Go to full page →

জীবন রক্ষার্থে একটি জাহাজ PPBeng 54

মহা-প্লাবনের একশত বিশ বছর আগেই ঈশ্বর নোহের নিকট তাঁর পৃথিবী ধ্বংস করার পরিকল্পনা জানালেন এবং তাকে একটি জাহাজ তৈরী করতে নির্দেশ দিলেন। ঈশ্বর পৃথিবীতে এক জলের প্লাবন আনবেন, এটা তাকে প্রচার করতে হবে। যারা এই প্রচারে বিশ্বাস আনবে এবং অনুতপ্ত হয়ে পরিবর্তন দ্বারা প্রস্তুত হবে, তারা ক্ষমা পাবে ও রক্ষা পাবে। মথুশেলহ ও তার ছেলেরা, যারা বেঁচে ছিলেন ও নোহের প্রচার শুনেছিলেন, জাহাজ নির্মাণে তারা সাহায্য করলেন । PPBeng 54.3

ঈশ্বর নোহকে জাহাজের সঠিক পরিমাপ দিলেন এবং এটি তৈরীর বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিলেন। মানুষের বুদ্ধি এ ধরণের মজবুত ও দীর্ঘ স্থায়ী একটি কাঠামো তৈরী করতে পারত না। ঈশ্বর ছিলেন নক্সা অংকনকারী আর নোহ ছিলেন দক্ষ নির্মাতা। এটা উঁচুতে তিন তালা ছিল এবং একপাশে মাত্র একটি দরজা ছিল। উপর দিক থেকে আলো আসত এবং সমস্ত কামরা এভাবে তৈরী করা হয়েছিল যে, প্রত্যেকটি আলোকিত হত। কাঠ ছিল মোচাকার বৃক্ষ অথবা গোফর কাঠ, যা শত শত বছরেও ক্ষয় পেত না । এই বৃহৎ জাহাজ তৈরী করা একটি ধীর পদ্ধতি ছিল। গাছের পরিমাপ ও কাঠের প্রকৃতির জন্য, উপযুক্ত কাঠ তৈরী করতে বর্তমান কালের চেয়ে অনেক বেশী সময়ের প্রয়োজন ছিল। কাজটিকে উপযুক্ত ও সুন্দর করার জন্য মানুষের দ্বারা যা সম্ভব সবই করা হয়েছিল। তথাপি জাহাজটি ঐ ঝড় মোকাবেলা করার মত মজবুত ছিল না। শুধু সর্বশক্তিমান ঈশ্বর এই ঝঞ্জাপূর্ণ জলে তার সন্তানদের রক্ষা করতে পারেন। PPBeng 55.1

“বিশ্বাসে নোহ, যাহা যাহা তখন দেখা যাইতেছিল না, এমন বিষয়ে আদেশ পাইয়া ভক্তিযুক্ত ভয়ে আবিষ্ট হইয়া আপন পরিবারের ত্রাণার্থে এক জাহাজ নির্মাণ করিলেন, এবং তদ্বারা জগকে দোষী করিলেন ও আপনি বিশ্বাসানুরূপ ধার্মিকতার অধিকারী হইলেন।” ইব্রীয় ১১৪৭। তার সতর্কবাণী দান করার মধ্যেই তার বিশ্বাস পাকা ও প্রকাশিত হল, ঈশ্বর যা বলেন তাতে বিশ্বাস আনার এটি ছিল একটি দৃষ্টান্ত। তার যা কিছু সম্পদ ছিল তিনি এই জাহাজ নির্মাণে তা ব্যয় করলেন। যখন তিনি জাহাজের বৃহৎ কাঠামো নির্মাণ করা শুরু করলেন, এই অদ্ভূত দৃশ্য দেখতে ও ভাববাদীর প্রচার শুনতে অসংখ্য লোক চতুর্দিক থেকে ছুটে এল । PPBeng 55.2

প্রথমে মনে হল অনেকেই সতর্কবাণী গ্রহণ করেছেন। কিন্তু সত্যিকার অনুতাপসহ তারা ঈশ্বরের দিকে ফিরল না। বিদ্যমান অবিশ্বাসের দ্বারা পরাস্ত হয়ে তারা পরিশেষে তাদের পুরাতন সাথীদের সহিত যুক্ত হল এবং গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবাণী অগ্রাহ্য করল। অনেকেরই অপরাধবোধ এসেছিল এবং সতর্কবাণী গ্রহণ করতে প্রস্তুত ছিল, কিন্তু বিদ্রূপ করার জন্য এত অধিক সংখ্যক লোক ছিল যে, তারাও সেই একই দলে যুক্ত হল, অনুগ্রহের আহ্বান অগ্রাহ্য করল, আর শীঘ্রই তারা অত্যন্ত ঘৃণাত্মক বিদ্রূপকারীদের অন্তর্গত হল। কেউ এত অধিক পাপে লিপ্ত হয় না যত অধিক লিপ্ত হয় তারা যারা একবার ঈশ্বরের আলো গ্রহণ করার পরও আবার ঈশ্বরের অভিযোগকারী আত্মাকে প্রত্যাখ্যান করে। PPBeng 55.3

ঐ প্রজন্মের লোকেরা সকলেই পৌত্তলিক ছিল না। অনেকেই নিজেকে ঈশ্বরের আরাধনাকারীরূপে মনে করত। তারা দাবী করত যে, তাদের মূর্তি ঈশ্বরের প্রতীক স্বরূপ ও এর মধ্যেই লোকেরা স্বর্গীয় ঈশ্বরের স্বচ্ছ ধারণা লাভ করতে পারে। নোহকে অস্বীকার করায় এই শ্রেণীই ছিল প্রথম আর তারা শেষ পর্যন্ত ঘোষণা করল যে, ঈশ্বরের ব্যবস্থা আর বহাল নাই, আর অবাধ্যতাকে শাস্তি দেয়া ঈশ্বরের চরিত্রের বিপরীত। নোহকে অস্বীকার করার ফলে তাদের মন এত অন্ধ হয়ে গেল যে তারা আসলেই বিশ্বাস করল নোহের বাণী শুধু মাত্র মোহ । PPBeng 56.1

সমস্ত বিশ্ব ঈশ্বর ও তাঁর ব্যবস্থার বিরুদ্ধে চলে গেল এবং নোহকে এক ধর্মান্ধ ব্যক্তি বলে ধরে নিল। পার্থিব, সম্মানিত, ও বিজ্ঞ ব্যক্তিরা বলতে লাগলেন যে, “ভয় দেখানোর লক্ষ্যেই ঈশ্বর ভয় দেখাচ্ছেন, এবং এটা কখনো বাস্তবে পরিণত হবে না। যে পৃথিবী ঈশ্বর নিজে সৃষ্টি করেছেন তার ধ্বংস ও যে জীব সৃষ্টি করেছেন তার শাস্তি কখনো বাস্তবায়িত হবে না। ভয় পাবেন না, নোহ একজন ভয়ঙ্কর ধর্মান্ধ লোক।” তারা এমন ভাবে তাদের ধর্মান্ধতা ও দুষ্কর্ম চালিয়ে যেতে থাকল যে মনে হল ঈশ্বর তার সন্তানদের কোন কথাই বলেন নি । PPBeng 56.2

কিন্তু এই ঝড়ের মধ্যেও নোহ একটি পাথরের মত দাঁড়িয়ে রইলেন। ঈশ্বরের সাথে যুক্ত থাকায় অসীম শক্তিতে তিনি শক্তিশালী হলেন । এক'শ বিশ বসর যাব তখনকার প্রজন্মের কানে ঐ সকল বিষয়ে তার সতর্কবাণী উচ্চারিত হতে থাকল যা, মানুষের জ্ঞানে বিচার-বিবেচনা করা অসম্ভব ছিল। PPBeng 56.3

তখন পর্যন্ত কোন বৃষ্টি হয়নি; পৃথিবী কুয়াশা দ্বারা সিঞ্চিত হতো। নদী কোন দিন সীমা অতিক্রম করেনি বরং তাদের জল নিরাপদে সমুদ্রে পৌঁছে দিয়েছে। নির্ধারিত আদেশ জলকে তীরদেশ ভাসিয়ে দেয়া হতে নিবৃত করেছে । ইয়োব ৩৮:১১ দেখুন । PPBeng 56.4

কিন্তু কাল বয়ে গেল; যে মানুষদের হৃদয় এক সময় ভয়ে কম্পিত হয়ে উঠেছিল তারা আবার নিশ্চিত বোধ করতে লাগল । তারা যুক্তি ও চিন্তা করল যে প্রকৃতি প্রকৃতির ঈশ্বরের চেয়ে বড়। যদি নোহের বাণী সত্যি হয় তবে প্রকৃতি ও তার নির্দিষ্ট পথ হতে বিচ্যুত হয়ে পড়বে। সতর্ক বাণী উচ্চারণের পূর্বে যেভাবে জীপন যাপন করছিল সেই একই ভাবে জীবন যাপনের মাধ্যমে তারা ঈশ্বরের প্রতি তাদের ঘৃণা প্রকাশ করল । তারা তাদের আনন্দ উৎসব ও প্রচুর ভোজন পান অব্যাহত রাখল । তারা পানাহারে ব্যস্ত থাকল । তারা বল্ল যে যদি নোহ যা বলেছিলেন তাতে কোন সত্য থাকত তবে নিশ্চয়ই বিখ্যাত লোক জ্ঞানী, বুদ্ধিমান, ও মহৎ-লোকেরা এ বিষয়ে বুঝতে পারতেন । PPBeng 57.1

তাদের বিচারকালের সময় শেষ হতে চলেছিল। যেভাবে ঈশ্বর নির্দেশ দিয়েছিলেন সে ভাবেই জাহাজের প্রত্যেক অংশ নির্মাণ করা হল এবং মানুষ ও প্রাণীর জন্য খাদ্য একত্রিত করা হল। আর এখন ঈশ্বরের সন্তান তার শেষ গুরু-গম্ভীর অনুরোধ জানালেন। তিনি অনুরোধ করলেন যে সময় থাকতে তারা যেন কোন আশ্রয় খুঁজে নেয়। আবারও তারা তার কথা অগ্রাহ্য করল এবং তাকে বিদ্রূপ করল । PPBeng 57.2

অকস্মাৎ পর্বত ও জঙ্গল হতে নানা রকমের প্রাণী আসতে দেখা গেল, এবং এগুলো ধীর গতিতে জাহাজের ভিতরে প্রবেশ করতে লাগল । সব রকমের পাখি চতুর্দিক হতে এসে সুশৃঙ্খল ভাবে জাহাজে প্রবেশ করল। সব রকম জীব- জন্তু জোড়া জোড়া জাহাজে নোহের নিকট প্রবেশ করল, শুচি প্রাণী সাত জোড়া করে প্রবেশ করল । দার্শনিকদের ডাকা হল যেন তারা ঐ ঘটনার ব্যাখ্যা দেন, কিন্তু তারা বিফল হলেন। অভিশপ্ত জাতি আনন্দ উল্লাস করে তাদের হৃদয়ের ভয়কে দূর করার জন্য আনন্দে মেতে উঠল, মনে হল যেন ঈশ্বরের জাগরিত ধ্বংসকে তারা আমন্ত্রণ জানাচ্ছে । PPBeng 57.3

ঈশ্বর নোহকে আদেশ করলেন, “তুমি সপরিবারে জাহাজে প্রবেশ কর, কেননা এই কালের লোকদের মধ্যে তোমাকেই ধার্মিক দেখিয়াছি।” তার প্রভাব ও দৃষ্টান্ত তার পরিবারের জন্যও অনুগ্রহ বয়ে আনল। ঈশ্বর তার সহিত তার পরিবারের সকলকে রক্ষা করলেন। PPBeng 57.4