ঈশ্বর মাতাপিতাকে কার্য্য দিয়াছেন, যেন তাঁহারা ঐশ্বরিক আদর্শে তাঁহাদের সন্তানসন্ততিগণের চরিত্র গঠন করেন। ঈশ্বরের অনুগ্রহে তাঁহারা এই কার্য্য সম্পাদন করিতে পারেন ; কিন্তু ইচ্ছাকে পরিচালিত করিতে ও মনের উত্তেজনাকে দমন রাখিতে যেমন দৃঢ়তার ও স্থির-সঙ্কল্পের প্রয়োজন, ইহা সাধন করিতেও তেমনি ধৈর্য্যের ও কষ্টসহ চেষ্টার প্রয়োজন। পতিত জমিতে কেবল কণ্টকবৃক্ষ ও শেঁয়ালকাটা জন্মে। ব্যবহারের কিংবা সৌন্দর্য্যের জন্য যে কেহ শস্য সংগ্রহ করিবে, তাহার প্রথমেই ক্ষেত্র প্রস্তুত করিতে ও বীজ বপন করিতে হইবে, পড়ে ক্ষুদ্র অঙ্কুরগুলির চতুর্দ্দিকে খনন করিতে, আগাছা বাছিয়া ফেলিতে ও ভূমি নরম করিতে হইবে, তাহা হইলে বহুমূল্য চারাগাছগুলি বর্দ্ধিত হইয়া যত্নের ও পরিশ্রমের বিনিময়ে প্রচুর ফল উৎপন্ন করিবে। CCh 490.4
মানব জাতিকে যে সকল কার্য্য দেওয়া হইয়াছে, চরিত্র গঠন কার্য্য তাহাদের মধ্যে সর্ব্বাপেক্ষা প্রয়োজনীয়। আর এক্ষণে উহার উৎকর্ষ সাধন যত আবশ্যক হইয়া পড়িয়াছে, পুর্ব্বে কখনও সেরূপ ছিল না। পুর্ব্বের কোন বংশই এরূপ গুরুতর বিষয়ের সম্মুখীন হয় নাই ; অধুনা যেরূপ মহা বিপদের সম্মুখীন হইতেছে, পুর্ব্বে কখনও কোন যুবক-যুবতীর সেরূপ বিপদের সম্মুখীন হইতে হয় নাই। 26CG 169; CCh 491.1
চরিত্র-বল দুইটী জিনিষের উপরে নির্ভর করে, যথা- ইচ্ছা শক্তি ও আত্ম-দমনের শক্তি। চরিত্র-বলের পরিবর্ত্তে প্রবল অদম্য কামরিপুগণের বশবর্ত্তী হইয়া বহু যুবকযুবতী ভুল করিয়া থাকে। কিন্তু ইহা সত্য যে, যে কেহ কাম-রিপুর বশবর্ত্তী হয়, সে-ই দুর্ব্বল। মনোবৃত্তিগুলি দমনের শক্তির উপরেই মানুষের প্রকৃত মহত্ত্ব ও গৌরব পরিমিত হয়, কিন্তু মনোবৃত্তিগুলির যে শক্তি দ্বারা সে দমিত বা পরাজিত হয়, তদ্দ্বারা নহে। যে কেহ প্রবৃত্তিকে দমনে রাখে ও শত্রুকে ক্ষমা করে, সে তিরস্কারে মনক্ষুণ্ণ হইলেও প্রকৃত বলবান। এইরূপ লোকেরাই প্রকৃত বীর। CCh 491.2
সন্তানেরা কি হইতে পারে, তৎসম্বন্ধে অনেকের সামান্যই ধারণা থাকায়, তাহারা চিরকালই খর্ব্ব ও সঙ্কীর্ণ থাকিয়া যায়, - যখন তাহারা ঈশ্বর-দত্ত ক্ষমতার উন্নতি সাধন করতঃ চরিত্রবান হইয়া খীষ্টের নিমিত্ত আত্মালাভার্থে প্রভাব বিস্তার করিতে পারে। জ্ঞানই শক্তি ; কিন্তু হৃদয়ের সততা ব্যতীত মানসিক শক্তি শয়তানের শক্তি। CCh 491.3
ঈশ্বর আমাদিগকে মানসিক ও নৈতিক শক্তি দিয়াছেন, কিন্তু বহুলাংশে প্রত্যেক ব্যক্তিই আপন চরিত্রের নির্ম্মাতা। প্রতিদিনই চরিত্র-গঠন-কার্য্য চলিতেছে। আমরা কি ভাবে গাঁথিতেছি, তদ্বিষয়ে সতর্ক থাকিবার জন্য আমাদের গাঁথনি কার্য্য যেন শাশ্বত প্রস্তরের উপরে স্থাপিত হয়, তদ্বিষয়ে মনোযোগী থাকিবার জন্য, ঈশ্বরের বাক্য আমাদিগকে চেতনা দিতেছে। সময় আসিতেছে, যখন আমাদের কার্য্য সকল যেমন আছে, ঠিক্ তেমনি প্রকাশিত হইবে। এই জগতে কার্য্যোপযোগী হইবার ও পর জগতে উন্নততর জীবনের জন্য চরিত্র গঠন করিবার নিমিত্ত ঈশ্বর-দত্ত ক্ষমতার উন্নতি সাধনার্থে এখনই সময়। CCh 491.4
যত অনাবশ্যকই হউক না কেন, চরিত্র গঠনার্থে জীবনের প্রত্যেক কার্য্যের প্রভাব অবধারিত। জাগতিক ধনসম্পত্তি অপেক্ষা সচ্চরিত্র অধিকতর মুল্যবান। মানবগণ যত উন্নততম কার্য্যে নিযুক্ত হইতে পারে, চরিত্রগঠন কার্য্য তন্মধ্যে সর্ব্বশ্রেষ্ঠ। CCh 492.1
ঘটনাচক্রে পড়িয়া যে স্বভাব গঠিত হয়, তাহা পরিবর্ত্তনীয় ও অসঙ্গত, বহুল পরিমাণে অসঙ্গত বা প্রতিকূল ভাবাপন্ন। এই সকলের অধিকারী যাহারা, তাহাদের জীবনে কোন উচ্চ লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নাই। অন্যের স্বভাবের উপরে তাহাদের কোন মর্য্যাদাসম্পন্ন প্রভাব নাই। তাহারা উদ্দেশ্যহীন ও শক্তিহীন। এই জগতে আমাদিগকে যে সামান্য জীবনকাল দত্ত হইয়াছে, জ্ঞানপুর্ব্বক তাহার উন্নতি সাধন করিতে হইবে। ঈশ্বর চাহেন, যেন তাঁহার মণ্ডলী একটী জীবন্ত, উৎসর্গীকৃত ও কর্ম্ম তৎপর মণ্ডলী হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের লোকেরা সমষ্টিগত ভাবে এক্ষণে ইহা হইতে বহুদূরে পড়িয়া রহিয়াছে। যাহারা প্রকৃত ও ন্যায়ের জন্য অবিচলিত প্রভাব দেখাইবে, ঈশ্বর সেইরূপ বলবআন, সাহসী, কর্মঠ ও জীবন্ত খ্রীষ্টীয়ানদিগকে চাহিতেছেন। অতীব প্রয়োজনীয় ও পবিত্র সত্যসমূহ পবিত্র ধনের ন্যায় প্রভু আমাদের হস্তে অর্পণ করিয়াছেন ; অতএব আমাদের কর্ত্তব্য, নিজ নিজ জীবনে ও স্বভাবে এই সকলের প্রভাব দেন। 274T 656, 657; CCh 492.2