বালের ভাববাদীগণকে হত্যা করার পর, উত্তর রাজ্যের দশ বংশের মধ্যে এক শক্তিশালী আত্মিক সংস্কারের পথ সুগম হল। এলিয় তাদের সামনে তাদের ধর্মভ্রষ্টতা তুলে ধরলেন। তিনি তাদেরকে নম্রচিত্ত হয়ে সদাপ্রভুর প্রতি ফিরে আসার আহ্বান জানালেন। স্বর্গে বিচারকার্য পরিচালনা করা হয়েছে, লোকেরা তাদের পাপ সকল স্বীকার করেছে, এবং তাদের পিতৃগণ ঈশ্বরকে, জীবন্ত ঈশ্বরকে জানতে পেরেছে; আর এখন স্বর্গের অভিশাপ তুলে নেয়া হল, এবং ইহ জীবনের আশীর্বাদ নবায়ন করা হবে। বৃষ্টি দ্বারা দেশ নূতন জীবন ফিরে পাবে। “আপনি উঠিয়া গিয়া ভোজন পান করুন,” এলিয় আহাবকে বললেন, “কেননা ভারী বৃষ্টির শব্দ হইতেছে।” অতঃপর ভাববাদী প্রার্থনা করার জন্য পর্বতের উপরে উঠে গেলেন । PKBeng 126.1
বৃষ্টিপাত কোন বাহ্যিক প্রমাণ স্বরূপ ছিল না। এলিয় অতিশয় বিশ্বাস নিয়ে আহাবকে বৃষ্টির জন্য প্রস্তুত হতে বলেছিলেন। ভাববাদী আকাশে কোন মেঘ দেখলেন না; বজ্রধ্বনিও শুনলেন না। তিনি কেবল বলেছিলেন কারণ, সদাপ্রভুর আত্মাই তাকে বলার জন্য অনুপ্রেরণা দান করেছিলেন যেন তিনি দৃঢ় বিশ্বাস সহকারে কথা বলেন। তিনি দিনভর পিছ পা না হয়ে ঈশ্বরের ইচ্ছা সাধন করেছেন এবং ঈশ্বরের ভবিষ্যদ্বাণীতে তার দৃঢ় প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন; আর এখন, তার ক্ষমতা ও সাধ্যমত সমস্ত কিছু সম্পন্ন করে তিনি জানতে পারলেন যে, স্বর্গ আবার পূর্ব কথিত আশীর্বাদ বর্ষণ করবেন। PKBeng 126.2
একই ঈশ্বর যিনি অনাবৃষ্টি প্রদান করেছিলেন, তিনি ন্যায্য কর্মের পুরস্কাররূপে প্রচুর বৃষ্টিপাতের প্রতিজ্ঞাও করেছিলেন; আর তখন এলিয় প্রতিজ্ঞাত বর্ষার অপেক্ষা করলেন। নম্রভাবে, তিনি আপন মুখ দুই জানুর মধ্যে রাখলেন । অনুতপ্ত ইস্রায়েলের পক্ষে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলেন। PKBeng 126.3
আর ঈশ্বর যে তার প্রার্থনা শ্রবণ করেছেন তার প্রমাণ হেতু এলিয় পুনঃপুনঃ তার দাসকে কিছু দেখার জন্য ভূমধ্যসাগরের দিকে পাঠালেন । প্রতিবারে তার দাস এই কথা নিয়ে ফিরে আসে, “কিছুই নেই।” ভাববাদী অধৈর্য হয়ে বিশ্বাস হারাননি, কিন্তু একান্ত মনে অবিরত প্রার্থনা করলেন। ঐ দাস পর পর, ছয়বার বাইরে গিয়ে এই উত্তর নিয়ে ফিরে এসেছে, “কিছুই নেই।” এলিয় তাকে আরও একবার পাঠালেন; আর এই বার ভৃত্য ফিরে এসে বলল, “দেখুন মনুষ্যহাতের ন্যায় ক্ষুদ্র মেঘ সমুদ্র হইতে উঠিতেছে।” PKBeng 127.1
এই যথেষ্ট। আকাশ কৃষ্ণবর্ণ হয়ে আসবে, এলিয় আর অপেক্ষা করেননি। বিশ্বাস নিয়ে ঐ ক্ষুদ্র মেঘে প্রচুর বৃষ্টি লক্ষ্য করলেন; এবং তিনি তার বিশ্বাস হেতু কার্য করলেন, তিনি অনতিবিলম্বে তার দাসকে এই বার্তাসহ আহাবের কাছে পাঠালেন, “আপনার রথ প্রস্তুত করুন, এবং দ্রুত যাত্রা করুন পাছে বৃষ্টিতে আপনার গমনের ব্যাঘাত হয়।” PKBeng 127.2
যেহেতু এলিয় বিশ্বাসের একজন বড় মাপের মুনুষ ছিলেন। আর ঈশ্বর তাকে ইস্রায়েলের ইতিহাসের এই কঠিন সময়ে ব্যবহার করতে পেরেছিলেন । তিনি প্রার্থনা করলেন, আর তার বিশ্বাস স্বর্গের প্রতিজ্ঞাসকল আকড়িয়ে ধরল, এবং তিনি প্রার্থনায় নিবিড় থাকলেন যে পর্যন্ত না তার আবেদনের উত্তর প্রদান করা হল । তিনি পূর্ণ প্রমাণ লাভের জন্য অপেক্ষা করলেন না যে ঈশ্বর তাঁর প্রার্থনা শুনেছেন কিনা, কিন্তু ঐশ্বরিক অনুগ্রহের সামান্যতম প্রমাণের ওপরে সকল ঝুঁকি নিতে ইচ্ছা করলেন। তথাপি ঈশ্বরের নেতৃত্বাধীন যা করতে সমর্থ ছিলেন, ঈশ্বরের সেবা কাজের পরিধির মধ্যে সকলেই করতে পারে, কেননা গীলিয়দ পাহাড়ের ভাববাদীর জন্য এরূপ লেখা হয়েছে; “এলিয় আমাদের ন্যায় সুখ-দুঃখভোগী মনুষ্য ছিলেন, আর তিনি দৃঢ়তার সাথে প্রার্থনা করিলেন, যেন বৃষ্টি না হয়, এবং তিন বছর ছয় মাস ভূমিতে বৃষ্টি হইল না।” যাকোব ৫:১৭। PKBeng 127.3
অদ্য পৃথিবীতে এই প্রকার বিশ্বাসই প্রয়োজন- যে বিশ্বাস ঈশ্বরের বাক্যের প্রতিজ্ঞা ধরে রাখবে এবং যে পর্যন্ত স্বর্গ শ্রবণ না করবে সে পর্যন্ত এটি ছাড়বে না। এরূপ বিশ্বাস আমাদের ঘনিষ্ঠরূপে স্বর্গের সাথে সংযুক্ত করে, এবং আমাদের অন্ধকারের ক্ষমতার সাথে এঁটে উঠতে শক্তি আনয়ন করবে। “বিশ্বাস দ্বারা ইহাঁরা নানা রাজ্য পরাজয় করলেন, ধার্মিকতার অনুষ্ঠান করলেন, নানা প্রতিজ্ঞার ফল প্রাপ্ত হইলেন, সিংহদের মুখ বন্ধ করিলেন, অগ্নির ত্যেজ নির্বাণ করিলেন, খড়গের মুখ এড়াইলেন, দুর্বলতা হইতে বল প্রাপ্ত হইলেন, যুদ্ধে, বিক্রান্ত হইলেন, অন্যজাতীয়দের সৈন্যশ্রেণী তাড়াইয়া দিলেন।” ইব্রীয় ১১:৩৩, ৩৪। অদ্য বিশ্বাসে, আমাদের জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশের শীর্ষস্থান সমূহে পৌঁছতে হবে। “যে বিশ্বাস করে, তাহার পক্ষে সবই সাধ্য।” মার্ক ৯:২৩। PKBeng 128.1
কাজী ; বিশ্বাস সর্বস্থানের প্রার্থনার একটি অপরিহার্য উপাদান। “যে ব্যক্তি ঈশ্বরের নিকট উপস্থিত হয়, তাহার ইহা বিশ্বাস করা আবশ্যক যে ঈশ্বর আছেন, এবং যাহরা তাঁহার অন্বেষণ করে, তিনি তাহাদের পুরস্কারদাতা।” “যদি তাঁহার ইচ্ছানুসারে কিছু যাচঞা করি, তবে তিনি আমাদের যচঞা শুনেন। আর আমরা যদি জানি যে, আমরা যাহা যাচঞা করি, তিনি তাহা শুনেন, তবে ইহাও জানি যে, আমরা তহার কাছে যাহা যাচঞা করেছি, সেই সকল পেয়েছি।” ইব্রীয় ১১:৬; ১ যোহন ৫:১৪,১৫। যাকোবের নাছোড়বান্দা বিশ্বাস, এলিয়ের একরোখা ধৈর্য্যসহ, আমরা আমাদের আবেদনসমূহ, তার প্রতিজ্ঞার দাবী করতে পারি। তাঁর সিংহাসনের সম্মান, তাঁর বাক্যের পূর্ণতার জন্য সঞ্চিত রয়েছে। PKBeng 128.2
কর্মিল পর্বতের চারপাশে রাতের আঁধার ঘনিয়ে আসছিল । আহাবও নেমে আসার জন্য প্রস্তুত হলেন। “আর অমনি মেঘে ও বায়ুতে আকাশ ঘোর হইয়া উঠিল ও ভারী বৃষ্টি নামিল; তাহাতে আহাব শকটারোহণে যিথ্রিয়েলে গমন করিলেন।” তিনি অন্ধকার এবং প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্য দিয়ে রাজ-নগরীতে প্রবেশ করলেন। আহাব সামনে কিছুই দেখতে পাচ্ছিলেন না। এলিয়, যিনি, ঈশ্বরের একজন ভাববাদীরূপে তার প্রজাগণের সামনে তাকে নম্র করলেন, এবং পৌত্তলিক পুরোহিতদের হত্যা করলেন তথাপি তাকে ইস্রায়েলের রাজা বলে জ্ঞান করলেন; আর এখন সশ্রদ্ধস্বীকৃতি এবং আনুগত্য স্বীকারের কার্যরূপে এবং ঈশ্বরের শক্তি দ্বারা শক্তিমন্ত হয়ে, তিনি রাজকীয় শকটের অগ্রে অগ্রে দৌড়ে রাজাকে নগরের প্রবেশ দ্বারের দিকে পথ দেখিয়ে নিয়ে গেলেন । PKBeng 128.3
একজন দুষ্ট রাজার প্রতি ঈশ্বরের বার্তাবাহকের প্রদর্শিত এই দয়ার কাজের মধ্যে যারা তাদেরকে ঈশ্বরের দাস বলে দাবী করে তাদের সকলের জন্য একটি শিক্ষা রয়েছে, যারা তাদের নিজেদের জ্ঞানে মহান্ এবং উন্নত, অনেকে মনে করে থাকেন, চাকর-বাকরের কাজ অপেক্ষা তাদের কাজ অনেক ঊর্ধ্বে। এমন কি তারা অত্যাবশ্যকীয় কাজটি করতেও ইতস্ততঃ করে থাকে, তাদের ভয় লোকে দেখবে যে তারা চাকর-বাকরের কাজ করছে। এলিয়ের দৃষ্টান্ত হতে এসকল লোকদের অনেক কিছু শেখার আছে। তার কথায় স্বর্গের ভান্ডার তিন বছর পৃথিবীর হতে বৃষ্টি ধরে রেখেছে। তিনি এককভাবে ঈশ্বরের সম্মান লাভ করেছেন, কৰ্ম্মীলে তার প্রার্থনার উত্তর আকাশ হতে অগ্নি নেমে এসে বলি গ্রাস করা; পৌত্তলিক ভাববাদীদের হত্যার মাধ্যমে তার হাত ঈশ্বরের বিচার নিস্পন্ন করেছে; বৃষ্টির জন্য আবেদন গ্রাহ্য হয়েছে। আর তথাপি, একক বিজয়ের পরে, ঈশ্বর জনগণের সেবার জন্য তাকে সম্মানিত করলেন, আর তিনি চাকর- বাকরের সেবা কাজেও ব্রতী হলেন। যিম্ব্রিয়েলের প্রবেশ দ্বারে এলিয় এবং আহাব একে অন্যের কাছ হতে বিদায় নিলেন। ভাববাদী প্রাচীরের বাইরে থাকলেন, আপনাকে তার শাল দিয়ে ঢাকলেন। এবং ভূমির ওপরে শয়ন করে নিদ্রা গেলেন । রাজা প্রাচীর দ্বার অতিক্রম করলেন, এবং অতি সত্ত্বর তার বাটীতে গিয়ে ঐ দিনের চমৎকার ঘটনাটি এবং ঐশ্বরিক ক্ষমতার ঘটনাটি তার স্ত্রীর কাছে বললেন, যা ইস্রায়েলের কাছে প্রমাণ করেছে, যে, যিহোবা সত্য ঈশ্বর এবং এলিয় তাঁর মনোনীত “বার্তাবাহক। পৌত্তলিক ভাববাদীদের হত্যা করা হয়েছে, এই কথা শোনা মাত্র ঈষেবেল কঠিন মনা এবং নির্দয় হলেন, জ্বলে উঠলেন। তিনি কম্মিলের ঘটনা এবং ঈশ্বরের অতিরিক্ত ক্ষমতা জাহির মেনে নিতে অস্বীকার করলেন এবং দ্বন্দ্বের সম্মুখীন হয়ে, দৃঢ়তার সাথে ঘোষণা করলেন যে, এলিয়কে হত হতে হবে । PKBeng 129.1
ঐ রাতে একজন বার্তাবাহক পরিশ্রান্ত ভাববাদীকে নিদ্রা হতে জাগিয়ে ঈষেবলের এই কথা জানালেন, “কাল এমন সময় যদি আমি তমার প্রাণকে তাঁহাদের একজনের সমান না করি, তবে দেবগণ আমাকে অমুক ও ততোধিক দন্ড দিন।” PKBeng 129.2
মনে হতে পারে এলিয় এমন সাহসীকতার কাজ করে, রাজা এবং পুরোহিতগণ এবং লোকদের উপরে সম্পূর্ণ বিজয়ী হয়ে, হতাশাগ্রস্থ হতে পারেন না, ভীরুতা প্রদর্শন করতে পারেন না। কিন্তু তিনি ঈশ্বরের ভালবাসার এত প্রমাণ পাওয়া সত্ত্বেও মানব জাতির দুর্বলতার ঊর্ধ্বে ছিলেন না; এই বিপদের সময়ে তার বিশ্বাস ও সৎসাহস তাকে ছেড়ে গেল । হতভম্ব হয়ে তিনি তার নিদ্রা থেকে জাগলেন। বৃষ্টি পড়ছিল, চতুর্দিক ঘোর অন্ধকার । তিন বছর পূর্বে ঈশ্বর তাকে তার পথে পরিচালনা দান করেছেন। ঈষেবলের ঘৃণা হতে এবং আহাবের তল্লাশি হতে লুকিয়ে রেখে তাকে আশ্রয় দিয়েছেন, আর ভাববাদী এখন তার জীবন নিয়ে পলায়ন করলেন। বেরশেবাতে উপস্থিত হয়ে তিনি সেখানে আপন চাকরকে রাখলেন। কিন্তু তিনি একদিনের পথ প্রান্তরে অগ্রসর হলেন । PKBeng 130.1
এলিয়ের তার কর্তব্যস্থল হতে পলায়ন করা ঠিক হয়নি। তার উচিত ছিল সেই ব্যক্তির সুরক্ষার দাবীতে ঈষেবলের মুকাবিলা করা যিনি তাকে যিহোবার সম্মানার্থে তাদের প্রতিফল দেবার আদেশ করেছিলেন। বার্তাবাহককে তার এই কথা বলা উচিত ছিল যে, তিনি ঈশ্বরের উপরে নির্ভর করেন, তিনি রাণীর ঘৃণা হতে তাকে রক্ষা করবেন। ঐশ্বরিক ক্ষমতার এক চমৎকার প্রকাশের সাক্ষী হবার মাত্র কয়েক ঘন্টা অতীত হয়েছে, এবং তা থেকে তার এই নিশ্চয়তা প্রাপ্ত হওয়া উচিত ছিল যে তিনি তাকে পরিত্যাগ করবেন না। তিনি যেখানে ছিলেন, সেখানেই যদি থাকতেন, যদি ঈশ্বরকে তার আশ্রয় স্থল এবং বলরূপে গ্রহণ করতেন, সত্যের পক্ষে অটল থাকতেন, তাহলে তিনি ক্ষতি হতে রক্ষা পেতেন। সদাপ্রভু তাকে, ঈষেবলের উপরে তাঁর বিচার প্রেরণ করে বিজয়ের আরও একটি চিহ্ন দিতেন; এবং রাজা এবং লোকদের উপরে যে প্রভাব পড়েছিল তা এক মহা সংস্কার কার্য সাধন করতে পারত। PKBeng 130.2
এলিয়, কৰ্ম্মীলে সাধিত অলৌকিক কার্য হতে অনেক কিছুই প্রত্যাশা করেছিলেন । তিনি আশা করেছিলেন যে, ঈশ্বরের এই ক্ষমতা প্রদর্শনের পরে, আহাবের মধ্য দিয়ে দ্রুত সংস্কার কার্য সাধিত হবে। সারা দিন কৰ্ম্মীল পর্বতের উপরে তিনি অনাহারে অক্লান্ত শ্রম দিয়েছেন। তথাপি যখন তিনি ঈষেবলের প্রবেশদ্বারের দিকে আহাবের শকট পরিচালিত করছিলেন, তখন তার শারীরিক দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও তার সাহস বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু এলিয়ের উচ্চ বিশ্বাস এবং কৃতকার্যতা হেতু তার ওপরে বার বার একটি প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে লাগল। তার ভয় হল, কর্ম্মিলে যে সংস্কার কার্য আরম্ভ হয়েছিল তা স্থায়ী হবে না; ফলে এক উদ্যমহীনতা তাকে পেয়ে বসল । তিনি পীসগা পর্বতে নীত হলেন; এখন তিনি উপত্যকার মধ্যে ছিলেন। সর্বশক্তিমানের অনুপ্রেরণায়; তিনি বিশ্বাসের চরম পরীক্ষার মুকাবিলা করলেন; কিন্তু নিরুৎসাহের এই সময়ে, ঈষেবলের মৃত্যুর হুমকি তার কানে বাজতে লাগল আর শয়তান তখনও এই দুষ্ট স্ত্রীলোকের ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে দৃশ্যতঃ অধিকতর শক্তিশালী হচ্ছিল, ফলে তিনি ঈশ্বরের উপরে আস্থা হারিয়ে ফেললেন। তিনি মাত্রাতিরিক্ত মর্যাদা লাভ করলেন, এবং এটির প্রতিক্রিয়া ছিল। ভয়াবহ । ঈশ্বরকে ভুলে গিয়ে, এলিয় পলায়ন করতে করতে অবশেষে একাকী একটি বিষণ্ন নোংরা স্থানে গিয়ে পৌঁছলেন। সম্পূর্ণরূপে ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত হয়ে তিনি একটি রোতম বৃক্ষের নীচে বসলেন। সেখানে গিয়ে তিনি তার মৃত্যু কামনা করলেন। “ইহা যথেষ্ট; হে সদাপ্রভু,” তিনি বললেন, “এখন আমার প্রাণ লও; কেননা আপন পিতৃপুরুষ হইতে আমি উত্তম নহি।” একজন ভবঘুরে, মানব বসতি হতে অনেক অনেক দূরে, নিরুৎসাহ তার আত্মাকে চুরমার করে দিয়েছে, তিনি আর মানুষের মুখ দেখতে চাইলেন না। অবশেষে সম্পূর্ণ ক্লান্ত হয়ে তিনি নিদ্রা গেলেন । PKBeng 130.3
এসকল অভিজ্ঞতার মধ্যে ভীষণ নিরুৎসাহের সময় আসে, যখন দুঃখই জীবনের নিয়তি তখন বিশ্বাস করা কঠিন যে, ঈশ্বর এখনও তার, পৃথিবী, জাতি সন্তানদের সদয় উপকারী ব্যক্তি; যখন সংকট জীবনকে অতিষ্ট করে, তখনও মৃত্যুই যেন জীবনের কাম্য। আর এরূপ সময়ে মানুষ ঈশ্বরে তার আস্থা হারিয়ে ফেলে এবং সন্দেহের দাস হয়ে পড়ে; অবিশ্বাসীদের দাসত্বে বন্দী হয়। আমরা কি লক্ষ্য করলে দেখব যে, দূতগণ আমাদের বিপদ হতে, চিরস্থায়ী শৈল অপেক্ষা অধিক দৃঢ় একটি ভিত্তির ওপরে আমাদের চরণ স্থাপনপূর্বক প্রাণপন চেষ্টা করে আমাদের রক্ষা করার জন্য অন্বেষণ করছেন; ফলে নূতন বিশ্বাস নূতন জীবনের উদ্ভব ঘটবে। বিশ্বস্ত ইয়োব তার কষ্টের অন্ধকারময় এবং দুঃখের দিনগুলোতে ঘোষণা করেছিলেন: PKBeng 131.1
“বিলুপ্ত হউক সেই দিন, যে দিন আমার জন্ম হইয়াছিল”
“বিলুপ্ত হউক সেই রাত্রি, যে রাত্রি বলিয়াছিল,
‘পুত্রসন্তান হইল’ ।”
“হায় যদি আমার মনস্তাপ তৌল করা হইত,
যদি আমার বিপদ তুলায় পরিমিত হইত!”
আঃ! আমি যেন বাঞ্চনীয় বিষয় পাইতে পারি;
ঈশ্বর যেন আমার অপেক্ষণীয় বিষয় আমাকে দেন,
হাঁ, ঈশ্বর অনুগ্রহ করিয়া আমাকে চূর্ণ করুন,
হস্ত প্রসারণ করিয়া আমাকে কাটিয়া ফেলুন;
তবু তখনও আমার সান্ত্বনা থাকিবে।
নিৰ্ম্মর্ম যাতনায়ও আমি উল্লাস করিব,
কারণ আমি পবিত্রতমের বাক্য সকল
অস্বীকার করি নাই । ”
“অতএব আমি আর মুখ বুজিয়া থাকিব না;
আমি আত্মার উদ্বেগে কথা বলিব,
প্রাণের তিক্ততায় বিলাপ করিব।”
“তাহাতে আমার প্রাণ শ্বাসরোধ মরণ চাহে,
আমার এই অস্বস্থিকাল অপেক্ষা মরণ চাহে।”
“আমার ঘৃণা হইয়াছে, আমি নিত্য বাঁচিয়া থাকিতে চাহি না;
আমাকে ছাড়, কেননা আমার আয়ু নিঃশ্বাসব।” PKBeng 132.1
ইয়োব ৩:৩; ৬:২, ৮-১০; ৭:১১, ১৫, ১৬।
যদিও বা পরিশ্রান্ত ক্লান্ত, তথাপি ইয়োবকে মরার অনুমতি দেয়া হয়নি। তাকে ভবিষ্যতের সম্ভাবনা দেখিয়ে দেয়া হয়েছিল, এবং তাকে প্রত্যাশার বার্তা প্রদান করা হয়েছিল: PKBeng 132.2
“তুমি সুস্থির থাকিবে, ভয় করিবে না।
কারণ তুমি তোমার কষ্ট ভুলিয়া যাইবে,
তাহা প্রবাহিত জলের ন্যায় মনে হইবে ।
তোমার জীবন মধ্যাহ্ন হইতেও বিমল হইবে,
অন্ধকার হইলেও তাহা প্রভাতের ন্যায় হইবে ।
তুমি সাহস করিবে, কারণ প্রত্যাশা আছে,
চারিদিকে তত্ব লইয়া নির্ভয়ে শয়ন করিবে ।
আর তুমি শুইবে, কেহ তোমাকে ভয় দেখাইবে না,
বরং অনেকে তোমার কাছে বিনতি করিবে।
কিন্তু দুষ্টদের চক্ষু নিস্তেজ হইবে,
তাদের আশ্রয় বিনষ্ট হইবে
তাদের আশা প্রাণত্যাগে পরিণত হইবে।” PKBeng 133.1
ইয়োব ১১:১৫-20 ।
নিরুসাহ এবং হতাশার কূল হতে ইয়োব, ঈশ্বরের অনুগ্রহ এবং ত্রাণকারী শক্তিতে অন্তর্নিহিত বিশ্বাসের শিখরে উঠলেন। বিজয়ের সাথে তিনি ঘোষণা করলেন: PKBeng 133.2
“যদিও তিনি আমাকে বধ করেন, তথাপি
আমি তাহার অপেক্ষা করিব,
কিন্তু তাঁহার সম্মখে আপন পথের সমর্থন করিব ।
ইহাও আমার পরিত্রাণে পরিণত হইবে;
কেননা পামর তাঁহার সম্মুখে আপন পথেও সমর্থন করিব।”
“কিন্তু আমি জানি, আমার মুক্তিকর্তা জীবিত;
তিনি শেষে ধূলির উপরে উঠিয়া দাঁড়াইবেন।
আর আমার চর্ম্ম এইরূপে বিনষ্ট হইলে পর,
তবু আমি মাংসবিহীন হইয়া ঈশ্বরকে দেখিব ।
আমি তাঁহাকে আপনার সপক্ষ দেখিব, আমারই চক্ষু দেখিবে, অন্যে নয়।
বক্ষোমধ্যে আমার হৃদয় ক্ষীণ হইতেছে।” PKBeng 133.3
ইয়োব ১৩:১৫, ১৬; ১৯:২৫-২৭।
“পরে সদাপ্রভু ঘূর্ণীবায়ুর মধ্য হইতে ইয়োবকে উত্তর দিলেন ” (ইয়োব ৩৮:১), এবং তার দাসের কাছে সৃষ্টিকর্তার এক ক্ষীণ আলোক রশ্মি দেখতে পেলেন, তখন তিনি আপনাকে ঘৃণা সহকারে পরিহার করলেন এবং ধূলি এবং ভষ্মে শুয়ে অনুতপ্ত হলেন। অতঃপর সদাপ্রভু তাকে প্রচুররূপে আশীর্বাদ করলেন এবং তার জীবনের শেষ বছরগুলো সর্বোত্তম বছর করলেন । PKBeng 134.1
ঈশ্বরের জন্য নিখুঁৎ সেবায় প্রত্যাশা এবং সাহস অপরিহার্য। এসকল বিশ্বাসের ফল হতাশা, পাপপূর্ণ এবং অযৌক্তিক। তাঁর দাসদের পরীক্ষার সময়ে ঈশ্বর তাদের “আরও অধিকরূপে” (ইব্রীয় ৬:১৭) শক্তি প্রদান করতে সমর্থ এবং ইচ্ছুক। তাঁর কার্যের শত্রুদের পরিকল্পনা দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত মনে হতে পারে; কিন্তু ঈশ্বর এসকল অপেক্ষা শক্তিশালী পরিকল্পনা বাঞ্চাল করে দিতে পারেন। আর এটি তিনি তার নিজস্ব সময়ে এবং নিজস্ব পরিকল্পনা অনুসারে করেন, যখন তিনি দেখেন যে, তাঁর দাসগণের বিশ্বাস পর্যাপ্ত পরিমাণে পরীক্ষিত হয়েছে। PKBeng 134.2
যারা ভগ্নোদ্যম তাদের জন্য একটি সুনিশ্চিত নিরাময় রয়েছে- বিশ্বাস, প্রার্থনা, কার্য। বিশ্বাস এর কার্য নিশ্চয়তা এবং পরিতৃপ্তি দান করবে যা দিন দিন বৃদ্ধি পাবে। আপনি কি অমঙ্গলের আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন অথবা সম্পূর্ণ হতাশা অনুভব করার পথ করে দিচ্ছেন? অত্যধিক নিরুৎসাহের দিনগুলোতে যখন অপচ্ছা অত্যধিক বিভৎস বলে মনে হয় তখন ভয় করবেন না। ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখুন। তিনি আপনার অভাব জানেন। তাঁর সকল ক্ষমতা রয়েছে। তার অসীম প্রেম এবং সহানুভূতি কখনও ক্লান্ত হয় না। ভয় করবেন না যে, তিনি তাঁর প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করতে ব্যর্থ হবেন। তিনি চিরন্তন সত্য। যারা তাঁকে প্রেম করে, তিনি কখনও তাদের প্রতি তাঁর কৃত প্রতিজ্ঞা পরিবর্তন করবেন না। আর তিনি তাঁর বিশ্বস্ত দাসদের চাহিদা মোতাবেক পর্যাপ্ত দক্ষতা দান করবেন। প্রেরিত পৌল সাক্ষ্য প্রদান করেছেন: “আর তিনি আমাকে বলিলেন, আমার অনুগ্রহ তোমার পক্ষে যথেষ্ট; কেননা আমার শক্তি দুর্বলতায় সিদ্ধি পায় ৷ অতএব আমি বরং অতিশয় আনন্দের সহিত নানা দুব্বলতায় শ্লাঘা করিব, যেন খ্রীষ্টের শক্তি আমার উপরে অবস্থিতি করে। এই হেতু খ্রীষ্টের নিমিত্ত নানা দুর্বলতা, অপমান, অনাটন, তাড়না, সঙ্কট ঘটলে আমি প্রীত হই; কেননা যখন আমি দুর্বল, তখনই বলবান।” ২করিন্থীয় ১২:৯, ১০। PKBeng 134.3
ঈশ্বর কি এলিয়ের মহা পরীক্ষায় তাঁকে পরিত্যাগ করেছিলেন? ওহ্, না! যখন এলিয় উপলব্ধি করতে পারলেন যে, তিনি ঈশ্বর এবং মনুষ্য কর্তৃক পরিত্যাজ্য তখন তদপেক্ষা অধিক ভাল বেসেছিলেন, তার প্রার্থনার উত্তর প্রদান করে যখন আকাশ হতে অগ্নি পতিত হল এবং পর্বত শিখর আলোকময় হল । আর এখন এলিয় নিদ্রা গেলে, একটি কোমল স্পর্শ এবং একটি প্রিয় কন্ঠস্বর তাকে জাগাল । তিনি ত্রাসযুক্ত হয়ে যাত্রা করলেন, যেন তিনি পলায়ন করছেন, তিনি ভীত হলেন, কি জানি শত্রু হয়তো তাকে দেখে ফেলেছে। কিন্তু একটি করুণাপূর্ণ মুখমণ্ডল, তার উপরে নেমে এল, যা শত্রুর মুখমন্ডল ছিল না, কিন্তু একজন বন্ধুর। ঈশ্বর তাঁর দাসের জন্য আহার সহ স্বৰ্গ হতে একজন দূতকে প্রেরণ করলেন। “উঠ, আহার কর, ‘ দূত তাকে বললেন। তিনি চেয়ে দেখলেন; আর দেখ, তাঁর শিয়রে তপ্ত প্রস্ত রে পক্ক একখানি পিষ্টক ও এক ভাড় জল রয়েছে। PKBeng 135.1
প্রস্তুতকৃত খাদ্য ভোজন করে সুস্থ হয়ে তিনি পুনরায় শয়ন করলেন। দূত দ্বিতীয় বার এলেন। ক্লান্ত শ্রান্ত লোকটিকে স্পর্শ করে করুণা ভরে তাকে বললেন, “উঠ, আহার কর, কেননা তোমার শক্তি হইতেও পথ অধিক।” তাতে তিনি উঠে ভোজন করলেন এবং সেই খাদ্যের প্রভাবে চল্লিশ দিবারাত্র গমন করে ঈশ্বরের পর্বত হোরেবে উপস্থিত হলেন যেখানে একটি গুহায় আশ্রয় খুঁজে পেলেন । PKBeng 135.2