Go to full page →

হান্না শমূয়েলকে ঈশ্বরের নিকট অর্পণ করেন PPBeng 412

যে উপহারের জন্য হান্না কাতর অনুরোধ জানাচ্ছিলেন তা তিনি পেলেন। যখন তিনি সন্তানটির দিকে তাকালেন, তখন তিনি তার নাম দিলেন শমূয়েল “সদাপ্রভুর কাছে চাহিয়া লওয়া।” ছোট্ট শিশুটি যখনই মা হতে আলাদা হবার উপযুক্ত হয়ে উঠল তখনই তিনি তার প্রতিশ্রুতি পূরণ করলেন, সে ছিল তার একমাত্র ছেলে এক বিশেষ স্বর্গীয় দান; কিন্তু তিনি তাকে ঈশ্বরের নিকটে উৎসর্গীকৃত ধনরূপে পেয়েছিলেন, আর তিনি দাতাকে তাঁর দান হতে বঞ্চিত করবেন না । PPBeng 412.5

হান্না তার স্বামীর সাথে ভ্রমণ করে শীলোতে উপস্থিত হলেন এবং যাজকের কাছে মূল্যবান দানটি উপস্থিত করে বলেন “আমি এই বালকের জন্য প্রার্থনা করিয়াছিলাম; আর সদাপ্রভুর কাছে যাহা চাহিয়াছিলাম তাহা তিনি আমাকে দিয়াছেন । এইজন্য আমিও ইহাকে সদাপ্রভুকে দিলাম; এ চিরজীবনের জন্য সদাপ্রভুকে দত্ত।” এলি ছিলেন একজন প্রশ্রয় দানকারী পিতা, তাই একজন মায়ের তার একমাত্র ছেলে হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে তাকে ঈশ্বরের সেবার জন্য দান করার এই বলি দেখে তিনি হতবাক্ ও বিনম্র হলেন। তার নিজের স্বার্থপরায়ণ প্রেমের জন্য তার বিবেক তাকে অভিযোগ করল, আর অবনমিত ও ভক্তিপূর্ণ হৃদয়ে উবুড় হয়ে তিনি সদাপ্রভুর ধন্যবাদ করলেন। মার হৃদয় আনন্দে পূর্ণ হয়ে উঠল, এবং তিনি কৃতজ্ঞতাপূর্ণ হৃদয়ে ঈশ্বরের ধন্যবাদ জানালেন । PPBeng 413.1

ঈশ্বরের গৃহের সেবার প্রশিক্ষণের জন্য শমূয়েলকে শীলোতে রেখে হান্না রামায় নিজ গৃহে ফিরে গেলেন। ছেলের মাথায় বুদ্ধি আসার সাথে সাথেই তিনি তার ছেলেকে শিক্ষা দিতে শুরু করলেন যেন সে বুঝতে পারে সে সদাপ্রভুর জন্য উৎসর্গীকৃত। প্রত্যেক দিনই তাকে প্রার্থনা করতে হত । প্রতি বৎসর তিনি তার জন্য একটি পোশাক তৈরি করতেন, এবং যখন স্বামীর সহিত প্রশংসার জন্য শীলোতে যেতেন তখন তিনি তার প্রেমের নিদর্শনস্বরূপ ঐ পোশাক ছেলেকে দিতেন। ঐ পোশাকের প্রতিটি অংশ এই প্রার্থনার সহিত তৈরি হয়েছে যে ছেলেটি যেন পবিত্র মহান ও খাঁটি হয়। তিনি সবিনয়ে প্রার্থনা করতেন যে তার ছেলেটি যেন সেই মহত্ব অর্জন করে যে মহত্বের স্বর্গীয় মূল্য রয়েছে, যেন সে ঈশ্বরের সম্মান করে ও সহমানবকে আশীর্বাদ করে। PPBeng 413.2

হান্নার উপহারটি কি মহান! আর তার মধ্যে বিশ্বস্ততার দৃষ্টান্ত কতই না উৎসাহব্যঞ্জক! প্রত্যেক মাকেই কোন না কোন সুযোগ প্রদান করা হয়েছে। যে সমস্ত দৈনন্দিন কাজকে মহিলারা বিরক্তিকর বলে মনে করেন, সেইগুলিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মহান কাজ বলে মনে করতে হবে। সুখে ও দুঃখে, মায়েরা তাদের সন্তানদের গৌরবময় উচ্চতায় পৌছানোর পথকে সহজ ও সরল করতে পারেন। শুধুমাত্র নিজ জীবনে খ্রীষ্টের অনুগমনের মাধ্যমেই মায়েরা তাদের সন্ত ানদের মধ্যে স্বর্গীয় চরিত্র সৃষ্টি করতে সক্ষম হবেন। প্রত্যেক মা যেন প্রায়ই মুক্তিদাতার নিকট এই প্রার্থনা নিয়ে উপস্থিত হয়, “এই বালকটির প্রতি আমাদের কি কর্তব্য তাহা আমাদিগকে বুঝাইয়া দিন।” আর তাতে করে তাকে জ্ঞান দেয়া হবে । PPBeng 413.3

“বালক শমূয়েল দিন দিন বৃদ্ধি পাইয়া সদাপ্রভুর কাছে ও মানুষের কাছে অনুগ্রহ লাভ করিতেন।” শয়েলের যৌবন কাল মন্দ প্রভাব ও পাপের দৃষ্টান্ত মুক্ত ছিল না। এলির ছেলেরা ঈশ্বরকে ভয় করত না, আর তাদের পিতারও সম্মান করত না; কিন্তু শমূয়েল তাদের সাথে মিশতেন না, অথবা তাদের খারাপ পথের অনুগমনও করতেন না। ঈশ্বর যা চান তা হবার জন্য তিনি সর্বদাই সচেষ্ট ছিলেন। PPBeng 414.1

শমূয়েলের চারিত্রিক সৌন্দর্য্য বৃদ্ধ যাজকের উষ্ণ ভালবাসা কেড়ে নিয়েছিল। তিনি ছিলেন দয়ালু, উদার, বাধ্য ও সম্মান প্রদর্শনকারী। নিজ ছেলেদের ভ্রষ্টতায় দুঃখিত হয়ে এলি তার অধীনস্থ এই সন্তানের উপস্থিতিতে আনন্দ ও আশীর্বাদ উপভোগ করতেন। এই যুবককে এলি যত ভালবাসতেন, কোন পিতা তার ছেলেকে এর থেকে অধিক ভালবাসেন নি। নিজ ছেলেদের কুকর্মে চিন্তিত ও হতাশাগ্রস্ত এলি শান্তির জন্য শমূয়েলের সান্নিধ্য কামনা করতেন। PPBeng 414.2

প্রত্যেক বৎসরই নূতন নূতন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তার উপর ন্যাস্ত হতে লাগল । ধর্মধামের কাজে উৎসর্গ হওয়ার প্রতীক হিসাবে ছোট বেলায়ই তাকে একটি কাতানের এফোদ পরিয়ে দেয়া হয়েছিল। ধর্মধামের সেবার জন্য যদিও তাকে অত্যন্ত ছোটকালেই নিয়ে আসা হয়েছিল, তথাপি তার সাধ্য অনুসারে শমূয়েলকে নানা প্রকার কর্তব্য সম্পূর্ণ করতে হতো। এগুলি সব সময় আনন্দদায়ক ছিল না, কিন্তু তিনি এগুলি ইচ্ছাকৃত ভাবেই সম্পাদন করতেন। তিনি নিজেকে ঈশ্বরের দাসরূপে চিন্তা করতেন এবং প্রত্যেক কাজকেই ঈশ্বরের কাজ মনে করতেন। তার সমস্ত প্রচেষ্টাই গৃহীত হতো কেননা তা ঈশ্বরের প্রতি প্রেম ও তার ইচ্ছা পূরণের আকাঙ্খা হতেই উদ্ভূত ছিল। এই ভাবে শমূয়েল স্বর্গীয় ও পৃথিবীর সদাপ্রভুর সহকর্মীতে পরিণত হন। PPBeng 414.3