প্রেরিত পিতরের পরবর্তী পরিচর্যা কাজ সম্পর্কে প্রেরিত পুস্তকে সামান্যই উল্লেখ রয়েছে। পঞ্চাশত্তমীর দিনে পবিত্র আত্মা অবতরণের পর পরিচর্যা কাজের ব্যস্ততম বছরগুলোতে তিনি সেই সকল প্রেরিতদের সঙ্গে ছিলেন যারা বার্ষিক উৎসবসমূহে উপাসনা করার জন্য যিরূশালেমে আগত যিহূদীদের কাছে সুসমাচার পৌঁছে দেবার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন। AABen 432.1
ক্রুশের সুখবর প্রচারকদের দ্বারা যিরূশালেমে এবং অন্যান্য স্থানে যেভাবে বিশ্বাসীর সংখ্যা বহুল পরিমাণে বৃদ্ধি পাচ্ছিল তাতে আদি খ্রীষ্টিয় মণ্ডলীতে পিতরের বিশেষ দক্ষতার যে বর্ণনাতীত অবদান ছিল তা প্রমাণিত। নাসরতীয় যীশু সম্পর্কে তাঁর সাক্ষ্যের প্রভাব বহুদূর এবং চারদিকে বিস্তৃত হয়েছিল। তাঁর উপর দ্বিগুণ দ্বায়িত্ব অর্পিত হয়েছিল। তিনি অবিশ্বাসীদের সামনে মসীহ্ সম্পর্কে ইতিবাচক সাক্ষ্য তুলে ধরেছিলেন, তাদের খ্রীষ্ট ধর্মে দীক্ষিত করার জন্য আন্তরিকভাবে পরিশ্রম করেছিলেন এবং একই সময়ে তিনি বিশ্বাসীদের জন্য বিশেষ কার্য সাধন করেছিলেন, খ্রীষ্টিয় বিশ্বাসে তাদের শক্তিশালী করেছিলেন। AABen 432.2
পিতর নিজেকে অস্বীকার করার পর এবং ঐশ্বরিক ক্ষমতার উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করার পর মেষপালক হিসেবে পরিচর্যা করার জন্য আহ্বান তিনি গ্রহণ করেছিলেন। পিতর নিজেকে অস্বীকার করার পূর্বে খ্রীষ্ট তাঁকে বলেছিলেন, “আর তুমিও একবার ফিরিলে পর তোমার ভ্রাতৃগণকে সুস্থির করিও।” লূক ২২:৩২। এই কথাগুলো বিস্তৃত এবং সার্থক কাজের অর্থ প্রকাশ করে যা এই প্রেরিত পরবর্তী সময় সেই সমস্ত লোকদের জন্য কাজ করেছিলেন যারা বিশ্বাস করেছিল। এই কাজের জন্য পিতরের নিজের পাপ এবং দুঃখভোগ ও অনুতাপের অভিজ্ঞতা তাঁকে প্রস্তুত করেছিল। খ্রীষ্টের উপর বিশ্বাসীদের নির্ভর করার প্রয়োজনীয়রা জানবার জন্য তাঁকে তাঁর দুর্বলতাগুলো উপলব্ধি করতে সক্ষম হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়নি। পরীক্ষার ঝড়ের মধ্যে তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, একজন মানুষ কেবল মাত্র নিজের উপর আস্থাহীনতার কথা প্রকাশ করে ত্রাণকর্তার উপর নির্ভর করার মাধ্যমে নিরাপদে পথ চলতে পারে। AABen 432.3
সাগরের তীরে শিষ্যদের সঙ্গে খ্রীষ্টের শেষ সাক্ষাতের সময় পিতরকে পুনরুক্ত তিনটি প্রশ্নব করার মাধ্যমে যাচাই করেছিলেন, “তুমি কি আমাকে প্রেম কর?” (যোহন ২১:১৫—১৭), এর মাধ্যমে বারো জনের মধ্যে তাঁর স্থান পুনঃস্থাপিত হয়েছিল। তাঁর কাজে তাঁকে নিযুক্ত করা হয়েছিল; তাঁকে প্রভুর মেষপাল চরাতে হয়েছিল। আর এখন পরিবর্তিত এবং প্রভুর কাছে গ্রাহ্য পিতর খোঁয়ারের বাইরে যারা আছে কেবল তাদেরকেই রক্ষা করার জন্য চেষ্টা করেননি, কিন্তু তিনি মেষদের পালক হওয়ার চেষ্টাও করেছিলেন। AABen 433.1
খ্রীষ্ট পিতরের কাছে উল্লেখ করেছিলেন যে, পরিচর্যা কার্যের কেবল মাত্র একটি শর্ত হল — “তুমি কি আমাকে প্রেম কর?” এটি অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য। যদিও তিনি অন্যান্য সব কিছুর অধিকারী ছিলেন, তথাপি খ্রীষ্টের ভালবাসা ছাড়া তিনি ঈশ্বরের মেষপালের বিশ্বস্ত মেষপালক হতে পারতেন না। ভাল কাজের জন্য জ্ঞান, মঙ্গল সাধনের জন্য সঙ্কল্প, বাগ্মিতা, উৎসাহ, আগ্রহ এই সব কিছুই অপরিহার্য; কিন্তু হৃদয়ে খ্রীষ্টের ভালবাসা যদি না থাকে তবে একজন খ্রীষ্টিয়ান পরিচর্যাকারী ব্যর্থ পরিচর্যাকারী হিসাবে পরিগণিত হবেন। AABen 433.2
খ্রীষ্টের ভালবাসা কোন ক্ষণস্থায়ী আবেগ নয়, বরং এটি একটি প্রাণবন্ত মৌলিক নীতি যা হৃদয়ে স্থায়ী শক্তিরূপে প্রকাশিত হয়। যদি মেষপালকের চরিত্র এবং আচরণ এমন হয় যে, তিনি সত্যের দৃষ্টান্ত প্রদর্শন করাকে সমর্থন করছেন, তাহলে এই কাজকে তাঁর অনুমোদনের মুদ্রাঙ্ক প্রদান করবেন। মেষপালক এবং মেষ এক হয়ে যাবে, খ্রীষ্টেতে তাদের একই আশার মাধ্যমে তারা সংযুক্ত হবে। AABen 433.3
পিতরের সঙ্গে ত্রাণকর্তার আচরণের রীতি এবং তাঁর ভ্রাতৃবর্গের জন্য একটি শিক্ষা ছিল। যদিও পিতর তাঁর প্রভুকে অস্বীকার করেছিলেন, কিন্তু যে ভালবাসা যীশুকে তিনি প্রদান করেছিলেন তা কখনও স্খলিত হওয়ার নয়। বাক্য প্রচারের কাজ প্রেরিতের এমনভাবে গ্রহণ করা আবশ্যক ছিল, যাতে তিনি আজ্ঞা লঙ্ঘনকারীদের সঙ্গে ধৈর্যশীলতা, সহানুভূতি এবং ক্ষমাপূর্ণ ভালবাসার আচরণ প্রদর্শন করতে পারেন। তাঁর নিজের দুর্বলতা এবং ত্রুটিগুলো স্মরণে রেখে, খ্রীষ্ট যেভাবে তাঁর প্রতি কোমল আচরণ করেছিলেন ঠিক সেইভাবে মেষ ও মেষশাবকদের প্রতি কোমল আচরণ করে তাদের লালনপালন করার দায়িত্ব পালন করতে হয়েছিল। AABen 433.4
মানবজাতি তাদের নিজেদের মন্দতার কাছে সমর্পণ করে থাকে, তারা পরীক্ষা এবং বিপদগামী হওয়ার জন্য জোরালোভাবে প্ররোচিত হয়। তারা হৃদয়ের অবস্থা বুঝতে সক্ষম নয়; তারা এর যন্ত্রণা এবং এর ব্যথা কী তা জানে না। ভালবাসার দ্বারা তিরস্কার করলে যা কিছু আঘাতজনক সেই সব ক্ষতি আরোগ্যপ্রাপ্ত হয়, সেই সকল সতর্কবাণী যা আশার কথা বলে তা তাদের শিখতে হবে। AABen 434.1
মেষপালের লালন পালন করার যে দায়িত্ব পিতরের উপর অর্পিত হয়েছিল তা তিনি তাঁর সমগ্র পরিচর্যার ক্ষেত্রে বিশ্বস্তভাবে পালন করার জন্য মনোযোগী ছিলেন এবং এইভাবে তিনি প্রমাণ করতে পেরেছিলেন যে, ত্রাণকর্তার মধ্য দিয়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ কার্যভার এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। ইস্রায়েলের আশা, মানবজাতির মুক্তিদাতা হিসেবে নাসরতীয় যীশুকে তিনি বারবার উচ্চে তুলে ধরেছেন। প্রভুর কার্যকারীর নিয়মানুবর্তিতার অধীনে থেকে তিনি নিজের জীবনকে চালিত করেছেন। তাঁর ক্ষমতার মধ্য দিয়ে সকল উপায়ের দ্বারা তিনি বিশ্বাসীদের কার্যকর কার্যের জন্য শিক্ষা দেবার চেষ্টা করে গেছেন। তাঁর প্রভুভক্তির দৃষ্টান্ত এবং অক্লান্ত পরিশ্রম অনেক যুবককে এই প্রতিজ্ঞা করতে অনুপ্রাণিত করেছিল যে, তারা তাদের নিজেদেরকে পরিচর্যার কাজে সম্পূর্ণভাবে নিয়োজিত করবে। AABen 434.2
এইভাবে সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে শিক্ষাদাতা এবং নেতার বৃদ্ধির জন্য প্রেরিতের তৎপরতা চলতে লাগল; যদিও তিনি কখনও পরিশ্রম করতে গিয়ে তাঁর দায়িত্ব থেকে বিচ্যুত হননি, বিশেষ করে যিহূদীদের জন্য, তবুও তিনি অনেক জায়গায় তাঁর সাক্ষ্য বহন করে নিয়ে গেছেন এবং সুসমাচারের মধ্য দিয়ে অনেক লোককে বিশ্বাসে শক্তিশালী করে তুলেছিলেন। AABen 434.3
তাঁর পরিচর্যা কাজের কয়েক বছর পর পিতর “পন্ত, গালাতিয়া, কাপ্পাদকিয়া, এশিয়া ও বিথূনিয়া দেশে ছিনড়বভিনড়ব” তথা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া বিশ্বাসীদের কাছে পত্র লিখবার জন্য অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। তাঁর চিঠিতে সেই সকল বিশ্বাসীদের সাহস ও বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার জন্য অনুপ্রেরণা দানের উপায় উল্লেখ আছে, যারা শারীরিক ও মানসিক কষ্ট সহ্য করেছিল এবং যাদের নানা প্রকার পরীক্ষার মধ্য দিয়ে চালিত হবার ফলে ঈশ্বরের উপর তাদের আস্থা হারাবার আশঙ্কা ছিল, তাদের উত্তম কার্য করার জন্য অনুপ্রেরণা বিষয় তাঁর পত্রে উল্লেখ ছিল। এই পত্রগুলো যিনি লিখেছেন তিনি এমন এক ব্যক্তি যিনি খ্রীষ্টের দুঃখভোগ দেখেছেন এবং তাঁর অসীম সান্ত্বনাও লাভ করেছিলেন। তিনি এমন একজন পত্র লেখক ছিলেন যিনি সম্পূর্ণভাবে অনুগ্রহের দ্বারা পরিবর্তিত হয়েছিলেন এবং যার অনন্ত জীবনের প্রত্যাশা ছিল নিশ্চিত ও অটল। AABen 434.4
ঈশ্বরের এই প্রাচীন দাস তাঁর পত্রের একেবারে শুরুতেই তাঁর প্রভুর প্রতি প্রশংসা এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছিলেন, “ধন্য আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের ঈশ্বর ও পিতা,” তিনি উল্লেভ করেছেন, “তিনি নিজ বিপুল দয়ানুসারে মৃতগণের মধ্য হইতে যীশু খ্রীষ্টের পুনরুত্থানদ্বারা জীবন্ত প্রত্যাশার নিমিত্ত আমাদিগতে পুর্নজন্ম দিয়াছেন, অক্ষয় ও বিমল দায়াধিকারের নিমিত্ত দিয়াছেন ; সেই দায়াধিকার স্বর্গে তোমাদের নিমিত্ত সঞ্চিত রহিয়াছে এবং ঈশ্বরের শক্তিতে তোমরাও পরিত্রানের নিমিত্ত বিশ্বাস দ্বারা রক্ষিত হইতেছ, যে পরিত্রাণ শেষকালে প্রকাশিত হইবার জন্য প্রস্তুত আছে।” AABen 435.1
এই জগতে এই নিশ্চিত উত্তরাধিকারের আশার মধ্যে নতুন অনুপ্রেরণার সৃষ্টি করেছে, আদি খ্রীষ্টানরা আনন্তিদ ছিল, এবং বিভিনড়ব পরীক্ষা এবং দুঃখ কষ্টের মাঝেও তারা আনন্দিত ছিল। “ইহাতে তোমরা উল্লাস করিতেছ,” পিতর লিখেছের, “যদিও অবকাশ মতে এখন অল্পকাল নানাবিধ পরীক্ষায় দুঃখার্ত হইতেছ, যেন যে সুবর্ণ নশ্বর হইলেও অগ্নি দ্বারা পরীক্ষিত হয়, তাহা অপেক্ষায় মহামূল্য তোমাদের বিশ্বাসের পরীক্ষাসিদ্ধতা যীশু খ্রীষ্টের প্রকাশকালে প্রশংসা গৌরব ও সমাদর জনক হইয়া প্রত্যক্ষহয়: তোমরা তাঁহানে না দেখিয়া প্রেম করিনতেছ: তোমাদের বিশ্বাসের পরিনাম অর্থাৎ আত্মার পরিত্রাণ প্রাপ্ত হইতেছ।” AABen 435.2
প্রেরিতের কথাগুলো সকল যুগের বিশ্বাসীদের শিক্ষার জন্য লিখিত হয়েছিল এবং যখন “সকল বিষয়ের পরিণাম সনিড়বকট” সেই সময়ের বাসকারী সকল লোকদের জন্য এই শিক্ষাগুলো বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। তাঁর উপদেশ এবং সতর্কবাণী এবং তাঁর বিশ্বাসের বাণী ও উৎসাহ প্রদানের বিষয়টি সেই সকল ব্যক্তির জন্য প্রয়োজন যারা তাদের বিশ্বাসকে “শেষ পর্যন্ত দৃঢ় করিয়া ধারণ” করে রাখে। AABen 435.3
নিষিদ্ধ বিষয়ের দিকে মনোনিবেশ করা থেকে এবং তুচ্ছ বিষয়ের জন্য শক্তি ব্যয় করা থেকে অন্তরটা রক্ষা করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা প্রেরিত বিশ্বাসীদের শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন। শয়তানের কুপরিকল্পনার জালে ধৃত হতে চায় না তাদের অবশ্যই নিজের অন্তরকে উত্তমরূপে পাহাড়া দিয়ে রাখতে হবে; মনে অপবিত্র চিন্তার উদ্রেগ করে এমন বিষয় পাঠ করা, দেখা এবং শোনা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। আত্মার শত্রু পরামর্শ দিতে পারে এমন প্রত্যেকটি বিষয় সযতেড়ব পরিহার করতে হবে। অন্তর বিশ্বস্ত ভাবে পাহাড়া দিতে হবে, অথবা মন্দ ইচ্ছা জাগরিত করে এমন ইচ্ছাকে প্রতিহত করতে হবে এবং অন্ধকারে পরিভ্রমন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। “তোমরা আপন আপন মনের কোটি বাঁধিয়া মিতাচারী হও,” পিতর লিখেছেন, “যীশু খ্রীষ্টের প্রকাশকালে যে অনুগ্রহ তোমাদের নিকটে আনীত হইবে তাহার অপেক্ষাকে সম্পূর্ণ প্রত্যাশা রাখ...... আজ্ঞাবহতার সন্তান বলিয়া তোমরা তোমাদের পূর্বকার অজ্ঞানতার কালে অভিলাষের অনুরূপ হইও না, কিন্তু যিনি তোমাদিগকে আহবান করিয়াছে, সেই পবিত্রগণের ন্যায় আপনারাও সমস্ত আচার ব্যবহারে পবিত্র হও, কেননা লেখা আছে, তোমরা পবিত্র হইবে, কারণ আমি পবিত্র।” AABen 435.4
“তোমরা তো জান, তোমদের পিতৃপুরুষগণের সমর্পিত অলীক আচার ব্যবহার হইতে তোমরা ক্ষয়ণীয় বস্তু দ্বারা, রৌপ্য ও স্বর্ণ দ্বারা মুক্ত হও নাই, কিন্তু নির্দোষ ও নিস্কলঙ্ক মেষশাবক স্বরূপ খ্রীষ্টের বহুমূল্য রক্তদ দ্বারা মুক্ত হইয়াছ। তিনি জগৎপত্তনের আগে পূর্বলক্ষিত ছিলেন, কিন্তু কালের পরিনামে তোমাদের নিমিত্ত প্রকাশিত হইলেন; তোমরা তাঁহার দ্বারা সেই ঈশ্বরে বিশ্বাসী হইয়াছ, যিনি তাঁহাকে মৃতগণের মধ্য হইতে উঠাইয়াছেন ও গৌরব দিয়াছেন; এইরূপে তোমাদের বিশ্বাস ও প্রত্যাশা ঈশ্বরের প্রতি রহিয়াছে।” AABen 436.1
মানুষের পরিত্রাণ ক্রয় করতে রূপা ও সোনা যদি যথেষ্ট হত তাহলে তাঁর পক্ষে এটি কত সহজে সম্পাদিত হত যিনি এই কথা বলেছেন, “রৌপ্য আমারই, স্বর্ণও আমারই।” হগয় ২:৮। কিন্তু কেবল মাত্র ঈশ্বরের পুত্রের বহুমূল্য রক্ত দ্বারা পাপী মানুষ পরিত্রাণ লাভ করতে পারে। আত্মোৎসর্গের মাধ্যমে পরিত্রাণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। প্রেরিত পৌল লিখেছেন, “কেননা তোমরা আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের প্রেম জ্ঞাত আছ; তিনি ধনবান হইলেও তোমাদের নিমিত্ত দরিদ্র হইলেন, যেন তোমরা তাঁহার দরিদ্রতায় ধনবান হও।” ২ করেন্থিয় ৮:৯। খ্রীষ্ট আমাদের জন্য নিজেকে দান করেছেন যেন তিনি আমাদের সকল অধার্মিকতা থেকে মুক্ত করতে পারেন। আর পরিত্রাণের সমাপ্তিসূচক আশীর্বাদ হল, এই রকম, “ঈশ্বরের অনুগ্রহ দান তোমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টেতে অনন্ত জীবন।” রোমীয় ৬:২৩। AABen 436.2
“তোমরা সত্যের আজ্ঞাবহতায় অকল্পিক ভ্রাতৃপ্রেমের নিমিত্ত আপন আপন প্রাণকে বিশুদ্ধ করিয়াছ।” পিতর এর পর পরই লিখেছেন, “অন্তকরণে পরস্পর একাগ্র ভাবে প্রেম কর।” ঈশ্বরের বাক্য— সত্য —হল, মাধ্যম যার মধ্য দিয়ে তিনি তাঁর আত্মা এবং ক্ষমতা প্রকাশ করে থাকেন। বাক্যের প্রতি বাধ্যতা প্রয়োজনীয় যোগ্যতার ফল উৎপনড়ব করে। — ” অকপট ভ্রাতৃপ্রেম।” এই ভালবাসার সৃষ্টি হয়েছে স্বর্গে, এই ভালবাসার মহৎ উদ্দেশ্য এবং নিঃস্বার্থ কার্য সাধন করে। AABen 437.1
যখন সত্য জীবনে মূলনীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে, তখন মানুষ “ক্ষয়ণীয় বীর্য হইতে নয়, কিন্তু অক্ষয় বীর্য হইতে ঈশ্বরের জীবন্ত ও চিরস্থায়ী বাক্য দ্বারা পুনর্জাত হইয়াছে।” ঈশ্বরের বাক্যরূপে খ্রীষ্টকে গ্রহণ করার ফল হল নতুন জন্ম। যখন পবিত্র আত্মার দ্বারা ঐশ্বরীক সত্য হৃদয়ে প্রভাব ফেলে তখন নতুন চিন্তাধারা জেগে ওঠে এবং এখন পর্যন্ত যে কর্মশক্তিগুলো সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে তা ঈশ্বরের সংগে সহযোগিতা করার জন্য সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই ভাবে এটি পিতর এবং তাঁর সংগী অন্যান্য শিষ্যদের সহবর্তী ছিল। জগনের কাছে খ্রীষ্ট ছিলেন আলোর প্রকাশকারী। তাঁর দ্বারা মানুষের অন্তরে অক্ষয় বীর্য্য — ঈশ্বরের বাক্য বপিত হয়। কিন্তু মহান শিক্ষকের মহামূল্যবান অনেক শিক্ষা যাদের কাছে দেওয়া হয়েছিল তারা তখন সেই শিক্ষাগুলো বুঝতে পারেন নি। তাঁর স্বর্গারোহনের পর যখন পবিত্র আত্মা তাঁর শিক্ষাগুলো শিষ্যদের স্মরণ করিয়ে দিল তখন ঘুমন্ত চেতনা জাগরিত হল। এই সত্যগুলোর অর্থ এক নতুন প্রকাশরূপে তাদের মনে আলোকপাত করেছিল, এবং সত্য, খাঁটি এবং বিশুদ্ধ নিজের জন্য স্থান তৈরি করে নিয়েছিল। আর তখন তাঁর জীবনের চমৎকার অভিজ্ঞতা তাঁদের জীবনেও ঘটেছিল। তাঁর নিযুক্ত লোকেরা যাদের মধ্য দিয়ে বাত্য সাক্ষ্য তুলে ধরেছিল এবং তারা পরাক্রমশালী সত্য ঘোষণা করেছিল, “আর সেই বাক্য মাংশে মূর্তিমাণ হইলেনএবং আমাদের মধ্যে প্রবাস করিলেন........তিনি অনুগ্রহে এবং সত্যে পূর্ণ।” “কারন তাঁহার পূর্ণতা হইতে আমরা সকলই পাইয়াছি, আর অনুগ্রহের উপর অনুগ্রহ পাইয়াছি।” যোহন ১:১৪, ১৬। AABen 437.2
যা অনন্ত কালের জন্য কাজ করতে তাদের নিশ্চয়তা দেয় তা যথার্থ ভাবে উপলব্ধি করার জন্য প্রেরিত বিশ্বাসীদের শাস্ত্র অধ্যায়ন করার জন্য উদ্ধুদ্ধ করেছেন। পিতর উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, প্রত্যেক আত্মা যারা জটিল অবস্থা এবং পরীক্ষার অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন অবশেষে তারা বিজয়ী হতে পারবে; কিন্তু তিনি একথাও জানতেন যে যদি কেউ পবিত্র শাস্ত্র বুঝতে পারে তাহলে তা তার মনকে সেই দিকে টেনে নিয়ে যাবে যা অন্তরকে সান্তনা প্রদান করতে এবং সর্বশক্তিমানের প্রতি বিশ্বাসকে শক্তিশালী করতে সক্ষম করবে। AABen 438.1
“মর্ত্ত্যমাত্র তৃণের তুল্য,” তিনি ঘোষণা করেছেন, “ও তাহার সমস্ত কান্তি তৃণ পুষ্পের তুল্য। তৃণ শুষ্ক হইয়া গেল, এবং পুষ্প ঝড়িয়া পড়িল: কিন্তু প্রভুর বাক্য চিরকাল থাকে। আর এ সেই সুসমাচারের বাক্য, যা তোমাদের নিকটে প্রচারিত হইয়াছে। অতএব তোমরা সমস্ত দুষ্টতা ও সমস্ত ছল এবং কপটতা ও মাৎসর্য্য ও সমস্ত পরীবাদ ত্যাগ করিয়া নবজাত শিশুদের ন্যায় সেই পারমার্থিব অমিশ্রিত দুগ্ধের লালসা কর, যেন তাঁহার গুণে পরিত্রানের জন্য বৃদ্ধি পাও: যদি তোমরা এমন আস্বাদ পাইয়া থাক যে, প্রভু মঙ্গলময়।” AABen 438.2
অনেক বিশ্বাসীদের বিষয় উল্লেখ করে পিতর তার পত্রগুলো লিখেছেন, যারা পরজাতিদের মধ্যে বাস করত এবং তাদের বিশ্বাসের উর্দ্ধস্থ আহবানে স্থির থাকার জন্য সত্যের উপর নির্ভর করেছিলেন। যীশু খ্রীষ্টের অনুসারী হিসেবে তাদের যে বিশেষ অধিকার লাভ করে তার উপর প্রেরিত গুরুত্ব দিয়েছেন। “তোমরা মনোনীত বংশ,” তিনি লিখেছেন, “রাজকীয় যাজকবর্গ পবিত্র জাতি, [ঈশ্বরের] নিজস্ব প্রজাবৃন্দ, যের তাঁহারই গুণকীর্ত্তন কর, যিনি তোমাদিগকে অন্ধকার হইতে আপনার আশ্চর্য্য জ্যোতির মধ্যে আহবান করিয়াছেন: পূর্বে তোমরা প্রজা ছিলে না, কিন্তু এখন ঈশ্বরের প্রজা হইয়াছ।” AABen 438.3
“প্রিয়তমেরা, আমি নিবেদন করি, তোমরা বিদেশী এবং প্রবাসী বলিয়া মাংসিক অভিলাষ হইতে নিবৃত্ত হও, সে গুলি আত্মার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে; আর পরজাতীদের মধ্যে আপন আপন আচার ব্যবহার উত্তম করিয়া রাখ; তাহা হইলে তাহারা যে বিষয়ে দুষ্কর্মকারী বলিয়া তোমাদের পরীবাদ করে, সচক্ষে তোমাদের সৎক্রিয়া দেখিলে সেই বিষয়ে তত্বাবধানের দিনে ঈশ্বরের গৌরব করিবে।” AABen 438.4
প্রেরিত সুপষ্টভাবে আচরণ সম্পর্কে রূপরেখা প্রদান করেছেন যেন বিশ্বাসীরা মানব শাসনকর্তাদের সামনে স্থির হয়ে দাঁড়াতে সক্ষম হয়: “তোমরা প্রভুর নিমিত্ত মানব সৃষ্ট সমস্ত নিয়োগের বশীভূত হও, তিনি প্রধান; দেশাধ্যক্ষের বশীভূত হও, রাজার বশীভূত হও, তাঁহারা দূরাচারদের প্রতিফল দিবার নিমিত্ত ও সদাচারদের প্রশংসার নিমিত্ত তাঁহার দ্বারা প্রেরিত। কেনণা ঈশ্বরের ইচ্ছা এই, যেন এইরূপে সদাচারণ করিতে করিকে নির্বোধ মনুষ্যদের অজ্ঞানতাকে নিরুত্তর কর। আপনাদিগকে স্বাধীন জান; আর স্বাধীনতাকে দুষ্টতার আবরণ করিও না, কিন্তু আপনাদিগকে ঈশ্বরের দাস জান। সকলকে সমাদর কর, ভ্রাতৃসমাজকে প্রেম কর, ঈশ্বরকে ভয় কর, রাজাকে সমাদর কর।” AABen 439.1
যারা দাস তাদের উপদেশ দিয়েছেন যেন তারা তাদের মালিকদের বশীভূত থাকে, “সম্পূর্ণ ভয়ের সহিত আপন আপন স্বামীদের বশীভূত হও; কেবল সজ্জন এবং শান্ত স্বামীদের নয়, কিন্তু কুটিল স্বামীদেরও বশীভূত হও। তাহাই সাধুবাধের বিষয়।” প্রেরিত ব্যাখ্যা করে লিখেছেন, “কেনণা যদি কেহ ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে সংবেদ প্রযুক্ত অন্যায় ভোগ করিয়া দুঃখ সহ্য করে, তবে তাহাই সাধুবাদের বিষয়। বস্তুত পাপ করিয়া চপেটাঘাত প্রাপ্ত হইলে যদি তোমরা সহ্য কর তবে তাহাতে সুখ্যাতি কি? কিন্তু সদাচারণ করিয়া দুঃখভোগ করিলে যদি সহ্য কর, তবে তাহাইতো ঈশ্বরের কাছে সাধুবাদের বিষয়। কারণ তোমরা ইহারই নিমিত্ত আহূত হইয়াছ: কেননা খ্রীষ্টই তোমাদের নিমিত্ত দুঃখভোগ করিলেন, এ বিষয়ে তোমাদের নিমিত্ত এক আদর্শ রাখিয়া গিয়াছে, যেন তোমরা তাঁহার পদচিহ্নের অনুগমন কর: তিনি পাপ করেন নাই, তাঁহার মুখে কোন ছল পাওয়া যায় নাই: তিনি নিন্দিত হইলে প্রতিনিন্দা করিতেন না; দুঃখভোগ কালে তজ্জন করিতেন না, কিন্তু যিনি ন্যায় অনুসারে বিচার করেন, তাঁহার উপরে ভার রাখিতেন। তিনি আমাদের পাপভার তুলিয়া লইয়া আপনি নিজ দেহ কাষ্ঠের উপর বহন করিলেন, যেন আমরা পাপের পক্ষে মরিয়া ধার্মিকতার পক্ষে জীবিত হই, তাঁহারই ক্ষত দ্বারা তোমরা আরোগ্য প্রাপ্ত হইয়াছ। কেননা তোমরা মেষের ন্যায় ভ্রান্ত হইয়াছিলে, কিন্তু এখন তোমাদের প্রাণের পালক ও অধ্যক্ষের কাছে ফিরিয়া আসিয়াছ।” AABen 439.2
প্রেরিত স্ত্রী লোকদের উপদেশ দেন যেন তারা বিশ্বাসে কথোপকথনে এবং পোষাক পরিচ্ছদ ও আচরণে মার্জিতা হন। “তাহাদের ভূষণ হউন,” তিনি উপদেশ দিয়েছেন, “আর কেশবিন্যাস ও স্বর্ণাভরণ কিম্বা বস্ত্র পরিধানরূপ বাহ্য ভূষণ, তাহা নয়, কিন্তু হৃদয়ের গুপ্ত মনুষ্য, মৃদু ও প্রশান্ত আত্মার অক্ষয় শোভা, তাহাই ঈশ্বরের দৃষ্টিতে বহুমূল্য।” AABen 439.3
এই শিক্ষা সকল যুগের বিশ্বাসীদের জন্য প্রযোজ্য। “অতএব তোমরা উহাদের ফল দ্বারাই উহাদিগকে চিনিতে পারিবে।” মথি ৭:২০। আন্তরিক মনুষ্যের মৃদুতা এবং প্রশান্ত হৃদয় হল মহামূল্যবান। প্রকৃত খ্রীষ্টিয়ানের জীবনে বাহ্যিক ভূষণ সব সময় আন্তরিক মনুষ্যের শান্তি ও পবিত্রতার সংগে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। “কেহ যদি আমার পশ্চাদ আসিতে ইচ্ছা করে ” খ্রীষ্ট বলেছেন, “তবে সে আপনাকে অস্বীকার করুক, আপন ক্রুশ তুলিয়া লউক এবং আমার পশ্চাৎগামী হউক।” মথি ১৬:২৪। খ্রীষ্টিয়ানদের জীবনের বৈশিষ্ট্য হবে নিজেকে অস্বীকার করা এবং আত্মত্যাগ। প্রভুর উদ্ধার কার্যের জন্য যে তাঁর পথে চলে তাদের সবার পোষাকে একটা পরিবর্তন দেখা যাবে প্রমাণ স্বরূপ। যা সুন্দর তার প্রতি ভালবাসা এবং তা প্রত্যাশা করা যথার্থ; কিন্তু ঈশ্বর আমাদের কাছে এই প্রত্যাশা করেন যে, আমরা যেন প্রথমে সুন্দরকে ভালবাসি এবং তা প্রত্যাশা করি, যেন তা অক্ষয় এবং অবিনশ্বর হয়। যা, “মৃদু ও প্রশান্ত আত্মার শোভা” এবং শ্বেত শুচি মসীনা—বস্ত্র” তার সংগে তুলনা করা যেতে পারে এমন কোন বাহ্যিক পোষাক নেই, পৃথিবীর একমাত্র পবিত্রজন এই পোষাক পরিধান করবে। এভানে এই পোষাক তাদের সৌন্দ্যর্যমন্ডিত এবং প্রিয় করবে এবং পরবর্তীকালে রাজার প্রাসাদে প্রবেশের জন্য এটি তাদের প্রতীক হবে। তাঁর প্রতিজ্ঞা হল, “তাহারা শুক্ল পরিচ্ছদে আমার সহিত গমনাগমন করিবে: কেননা তাহারা যোগ্য।” প্রকাশিত বাক্য ৩:৪। AABen 440.1
ভবিষ্যতসূচক দর্শনের দ্বারা খ্রীষ্টিয় মণ্ডলীতে যে বিপদজনক সময় আসছে সেই ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে প্রেরিত বিশ্বাসীদের উপদেশ দিয়েছেন যেন তারা পরীক্ষা এবং কষ্টভোগ কালে বিশ্বাসে অটল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। “প্রিয়তমেরা,” তিনি লিখেছেন, তোমাদের পরীক্ষার্থে যে আগুন তোমাদের মধ্যে জ্বলিতেছে ইহা বিজাতীয় ঘটনা বলিয়া আশ্চর্য্য জ্ঞান করিও না।” AABen 440.2
পরীক্ষা হল শিক্ষার অংশ যা খ্রীষ্টের বিদ্যালয়ে প্রদান করা হয় যেন ঈশ্বরের সন্তানেরা জাগতিক অন্যায় অপরাধ থেকে পরিস্কৃত হতে পারে। এই জন্য ঈশ্বর তাঁর সন্তানদের কষ্টকর পরীক্ষার অভিজ্ঞতা লাভ করতে দেন। পরীক্ষা এবং প্রতিবন্ধতা হল শৃঙ্খলার জন্য তাঁর মনোনীত পদ্ধতি এবং সফলতার জন্য তাঁর নির্দ্ধারিত শত। তিনি এমন একজন যিনি, মানুষ তাঁর নিজের দূর্বলতা যতটুকু বুঝতে পারে, মানুষের অন্তরের দিকে দৃষ্টি দিয়ে তিনি আরও উত্তমরূপে তাদের দূর্বলতা বুঝতে পারেন। তিনি দেখতে পান যে, কোন কোন ব্যক্তিদর যোগ্যতা রয়েছে, যদি তা যথাযথভাবে নির্দেশনা পায় তাহলে তা তার কাজের অগ্রগতির জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। তিনি তাঁর যত্নশীলতায় এই সকল প্রাণকে ভিনড়ব ভিনড়ব অবস্থার মধ্য দিয়ে এবং বিভিনড়ব পরিবেশের মধ্য দিয়ে নিয়ে আসেন, যেন তা তাদের নিজেদের জ্ঞান থেকে গুপ্ত ছিল সেই সকল দোষ ত্রুটি গুলো তারা আবিষ্কার করতে পারে। তিনি তাদের এই সমস্ত দোষ ত্রুটিগুলোর উপর জয় লাভ করার এবং তাঁর পরিচর্য্যা করার জন্য নিজেদের যোগ্য করতে সুযোগ দেন। তিনি প্রায়ই দুঃখ কষ্টের আগুনে জ্বলবার জন্য অনুমতি দেন, যেন তারা পরিশুদ্ধ হতে পারে। AABen 440.3
তিনি চান যেন তাঁর সন্তানদের উপর কোন দুঃখ কষ্ট নেমে না আসে কিন্তু এই সব কিছু যেন তাদের বর্তমান ও চিরকালের জন্য অপরিহার্য হয়। খ্রীষ্ট যেমন জগতে তাঁর প্রচারকার্যের সময় মন্দিরকে পরিষ্কার করেছিলেনওতমনি তিনি তাঁর মণ্ডলীকেও পরিস্কার করবেন। এই সব কিছুই তিনি তার লোকদের উপরে পরীক্ষায় আনার মধ্য দিয়ে সম্পনড়ব করবেন যেন তারা গভীর ঈশ্বর ভক্তি লাভ করতে পারে এবং ক্রুশের বিজয়কে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য মহা শক্তিলাভ করতে পারে। পিতরের অভিজ্ঞতার একটি সময় ছিল যখন তিনি ক্রুশের উপর খ্রীষ্টের কাজ দেখতে অনিচ্ছুক ছিলেন। যখন ত্রাণকর্তা শিষ্যদের কাছে তাঁর আসনড়ব দুঃখভোগ এবং মৃত্যুর কথা প্রকাশ করলেন তখন পিতর অনুযোগ করে বলে উঠেঠিছলেন, “প্রভু ইহা আপনা হইতে দূরে থাকুক, ইহা আপনার প্রতি কখনো ঘটিবে না।” মথি ১৬:২২। যা খ্রীষ্টের দুঃখভোগের সংগে সহভাগিতা থেকে পশ্চাদপদ করে, যা পিতরের প্রতিবাদে ধ্বনিত হয়েছে। এটি শিষ্যের কাছে একটি তিক্ত শিক্ষা ছিল এবং একজন, তিনি যা শিখেছিলেনবটে তবে তা ধীরে ধীরে, আর তা হল এই জগতে খ্রীষ্ট যন্ত্রণা এবং অবমাননা বিছানো পথের মধ্য দিয়ে হেঁটে গেছেন। কিন্তু চুলার আগুনের তাপের মধ্যে তাঁকে এর শিক্ষাগুলো শিখতে হয়েছিল। AABen 441.1
এখন, যখন তাঁর সক্রিয় রূপ বছর গুলোর এবং পরিশ্রমের বোঝা নিয়ে নত হয়ে পড়েছে তখন তিনি লিখতে পেরেছিলেন, “প্রিয়েরা তোমাদের পরীক্ষার্থে যে আগুন তোমাদের মধ্যে জ্বলিতেছে, ইহা বিজাতীয় ঘটনা বলিয়া আশ্চর্য্য জ্ঞান করিও না; বরং যে পরিমাণে খ্রীষ্টের দুঃখভোগের সহভাগী হইতেছ, সেই পরিমানে আনন্দ কর, যের তাঁহার প্রতাপের প্রকাশকালে উল্লাস সহকারে আনন্দ করিতে পার।” AABen 441.2
খ্রীষ্টের পালের পাল রক্ষক হিসেবে মণ্ডলীর প্রাচীণ বর্গদের তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে উল্লেখ করে প্রেরিত লিখেছেন, “তোমাদের মধ্যে ঈশ্বরের যে পাল আছে, তাহা পালন কর; অধ্যক্ষের কার্য কর, আবশ্যকতা প্রযুক্ত নয়, কিন্তু ইচ্ছাপূর্বক, ঈশ্বরের অভিমতে, কুৎসিত লাভার্থে নয়, কিন্তু উৎসুক ভাবে কর, নিরূপিত অধিকারের ভিতরে কতৃত্বকারী রূপে নয়, কিন্তু পালের আদর্শ হইয়াই কর। তাহাতে প্রধান পালক প্রকাশিত হইলে তোমরা অ¤øান প্রতাপমুকুট পাইবে।” AABen 442.1
যারা পাল রক্ষকদের পদ প্রাপ্ত হবে তাদের প্রভুর পালের উপর জাগ্রত থেকে পরিশ্রম সহকারে দৃষ্টি দেবার অনুশীলন করতে হবে। এটি একনায়কসূলভ পাহারা হবে না, কিন্তু একটি বিষয় তা হল, উৎসাহ প্রদান এবং শক্তিশালী করতে ও আত্মিকভাবে উনড়বত করার জন্য যত্ন নিতে হবে। ঈশ্বরের বাক্য প্রচার ধর্মোপোদেশের চেয়েও আরও বেশি কিছু; এর অর্থ হল আন্তরিকতা, ব্যক্তিগত পরিশ্রম। জগতের মণ্ডলী পুরুষ ও স্ত্রীলোকের সমন্বয়ে গঠিত, যাদের প্রয়োজন রয়েছে ধৈর্য্যশীলতা এবং যত্নশীল প্রচেষ্টা যেন এই জীবনে কাজ করতে সম্মত হওয়ার জন্য তারা প্রশিক্ষিত এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ হতে পারে এবং ভবিষ্যত জীবনে গৌরবের মুকুট পরিধান করতে পারে এবং অমরত্ব লাভ করতে পারে। যারা পালক তাদের আবশ্যক— বিশ্বস্ত মেষপালক হওয়া— যারা ঈশ্বরের লোকদের তোষামোদ করবে না, কিংবা তাদের সাথে কঠোর ব্যবহার করবে না, কিন্তু তারা এমন মানুষ হবেন যিনি তাদের জীবন রুটি দিয়ে আহার করাবেন — তারা এমন মানুষ হবেন যারা প্রতিদিন পবিত্রআত্মার পরিবর্তকারী ক্ষমতা তাদের জীবনে অনুভব করবেন এবং তারা যাদের মধ্যে কাজ করেন তাদের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালবাসা সযতেড়ব হৃদয়ে লালন করবেন। AABen 442.2
যখন মণ্ডলীর মধ্যে বিচ্ছিনড়বতা, অপ্রীতিকর বিষয়, পরশ্রীকাতরতা এবং ঈর্ষাজনিত সমস্যার সমাধানকারী হিসেবে ডাকা হবে তখন পাল রক্ষককে অত্যন্ত বিচক্ষণতার সংগে কাজ করতে হবে এবং এই বিষয়গুলো যথাযথভাবে সমাধান করার জন্য তার প্রয়োজন খ্রীষ্টের ক্ষমতার পরিশ্রম করা। যথার্থ সতর্কবালী দিতে হবে, পাপের জন্য তিরস্কার করতে হবে, যা ভুল তা সঠিক করতে হবে, পরিচর্য্যাকারীরা এই কাজগুলো কেবল পুলপিঠে বাক্য প্রচারের মধ্য দিয়ে সম্পনড়ব করবেন না, কিন্তু ব্যক্তিগত পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে সম্পনড়ব করতে হবে। সেচ্ছাচারী অন্তর ঈশ্বরের বাক্য গ্রহণ করতে সম্মত নাও হতে পারে, এবং ঈশ্বরের দাস ভুল বিচার করতে পারেন এবং সমালোচনা করতে পারেন। তাঁকে মনে রাখতে হবে যে, “যে জ্ঞান উপর হইতে আসে, তাহা প্রথমে শুচি, পিের শান্তিপ্রিয়, ক্ষান্ত, সহজে অনুনীত, দয়া ও উত্তম উত্তম ফলে পরিপূর্ণ, ভেদাভেদবিহীন নিস্কপট। আর যাহারা শান্তির আচরণ করে, তাদের জন্য শান্তিতে ধার্মিকতা ফলের বীজ বপন করা যায়।” যাকোব ৩:১৭—১৮। AABen 442.3
সুসমাচার প্রচারের কাজ হল, “যাহা আদি অবধি সমুদয়ের সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরের কাছে গুপ্ত থাকিয়া আসিয়াছে, সেই নিগুঢ়তত্তে¡র বিধান কি তাহা প্রকাশ” করা। ইফিষীয় ৩:৯। যদি কেউ এই কাজে অন্তর্ভূক্ত হয়ে খুব কম আত্ম ত্যাগের তাদের দূর্দশায় তাদের সান্তনা দিতে পারবেন, তাদের আত্মার ক্ষুধা নিবৃত্ত করতে পারবেনএবং ঈশ্বরের জন্য তাদের আত্মা জয় করতে পারবেন। এই কাজে সুসমাচার প্রচারক স্বর্গের দূতগণ কর্তৃক সেবিত হন এবং তিনি স্বয়ং সত্যে নির্দেশনা লাভ করেন এবং আলোকিত হন এবং পরিশ্রমের বিষয়ে জ্ঞানবান করে। AABen 443.1
মণ্ডলীকে দায়িত্বপ্রাপ্ত পদে যারা অধিষ্ঠিত ছিলেন তাদের প্রতি তার উপদেশের সাথে সম্পর্ক রেখে প্রেরিত কিছু সাধারণ নীতির রূপরেখা দিয়েছিলেন, যা দ্বারা মণ্ডলীর সহভাগিতায় যুক্ত রয়েছেন তাদের সকলের জন্যই এটি অনুসরণ যোগ্য। মণ্ডলীর যুবক সদস্যদের উপদেশ দেওয়া হয়েছে যেন তারা খ্রীষ্টিয় নম্রতা নিজ জীবনে প্রয়োগ করার জন্য প্রাচীনদের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে। “সেউরূপ যুবকদিগকে সংযত হইতে আদেশ কর। আর আপনি সর্ব বিষয়ে সৎক্রিয়ার আদর্শ হও, শিক্ষাতে অবিকার্য্যতা, ধীরতা এবং অদূষ্য নিরাময় বাক্য প্রদর্শন কর; যেন বিপক্ষ আমাদের বিষয়ে মন্দ বলিবার সূত্র না পাওয়াতে লজ্জিত হয়।” AABen 443.2
এই ভাবে পিতর মণ্ডলীতে ঘটিত বিভিনড়ব ধরনের পরীক্ষার সময় বিশ্বাসীদের কাছে লিখেছিলেন। অনেকে ছিলেন যারা ঐ সময়ে খ্রীষ্টিয় দুঃভোগের অংশী হয়েছিলেনএবং সত্বর মণ্ডলী ভয়াবহ যন্ত্রণাকর সময়ের মধ্য দিয়ে গমন করেছিল। মাত্র অল্প কয়েক বছরের মধ্যে মণ্ডলীতে যারা শিক্ষক এবং নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তাদের মধ্যে অনেকেরই সুসমাচারের জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। কিন্তু এই সব বিষয়ের কোন কিছুই সেই সকল ব্যক্তিদের হতাশাগ্রস্থ করতে পারে নি যাদের প্রত্যাশা খ্রীষ্টের মধ্যে নিহিত ছিল। পিতর উৎসাহের বাক্য দ্বারা এবং সান্তনার বাক্য দ্বারা বিশ্বাসীদের মন বর্তমাণ পরীক্ষা এবং ভবিষ্যতের দুঃখভোগের ঘটনার দৃশ্য থেকে “অক্ষয় ও বিমল ও অজয় দায়াধিকারের” দিকে চালিত করেছেন। “আর সমস্ত অনুগ্রহের ঈশ্বর,” ঐকান্তিক প্রার্থনা করেছেন, “যিনি তোমাদিগকে খ্রীষ্টে আপনার অনন্ত প্রতাপ প্রদানার্থে আহুত করেছেন, তিনি আপনি তোমাদের ক্ষনিক দুঃখভোগের পর তোমাদিগকে পরিপক্ক, সুস্থির সবল বদ্ধমূল করিবেন। যুগপর্যায়ের যুগে যুগে তাঁহারই পরাক্রম হউক। আমেন।” AABen 443.3