Loading...
Larger font
Smaller font
Copy
Print
Contents
  • Results
  • Related
  • Featured
No results found for: "".
  • Weighted Relevancy
  • Content Sequence
  • Relevancy
  • Earliest First
  • Latest First
    Larger font
    Smaller font
    Copy
    Print
    Contents

    পুস্তক প্রণেতার পরিচায়িকা

    পাপ প্রবেশের পূর্বে, আদম তাঁর স্রষ্টার সঙ্গে উন্মুক্ত বাক্যালাপ উপভােগ করতেন; কিন্তু যখন আত লঙ্ঘন দ্বারা ঈশ্বরের নিকট থেকে মানুষ নিজেকে বিচ্ছিন্ন করল, তখন থেকে মানব জাতি এই উচ্চ সুযােগ থেকে বঞ্চিত হলাে । যা হােক, মুক্তি পরিকল্পনার দ্বারা, একটি পথ খুলে গেল, যার মাধ্যমে এখনাে পৃথিবীর নিবাসীদের স্বর্গের সাথে যােগাযােগ রয়েছে। ঈশ্বর তাঁর আত্মার দ্বারা মানুষের সঙ্গে যােগাযােগ রক্ষা করেছেন, এবং তাঁর মনােনীত দাসগণের কাছে প্রকাশ প্রাপ্তি দ্বারা ঐশ্বরিক আলাে ও জ্যোতি প্রদান করা হয়েছে। “মনুষ্যেরা পবিত্র আত্মা দ্বারা চালিত হইয়া যাহা পাইয়াছেন তাহাই বলিয়াছেন।” (২ পিতর ১:২১)GrHBen 5.1

    মানব ইতিহাসের সর্বপ্রথম দুই হাজার পাঁচশ বছর ব্যাপী, মানুষের কাছে প্রকাশিত লিখিত কোন পুস্তক ছিল না। যারা ঈশ্বরের কাছে শিক্ষা পেত, তারা অন্যদের কাছে তাদের জ্ঞান সহভাগ করত, এবং তা পরম্পরাগত বংশধরের মাধ্যমে পিতার কাছ থেকে পুত্রের কাছে হস্তান্তরিত হত। মােশির সময়ে লিখিত বাক্যের প্রস্তুতি আরম্ভ হয়েছিল । অতঃপর অনুপ্রাণিত প্রত্যাদিষ্ট বাক্য একখানি অনুপ্রাণিত পুস্তকে স্পষ্টাকারে প্রকাশিত হয়েছিল। এই কাজ মােল’শ বছরের দীর্ঘ সময়। ব্যাপী চলেছিল মােশি থেকে, সৃষ্টি এবং ব্যবস্থার ইতিহাস ও যােহনের কাছে সুসমাচারের অতীব মহিমান্বিত সত্যের নিবেদক।GrHBen 5.2

    বাইবেল এর লেখক হিসেবে ঈশ্বরকে নির্দেশ করে; তথাপি এসব মানব হস্ত দ্বারা লিখিত হয়েছিল; এবং এটি বিভিন্ন বইয়ের নমুনায় কয়েকজন লেখকের চরিত্র উপস্থাপন করে। সকল প্রকাশিত ঈশ্বরের অনুপ্রেরণার দ্বারা প্রদত্ত হয়েছে। (২ তীমথিয় ৩:১৬); তথাপি ঐগুলাে মনুষ্যের ভাষায় ব্যক্ত করা হয়েছে। অসীম ঈশ্বর তাঁর পবিত্র আত্মা দ্বারা, তাঁর দাসগণের মনে এবং অন্তরে আলাে বিকিরণ করেন । তিনি স্বপ্ন এবং দর্শন, আকৃতি বা চিহ্ন দিয়েছেন; এবং যাদের কাছে সত্য প্রকাশ করেছেন, তারা মানব ভায়ায় চিন্তা রূপায়িত করলেন।GrHBen 5.3

    স্বয়ং ঈশ্বর কর্তৃক দশ আজ্ঞা উচ্চারিত হয়েছিল, এবং তাঁর নিজের হাত দিয়েই লেখা হয়েছিল । ঐ সকল ছিল ঐশ্বরিক, মানব রচিত নয়। কিন্তু বাইবেল ঈশ্বর দত্ত সত্যমালা মানব ভাষায় প্রকাশিত তা ঐশ্বরিক এবং মানবের ঐক্য উপস্থাপন করে। এরূপ একটি ঐক্য খ্রীষ্টের প্রকৃতিতে বিরাজ করেছিল, যিনি ঈশ্বরের পুত্র এবং মনুষ্য পুত্র ছিলেন । এরূপে বাইবেলও সত্য, যেমন খ্রীষ্টের সম্পর্কে বলা হয়েছিল যে “আর সেই বাক্য মাংসে মূর্তিমান হইলেন এবং আমাদের মধ্যে প্রবাস করিলেন” (যােহন ১:১৪)।GrHBen 6.1

    বিভিন্ন যুগে যারা বিভিন্ন পদে এবং বিভিন্ন পেশার লােক ছিলেন এবং যারা মানসিক এবং আত্মীক আশীর্বাদ পেয়েছিলেন, সেই সব লোেক দ্বারা বাইবেলের পুস্তকগুলাে লিখিত হয়েছিল, পদ্বতিতে একটি ব্যাপক বৈচিত্র উপস্থাপন করে, বিষয়বস্তুর প্রকৃতিতে ব্যাপক ভিন্নতা উন্মােচিত হয়েছিল । ভিন্ন ভিন্ন লেখক ভিন্ন ভিন্ন প্রকাশ ভঙ্গি ব্যক্ত করেছেন; প্রায়ই একই সত্য একজন অপেক্ষা অন্য জন কর্তৃক অত্যধিক হৃদয়গ্রাহীভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। যেমন কয়েক জন লেখক একটি বিষয় বিভিন্ন দিক এবং বিভিন্ন সম্পর্ক উপস্থাপন করেন, সেখানে পাঠকের কাছে অগভীর, পক্ষপাতদুষ্ট, গরমিল বা অনৈক্য বলে মনে হতে পারে, তবে চিন্তাশীল, ভক্তিমান ছাত্র পরিষ্কার অন্তদৃষ্টি নিয়ে লুক্কায়িত ঐক্য দর্শন করতে সক্ষম হয়।GrHBen 6.2

    বিভিন্ন ব্যক্তিগণের মাধ্যমে উপস্থাপিত বিভিন্ন ব্যাপারে সত্য আনীত হয়েছিল । একজন লেখক বিষয়টি একটি দিকের সাথে জোরাল ভাবে অনুপ্রাণিত করে থাকেন; তিনি ঐ বিষয়গুলাে যা তাঁর অভিজ্ঞতার বা তাঁর অনুভূতি এবং প্রশংসার শক্তির সঙ্গে গ্রহণ করেন; অন্য একজন। একটি ভিন্ন দিকের ওপরে সুযােগ গ্রহণ করে; এবং প্রত্যেকে, পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণায়, তাঁর নিজের মনের ওপরে অতীত শক্তির সাথে অঙ্কিত করে প্রত্যেকের মধ্যে সত্যের একটি ভিন্ন দিক, কিন্তু সকলের মধ্যদিয়ে একটি নিখুঁতরূপে প্রকাশ করেছেন। আর এভাবে যে সত্যসমূহ প্রকাশিত হয়, তা একটি নিখুঁৎ সামগ্রীকতা গঠন করার জন্য যুক্ত করে, তা জীবনের সমুদয় পরিস্থিতি এবং অভিজ্ঞতার মধ্যে মনুষ্যের চাহিদা মেটাতে খাপ খাইয়ে নিয়েছিল ।GrHBen 6.3

    ঈশ্বর মানব প্রতিনিধি দ্বারা বিশ্বে তাঁর সত্য আদান প্রদান করলেন; এবং তিনি স্বয়ং, তাঁর পবিত্র আত্মা দ্বারা, লােকদেরকে যােগ্য করে তুললেন এবং সামর্থ দান করলেন যেন তারা এই কাজ করতে পারে। কোন কথা বলতে হবে এবং কি লিখতে হবে সেজন্য তিনি মনকে পরিচালিত করলেন। মৃন্ময় পাত্রের কাছে ধন গচ্ছিত রাখা হল তথাপি এ ঐশ্বর্য স্বর্গ থেকে আগত। মানব ভাষার ত্রুটিপূর্ণ প্রকাশভঙ্গির মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছিল, তবু ইহা ঈশ্বরের সাক্ষ্য ছিল; এবং বাধ্য, বিশ্বাসী সন্তান-সন্ততিরা একটি ঐশ্বরিক শক্তি দেখতে পায়, তা অনুগ্রহ ও সত্যে পরিপূর্ণ ।GrHBen 7.1

    তাঁর বাক্যে, ঈশ্বর মানুষের কাছে পরিত্রাণের আবশ্যকীয় জ্ঞান অর্পণ করেছেন। পবিত্র শাস্ত্রকলাপ একটি ক্ষমতাসম্পন্ন, তাঁর ইচ্ছার নির্ভুল প্রকাশ প্রাপ্তিরূপে গ্রহণ করতে হবে । ওগুলাে চরিত্রের মানদন্ড, ধর্মতত্ত্ব শিক্ষার প্রকাশ, এবং অভিজ্ঞতার পরীক্ষা। “ঈশ্বর নিঃশ্বসিত প্রত্যেক শাস্ত্রলিপি আবার শিক্ষার, অনুযােগের, সংশােধনের, ধার্মিকতা সম্বন্ধীয় শাসনের নিমিত্ত উপকারী, যেন ঈশ্বরের লােক পরিপক্ক, সমস্ত সৎকর্মের জন্য সুসজ্জিভূত হয়।” (২ তীম ৩:১৬)।GrHBen 7.2

    তথাপি ঘটনাটি এই যে, ঈশ্বর তাঁর বাক্যের মাধ্যমে তাঁর ইচ্ছা। মানুষের কাছে প্রকাশ করেছেন, অন্যাবশ্যকরূপে সর্বদা পবিত্র আত্মার উপস্থিতি এবং পরিচালনা প্রদান করেছেন। অন্যদিকে, আমাদের ত্রাণকর্তা কর্তৃক আত্মার প্রতিজ্ঞা করা হয়েছিল, তাঁর ভক্ত দাসদের কাছে বাক্য উন্মােচিত হয়েছিল যেন তারা এর শিক্ষামালা আলােকিত এবং প্রয়ােগ করে। যেহেতু ঈশ্বরের আত্মা বাইবেলাকে অনুপ্রাণিত করেছিল, ঈশ্বরের আত্মার শিক্ষা বাক্যের বিপরীত হওয়া অসম্ভব।GrHBen 7.3

    বাইবেলের স্থান, অথবা শাস্ত্রকলাপের উর্ধ্বে স্থান অধিকার করার উদ্দেশে পবিত্র আত্মা প্রদান করা হয়নি; কেননা শাস্ত্রকলাপ স্পষ্টভাবে বলে যে, ঈশ্বরের মান যার দ্বারা সকল শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতার পরীক্ষিত হওয়া আবশ্যক। প্রেরিত যােহন বলেন, “প্রিয়তমেরা, তােমরা সকল আত্মাকে বিশ্বাস করিও না, বরং আত্মা সকলের পরীক্ষা করিয়া দেখ, তাহারা ঈশ্বর হইত কিনা; কারণ অনেক ভক্ত ভাববাদী জগতে বাহির হইয়াছে।” (১ যােহন ৪:১)। আর যিশাইয় বলেন, “ব্যবস্থার কাছে ও সাক্ষ্যের কাছে [অন্বেষণ কর] ; এর অনুরূপ কথা যদি তাহারা না বলে, তবে তাহাদের কাছে অরুনােদয় নাই।” (যিশাইয় ৮:২০)।GrHBen 8.1

    এক শ্রেণীর লােকদের ভ্রান্তির দ্বারা পবিত্র আত্মার কাজের ওপরে এই গ্লানি নিক্ষেপ করা হয়েছে, যারা এর আলােকপাতের ওপরে দাবী করে বলে যে, ঈশ্বরের বাক্যের পরিচালনার আর প্রয়ােজন নেই। ওগুলাে মুদ্রিত পুস্তকসমূহের দ্বারা শাসিত হয় যা তারা আত্মায় ঈশ্বরের স্বর বলে বিবেচনা করে। কিন্তু যে আত্মা তাদের নিয়ন্ত্রণ করে তা ঈশ্বরের আত্মা নয়। মুদ্রিত পুস্তকসমূই অনুসরণ, শাস্ত্রমালা তুচ্ছ করা, কেবলমাত্র বিভ্রান্তি, প্রতারণা এবং ধ্বংসের দিকে পরিচালিত করে। এটি কেবলমাত্র শয়তানের পরিকল্পনা সামনে এগিয়ে নেবার উদ্দেশ্যেই হাসিল হয়। যখন পবিত্র আত্মার পরিচর্যা খ্রীষ্টের মণ্ডলীর প্রতি অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ, এটি শয়তানের একটি কারসাজি, চরমপন্থি এবং ধমেম্মত্তদের মাধ্যমে, আত্মার কাজের ওপরে ঘৃণা নিক্ষেপ করা এবং শক্তির এই উৎসকে তুচ্ছ করা যা আমাদের প্রভু স্বয়ং যােগান দিয়েছেন।GrHBen 8.2

    ঈশ্বরের বাক্যের সঙ্গে ঐক্য রেখে, তাঁর আত্মা সুসমাচার প্রচারের মাধ্যমে কাজ চালিয়ে যেতে হবে । সেই দুটো যখন পুরাতন এবং নতুন নিয়মের শাস্ত্রকলাপ দত্ত হয়েছিল, তখন পবিত্র আত্মা স্বতন্ত্র ব্যক্তির কাছে জ্যোতি প্রদান হতে বিরত থাকেননি, পবিত্র অনুশাসনে অন্তর্ভূক্ত হওয়া ব্যতিরেকেও। স্বয়ং বাইবেল বলে কিভাবে, পবিত্র আত্মার মাধ্যমে, মানব এমন এমন ব্যাপারে সতর্কবাণী, অনুযােগ, পরামর্শ, এবং শিক্ষা পেয়েছিল, যা অন্য কোন উপায়ে শাস্ত্রের বাণী প্রদান করা সম্ভব ছিল না। এবং বিভিন্ন যুগে ভবিষ্যদ্বাণী উল্লেখ রয়েছে, যার কথিত বাক্যের কিছুই লিপিবদ্ধ করা হয়নি। একইরূপে শাস্ত্রের পবিত্র অনুশাসনের শেষে; পবিত্র আত্মা তখনাে কাজ চালিয়ে যেতেন, আলােকিত করতে সতর্ক করাইয়া দিতেন এবং ঈশ্বরের সন্তানদের সান্ত্বনা দিতেন। GrHBen 9.1

    যীশু তাঁর শিষ্যদের কাছে প্রতিজ্ঞা করলেন, “কিন্তু সেই সহায়, পবিত্র আত্মা, যাহাকে পিতা আমার নামে পাঠাইয়া দিবেন, তিনি সকল বিষয়ে তােমাদিগকে শিক্ষা দিবেন, এবং আমি তােমাদিগকে যাহা যাহা বলিয়াছি, সেই সকল স্বরণ করাইয়া দিবেন।” “পরন্তু তিনি, সত্যের আত্মা, যখন আসিবেন, তখন পথ দেখাইয়া তােমাদেরকে সমস্ত সত্যে লইয়া যাইবেন; ...এবং আগামী ঘটনাও তােমাদিগকে জানাইবেন” (যােহন ১৪:২৬ ; ১৬:১৩)। শাস্ত্র পরিষ্কাররূপে শিক্ষা দেয় যে এই সকল প্রতিজ্ঞা, এ যাবৎ প্রেরিতদের সময়ে সীমিত অবস্থা থেকে সর্বযুগে খ্রীষ্টের মণ্ডলী পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। তাঁর শিষ্যদের যীশু নিশ্চিত করেন এ কথা বলে, “আমি যুগান্ত পর্যন্ত প্রতিদিন তােমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি” (মথি ২৮:২০)। আর পৌল ঘােষণা করেন, আত্মার বর এবং প্রকাশ মণ্ডলীতে স্থাপন করা হয়েছিল “পবিত্রগণকে পরিপক্ক করিবার নিমিত্ত করিয়াছেন, যেন পরিচর্যা কার্য সাধিত হয়, যেন খ্রীষ্টের দেহকে গাঁথিয়া তােলা হয়, যাবৎ আমরা সকলে ঈশ্বরের পুত্র বিষয়ক বিশ্বাসের ও তত্ত্বজ্ঞানের ঐক্য পর্যন্ত, সিদ্ধ পুরুষের অবস্থা পর্যন্ত, খ্রীষ্টের পূর্ণতার পরিমান পর্যন্ত অগ্রসর না হই।” (ইফিসীয় ৪:১২,১৩)।GrHBen 9.2

    কেননা প্রেরিত ইফিষীয়দের বিশ্বাসীদের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন, “যেন আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের ঈশ্বর, প্রতাপের পিতা আপনার তত্ত্বজ্ঞানে জ্ঞানের ও প্রত্যাদেশের আত্মা তােমাদিগকে দেন; যাহাতে তােমাদের হৃদয়ের চক্ষু আলােকময় হয়, যেন তােমরা জানিতে পাও, ... এবং বিশ্বাসকারী যে আমরা, আমাদের প্রতি তাহারা পরাক্রমের অনুপম মহত্ত কি” (ইফিষীয় ১:১৭-১৯)। জ্ঞানকে আলােকিত করা এবং মনকে ঈশ্বরের পবিত্র বাক্যের গভীর বিষয় সমূহের প্রতি মনের দুয়ার উন্মুক্তকরণ ছিল আশীর্বাদ যা পৌল ইফিষস্থ মণ্ডলীর জন্য অন্বেষণ করে দিলেন ।GrHBen 10.1

    পঞ্চাশত্তমীর দিনে পবিত্র আত্মার বিস্ময়কর প্রকাশের পরে, পিতর তাদের পাপের ক্ষমার জন্যে অনুতপ্ত হতে এবং খ্রীষ্টের নামে বাপ্তিস্ম নিতে উৎসাহিত করলেন, যেন তাদের পাপমােচন হয়; তিনি বললেন: তােমরা “পবিত্র আত্মারূপ দানপ্রাপ্ত হইবে । কারণ এই প্রতিজ্ঞা তােমাদের জন্য ও তােমাদের সন্তানপণের জন্য এবং দূরবর্তী সকলের জন্য যত লােককে আমাদের ঈশ্বর প্রভু ডাকিয়া আনিবেন” (প্রেরিত ৩২:৩৮, ৩৯)। ঈশ্বরের মহাদিনের অনুভূতির সঙ্গে, প্রভু যােয়েল ভাববাদীর দ্বারা পবিত্র আত্মার প্রকাশের এক বিশেষ প্রতিজ্ঞা করেছেন (যােয়েল ২:২৮)। এই প্রতিজ্ঞার আংশিক পূর্ণতা লাভ পঞ্চাশত্তমীর দিনের আত্মার বর্ষণের মাধ্যমে হয়েছিল; কিন্তু এর সম্পূর্ণ পূর্ণতা লাভ হবে ঐশ্বরিক অনুগ্রহের প্রকাশপ্রাপ্তিতে, যা হবে সুসমাচার প্রচার কার্যের সমাপ্তি ।GrHBen 10.2

    ভাল এবং মন্দের মহাসংগ্রামটির তীব্রতা বৃদ্ধি পাবে শেষকালে । সর্বযুগে, খ্রীষ্টের মণ্ডলীর শয়তানের ক্রোধ প্রকাশিত হয়েছে; এবং ঈশ্বর, শয়তানের শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার জন্য তাঁর লােকদেরকে তাঁর অনুগ্রহ এবং আত্মা বর্ষণ করেছেন । যখন খ্রীষ্টের প্রেরিতগণ পৃথিবীতে তাঁর সুসমাচার বার্তা বহন করবে এবং তা ভবিষ্যতের ভাবীসুখের জন্য নথিভুক্ত করবে, তখন তারা বিশেষ ভাবে আত্মার জ্যোতি দ্বারা আশীর্বাদ যুক্ত হয়েছিল। কিন্তু যখন মণ্ডলী চুড়ান্ত মুক্তির জন্য অগ্রসর হবে, তখন শয়তান মহা শক্তির সাথে কাজ করবে । সে মহা পরাক্রম ও নানা চিহ্ন ও অদ্ভুত লক্ষণ সহকারে” (থিষলনীকীয় ২:৯) কাজ করবে । “সে অতিশয় রাগান্বিত, সে জানে, তাহার কাল সংক্ষিপ্ত” (প্রকাশিত ১২:১২)। ছয় হাজার বছর পর্যন্ত সেই সুদক্ষমন যে ব্যক্তি একদা ঈশ্বরের দূতগণের মধ্যে ছিল সবোচচ, সে প্রতারণা এবং ধ্বংশ যজ্ঞের দিকে ঝুঁকে পড়েছে । শয়তানী দক্ষতা ও বঞ্চনার ব্যাপকতা অর্জন করে সর্বপ্রকার নিষ্ঠুরতার বিশাল প্রাপ্ত যুগকলাপের এ সব দ্বন্দ্ব চূড়ান্ত সংগ্রামে ঈশ্বরের লােকদের বিরুদ্ধে বহন করার জন্য আনীত হবে। আর এই সংকট কালে খ্রীষ্টের অনুসারীরা জগতের কাছে প্রভুর দ্বিতীয় আগমনের সতর্কবাণী নিয়ে যেতে হবে; এবং একদল লােকদের তাঁর আগমনে নিকলঙ্ক নির্দোষ অবস্থায়” (২ পিতর ৩:১৪) তাঁর সম্মুখে দাড়াবার জন্য প্রস্তুত করতে হবে । এই সময় ঈশ্বরিক অনুগ্রহ এবং শক্তির বিশেষ অবশ্যক প্রৈরিত্রিক যুগ থেকে আদৌ কম নয়। GrHBen 10.3

    পবিত্র আত্মার আলােকিতকরণের মাধ্যমে, ভাল ও মন্দের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী বিবাদ এই পৃষ্ঠাগুলাের লেখকের কাছে উন্মােচিত হয়েছে । থেকে থেকে আমাকে জীবনের রাজপুত্র, পরিত্রাণের আদিকর্তা খ্রীষ্ট ও মন্দের রাজকুমার, পাপের প্রবর্তক, ঈশ্বরের পবিত্র ব্যবস্থার প্রথম লঙ্ঘনকারী শয়তানের মধ্যে মহা সংগ্রামের কার্যপদ্ধতি দেখবার অনুমতি দেয়া হয়েছে । খ্রীষ্টের বিরূদ্ধে শয়তানের শত্রুতা তাঁর অনুগামীদের বিরূদ্ধে প্রদর্শিত হয়েছে। ঈশ্বরের নীতিমালার বিরূদ্ধে একই ঘৃণা, প্রতারণার একই কৌশল, যার দ্বারা ভুলকে সত্য বলে দেখানাে, যার দ্বারা ঈশ্বরের ব্যবস্থার বিনিময়ে মনের ব্যবস্থা প্রতিভূ; এবং মনুষ্য স্রষ্টার পরিবর্তে সৃষ্ট জীবনের আরাধনার দিকে পরিচালিত হয়, হতে পারে অতীতের সব ইতিহাসে অঙ্কিত রয়েছে। ঈশ্বরের চরিত্রের ভুল ব্যাখ্যা শয়তানের প্রচেষ্টা, যেন সে স্রষ্টা সম্পর্কে একটি ধারণা পােষণ করতে পারে এবং এরূপে তাকে ভয়ে আরাধনা করতে উৎসাহিত করে এবং প্রেমের পরিবর্তে ঘৃণা পােষণ করে; ঐশ্বরিক ব্যবস্থা একপার্শ্বে রেখে দেবার তাঁর প্রচেষ্টা, লােকদের মনে এই চিন্তা ঢুকিয়ে দেয় যে, তারা তাদের করণীয় থেকে মুক্ত; এবং যারা তাঁর প্রতারণা প্রতিরােধ করতে সাহসী, তারা সর্ব-যুগে দৃঢ়রূপে অনুসন্ধান করে আসছে। ঐসব পিতৃকূলপতিগণ, ভাববাদীগণ এবং প্রেরিতগণ, সাক্ষ্যমর এবং সংস্কারকগণের ইতিহাস চিহ্নিত করা হবে।GrHBen 11.1

    অন্তিম মহা সংগ্রামে, শয়তান একই নীতি প্রয়ােগ করবে, একই মনােভাব প্রকাশ করবে, এবং একই অভিপ্রায়ের লক্ষ্যে কাজ করবে যেমন পূর্ববর্তী যুগে করা হতাে। যা সংঘটিত হয়েছে, তদ্রপ আসন্ন সংগ্রাম, একটি ভয়াবহ তীব্রতা দ্বারা চিহ্নিত হবে, যেমনটা পৃথিবী কখনাে দেখেনি। শয়তানের প্রতারণা আরাে ভয়াবহ তীব্র হবে, তাঁর আক্রমণ হবে আরাে দৃঢ় ও নিশ্চিত। (মার্ক ১৩:২২)।GrHBen 12.1

    যেমন ঈশ্বরের আত্মা আমার মনে তাঁর বাক্যের মহান সত্য এবং অতীত এবং ভবিষ্যতের দৃশ্য উন্মােচন করেছেন, আমাকে আদেশ করা হয়েছে যেন আমি অন্যদের কাছে এই প্রকাশ প্রাপ্তি ঘােষণা করি, অতীতের পৃষ্ঠা হতে দ্বন্দ্বের ইতিহাস স্পষ্ট দেখিয়ে দেই, বিশেষ করে ভবিষ্যতের তদ্রুপ অগ্রসরমান বিবাদের সম্মুখে আলােকপাত করি। এই উদ্দেশ্য অনুধাবনে, আমি চেষ্টা করেছি, মহা পরীক্ষামূলক সত্যের উন্মােচন সম্পর্কে এরূপ একটি নীতি বা অভ্যাসের মধ্যে মণ্ডলীর ঘটনাবলি মনােনয়ন এবং একত্র করতে যা বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীকে প্রদান করা হয়েছে, যা শয়তানের এবং একটি প্রিয় মণ্ডলীর শত্রুর ক্রোধকে উত্তেজিত করে তুলেছে এবং যা, “মৃত্যু পর্যন্ত তাদের জীবনকে জ্ঞান করেনি, তাদের সাক্ষ্য দ্বারা পৃষ্টপােষকতা করা হয়েছে।GrHBen 12.2

    এসব পুরানাে নথিপত্রের মধ্যে আমরা আমাদের সামনে বিবাদের পূর্ব ইঙ্গিত দেখতে পাই। বাক্যের আলােকে ঐ সকল বিষয়ে এবং তার। আত্মার আলােকে, আমরা দুষ্ট লােকটির উন্মােচিত পরিকল্পনা এবং বিপদসমূহ দেখতে পাই যা তাদের পরিত্যাগ করতে হবে, যাদের প্রভুর সম্মুখে তাঁর আগমনের সময় “নিষ্কলঙ্ক” দেখতে পাওয়া যাবে ।GrHBen 12.3

    গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি যা অতীতের সংস্কারের উন্নতি চিহ্নিত করে, তা-ই ইতিহাসের বিষয়বস্তু সুপরিচিত এবং প্রটেষ্টান্ট সমাজ সার্বভৌমভাবে উপলব্ধি করবে; ও সবই আসল সত্য যা কেউই অস্বীকার করতে পারে না। এই ইতিহাস আমি সংক্ষেপে উপস্থাপন করেছি যা পুস্ত কখানির পরিধি উপযুক্ত এবং যে স্বল্পতা মনােযােগ দেয়া আবশ্যকীয়। তাদের প্রয়ােগের এক যথার্থ জ্ঞান বজায় রাখার বােধে স্বল্পায়াতনে আনয়ন করা যায়। কোন কোন ক্ষেত্রে যেখানে কোন ঐতিহাসিক কোন নির্দিষ্ট বিষয়ের ব্যাপক নকশা সংক্ষেপে প্রদান করার লক্ষ্যে সুবিন্যস্ত করেছেন; বা সুবিধাজনকভাবে সবিশেষ সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়েছেন, তাঁর কথা উদ্ধৃত করা হয়েছে; আবার কোন কোন ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোন মর্যাদা তাদের দেয়া হয়নি, তথাপি তাঁর বক্তব্য সহজ ও সফল উপস্থাপন প্রদান করে। আমাদের সময়কালে তাদের রচনাবলির একইরূপ প্রয়ােগ করা হয়েছে।GrHBen 13.1

    অতীতের সংগ্রাম সম্পর্কে নতুন সত্য উপস্থাপন করা এই পুস্ত কখানির উদ্দেশ্য নয়; আসন্ন ঘটনাবলির ওপরে তথ্যাবলি এবং নীতিমালা আনয়ন করাই এর উদশ্য। তথাপি আলাে এবং অন্ধকারের বাহিনীর মধ্যে সংগ্রামের একটি বিচার করলে দেখা যায় অতীতে সব ঘটনারই একটি নতুন বৈশিষ্ট্য রয়েছে; আর ঐ সকলের মাধ্যমে ভবিষ্যতের ওপরে একটি নতুন আলাে নিক্ষেপ করা হয়েছে, অতীতের সংস্কারকদের ন্যায়, তাদের চলার পথ আলােকিত করে, এমনকি তাদের পার্থিব মঙ্গলের সংকটে, “ঈশ্বরের বাক্য, এবং যীশু খ্রীষ্টের সাক্ষ্যের জন্য আহবান করা হবে।GrHBen 13.2

    ঠিক ও ভুলের মধ্যে মহা সংগ্রামের দৃশ্য, শয়তানের চাতুরী সকল উঘাটন করা হবে যদ্দারা সে কৃতকার্যতার সাথে প্রতিহত হতে পারে; মন্দের মহা সংকটের একটি সংকটজনক সমাধান করা ও উপচিকিষা সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করে পাপের উৎপত্তি ও চূড়ান্ত হস্তান্তরিত করণের ওপরে এমন আলােকপাত করে; ও তাঁর ব্যবস্থার বৈশিষ্ট ও চরিত্র পবিত্র ও অপরিবর্তনীয় চরিত্র দেখানােই হবে এই পুস্তকখানির উদ্দেশ্য। পুস্ত কখানির মাধ্যমে আত্মাগণ অন্ধকারের ক্ষমতা থেকে মুক্ত হয়ে যেন “দীপ্তির সাধুগণের উত্তরাধিকার অংশীদার হতে পারে, যিনি আমাদেরকে প্রেম করেন, এবং আমাদের জন্য আপনাকে প্রদান করেছেন, তাঁর গুণকীর্তন করা, এটিই হবে, লেখিকার একান্ত প্রার্থনা ।GrHBen 13.3

    E.G.W.

    Larger font
    Smaller font
    Copy
    Print
    Contents