লজ্জার প্রতীক ও অত্যাচারের অস্ত্র ক্রূশই এই জগতের বয়ে এনেছিল আশা ও পরিত্রাণ। শিষ্যরা ছিলেন সাধারণ মানুষ, যাদের কোন অর্থ সম্পদ বা অস্ত্র ছিল না, ছিল কেবল ঈশ্বেরর বাক্য; তথাপি খ্রীষ্টের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে তারা সবার কাছে যাবপাত্র ও ক্রূশের অসামান্য গল্প শুনিয়েছিলেন এবং সকল প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করেছিলেন। কোন ধরনের জাগতিক সম্মান ও স্বীকৃতি না পেলেও তাঁরা ছিলেন বিশ্বাসের বীর। তাঁদের ওষ্ঠ থেকে স্বর্গীয় অনুগ্রহের যের বাণি নির্গত হয়েছিল তা পুরো বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। AABen 61.1
ক্রূশবিদ্ধ খীষ্টকে একজন অপরাধী হিসেবে গণ্য করার ক্ষেত্রে যেখানে সবচেয়ে বেশি জনসমর্থন , পক্ষাপাতিত্ব ও দ্বন্দ্ব বিরাজ করছিল , সেই যিরূশালেমেই সমস্ত যিহূদীদের সামনে শীষ্যরা অসম সাহসিকতার সাথে খ্রীষ্টের জীবন ,তাঁর ক্রূশারোপন, পুনরুত্থান ও স্বর্গরোহণ প্রচার করতে লাগলেন। যাজক ও শাসনকর্তারা বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে প্রেরিতদের মুখে স্পষ্ট ও সাহসী সাক্ষ্য শুনতে লাগলেন। পুনরুত্থিত ত্রাণকর্তার শক্তি নিঃসন্দেহে এই শীষ্যদের উপরে অর্পিত হয়েছে। অন্যদিকে তাঁদের কাজের মধ্য দিয়ে যে চিহ্ন ও অলৌকিকত্ব প্রকাশ পাচ্ছিল তাতে করে প্রতিদিনই অনেক মানুষ বিশ্বাসী হচ্ছিল। যেখান দিয়ে শিষ্যেরা যেতেন সেখানে লোকেরা অসুস্থ লোকদেরকে “বাহিরে পথে পথে আনিয়া শয্যায় ও খাটিয়াতে করিয়া রাখিত, যেন পিতর আসিবার সময়ে অন্ততঃ তাঁহার ছায়া কাহারও কাহারও উপরে পড়ে।” এখানে রোগীদের সাথে মন্দ আত্মায় পাওয়া লোকদেরও আনা হত। জনতা তাদেরকে ঘিরে ধরত এবং এর মধ্যে যারা সুস্থ হত তাঁরা চিৎকার করে ঈশ্বরের গৌরব করত এবং মহান ত্রাণকর্তার নামে মহিমা করত। AABen 61.2
যাজক ও শাসনকর্তাররা দেখলেন যে, খ্রীষ্টকে তাঁদের চেয়ে বেশি সম্মানের আসনে বসানো হচ্ছে। পুওরুত্থানে অবিশ্বাসী সদ্দূকীরা যখন শুনল যে , প্রেরিতগণ খ্রীষ্টের মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে ওঠার কথা প্রচার করছেন, তখন তাঁরা ক্রোধান্বিত হল। তাঁরা বুঝতে পারল যে, প্রেরিতগণ যদি একজন পুনরুত্থিত ত্রাককর্তার কথা প্রচার করতে থাকেন এবং তাঁরা আশ্চর্য কাজ করতে থাকেন, তাহলে পুনরুত্থানের বিপক্ষে সমস্ত মতবাদই লোকেরা প্রত্যাখ্যান করবে এবং সদ্দূকীরা খুব তাড়াতাড়ি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। শিষ্যেরা তাঁদের শীক্ষা দানে যিহূদীদের আচার অনুষ্ঠানকে হেয় করায় এবং বলি উৎসর্গকে মূল্যহীন ঘোষ্ণা কররা ফরীশীরাও অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিল। AABen 61.3
এত দিন ধরে এই নতুন ধর্মমতকে দাবিয়ে রাখার সমস্ত চেষ্টা বিফলে গেছে; কিন্তু এখন সদ্দূকী ও ফরীশী উভয়েই শীষ্যদের সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য বদ্ধ পরিকর হয়েছেন, কারণ এতে করে যীশু খ্রীষ্টের মৃত্যুর জন্য তাঁরা দোষী সাব্যস্ত হচ্ছিলেন। ঘৃণা ও ক্রোধ দ্বারা তাড়িত হয়ে যাজেকেরা পিতর ও যোহনের উপর তাদের কালো হাত বাড়ালেন এবং সাধারণ কারাগারে বন্দী করলেন। AABen 62.1
যিহূদী জাতির নেতৃবর্গ ঈশ্বরের মনোনীত জাতি হিসেবে তাঁরা ইচ্ছা ও উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছিলেন।যাদেরকে প্রভু সত্যের ধারক হিসেবে অধিষ্ঠিত করেছিলেন তারাই এই অবস্থার প্রতি বিশ্বাসঘাতক বলে প্রমাণিত হয়েছে এবং ঈশ্বর অন্যদেরকে এই দায়িত্ব প্রদান করেছেন। AABen 62.2
অন্ধ দিহূদী নেতাদের সযত্নে লালিত ধরমমতকে খর্ব করছিল বলে প্রেরিতদের বিরুদ্ধে তাঁরা তাদের তথাকথিত ধার্মিক ক্রোধে জ্বলে উঠেছিলেন। এমনকি তাঁরা এ কথা স্বীকারও করেননি যে তারা ঈশ্বরের বাক্য সঠিকভাবে উপল্বধি করতে পারেনি, কিংবা তারা শাস্ত্রকে বিকৃত করেছেন বা ভূল ব্যাখ্যা করেছেন। তারা এমন মানুষের মত আচরণ করেছেন যারা ইতোমধ্যে যুক্তিতে হেরে বসে আছে। তাদের মতে আমরা লোকদেরকে যে শিক্ষা দিই তার বিরুদ্ধ মতবাদ শিক্ষা দেওয়ার মত সাহস এই সামান্য জেলেগুলোর হয় কি করে? এই নতুন ধর্মমতের শিক্ষাকে নির্বাপিত করার জন্য যারা তা শিক্ষা দিচ্ছিলেন তাদেরকে তারা বন্দী করল। AABen 62.3
এই ঘটনায় শীষ্যরা নিরুৎসাহিত হননি কিংবা দমে যাননি। পবিত্র আত্মা তাঁদের অন্তরে খ্রীষ্টের এই বাজ্য নিয়ে আসলেনঃ “দাস আপন প্রভু হইতে বড় নয়; লোকে যখন আমাকে তাড়ানা করিয়াছে , তখন তোমাদিগকেও তাড়না করিবে; তাহারা যদি আমার বাক্য পালন করিত, তোমাদের বাক্যও পালন করিত। কিন্তু তাহারা আমার নামের জন্য তোমাদে প্রতি এই সমস্ত করিবে, কারণ আমাকে যিনি পাঠাইয়াছেন, তাঁহাকে তাহারা জানে না।” “লোকে তোমাদিগকে সমাজ হইতে বাহির করিয়া দিবে; এমন কি সময় আসিতেছে, যখন যে কেহ তোমাদিগকে বধ করে , সে মনে করিবে, আমি ঈশ্বরের উদ্দেশে উপাসনা—বলি উৎসর্গ করিলাম।” “কিন্তু, আই তোমাদিগকে এই সকল কহিলাম, যেন এই সকলের সময় যখন উপস্থিত হইবে , তখন তোমরা স্মরণ করিতে পার যে, আই তোমাদিগকে এই সকল বলিয়াছি।” যোহন ১৫:২০, ২১:১৬:২,৪। AABen 62.4
স্বর্গের ঈশ্বর, বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের শাসক শীষ্যদের এই বন্দীত্ব থেকে মুক্ত করার ভার নিজের হাতে তুলে নিলেন, কারণ লোকেরা তাঁরই কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছিল। রাতের বেলায় সদাপ্রভুর দূত কারাগারের দ্বার খুলে দিলেন এবং শীষ্যদেরকে বললেন, “তোমরা যাও, ধর্মধামে দাঁড়াইয়া লোকদিগকে এই জীবনের সমস্ত কথা বল।” এই আজ্ঞা ছিল যিহূদী শাস্কদের দেওয়া আদেশের সম্পূর্ণ বিপরীত; কিন্তু প্রেরিতগণ কি বলেছিলেন, শাসনকর্তাদের কাছ থেকে অনুমতি না পেয়ে আমরা কারাগার থেকে বের হতে পারি না? না; ঈশ্বর বিলেছেন, “যাও,” আর তারা তা মান্য করেছেন। “তাহারা প্রভাত কালে ধর্মধামে প্রবেশ করিয়া উপদেশ দিতে লাগিলেন।” AABen 63.1
পিতর ও যোহন যখন অবিশ্বাসীদের কাছে উপস্থিত হলেন এবং জানালেন কিভাবে স্বর্গদূত তাঁদেরকে এক দল সৈন্যের মধ্য দিয়ে কারাগার থকে বের করে এনেছে, যখন তারা ঘোষণা করলেন যে কাজ তারা শুরু করেছিলেন তা থেমে যায়নি, তখন ভাইয়েরা উল্লাসিত ও আনন্দিত হলেন। AABen 63.2
এর মধ্যে মহাযাজক এবং তাঁর সাথের লোকেরা “মহাসভাকে এবং ইস্রায়েল—সন্তানগণের সমস্ত প্রাচীনদলকে ডাকিয়া একত্র করিলেন।” যাজক ও শাসকেরা শীষয়দেরকে বিপ্লবের দায়ে, অননীয় ও সাফিরাকে হত্যার দায়ে, অননিয় ও সাফীরাকে হত্যার দায়ে এবং যাজকদের ক্ষ্মতা হরণের ষড়যন্ত্র করার দায়ে অভিযুক্ত করার চিন্তা করেছিলেন। তারা এই সব কথা বলে জনতাকে খেপিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন যেন যীশুকে যেভাবে তারা জন্তার সমর্থনে ক্রূশে দিতে পেরেছিল সেভাবে প্রেরিতগণকেও একইভাবে হত্যা করতে পারে। তারা জানতেন যে এমন অনেকেই আছে খ্রীষ্টের শীক্ষা গ্রহণ করেনি এবং তারা যিহূদী শাসন্তন্ত্রের অন্ধ সমর্থক হওয়ায় তাতে সামান্য কোন পরিবর্তনেরও ঘোর বিরোধী ছিল। যাজকেরা এই ভেবে ভয় পাচ্ছিলেন যে, যারা অসন্তুষ্ট অবস্থায় আছে তারা যদি এই প্রেরিতদের প্রচারিত সত্যকে গ্রহণ করে নেয় এবং যীশুকে মশীহ বলে গ্রহণ করে , তাহলে পুরো জন্তার আক্রোশ ধর্মীয় নেতাদের উপরে গিয়ে পড়বে এবং তাদেরকেই তখন খ্রীষ্টের হত্যাকান্ডের জন্য জবাব্দিহি করতে হবে। কাজেই তারা এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য কঠিন পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। AABen 63.3
বন্দীদেরকে তাদের সামনে নিয়ে আসার আসেশ দেওয়ার পর ফিরতি সংবাদ শুনে তারা যারপরনাই বিস্মিত হলেন। তাঁদেরকে বলা হল যে, কারাগারের দরজা শক্ত করে বন্ধ করা আছে এবং সৈন্যও সেখানে মোতায়েন করা আছে, অথচ ভেতরে কোন বন্দী নেই। AABen 64.1
এরপরেই আরও হতবাক করা খবর তাঁদেরকে দেওয়া হল, “দেখুন,আপনারা যে লোকদিগকে কারাগারে রাখিয়াছিলেন , তাহারা ধর্ম AABen 64.2
ধামে দাঁড়াইয়া আছে, ও লোকদিগকে উপদেশ দিতেছে।তখন সেনাপতি পদাতিকদিগকে সঙ্গে করিয়া তাথায় গিয়া তাহাদিগকে আনিলেন, কিন্তু বলের সহিত নয়, কেননা তাহারা লোকদিগকে ভয় করিলেন, পাছে লোক তাহাদিগকে পাথর মারে।” AABen 64.3
যদিও প্রেরিতগণ অলোউকিকভাবে কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছিলেন,তথাপি বিচার ও শাস্তি থেকে তারা তখনো সম্পূর্ণ রেহাই পাননি। খ্রীষ্ট যখন তাদের সাথে ছিলেন সে সময় বলেছিলেন, “তোমরা আপনাদের বিষয়ে সাবধান। লোকে তোমাদিগকে বিচার—সভায় সমর্পণ করিবে।” মার্ক ১৩:৯। তাঁদেরকে উদ্ধার করার জন্য একজন স্বর্গদূতকে পাঠানোর মধ্য দিয়ে ঈশ্বর তাদের প্রতি তাঁর ভালোবাসা এবং তাঁর উপস্থিতির চিহ্ন প্রকাশ করেছেন। এখন তাদের দায়িত্ব হচ্ছে, যার সুসমাচার তারা প্রচার করেছেন তাঁর জন্য কষ্টভোগ করা। AABen 64.4
ভাবভাদী ও প্রেরিতদের ইতিহাসে ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্যের বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে। খ্রীষ্টের সাক্ষীগণ বন্দীত্ব, নির্যাতন এমনকি মৃত্যুও বরণ করেছেন, কিন্তু ঈশ্বরের আদেশ একবারের জন্যও ভঙ্গ করেননি। পিতর ও যোহন যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সুসমাচার প্রচারের ইতিহাসে চিরভাস্বর। দ্বিতীয়বারের মত যখন তারা প্রায় মৃত্যুর মুখে উপনঈত হয়ে মহাসভার সামনে দাঁড়ালেন, তখনও তাদের কথায় বা কাজে ভয় কিংবা দ্বীধার বিন্দুমাত্র লেশ ছিল না । কাজেই মহাযাজকযখন বললেন, “আমি তোমাদিগকে এই নামে উপদেশ দিতে দৃঢ়রূপে নিষেধ করিয়া ছিলাম; তথাপি দেখো , তোমরা আমাদের উপদেশ যিরূশালেম পরিপূর্ণ করিয়াছ, এবং সেই ব্যাক্তির রক্ত আমাদের উপরে বর্তাইতে মনস্থ করিতেছে,” তখন পিতর উত্তর দিলেন ,“মানুষয়দে অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করিতে হইবে।” স্বর্গ থেকে একজন দূত এসে তাঁদেরকে কারাগার থেকে মুক্ত করেছেন এবং তাদেরকে ধর্মআধামে উপদেশ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। এই নির্দেশ অনুসরণ করার মধ্য দিয়ে তারা ঈশ্বরের আদেশই মান্য করেছেন এবং যে কোন মূল্যে তাঁরা তাঁর আদেশ মান্য করে যাবেন। AABen 64.5
তখন শিষ্যদের উপর পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণা উপনীত হল; অভিযুক্তরাই তখন হয়ে উঠলেন অভিযোগকারী।তারা মহাসভার সদস্যদেরকে যীশু খ্রীষ্টের মৃত্যুর জন্য দায়ী করলেন। “আমাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সেই যীশুকে উত্থাপন করিয়াছেন,” পিতর ঘোষণা করলেন, “যাহাকে আপনারা গাছে টাঙ্গাইয়া বধ করিয়াছিলেন ; আর তাহাকেই ঈশ্বর অধিপতি ও ত্রাণকর্তা করিয়া আপন দক্ষিণ হস্ত দ্বারাউন্নত করিয়াছেন; যেন ইস্রায়েলকে মনপরিবর্তন ও পাপ মোচন দান করেন। এই সকল বিষয়ে আমরা সাক্ষী , এবং যে আত্মা ঈশ্বর আপন আজ্ঞাবহদিগকে দিয়াছেন, সেই পবিত্র আত্মাও সাক্ষী।” AABen 65.1
এই কথা শুনে যিহূদীরা এতটাই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল যে, তাঁরা আইন নিজের হাতে তুলে নিতে চাইল এবং আর কোন বিচার প্রক্রিয়ায় না গিয়ে কিংবা রোমীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি না নিয়েই তাঁরা বন্দীদেরকে হত্যা করতে চাইল। ইতোমধ্যে তারা যীশুর রক্তপাতের দায়ে অভিযুক্ত , আর এখন তারা তাঁর শিষ্যদের হত্যা করে তাদের রক্তে নিজেদের হাত রঞ্জিত করতে চাইছে। AABen 65.2
কিন্তু সেই মহাসভায় একজন মানুষ ছিলেন যিনি শিষ্যদের বলা সমস্ত কথায় ঈশ্বরের কন্ঠ চিনতে পেরেছিলেন। তিনি ছিলেন গমলীয়েল, যিনি ছিলেন বিখ্যাত একজন ফরীশী এবং উচ্চশিক্ষিত ও পদস্থ একজন ব্যক্তি। তিনি স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছিলেন যে , যাজকদের নেওয়া এই সহিংস হঠকারী সিন্ধান্তের কারণে ভয়াভহ পরিণতি ঘটতে পারে। এ কারণে প্রথমে তিনি বন্দিদেরকে সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি ভাল করেই জানতেন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য কোন কিছুকেই মানবে না। AABen 65.3
এরপর তিনি গভীর সুবিবেচনা নিয়ে ও সুস্থিরভাবে তাঁদেরকে বল্লেনঃ । “হে ইস্রায়েল—লোকেরা, সেই লোকদের বিষয়ে তোমরা কি করিতে উদ্যত হইয়াছ, তদ্বিষ্যে সাবধান হও। কেননা ইতিপূর্বে থুদা উঠিয়া আপনাকে মাহপুরুষ করিয়া বলিয়াছিল, এবং কম্বেশ চারি শত জন তাহার সঙ্গে যোগ দিয়াছিল; সে হত হইল, এবং যত লোক তাহার অনুগত হইয়াছিল সকলে ছিন্নভিন্ন হইয়া পড়িল, কেহই রহিল না। সেই ব্যক্তির পরে নাম লিখিয়া দিবার সময়ে গালীলীয় যিহূদা উঠিয়া কতকগুলি লোককে আপনার পশ্চাৎ টানিয়া লইয়াছিল; সেও বিনিষ্ট হইল, এবং যত লোক তাহার অনুগত হইয়াছিল, সকলে ছড়াইয়া পড়িল। এক্ষণে আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তোমরা এই লোকদের হইতে ক্ষান্ত হও, তাহাদিগকে থাকিতে দেও; কেননা এই মন্ত্রণা কিম্বা এই ব্যাপার যদি মনুষ্য হইতে হইয়া থাকে, তবে লোপ পাইবে; কিন্তুযদি ঈশ্বর হইতে হইয়া থাকে , তবে তাহাদিগকে লোপ লোপ করা তোমাদের সাধ্য নয়, কি জানি , দেখা যাইবে যে, তোমরা ঈশ্বরের সহিত যুদ্ধ করিতেছি।” AABen 65.4
যাজেকেরা গমলীইয়েলের কথায় স্পষ্ট যুক্তি খুঁজে পেয়েছিলেন এবং তাঁর কথায় রাজিও হয়েছিলেন। তথাপি তাদের সহিংস চিন্তাধারা ও ঘৃণা কোনভাবে রোধ করা যাচ্ছিল না। শিষ্যদেরকে মারাত্মকভাবে প্রহার করে এবং তাঁদেরকে যীশুর নাম আর কখনো প্রচার করলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে তারা তাঁদেরকে ছেড়ে দিলেন। “তখন তাঁহার মহাসভার স্মমুখ হইতে চলিয়া গেলেন, আনন্দ করিতে করিতে গেলেন, কারণ তাঁহারাই সেই নামের জন্য অপমানিত হইবার যোগ্যপাত্র গনিত হইয়াছিলেন। আর তাঁহার প্রতিদিন ধর্মধামে ও বাটিতে উপদেশ দিতেন, এবং যীশুই যে খ্রীষ্ট, এই সুসমাচার প্রচার করিতেন, ক্ষান্ত হইতেন না।” AABen 66.1
ক্রূশারোপিত হওয়ার আগে খ্রীষ্ট তাঁর শীষ্যদেরকে শান্তি প্রতিষ্ঠার এক মহান দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলেন। “শান্তি আমি তোমাদেরকে কাছে রাখিয়া যাইতেছি, আমারই শান্তি তোমাদিগকে দান করিতেছি; জগৎ যেরূপ দান করে,আমি সেইরূপ দান করি না। তোমাদের হৃদয় উদ্বিগ্ন না হউক, ভীতও না হউক।” যোহন ১৪:২৭। এউ শান্তি জাগতিক শান্তি নয়।খ্রীষ্ট কখনও মন্দতার সাথে আপোষ করে শান্তি ক্রয় করেননি। খ্রীষ্ট তার শিষ্যদের জন্য যে শান্তি রেখে গেছেন তা যত না বাহ্যিক তার চেয়ে বেশি অন্তরের। আর এই শান্তি শত কষ্ট ও যন্ত্রণার মধ্যেও তাঁর সাক্ষ্যের মাধ্য দিয়ে বিরাজ করবে। AABen 66.2
খ্রীষ্ট নিজের সম্পর্কে বলেছেন,“মনে করিও না যে, আমি পৃথিবীতে শান্তি দিতে আসিয়াছি; শান্তি দিতে আসি নাই , কিন্তু খড়্গ দিতে আসিয়াছি।” মথি ১০:৩৪। যিনি শান্তিরাজ, তিনিই বিভক্তি ঘটাবেন। যিনি শান্তির সুসমাচার শোনাতে ও মানুষের অন্তরে আশা ও আনন্দ জাগাতে এসেছিলেন, তিনিই এমন এক বিপরীত কথা বললেন যা মানবীয় অনন্তরে একটি গভীর অন্তরজ্বালা ও ভাবাবেগের সৃষ্টি করল। তিনি তাঁর অনুসারীদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, “জগতে তোমরা ক্লেশ পাইতেছ।” “লোকেরা তোমাদের উপরে হস্তক্ষেপ করিবে, আমার নামের নিমিত্ত তোমরা রাজাদের ও শাসনকর্তাদের সম্মুখে নীত হইবে।” যোহন ১৬:৩৩; লুক ২১:১২, ১৬। AABen 66.3
এই ভাবিষ্যদ্বাণী পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পূর্ণতা পেয়েছিল। মানুষের হৃদয়কে যন্ত্রণাগ্রস্থ ও পীড়িত করতে শয়তান সম্ভাব্য যত উপায়ে লাঞ্ছনা, ভর্ৎসনা ও নৃশংসতার আয়োজন করতে পারে, তাঁর সবই যীশুর অনুসারীদেরকে ভোগ করতে হয়েছে। আবারও এর সবই পূর্ণতা পাবে; কারণ মাংসিক হৃদয়এখনও ঈশ্বরের বিধানের বিরোধিতা করে আসছে এবং কোনভাবেই তা তাঁর আদেশের বাধ্যগত হচ্ছে না। প্রেরিতদের যুগে এই জগত খ্রীষ্টের আদর্শে যতটা সহাবস্থান করেছে, এখন আর তেমন পরিস্থিতি নেই। “ওকে ক্রূশে দাও! ওকে ক্রূশে দাও!” এই চিৎকারের মফহ্য দিয়ে ঘৃণা প্রকাশ পেয়েছে, সেই একই ঘৃণা ও আক্রোশ আজও অবাধ্যতার সন্তান্দের মধ্যে লক্ষনীয়। অন্ধকার যুগে যে আত্মা নারী ও পুরুষদেরকে বন্দি করেছে , নির্বাসিত করেছে , মৃত্যুমুকজে পতিত করেছে , যা ইনকুইজিনকে সহিংস অত্যাচার ও নির্যাতনের অভিযান চলাতে উদ্বুদ্ধ করেছে , যা সাধু বার্থেলমিউকে নৃশংসভাবে হত্যা করতে প্ররোচণা দিয়েছে, এবং যা স্মিথফিল্ডের আগুনে প্রথম ফুলকি জ্বালিয়েছে, তা এখনও মন্দ আত্মায় প্রভাবিত আত্মার মধ্য দিয়ে অতি প্রবল শক্তি নিয়ে কাজ করে চলেছে। সত্যের ইতিহাস সব সময়ই ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যে টানাপোড়েনের ইতিহাস হিসেবে আবর্তিত হয়েছে। পৃথিবীর যেখানেই সুসমাচার প্রচার করা হয়েছে সেখানেই সমস্ত প্রকার বিরোধিতা, অনিষ্ট, ক্ষতি ও কষ্টভোগের সম্মুখীন হতে হয়েছে। AABen 67.1
অতীতে যারা খ্রীষ্টের জন্য নির্যাতন ভোগ করেছেন তাদের মূল্য শক্তি কী ছিল? তাদের শক্তি ছিল ঈশ্বরের সাথে সম্মিলন,পবিত্র আত্মার সাথে সম্মিলন, খ্রীষ্টীর সাথে সম্মিলন । নিন্দা ও নির্যাতনের কারণে অনেকেই তাদের পার্থিব বন্ধুবান্ধব হারিয়েছেন, কিন্তু খ্রীষ্টের ভালবাসা থেকে কখনোই তারা বিচ্যুত হননি। ত্রাণকর্তার সবচেয়ে বেশি আনন্দিত হন যখন তাঁর নামের কষ্টভোগ ও নির্যাতন সহ্যের পরও বীশ্বাসীর আত্মা সত্যকে অস্বীকার করে না। “আমিও তাঁহাকে প্রেম করিব,” খ্রীষ্ট বলেছেন ,“আর আপনাকে তাঁহার কাছে প্রকাশ করিব।” যোহন ১৪:২১। যখন খ্রীষ্টের জন্য বিশ্বাসীরা পার্থিব আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়ান, তখন খ্রীষ্টও তাদের পাশে এসে দাঁড়ান। বিশ্বাসীরা যখন কারাগারে আবদ্ধ থাকেন, খ্রীষ্ট নিজেকে তাদের সামনে প্রকাশ করেন এবং তাঁর ভালবাসায় তাদের হৃদয় পূর্ণ করেন। বিশ্বাসী যখন খ্রীষ্টের জন্য মৃত্যুকে বরণ করেন, তখন ত্রাণকর্তা তাঁকে বলেন , ওরা কেবল দেহ বিনষ্ট করতে পারে , কিন্তু আত্মার কোন ক্ষতি করতে পারে না । “সাহস কর ,আমিই জগৎকে জয় করিয়াছি। “ভয় করিও না, কারণ আমি তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি; ব্যাকুল হইউও না , কারণ আমি তোমার ঈশ্বর; আমি তোমাকে পরাক্রম দিব; আমি তোমার সাহায্য করিব; আমি আপন ধর্মশীলতার দক্ষিন হস্ত দ্বারা তোমাকে ধরিয়া রাখিব।” যোহান ১৩:৩৩; যিশাইয় ৪১:১০। AABen 67.2
“যাহারা সদাপ্রভুতে নির্ভর করে, তাহারা সিয়োন পর্বতের সদৃশ, যাহা অটল ও চিরস্থায়ী। যিরূশালেমের চারদিকে পর্বতগণ আছে, আর সদাপ্রভু আপন প্রজাদের চারিদিকে আছেন, এখন অবধি অনন্তকাল পর্যন্ত আছেন। কেননা দুষ্টতার রাজদণ্ড ধার্মিদের অধিকারের উপরে থাকিবেন না, যেন ধার্মিকগণ অন্যায়ে হস্তক্ষেপ না করে।” “তিনি চাতুরী ও দৌরাত্ম্য হইতে তাহাদের প্রাণ মুক্ত করিবেন, তাঁহার দৃষ্টিতে তাহাদের রক্ত বহুমূল্য হইবে।” গীতসংহিতা — ১২৫:১—৩; ৭২:১৪। AABen 68.1
“বহিনীগণের সদাপ্রভু তাহাদিগকে রক্ষা করিবেন;… তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তাহাদিগকে আপন প্রজারূপ মেষপালের ন্যায় নিস্তার করিবেন, বস্তুতঃ তাহারা মুকুট মণির ন্যায় তাঁহার দেশের উপরে চাকচিক্যবিশিষ্ট হইবে।” সখরিয় ৯:১৫, ১৬। AABen 68.2