বিলিয়মের দেরীতে বিরক্ত হয়ে ও আরেকটি অস্বীকৃতির আশা করে মোয়াবের বার্তাবাহকরা বিলিয়মের সহিত আলোচনা না করেই দেশের দিকে যাত্রা করল। বালাকের অনুরোধে রাজী হওয়ার সকল ছুতাই এখন দূর হয়ে গেল । কিন্তু বিলিয়ম উপঢৌকন গ্রহণের জন্য অত্যন্ত আগ্রহশীল ছিলেন। পাছে তিনি উপঢৌকন লাভে ব্যর্থ হন এই চিন্তায় ব্যাকুল হয়ে যে প্রাণীতে তিনি চড়তে অভ্যস্ত ছিলেন, সেই প্রাণীতে চড়ে তিনি দ্রুত যাত্রা করলেন। PPBeng 313.1
কিন্তু “সদাপ্রভুর দূত তাহার বিপক্ষরূপে পথের মধ্যে দাঁড়াইলেন।” মানুষের নিকট অদৃশ্য স্বর্গীয় বার্তাবাহককে প্রাণীটি দেখতে পেল এবং সে প্রধান সড়ক হতে নেমে মাঠের মধ্য দিয়া চলতে শুরু করল। নিষ্ঠুর আঘাতে জর্জরিত করে বিলিয়ম প্রানীটিকে আবার ঠিক পথে নিয়ে এলেন। কিন্তু দু'পাশে দেয়াল দ্বারা বেষ্টিত পথের একটু অংশে দূত আবার উপস্থিত হলেন। ভীতিজনক এই মূৰ্ত্তিকে এড়িয়ে চলতে গিয়ে প্রাণীটি তার প্রভুর পাকে দেয়ালের সাথে ঘসে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলল । বিলিয়ম জানতেন না যে ঈশ্বর তার পথে বাধার সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি হতাশায় অভিভূত হয়ে নির্দয় ভাবে আঘাত করতে করতে প্রাণীটিকে এগুতে বাধ্য করলেন। PPBeng 313.2
“ডানে কি বামে ফিরিবার পথ নাই, এমন এক সংকুচিত স্থানে” দূত আবার উপস্থিত হলেন, এবং ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বেচারা প্রাণী তার চালকসহ মাটিতে পড়ে গেল। বিলিয়মের ক্রোধ সীমা ছাড়িয়ে গেল, এবং হাতের লাঠি দিয়ে তিনি আগের চেয়ে আরো বেশী নিষ্ঠুরতার সহিত প্রাণীটিকে আঘাত করতে শুরু করলেন। এখন ঈশ্বর প্রাণীটির মুখ খুলে দিলেন এবং তা “মানুষের রবে কথা বলিয়া সেই ভাববাদীর ক্ষিপ্ততা নিবারণ করিল।” ২ পিতর ২:১৬। সে বলল, “আমি তোমার কি করিলাম যে তুমি এই তিনবার আমাকে প্রহার করিলে?” PPBeng 313.3
ক্রোধে অন্ধ হয়ে বিলিয়ম একজন বুদ্ধিমানের সাথে যে ভাবে কথা বলেন ঠিক সেই ভাবে বললেন, “তুমি আমাকে বিদ্রূপ করিয়াছে; আমার হস্তে যদি খড়গ থাকিত, তবে আমি এখনই তোমাকে বধ করিতাম।” PPBeng 314.1
আর তখন বিলিয়মের চক্ষু খুলে গেল, এবং তিনি দেখতে পেলেন যে তাকে হত্যা করার জন্য ঈশ্বরের দূত খোলা খড়্গগ হস্তে দাঁড়িয়ে আছেন । ভয়ে ভীত হয়ে “সে মস্তক নমনপূর্বক উবুড় হইয়া পড়িল।” দূত বলেন, “দেখ, আমি তোমার বিপক্ষরূপে বাহির হইয়াছি, কেননা আমার সাক্ষাতে তুমি বিপথে যাইতেছ; আর গদ্দভী আমাকে দেখিয়া এই তিন বার আমার সম্মুখ হইতে ফিরিল; সে যদি আমার সম্মুখ হইত না ফিরিত, তবে আমি নিশ্চয়ই তোমাকে বধ করিতাম, আর উহাকে জীবিত রাখিতাম।” PPBeng 314.2
যে প্রাণীর সাথে তিনি এত নিষ্ঠুর ব্যবহার করেছেন, সেই প্রাণীই বিলিয়মের জীবন রক্ষা করেছিল। যে লোক নিজকে সদাপ্রভুর ভাববাদী বলে দাবী করতেন তিনি লোভে উচ্চাকাঙ্খায় এতই অন্ধ হয়ে পড়েছিলেন যে একটি প্রাণী সদাপ্রভুর যে দূতকে দেখতে পাচ্ছিল, তাকে তিনি দেখতে পাচ্ছিলেন না । “এই যুগের দেব অবিশ্বাসীদের মন অন্ধ করিয়াছে।” ২ করিন্থীয় ৪:৪। ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করে নিষিদ্ধ পথে কত জনই না ধাবিত হচ্ছেন, আর তারা বুঝতে পারছেন না যে ঈশ্বর ও তার দূতগণ তাদের বিপক্ষে। যারা তাদের অনিবার্য্য ধ্বংস হতে রক্ষা করতে চায়, বিলিয়মের মত তাদের প্রতি তারা ক্রোধান্বিত হন । PPBeng 314.3
“ধার্মিক আপন পশুর প্রাণের বিষয় চিন্তা করে; কিন্তু দুষ্টদের করুণা নিষ্ঠুর।” হিতোপদেশ ১২ ৪১০। পশুদের প্রতি অপব্যবহার করা অথবা অবহেলায় তাদের কষ্ট দেয়াতে যে পাপ সাধিত হয় সে বিষয়ে অল্প লোকই PPBeng 314.4
কিন্তু পরিজ্ঞাত রয়েছেন । মানুষের সেবা করার জন্য পশুদের সৃষ্টি করা হয়েছে, এদের কষ্ট দেয়া বা নিষ্ঠুর ভাবে শাস্তি দেয়ার তাদের কোন অধিকার নাই । PPBeng 314.5
প্রাণীরা তার অধীনে রয়েছে বলে যে ব্যক্তি তাদের সহিত অপব্যবহার করে সে ভীরু ও অত্যাচারী। অনেকেই বুঝতে পারেন না যে প্রাণীরা প্রকাশ করতে পারে না বলে তাদের নিষ্ঠুরতা কোন দিন জানা হয় না। কিন্তু যদি ঐ সকল লোকের চক্ষু খুলে দেয়া সম্ভব হত, তবে তারা দেখতে পেতেন যে তাদের বিরুদ্ধে স্বর্গীয় দরবারে প্রমাণ দেবার জন্য ঈশ্বরের একজন দূত সাক্ষীরূপে দাঁড়িয়ে আছেন। সেই দিন এগিয়ে আসছে যে দিন তারা ঈশ্বরের সৃষ্ট প্রাণীর সহিত দুর্ব্যবহার করেছেন তাদের দন্ডাজ্ঞা প্রদান করা হবে। PPBeng 314.6