মিসরের আইন অনুসারে, যারা ফরৌণের সিংহাসনে বসবেন তাদের সকলকেই যাজকীয় গোত্রের অন্তর্ভুক্ত হতে হত। রাজত্বের উত্তরাধিকারী হিসাবে মোশিকেও জাতীয় ধর্মের গূঢ় রহস্যসমূহের মধ্যে দীক্ষা নেয়ার প্রয়োজন ছিল । কিন্তু তাকে দেব-দেবতার আরাধনা করতে বাধ্য করা যাচ্ছিল না। তাকে রাজত্ব হারাবার ভয় দেখানো হল এবং তাকে সতর্ক করে দেয়া হলো যে যদি তিনি যিহূদীদের ধর্ম অবলম্বন করেন তবে রাজার মেয়ে তাকে ত্যাজ্য করে দেবেন। কিন্তু স্বর্গ ও পৃথিবীর স্রষ্টা একমাত্র ঈশ্বর ছাড়া অন্য কাউকে তার আনুগত্য ও আরাধনা না দেয়ার ব্যাপারে তিনি দৃঢ়-সংকল্প ছিলেন। প্রাণহীন বস্তুর অন্ধকারাচ্ছন্য যাজকত্বে যে মূর্খতা ছিল তা নিয়ে তিনি ধর্মীয় যাজক ও আরাধনাকরীদের সহিত যুক্তি তর্ক করতেন। তার উচ্চ অবস্থানের জন্য এবং রাজা ও জনসাধারণ যে অনুগ্রহ ও সম্মান তাকে দিতেন তার জন্য মোশির এই দৃঢ় ভাবে প্রতিহত করাকে কিছু কালের জন্য সহ্য করা হয় । PPBeng 173.2
“বিশ্বাসে মোশি বয়ঃপ্রাপ্ত হইলে পর ফরৌণের কন্যার পুত্র বলিয়া আখ্যাত হইতে অস্বীকার করিলেন; তিনি পাপজাত ক্ষণিক সুখভোগ অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের প্রজাবৃন্দের সঙ্গে দুঃখভোগ মনোনীত করিলেন, তিনি মিসরের সমস্ত ধন অপেক্ষা খ্রীষ্টের দুর্ণাম মহাধন জ্ঞান করিলেন, কেননা, তিনি পুরস্কারদানের প্রতি দৃষ্টি রাখিতেন।” ইব্রীয় ১১:২৪-২৬। মোশি পৃথিবীর সর্ব শ্রেষ্ঠ লোকদের অন্যতম হওয়ার জন্য পৃথিবীর সর্ব শ্রেষ্ঠ ও গৌরবময় রাজ্যকে আলোকিত করার জন্য, এবং ক্ষমতার দন্ড গ্রহণ করার জন্য সম্পূর্ণ যোগ্য ছিলেন। ঐতিহাসিক রূপে, কবি রূপে, দার্শনিক রূপে, সৈন্য বাহিনীর সেনাপতিরূপে, এবং আইনজ্ঞরূপে তিনি ছিলেন অনন্য। কিন্তু সমস্ত তার সম্মুখে থাকা সত্ত্বেও ঐশ্বর্য্য, মহত্ব, এবং গৌরব অস্বীকার করার মত তার নৈতিক শক্তি ছিল, আর তিনি “ঈশ্বরের প্রজাবৃন্দের সঙ্গে দুঃখভোগ মনোনীত করিলেন।” PPBeng 173.3
ফরৌণের মহিমান্বিত প্রাসাদ এবং মিসরের সিংহাসন মোশির সামনে প্রলোভনরূপে তুলে ধরা হয়েছিল; কিন্তু তিনি জানতেন যে পাপ পূর্ণ আমোদ- প্রমোদ ঈশ্বরকে ভুলিয়ে দেয় সেই সমস্তই ঐ রাজ্যে দরবারে ছিল । রাজ প্রাসাদ থেকে দূরে, রাজার মুকুট থেকে দূরে, পাপ হীন রাজত্বে সর্বশক্তিমানের যে সম্মানে ভূষিত করা হবে তিনি সেই সকলের দিকে তাকিয়ে ছিলেন । বিজয়ীর মস্তকে স্বর্গের রাজা যে অক্ষয় মুকুট পরিয়ে দেবেন, বিশ্বাসের চক্ষু দিয়ে তিনি তার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। ঐ বিশ্বাস তাকে নম্র, দরিদ্র, ও ঘৃণিত সেই জাতির সাথে যুক্ত করল যে জাতি পাপের দাসত্ব থেকে ঈশ্বরকে মানতে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল । PPBeng 174.1
চল্লিশ বৎসর বয়স পর্যন্ত মোশি রাজ-দরবারে থাকলেন। দাসত্বে আবদ্ধ তার ভাইদের তিনি সাক্ষাৎ করতেন এবং এই নিশ্চয়তা প্রদানের মাধ্যমে তিনি তাদের উৎসাহিত করতেন যে ঈশ্বর তাদের মুক্তির বন্দোবস্ত করবেন। একদিন একজন মিস্ত্রীয় একজন ইস্রায়েলকে মারছে দেখতে পেয়ে, তিনি ঘুসী মেরে মিস্ত্রীয়কে মেরে ফেলেন। ইস্রায়েলীয়রা ছাড়া এ বিষয়ে আর কোন সাক্ষী ছিল না, তাই মোশি মৃত দেহটি বালিতে কবর দিলেন। তিনি এখন নিজ লোকদের জন্য যুদ্ধ করতে রাজী তার প্রমাণ দিলেন এবং আশা করলেন যে ইস্রায়েলীয়রা বিদ্রোহ করবে এবং নিজেদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেবে। “তিনি মনে করিতেছিলেন, তাহার ভাইয়েরা বুঝিয়াছে যে, তাহার হাত দ্বারা ঈশ্বর তাহাদিগকে উদ্ধার করিতেছেন; কিন্তু তাহারা বুঝিল না।” প্রেরিত ৭:২৬। তারা তখনও স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত ছিল না । PPBeng 174.2
এর পরের দিন মোশি দেখলেন যে দু'জন ইব্রীয় ঝগড়া করছে, আর একজন দেখা যাচ্ছে যে অন্যজনের সহিত অন্যায় ব্যবহার করছে। মোশি অন্যায়কারীকে ভর্ৎসনা করলেন, সে তৎক্ষণাৎ এর প্রতিউত্তরে জানাল যে মোশির তাদের ব্যাপারে জড়িয়ে পড়ার এবং তাকে নীচ অভিযোগ করার কোন অধিকার নাই: সে বলল, “তোমাকে অধ্যক্ষ ও বিচারকর্তা করিয়া আমাদের উপরে কে নিযুক্ত করিয়াছে? তুমি যেমন সেই মিস্ত্রীয়কে বধ করিয়াছ, তদ্রূপ কি আমাকেও বধ করিতে চাহ?” PPBeng 174.3
সমস্ত বিষয়টি ফরৌণের কাণে গেল। রাজাকে বুঝানো হল যে এই ঘটনার অর্থ সুদূর প্রসারিত, তাকে বুঝানো হল যে মোশি তার লোকদের মিস্ত্রীয়দের বিরুদ্ধে পরিচালিত করার মাধ্যমে সরকারকে গদিচ্যূত করে নিজে সিংহাসনে বসতে চান। রাজা তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নিলেন যে মোশিকে মরতে হবে, কিন্তু নিজের বিপদের কথা জানতে পেরে মোশি আরব দেশের দিকে পালিয়ে গেলেন। PPBeng 174.4
সদাপ্রভূ তার পরিচালক হলেন, এবং তিনি মিদিয়নীয় যাজক ও রাজপুত্র যিথ্রোর বাড়ীতে বাস করতে আরম্ভ করলেন। যিথ্রো ঈশ্বরের আরাধনাকারী ছিলেন। কিছু দিন পরে মোশি যিথ্রোর এক মেয়েকে বিয়ে করলেন; তার মেষদের পালকরূপে মোশি এখানে চল্লিশ বৎসর বাস করলেন । PPBeng 175.1
মোশি যে ভাবে চিন্তা করেছিলেন ঈশ্বর সে ভাবে যুদ্ধের মাধ্যমে তার লোকদের মুক্তি করতে চান নি, কিন্তু তিনি চেয়েছিলেন তার মহা ক্ষমতার মাধ্যমে তাদের মুক্তি করতে, যেন সমস্ত গৌরব শুধু তাঁকেই দেয়া হয় । মোশি ঐ মহান কাজের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। অব্রাহাম ও যাকোব যা শিক্ষা করেছিলেন...ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করার জন্য মানুষের শক্তি ও বুদ্ধির উপর নির্ভর না করে ঈশরের ক্ষমতার উপর নির্ভর করতে হবে। সেই বিশ্বাসের শিক্ষা মোশি তখনও পাননি। আত্ম-ত্যাগ ও কষ্টের বিদ্যালয়ে তাকে তার আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও ধৈর্য্য ধরতে শিক্ষা করা প্রয়োজন ছিল। ইস্রায়েলদের তার ইচ্ছা জানতে শিক্ষা দেবার আগেও যার৷ তার সাহায্য কামনা করে তাদের প্রতি পিতৃতুল্য ব্যবহার করার আগে তার নিজের হৃদয় ঈশ্বরের সাথে ঐক্যতানে আসতে হবে। PPBeng 175.2