ইস্হাকের যমজ সন্তান যাকোব এবং এষৌর চরিত্রে ও জীবন যাপনে একটি অদ্ভুত পার্থক্য বর্তমান। তাদের জন্মের আগেই ঈশ্বরের দূতগণ এই পার্থক্যের ঘোষণা করেছিলেন। রিবিকার যাতনাময় প্রার্থনার উত্তরে তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে তাকে দুটি ছেলে দেয়া হবে। তারা যে দু'টি মহান জাতির প্রধান হবে, আর একজন যে অন্য জনের চেয়ে মহৎ হবে, এবং ছোট ভাই যে প্রাধান্য পাবে, এ সমস্ত কিছুর ইতিহাসই দূত তার নিকট তুলে ধরেছিলেন । PPBeng 117.1
এষৌ বর্তমানের উপর তার সমস্ত মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিলেন এবং আত্ম-তৃপ্তিকে প্রাধান্য দিতে শিখেছিলেন । আত্ম-নিয়ন্ত্রণে অধৈর্য্য, তিনি শিকারীর জীবন ও শিকার তাড়না করা ভালবাসতেন। তথাপি তিনি পিতার প্রিয়পাত্র ছিলেন। তার জ্যেষ্ঠ পুত্র পর্বত ও মরুভূমিতে অকুতভয়ে ও অবাধে ঘুরে বেড়াতেন, আর অনেক শিকার ও ভয়ঙ্কর জীবনের অনেক কাহিনী নিয়ে ঘরে ফিরতেন । PPBeng 117.2
যাকোব ছিলেন চিন্তাশীল, পরিশ্রমী, বর্তমানের চেয়ে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অধিক সদা-সতর্ক, এবং মেষ-চরানো ও কৃষিকাজ নিয়ে গৃহে বসবাস করতে ভাল বাসতেন। তার ধৈর্য-সহকারে কঠোর পরিশ্রম, সঞ্চয়ী মনোভাব, দূরদৃষ্টি তার মার কাছে খুবই মূল্যবান ছিল । এষৌর আধিক্য ও অনিয়মিত দয়া দাক্ষিণ্যের চেয়ে যাকোবের শান্ত মনোযোগীভাব অধিক আনন্দের কারণ ছিল । PPBeng 117.3
এষৌ ও যাকোব উভয়কেই অধিকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে বিবেচনা করতে শিক্ষা দেয়া হয়েছিল, কেননা এটা শুধু পার্থিব সম্পত্তির উত্তরাধিকারী সম্পর্কিত ছিল না, কিন্তু ইহার আত্মিক গুরুত্ব আরো অধিক ছিল। যিনি এটা পেতেন তিনি পরিবারের পুরোহিতের দায়িত্ব পেতেন, এবং পৃথিবীর পরিত্রাণদাতা তারই বংশে আগমন করার কথা ছিল। PPBeng 117.4
পক্ষান্তরে, জ্যেষ্ঠাধিকার প্রাপ্তের উপর বিশেষ দায়িত্ব অর্পিত হত। যে এই আশীর্বাদ পেত, তার সারা জীবন ঈশ্বরের কাজে কাটাতে হত। বিয়ের বিষয়ে, পারিবারিক সম্পর্ক স্থাপন, ও সামাজিক জীবনের সমস্ত বিষয়, তাকে ঈশ্বরের ইচ্ছা জানতে হত । PPBeng 118.1
ইস্হাক এই সমস্ত অধিকার ও সন্তু তার দু ছেলেকেই ভাল করে বুঝিয়ে বলেছিলেন, এবং এও বলেছিলেন যে বড় ছেলে হিসাবে এষৌ জ্যেষ্ঠাধিকার পাবে। কিন্তু এষৌর প্রার্থনা ও ধর্মের প্রতি কোন স্পৃহা ছিল না। আত্মিক জ্যেষ্ঠাধিকারের সহিত যে দায়িত্ব অর্পিত ছিল তা তার কাছে একটি অশুভ, এমন কি ঘৃণার্হ, বাঁধা ছিল। ঈশ্বরের ব্যবস্থা, অব্রাহামের সাথে ঈশ্বরের চুক্তির শর্তাবলী, এষৌ'র নিকট এক দাসত্বের জোয়ালী বলে মনে হয়েছিল। আত্ম-সংযমে আগ্রহী এষৌ যা ইচ্ছা তাই করার স্বাধীনতাই অনেক বেশী কাম্য ছিল। তার কাছে সুখের অর্থ ছিল ক্ষমতা এবং ঐশর্য্য, ভোজন ও অপরিমিত মধ্যপান। সে তার বাধাহীন বন্য ও যাযাবর জীবনকে গুরুত্ব দিত । PPBeng 118.2
রিবিকা দূতের কথা মনে রেখেছিলেন এবং তার ছেলেদের চরিত্র তিনি স্বামীর চেয়ে বেশী বুঝতে পারতেন। তিনি নিশ্চিত বিশ্বাস করতেন যে স্বর্গীয় ঐতিহ্যের প্রতিজ্ঞা ইস্হাকের জন্য নির্দ্ধারিত, এবং ইস্হাককে দূতের সব ভবিষদ্বাণী তিনি বলেছিলেন। কিন্তু পিতার স্নেহ বড় ছেলের উপরই কেন্দ্রীভূত ছিল এবং তিনি নিজ সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন। PPBeng 118.3
যাকোব মার নিকট হতে জানতে পেরেছিলেন যে জ্যেষ্ঠাধিকার তার উপরেই আসবে, তাই তিনি এই অধিকার ও দায়িত্ব লাভের জন্য উৎসুক ছিলেন। তিনি ত পিতার ধনসম্পদের কামনা করছিলেন না; আত্মিক জ্যেষ্ঠাধিকার তার কাম্য ছিল। অব্রাহামের মত ঈশ্বরের সহিত যোগাযোগ স্থাপন, করা, প্রায়শ্চিত্তমূলক বলিদান করা, প্রতিজ্ঞাকৃত খ্রীষ্টীয় মনোনীত জাতির পিতৃত্ব লাভ করা এ সকল অধিকার ও সম্মান তার হৃদয়ে লাভের আকাঙ্ক্ষাকে প্রজ্জ্বলিত করেছিল । PPBeng 118.4
আত্মিক জ্যেষ্ঠাধিকার অধিকার সম্বন্ধে তার পিতা যা কিছু বলেছিলেন তা তিনি অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে শুনতেন; তার মার নিকট হতে যা কিছু শুনেছিলেন তাও তিনি অত্যন্ত মূল্যবান হিসাবে সযত্নে লালন পালন করতেন। বিষয়টি তার জীবনের তীব্র মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। কিন্তু যে ঈশ্বরকে যাকোব সম্মান করতেন তাঁর সম্বন্ধে তার নিজস্ব অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান ছিল না। স্বর্গীয় অনুগ্রহে তার হৃদয় নূতনত্ব লাভ করে নি। সে সর্বদাই নানা কৌশল উদ্ভাবনের চেষ্টা করত যাতে, তার ভাই যা অত্যন্ত তুচ্ছ মনে করত কিন্তু তার কাছে তা অত্যন্ত মূল্যবান ছিল, তা সে লাভ করতে সক্ষম হত। PPBeng 118.5