(অধ্যায়ের প্রথম দুই পৃষ্ঠা বাদ পরেছে, অনুবাদ করতে হবে।)
অনিনিয় ও সাফীরা একটি সম্পত্তি বিক্রি করে সেখান থেকে প্রাপ্ত অর্থ প্রভুকে দান করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিল। AABen 56.1
পরবর্তীতে অননি ও সাফীরা লোভ করার মাধ্যমে পবিত্র আত্মাকে কষ্ট দিয়েছিল। তাঁরা সমস্ত সম্পত্তি দান করে দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিল বলে আফসোস করতে শুরু করল এবং এক সময় খ্রীষ্টের পক্ষে বড় কিছু করার প্রত্যয়ের কারণে তাঁরা আশীর্বাদ লাভ করেছিল তার সুমিষ্টতা তাঁদের কাছে পানসে হয়ে যেতে শুরু করল। তাঁরা ভাবল যে, তাঁরা খুব বেশি তাড়াহুড়ো করে ফেলছে, যে কারণে তাঁদের সিদ্ধান্তটি আবারও ভেবে দেখা দরকার। তাঁরা এই বিষয় নিয়ে কথা বলল এবং তাঁদের প্রতিজ্ঞা পূর্ণ না করার সিদ্ধান্ত নিল। তবে তাঁরা দেখল যারা তাঁদের সর্বস্ব বিক্রি করে দরিদ্র ভাইদের ভরণপোষনের জন্য দান করেছে, তাদেরকে বিশ্বাসীদের মধ্যে খুব উঁচু ও সম্মানের স্থানে রাখা হয়েছে। আবারও অন্যদিকে ভাইদের মধ্যে তাঁরা তাঁদের লোভ ও স্বার্থপরতার জন্যও কুখ্যাত ছিল। ফলে তাঁরা তাঁদের সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করে দেওয়ার চিন্তা করল ঠিকিই , কিন্তু আসলে তাঁরা নিজেদের জন্য সেখান থেকে একটি বড় অঙ্কের অর্থ রেখে দিল। এভাবে তারা নিজেদের পার্থিব ভবিষ্যতকে সুরিক্ষিত রাখতে চাইল আবার আরেকদিকে ভাইদের মধ্যে স্মমানের পাত্র হওয়ারও চিন্তা করল। AABen 56.2
কিন্তু ঈশ্বর ভন্ডামি ও মিথ্যা বলাঘৃণা করেন। আননিয় ও সাফিরা ঈশ্বরের সাথে প্রতারণনা করেছে; তারা পবিত্র অত্মার সাথে মিথ্যা বলেছে এবং তারা তাঁদের এই পাপের তাৎক্ষনিক ও ভয়াবহ শাস্তিও পেয়েছে। অননিয় যখন তার সম্পত্তি বিক্রির অর্থ দিয়ে দান করার জন্য এল তখন পিতর বললেন; “অননিয়, শ্যতান কেন তোমার হৃয় এমন পূর্ণ করিয়াছে যে , তুমি পবিত্র আত্মার কাছে মিথ্যে বলিলে , এবং মুল্য হইতে কতকটা রাখিয়া দিলে? সেই ভূমি বিক্র্যের পূর্বে কি তোমারই ছিল না? এবং বিক্রীত হইলে পর কি উহা তোমার নিজ অধিকারে ছিল না ? তবে এমন বিষ্য তোমার হৃদয়ে কেন ধারণ করিলে? তুমি মানুষ্যদের কাছে মিথ্যে কহিলে, এমন নয়, ঈশ্বেরেরই কাছে কহিলে।” AABen 56.3
“এই সকল কথা শুনিবামাত্র অননিয় পড়িয়া প্রাণত্যগ করিল; আর যাহারা শুনিল, সকলেই অতিশয় ভয়গ্রস্ত হইল।” AABen 57.1
“সেই ভূমি বিক্রয়ের পূর্বে কি তোমারই ছিল না?” পিতর এ কথা জিজ্ঞেস করেছিলেন। সাধারণ মানুষের জন্য নিজ সম্পত্তি বিক্রি করে দিতে কোন কিছু অননিয়কে বাধ্য করেনি। সে তার নিজের ইচ্ছায় তা বিক্রি করেছিল। কিন্তু শিষ্যদের সাথে প্রতারণা করার চেষ্টা করতে গিয়ে সে সর্বশক্তিমানের সাথে মিথ্যা ও চাতুরির আশ্রয় নিয়েছিল। AABen 57.2
“আর প্রায় তিন ঘন্টা পরে তাহার স্ত্রীও উপস্থিত হইল, কিন্তু কি ঘটিয়াছে, তাহা সে জানিত না। তখন পিতর তাহাকে উত্ত্র করিলেন, আমাকে বল দেখি, তোমার সেই ভূমি কি এত টাকাতে বিক্রি করিয়াছিলে? সে বলিল,হাঁ , এত টাকাতেই বটে। তাহাকে পিতর তাহাকে কহিলেন, তোমার প্রভুর আত্মাকে পরিক্ষা করিবার জন্য কেন একপরামর্শ হইলে? দেখ, যাহারা তোমার স্বামীকে কবর দিয়েছে, তাঁহারা দ্বারে পদার্পণ করিতেছে, এবং তোমাকে বাহিরে লইয়া যাইবে। সে তৎক্ষণাৎ তাহার চরণে পড়িয়া প্রাণত্যাগ করিল; আর ঐ যুবিকেরা ভিতরে এশিয়া তাহাকে মৃত দেখিল, এবং বাহিরে লইয়া গিয়া তাহার স্বামীর পার্শ্বে কবর দিল । তখন সমস্ত মণ্ডলী , এবং যত লোক এই কথা শুনিল, সকলেই অতিশ্য ভয়গ্রস্ত হইল।” AABen 57.3
অসীম পেজ্ঞা দেখতে পেয়েছিলেন যে আদি মণ্ডলীকে অনৈতিকতা থেকে রক্ষা করার জন্য ঈশ্বরের ক্রোধ প্রকাশ পাওয়া খুবই জরুরি ছিল। প্রবঞ্চকদের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছিল। প্রতিনিয়ত যে সকল নারী ও পুরুষ মন পরিবর্তন করে ঈশ্বরকে গ্রহণ করছিল তারা যদি অন্যদিকে ম্যামনের উপাসনা করতে থাকে তাহলে মণ্ডলী বিপদ্গ্রস্থ হবে। এই বিচারটি সাক্ষ্য দেয় যে মানুষ কখনো ঈশ্বরের সাথে প্রতারণা করতে পারে না। তিনি মানুষের অন্তরে লুকানো পাপ দেখতে পান এবং সেজন্যই তাঁকে কোনভাবে ধোকা দেওয়া সম্ভব নয়। এই বিচারের উদ্দেশ্য ছিলমণ্ডলীকে সতর্ক করে দেওয়া, যেন তারা সমস্ত ধরনের লোক দেখানো কাজ ও ভন্ডামি পরিহার করে এবং ঈশ্বরের কোপমুক্ত হয়। AABen 57.4
শুধুমাত্র আদি মণ্ডলী নয়, বরং সব যুগের সমস্ত মন্ডলীতেই লোভ, ভন্ডামি ও প্রতারণার প্রতি ঈশ্বরের ক্রোধের এই দৃষ্টান্ত এক বিপদসংকেত হয়ে বিদ্যমান থাকবে। অননিয় ও সাফীরাকে শুরুতেই লোভ পেয়ে বসেছিল। প্রভুর জন্য তারা যে প্রতিজ্ঞা করেছিল সেখান থেকে একটি অংশ নিজেদের জন্য রেখে দেওয়ার কারণে তারা ভন্ডামি ও প্রতারণা করতে বাধ্য হয়েছিল। AABen 58.1
ঈশ্বর সুসমাচার প্রচারকে তাঁরা লোকেদের প্ররিশ্রম ও দানের উপরে নির্ভরশীল করেছেন। লোকেদের স্বেচ্ছাদান ও দশমাংশের ভিত্তিতে তাঁর রাজ্য বিস্তারের কাজ বিস্তৃত হয়। তিনি মানুষকে যে অর্থ তালন্ত হিসেবে এই জগতে দান করেছেন তা থেকে তিনি একটি নির্দিষ্ট অংশ দাবী করে থাকেন— দশমাংশ। বাদবাকি অংশ নিয়ে তিনি কিছু বলেননি। দশমাংশ দান করার পর মানুষ তার চেয়ে বেশিও দিতে পারে, সেটা তিনি মানুষের ইচ্ছার উপরে ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু অন্তর যখন পবিত্র আত্মা দ্বারা উদ্বেলিত হয় এবং মানুষ যখন কোন একটি নির্দিষ্ট পরিমান দান দেওয়ার জন্যে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়, তখন সেই প্রতিজ্ঞাকারীর ব্যক্তির আর সেই প্রতিজ্ঞাত দানের উপরে কোন অধিকার থাকে না। এই প্রতিজ্ঞা তখন সেই ব্যক্তির জন্য অবশ্য পালনীয় হয়ে ওঠে; ঈশ্বর আমাদের জন্য যে বিধান দিয়েছেন তার চেয়েও কি এই প্রতিজ্ঞা আরও বেশি বাধ্যবাধকতাপূর্ণ নয়? মানুষ কর্তৃক লিখিত চুক্তির চেয়ে বিবেকের আদালতে এই প্রতিজ্ঞার বাধ্যবাধকতা অপেক্ষাকৃত কম? AABen 58.2
অন্তরে যখন স্বর্গীয় জ্যোতি অত্যুজ্জ্বল স্পষ্টতা ও ক্ষমতা নিয়ে জ্বলতে থাকে , তখন স্বভাবগত স্বার্থপরতা তা গ্রাস ছেড়ে দেয় এবং ঈশ্বরের জন্য নিজেকে সমর্পণ করে দেয়। কিন্তু সেই সাথে এটাও ভাবা দুরকার যে, এই প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করতে গেলে শয়তানের দিক থেকে নিশ্চয়ই বাধা আসবে। পৃথিবীতে ত্রাণকর্তার রাজ্য প্রতিষ্ঠা হতে দেখলে সে মোটেও সন্তুষ্ট হবে না। সে বলবে, যে পরিমাণ অর্থ দানের প্রতিজ্ঞা করা হয়েছে সেটা বেশি হয়ে গেছে এবং এতে করে তার পরিবারকে ভরণপোষ্ণ দেওয়া বা ভবিষ্যতকে সুরক্ষিত রাখার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হবে। AABen 58.3
ঈশ্বরই মানুষেকে সমস্ত শয়ায় সম্পদ দিয়ে থাকেন এবং তিনি তা করেন যেন মানুষ তার কাজের জন্য সেখান থেকে দান করতে পারে। তিনিই উজ্জ্বল সূর্যালোক এবং বৃষ্টি দেন। তিনিই ফসলের বৃদ্ধি দেন। তিনিই আমাদেরকে সুস্বাস্থ্য দেন এবং সম্পদ আহরণের শক্তি ও সামর্থ দেন। আমাদের সমস্ত আশীর্বাদ তাঁর ফলবন্ত হাত থেকে আসে। এর প্রতিদান হিসেবে তিনি চান যেন সমস্ত নারী ও পুরুষ তাঁকে দশমাংশ ও উৎসর্গ দানের মধ্য দিয়ে তাঁদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে— ধন্যবাদের দান প্রদান করে, স্বেচ্ছায় উপহার দান করে। ঈশ্বর যেভাবে পরিকল্পনা করেছিলেন সেভাবেই যদি মানুষ তাঁদের সমস্ত সম্পদের দশমাংশ ঈশ্বরের ভান্ডারে আনত তাহলে প্রভুর কাজে এতদিনে আরও বহুলাংশে অগ্রগতি সাধিত হত। AABen 58.4
কিন্তু মানুষের হৃদয়ের স্বার্থপরতার কারণে অননিয় ও সাফীরার মত কঠিন হয়ে আছে। ফলে তাঁরা একদিকে প্রতিজ্ঞাত পরিমাণ থেকে কিছু অংশ নিজেদের জন্য রেখে ঈশ্বরের বিধান পালণের ভান করেছে। নিজেকে তুষ্ট করার জন্য অনেকেই যথেচ্ছ খরচ করেছে। নারী ও পুরুষেরা তাঁদের ভোগ বিলাস ও তাঁদের রুচিকে তুষ্ট করার জন্য অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও পেভুর কাছে সামান্য কিছু উপহার নিয়ে আসছে। তাঁরা ভুলে যায় যে, ঈশ্বরের যে সকল আশীর্বাদ তারা এতদিন ভোগ করেছে তাঁর একটি নির্দিষ্ট অংশ তাদেরকে ফেরত দিতেই হবে। সে সময় অননিয় ও সাফীরার মত তিনি আর তাঁদের মিথ্যে ও ভন্ডামির দান গ্রহণ করবেন না। AABen 59.1
এই ভন্ড ও মিথ্যাবাদীদের কঠিন শাস্তি দেওয়া মধ্য দিয়ে ঈশ্বর আমাদেরকে এই শিক্ষা দিতে চান যে, ভন্ডামি ও প্রতারণার প্রতি তাঁর ঘৃণা ও অসন্তোষ কতটা তীব্র। সব কিছু দান করে দেওয়ার ভান করলেও অননিয় ও সাফীরা পবিত্র আত্মার সাথে মিথ্যে বলেছিল এবং এর ফলশ্রুতিতে তারা তাদের বর্তমান জীবন ও আসন্ন অনন্ত জীবন দুটোই হারিয়েছিল। যে ঈশ্বর তাদেরকে শাস্তি দিয়েছিলেন সেই একই ঈশ্বর আজ সমস্ত মিথ্যাকে দোষারোপ করছেন।তিনি সেই পবিত্র নগরীর বিষয়ে ঘোষণা করেছেন যে, “অপবিত্র কিছু অথবা ঘৃণ্যকর্মকারী ও মিথ্যাচারী কেহ কখনও তাহাতে প্রবেশ করিতে পারিবে না।” প্রকাশিত বাক্য ২১:২৭। সত্য বলার সাথে আর কোন আপোষ নয়। সত্যকে তুলে ধরা আমাদের জীবনের একটি অংশ হয়ে উঠুক। সত্যকে হালকাভাবে নেওয়া এবং নিজের স্বার্থচিন্তাকে প্রাধান্য দেওয়ার মানে বিশ্বাসকে চুরমার করে দেওয়া। “অতএব সত্যের কটিবন্ধনীতে বন্ধকটি হইয়া ... দাঁড়াইয়া থাক।” ইফিষীয় ৬:১৪। যে মিথ্যা বলে সে তাঁর আত্মাকে বাজারে বিকিয়ে দেয়। হয়তো সে কোন জরুরি পরিস্থিতিতে মিথ্যা বলতে বাধ্য হয়েছে; হয়তো সে কোন বিশেষ ব্যবসায়িক সুবিধা লাভের জন্য মিথ্যা বলেছে, যা স্বাভাবিক উপায়ে পাওয়া সম্ভব ছিল না; কিন্তু এক সময় সে নিজেকে এমন স্থানে আবিষ্কার করবে যখন সে আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারবে না। নিজে একজন মিথ্যেবাদী হওয়ায় অন্য কাউকে সে বিশ্বাস করতে পারবে না। AABen 59.2
অননিয় ও সাফীরার ক্ষেত্রে ঈশ্বরের সাথে প্রতারণার বিচার খুব দ্রুত করা হয়েছিল। এই একই পাপ মন্ডলীর ইতিহাসে বারবার সংঘটিত হতে দেখা যায় এবং তা আমাদের সময়েও ঘটছে। যদিও আপাতদৃষ্টিতে ঈশ্বর সেগুলোর বিচার এখনই করছেন না বটে ,কিন্তু প্রেরিতদের সময়ে তা ঈশ্বরের চোখে যতটা করা হয়েছে; এই পাপের শাস্তি হিসেবে ঈশ্বর তাঁর তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করেছেন; এবং যারা নিজেদেরকে ভন্ডামি ও লোভের কাছে বিকিয়ে দিয়েছেন তারা প্রত্যেকে নিজেদের আত্মার বিনাশ ডেকে নিয়ে এসেছে। AABen 60.1