Loading...
Larger font
Smaller font
Copy
Print
Contents
  • Results
  • Related
  • Featured
No results found for: "".
  • Weighted Relevancy
  • Content Sequence
  • Relevancy
  • Earliest First
  • Latest First
    Larger font
    Smaller font
    Copy
    Print
    Contents

    ১১ - আসন্ন সংঘাত

    স্বর্গে মহা সংঘর্ষের একেবারে শুরু থেকেই শয়তানের উদ্দেশ্য ছিল ঈশ্বরের ব্যবস্থার বিপর্যয় ঘটনােই মহা ঈশ্বরের ব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করা । এই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সে সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করেছিল, যদিও সে স্বর্গ থেকে পতিত হয়েছিল তবুও ঐ একই সংগ্রাম পথিবীতে অবিরত চালিয়ে গেছে। মনুষ্য জাতিকে প্রতারণা করা এবং তাদেরকে ঈশ্বরের ব্যবস্থা লঙ্ঘন করানাে তাঁর অভিপ্রায়, সে অবিচলরূপে চালিয়ে গেছে। সমস্ত ব্যবস্থা একত্রে এক পাশে ঠেলে রেখে এটি সম্পাদন করে হােক, অথবা এর একটি নিদিষ্ট আদেশ অবহেলা করে হােক তাঁর শেষ পরিণাম একই হবে। যে কেউ “কেবল একটি বিষয়ে ব্যবস্থা লঙ্ঘন করে সে সমস্ত ব্যবস্থা লঙ্ঘনের দায়ে। পড়বে; তাঁর প্রভাব এবং উদাহর আজ্ঞা লঙ্ঘনের পক্ষে; সে “সকলেরই দায়ী” হয়েছে। যাকোব ২:১০।GrHBen 145.1

    ঐশ্বরিক নৈতিক ব্যবস্থার অবমাননা করার সুযােগ সন্ধানে, শয়তান বাইবেলীয় বিশ্বাসকে পথভ্রষ্ট করেছে, সহস্রের সহস্র ব্যক্তির বাইবেল শেষ বিশ্বাসের সঙ্গে ভ্রান্তি সংযুক্ত করা হয়েছে, মহা সংঘর্ষটি হবে সত্য ও মিথ্যার মধ্যে, কিন্তু ঈশ্বরের ব্যবস্থাটি নিয়ে যে দীর্ঘস্থায়ী বিবাদটি হবে সেটিই হবে চুক্তি সংগ্রাম । সেই সংগ্রামে আমরা এখন প্রবেশ করছি এই সংগ্রাম মানুষের ব্যবস্থা ও যিহােবার ব্যবস্থার মধ্যে সংগ্রাম। এই সংগ্রাম বাইবেলের ধর্ম বিশ্বাসের ও গল্পকথা ও পরাম্পরাগত প্রথার মধ্যে সংগ্রাম ।GrHBen 145.2

    যে সমস্ত শক্তি সত্য ও ধাম্মিকতার বিরূদ্ধে সংগ্রামের উদ্দেশ্যে সঙ্গবদ্ধ হবে তারা এখন তাদের কাজ তৎপর । ঈশ্বরের পবিত্র বাক্য যা আমাদের হাতে দেয়া হয়েছে, যার মূল্য দিতে হয়েছে যাতনা ভােগ ও রক্তেপাতের মাধ্যমে, তা এখন মূল্যহীন করা হয়েছে। বাইবেল এখন সকলের হাতের নাগালে, কি দুর্ভাগ্য যে অতি অল্প সংখ্যক লােকই তা জীবনের পথ প্রদর্শকরূপে গ্রহণ করছে। নাস্তিকতা আতঙ্কজনক ভাবে প্রসার লাভ করছে, তাঁর বিস্তার শুধু পৃথিবীতে নয় বরং মণ্ডলীর ভেতরে। অনেকে সেই সমস্ত মতবাদ অস্বীকার করেছে যা খ্রীষ্টিয় বিশ্বাসের একেবারে মূলভিত্তি । সৃষ্টি কার্যের যে বাস্তব মহা ঘটনা অনুপ্রাণিত লেখকগণ লিখেছেন, যেমন মানব জাতির পতন, প্রায়শ্চিত্ত, ঈশ্বরের ব্যবস্থার চিরস্থায়িত্ব তা, এগুলাে মূলত স্বীকৃতি প্রাপ্ত খ্রীষ্টান জগতের একটি বড় অংশ এসব মহা সত্যের সম্পূর্ণ অংশ, নতুবা আংশিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। সহস্র সহস্র লােক যারা নিজেদের জ্ঞান ও স্বাধীনতার ওপর আত্ম গরিমা করে, বাইবেলের উপর দৃঢ় আস্থা স্থাপনের ক্ষেত্রে বাইবেলের সাক্ষ্যকে তারা দুর্বল নজির হিসেবে দেখে; আধ্যাত্মিকতা অর্পন করার একটি প্রমাণ হিসেবে দেখে এবং তাদের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ চিন্তা অনুযায়ী ব্যাখ্যা করে । অনেক পুরােহিতগণ তাদের জনগণকে শিক্ষাদেয় এবং অনেক অধ্যাপকগণ ও শিক্ষকমণ্ডলী তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান করে যে, ঈশ্বরের ব্যবস্থার। পরিবর্তন বা রদ করা হয়েছে; এবং যারা এখনাে এর অনুশাসন সঠিক বা অপরিবর্তিত মনে করে, এবং আক্ষরিকভাবে পালনীয়, তাদেরকে বিদ্রুপ ও অবমাননা পাবার যােগ্য বলে মনে করা হয় ।GrHBen 145.3

    এই চরম সত্যকে অস্বীকারে লােকেরা এর স্রষ্টাকে অস্বীকার করে । ঈশ্বরের ব্যবস্থা পদদলিত করে, তারা ব্যবস্থা দাতার ক্ষমতাকে অস্বীকার করছে। মিথ্যা ধর্মমতবাদ এবং তত্ত্বসমূহ দ্বারা কাঠের বা পাথরের তৈরী মূর্তির আদলে মূর্তি তৈরী করা বড়ই সহজ। ঈশ্বরের প্রতি ভুল শ্রদ্ধাভক্তি উপস্থাপন করে তাকে একজন মিথ্যা চরিত্র বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব হিসেবে ধারণা করতে শয়তান মানুষকে পরিচালিত করে । অনেকের মনের সিংহাসনে যিহােবাকে স্থান না দিয়ে বরং দর্শন শাস্ত্রগত দেবতাকে সিংহাসনে বসিয়েছে; অন্যদিকে জীবন্ত ঈশ্বর, তিনি তাঁর বাক্যের মধ্যে, খ্রীষ্টেতে, এবং সৃষ্টির কার্যসমূহে প্রকাশিত হয়ে আছেন, তিনিও পূজিত হন, তবে খুব কম সংখ্যক লােকের দ্বারা । যদি সহস্র সহস্র লােক প্রকৃতিকে দেবতুল্য মনে করে তবে তারা প্রকৃতির ঈশ্বরকে অস্বীকার করে। যেমন কিনা প্রাচীন ইস্রায়েলদের মধ্যে ইলিশায়ের সময়ে, বিভিন্নরূপে পৌত্তলিকতা বিরাজ করছিল, তদ্রপ বর্তমান যুগে খ্ৰীষ্টান সমাজেও নানারূপে তা বিরাজ করছে। স্বনামধন্য অনেক বিজ্ঞলােদের, দার্শনিকদের, কবিদের, রাজনীতিবিদদের, সাংবাদিকদের—দেবতা, সুসজ্জিত পৃষ্ঠপােষক চক্রের দেবতা, অনেক মহা বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের, এমন কি অনেক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের দেবতা, ফৈনিকিয়ার সূর্যদেবতা, বালের চেয়ে সামান্যই উন্নত।GrHBen 146.1

    কোন ভ্রান্তি খ্রীষ্টান সমাজ গ্রহণ করেনি যা জোরালভাবে আঘাত হানে ঈশ্বরিক ক্ষমতার বিরুদ্ধে, কিছুই অধিক সরাসরি ভাবে যৌক্তিকতাকে প্রতিরােধ করে নি, কোন কিছুই এর পরিণাম অপেক্ষা ক্ষতিকর নয়, যতটা ক্ষতির আধুনিক ধর্মমতবাদ, যা দ্রুত গৃহীত হচ্ছে, যা বলছে যে ঈশ্বরের ব্যবস্থা আর লােকদের ওপর বাধ্যবাধকতা মূলক নয়। প্রত্যেক দেশেরই তাঁর নিজস্ব আইন কানুন আছে, সে আইন সমাদরের ও পালনীয়; কোন রাজ্য নিয়মনীতি বিহীনভাবে চলতে পারে না; তবে কি এটা কল্পনা করা যায় যে স্বর্গ ও পৃথিবীর নির্মাতার তাঁর সৃষ্ট প্রাণীদের পরিচালনার জন্য কোন ব্যবস্থা বা আইন নেই? মনে করুন, সেই বিশিষ্ট পুরােহিতগণ প্রকাশ্যে দাড়িয়ে শিক্ষা দিচ্ছে যে, যেসকল সংবিধিবদ্ধ আইনগুলাে তাদের ভূমি ও তাদের নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ করে তাঁর আর প্রয়ােজন নেই—ওগুলো লােকদের স্বাধীনতা দ্বারা সীমিত করা হয়েছে; সুতরাং ওগুলাে পালন করার আর প্রয়ােজন নেই; এই ধরণের প্রচারকদের পুলপিটে কতক্ষণ সহ্য করা হবে? তবে কি যে সমস্ত নৈতিক উপদেশগুলাের উপর সমস্ত শাসনপ্রণালীর পুলপিটে কতক্ষণ সহ্য করা হবে? তবে কি যে সমস্ত নৈতিক উপদেশগুলাের উপর সমস্ত শাসন।GrHBen 146.2

    মহান শাসনকর্তার পক্ষে তাঁর আজ্ঞা বিলােপ সাধন করা, এবং অপরাধীর বিচারের দণ্ডবিধান করা অথবা আজ্ঞাবহদের পুরস্কৃত করার মত একটা আদর্শ পর্যায় না রেখে জগৎকে ছেড়ে যাওয়া অপেক্ষা বরং জাতিগণের তৈরী যে আইন লােকদেরওক যার যেমন ইচ্ছে তাকে তেমনটি করার অনুমতি দেয় সেই সংবিধিবদ্ধ আইনের বিলােপ সাধন করা জাতিগণের পক্ষে মঙ্গলজনক। আমরা কি জানব ঈশ্বরের আইন বাতিল করার পরিণাম কি হতে পারে? পরীক্ষা করে চেষ্টা করা হয়েছে। ফ্রান্সে যখন নাস্তিকতা ক্ষমতায় আসে তখন সেখানে ভয়ানক কিছু ঘটনা কার্যবার করা হয় । সমস্ত পৃথিবীকে তখন। দেখানাে হয় যে, যে আত্ম-সংযম ঈশ্বর ধার্যকরে দিয়েছিলেন তা ছুঁড়ে ফেলে। দেয়া হয়েছে এবং সেখানে নিষ্ঠুরতম শাসকের আইন গ্রহণ করতে বাধ্য করা হয়েছে। ধার্মিকতার নীতিকে যখন একপার্শ্বে ঠেলে রাখা হয়, তখন এই পৃথিভীতে মন্দের রাজপুত্রের জন্য তাঁর ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত হয় ।GrHBen 147.1

    যখনই ঈশ্বরের বাক্যকে অস্বীকার করা হয়, তখনই পাপকে পাপ বলে মনে হয় না বা ধর্মশীলতার প্রয়ােজন হয় না । ঈশ্বরের শাসন ব্যবস্থার কাছে যারা নিজেদেরকে সমর্পণ করতে অস্বীকার করে তারা সম্পূর্ণভাবে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করার অনুপযুক্ত। তাদের ক্ষতিকর শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে যুবক যুবতী ও ছেলেমেয়েদের অন্তরে অবাধ্যতার বীজ বপন করা হয়, যারা স্বাভাবিক ভাবে নিয়ন্ত্রণে ধৈর্যহীন; এবং পরিশেষে একটি বিশৃঙ্খলা, লম্পট সমাজের রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয় । তখন যারা সহজ সরল ভাবে ঈশ্বরের অনুশাসনে আজ্ঞাবহ তারা অবজ্ঞা ও উপহাসের পাত্র হয়; অন্যদিকে বহুসংখ্যক লােক শয়তানের প্রবঞ্চনাকে সাদরে গ্রহণ করে। তারা লাগাম কামনা বাসনার হাতে তুলে দেয় আর তাদের পাপ কার্যে লিপ্ত করায়, সেই পরজাতীয়দের উপর দণ্ডাজ্ঞা নেমে আসার আহ্বান জানায়।GrHBen 147.2

    যারা জনগণের কাছে ঈশ্বরের তাজ্ঞাকে লঘুরূপে বিবেচনা করার শিক্ষা দেয়, তারা অবাধ্যতার বীজ বুনে অবাধ্যতার ফসল কাটার জন্য । ঐশ্বরিক ব্যবস্থার ভিক্তিতে যে নীতিমালা প্রতিষ্ঠিত হবে তা সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র থাকবে এবং মানুষের তৈরি নীতিমালা খুব শীঘ্রই উপেক্ষিত হবে । কারণ ঈশ্বর অন্যায় কর্ম, লােভ, মিথ্যা সাক্ষ্য, প্রবঞ্চনা নিষিদ্ধ করেছেন, কিন্তু সাংসারিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক মনে করে মানুষ তাঁর লিখিত আইন পদদলিত করতে প্রস্তুত; কিন্তু তাঁর এই বিতারিত করলে তাঁর পরিণাম যে কি হবে তা তারা কল্পনাও করতে পারে না। ব্যবস্থায় যদি বাধ্যবাধকতা না থাকত, তবে কেন অপকর্ম করতে লােকেরা ভয় পায়? ধন সম্পত্তির কোন নিরাপত্তার থাকত না। মানুষ তাদের হিংস্রতার মাধ্যমে প্রতিবেশীর অধিকার হরণ করত, এবং বিমী লােকই সবচেয়ে ধনবান লােক হত । জীবনের কোন মর্যদা থাকত না। পরিবার রক্ষার্তে বিবাহের প্রতি আর দুর্গ হিসেবে স্থির থাকত না। যার ক্ষমতা থাকত সে যদি বাসনা করত, তবে প্রতিবেশীর স্ত্রীকে জোরপূর্বখ হরণ করত। চতুর্থ আজ্ঞার মত পঞ্চম আজ্ঞাকেও তারা পাশে সরিয়ে রাখত। সন্তান সন্ততি তাদের পিতামাতকে হত্যা করতে পিছপা হত না আর এভাবেই তারা তাদের হৃদয়ের কাঙ্খিত মন্দ বাসনা চরিতার্থ করত। সুসভ্য জগত আবার যাযাবরের ন্যায় ডাকাতে ও বিশ্বাসঘাতকতায় পূর্ণ হত; পৃথিবী থেকে শান্তি, ন্দ্রিা ও সুখ চিরতরে বিলীন হত ।GrHBen 148.1

    যে মতবাদ ইতােমধ্যে মানুষকে ঈশ্বরের দাবী-দাওয়া থেকে মুক্তি দিয়েছে তা নৈতিকবাধ্যবাধকতর শক্তিকে দুর্বল করে দিয়েছে এবং জগতে পাপ বা আনাচারের প্লাবন-দ্বার মুক্ত করে দিয়েছে। স্বেচ্ছাচারিতা, অসৎ আমােদপ্রমােদ ভােগবিলাস ও ভ্রষ্টতা জলােচ্ছাসের ন্যায় তীব্র জোয়ারে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। পরিবারের ভেতর শয়তান তাঁর কাজ চালাচ্ছে। এমন কি স্বীকৃতি প্রাপ্ত খ্রীষ্টিয় পরিবারগুলােতে তাঁর পতাকা। সেখানে দেখা যাচ্ছে হিংসা, অসৎ সন্দেহ, কুচিন্তা ভণ্ডামী, বিচ্ছেদ, সমকক্ষ হওয়ার চেষ্টা, শক্রতা, পবিত্র বিশ্বাসের ওপর বিশ্বাস ঘাতকতা, কামনা বাসনায় মেতে থাকা । সম্পূর্ণ ধর্মীয় নীতিমালা ও ধর্ম বিশ্বাস পদ্ধতি, যার মাধ্যমে সামাজিক জীবনের ভিত্তি ও অবকাঠামাে গড়ে ওঠার উচিত ছিল তা মনে হচেই টলটলায়মান একটি পিণ্ড মাত্র যা কোন সময় ভেঙ্গে পড়তে পারে । যখন জঘন্য অপরাধীদের তাদের অপকর্মের জন্য কারাগারে নিক্ষেপ করা হয় প্রায়ই তাদের জন্য উপহারদী ও বিশেষ খাতির প্রাপ্তির এমন ব্যবস্থা করা হয়, মনে হয় যেন তারা ঈর্ষণীয় স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছে। তাদের চরিত্র ও অপরাধ সথধ্যে বড় ধরণের প্রচারণা চালান হয়। । সংবাদ পত্রে তাদের বিতৃষ্ণাপূর্ণ কলঙ্কের বিবরণ প্রকাশ করা হয়, তাই অন্যরাও এ ধরণের প্রবঞ্চনা, ডাকাতি, ও খুনের মত কাজ করতে উদ্ভুদ্ধ হয়; এবং শয়তান তাঁর এই নারকীয় কাজ্যের সাফলে উল্লাস করে । যারা ঈশ্বরকে ভয় করে তাদের পাপের সম্মাহক শক্তি, জীবনে উচ্ছলতা গ্রহণ, ভয়ানক অমিতাচার বৃদ্ধি এবং প্রতিটি পর্যায়ে ও স্তরে পাপচারের ব্যাপারে জাগ্রত হওয়া উচিত, এবং কিভাবে এই অধর্মের স্রোতের বিরুদ্ধে স্থির থাকা যায় তাঁর অনুসন্ধান করা উচিত।GrHBen 148.2

    ন্যায় বিচারের আদালতগুলাে ভ্রষ্ট । ইন্দ্রিয়সুখের প্রেমে এবং কামনাবাসনা চরিতার্থে শাসনকর্তারা প্রণােদিত হয়েছে। অমিতব্যয়িতা অনেকের মনকে অন্ধকারাছন্ন করে রেখেছে যেন শয়তান প্রায় সম্পূর্ণ তাঁর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। জুরিবর্গ ভুল পথে চালিত হয়েছে, ঘুষগ্রহণ করেছে, বিভ্রান্ত হয়েছে। আইন কর্মকর্তাদের ভেতর সব ধরণের মাতলামী ও উচ্ছলতা হৈচৈপূর্ণআনন্দোৎসব, আসক্তি, ঈর্ষা, সব ধরণের অসাধুতা দেখা যাচেই। “আর বিচার পশ্চাতে হটিয়া পড়িয়াছে, এবং ধাৰ্ম্মিকতা দূরে দাঁড়াইয়া রহিয়াছে; বস্তুতঃ চকে সত্য উছােট খাইয়া পড়িয়াছে, ও সরলতা প্রবেশ করিতে পায় না।” যিশাইয়া ৫৯:১৪।GrHBen 149.1

    রােমের আধিপত্যের কারণে অধার্মিকতা ও আধ্যাত্মিকতা অন্ধত্ব বিরাজ করছিল, আর তা ছিল শাস্ত্রকে অবরােধ করে রাখার অনিবার্য পরিণাম; কিন্তু কোথায় দেখা যাবে বিশ্বাসঘাতকতার কারণ ঈশ্বরের ব্যবস্থা প্রত্যাখ্যানের কারণ, দুর্ণীতির অনুগমন ধর্মীয় স্বাধীনতার এই যুগে সুসমাচারের আলােকচ্ছটার নিচে? শয়তান এখন যে আর শাস্ত্র অবরুদ্ধ রেখে পৃথিবীকে তাঁর নিয়ন্ত্ৰণ ধরে রাখতে পারছে না, একই উদ্দেশ্য পূরণের জন্য সে অন্যান্য উপায় অবলম্বন করছে। বাইবেলের ওপর বিশ্বাসকে ধ্বংস করতে এবং সেই সাথে বাইবেলকেও ধ্বংস করতে চাইচেছ । ঈশ্বরের ব্যবস্থায়:কোন বন্ধন নেই এইরূপ বিশ্বাসকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে সে এতটাই কার্যকর ভাবে মানুষকে আজ্ঞালঙ্ঘনের দিকে পরিচালিত করেছে মনে তারা যেন শাস্ত্র সম্পর্কেই পুরােপুরি অ৩৪। অতীতের ন্যায় বর্তমানেও আরাে ভিন্ন নকশায় মণ্ডলীর মাধ্যমে সে তাঁর কাজ করেছে। বর্তমানে ধর্মীয় সংগঠনগুলাে সহজ সরল বিশ্বাস যা শাস্ত্রে পরিলক্ষিত হয় তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে, এবং সেই বিশ্বাসগুলাের সঙ্গে বাকযুদ্ধে তারা এমন সব ব্যাখ্যা গ্রহণ করছে এবং এমন স্থান গ্রহণ করছে যা নাস্তিকতার বীজ বুনে । স্বাভাবিক অমরত্বে এবং মৃত্যুতে মানুষের সচেতনা সম্পর্ক পােপীয় ভ্রান্ত বিশ্বাসের সাথে দৃঢ়ভাবে আসক্ত থেকে তারা আধ্যাত্মবাদের প্রতারণাকে প্রতিরােধ করার একমাত্র উপায়কে তারা প্রত্যাখ্যান করেছে। অনন্ত যন্ত্রণা ভােগের মতবাদ অনেককে বাইবেলের ওপর অনাস্থা রাখতে পরিচালিত করেছে। চতুর্থ আজ্ঞাকে দাবী হিসেবে লােকদের প্রতি দেওয়া আছে, দেখা গেছে যে শাব্বাথ পালনের জন্য নির্দেশ দান করা আছে; আর যেহেতু কার্য থেকে নিজেদের মুক্ত রাখার একমাত্র উপায় এটি তাই তারা এটি পালন করতে অনিচ্ছুক, অনেক জনপ্রিয় শিক্ষক এই শিক্ষা দেয় যে ঈশ্বরের ব্যবস্থা পালন করার এখন তেমন বাধ্যবাধকতা নেই। তাই তারা ব্যবস্থাকে ও শাব্বাথকে একত্রে দূরে ছুড়ে ফেলে দেয়। যেহেতু শাব্বাথের কার্যকে সংস্কার করে প্রসারিত করা হয়েছে, ফলে স্বর্গীয় আজ্ঞার প্রতি এই প্রত্যাখ্যান চতুর্থ আজ্ঞার দাবীসমূহকে বাতিল করে তা প্রায় পুরােপুরি সার্বজনীন করে তুলবে। ধর্মীয় নেতাদের শিক্ষা নাস্তিকতাবাদ আত্মিকবাদের দ্বার উন্মুক্ত করেছে এবং ঈশ্বরের পবিত্র ব্যবস্থা অবজ্ঞা করছে; এবং খ্রীষ্টিয় জগতে বিদ্যমান এইসব পাপাচারের একটি ভয়াবহ দায়দায়িত্ব নেতাদের উপর অবস্থান করছে।GrHBen 149.2

    তবু ঐ শ্রেণীর লােকেরা দাবি করে যে দ্রুত বর্ধনশীল ভ্রষ্টতা ব্যাপক ভাবে আরােপ যােগ্য তথা কথিত “খ্রীষ্টান শাবাথে,” এবং তা রােববার পালনকে বেগবান করবে এবং সমাজের নৈতিকতা বৃদ্ধিতে বড় ধরণের সহায়ক হবে। এই দাবিটি বিশেষভাবে করা হচ্ছে আমেরিকায়, যেখানে প্রকৃত বিশ্রামাবারের ধর্মবিশ্বাস ব্যাপকভাবে প্রচারিত হচ্ছে। এখানে মিতাচারী হওয়া কাজটি নৈতিক সংস্কারের জন্য সর্বপ্রধান এবং গুরুত্বপূর্ণ, যা প্রায়ই রােববার পালন আন্দোলনের সাথে সংযুক্ত করা হয়ে থাকে, এবং তা সাম্প্রদায়িক নিদর্শনের পক্ষে তাদের জন্য সমাজের সৰ্ব্বোচ স্বার্থের উন্নয়নে কাজ করে; এবং যারা নিজেদেরকে তাদের সঙ্গে সংযুক্ত করতে অস্বীকার করে তাদেরকে বলা হয় মিতচার ও সংস্কারের শত্রু। তবে আসল কথা হল, ভুল প্রতিষ্ঠার জন্য একটি আন্দোলন এমন একটা কার্যের সাথে যুক্ত যা নিজেই ভাল, আর তা ভূলের পক্ষে একটি যুক্তি নয়। আমরা গােপনে ছদ্মবেশে স্বাস্থ্যকর খাদ্যের সঙ্গে বিষ মেশাতে পারি, তবে আমরা তাঁর বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করতে পারব না। বিপরীতভাবে, আর যদি আমরা অসতর্কতার সঙ্গে সেই খাদ্য খাই তবে তা বড়ই বিপজ্জনক হবে । আর এটাই শয়তানের মিথ্যার মিশ্রণ ঘটানাের কৌশল যা আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় ন্যায় সঙ্গত । রােববার আন্দোলনের নেতারা সংস্কারের পক্ষে কাজ করতে পারে, যা লােকদের প্রয়োজন, যার নীতিমালা বাইবেলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত; তথাপি তাঁর যকি এমন মধ্যে কিছু বাধ্যবাধকতা থাকে যা ঈশ্বরের ব্যবস্থার পরিপন্থি, ঈশ্বরের প্রজারা তাঁর সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারে না। মানুষের অনুশাসনের জন্য ঈশ্বরের দশ আজ্ঞাকে একপাশে ফেলে। রেখে কিছুই তাদের ন্যায্যতা প্রতিপাদন করতে পারে না ! GrHBen 150.1

    আত্মার অমরত্ব ও রােববারের পবিত্রতা, এই দুটি মহাভুলের মাধ্যমে শয়তান লােকদেরকে তাঁর প্রতারণার ফাদে ফেলবে। প্রথমটি আত্মিকবাদের ভিত্তি এবং দ্বিতীয়টি রােমের সহানুভূতির বন্ধন সৃষ্টি করে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রােটেস্ট্যান্টরাই সর্বাগ্রে তাদের হাত বিস্তার করবে উপসাগরের ওপর দিয়ে আত্মিকবাদের হাত ধরতে; তারা অতল গহবর থেকে ওঠে আসবে রােমীয় ক্ষমতার সঙ্গে আলিঙ্গন করতে; তাঁর তিনটি প্রভাবের সমন্বয়ে, এই দেশটি রােমের পদচিহ্ন অনুসরণ করবে । বিবেকের সচেতনতার অধিকারকে পদতলে দলিত করতে ।GrHBen 151.1

    যেহেতু আজকের দিনে তথাকথিত খ্রীষ্টধর্ম আত্মিকবাদ খুব কাছ থেকে অন্তরঙ্গের সহিত অনুকরণ করে; সুতরাং প্রবঞ্চনা করা ও ফাদে আটকানাের মত মহা শক্তি তাঁর আছে। বস্তু সমূহের আধুনিক বিন্যাসের পর, শয়তান নিজেই তাঁর দলভুক্ত হয়েছে। সে এক উজ্জ্বল দূতের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আবির্ভূত হবে । আত্মিকবাদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে আশ্চার্য কাজ সাধন করা হবে, পীড়িতরা সুস্থ হবে, অস্বীকার করা যায় না এমন অনেক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটাবে আর সেই আত্মা বাইবেলের প্রতি তাঁর তথাকথিত বিশ্বাস দেখাবে, মণ্ডলীর প্রতিষ্ঠান সমূহের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবে, আর তাদের কার্য স্বর্গীয় কার্যের প্রকাশ বলে গৃহীত হবে।GrHBen 151.2

    এই সময় স্বঘােষিত খ্ৰীষ্টান এবং অধার্মিকদের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা দুরূহ হয়ে পরবে। জগৎ যা ভালবাসে মণ্ডলীর সভ্যগণ তাই ভালবাসে এবং তাদের সঙ্গে যুক্ত হবার জন্য তারা প্রস্তুত, আর শয়তান তাদেরকে এক দেহরূপ একত্রিত করে এবং তারপর ঝেটিয়ে তাদেরকে আধ্যাত্মবাদের কাতারে দাড় করায় । পােপের সমর্থকরা যারা সত্য মণ্ডলীর হিসেবে কিছু কিছু চিহ্নে গর্ব অনুভব করে, তারা এই আশ্চর্য কার্যগুলাে দেখে তৎক্ষণাৎ প্রতারিত হবে; আর প্রটেষ্ট্যাণ্টরা সতর ঢালকে দূরে ফেলে দিয়ে তারাও এই প্রতারণায় প্রতারিত হবে। পােপের সমর্থকরা, প্রােটেষ্টান্টরা, এবং ঘাের সাংসারিক ব্যক্তিরা একই ভাবে এই সুন্দরত্বের রূপকে গ্রহণ করবে কোন ক্ষমতা ছাড়াই, আর পৃথিবীকে পরিবর্তিত করার এই মহা আন্দলনে তাদের একত্রিত হতে দেখা যাবে এবং তাদের নিয়ে যাওয়া হবে সেই দীর্ঘ প্রত্যাশিত সহস্র বইয়ের দিকে ।GrHBen 151.3

    আত্মিকবাদের মাধ্যমে, শয়তান মনুষ্য জাতির একজন হিতাকাঙ্খীরূপে প্রকাশিত হবে, লােকদের রােগ সারিয়ে তুলবে, এবং সাক্ষ্য তুলে ধরবে একটি নতুন ও অধিক উন্নত ধর্ম বিশ্বাস পতির; কিন্তু একই সময়ে সে একজন ধ্বংসকারীরূপে তাঁর কাজ চালিয়ে নিয়ে যাবে। তাঁর প্রলােভনগুলাে বৃহৎ জনতাকে ধ্বংসের দিকে পরিচালিত করছে। অসংযম পতনের কারণ; যৌন ইচ্ছাপূরণ, দ্বন্দ্ব, রক্তপাত তাকে অনুসরণ করে। শয়তান যুদ্ধে আনন্দ পায়, কারণ এটা প্রাণের নিকৃষ্ট ভাবাবেগকে উত্তেজিত করে তুলে এবং পরে শিকারদের অপরাধ ও রক্তপাতের মাধ্যমে অনন্তের দিকে পরিচালিত করে । এটা তাঁর অভিপ্রায় জাতিগণকে উত্তেজিত করে একে অন্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত করা, আর এভাবেই সে লােকদের মনকে ঈশ্বরের দিনের জন্য প্রস্তুত হওয়া থেকে বিপথে পরিচালিত করতে পারে ।GrHBen 152.1

    শয়তান সেই সব উপাদানের মাধ্যমে কাজ করে যার মাধ্যমে সে অপ্রস্তুত লােকদের প্রাণকে তাঁর গােলাঘরে রাখতে পারে। সে প্রকৃতির গবেষণাগারের বৈশিষ্ট্যের গুপ্ত রহস্য সমূহ নিখুঁতভাবে অধ্যায়ন করে আর সে তাঁর সর্ব শক্তি প্রয়ােগ করে সেই উপাদানগুলাে তাঁর নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে যতদূর ঈশ্বর তাকে অনুমােদন করেন । যখন সে খুব তৎপর ছিল ইয়ােবকে কষ্ট দেবার জন্যে, কত তাড়াতাড়ি সে তাঁর (ইয়ােবের) পশু সম্পদের পাল, দাসদাসী, বাড়ী ঘর সন্তানসন্ততিদের নিপাত করেছিল, মুহর্তের মধ্যে, একটা বিপদ কাটতে না কাটতে আর একটি বিপদ উপস্থিত করেছিল । তিনি ঈশ্বর যিনি তাঁর সৃষ্ট জীবদের রক্ষা করেন এবং ধ্বংসের নায়কের হাত থেকে তাদের আড়াল করেন। কিন্তু খ্রীষ্টান সমাজ যিহােবার ব্যবস্থার প্রতি ঘৃণা ও অবজ্ঞা প্রদর্শন করেছে; আর সদাপ্রভু তাই-ই করবেন যা তিনি ঘােষণা করেছেন যা তিনি সম্পাদন করবেন এবং তাঁর রক্ষাকারী সহায় অপসারণ করবেন তাদের কাছ থেকে যারা তাঁর ব্যবস্থা ও শিক্ষার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছে এবং অন্যদের ভুল শিক্ষা দিয়েছে এবং সে অনুযায়ী চলার জন্য তাদের উপর জোর খাটিয়েছে তাদের কাছ থেকে তিনি তাঁর আশীর্বাদ তুলে নেবেন। যাদের পর বিশেষভাবে ঈশ্বরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই, তাদের সকলের ওপর শয়তানের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। সে কাউকে কাউকে সুনজরে দেখবে এবং উন্নতি লাভে সাহায্য করবে তাঁর নিজের অভিসন্ধি অধিকতর কার্যকারী করার জন্য, এবং অন্যদের ওপর। সমস্যা নিয়ে এসে লােকদেরকে বিশ্বাস করাতে চেষ্টা করবে যেন ঈশ্বরই তাদের জন্য দুঃখ দুর্দশা নিয়ে আসছেন।GrHBen 152.2

    মনুষ্য সন্তানদের কাছে সে প্রকাশিত হয় একজন মহা চিকিৎসকরূপে, সে তাদের মানসিক ও শারীরিক পীড়া আরােগ্য করতে পারে, সেই-ই রােগ। পীড়া ও আকস্মিক দুর্বিপাক নিয়ে আসবে, যতক্ষণ না ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলাে ধ্বংস স্তুপে পরিণত হয়। এমন কি এখনও সে কাজে ব্যস্ত। জলে ও স্থলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও আকস্কিক দুঘটনা, চরম দুর্দশা প্রচণ্ড অগ্নিকাণ্ড হিংস্র ঘূর্ণিঝড়, ভয়াবহ শিলাবৃষ্টি, প্রচণ্ড ঝড়, বন্যা সামুদ্রিক ঝড়, জলােচ্ছাস, ভূমিকম্প এই সমস্তর মাধ্যমে প্রত্যেক স্থানে এবং সহস্র উপায়ে শয়তান তাঁর শক্তির ব্যবহার করছে। সে ক্ষেতের পাকা শস্য ধ্বংস করে ধুয়ে নিয়ে যাচ্ছে যার বিভীষিকা মহামারী ও হতাশার জন্মদেয় । সে বাতাসে মারাত্মক সংক্রামিত রােগের জীবাণু ছেড়ে দেয় এবং মহামারীতে সহস্র সহস্র লােক ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে মারা যায় । আর এর আবির্ভাব প্রায়ই ঘন ঘন দেখা যায় এবং যার প্রত্যেকটিই দুঃখ-দুর্দশা পূর্ণ । আর এই ধ্বংসলীল সাধিত হবে মানুষ ও পশুপাখীর ওপরে । “পৃথিবী শােকাতি ও নিস্তেজ হইল, জগৎ স্নান ও নিস্তেজ হইল, .. আর পৃথিবী আপন নিবাসীদের পদতলে অপবিত্র হইল, কারণ তাহারা ব্যবস্থা সকল লঙ্ঘন করিয়াছে, বিধি অন্যথা করিয়াছে, চিরস্থায়ী নিয়ম ভঙ্গ করিয়াছে।” যিশাইয় ২৪:৪, ৫।GrHBen 153.1

    পরে সেই মহা প্রতারক জনগণকে বােঝাবে যে ঈশ্বরের সেবাকারীরাই এই সব অনিষ্টকরগুলাে ঘটাচ্ছে। সেই শ্রেণী, যারা স্বর্গে প্ররােচনা করেছিল তারা সব সমস্যার দায়দায়িত্ব তাদের ওপর চাপাবে যারা ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করে, আর তা হল আজ্ঞা লঙ্ঘনকারীদের প্রতি অবিরত বিদ্রুপ। আর এইরূপ ঘােষিত হবে যে লােকেরা রবিবার শাব্বাথ দিন হিসেবে পালন না করে ঈশ্বরকে অবমাননা করছে; আর এই পাপই দুর্যোগসমূহ নিয়ে এসেছে আর যতক্ষণ রবিবার পালনে জোরপূর্বক বাধ্য করা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই দুর্যোগগুলাে থামবে না; আর যারা চতুর্থ আজ্ঞার উপর দাবী রাখে তারাই রবিবারের মর্যাদা নষ্ট করছে, তারাই লােকদের সমস্যার কারণ, তারাই স্বর্গীয় অনুগ্রহ লাভে এবং জাগতিক সমৃদ্ধি অর্জনে তাদের বাধা সৃষ্টি করছে। তাই সেই একই পুরানাে অভিযােগ ঈশ্বরের প্রজাদের বিরূদ্ধে পুনরায় উত্থাপন করা হবে এবং একই ভাবে তাদের স্থান সুপ্রতিষ্ঠিত হবেঃ “এলিয়ের দেখা পাইবার মাত্র আহাব তাঁহাকে কহিলেন, হে ইস্রায়েলের কণ্টক, এ কি তুমি? এলিয় কহিলেন, আমি ইস্রায়েলের কণ্টক হই নাই, কিন্তু আপনি ও আপনার পিতকুল; কেননা আপনারা সদাপ্রভুর আজ্ঞা সকল ত্যাগ করিয়াছেন, এবং আপনি বালদেবগণের অনুগামী হইয়াছেন ।” ১ রাজাবলি ১৮:১৭, ১৮। যেমন লােকদের রােষানল মিথ্যা অভিযােগে উত্তেজিত হবে, তারা ঈশ্বরের রাজদূতদের বিরুদ্ধে ধাবমান হবে ঠিক একই ভাবে, যেমন বিপথগামীর ইস্রায়েল জাতি এলিয়ের বিরুদ্ধে ধাবমান হয়ে ছিল ।GrHBen 153.2

    যারা মানুষের আজ্ঞা পালন না করে ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করবে। তাদের বিরুদ্ধে আধ্যাত্মিকতার মাধ্যমে প্রদর্শিত অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন শক্তি প্রদর্শন করা হবে । আত্মার সঙ্গে যােগাযােগের মাধ্যমে তারা ঘােষণা করবে যে স্বয়ং ঈশ্বরই তাদের পাঠিয়েছেন রবিবার প্রত্যাখ্যানকারীদের ভুল বুঝিয়ে এই বলে রাজী করাতাে যে, মানুষের আজ্ঞাই ঈশ্বরের আজ্ঞা হিসেবে পালন করা কর্তব্য। তারা জগতে মহা দুষ্টতার খেদোক্তি প্রকাশ করবে এবং ধর্মীয় শিক্ষাগুরুদের দ্বিতীয় সাক্ষ্য বলা হবে যে নৈতিকতার অবক্ষয়ের কারণ হল রবিবারকে অপবিত্র করা । যারা তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করতে অস্বীকার করবে তাদের বিরুদ্ধে মহা ঘৃণা মিশ্রিত ক্রোধ উত্তেজিত হবে ।GrHBen 154.1

    শয়তানের নীতিমালায় তাঁর সর্বশেষ ঈশ্বরের লােকদের সঙ্গে সংঘর্ষ হবে সেই একইরূপে, যা সে স্বর্গে মহা সংঘর্ষের প্রথম ভাগে কার্যকরী করেছিল । সে ঘােষণা করেছিল যে ঐশ্বরিক শাসন ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা করতে হবে, অন্য দিকে সে তাকে পরাজিত করার জন্য গােপনে সর্বোশক্তি প্রয়ােগ করেছিল। আর সে তাঁর কার্য সম্পাদনের জন্য যে সমস্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে ছিল তাঁর দায়ভার অপতিত দূতগণের ওপর বর্তানাের চেষ্টা করেছিল। আর সেই একটি প্রতারণার নীতিমালাই চিহ্নিত হয়েছে রােম মওলীর ইতিহাসে। সে নিজেকে স্বর্গের ক্ষমতা প্রাপ্ত ব্যক্তি হিসেবে ঘােষণা করেছে, অন্য দিকে সে চিহ্নিত হয়েছে নিজেকে ঈশ্বরের ওপর প্রতিষ্ঠিত করার এবং ঈশ্বরর ব্যবস্থা পরিবর্তন করার পায়তারা করছে। রােমের শাসনাধীনে, যারা সুসমাচারে বিশ্বস্ত থাকার কারণে মৃত্যু দণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল, অনিষ্টকারী ব্যক্তি হিসেবে বিদ্রুপ করা হয়েছিল; তাদের সাধুদের লােক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল; আর তা করা হয়েছিল সম্ভবত নিন্দায় তাদের ঢেকে দেবার জন্য, এবং লােকদের চোখে এমন কি তাদের নিজেদের চোখেও তাদের মহা অপরাধী হিসেবে দেখানাের জন্য। দ্রুপ বর্তমানেও তা হবে । একদিকে শয়তান চেষ্টা চালাবে যারা ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করে তাদের ধ্বংস করতে, অপরদিকে সে তাদের আজ্ঞা লঙ্ঘনকারী হিসেবে দোষারােপ করবে, তাই এই লােকেরা ঈশ্বরকে অবমাননা করে এবং এই কারণেই তারা পৃথিবীতে বিচার নিয়ে আসে ।GrHBen 154.2

    ঈশ্বর কখনাে ইচ্ছেশক্তি বা বিবেকের ওপর জোর প্রয়ােগ করেন না; কিন্তু শয়তানের অবিরত প্রচেষ্টা তাদেরকে নিয়ন্ত্রণে আনা যাদের সে বিপথে নিয়ে যেতে পারে নি তাদের জন্য নিষ্ঠুরতা আবশ্যিক । ভয়ভীতি দেখিয়ে বা জোর প্রয়ােগ করে সে চেষ্টা করে বিবেকের ওপর নজরদারী করতে এবং তাঁর ওপর আনুগত্য স্বীকার করাতে প্রয়াস চালায়। এ কাজটি সম্পাদন করতে, সে কাজ করে ধর্মীয় ও জাগতিক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে, সে ঈশ্বরের ব্যবস্থা প্রতিরােধ করতে তাদেরকে মানুষে আজ্ঞাকে জোরপূর্বক চাপিয়ে দিতে প্ররােচিত করে ।GrHBen 155.1

    যারা বাইবেলের শাব্বাথকে সম্মান করে তাদের সমাজের আত্মসংযম ভেঙ্গে ফেলার জন্য, অরাজকতা ও দুর্নীতির জন্য, এবং পৃথিবীতে ঈশ্বরের দণ্ডাজ্ঞা নামিয়ে আনার জন্য আজ্ঞা ও ধারার চরম শত্রু হিসেবে নিন্দা করা হবে। তাদের বিবেকের দংশনসমূহ বলা হবে জেদী, দুর্দমনীয় ও কর্তৃপক্ষের ঘৃণিত। তাদেরকে রাজন্যবর্গের প্রতি বিদ্রোহী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়। যে সমস্ত পুরােহিতগণ ঈশ্বরের ব্যবস্থার আজ্ঞাবহতা অস্বীকার করবে তাদেরকে মঞ্চে দেখা যাবে জাগতিক কর্তৃপক্ষের প্রতি বশীভূত থাকতে যেন তারা ঈশ্বরের অভিষিক্ত ব্যক্তি। বিধান সভায় ও বিচার আসনে আজ্ঞা পালনকারীদের ভুল ভাবে উপস্থাপন করা হবে এবং দোষী সাব্যস্ত করা হবে। তাদের বক্তব্যের ভূল রং চড়ানাে হবে; তাদের অভিপ্রায়ের অপব্যাখ্যা করা হবে ।GrHBen 155.2

    ঈশ্বরের ব্যবস্থা রক্ষায় শাস্ত্রীয় যুক্তিগুলাে প্রােটেষ্ট্যান্ট মণ্ডলীগুলাে যেহেতু প্রত্যাখ্যান করেছে সুতরাং যারা ওগুলাে বিশ্বাস করে তাদরে ব্যাপারে তারা নীরব থাকবে কারণ তারা ঐ বিশ্বাসগুলােকে বাইবেল দ্বারা ছুড়ে ফেলতে পারে না। যদিও এই সত্যের ব্যাপারে তারা নিজেদের চোখ বন্ধ রেখেছে, তারা এখন এমন একটা পাঠ্যসূচী প্রণয়ন করছে যার মাধ্যমে তারা সেই সমস্ত লােকদের নির্যাতন করতে পরিচালিত হবে যারা সজ্ঞানে সমগ্র বিশ্বের খ্রীষ্টিয় জগৎ যা করছে তা করতে এবং পােপীয় শাব্বাথের দাবীকে মেনে নিতে অস্বীকার করবে ।GrHBen 155.3

    রাষ্ট্র ও মণ্ডলীর মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ রবিবারকে সম্মানিত করার জন্য সমস্ত পর্যায়ে ঘুষ প্রদান, প্ররােচনা অথবা বাধ্যকরার ব্যাপারে একতাবদ্ধ হয়। তারা ঐশ্বরিক ক্ষমতার অভাব পূরণ করবে অত্যাচারপূর্ণ রাষ্ট্রীয় বিধিবদ্ধআইনের মাধ্যমে। রাজনৈতিক দুর্নীতি ন্যায় বিচারের প্রতি ভালবাসা এবং সত্যের প্রতি শ্রদ্ধাকে কলুষিত কর,ই; এমন কি স্বাধীন আমেরিকায় শাসকবর্গ এবং আইন প্রণয়নকারী ব্যক্তিরা জনগণের অনুগ্রহ পেতে রবিবার পালনের একটি জনপ্রিয় আইনকে বলপূর্বক প্রয়ােগের অনুরােধ রক্ষা করবে। বিবেকের স্বাধীনতা, যার জন্য এত মহা মূল্য দেওয়া হয়েছে, তাঁর প্রতি আর কোন শ্রদ্ধা থাকবে না। আসন্ন সংঘর্ষে আমরা ভাববাদীর বাক্যের ব্যাখ্যাকরণ দেখতে পাব: “আর সেই স্ত্রীলােকটির প্রতি নাগ ক্রোধান্বিত হইল, আর তাহার বংশের সেই অবশিষ্ট লােকদের সহিত, যাহারা ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন ও যীশুর সাক্ষ্য ধারণ করে, তাহাদের সহিত যুদ্ধ করতে গেল।” প্রকাশিত বাক্য ১২:১৭।GrHBen 155.4

    *****

    Larger font
    Smaller font
    Copy
    Print
    Contents