শিশোনের জন্মের মাধ্যমে মানোহের নিকট দেয়া স্বর্গীয় প্রতিজ্ঞা পূরণ হল । বালকটি যখন বাড়তে থাকল তখন প্রমাণ পাওয়া গেল যে সে অসাধারণ শক্তির অধিকারী ছিল । শিমশোন ও তার পিতামাতা জানতেন যে ঐ শক্তি তার দৈহিক শক্ত পেশীর উপর নির্ভরশীল ছিল না, কিন্তু তা নির্ভরশীল ছিল তার নাসরীয় হওয়ার উপর, যার প্রমাণ ছিল তার মাথার কোন দিন- না-কাটা চুল । যদি শিশোন ঈশ্বরের আজ্ঞা মেনে চলত তবে তার ভাগ্য হত সবচেয়ে মহ ও সুখময়। কিন্তু পৌত্তলিকদের সহিত বন্ধুত্ব তাকে ভ্রষ্ট করে তুলে । PPBeng 405.1
সারা শহরটি পলেষ্টীয় দেশের নিকবর্তী থাকায় শিশোন পলেষ্টীয়দের সাথে বন্ধত্বপূর্ণ মেলামেশা শুরু করল। পলেষ্টীয় শহর তিন্নায় বসবাসকারী একটি যুবতী শিমশোনের আবেগকে আকর্ষণ করল, এবং সে তাকে তার স্ত্রীরূপে গ্রহণ করার সিন্ধান্ত নিল । ঈশ্বরের প্রতি ভয়শীল তার পিতামাতা তাকে ঐ লক্ষ্য হতে সরিয়ে আনতে চাইলেন, কিন্তু তাদের নিকটকার একমাত্র উত্তর ছিল, “আমার দৃষ্টিতে সে মনোহরা ।” অবশেষে বিয়ে সম্পন্ন হল । PPBeng 405.2
ইলা যখন শিশোন যৌবনে পদার্পণ করছিল, আর যে সময়টি সে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার কথা ছিল, ঠিক সেই সময়ই সে ইস্রায়েলদের শত্রুদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন আরম্ভ করে। সে জানতে চাইল না যে সে যদি তার পছন্দ করা নারীর সাথে সংযুক্ত হয় তবে সে ঈশ্বরের আরো অধিক গৌরব করতে পারবে কি না। যারাই প্রথমে তাঁকে সম্মান করতে চায়, ঈশ্বর তাদের জ্ঞান দেবার প্রতিজ্ঞা করেছেন। কিন্তু যারা আত্ম-তুষ্টির চেষ্টায় ব্যস্ত তাদের নিকট কোন প্রতিজ্ঞা করা হয় নাই । PPBeng 405.3
স্বামী অথবা স্ত্রী নির্বাচনের সময় প্রায়ই ইচ্ছা বা মানসিক প্রবণতা প্রাধান্য পায়! কোন পক্ষই ঈশ্বরের পরামর্শ গ্রহণে উদ্যোগ নেন না অথবা তার গৌরব প্রকাশের চিন্তা তাদের মনে আনে না । শয়তান সর্বদাই তার নিজ ক্ষমতা ঈশ্বরের লোকদের উপর বৃদ্ধি করতে চায় এবং তাই সে তাদের তার রাজ্যের প্রজাদের সাথে সম্পর্ক-বদ্ধ হতে অনুপ্রাণিত করে। আর এই লক্ষ্য বাস্ত বায়িত করার জন্য সে অপবিত্র কামনা জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করে । PPBeng 405.4
কিন্তু সদাপ্রভু তাঁর লোকদের উপদেশ দিয়েছেন যেন যাদের হৃদয়ে তাঁর প্রেম বাস না করে তাদের সাথে তারা যেন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ না হয় । “আর বলীয়ালের (পাপ দেবের) সহিত খ্রীষ্টের কি ঐক্য ? অবিশ্বাসীর সহিত বিশ্বাসীরই বা কি অংশ ? আর প্রতিমাদের সহিত ঈশ্বরের মন্দিরেরই বা কি সম্পর্ক ?” ২ করিন্থীয় ৬:১৫, ১৬। PPBeng 406.1
বিবাহের ভোজের মুহূর্তে, শিশোন সেই পরিচিত বন্ধুদের সহিত একত্রিত হল যারা ইস্রায়েলদের ঈশ্বরকে ঘৃণা করত। বিবাহভোজ শেষ হবার আগেই দেখা গেল সে স্ত্রী তার স্বামীর প্রতি বিশ্বাস ঘাতকতা করল। স্ত্রীর অবিশ্বস্ততায় ক্রুদ্ধ হয়ে শিশোন তাকে কিছু কালের জন্য ছেড়ে সরার বাড়িতে একা ফিরে গেল। কিছু নরম হওয়ার পর আবার তার স্ত্রীকে আনতে ফেরত গেল, তখন সে দেখতে পেল যে সে অন্য লোকদের স্ত্রীতে পরিণত হয়েছে। পলেষ্টীয়দের সমস্ত মাঠ ও আঙ্গুর ক্ষেত ধ্বংসের মাধ্যমে তার প্রতিশোধ গ্রহণ করার ফলে পলেষ্টীয়রা তার স্ত্রীকে হত্যা করল, যদিও সে (তার স্ত্রী) তাদের ভয় দেখানোর ফলেই প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করে আর তাতেই সমস্যার শুরু হয় । PPBeng 406.2
একাকী খালি হাতে একটি সিংহকে মেরে এবং অস্কিলোনে ত্রিশজন লোককে হত্যা করে শিমশোন তার আশ্চর্য শক্তির পরিচয় দিয়েছিল । এখন তার স্ত্রীর নৃশংস হত্যায় ক্রোধান্বিত হয়ে সে পলেষ্টীয়দের আক্রমণ করল এবং “তাহাদিগকে...মহা আঘাত করিলেন।” নিজের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয় হিসাবে সে যিহূদার “ঐটম শৈলের ফাটালে” বাস করতে লাগল । PPBeng 406.3
ঐখানে তার অনুসন্ধানে লোক আসল এবং ভয়ে ভীত যিহূদার লোকেরা তাকে তার শত্রুদের হাতে সমর্পণ করার জন্য এক হীন ষড়যন্ত্র করল । তাই যিহূদার তিন হাজার লোক তার নিকট উপস্থিত হল । শিশোন তাদের দুটি নূতন দড়ি দিয়ে বাঁধতে দিল, এবং মহা আনন্দময় শোভাযাত্রাসহ তারা তাকে তার শত্রুদের শিবিরে নিয়ে গেল। কিন্তু “তখন সদাপ্রভুর আত্মা সবলে তাহার উপরে আসিলেন।” সে নূতন শক্ত দড়ি দুটিকে এমন ভাবে ছিঁড়ে ফেলল্ যে ঐগুলি যেন আগুনে পোড়ানো সূতা ছিল। তারপর তার হাতের নিকটতম অস্ত্র গাধার চোয়ালের হাড় দ্বারা সে পলেষ্টীয়দের আঘাত করতে আরম্ভ করল, আর তাতে মাঠে এক হাজার লোকের মৃতদেহ পড়ে থাকল । PPBeng 406.4
যদি ইস্রায়েলরা শিমশোনের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঐ বিজয়কে অনুসরণ করত, তবে হয়ত তারা তাদের অন্যায়কারীদের হাত হতে মুক্তি পেতে পারত। কিন্তু তারা হতোদ্দম হয়ে পড়েছিল, আর পৌত্তলিকদের তাড়িয়ে দেবার ঈশ্বরের যে আদেশ ছিল তার প্রতি অবহেলা দেখিয়েছিল বরং তারা তাদের সাথে একত্রিত হয়ে তাদের নৈতিকতাহীন জীবন যাপনে অংশ গ্রহণ করেছিল। যদি তারা ঈশ্বরের আজ্ঞা মেনে চলত তবে তাদের ঐ অনৈতিকতার কাছে অবনমিত হতে হত না । এমন কি যখন সদাপ্রভু তাদের জন্য একজন উদ্ধারকর্তা নিযুক্ত করলেন তখনও তারা প্রায়ই তাকে পরিত্যাগ করে তাদের শত্রুদের সাথে মিলে যেত। PPBeng 406.5