একদিন এষৌ শিকার হতে অনেক ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে, যাকোব যে খাবার তৈরী করছিলেন তা খেতে চাইলেন। শেষের জন তার সুযোগ গ্রহণ করলেন এবং জ্যেষ্ঠাধিকারের বদলে তার ভাইয়ের ক্ষুধা দূর করতে রাজী...। “দেখ, আমি মৃত প্রায়,” অসংযত বিবেচনাহীন, শিকারী চিৎকার করে উঠলেন, জ্যেষ্ঠাধিকারে আমার কি লাভ? এক, পেয়ালা ডালের জন্য তিনি তার জ্যেষ্ঠাধিকার ত্যাগ করলেন এবং এই লেনদেন শপথ গ্রহণের মাধ্যমে পাকাপোক্ত করলেন। ঈশ্বর তার পিতৃপুরুষদের যে গৌরবময় ঐতিহ্যের প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তা তিনি মুহূর্ত্তের প্রয়োজনের তাগিদে বিনিময় করে ফেললেন। তার সমস্ত চিন্তা ভাবনা শুধু বর্তমান নিয়েই ছিল। তিনি পার্থিব বিষয়ের জন্য স্বর্গীয় বিষয় ক্ষণিকের তৃপ্তির জন্য ভবিষ্যতের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, বিনিময় করতে প্রস্তুত ছিলেন। PPBeng 119.1
“এইরূপে এষৌ আপন জ্যেষ্ঠাধিকার তুচ্ছ করিলেন।” তিনি এটা হতে মুক্ত হতে পেরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। এখন তিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারবেন। অনেকেই আজ উদ্যম আনন্দ ও ভ্রান্ত স্বাধীনতার জন্য স্বর্গের তাদের অনন্তকালীন অধিকারকে বিক্রিয় করে ফেলেছেন। PPBeng 119.2
এষৌ হিত্তীয় দুই মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন। ওরা ছিল মিথ্যা দেবতার পূজক, আর তাদের পৌত্তলিকতা ইস্হাক ও রিবিকার মনে গভীর ব্যথার কারণ ছিল। ঈশ্বরের সহিত চুক্তির একটি শর্ত এষৌ লঙ্ঘন করেছিলেন, ঐ শৰ্ত্ত অনুসারে মনোনীত জাতি ও পৌত্তলিকদের মধ্যে মিশ্র বিবাহ নিষিদ্ধ ছিল; তথাপি ইস্হাক তার উপর জ্যেষ্ঠাধিকার দান করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন । PPBeng 119.3
অনেক বৎসর অতিবাহিত হল। ইস্হাক, অন্ধ ও বৃদ্ধ, শীঘ্রই মৃত্যুবরণ করতে হবে মনে করে বড় ছেলের উপর জ্যেষ্ঠাধিকার দান করতে আর দেরী না করার সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু রিবিকা ও যাকোবের বিরোধীতার কথা চিন্তা করে তিনি এই পবিত্র অনুষ্ঠান গোপনে পূর্ণ করতে চাইলেন। কুলপতি এষৌকে আদেশ করলেন, “... প্রান্তরে যাও, আমার জন্য হরিণ শিকার করিয়া আন। আর আমি যেরূপ ভালবাসি, তদ্রূপ সুস্বাদু খাদ্য প্রস্তুত করিয়া আমার নিকটে আন....যেন মৃত্যুর পূর্বে আমার প্রাণ তোমাকে আশীর্বাদ করে।’ PPBeng 119.4
কি ঘটনা ঘটেছে রিবিকা তা যাকোবকে জানালেন ও এষৌর উপর যেন জ্যেষ্ঠাধিকারের আশীর্বাদ পতিত না হয় তার জন্য পদক্ষেপ নিতে তাকে উৎসাহিত করলেন। তিনি তাকে নিশ্চিত করলেন যে যদি সে তার নিৰ্দ্দেশ অনুসারে কাজ করেন তবে হয়ত ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাত জ্যেষ্ঠাধিকার লাভ করতে পারে। যাকোব সহজে রাজী হলেন না, পিতার সহিত প্রতারণা করার চিন্তা তাকে ব্যথিত করল। এ ধরণের একটি পাপ আশীর্বাদের পরিবর্তে অভিশাপ নিয়ে আসতে পারে । PPBeng 120.1
কিন্তু তার বিবেক পরাজিত হল ও সে তার মার পরামর্শ অনুসারে কাজ করতে উদ্যত হল। তার ইচ্ছা ছিল না যে সে প্রত্যক্ষ ভাবে কোন মিথ্যা কথা বলে। কিন্তু পিতার সামনে উপস্থিত হওয়ার পর সে বুঝতে পারল যে সে ত অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে, আর তখন সে ছলনার মাধ্যমেই কাঙ্খিত আশীর্বাদ লাভ করল। PPBeng 120.2
যাকোব ও রিবিকা তাদের লক্ষ্যে কৃতকার্য্য হলেন, কিন্তু প্রতারণার ফলে শুধুমাত্র কষ্ট ও দুঃখই লাভ করলেন। ঈশ্বর ঘোষণা করেছিলেন যে যাকোব জ্যেষ্ঠাধিকার লাভ করবেন, এবং তাঁর প্রতিজ্ঞাই পূর্ণ হত যদি তারা ধৈর্য্য সহকারে তাঁর কাজ করার জন্য অপেক্ষা করতেন। তার ছেলেকে যে ভুল পরামর্শ দিয়েছিলেন রিবিকা সে জন্য তিক্ত অনুতাপ করলেন। যাকোব আত্ম- ধিক্কারে অভিভূত হয়ে পড়েছিলেন। তিনিও পিতার, ভাইয়ের, নিজের আত্মার, এবং ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ করেছিলেন। এক ঘন্টার কাজের জন্য সারা জীবন অনুতাপ ভোগ করার শাস্তি নিজের উপর ডেকে এনেছিলেন। পরবর্ত্তীকালে তার ছেলেদের মন্দ কাজসমূহ সর্বদাই তাকে ঐ ঘটনা তার স্মরণে নিয়ে আসত । PPBeng 120.3
যাকোব তার পিতার তাঁবু হতে বের হওয়ার অব্যবহিত পরেই এষৌ তাঁবুতে প্রবেশ করলেন। যদিও তিনি জ্যেষ্ঠাধিকার বিক্রি করে ফেলেছিলেন তথাপি এখন তিনি এর আশীর্বাদ লাভ করতে চাইলেন। আত্মিয়ের সাথে যুক্ত ছিল পার্থিব জ্যেষ্ঠাধিকার যা তাকে পরিবারের প্রধানে পরিণত করত ও তাতে তিনি তার পিতার ধন-সম্পত্তির দ্বিগুণ ভাগ পেতেন। তিনি বললেন, “হে আমার পিতা আপনি উঠিয়া পুত্রের আনীত মৃগমাংস ভোজন করুন, যেন আপনার প্রাণ আমাকে আশীর্বাদ করে।” PPBeng 120.4
বিস্ময়ে ও দুঃখে অভিভূত হয়ে অন্ধ ও বৃদ্ধ পিতা তার সহিত যে ছলনা করা হয়েছে, তা জানতে পারলেন। তার বড় ছেলের উপর কি নৈরাশ্য নেমে এসেছে তা’ তিনি অনুভব করতে পারলেন । তবু তার মনে এই বিশ্বাস উদয় হল যে যা তিনি প্রতিহত করতে চেয়েছিলেন, ঈশ্বরের ইচ্ছা তাই সাধন করেছে । দূত রিবিকাকে যে কথাগুলো বলেছিলেন তা তিনি স্মরণ করলেন, এবং তিনি দেখতে পেলেন যে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য যাকোবই অধিক উপযুক্ত । যখন তিনি আশীর্বাদের বাক্য উচ্চারণ করছিলেন তখন তিনি অনুভব করছিলেন যে প্রেরণার আত্মা তার উপর আছে; এবং এখন যাকোবের উপর যে শেষ আশীর্বাদ উচ্চারণ করেছিলেন, তা অনুসমর্থন করলেন, “তাহাকে আশীর্বাদ করিয়াছি, আর সেই আশীর্বাদযুক্ত থাকিবে।” PPBeng 120.5