শয়তান পবিত্র দম্পতিকে জানাল যে ঈশ্বরের আজ্ঞা অমান্য করে তারা লাভবান হবেন। যারা ঈশ্বরের সকল আজ্ঞা মেনে চলেন তাদেরকে আজ অনেকেই সঙ্কীর্ণ মনা বলে থাকেন, এবং নিজেরা অতিরিক্ত স্বাধীনতা উপভোগ করেছেন বলে দাবী করেন। এটা এদনের একটি কন্ঠস্বর ছাড়া আর কিই বা হতে পারে? “যে দিন তোমরা তাহা খাইবে”...স্বৰ্গীয় নীতি লঙ্ঘন করুন... “তোমরা ঈশ্বরের মত হইয়া সদসদ্ জ্ঞান প্রাপ্ত হইবে।” শয়তান এটা জানতে দেয় নি যে সে স্বর্গ হতে বিতাড়িত হয়েছে। সে তার নিজের দুর্ভোগকে গোপন করল যাতে করে যে অন্যান্যদেরকে একই অবস্থায় নিয়ে আসতে পারে। সুতরাং আজও ব্যবস্থা লঙ্ঘনকারী তার প্রকৃত চরিত্র গোপন রাখে; কিন্তু সে শয়তানের দলে থেকে ঈশ্বরের আজ্ঞাকে পদ দলিত করে এবং অন্যদের অনন্ত ধ্বংসের দিকে পরিচালিত করে। PPBeng 26.3
হবা ঈশ্বরের কথা বিশ্বাস করেন নি এবং এটাই তার পতনের কারণ হল । বিচারে মানুষকে এ জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হবে না যে তারা সজ্ঞানেই একটি মিথ্যা কথা বিশ্বাস করেছেন, কিন্তু এজন্য দোষী করা হবে যে তারা সত্য বিশ্বাস করেন নি । আমাদের মনোযোগী হওয়া উচিত যেন আমরা সত্য জানতে পারি। যা কিছু ঈশ্বরের বাক্যের বিপক্ষে বলে তা শয়তান থেকেই আসে। PPBeng 27.1
সর্প গাছ হতে ফল পেড়ে অর্ধ-অনিচ্ছুক হবার হাতে দিল। পরে সে তাকে স্মরণ করালো যে ঈশ্বর তাদেরকে বলেছেন যে তারা যেন ফল স্পর্শ ও না করেন কারণ তাহলে তারা মরে যাবেন। যখন দেখলেন কোন ক্ষতিই হল না তখন হবা আরো সাহসী হলেন। যখন তিনি দেখিলেন, “ঐ বৃক্ষ সুখাদ্যদায়ক ও চক্ষুর লোভজনক, আর ঐ বৃক্ষ জ্ঞান-দায়ক বলিয়া বাঞ্ছনীয়, তখন তিনি তাহার ফল পাড়িয়া ভোজন করিলেন।” যখন তিনি যাচ্ছিলেন তখন তিনি কল্পনা করছিলেন যে তিনি আরো উন্নত জীবনে প্রবেশ করেছেন । PPBeng 27.2
নিজে খেয়ে নেয়ার পর এখন তিনি শয়তানের প্রতিনিধি হিসাবে নিজ স্বামীর ধ্বংস সাধনে লিপ্ত হলেন । এক অদ্ভুত অপ্রকৃতিস্থ উত্তেজনায়, হাতে ফল সহকারে, তিনি তার নিকট উপস্থিত হলেন । PPBeng 27.3
আদমকে আশ্চর্য্য ও ভীত মনে হল । হবা কথার উত্তরে তিনি বললেন যে ইহা নিশ্চয়ই সেই শত্রুর কাজ যার সম্বন্ধে আমাদের সতর্ক করা হয়েছিল । স্বর্গীয় শাস্তি অনুসারে হবাকে এখন মরতে হবে। উত্তরে তিনি তাকে অনুরোধ জানালেন, “খাও” এবং সর্পের সেই কথা যে কোন ভাবেই মরবে না, তা পুনরুক্তি করলেন । হবাও ঈশ্বরের ক্রোধের কোন আভাস অনুভব করছিলেন না, বরং তার সমস্ত শরীর ও মনে এক আনন্দদায়ক, সুখকর অনুভূতি, এক নূতন ধরণের জীবন এনে দিয়েছিল। PPBeng 27.4
আদম বুঝতে পারলেন যে তার সঙ্গিনী ঈশ্বরের আজ্ঞা অমান্য করেছেন। তার মনে একটা ভয়ঙ্কর দ্বন্দ্ব শুরু হলো। তিনি শোকাভিভূত হলেন যে তিনি হবাকে তার নিকট হতে দূরে চলে যেতে দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন ঘটনা ত ঘটে গেছে, তাকে এখন তার নিকট হতে বিচ্ছিন্ন হতে হবে যার সান্নিধ্য তার সুখের কারণ ছিল। PPBeng 27.5
এটা কি করে সম্ভব হবে? আদম ঈশ্বর ও পবিত্র-দূতগণের বন্ধুত্ব উপভোগ করেছিলেন। যদি তারা ঈশ্বরের কাছে বিশ্বস্ত থাকে তবে মানব জাতির জন্য কি উন্নত ভবিষ্যতই না উন্মুক্ত রয়েছে তা তিনি অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। কিন্তু এই সমস্ত আশীর্বাদই সৃষ্টির নিকট হেরে গেল যে উপহারটি তার চোখে অতি মূল্যবান ছিল। স্রষ্টার প্রতি প্রেম, কৃতজ্ঞতা, এবং বিশ্বস্ততার সবই হবার প্রতি প্রেমের নিকট পরাজিত হল। তিনি তারই একটি অংশ এবং তার সহিত বিচ্ছেদের চিন্তা তিনি সহ্য করতে পারলেন না। হবা যদি মরেন তবে তিনিও হবার সহিত মৃত্যুবরণ করবেন। সর্পের কথা কি সত্যি হতে পারে না? হবার মধ্যে মৃত্যুর কোন চিহ্নই দেখা যাচ্ছিল না, এবং আদম এর পরিণতির মোকাবেলা করতে সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি ফলটি নিলেন এবং এক নিঃশ্বাসে খেয়ে ফেললেন। PPBeng 27.6
তার অবাধ্যতার পর, আদম প্রথমে কল্পনা করলেন যে তিনি একটি উন্নত জীবনে উপনীত হচ্ছেন। কিন্তু শীঘ্রই তার নিজ পাপের চিন্তা তাকে ভীত করে তুলল । যে প্রেম ও শান্তি তাদের মধ্যে ছিল তা তিরভূত হল, আর পাপের অনুভূতি, ভবিষ্যতের ভয়, আত্মার উলঙ্গতা তাদের মনে স্থান পেল । যে জ্যোতি তাদেরকে আচ্ছাদিত করে রেখেছিল তা অদৃশ্য হয়ে গেল, আর এর স্থান পূরণের জন্য তারা একটি আচ্ছাদনী তৈরীর চেষ্টা করলেন। উলঙ্গ অবস্থায় তারা ঈশ্বর ও পবিত্র দূতগণের সম্মুখাসম্মুখি হতে পারেন না । PPBeng 28.1
এখন তারা পাপের প্রকৃত প্রকৃতি অনুভব করতে আরম্ভ করলেন। তার কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়ার জন্য এবং সর্প দ্বারা নিজেকে প্রতারিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টির জন্য হবাকে তিরষ্কার করলেন। কিন্তু তারা নিজেদের এই বলে সান্ত্বনা দিলেন যে যিনি তাদের তাঁর প্রেমে এত সকল প্রমাণ দিয়াছেন, তিনি নিশ্চয়ই এই একটি অবাধ্যতা ক্ষমা করবেন; যে ভয়ঙ্কর পরিণতির ভয় তারা পাচ্ছেন; অবশ্যই ঐ ধরণের কোন শাস্তি প্রদান করা হবে না। শয়তান উল্লাসিত হল। সে রমণীকে ঈশ্বরের প্রেমে অবিশ্বাস করতে, তাঁর জ্ঞানকে সন্দেহ করতে, তাঁর ব্যবস্থার অবাধ্য হতে, অনুপ্রাণিত করেছে; এবং তার মাধ্যমে সে আদমকে পদচ্যূত করেছে। PPBeng 28.2