নোহের সময় আদমের অবাধ্যতা ও কয়িনের হত্যা করার ফলে পৃথিবীতে দ্বিগুণ অভিশাপ নেমে এসেছিল। তথাপি পৃথিবী তখনও খুব সুন্দর ছিল। পর্বতরাজি সমুন্নত বৃক্ষে শোভিত ছিল; সমভূমি সহস্র সহস্র ফুলের সৌরভে সুরভিত ছিল। পৃথিবীর ফল ফলাদি প্রায় অপরিসীম ছিল। তখন বৃক্ষ আয়তনে ও সুষমতায় অনেক গূণে সুন্দর ছিল। ইহাদের কাঠের দানা খুবই সুন্দর ছিল ও পাথরের মত মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী ছিল। স্বর্ণ, রৌপ্য ও দামী পাথর যথেষ্ট পরিমাণে ছিল । PPBeng 53.1
মানব জাতি তাদের আগেকার শক্তি অনেকাংশই বহাল রাখতে পেরেছিল । অনেক দৈত্যতুল্য মানুষ তাদের জ্ঞানের জন্য বিখ্যাত ছিল, অত্যন্ত সুন্দর কারুকার্য তৈরীতে দক্ষ ছিল, কিন্তু তারা অন্যায় ও পাপে সহজে লিপ্ত হয়ে পড়ত। PPBeng 53.2
ঈশ্বর জল-প্লাবণের পূর্বে বসবাসকারী লোকদের অনেক অনেক বরে পূর্ণ করেছিলেন, কিন্তু ঐ সমস্ত দান তারা শুধু আত্মগৌরব বৃদ্ধিতে ব্যবহার করেছে এবং দাতার প্রতি তাদের ভালবাসা না দেখিয়ে তারা দানের প্রতি তাদের ভালবাসা দেখিয়েছে। তারা তাদের বাস গৃহ কৌশলপূর্ণ স্থাপত্যের দ্বারা সুন্দর করার জন্য একে অপরের সহিত প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। তারা কামনাপূর্ণ ও দুষ্কৃতি-পূর্ণ দৃশ্যে পরমানন্দ পেত। আর তাদের চিন্তা ভাবনায় স্থান দিতে ইচ্ছা না থাকায় তারা শীঘ্রই তার অস্তিত্ব অস্বীকার করল। তারা মানুষের প্রতিভা গৌরবান্বিত করত, নিজের হাতের কাজকে প্রশংসা করত, এবং তাদের সন্তানদিগকে মূর্তিপূজা করতে শিক্ষা দিল । PPBeng 53.3
গীতসংহিতা লেখক মূর্তির প্রশংসার ফলাফল প্রশংসাকারীদের উপর কি হল তা লিখে বর্ণনা করেছেন। “যেমন তাহারা, তেমনি হইবে তাহাদের নির্মাতারা, আর যে কেহ সে গুলিতে নির্ভর করে।” গীতসংহিতা ১১৫:৮। মানব মনের একটি রীতি হলো যে আমরা যা অবলোকন করি ধীরে ধীরে আমরা তারই মত পরিবর্তিত হয়ে যাই। যদি মনকে সাধারণ মানবতার ঊর্ধ্বে না পৌছানো হয়, যদি অপরিসীম জ্ঞান ও প্রেমের উপর ধ্যান করার জন্য ইহাকে নিযুক্ত করা না হয়, তাহলে মানুষ অনবরত অধঃপতিত হতে থাকবে। “আর ঈশ্বর দেখিলেন, পৃথিবীতে মানুষের দুষ্টতা বড়, এবং তার হৃদয়ের চিন্তার সমস্ত কল্পনা সর্বদা কেবল মন্দ।...সেই সময়ে পৃথিবী ঈশ্বরের সাক্ষাতে ভ্রষ্ট, পৃথিবী অত্যাচারে পূর্ণ ছিল।” তাঁহার ব্যবস্থা লঙ্ঘন হয়েছে, আর ফল হয়েছে সবধরণের পাপের কাজ। ন্যায় বিচারকে ধূলিস্যাৎ করা হয়েছে, এবং অত্যাচারীদের ক্রন্দন স্বর্গে ঈশ্বরের কাছে পৌছালো । PPBeng 53.4