পিতর তাঁর দ্বিতীয় পত্রে তাদের উদ্দেশ্যে লিখেছিলেন, যারা তাঁর সংগে “সমরূপ বহুমূল্য বিশ্বাস” প্রাপ্ত হইয়াছিলেন, প্রেরিত খ্রীষ্টিয় চরিত্রের উৎকর্ষতার পরিকল্পনা প্রকাশও করেছেন। তিনি লিখেছেন: AABen 445.1
“ঈশ্বরের এবং আমাদের প্রভু যীশুর তত্বজ্ঞানে অনুগ্রহ ও শান্তি প্রচুররূপে তোমাদের প্রতি বর্ত্তুক। কারণ যিনি নিজ গৌরবে এবং সদগুনে আমাদিগকে আহবান করিয়াছেন , তাঁহার তত্বজ্ঞান দ্বারা তাঁহার ঈশ্বরীয় শক্তি আমাদিগকে জীবন ও ভক্তি সম্বন্ধীয় সমস্ত বিষয় প্রদান করিয়াছেন। আর ঐ গৌরবে ও উৎকর্ষে তিনি আমাদিগকে মহামূল্য অথচ অতি মহৎ প্রতিজ্ঞা সকল প্রদান করিয়াছেন, যেন তদ্বারা তোমরা অভিলাষমূলক সংসারব্যাপি ক্ষয় হইতে পলায়ন করিয়া ঈশ্বরীয় স্বভাবের সহভাগী হও।” AABen 445.2
“আর ইহারই জন্য তোমরা সম্পূর্ণ যত্ন প্রয়োগ করিয়া াপিরাদের বিশ্বাসে সদগুন ও সদগুনে জ্ঞান, ও জ্ঞানে জিতেন্দ্রিয়তা , ও জিতেন্দ্রিয়তায় ধৈর্য্য, ও ধৈর্য্যে ভক্তি, ও ভক্তিতে ভ্রাতৃ¯েড়বহ ও ভ্রাতৃ¯েড়বহে প্রেম যোগাও। কেননা এই সমস্ত যদি তোমাদিগেতে থাকে ও উপচিয়া পড়ে, তবে আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের তত্বজ্ঞান সম্বন্ধে তোমাদিগকে অলস বা ফলহীন থাকিতে দিবে না।” AABen 445.3
এই কথাগুলো শিক্ষায় পূর্ণ এবং বিজয়ের মূল সুর নির্দেশ করে। প্রেরিত বিশ্বাসী খ্রীষ্টিয়ার নেতাদের সামনে উনড়বতি, প্রতিটি পদক্ষেপ যা ঈশ্বরের জ্ঞানের অগ্রগতি প্রকাশ করে এবং যার মধ্যে ওপরে ওঠার পথে বাধাদানকারী কোন কিছু নেই সেই সকল বিষয় তুলে ধরেছেন। বিশ্বাস, সদগুন, জ্ঞান, জিতেন্দ্রিয়তা, ধৈর্য্য, ভক্তি, ভ্রাতৃ¯েড়বহ এবং প্রেম হল উনড়বতি ও অগ্রগতির উপায়। আমাদের জন্য খ্রীষ্টের মহা আদর্শকে আমরা রক্ষা করতে পারব ক্রমাগত ভাবে অগ্রসর হওয়ার মাধ্যমে এবং ক্রমাগত ভাবে উৎকর্ষতার দিকে পদক্ষেপ রাখার মাধ্যমে। আর এই ভাবে তিনি আমাদেরকে জ্ঞান, ধার্মিকতা পবিত্রকরণ ও মুক্তি দিয়েছেন। AABen 445.4
ঈশ্বর তাঁর লোকদের গৌরবে ও ভক্তিতে আহবান করেছেন এবং যারা প্রকৃত ভাবে তাঁর সংগে যুক্ত রয়েছেন তাদের সকলের জীবনে এই সমস্ত বিষয় প্রকাশিত হবে। স্বর্গীয় দানের অংশী হয়ে তারা পূর্ণতা লাভের জন্য চলতে চলতে, “ঈশ্বরের শক্তিতে বিশ্বাসের দ্বারা রক্ষিত” হবে। ১ পিতর ১:৫। তাঁর সন্তানদের কাছে তাঁর সদগুন প্রদান করা ঈশ্বরের গৌরবের বিষয়। ঈশ্বরের ইচ্ছা এই যেন প্রত্যেক নারী ও পুরুষ সর্বোচ্চ মানদন্ডে পৌঁছাতে পারে এবং যখন তারা বিশ্বাসের মাধ্যমে খ্রীষ্টের শক্তি লাভ করে, যখন তারা বিশ্বাসের মাধ্যসে চিরস্থায়ী প্রতিজ্ঞা তাদের নিজের বলে দাবী করে, যখন সনিবন্ধ অনুরোধ যা প্রত্যাখ্যান করা হবে না, তার সেই পবিত্র আত্মার শক্তির অনুসন্ধান করবে, তাঁর মধ্য দিয়েই তারা পূর্ণতা প্রাপ্ত হবে। AABen 445.5
সুসমাচারের বিশ্বাস গ্রহণ করার পর, বিশ্বাসীদের পরবর্তী কাজ হল তার চরিত্রের মধ্যে সদগুন যুক্ত করা; এবং এই ভাবে অন্তর পরিস্কার হবে এবং ঈশ্বরের জ্ঞান গ্রহণ করার জন্য মন প্রস্তুত হবে। আর এই জ্ঞান হল সমস্ত প্রকৃত শিক্ষার এবং সমস্ত প্রকৃত সেবার ভিত্তি। এটাই একমাত্র পরীক্ষার বিরুদ্ধে আসল রক্ষাকারী বর্ম; আর এটিই একমাত্র যা কাউকে চরিত্রে ঈশ্বরের মত করতে পারে। ঈশ্বরের এবং তাঁর পুত্র যীশু খ্রীষ্টের জ্ঞানের মধ্য দিয়ে বিশ্বাসীদেরকে “জীবন ও ভক্তি সম্বন্ধীয় সমস্ত বিষয়” প্রদান করা হয়েছে। ঈশ্বরের ধার্মিকতা লাভের জন্য যে আন্তরিক ভাবে আকাঙ্খা করে তাকে কোন উত্তম দান দিতে অস্বীকার করা হবে না। AABen 446.1
“আর ইহাই অনন্ত জীবন,” খ্রীষ্ট বলেছেন, “যে তাহারা তোমাকে, একমাত্র সত্যময় ঈশ্বরকে এবং তুমি যাহাকে পাঠাইয়াছ তাঁহাকে, যীশু খ্রীষ্টকে জানিতে পায়।” যোহন ১৭:৩। আর ভাবাদী যিরমিয় উল্লেখ করেছেন, “জ্ঞানবান আপনার জ্ঞানে শ্লাঘা না করুক, বিক্রমী আপন বিক্রমের শ্লাঘা না করুক, ধনবান আপন ধনের শ্লাঘা না করুক: কিন্তু যে ব্যক্তি শ্লাঘা না করে, সে এই বিষয়ে শ্লাঘা করুক যে, সে বুঝিতে পারে ও আমার এই পরিচয় পাইয়াছে যে, আমি সদাপ্রভু পৃথিবীতে দয়া, বিচার ও ধার্মিকতার অনুষ্ঠান করি: তারণ ঐ সকল আমি প্রীত, ইহা সদাপ্রভু কহেন। যিরমিয় ৯:২৩—২৪। যারা তার এই জ্ঞান লাভ করেছেন তাদের মানবীয় চিন্তা খুবই কমই আত্মিক অর্জনের প্রশস্ততা ও গভীরতা এবং উচ্চতা উপলব্ধি করতে পারেন। AABen 446.2
খ্রীষ্টের চরিত্রের উৎকর্ষতায় তার নিজের পরিবেশে, কারো ব্যর্থ হবার আবশ্যকতা নেই। খ্রীষ্টের আত্মোৎসর্গের দ্বারা বিশ্বাসীদের সকল বিষয় গ্রহণ করার জন্য যোগান দেওয়া হয়েছে, যা জীবন ও ধার্মিকতাকে অধিকারভুক্ত করে। ঈশ্বর আমাদের চরম উৎকৃষ্টতায় পৌছানোর জন্য আহবান করেছেন এবং খ্রীষ্টের চরিত্রের দৃষ্টান্তের সামনে আমাদের স্থাপন করেছেন। মন্দকে অটল ভাবে প্রতিরোধ করার জীবন দ্বারা তাঁর মানব প্রকৃতিকে অত্যন্ত নিঁখুত করে, এতে ত্রাণকর্তা দেখিয়েছেন যে, ঈশ্বরের সংগে পযুক্ত থাকার মাধ্যমে মানুষ এই জীবনে চরিত্রের উৎকর্ষতা লাভ করতে পারে। আমাদের কাছে ঈশ্বরের প্রতিশ্রæতি হল যে, আমরা আরো অধিক বিজয় অর্জন করতে পারব। AABen 446.3
বিশ্বাসীদের সামনে খ্রীষ্টের মত ব্যবস্থার সমস্ত নীতির প্রতি বাধ্য থাকার চমৎকার সম্ভাবনা রাখা হয়েছে। মানুষ নিজে নিজে এই অবস্থায় কখনোও পৌঁছানে সক্ষম হবে না। পবিত্রতা, ঈশ্বরের বাক্য এই কথা প্রকাশ করে যে, যে এটি লাভ করতে চায় সে পরিত্রাণ পেতে পারে। এটি ঐশ্বরিক অনুগ্রহের কাজের ফল, সত্যের আত্মার নিয়ন্ত্রিত প্রভাব আর শৃঙ্খলার কাছে সে এই ভাবে নিজেকে সমর্পন করেছে। মানুষের বাধ্যতা কেবলমাত্র খ্রীষ্টের ধার্মিকতার অনুপ্রেরণার দ্বারা খাঁটি করতে পারে যা বাধ্যতার সকল কার্য স্বর্গীয় সুগন্ধে পূর্ণ করে। খ্রীষ্টিয়ানদের কাজ হল সমস্ত মন্দতার উপর অব্যাহত ভাবে বিজয়ী হওয়ার জন্য অখন্ড মনোযোগী হওয়া। তাকে অব্যাহত ভাবে ত্রাণকর্তার কাছে প্রার্থনা করতে হবে যেন তার পাপে ভারাক্রান্ত হৃদয়ের অসুস্থতা থেকে আরোগ্য লাভ করতে পারে। জয় লাভ করার জন্য যে প্রজ্ঞার শক্তি প্রয়োজন তা তার নেই; এর অধিকারী একজন, তিনি প্রভু আর যারা সাহায্যের জন্য বিনম্র হয়ে এবং অনুতাপ হৃদয়ে তার কাছে যাচ্ঞা করে তিনি তাদের তা প্রদান করেন। AABen 447.1
অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতায় পরিবর্তনের কাজ হল অব্যাহত ভাবে করে যাওয়া কাজের দমধ্যে একটি। দিনের পর দিন ঈশ্বর মানুষের পবিত্রতার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। এবং মানুষকে তাঁর সংগে অক্লান্ত প্রচেষ্টার দ্বারা যথার্থ অভ্যাস কার্যে পরিণত করার লক্ষ্যে যুক্ত থাকতে হবে। তিনি অনুগ্রহের পর পর অনুগ্রহ যোগ করেন; আর এই রকম কাজগুলো অতিরিক্ত পরিবল্পনার কাজ করে থাকেন। আমাদের ত্রাণকর্তা সব সময় গভীর অনুতাপ হৃদয়ের প্রার্থনা শুনতে এবং উত্তর দিতে এবং যে তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকে তাকে বহুবিধ অনুগ্রহ এবং শান্তি প্রদান করতে প্রস্তুত থাকেন। যা তাদের বিপযস্ত করে এমন মন্দতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে যা তাদের সাহায্যের প্রয়োজন সেই আশীর্ব্বাদ তিনি আনন্দিত মনে প্রদান করে থাকেন। AABen 447.2
যারা খ্রীষ্টিয় অগ্রগতির মই বেয়ে উপরে ৗঠার উদ্যোগ নেন, তারা যদি তাদের অগ্রযাত্রায় মানুষের উপর তাদের বিশ্বাস অর্পন করেন, তাহলে খুব দ্রুত তারা খ্রীষ্টের উপর থেকে তাদের দৃষ্টি হারিয়ে ফেলবে যিনি তাদের বিশ্বাসের ¯্রষ্টা এবং ধ্বংশকারী। এর ফল হল ব্যর্থতা — যা কিছু অর্জিত হয়েছে তার সব কিছু হারিয়ে ফেলা। বাস্তবিক এটা তার জন্য দুঃখের বিষয় হবে যারা পথ চলতে চলতে ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে পড়ে, আত্মার শত্রুদের খ্রীষ্টিয় অন্রগ্রহ হরণ করবার জন্য তাদের সুযোগ দেয়, যা তাদের হৃদয়ে এবং জীবনে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। “কারণ এই সমস্ত যাহার নাই,” প্রেরিত লিখেছেন, সে অন্ধ, অদূরদর্শী, আপন পূর্ব্ব পাপ সমূহের মার্জনা ভুলিয়া গিয়াছে।” AABen 448.1
প্রেরিত পিতরের ঈশ্বরের বিষয়ে সম্পর্কে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা হয়েছিল। ঈশ্বরের ক্ষমতায় তার বিশ্বাস বছরের পর বছর তাঁকে শক্তিশালী করে সুরক্ষিত করেছিল, যে পর্যন্ত তিনি অজানা বিষয়ের প্রমাণ পেয়েছিলেন যে, সেই ব্যক্তির সামনে ব্যর্থতার সম্ভাবনা থাকবে না, যে বিশ্বাসে এগিয়ে যা, যে ক্রমাগত উপরের দিকে উঠতে থাকে এবং সামনের দিকে চলতে থাকে, এভাবে সিঁড়ির সর্বোচ্চ ধাপে উঠে যায় স্বর্গের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দেয়। AABen 448.2
অনেক বছর যাবৎ পিতর বিশ্বাসীদের অনুগ্রহে এবং সত্যের জ্ঞানে অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি লাভ করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অনুপ্রেরণা দিয়ে আসছিলেন; আর এখন জানতে পেরেছেন যে, তিনি তাঁর বিশ্বাসের কারনে খুব শীঘ্র সাক্ষ্যময়ের দুঃখকষ্ট ভোগ করার জন্য আহবান পেতে যাচ্ছেন, তিনি আর একবার সকল বিশ্বাসীদের নাগালের মধ্যে মূল্যবান সুযোগের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করলেন। বৃদ্ধ শিষ্য তার বিশ্বাসের পূর্ণ নিশ্চয়তায় খ্রীষ্টিয় জীবনের যে উদ্দেশ্য রয়েছে তাতে সুস্থির থাকার প্রয়োজনীয় সম্পর্কে তার ভ্রাতৃগণকে উৎসাহিত করেছেন। “তোমরা যে আহূত ও মনোনীত, তাহা নিশ্চয় করিতে, অধিক যত্ন কর,” তিনি উদ্ধুদ্ধ করেছেন, “কেননা এই সকল করিলে তোমরা কখনোই উছোট খাইবে না: কারণ এই রূপে তোমাদের প্রভু ও ত্রাণকর্তা যীশু খ্রীষ্টের অনন্ত রাজ্যে প্রবেশ করিবার অধিকার প্রচুররূপে তোমাদিগকে দেওয়া যাইবে।” মহামূল্য নিশ্চয়তা! বিশ্বাসীদের সামনে এটি একটি গৌরবময় আশা, যে খ্রীষ্টিয় জীবনের পরিপূর্ণতার জন্য বিশ্বাসে ঈশ্বরের দিকে অগ্রসর হয়। AABen 448.3
“এই কারণ” প্রেরিত লিখেছেন, “আমি তোমাদিগকে এই সকল স্মরণ করাইয়া দিতে প্রস্তুত থাকিব; যদিও তোমরা এ সকল জান এবং বর্তমান সত্যে সুস্থিরও আছ। আর আমি যতদিন এই তাম্বুতে থাকি ততদিন তোমাদিগকে স্মরণ করাইয়া দিয়া জাগ্রত রাখা বিহিত জ্ঞান করি। কারণ আমি জানি, আমার এই তাম্বু পরিত্যাগ শীঘ্রই ঘটিবে, তাহা আমাকে আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টই জানাইয়াছেন। আর তোমরা যাহাতে আমার যাত্রার পরে সর্ব্বদা এই সকল স্মরণ করিতে পার, এমন যত্নও করিব।” AABen 448.4
মানব জাতির গতি সম্পর্কে ঈশ্বরের যে উদ্দেশ্য রয়েছে সেই বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রেরিত সুদক্ষ ছিলেন; কারণ প্রভু যীশু যখন এই জগতে প্রচার কার্য করেছিলেন তখন তিনি ঈশ্বরের রাজ্যের অধিকার ভুক্ত হওয়া সম্পর্কে অনেক কিছু দেখেছিলেন এবং শুনেছিলেন। তিনি বিশ্বকাসীদের স্মরণ করিয়ে দিলেন, “কারণ আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের পরাক্রম ও আগমনের বিষয় যখন তোমাদিগকে জ্ঞাত করিয়াছিলাম, এখন আমরা কৌশল কল্পিত গল্পের অনুগামী হই নাই, কিন্তু তাঁহার মহিমার চাক্ষুষ সাক্ষী হইয়াছিলাম। ফলত: তিনি পিতা ঈশ্বর হইতে সমাদর ও গৌরব পাইয়াছিলে, সেই মহিমাযুক্ত প্রতাপ কর্তৃত্ব তাঁহার কাছে এই বাণী উপনীত হইয়া ছিল, ইনি আমার প্রিয় পুত্র, আমার প্রিয়তম, ইহাতেই আমি প্রীত। আর স্বর্গ হইতে উপনীত সেই বাণী আমরাই শুনিয়াছি, যখন তাঁহার সংগে পবিত্র পর্ব্বতে ছিলাম।” AABen 449.1
বিশ্বাসীদের আশার নিশ্চয়তা এই প্রমাণ থাকলেও ভবিষ্যদ্বানীর সাক্ষ্যের মধ্যে দিয়ে সকল বিশ্বাস সুনিশ্চিত করে এবং নিরাপদে সুরক্ষিত করে। পিতর উল্লেখ করেছেন যে, আর ভাববাণীর বাক্য দৃঢ়তর হইয়া আমাদের নিকটে রহিয়াছে; তোমরা যে সেই বাণীর প্রতি মনোযোগ করিতেছ, তাহা ভালই করিতেছ, তাহা এমন প্রদীপের তুল্য যাহা যে পর্যন্ত দিনের আরম্ভ না হয় এবং প্রভাতীর তারা তোমাদের মধ্যে উদিত না হয় সেই পর্যন্ত অন্ধকারময় স্থানে দীপ্তি দেয়। প্রথমে ইহা জ্ঞাত হও যে, শাস্ত্রীয় কোন ভাববাণী কখনও মনুষ্যের ইচ্ছাক্রমে উপনীত হয় নাই, কিন্তু মনুষ্যের পবিত্র আত্মা দ্বারা চালিত হইয়া ঈশ্বর হইতে যাহা পাইয়াছেন, ত্হাই বলিয়াছেন।” AABen 449.2
বিপদজনক সময়ে নিরাপদ পথপ্রদর্শক রূপে “ভবিষ্যদ্বাণীর নিশ্চিত বাক্য” যখন মর্যাদাপ্রাপ্ত হয়, প্রেরিত ভ্রান্ত ভবিষ্যদ্বাণীন আলোক বর্তিকার বিরুদ্ধে প্রেরিত মন্ডলীকে ভাবগম্ভীর ভাবে সতর্ক করেছেন, যা “ভাক্ত ভাববদীদের” দ্বারা গুরুত্ব লাভ করতে পারে, যারা গোপনে “সেই আধিপতিকেও ীস্বীকার করিবে, এই রূপে শীঘ্র আপনাদের বিনাশ ঘটাইবে।” এই ভাববাদীরা মন্ডলীকে উত্থিত হবে এবং তাদের অনেক বিশ্বাসী ভ্রাতৃবর্গ দ্বারা তারা সত্য বলে গৃহিত হবে, প্রেরিত এদের তুলনা করেছেন, “তাহাদের প্রথম দশা অপেক্ষা শেষ দশা আরও মন্দ হইয়া পড়ে। কেননা ধার্মিকতার পথ জানিয়া তাহাদের কাছে সমর্পিত পবিত্র আজ্ঞা হইতে সরিয়া যাওয়া অপেক্ষা বরং সেই পথ অজ্ঞ থাকা তাহাদের পক্ষে আরও ভাল ছিল।” শেষ কালের সময়ের মধ্য দিয়ে তাকিয়ে পিতর রূপরেখা নিরূপন করে অনুপ্রাণীত করেছেন যা খ্রীষ্টের দ্বিতীয় আগমনের ঠিক পূর্বে বিদ্যমান থাকবে। “প্রথমে ইহা জ্ঞাত হও যে, শেষকালে উপহাসকেরা উপস্থিত হইবে; তাহারা আপন আপন অভিলাষ অনুসারে চলিবে এবং বলিবে, তাঁহার আগমনের প্রতিজ্ঞা কোথায়? কেননা যে অবধি পিতৃলোকেরা নিদ্রাগত হইয়াছেন, সেই অবধি সমস্তই সৃষ্টির আরম্ভ অবধি যেমন, তেমনই রহিয়াছে।” কিন্তু “লোকে যখন বলে শান্তি ও অভয়, তখনই তাহাদের কাছে যেমন গর্ভবতীর প্রসব বেদনা উপস্থিত হইয়া থাকে তেমনি আকষ্মিক বিনাশ উপস্থিত হয়।” ১ থিষলনকীয় ৫:৩। তবে সকলই শত্রুর প্রতারণার ফাঁদে ধরা পড়বে না। যেভাবে জাগতিক ভাবে সকল বিষয়ের পরিসমাপ্তি ঘটবে তেমনি একচজন বিশ্বাসী শেষকালের চিহ্ন হিসেবে নিজেকে প্রদর্শন করতে সক্ষম হবে। যখন বিশাল সংখ্যক বিশ্বাসীরা তাদের কাজের দ্বারা তাদের বিশ্বাসকে অস্বীকার করবে, তখন সেখানে এমন কিছু অবশিষ্টাংশ থাকবে যারা শেষ পর্যন্ত টিকে থাকবে। AABen 449.3
পিতর তাঁর হৃদয়ে খ্রীষ্টের পুনরাগোমনের আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন এবং মন্ডলীকে ত্রাণকর্তার প্রতিজ্ঞার নিশ্চিত পূর্ণতার বিষয়ে আশ্বাসিত করেছিলেন, “আর আমি যখন যাই ও তোমাদের জন্য স্থান প্রস্তুত করি তখন পূর্নবার আসিব এবং আমার নিকটে তোমাদিগকে লইয়া যাইব, যেন আমি যেখানে থাকি তোমরাও সেই খানে থাক।” যোহন ১৪:৩। যারা যত্নবান এবং বিশ্বস্ত তাদের কাছে মনে হতে পারে যে প্রভুর আগমন বিলম্বে ঘটিবে, কিন্তু প্রেরিত তাদের আশ্বস্ত করেছেন: ” প্রভু নিজ প্রতিজ্ঞা বিষয়ে দীঘূসূত্রি নহেন — যেমন কেহ কেহ দীর্ঘসূত্রিতা জ্ঞান করে কিন্তু তোমাদের পক্ষে তিনি দীর্ঘসহিষ্ণু; কত গুলি লোক যে বিনষ্ট হয়, এমন বাসনা তাঁহার নাই; বরং সকলে যেন মন পরিবর্তন পর্যন্ত পঁহুছিতে পায় এই তাঁহার বাসনা। কিন্তু প্রভুর দিন চোরের ন্যায় আসিবে, তখন আকাশ মন্ডল হু হু শব্দ করিয়া উড়িয়া যাইবে, এবং মূল বস্তু সকল পুড়িয়া গিয়া বিলীন হইবে এবং পৃথিবী ও তাাহার মধ্যবর্তী কার্য সকল পুড়িয়া যাইবে। AABen 450.1
“এই রূপে যখন এই সমস্তই বিলীন হইবে, তখন পবিত্র আচার ব্যবহার ও ভিত্তিতে কিরূপ লোক হওয়া তোমাদের উচিত! ঈশ্বরের সেই দিনের আগমনের অপেক্ষা ও আকাঙ্খা করিতে করিতে সেইরূপ হওয়া চাই, যে দিনের হেতু আকাশ মন্ডল জ্বলিয়া বিলীন হইবে এবঙ মূল বস্তু সকল পুড়িয়া গিয়া গলিয়া যাইবে। কিন্তু তাঁহার প্রতিজ্ঞা অনুসারে আমরা এমন নতুন আকাশ মন্ডলের ও নূতন পৃথিবীর অপেক্ষায় আছি, যাহার মধ্যে ধার্মিকতা বসতি করে। AABen 451.1
“অতত্রব প্রিয়তমেরা, তোমরা যখন এই সকলের অপেক্ষা করিতেছ, তখন যত্ন কর, যেন তাঁহার কাছে তোমাদিগকে নিস্কলঙ্ক ও নির্দোষ অবস্থায় শান্তিতে দেখিতে পাওয়া যায়। আর আমাদের প্রভুর দীর্ঘসহিষ্ণুতাকে পরিত্রাণ জ্ঞান কর, যেমন আমাদের প্রিয় ভ্রাতা পৌলও তাঁগাকে দত্ত জ্ঞান অনুসারে তোমাদিগকে লিখিয়াছেন........... অতএব প্রিয়তমেরা, তোমরা এ সকল অগ্রে জানিয়া সাবধান থাক, পাছে ধর্মহীনদের ভ্রান্তিতে আকর্ষিক হইয়া নিজ স্থিরতা হইতে ভ্রষ্ট হও।” AABen 451.2
ঈশ্বরের দূরদর্শিতায় পিতর রোমে তাঁর প্রচার কার্য বন্ধ করার অনুমতি লাভ করেন, যেখানে তাকে পৌলের চূড়ান্তভাবে বন্দী হবার কাছাকাছি সময়ে সম্রাট নীরো কর্তৃক কারারুদ্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। এই ভাবে দুই প্রাচীন প্রেরিত যারা বহু বছর যাবৎ তাদের পরিচর্যা কার্যে ব্যপৃত ছিলেন, তাঁরা জাগতিক নগর সমূহে খ্রীষ্টের জন্য সাক্ষ্য বহন করেছিলেন এবং ধার্মিকতা ও সাক্ষ্যময়ের বিপুল পরিমাণে ফসল কাটার বীজ স্বরূপ এই মাটিতে তাদের রক্ত পতিত হয়েছিল। AABen 451.3
খ্রীষ্টকে অস্বীকার করার পরে তাঁর বিশ্বাস যখন দৃঢ় হয়, পিতর তারপর থেকে মহাবিপদের সময় অত্যন্ত দৃঢ়তার সংগে সাহসের পরিচয় দিয়েছিলেন, তিনি ত্রাণকর্তার ক্রুশোরোপন, পুনরুত্থান এবং তাঁর স্বর্গারোহন সম্পর্কে অত্যন্ত দৃঢ় মনোবলের সংগে প্রচার করেছিলেন। যখন তাঁকে কারা রক্ষে রাখা হয়েছিল তখন তাঁর মনে পড়ে গিয়েছিল যে, খ্রীষ্ট তাঁকে এই কথা বলেছিলেন যে, “সত্য সত্য আমি তোমাকে কহিতেছি, যখন তুমি যুবা ছিলে, তখন আপনি আপনার কটি বন্ধন করিতে এবং যেখানে ইচ্ছা বেড়াইতে; কিন্তু যখন বৃদ্ধ হইবে, তখন তোমার হস্ত বিস্তার করিতে এবং আর একজন তোমার কটি বন্ধন করিয়া দিবে ও যেখানে যাইতে তোমার ইচ্ছা নাই, সেইখানে তোমাকে লইয়া যাইবে।” যোহন ২১:১৮। এই ভাবে যীশু তাঁকে জানিয়েছিলেন, তার মৃত্যু কিভাবে হবে। এমনকি ক্রুশের উপর তাঁর হাত প্রসারিত করার বিষয়টিও আগাম বলেছিলেন। AABen 451.4
একজন যিহুদি এবং বিদেশী হিসেবে পিতরকে শাস্তি দেবার এবং ক্রুশে দেবার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। এই ভয়ঙ্কর মৃত্যুর প্রেক্ষিতে প্রেরিত মৃত্যুর হস্তে সমর্পিত হওয়ার জন্য যীশুর বিচার কার্য চলার সময় তিনি তাঁকে অস্বীকার করে যে মহাপাপ করেছিলেনসেই কথা তাঁর মনে পড়ে গেল। এক সময় ছিল যখন তিনি ক্রুশকে স্বীকার করে নিতে অপ্রস্তুত ছিলেন, কিন্তু এখন তিনি সুসমাচারের জন্য তাঁর জীবনকে উৎসর্গ করতে পেরে এই বিষয়টিকে তিনি আনন্দের বিষয় বলে গন্য করলেন। তিনি কেবল এটিই উপলব্ধি করলেন যে, কোন এক সময় তিনি তাঁর প্রভুকে অস্বীকার করেছিলে, সেই প্রভুর একই ভাবে মৃত্যুবরণ করা তাঁর জন্য মহা সম্মানের ছিল। পিতর সেই পাপের জন্য আন্তরিক ভাবে অনুতপ্ত ছিলেন, এবং খ্রীষ্ট কতর্ৃৃত তিনি ক্ষমা লাভ করেছিলেন, মেষশাবকের এবং মেষদের চরানো ও পালন করার মহান দায়িত্ব দেওয়ার মাধ্যমে খ্রীষ্ট যে তাঁকে ক্ষমা করেছিলেনতা দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু পিতর নিজেকে কখনো ক্ষতা করতে পারেন নি। এমন কি তাঁর শেষ ভয়ানক যন্ত্রনার দৃশ্য যা তাঁর দুঃখ এবং অনুতাপের তিক্ত শিক্ষা হতে পারে সেই চিন্দতাও তাকে স্বস্তি দিতে পারে নি। শেষ বারের মত আনুকুল্য লাভের আশায় তিনি তার ঘাতককে সনির্বন্ধ অনুরোধ করেছিলেন যেন তাঁর মাথা নীচের দিকে দিয়ে তাঁকে ক্রুশে বিদ্ধ করা হয়। তাঁর এই অনুরোধ গ্রহ্যি করা হয়েছিল, আর এই অবস্থায় মহান প্রেরিত পিতর মৃত্যুবরণ করেছিলেন। AABen 452.1