Go to full page →

ঈর্ষার ভূত শৌলের হৃদয়ে প্রবেশ করে PPBeng 473

শৌল তার হৃদয়কে ঈর্ষার আত্মা দ্বারা পূর্ণ করলেন ও তার আত্মা তিক্ততায় পরিপূর্ণ হল । ইস্রায়েলের রাজা তার ইচ্ছাকে অসীম ঈশ্বরের ইচ্ছার বিরুদ্ধে চালনা করছিলেন। ক্রোধে সম্পূর্ণ অভিভূত হয়ে না পড়া পর্যন্ত তিনি তার আবেগকে তার বিচারবুদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে দিলেন। মাঝে মাঝে তার মধ্যে প্রচন্ড ক্রোধের সৃষ্টি হতো যখন তিনি, যে কেউই তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে চলতে সাহস পাবে, তাকে হত্যা করতে প্রস্তুত ছিলেন। আর ঐ প্রচন্ড ক্রোধ হতে তিনি আবার নৈরাশ্য ও আত্ম-ঘৃণায় ডুবে যেতেন; আর তখন অনুতাপ তার আত্মাকে বশ করে ফেলে। PPBeng 473.2

তিনি দায়ূদের বীণা-বাজানো শুনতে খুবই ভালবাসতেন, আর তখন মনে হত যে ভূত তার কাছ থেকে দূরে সরে গেছে। একদিন যখন যুবক (দায়ূদ) মধুর কন্ঠে ঈশ্বরের বাণী পেশ করছিলেন ও সাথে সাথে বীণায় অপূর্ব সুর লহরী সৃষ্টি করছিলেন, তখন শৌল সহসা তার হাতের বড়শা বাদ্যকারের দিকে ছুড়ে মারলেন । দায়ূদকে ঈশ্বর রক্ষা করলেন ও তিনি ক্রোধে উন্মাদ ঐ রাজার কাছ থেকে পালিয়ে গেলেন। PPBeng 473.3

দায়ূদের প্রতি শৌলের ঘৃণা যখন বাড়তে লাগল তখন তিনি তাকে হত্যা করার সুযোগ অনুসন্ধান করতে লাগলেন, কিন্তু ঈশ্বরের অভিষিক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে তার কোন পরিকল্পনাই কার্যকারী হল না। দায়ূদ তাঁর উপর নির্ভর করতেন যিনি উদ্ধার করতে সক্ষম। “সদাপ্রভুকে ভয় করাই প্রজ্ঞার আরম্ভ” (হিতোপদেশ ৯:১০), এবং দায়ূদ সর্বদা প্রার্থনা করতেন যেন তিনি ঈশ্বরের সামনে সরল ও সঠিক পথে চলতে পারেন । PPBeng 473.4

লোকেরা এটি অনুধাবন করতে বিলম্ব করল না যে দায়ূদ একজন দক্ষ লোক ছিলেন। যে সকল দায়িত্ব তাকে দেয়া হত তা জ্ঞান ও দক্ষতার সহিত সম্পন্ন হত। যুবকের পরামর্শ অনুসারে চলা নিরাপদ ছিল, কিন্তু শৌলের পরামর্শ মাঝে মাঝে নির্ভরযোগ্য ছিল না ৷ PPBeng 473.5

শৌল দায়ূদকে ভয় করতেন কেননা এটা প্রমাণিত হয়েছিল যে ঈশ্বর তার সঙ্গে সঙ্গে আছেন। রাজা বুঝতে পারলেন যে দায়ূদের জীবন তার প্রতি একটি তিরস্কারস্বরূপ, কারণ তুলনামূলক ভাবে তার চরিত্র ত্রুটিপূর্ণ ছিল। ঈর্ষা শৌলকে আরো পীড়া দিতে লাগল। এই ঈর্ষা আমাদের পৃথিবীতে কত অবর্ণনীয় দুঃখের অবতারণা করেছে। ঈর্ষা গর্ব হতে জাত, আর যদি এটিকে হৃদয়ে পোষণ করা হয় তবে পরিশেষে এটা হত্যা করতে উদ্বুদ্ধ করে। PPBeng 474.1

রাজা সর্বদাই দায়ূদ কর্তৃক এমন একটি অবিবেচনার কাজের সন্ধানে থাকলেন যাতে যুবককে হত্যা করা সম্ভব হবে কিন্তু তথাপি তার এই মন্দ কাজের জন্য জাতির নিকট দোষী প্রমাণিত হবেন না। তিনি দায়ূদকে পলেষ্টীয়দের বিরুদ্ধে আরো সাহস-পূর্ণ যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য পরামর্শ দান ও বিনিময়ে তার জ্যেষ্ঠা কন্যাকে তার সাথে বিয়ে দেয়ার প্রতিজ্ঞার মাধ্যমে দায়ূদের বিরুদ্ধে একটি ফাঁদ পাততে চাইলেন। কিন্তু এই প্রস্তাবের বিপরীতে দায়ূদের উত্তর ছিল, “আমি কে, এবং আমার প্রাণ কি, ইস্রায়েলের মধ্যে আমার পিতার গোষ্ঠিই বা কি যে, আমি রাজার জামাতা হই?” তার ঐ মেয়েকে অন্য একজনের সাথে বিবাহ দানের মাধ্যমে রাজা তার অবিশ্বস্তার প্রমাণ দিলেন। PPBeng 474.2

একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক শত্রুকে হত্যা করার বিনিময় দায়ূদের সহিত শৌল তার ছোট মেয়ে মীখলকে বিবাহ দিতে রাজী হলেন। “শৌল মনে করিলেন, পলেষ্টীয়দের হাত দ্বারা দায়ূদকে বধ করা যাইবে।” কিন্তু দায়ূদ যুদ্ধ হতে বিজয়ীরূপে ফিরে এলেন এবং রাজার জামাতা হতে পারলেন। PPBeng 474.3

“পরে শৌলের কন্যা মীখল দায়ূদকে প্রেম করিতে লাগিলেন।” আর ক্রোধান্বিত রাজা তখন আরো নিশ্চিত হলেন যে এই সেই ব্যক্তি যে তার পর রাজা হবে। সমস্ত ভনিতা ত্যাগ করে তিনি তার দরবারের কর্মচারীদের আজ্ঞা দিলেন যেন যে ব্যক্তিকে তিনি ঘৃণা করেন তারা তার জীবন হরণ করে। জাতির সম্মান এবং জীবন রক্ষার জন্য দায়ূদ কি কি করেছিলেন, এবং ঈশ্বর তাদের শত্রুদিগকে তাড়ানোর জন্য যাকে ব্যবহার করেছিলেন তাকে হত্যাকারীর অপরাধ যে কি জঘণ্য হতে পারে, সে সকলই যোনাথন রাজার নিকট উপস্থাপন করলেন । তাতে রাজার বিবেক জেগে উঠল। “এবং শৌল দিব্য করিয়া বলিলেন, জীবন্ত ঈশ্বরের দিব্য, সে হত হইবে না।” দায়ূদকে রাজার দরবারে আনা হল আর তিনি অতিতের মতই রাজার সেবা করতে লাগলেন । PPBeng 474.4