স্বর্গীয় শাসনাধীন প্রজারূপে ঈশ্বর মানুষকে নিয়মের অধীনে স্থাপন করলেন। ঈশ্বর মানুষকে আজ্ঞা লঙ্ঘন করার ক্ষমতা বিহীনরূপে সৃষ্টি করতে পারতেন; তিনি আদমকে নিষিদ্ধ ফল স্পর্শ করা থেকে বিরত রাখতে পারতেন; কিন্তু তা হলে মানুষ শুধুমাত্র একটি যান্ত্রিক বস্তুতে পরিণত হত। বেছে নেবার স্বাধীনতা ছাড়া তার বাধ্যতা তখন জোরপূর্বক আদায় করা হত। ঐ ধরণের একটি কার্য্যক্রম ঈশ্বরের পরিকল্পনার বৈপরিত্যে হত, জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন জীব মানুষের অযোগ্য হত, এবং প্রশাসন স্বেচ্ছাচারীতামূলক বলে শয়তানের যে অভিযোগ তারই প্রমাণ স্বরূপ হত । PPBeng 21.3
ঈশ্বর মানুষকে ন্যায় পরায়ণরূপে সৃষ্টি করেছিলেন, তার মন্দের প্রতি কোন প্রবণতা ছিল না। তিনি তার কাছে যত শক্তিশালী সম্ভব তত উপস্থাপন করলেন যেন স হতে পারে। চিরন্তন সুখের এবং জীবন বৃক্ষের অধিকার লাভ করার শর্ত ছিল বাধ্যতা । PPBeng 22.1
আমাদের প্রথম পিতা মাতার গৃহ একটি আদর্শ গৃহ হবার কথা ছিল, কারণ তাদের সন্তানেরা যখন পৃথিবী পরিপূর্ণ করত তখন সেই আদর্শ হত তাদের উদাহরণ। গর্বিত মানুষ তাদের জাঁকাল এবং অত্যন্ত ব্যয় বহুল প্রাসাদের উল্লাস করে এবং তাদের হাতের তৈরী কাজের গর্ব করে, কিন্তু ঈশ্বর আদমকে একটি উদ্যানে রেখেছিলেন। এটি ছিল এক সর্বকালীন শিক্ষা- প্রকৃত আনন্দ, গর্ব এবং বিলাসিতা চরিতার্থ করার মধ্যে পাওয়া যায় না, কিন্তু ঈশ্বরের সৃষ্ট কাজের মাধ্যমে তাঁর সহিত যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে পাওয়া যায়। গর্ব এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণ করা কখনো সম্ভব হয় না, কিন্তু যারা প্রকৃত জ্ঞানী তারা ঈশ্বর যে সকল জিনিষ প্রত্যেকের নাগালের মধ্যে রেখেছেন তারই মধ্যে আরাম ও আনন্দ খুঁজে পায় । PPBeng 22.2
এদনের অধিবাসীদের উদ্যানের যত্ন নেবার ভার অর্পিত হয়েছিল, “কৃষি কাজ ও যত্নের জন্য” । ঈশ্বর শ্রমকে মানুষের জন্য একটি আশীর্বাদস্বরূপ করলেন, যেন তার মন এতে নিবদ্ধ থাকে, যেন তার দেহ শক্তিশালী হয়, আর যেন তার কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পায়। আদমের পবিত্র অস্তিত্বের মধ্যে মানসিক ও দৈহিক কর্ম একটি অত্যন্ত আনন্দকর বিষয় ছিল। যদিও ক্লান্তি ও কষ্টপূর্ণ তথাপি যারা পরিশ্রমকে একটি অভিশাপ মনে করেন, তারা একটি ভ্রান্তির মধ্যে রয়েছেন। ধনীরা শ্রমজীবিদের অবহেলার চোখে দেখেন, কিন্তু ইহা ঈশ্বরের মানুষ সৃষ্টির লক্ষ্যের বিপরীত-মুখী । PPBeng 22.3
আদমকে অলস হতে দেয়া যাবে না। আমাদের স্রষ্টা, যিনি মানুষের আনন্দের জন্য কি প্রয়োজন তা জানেন। আদমকে তার করণীয় কাজ দিয়েছিলেন। জীবনের প্রকৃত আনন্দ শুধু মাত্র কার্য্যে রত পুরুষ ও মহিলারাই উপভোগ করেন। স্রষ্টা স্থবিরতা আনয়নকারী আলস্যের জন্য কোন স্থান নিরুপণ করেন নি । PPBeng 22.4
পবিত্র দম্পতি শুধুমাত্র ঈশ্বরের পিতৃসুলভ যত্নে পালিত সন্তানই ছিলেন না, তারা সর্বজ্ঞানী স্রষ্টার নিকট অধ্যয়নরত ছাত্রও ছিলেন। স্বর্গ দূতগণ তাদের নিকটে আসতেন এবং তাদের স্বীয় স্রষ্টার সহিত যোগাযোগ করার অনুমতি দেয়া হত আর তখন তাদের মধ্যে কোন আড়ালকারী পর্দাও থাকত না। জীবন বৃক্ষ দ্বারা দত্ত শক্তিতে তারা প্রাণবন্ত ছিলেন, এবং তাদের বুদ্ধিমত্তা শুধু মাত্র দূতদের চেয়ে অল্প নীচুমানের ছিল। অসীম আকার-দানকারী ও সমস্ত বিন্দুর ধারণ-কর্তা প্রকৃতির সমস্ত রীতি নীতিই তাদের মনের নিকট খুলে, তুলে ধরেছিলেন। মহাশক্তিশালী সামুদ্রিক দানব হতে শুরু করে অতি ক্ষুদ্র বিন্দুব সূর্য্যরশ্মীতে ঘুরে উড়েবেড়ান পোকা পর্য্যন্ত সমস্ত প্রাণীর সহিতই আদম পরিচিত ছিলেন । তিনি এদের প্রত্যেকটির নামাকরণ করেছিলেন, তিনি তাদের প্রত্যেকটির প্রকৃতি ও অভ্যাসের সহিত পরিচিত ছিলেন। বনের প্রত্যেকটি পল্লবে, প্রত্যেকটি উজ্জ্বল তারকাতে, পৃথিবীতে, বাতাসে এবং আকাশে, সমস্ত কিছুতেই ঈশ্বরের নাম লিখিত ছিল। সৃষ্টির শৃঙ্খলা ও ঐক্যতান অনন্ত জ্ঞান ও ক্ষমতার কথা প্রকাশ করত । PPBeng 22.5
যতদিন তারা স্বর্গীয় আজ্ঞার বাধ্য থাকবেন, ততদিন তারা অনবরত নূতন নূতন জ্ঞানের আকরের সন্ধান পাবেন, নূতন নূতন আনন্দের নূতন নূতন জ্ঞানের ফোয়ারা আবিষ্কার করবেন, এবং ঈশ্বরের অপরিমেয় ও অক্ষয় প্রেমের স্বচ্ছতর ধারণা অনবরত লাভ করতে থাকবেন । PPBeng 23.1