমান নেই; নিয়মসিন্দুক, পাপাবরণ এবং সাক্ষ্যের প্রস্তরফলক সকল সেখানে আর দেখা গেল না। অনুসন্ধানকারী যাজকের মাধ্যমে যিহোবার স্বর্গীয় ইচ্ছা জানবার কোন চিহ্ন নেই । PKBeng 503.3
তথাপিও এই সেই দালান যার বিষয় ঈশ্বর হগয় ভাববাদীর দ্বারা ঘোষণা করেছেন: “এই গৃহের পূর্ব প্রত্যাশা অপেক্ষা উত্তর প্রতাপ গুরুতর হইবে।” “আর আমি সর্বজাতিকে কম্পান্বিত করিব; এবং সর্বজাতির মনোরঞ্জন বস্তু সকল আসিবে; আর আমি এই গৃহ প্রতাপে পরিপূর্ণ করিব, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন।” হগয় ২:৯,৭। PKBeng 504.1
বিজ্ঞ লোকেরা শত শত বছর ব্যাপি দেখাতে চেষ্টা করেছেন, ঈশ্বর হগয় ভাববাদীর কাছে যে সকল প্রতিজ্ঞা ব্যাক্ত করেছেন, যার পূর্ণতা লাভ করেছে; তথাপিও নাসরতে যীশুর আগমন, সর্ব-যুগের বাসনা, যিনি স্বয়ং ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত থেকে মন্দির সংলগ্ন স্থানের প্রতি ভক্তি প্রদর্শন করেছেন, অনেকেই দৃঢ়ভাবে কোন প্রকার বিশেষ পার্থক্য দেখতে অস্বীকার করেছেন । গর্ব এবং অবিশ্বাসের দরুন ভাববাদীর বাক্য সমূহের সত্য অর্থের প্রতি অন্ধিভূত হয়েছে। PKBeng 504.2
দ্বিতীয় মন্দিরটি যিহোবার গৌরবময় মেঘ দ্বারা সম্মানিত করেননি, কিন্তু যার উপস্থিতির মধ্যে এক ব্যক্তি বাস করেন “কেননা তাঁহাতেই ঈশ্বরত্বের সমস্ত পূর্ণতা দৈহিকরূপে বাস করে”— ঈশ্বর স্বয়ং “যিনি মাংসে প্রকাশিত হইলেন।” কলসীয় ২:৯; ১ তীমথিয় ৩:১৬ । খ্রীষ্টের পার্থিব প্রচার কার্যের সময় তাঁর ব্যক্তিগত উপস্থিতির মাধ্যমে যত গৌরাবান্বিত করেছেন, এবং কেবল একাই দ্বিতীয় মন্দিরটি গৌরবের দিক দিয়ে প্রথম মন্দিরটি ছাড়িয়ে গিয়েছিল। সমস্ত জাতি সমূহের বাসনা সত্যিকারে তাঁর মন্দিরে উপস্থিত হয়, যখন নাসরতীয় ব্যক্তি শিক্ষা দিয়েছেন এবং তাঁর পবিত্র প্রাসাদসমূহে সুস্থ করেছেন। . PKBeng 504.3