এই অধ্যায়টা প্রেরিত ২৮:১১—৩১ ও ফিলীমনের প্রতি পত্রের ওপর ভিত্তি করে লেখা।
সমুদ্রযাত্রা চালু হলে পরে, শতপতি ও তার বন্দিরা রোমের পথে যাত্রা করলেন। যমজ—দেব নামে একটা আলেক্সান্দ্রিয় জাহাজ পশ্চিমে যাবার পথে মিলিতায় শীতকাল যাপন করবার জন্য ভিড়িয়েছিল, আর এই জাহাজে যাত্রীরা উঠল। যদিও বিপরীত বাতাসে কিছুটা দেরী হয়ে গেল, যাত্রা নিরাপদে শেষ হল, আর জাহাজ ইতালীর পূতিয়লী নামে একটা সুন্দর বন্দরে নঙ্গর ফেলল। AABen 373.1
এই জায়গায় কয়েকজন খ্রীষ্টিয়ান থাকতো, শতপতির দেওয়া সদয় সুযোগে প্রেরিতকে তারা সাত দিন তাদের সঙ্গে রেখে আপ্যায়িত করলেন। পৌলের রোমীয়দের প্রতি পত্র পাবার পর থেকে ইতালীর খ্রীষ্টিয়ানেরা আগ্রহের সঙ্গে প্রেরিতের আগমনের অপেক্ষায় ছিল। তারা তাকে কারাবন্দিরূপে আসতে দেখবে বলে চিস্তা করেনি, কিন্তু তার যন্ত্রনা তাদের কাছে তাকে আরো প্রিয় করে তুলল। AABen 373.2
পূতিয়লী থেকে রোমের দূরত্ব একশ চল্লিশ মাইল হওয়ায়, আর মহানগরীর সঙ্গে সমুদ্র বন্দরের সার্ববক্ষণিক যোগাযোগ থাকায়, রোমীয় খ্রীষ্টিয়ানেরা পৌলের নিকটবর্তী হবার সংবাদ পেতে থাকলো, আর অনেকে তার সঙ্গে দেখা করে তাকে অভ্যর্থনা করবার জন্য রওনা হয়ে গেল। AABen 373.3
জাহাজ থেকে নামার অষ্টম দিনে শতপতি ও তার বন্দিরা রোমের দিকে যাত্রা করলো। যুলিয় তার ক্ষমতায় থাকা সব রকম সুযোগ সুবিধা প্রেরিতকে দিতে ইচ্ছুক ছিলেন, কিন্তু তিনি তার বন্দিত্বের অবস্থা পরিবর্তন করতে পারেন না, বা তার রক্ষী সেনার সঙ্গে বাঁধা শেকল মুক্ত করতে পারেন না। ভারাক্রান্ত হৃদয়ে পৌল তার বহু আকাঙ্খিত পৃথিবীর সহানগরীর দিকে যাবার জন্য অগ্রসর হলেন। তিনি যাদের কাছ থেকে আশা করেছিলেন তাদের একি ভিনড়ব অবস্থা ! রোমে অনেক আত্মা লাভের আশা তার কাছে মনে হল নিরাশায় পর্যবসিত হতে যাচ্ছে। AABen 373.4
অবশেষে যাত্রীরা রোম থেকে চল্লিশ মাইল দূরে অপ্পিয়ের হাটে পোঁছলো। বড় রাজপথে ভীড় করা জনতার মধ্যে দিয়ে যাবার সময়,একদল কঠিন চেহারার অপরাধীদের সঙ্গে, শুভ্র কেশ বৃদ্ধকে নিদারুণ ঘৃণাভরে দেখে অনেক কঠোর ও টিটকারীর বিষয়বস্তু হয়ে পড়লেন। AABen 374.1
বন্দির গলা জড়িয়ে ধরল, অনেক দিনের অনুপস্থিত পিতাকে পেয়ে পুত্র যেমন অভ্যর্থনা করে, তেমনি চোখের জলের সাথে উল্লাস করতে করতে সে তাকে জড়িয়ে ধরছিল। এই দৃশ্য পুনরাবৃত্ত হচ্ছিল, যেমন তাদের প্রেমের প্রত্যাশার চোখে তারা শৃঙ্খলাবদ্ধ বন্দিকে চিনতে পারলো, যিনি করিন্থে, ফিলিপীতে, ও ইফিষে, তাদের কাছে জীবনদায়ী বাক্য বলেছেন। AABen 374.2
উষ্ণহৃদয়ের শিষ্যেরা যখন তাদের সুসমাচারের পিতার চারিদিকে আগ্রহের সঙ্গে জড়ো হচ্ছিল, তখন পুরো দলটা থেমে গেল। সেনারা দেরীর জন্য অধৈর্য হয়ে পড়ছিল, কিন্তু তারা কিছু বলতে পারছিল না কারণ তারাও তাদের বন্দিকে সম্মান করতে ও উচ্চমূল্য দিতে শিখেছিল। সেই বিধ্বস্ত, ব্যথা ভারাক্রান্ত চেহারায় শিষ্যেরা খ্রীষ্টের প্রতিমূর্তি প্রতিফলিত দেখতে পেল্ ; তারা পৌলকে আস্বস্ত করলযে যে তারা তাকে ভুলে যায়নি বা ভালবাসতে ভুলে গিয়েছে ; যে আনন্দের প্রত্যাশা যা তাদের জীবনকে উদ্দীপিত করেছে আর ঈশ্বরে শান্তি প্রদান করেছেতার জন্য তারা তার কাছে ঋণী। তারা যদি সুযোগ পেত, তাহলে তারা তার প্রতি ভালবাসার আবেগের তীব্রতায় কাঁধে তুলে নিয়ে নগরে যাবার পুরো রাস্তা বয়ে নিয়ে যেতো। AABen 374.3
ভ্রাতৃগণকে দেখে পৌল যা বলেছিলেন লূকের কথার মর্ম্মার্থ কেউই বুঝতে পারেনি, “পৌল ঈশ্বরের ধন্যবাদ করিয়া সাহস প্রাপ্ত হইলেন।” ক্রন্দনরত, সমবেদনা জ্ঞাপনকারী বিশ্বাসীদের দল, যারা তার শৃঙ্খলে লজ্জিত ছিল না, তাদের মধ্যে দাঁড়িয়ে প্রেরিত উচ্চৈস্বরে ঈশ্বরের প্রশংসা করলেন। দুঃখের যে মেঘ তার মনোবলের ওপর ভর করেছিল তা দূরীভূত হল। তার খ্রীষ্টিয় জীবনে তিনি অনেক দুঃখ—কষ্ট যন্ত্রনা ও নিরুৎসাহিতার মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন, কিন্তু এই মূহূর্তে তিনি অনুভব করলেন যে তা প্রচুরভাবে পরিশোধ করা হল। দৃঢ় পদক্ষেপ ও উঃফুল্ল হৃদয়ে তিনি তার পথ চলা সুরু করলেন। তিনি অতীতের জন্য বচসা করবেন না, বা ভবিষ্যতের জন্য ভয় পাবেন না। তিনি জানতেন, শৃঙ্খল ও নির্যাতন তাক্ষ জন্য অপেক্ষা করছিল, কিন্তু তিনি এ—ও জানতেন যে তাকে আরো অনেক বেশী ভয়ানক বন্দিত্ব থেকে আত্মাগণকে মুক্ত করতে হবে, আর তিনি খ্রীষ্টের জন্য তার দুঃখ—কষ্টে আনন্দ করলেন। AABen 374.4
রোমে যুলিয় শতপতি সম্রাটের রক্ষীদের প্রধানের হাতে বন্দিদের সমর্পণ করলেন। ফীষ্টের চিঠিসহ তিনি পৌল সম্পর্কে যে ভাল বিবরণ দিলেন তাতে প্রধান অধ্যক্ষ তাকে সমাদরের চোখে দেখে কারাগাওে নিক্ষেপ না করে, তাকে তার নিজের ভাড়া করা ঘরে থাকবার অনুমতি দিলেন। যদিও তখনো সব সময় একজন সেনার সঙ্গে শৃঙ্খলাবদ্ধ তিনি স্বাধীনভাবে বন্ধু—বান্ধবদের সঙ্গে দেখাসাক্ষাত করতে পারতেন আর খ্রীষ্টের কাজের অগ্রগতির জন্য কাঝ করতে পারতেন। AABen 375.1
অনেক যিহূদিদের যাদের কয়েক বছর আগে রোম থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল, তাদের ফিরে আসার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, এই জন্য সেখানে একটা বড় দলকে দেখা যেত। তার শত্রুরা এদের মন বিষিয়ে দেবার সুযোগ পাবার আগে এদের কাছে, প্রথমত, পৌল সিদ্ধান্ত নিলেন যে, তিনি তার নিজের ও তার কাজের সম্পর্কে সব কথা উপস্থাপন করবেন। সুতরাং, রোমে আসার তিন দিন পরে, AABen 375.2
তিনি তাদের প্রধান প্রধান লোকদের ডেকে বন্দি হয়ে রোমে আসার কারণ সরল ও সোজাসুজি ভাবে ব্যক্ত করলেন। AABen 375.3
তিনি বললেন, “হে ভ্রাতৃগণ, আমি যদিও স্বজাতীয়দের কিম্বা পৈতৃক রীতিনীতির বিরুদ্ধে কিছুই করি নাই, তথাপি যিরূশালেম হইতে প্রেরিত বন্দিরূপে রোমীয়দের হস্তে সমর্পিত হইয়াছিলাম। আর তাহারা, আমার বিচার করিয়া প্রাণদন্ডের যোগ্য কোন দোষ না পাওয়াতে, আমাকে মুক্তি দিতে চাহিয়াছিল ; কিন্তু যিহূদীরা প্রতিবাদ করায় আমি কৈসরের কাছে আপীল করিতে বাধ্য হইলাম ; স্বজাতীদের উপরে দোষারোপ করিবার কোন কথা যে আমার ছিল, তাহা নয়। সেই কারণ আমি আপনাদের সহিত সাক্ষাৎ ও কথোপকথন করিবার জন্য আপনাদিগকে আহ্বান করিলাম ; কারণ ইস্রায়েলের প্রত্যাশা হেতুই আমি শৃঙ্খলে বদ্ধ রহিয়াছি।” AABen 375.4
যিহূদীদের হাতে যে অপমান ও নির্যাতন তিনি ভোগ করেছিলেন ও বারংবার তাকে হত্যা করবার যে ষড়যন্ত্র তারা করেছিল, সে সম্পর্কে তিনি কিছুই বলেননি। তার কথাগুলো সদয় ও সাবধানতার সঙ্গে উচ্চারিত হয়েছিল। তিনি ব্যক্তিগত দৃষ্টি আকর্ষণ বা সহানুভূতি কুড়ানোর জন্য এসব বলছিলেন না, কিন্তু সত্যকে সুরক্ষা ও সুসমাচারের সম্মানকে সমুজ্জ্বল রাখার জন্য বলছিলেন। AABen 376.1
উত্তরে, তার শ্রোতারা বলল যে তারা প্রকাশ্যে বা ব্যক্তিগত চিঠির মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ পায়নি, আর যে সব যিহূদীরা রোমে এসেছে তাদের কেউই তার সম্পর্কে কোন অপরাধের দোষারোপ করেনি। তারা নিজেরা খ্রীষ্টের প্রতি তার বিশ্বাসের কারণগুলো শুনবার গভীর আগ্রহ প্রকাশ করলো। তারা বলল, “এই দলের বিষয়ে আমরা জানি যে, সর্ববত্র লোকে ইহার বিরুদ্ধে কথা বলিয়া থাকে।” AABen 376.2
যেহেতু তারা ইচ্ছা প্রকাশ করেছে, সেহেতু, পৌল তাদের একটা দিন নিরূপণ করতে বললেন , যেদিন তিনি তাদের কাছে সুসমাচারের সত্য উপস্থাপন করতে পারবেন। নিরুপিত দিনে অনেকে এক সাথে উপস্থিত হল, “তাঁহাদের কাছে তিনি প্রাতঃকাল অবধি সন্ধ্যা পর্য্যন্ত ব্যাখ্যা করিয়া ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয় সাক্ষ্য দিলেন, এবং মোশির ব্যবস্থা ও ভাববাদিগণের গ্রন্থ লইয়া যীশুর বিষয়ে তাঁহাদিগকে বুঝাইতে চেষ্টা করিলেন।” তিনি তার নিজের অভিজ্ঞতার কথা বললেন, সহজ, আন্তরিক, ও ক্ষমতার সঙ্গে পুরাতন নিয়ম শাস্ত্র থেকে যুক্তি উপস্থাপন করলেন। AABen 376.3
প্রেরিত দেখালেন যে, আচার অনুষ্ঠান, পর্বাদি পালন,ধর্মমত, তত্বাদি মিলিয়ে ধর্ম হয় না। তাই যদি হতো, তাহলে সাধারণ মানুষ অনুসন্ধান করে জানতে পারতো, যেমন সে জাগতিক বিষয়সকল জানতে পারে। পৌল দেখালেন যে ধর্ম একটা কার্যকর, ত্রাণকারী শক্তি, ঈশ্বরের কাছ থেকে সম্পূর্ণ একটা নীতিমালা, অন্তরের ওপর ঈশ্বরের নতুনীকরণের শক্তির একটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। AABen 376.4
তিনি দেখালেন মোশি কিভাবে ইস্রায়েলকে খ্রীষ্টের দিকে একজন ভাববাদিরূপে নির্দেশ করলেন যাঁর কথা তাদের শুনতে হবে ; কিভাবে সব ভাববাদিরা তাঁকে পাপ থেকে মুক্তি পাবার জন্য ঈশ্বরের সর্বোত্তম নিরাময়, সেই নিষ্পাপ ব্যক্তি, যিনি অপরাধীর পাপ বহন করবেন, তাঁর বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছে। তিনি তাদের অনুষ্ঠানদি ও অনুষ্ঠান পদ্ধতির কোন দোষ খুঁজে পাননি, কিন্তু তাদের দেখালেন যে, যখন তারা শাস্ত্রীয় ভজনপূজনাদির পদ্ধতি কঠোর সঠিকতা বজায় রাখে, তখন তারা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করে যিনি এই সব পদ্ধতির প্রতিক। AABen 376.5
পৌল বললেন যে তিনি তার মনপরিবর্তনের আগে খ্রীষ্টকে জানতেন, ব্যক্তিগত পরিচয়ে নয়, কিন্তু অন্যান্যদের মত কল্পনায় অনাগত মশীহের চরিত্র ও কাজ সম্পর্কে ধারণ করেছিলেন। তিনি নাসারতীয় যীশুকে একজন ভন্ড বলে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন কারণ তিনি তার কল্পনা পূর্ণ করেননি। কিন্তু এখন খ্রীষ্টের প্রতি ও তার কাজের প্রতি তার ধারণা অনেক আধ্যাত্মিক ও সমুনড়বত কারণ তিনি এখন পরিবর্তীত। প্রেরিত দৃঢ়রূপে ঘোষনা করলেন যে, তিনি খ্রীষ্টকে মাংসে উপস্থাপন করেননি। হেরোদ খ্রীষ্টকে মানুষ থাকাকালে দেখেছেন ; হানন তাঁকে দেখেছেন ; পীলাত ও যাজকেরা ও শাসনকর্তারা তাঁকে দেখেছেন ; রোমীয় সেনারা তাঁকে দেখেছে। কিন্তু তারা তাঁকে বিশ্বাসের চোখ দিয়ে দেখেননি ; তারা তাঁকে গৌরবান্বিত ত্রাণকর্তারূপে দেখেননি। তিনি যেভাবে এই পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন সেভাবে তাঁর সঙ্গে পরিচিত হওয়া অপেক্ষা, বিশ্বাসে খ্রীষ্টকে উপলব্ধি করা, তাঁর সম্বন্ধে আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জ্জন করা বেশী কাম্য। মামূলী জাগতিক ও মানবিক বন্ধুত্ব অপেক্ষা, পৌল এখন খ্রীষ্টের সঙ্গে যে একাত্মতা উপভোগ করছিলেন তা অনেক বেশী ঘনিষ্ট ও দীর্ঘস্থায়ী। AABen 377.1
পৌল যা কিছু জানতেন, তিনি নাসারতীয় যীশুকে ইস্রায়েলের প্রত্যাশারূপে যা কিছু দেখেছেন, তার সাক্ষ্য দিলেন, যারা সঃ ভাবে সত্য অনে¦ষণ করছিলেন তারা দৃঢ় বিশ্বাস লাভ করলেন, কিছু কিছু মনের ওপর, অন্তত, তার কথাগুলো কিছু ছাপ ফেলেছিল যা কখনো মুছে যাবার মত না। কিন্তু যখন পবিত্র আত্মা দ্বারা বিশেষভাবে আলোকিত একজন তা তাদের কাছে উপস্থাপন করলেন তখন অন্যরা গোঁড়ামী বশতঃ শাস্ত্রের সহজ সাক্ষ্য গ্রহণ করতে অস্বীকার করলেন। তারা তার যুক্তি খন্ডন করতে পারলো না,কিন্তু তারা তার উপসংহার গ্রহণ করতে অস্বীকার করলেন। AABen 377.2
য়িরূশালেমের যিহূদীরা বন্দির বিরূদ্ধে অভিযোগ উপস্থাপন করতে স্বশরীরে আসার আগে ও পৌল রোমে উপস্থিত হবার পরে বেশ কয়েক মাস কেটে গেল। তারা অতীতে বার বার তাদের পরিকল্পনায় ব্যর্থ হয়েছে ; আর এখন যেহেতু পৌল রোমীয় সম্রাজ্যের সর্বোচ্চ আদালতে বিচারিত হবে, তাই তাদের আর একবার পরাজিত হবার ঝুঁকি নেবার ইচ্ছা ছিল না। লূসিয়, ফীলিক্স, ফীষ্ট,ও আগ্রিপ্প সবাই তার নির্দোষীতার ওপর বিশ্বাস ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু তার শত্রুরা একমাত্র ষড়যন্ত্র করে সম্রাটকে তাদের পক্ষে নিয়ে এলেই সাফল্য আশা করতে পারে। দেরী, তাদের উদ্দেশ্যকে দূরে নিয়ে যাবে, আর তাদের পরিকল্পনা ত্রুটিমুক্ত করে পেশ করতে সময় লাগবে, তাই তারা প্রেরিতের বিরূদ্ধে স্বশরীরে অভিযোগ উপস্থাপিত করতে কিছু সময় অপেক্ষা করলেন। AABen 377.3
ঈশ্বরের দূরদর্শিতা ও সদয় তত্বাবধানে এই দেরীর ফলে সুসমাচার প্রসারিত হরো। যারা পৌলের দায়িত্বে ছিল তাদের বদান্যতায় তিনি একটা প্রশস্তও আরামদায়ক ঘরে থাকবার অনুমতি পেলেন, যেখানে তিনি তার বন্ধু—বান্ধবদের সাথে অবাধে দেখা সাক্ষাৎ করতে পারবেন আর যারা তার কথা শুনতে আসবে প্রতিদিন তাদের কাছে সত্য উপস্থাপন করতে পারবেন। এইভাবে দুবছর ব্যাপী তিনি পরিশ্রম করে গেলেন, “এবং যত লোক তাঁহার নিকটে আসিত, সকলকেই গ্রহণ কিেরয়া সম্পূর্ণ সাহসপূর্ববক ঈশ্বরের রাজ্যের কথা প্রচার করিতেন, এবং প্রভু যীশু থ্রীষ্টের বিষয়ে উপদেশ দিতেন, কেহ তাঁহাকে বাধা দিত না।” AABen 378.1
তিনি বিভিনড়ব দেশে যে সব মন্ডলী স্থ্াপন করেছিলেন, এ সময়ে সেগুলো ভুলে যাননি। নতুন বিশ্বাসে বিশ্বাসীদের যে সব বিপদের আশঙ্কা থাকে তা বুঝতে পেরে, প্রেরিত যতদূর সম্ভব সতর্কবাণীপূর্ণ পত্র ও ব্যবহারিক শিক্ষা দিয়ে তাদের প্রয়োজন মিটাবার চেষ্টা করেছেন। আর তিনি রোম থেকে উৎসর্গীকৃত কার্যকারীদের পাঠিয়েছেন সুুধু এই কটা মন্ডলীতেই না কিন্তু সেই সব ক্ষেত্রে, কাজ করতে যে সব ক্ষেত্রে তিনি নিজে যেতে পারেননি। এই সব কার্যকারীরা , বিজ্ঞ মেষপালকের মত, যে সব মন্ডলী পৌল প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, সে সব মন্ডলীর কাজ শক্তিশালী করেছেন ; আর প্রেরিত তাদের সঙ্গে সেই সব মন্ডলীর অবস্থা ও বিপদ সম্পর্কে সার্বক্ষণিক সংবাদ আদান প্রদান করতেন, আর এই ভাবে সব কিছুর ওপর সুষ্ঠু তদারকি করতেন। AABen 378.2
এইভাবে, আপাতদৃষ্টিতে সক্রিয় কাজ থেকে যখন বিচ্ছিনড়ব, তখন পৌল আগের বছরঘুলোতে যেমন মুক্তভাবে মন্ডলীগুলোর মধ্যে যাতাযাত করতেন, এখন তারচেয়েও বেশী বিস্তৃত ও বেশী স্থাযী প্রভাব বিস্তার করতে পারছেন। সদাপ্রভুর একজন বন্দিরূপে তার ভ্রাতৃগণের প্রেমের বন্ধন দৃঢ়তর ছিল ; তিনি যখন তাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে ছিলেন, তার চেয়ে, খ্রীষ্টের জন্য একজন বন্দিরূপে তার লেখা কথাগুলো বেশী আাগ্রহ ও সম্মান অর্জ্জন করেছিল। পৌলকে তাদের কাছ থেকে সরিয়ে না নেওয়া পর্যন্ত বিশ্বাসীরা উপলব্ধিই করতে পারেনি তাদের জন্য তিনি কতভারী বোঝা বহন করেছিলেন। এর আগে তারা ভীষণ ভাবে দায়িত্ব ও রোঝাবহন এড়িয়ে গিয়েছেন কারণ তাদের তার জ্ঞান, কৌশল, ও অদম্য শক্তির অভাব ছিল ; কিন্তু এখন তাদের অবহেলায় পরিত্যাগ করা শিক্ষামালা শিখবার জন্য তাদের অনভিজ্ঞতার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ; তারা তার ব্যক্তিগত কাজের মূল্য না দিলেও তার সতর্কবাণী, উপদেশ, ও নির্দেশাবলি ধরে রেখেছিল। আর তারা যখন তার দীর্ঘ করাবাসের সময়ের সাহস ও বিশ্বাসের কথা জানতে পারলো তখন খ্রীষ্টের কাজের জন্য তাদের বিশ্বাস ও উদ্যোগ অতিমাত্রায় বেড়ে গেল। AABen 378.3
রোমে পৌলের সহকারীদের মধ্যে অনেকেই তার পূর্বেকার বন্ধু—বান্ধব ও সহকর্মী ছিলেন। লূক, “সেই প্রিয় চিকিঃসক,” যিনি যিরূশালেমে যাত্রার সময়, কৈসরিয়ায় দুবছর কারাবাসের সময়, ও রোমে আসার বিপজ্জনক যাত্রায় তার সেবা করেছেন, তিনি তখনো তার সঙ্গে ছিলেন। তীমথিয়ও তার প্রাণ জুড়াবার জন্য সেবা করেছেন, “প্রভুতে প্রিয় ভ্রাতা, বিশ্বস্ত পরিচারক ও সহদাস যে তুখিক,” মহত্বের সঙ্গে প্রেরিতের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। দীমা ও মার্ক তার সঙ্গে ছিলেন। আরিষ্টার্খ ও ইপাফ্রা তার “সহবন্দি,“ও কলসীয় ৪:৭—১৪ পদ, তার সঙ্গে ছিলেন। AABen 379.1
মার্কের বিশ্বাসী হবার প্রাথমিক বছরগুলোর চেয়ে এখন তার খ্রীষ্টিয় অভিজ্ঞতা গভীরতর হয়েছে। তিনি যখন খ্রীষ্টের জীবন ও মৃত্যু সম্পর্কে গভীর ভাবে পড়তে থাকলেন, তখন তিনি ত্রাণকর্তার এ জগতে আসার উদ্দেশ্য, কষ্ট ও দ্ব›দ্ব সম্পর্কে পরিষ্কার ভাবে দেখতে পেলেন। খ্রীষ্টের হাতে ও পায়ে ক্ষতের দাগ মানবতার জন্য তাঁর সেবার চিহ্ন, ও নিরুদ্দিষ্ট ধ্বংসোন্মুখদের উদ্ধারের জন্য আত্মবঞ্চনায় যে দীর্ঘ সময় ব্যয়িত হয়েছে, তা অধ্যয়ন করে, মার্ক প্রভুর আত্মত্যাগের পথ অনুসরণ করতে ইচ্ছুক হয়েছিলেন। এখন, বন্দি পৌলের অবস্থার সহভাগি হয়ে, আগে কোনো দিন যা বুঝতে পারেননি তা ভাল ভাবে বুঝতে পারলেন যে, খ্রীষ্টকে জয় করা অসীম লাভ, পৃথিবীকে জয় করা আর যাকে উদ্ধারের জন্য খ্রীষ্টের রক্ত পাতিত হয়েছিল তাকে হারানো অসীম ক্ষতি। ভয়ানক পরীক্ষা ও প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে, মার্ক একজন বিজ্ঞ ও পৌলের প্রিয় সাহায্যকারীরূপে অনড় ছিলেন। AABen 379.2
দীমা কিছুদিন অনড় ছিলেন, পরে খ্রীষ্টের কাজ পরিত্যাগ করেন। এ ব্যাপারে উল্লেখ করতে গিয়ে পৌল লিখেছেন, “দীমা বর্ত্তমান যুগ ভালবাসাতে আমাকে ত্যাগ করিয়াছে।” ২ তীমথিয় ৪:১০ পদ। জাগতিক লাভের জন্য দীমা বহু উচ্চ ও সম্মানজনক পুরস্কার বিনিময় করলো। কেমন অদূরদর্শী বিনিময় ! কেবল জাগতিক ধন—দৌলত বা সম্মানের অধিকারী হয়ে, দীমা অবশ্য গরীবই ছিল, তবুও সে অনেক কিছু গর্ব করে নিজের বলতে পারতো ; কিন্তু মার্ক, খ্রীষ্টের জন্য কষ্ট স্বীকার বেছে নিয়ে অনন্ত ধনরাশির অধিকারী হল, স্বর্গে তাকে একজন আইনসম্মত উত্তরাধিকারী ও তাঁর পুত্রের সহ—উত্তরাধিকারী গণ্য করা হল। AABen 380.1
রোমে পৌলের কাজের ফলে যারা তাদের হৃদয় ঈশ্বরকে দিয়েছিল, ওনীষিমঃ তাদের একজন, সে একজন পৌত্তলিক ক্রীতদাস ছিল, যে তার প্রভু, কলসীয়ার একজন খ্রীষ্টিয়ান বিশ্বাসী, ফিলীমনের প্রতি অন্যায় আচরণ করেছিল, আর পালিয়ে রোমে চলে এসেছিল। পৌল তার অন্তরের আন্তরিকতা বশতঃ পলাতক বেচারার দারিদ্র ও দুর্দশা লাঘবের চেষ্টা করলেন আর তারপর তার অন্ধকারময় মনের ওপর সত্যের আলো ফেলবার চেষ্টা করলেন। ওনীষিমঃ জীবনদায়ী বাক্য শুনলো, তার পাপসকল স্বীকার করলো, আর খ্রীষ্টের বিশ্বাসে পরিবর্তীত হলো। AABen 380.2
ওনীষিমঃ তার কর্তব্যনিষ্ঠা ও আন্তরিকতা দিয়ে পৌলের কাছে অতি প্রিয় হয়ে উঠলেন, প্রেরিতের সুখ—স্বাচ্ছন্দের প্রতি তার সেবা যত্ন ও সুসমাচার প্রচারে তার উৎসাহে কোন ঘাটতি ছিল না। পৌল তার চরিত্রে কতগুলো দিক দেখেছিলেন যা সুসমাচার প্রচার কাজের জন্য প্রয়োজনীয় সাহায্যকারীরূপে সহায়ক হতো, আর তিনি তাকে দেরী না করে ফিলীমনের কাছে ফিরে গিয়ে তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা করতে উপদেশ দিলেন। সে ফিলীমনের কাছ থেকে যত অর্থ চুরি করেছিল, প্রেরিত নিজে তার দায়িত্ব নেবেন বলে প্রতিজ্ঞা করলেন। এশিয়া মাইনরের বিভিনড়ব মন্ডলীতে তুখিককে চিঠি নিয়ে পাঠাবার সময়, তিনি ওনীষিমকেও তার সঙ্গে পাঠালেন। যে মনিবের কাছে সে অন্যায় করেছে তার কাছে নিজেকে এই ভাবে সমর্পিত করা এই দাসের পক্ষে খুব কঠিন একটা পরীক্ষা ছিল, কিন্তু সে সত্যিই পরিবর্তিত হয়েছে, আর সে তার কর্তব্য থেকে একটুও বিচ্যুত হয়নি। AABen 380.3
পৌল ওনীষিমকে ফিলীমনের কাছে লেখা একটা চিঠির বাহক করলেন, যে চিঠিতে তিনি তার স্বাভাবিক কৌশল ও সদাশয়তা দিয়ে, প্রেরিত এই অনুতপ্ত ক্রীতদাসের বিষয়ে অনুরোধ করলেন আর একটা ইচ্ছা প্রকাশ করলেন যেন ভবিষ্যতে তার কাজ বহাল থাকে। একজন বন্ধু ও সহকর্মীরূপে সাদর সম্বোধন করে চিঠিটা আরম্ভ হয়েছিল: AABen 381.1
“আমাদের পিতা ঈশ্বর ও প্রভু যীশু খ্রীষ্ট হইতে অনুগ্রহ ও শান্তি তোমাদের প্রতি বর্ত্তুক। আমি আমার প্রার্থনাকালে তোমার নাম উল্লেখ করিয়া সর্ববদা আমার ঈশ্বরের ধন্যবাদ কারিয়া থাকি, কেননা তোমার যে প্রেম ও যে বিশ্বাস প্রভু যীশুর প্রতি ও সমস্ত পবিত্র লোকের প্রতি আছে, সে কথা শুনিতে পাইতেছি ; আমাদের মধ্যে বিদ্যমান সমস্ত উত্তম বিষয়ের জ্ঞানে যেন তোমার বিশ্বাসের সহভাগিতা খ্রীষ্টের উদ্দেশে কার্য্যসাধক হয়।” পৌল ফিলীমনকে মনে করিয়ে দিলেন যে প্রতিটা ভাল উদ্দেশ্য ও চরিত্রের বৈশিষ্ট যা তার মধ্যে আছে তা সে খ্রীষ্টের অনুগ্রহে লাভ করেছে ; একমাত্র এইটাই তাকে বিকৃতমনা ও পাপীদের থেকে ভিনড়বতর করেছে। সেই একই অনুগ্রহ হীনচরিত্রের অপরাধীকে ঈশ্বরের সন্তান ও সুসমাচারের সহায়ক কার্যকারী তৈরী করতে পারে। AABen 381.2
পৌল ফিলীমনকে তার খ্রীষ্টিয় দায়িত্ব সম্পর্কে প্ররোচিত করতে পারতেন ; কিন্তু তিনি তার বদলে সনির্বন্ধ অনুরোধের ভাষা ব্যবহার করলেন: “বৃদ্ধ পৌল, এবং এখন আবার খ্রীষ্ট যীশুর বন্দি— আমি নিজ বৎসের বিষয়ে, বন্ধন—দশায় যাহাকে জন্ম দিয়াছি, সেই ওনীষিমের বিষয়ে তোমাকে বিনতি করিতেছি। সে পূর্বেব তোমার অনুপযোগী ছিল, কিন্তু এখন তোমার ও আমার, উভয়ের উপযোগী।” AABen 381.3
ওনীষিমর মনপরিবর্তনের দৃষ্টিতে, পৌল ফিলীমনকে অনুরোধ করলেন যেন তিনি তার অনুতপ্ত ক্রীতদাসকে তার নিজের সন্তানের মত গ্রহণ করেন, তাকে এমন সেড়বহ প্রদর্শন করেন যেন তিনি তার পূর্বেকার মনিবের কাছে থাকতে ইচ্ছা করেন, “পুনরায় দাসের ন্যায় নয়, কিন্তু দাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির প্রিয় ভ্রাতার ন্যায় ;” তিনি ওনীষিমকে নিজের কাছে রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, যিনি তার এই বন্দিদশায় তাকে সেবা দিতে পারবেন, হয়তো ফিলীমন যেমন করতেন, কিন্তু যতক্ষণ ফিলীমন নিজে এই ক্রীতদাসকে মুক্ত না করেন, তিনি তার সেবা গ্রহণ করতে পারছিলেন না। AABen 381.4
পৌল খুব ভাল ভাবে জানতেন কিভাবে মনিবেরা তাদের দাসদের ওপর নিষ্ঠুর আচরণ করেন, আর তিনি এ কথাও জানতেন যে তার দাসের আচরণে ফিলীমন খুব ক্রোধান্বিত হয়েছিলেন। তিনি তার কাছে এমন ভাবে লেখার চেষ্টা করলেন যাতে খ্রীষ্টিয়ানরূপে তার গভীরতম ও কোমলতম অনুভূতি উজ্জীবিত হয়। ওনীষিমের মনপরিবর্তন তাকে বিশ্বাসী ভ্রাতায় পরিণত করেছিল, আর এই নতুন বিশ্বাসীর ওপর কোনো রকম শাস্তি আরোপ করা হলে তা পৌলের নিজের ওপর আরোপ করা হচ্ছে বলে মনে হবে। AABen 382.1
পৌল স্বেচ্ছায় ওনীষিমের ঋণ বহন করবার প্রস্তাব দিলেন যেন দোষী ব্যক্তি শাস্তির অপমান থেকে রেহাই পায়, আর তার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া সুযোগ—সুবিধাগুলো আবার ভোগ করতে পারে। তিনি ফিলীমনের কাছে লিখলেন, “অতএব যদি আমাকে সহভাগী জান, তবে আমার তুল্য বলিয়া তাহাকে গ্রহণ করিও। আর যদি সে তোমার প্রতি কোন অন্যায় করিয়া থাকে, কিম্বা তোমার কিছু ধারে, তবে তাহা আমার বলিয়া গণ্য কর ; আমি পৌল স্বহস্তে ইহা লিখিলাম ; আমিই পরিশোধ করিব।” AABen 382.2
অনুতপ্ত পাপীর জন্য খ্রীষ্টের প্রেমের কি এক যথাযথ উদাহরণ ! যে দাস তার মনিবের সঙ্গে প্রতারণা করেছে তার ক্ষতিপূরণ দেবার মত কিছুই ছিল না। যে পাপী বছরের পর বছর ঈশ্বরকে সেবা করা চুরি করেছে তার এমন কিছু নাই যা দিয়ে সে এই ঋণ মুছে ফেলতে পারে। যীশু ঈশ্বর ও পাপীর মধ্যস্ত হয়ে দাঁড়িয়ে বলেন, আমি এই ঋণ পরিশোধ করব,পাপীকে ছেড়ে দেও ; আমি তার বদলে কষ্ট স্বীকার করব। AABen 382.3
ওনীষিমর ঋণ গ্রহণ করবার প্রস্তাব দেবার পরে, পৌল ফিলীমনকে স্মরণ করিয়ে দিলেন যে তিনি নিজে প্রেরিতের কাছে কত বড় একটা ঋণে ঋণী। তিনি তার জীবনের জন্য তার কাছে ঋণী ছিলেন, যে হেতু ঈশ্বর পৌলকে তার মনপরিবর্তনের সহায়ক করেছিলেন। তারপরে তিনি কোমল, আন্তরিক আবেদনে ফিলীমনের কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ করলেন যে তার বদান্যতার জন্য “পবিত্রগণের প্রাণ জুড়াইয়াছে,” এখন তাকে এই আনন্দ দান করে “তুমি খ্রীষ্টে আমার প্রাণ জুড়াও।” “তোমার আজ্ঞাবহতায় দৃঢ় বিশ্বাস আছে বলিয়া তোমাকে লিখিলাম ; যাহা বলিলাম তুমি তদপেক্ষাও অধিক করিবে, ইহা জানি।” AABen 382.4
মনিব ও দাসের মধ্যকার সম্পর্কে সুসমাচারের প্রভাব, ফিলীমনের কাছে পৌলের পত্র তা প্রদর্শন করে। রোমীয় সম্রাজ্যে ক্রীতদাস প্রথা একটা প্রতিষ্ঠিত বিধান ছিল, পৌল যে সব মন্ডলীতে কাজ করেছেন তার অধিকাংশ মন্ডলীতে প্রভু ও দাস উভয়ই পাওয়া যেত। নগরগুলোতে, অনেক সময় স্বাধীন লোকদের অপেক্ষা ক্রীতদাসদের সংখ্যায় বেশী দেখা যেত, আর এদের বশ করে রাখার জন্য অনেক নিষ্ঠুর আইনের প্রয়োজন পড়তো। একজন বিত্তশালী রোমীয়র সব শ্রেণীর, সব দেশের, সব রকম গুণাবলি বিশিষ্ট শতাধিক ক্রীতদাস থাকত। এই সব নিঃসহায় ব্যক্তিদের দেহ মন ও আত্মার ওপর তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকায়, তারা তাদের ওপর যথাইচ্ছা নির্যাতন চালাতে পারতো। যদি তাদের একজন আত্মরক্ষা বা প্রতিবাদ করতে একটা হাত মনিবের দিকে তুলতো, তা হলে নিয়ম লঙ্ঘনকারীর পুরো পরিবারকে হয়তো অমানবিক ভাবে হত্যা করা হত। সামান্যতম ভুল, দুর্ঘটনা, বা অসাবধানতার জন্য প্রায়ই নির্মম ভাবে শাস্তি দেওয়া হতো। AABen 383.1
কোন কোন মনিব তাদের দাসদের প্রতি অন্যদের থেকে বেশী মানবিক, বেশী প্রশ্রয় দানকারী ছিলেন ; কিন্তু বিত্তশালী ও উচ্চবংশীয়দের বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠেরা অবাধে ভোগ, লালসা, ও ক্ষুধায় গা ভাসিয়ে দিত, আর তাদের ক্রীতদাসদের খেয়ালী, প্রজাপীড়নের শিকার করতো। পুরো AABen 383.2
ব্যবস্থাটা আশাহীন ভাবে নিমড়বমুখে চলছিল। AABen 383.3
সমাজের প্রতিষ্ঠিত ধারা হঠাৎ বদলিয়ে ফেলা প্রেরিতের কাজ ছিল না। তা করার চেষ্টা করলে সুসমাচারের সফলতা বাধাগ্রস্ত হতো। কিন্তু তিনি কতগুলো নীতিমালা শিখিয়েছিলেন যা ক্রীতদাস প্রথার ভিত্তিমূলে আঘাত হেনেছিল আর তা যদি কার্যকর করা হতো তা হলে তা নিশ্চয়ই পুরো প্রথাটাকে ধ্বংস করতে পারতো। তিনি বলেছেন, “আর প্রভুরই সেই আত্মা ; এবং যেখানে প্রভুর আত্মা, সেইখানে স্বাধীনতা।” ২ করিন্থীয় ৩:১৭ পদ। পরিবর্তীত হলে , ক্রীতদাস খ্রীষ্টের দলের সদস্য হয়,আর যদি তাই হয় তবে তাকে ভাইর মত ভালবাসতে হবে আর তার সঙ্গে সেই রকম আচরণ করতে হবে, সুসমাচারের সব রকম সুযোগ—সুবিধায় ও ঈশ্বরের আশীর্ববাদ লাভে তার মনিবের সহভাগি হবে। অন্যদিকে দাসেরা তাদের কর্তব্য পালন করবে, “মনুষ্যের তুষ্টিকরের ন্যায় চাক্ষুষ সেবা না করিয়া, বরং খ্রীষ্টের দাসের ন্যায় প্রাণের সহিত ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করিতেছ বলিয়া, মনুষ্যের সেবা নয়, বরং প্রভুরই সেবা করিতেছ বলিয়া, প্রণয় ভাবেই দাস্যকর্ম্ম কর।” ইফিষিয় ৬:৬ পদ। খ্রীষ্টধর্ম মনিব ও ক্রীতদাস, রাজা ও প্রজা, সুসমাচারের পুরোহিত ও অতিশয় নিচ পাপী, যে খ্রীষ্টের মাধ্যমে পাপ থেকে শুচী হয়েছে, সবার মধ্যে দৃঢ় বন্ধন তৈরী করে। তারা একই রক্তে ধৌত, একই আত্মা দ্বারা পুনরুজ্জিবিত আর তাদের খ্রীষ্ট যীশুতে এক করা হয়েছে। AABen 383.4