৮ - ধর্মধাম কি?
- ভূমিকা
- পুস্তক প্রণেতার পরিচায়িকা
- ১ - মন্দের উৎপত্তি
- ২ - মানব সন্তান ও দিয়াবলের মধ্যে পরস্পর শত্রুতা
- ৩ - মন্দ আত্মাদের প্রতিনিধি
- ৪ - ধর্ম-ভ্রষ্টতা
- ৫ - রােম থেকে লুথারের বিচ্ছেদ
- ৬ - শয়তানের ফাঁদসমূহ
- ৭ - সর্বপ্রথম মহা প্রতারণা
- ৮ - ধর্মধাম কি?
- ৯ - আমাদের মৃতজনেরা কি আমাদের সঙ্গে কথা বলতে পারে?
- ১০ - বিবেকের স্বাধীনতা শঙ্কিত
- ১১ - আসন্ন সংঘাত
- ১২ - শাস্ত্র একটি রক্ষাকবচ
- ১৩ - অন্তিম সতর্কবাণী
- ১৪ - সঙ্কটকাল
- ১৫ - ঈশ্বরের প্রজাদের মুক্তি
- ১৬ - পৃথিবীর জনশূণ্যতা
- ১৭ - সংঘর্ষের পরিসমাপ্তি
Search Results
- Results
- Related
- Featured
- Weighted Relevancy
- Content Sequence
- Relevancy
- Earliest First
- Latest First
- Exact Match First, Root Words Second
- Exact word match
- Root word match
- EGW Collections
- All collections
- Lifetime Works (1845-1917)
- Compilations (1918-present)
- Adventist Pioneer Library
- My Bible
- Dictionary
- Reference
- Short
- Long
- Paragraph
No results.
EGW Extras
Directory
৮ - ধর্মধাম কি?
অন্য সবকিছুর উর্ধ্বে শাস্ত্রের এই ঘােষণাটি: “দুই সহস্র তিনশত সন্ধ্যা ও প্রাতঃকালের নিমিত্ত, পরে ধর্মধামের পক্ষে বিচার নিষ্পত্তি হইবে” (দানিয়েল ৮:১৪) ছিল খ্রীষ্টের আগমনে বিশ্বাসের মূল ভিত্তি ও কেন্দ্রীয় স্তস্বরূপ। প্রভুর সত্ত্বর আগমনে বিশ্বাসীদের কাছে এই বার্তাটি ছিল খুব পরিচিত। হাজার হাজার বিশ্বাসীদের মুখে এই ভাববাণীটি তাদের বিশ্বাসের পক্ষে সতর্ক সংযােগ ধ্বনিরূপে বারংবার উচ্চারিত হত । সকলে অনুভব করেছিল যে এখানে যে ঘটনাসমূহের বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, তাঁর পূর্ণতার ওপরেই তাদের গৌরবময় প্রত্যাশা ও সর্বাধিক লালিত আশা নির্ভর করছে। ভবিষ্যদ্বাণীর এই দিনগুলাের পরিসমাপ্তি দেখান হয়েছিল ১৮৪৪ এর শরৎকালে। বিশ্বের অন্যান্য খ্রীষ্টানদের সাথে একমত হয়ে এ্যাডভেন্টিষ্টগণ। ধরে নিয়েছিল যে, হয় সম্পূর্ণ পৃথিবী বা এর কোন একটা অংশ ছিল ধর্মধাম। ধর্মধাম পরিষ্কারকরণ দ্বারা তারা বুঝেছিল যে, শেষকালীন মহাদিনে আগুন দ্বারা পৃথিবী পরিষ্কার করণকে বুঝান হয়েছে, এবং তা সংঘটিত হবে খ্রীষ্টের দ্বিতীয় আগমনে । উপসংহারে তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হল যে, খ্রীষ্ট ১৮৪৪ এ পুনরায় পৃথিবীতে আসছেন ।GrHBen 103.1
কিন্তু নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও প্রভু এলেন না । বিশ্বাসীবর্গ জানতেন যে ঈশ্বরের বাক্য বিফল হতে পারে না, অবশ্যই ভবিষ্যদ্বাণীর ব্যাখ্যায় কোন ভুল থাকতে পারে; কিন্তু সে ভুলটি কোথায়? অনেকেই অতি দ্রুত এই অবস্থার জট খুলতে যে, ১৮৪৪ যে এ ২৩০০ দিনের সমাপ্তি পূর্ণ হবার কথা অস্বীকার করল । তারা একমাত্র কারণ দেখাল যে, খ্রীষ্টের পুনরাগমন তারা যে সময়ে প্রত্যাশা করেছিল, তিনি তখন আসেননি। তারা যুক্তি দেখিয়ে বলল যে, যদি ১৮৪৪ সালেই ভবিষ্যদ্বাণীর পরিসমাপ্তি ঘটত তবে অবশ্যই খ্রীষ্ট পৃথিবীকে আগুন দ্বারা পুড়ে নির্মল করার মাধ্যমে ধর্মধাম পরিকার করতে পুনরাগমন করতেন; আর যেহেতু তিনি আসেননি, তাই দিনেরও পরিসমাপ্তি হতে পারে না।GrHBen 103.2
এই সিদ্ধান্ত, মেনে নিলে কাল বিষয়ক ভবিষ্যদ্বাণীর পূর্বকার হিসেব নিকাশ অস্বীকার করতে হয়। খ্রীষ্টপূর্ব ৪৫৭ এর শরৎকালে যিরূশালেমের সংস্কার ও নির্মাণের জন্য অতখস্তের আদেশ বলবৎ হবার সময় থেকে ২৩০০ দিনের ভবিষ্যদ্বাণীতে বছরের) সূত্রপাত হয় বলে গণনা করে পাওয়া যায় । এই সময়কে আরম্ভ কাল ধরে নিলে দানিয়েল ৯:২৫-২৭ পদে ঐ কাল বিষয়ক ভবিষ্যদ্বাণীর বর্ণনায় সকল ঘটনাবলির প্রয়ােগ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মিলে যায়। ২৩০০ বছরের প্রথম অংশ ঊনসত্তর সপ্তাহ (=) সমান ৪৮৩ বছর ২৭ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত পৌঁছে, যে সময়ের মধ্যে মশীহের অর্থাৎ অভিষিক্ত ব্যক্তি খ্রীষ্টের বাপ্তিস্ম ও পবিত্র আত্মার অভিষেক পর্যন্ত নির্দিষ্টকৃত সব ঘটনা হুবহু মিলে যায় । সত্তরতম সপ্তার মাঝামাঝি মশীহকে বিচিন্ন হবার বিষয়ে বলা হয়েছিল। যীশুর বাপ্তিস্মের সাড়ে তিন বছরের মাথায় অর্থাৎ ৩১ খ্রীষ্টাব্দের বসন্তকালে খ্রীষ্টকে ক্রুশােবিদ্ধ করা হয় । সত্তর সপ্তা বা ৪৯০ বছরের কালটি বিশেষভাবে যিহূদীদের জন্য নির্ধারিত বা সংশ্লিষ্ট ছিল। এই কালের সমাপ্তিতে তাঁর শিষ্যগণের ওপরে অত্যাচার করে যিহূদী জাতি খ্রীষ্টকে প্রত্যাখান করে সত্তরতম সপ্তাটি মুদ্রাস্ফিত করে, আর তখন থেকে অর্থাৎ ৩৪ খ্রীষ্টাব্দ থেকে প্রেরিতগণ পরজাতিগণের কাছে সুসমাচার প্রচারার্থে ফিরেন । ২৩০০ বছর থেকে ৪১০ বছর অতিক্রান্ত হলে অবশিষ্ট থাকে ১৮১০ বছর । ৩৪ খ্রীষ্টাব্দের সাথে ১৮১০ যােগ করলে ১৮৪৪ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত পৌঁছে। “পরে” স্বর্গদূত বলেছেন, “ধর্মধামের পক্ষে বিচার নিষ্পত্তি হইবে ।” ভবিষ্যদ্বাণীতে উল্লিখিত পূর্ববর্তী সুনির্দিষ্ট সব ঘটনাগুলাে নিরূপিত সময়ের মধ্যে প্রশ্নাতীতভাবে পরিপূর্ণতা লাভ করল ।GrHBen 103.3
এই হিসেব অনুসারে সবই ছিল সুস্পষ্ট ও সামঞ্জস্যপূর্ণ, শুধু ১৮৪৪ খ্রীষ্টাব্দে ধর্মধাম পবিত্রকরণ বা ধর্মধামের পক্ষে বিচার নিষ্পত্তিকরণ সংক্রান্ত ঘটনার কোন উত্তর সুস্পষ্টরূপে দেখা যায় না। যদি অস্বীকার করা হয় যে উক্ত দিনের সমাপ্তি ১৮৪৪ এ হয়নি, তবে ভবিষ্যদ্বাণীর যে সকল নির্ধারিত সময়ে পূর্ণতা যথাযথভাবে সম্পন্ন হয়েছে সে সবই তাহলে বাদ দিতে হয় ।GrHBen 104.1
কিন্তু ঈশ্বর তাঁর প্রজাদেরকে মহান আগমন আন্দোলনের পথ প্রদর্শন করেছিলেন; এ কাজে সহচর হিসেবে ছিল তাঁর পরাক্রম ও মহিমা, আর তাই তিনি তাদেরকে ভ্রান্ত ও ধর্মান্ধতাজনক উত্তেজনাময় নিন্দনীয় অবস্থায় ফেলে অন্ধকার ও নিরৎসাহজনক অবস্থার মধ্যে পরিসমাপ্তি ঘটতে অনুমােদন দেবেন না। যদিও অনেকে কাল বিষয়ক ভবিষ্যদ্বাণীর পূর্বকার হিসেব-নিকাশ পরিত্যাগ করল এবং সময়ের ওপর ভিত্তি করে যে, আন্দোলন করেছিল তাঁর শুদ্ধতাও অস্বীকার করল, অন্য আর একদল শাস্ত্রীয় মতে সমর্থিত ও ঈশ্বরের আত্ম সাক্ষ্য দ্বারা অনুমােদিত বিশ্বাস বিষয়ক বিষয়বস্তু ও অভিজ্ঞতা বর্জন করতে অনিচ্ছুক ছিলেন। তারা বিশ্বাস করলেন যে, ভাববাণী বিষয়ক অধ্যয়নে তারা ব্যাখ্যার যে মূলনীতি অবলম্বন করেছিলেন এবং যে সত্য ইতােপূর্বেই অর্জিত হয়েছে তা দৃঢ়ভাবে ধারণ করাই তাদের কর্তব্য এবং বাইবেল বিষয়ক গবেষণার একই ধারা অব্যহত রাখা তাদের দায়িত্ব। তাদের ভুল খুঁজে পাবার জন্য তারা আন্তরিক প্রার্থনা সহকারে তাদের অবস্থান পর্যালােচনা করলেন এবং শাস্ত্র অধ্যয়নে ব্রত থাকলেন। ভবিষ্যদ্বাণীর কাল বিষয়ক গণনা ও হিসেব নিকাশে তারা তাদের কোন ভুল। খুঁজে না পেয়ে, তারা আরও নিবিড়ভাবে ধর্মধাম বিষয়ক বিষয়বস্তুর উপরে গবেষণা করতে পরিচালিত হন।GrHBen 104.2
তাদের অনুসন্ধানে তারা শিখতে পারলেন যে, পৃথিবীই যে ধর্মধাম এ সংক্রান্ত জনপ্রিয় যে দৃষ্টিভঙ্গি এতদিন লালন করে আসছিলেন তাঁর কোন শাস্ত্রভিত্তিক কার্যাবলীর পূর্ণ ব্যাখ্যা তারা বাইবেলে খুঁজে পেলেন না। কিন্তু তারা বাইবেলে ধর্মধাম বিষয়ে এবং এর ব্যবহার, অবস্থান এবং কার্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট ও পর্যাপ্ত ব্যাখ্যা পেল যে, বিষয়টি সকল প্রশ্নের ঊর্ধ্বে স্থান পেল । প্রেরিত পৌল ইব্রীয়দের প্রতি পত্রে বলেনঃ “ভাল, ঐ প্রথম নিয়ম অনুসারেও আরাধনার নানা ধর্মবিধি এবং পার্থিব একটা ধর্মধাম ছিল। কারণ একটি তামু। নির্মিত হইয়াছিল, সেইটি প্রথম তাহার মধ্যে দীপবৃক্ষ, মেজ ও দর্শনরুটির শ্রেণী ছিল; ইহার নাম পবিত্র স্থান। আর দ্বিতীয় তিরস্করিণীর পরে অতি পবিত্র স্থান নামক তাম্বু ছিল; তাহা সুবর্ণময় ধূপধানী ও সর্বদিকে স্বর্ণমন্ডিত। নিয়ম সিন্দুক বিশিষ্ট; ঐ সিন্দুকে ছিল মান্নাধারী স্বর্ণময় ঘট, ও হারােণের মঞ্জুরিত ষষ্টি, ও নিয়মের দুই প্রস্তরফলক এবং তাহার উপরে প্রতাপের সেই দুই করূব ছিল, যাহারা পাপাবরণ ছায়া করিত; এই সকলের সবিশেষ কথা বলা এখন নিপ্রয়ােজন ।” (ইব্রীয় ৯:১-৫)।GrHBen 105.1
পৌল এখানে যে ধর্মধামের বিষয়ে উল্লেখ করেছেন, তা ছিল ঈশ্বরের আদেশক্রমে মােশির নির্মিত পরাৎপরের পার্থিব বাসস্থান । “আর তাহারা আমার নিমিত্ত এক ধর্মধাম নির্মান করুক, তাহাতে আমি তাহাদের মধ্যে বাস করিব।” (যাত্রাপুস্তক ২৫:৮)। মােশি যখন পর্বতের ওপরে ঈশ্বরের সান্নিধ্যে ছিলেন তখন তাকে এই নির্দেশনা দিয়ে প্রান্তরে ইস্রায়েলদের যাত্রা করতে বলেছিলেন, এবং তা এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল যে, যেন তা খুব সহজে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে এক সঙ্গে নিয়ে যাওয়া যায়; তথাপিও ধর্মধামের নির্মাণ শৈলী ছিল মহা জাঁকজমকপূর্ণ। ধর্মধামের দেয়ালগুলাে পুরু স্বর্ণ দ্বারা মােড়ান কাঠের তক্তার যা রূপাের চুঙ্গির ওপরে খাড়া করে বসান ছিল, সেই সাথে এ আবাসের ছাদ ছিল কয়েক পরত পর্দা বা ছাউনির, যার সর্বোপরে ছিল চামড়া এবং সৰ্ব্বাপেক্ষা ভেতরে। ছিল সুচারুরূপে শিল্পিত করূবগণের চিত্র সুক্ষ্ম মসিনা সূতায় বুনান। হােমার্থক বেদি সম্বলিত বাহির প্রাঙ্গন ছাড়াও ধর্মধামের আরও দুই কক্ষ ছিল যার একটিকে বলা হত পবিত্র স্থান আর অন্যটিকে বলা হত মহাপবিত্র স্থান । কক্ষ দুটি একটি মূল্যবান ও মনােরম পর্দা বা তিরস্করিণী দ্বারা পৃথক করা হয়েছিল। অনুরূপ একটি পর্দা দ্বারা প্রথম কক্ষের প্রবেশ দ্বার আচ্ছাদিত ছিল ।GrHBen 105.2
পবিত্র স্থানের দক্ষিণাংশে ধর্মধামে রাতে ও দিনে আলাে দেবার জন্য সপ্ত প্রদীপসহ এক দীপবৃক্ষ ছিল । উত্তর পার্শ্বে দর্শন রুটির মেজ স্থাপিত ছিল; আর পবিত্র ও মহা পবিত্র স্থান বিভক্ত করা তিরকরিণীর সামনে রাখা ছিল ধূপ জ্বলাবার জন্য সূবর্ণের ধূপ বেদী, যা থেকে ধূপের ধূমরাশি মেঘের ন্যায় ইস্রায়েলদের প্রার্থনা ঈশ্বরের সাক্ষাতে উত্থাপিত হত।GrHBen 105.3
মহাপবিত্র স্থানে সিন্দুক ছিল, যা মূল্যবান কাঠের উপর স্বর্ণ দ্বারা মােড়া, যার ভেতরে ঈশ্বরের নিজ হাতে লেখা দশ অজ্ঞার দুই প্রস্তর ফলক গচ্ছিত ছিল। পবিত্র সিন্দুকের উপরে আচ্ছাদনের জন্য নির্মাণস্থান অতি উৎকৃষ্ট মানের কারশিল্পীত পাপাবরণ স্থাপন করা ছিল, যার দু’প্রান্তে সম্পূর্ণ স্বর্ণের নির্মিত দুই আচ্ছাদক করব স্থাপিত ছিল। দুই করূবের মাঝে জ্যোতির্মন্ডলে ঐশ্বরিক উপস্থিতি ছিল ।GrHBen 106.1
ইব্রীয়রা কনানে বসতি স্থাপনের পর তাম্বুর আবাসের পরিবর্তে শলােমনের মন্দির নির্মিত হয়। যদিও সেটি ছিল স্থায়ী অবকাঠামাে এবং আকারে বড়, তবু সবকিছু প্রান্তরের তাম্বুর সমানুপাতিক হারে তৈরি ও অনুরূপ আসবাবপত্র দ্বারা সুসজ্জিত করা হয়েছিল। কেবল দানিয়েলের সময়কালে যখন তারা বন্দিদশায় যান, তখন থেকে ধর্মধামটি প্রংসপ্রাপ্ত অবস্থায় পড়েছিল, যে পর্যন্ত না রােমীয়েরা ৭০ খ্রীষ্টাব্দে তা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে ফেলে।GrHBen 106.2
বাইবেলের দেয়া তথ্য মতে এটিই পৃথিবীতে অবস্থিত একমাত্র ধর্মধাম । পৌল এটিকে প্রথম (পুরাতন) নিয়মের ধর্মধাম বলে অবহিত করেছেন । তাহলে নতুন নিয়মে কি কোন ধর্মধাম নেই?GrHBen 106.3
ইব্রীয় পুস্তকের প্রতি পুনরায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করে সত্যের অনুসন্ধানকারীগণ দ্বিতীয় বা নতুন নিয়মের একটি ধর্মধামের অস্তিত্ব খুঁজে পান, যার বিষয়ে পৌলের এই বাক্য প্রযােজ্য, আর তা ইতােপূবেই ভকত করা হয়েছে ঃ “ভাল, ঐ প্রথম নিয়ম অনুসারেও আরাধনার নানা ধর্মবিধি এবং পার্থিব একটা ধর্মধাম ছিল” (ইব্রীয় ৯:১)। “অনুসারেও” শব্দটির ব্যবহার দ্বারা এ ধরনের ইঙ্গিত বহন করে যে, পৌল এর আগেও এই ধর্মধামের বিষয়ে উল্লেখ করেছেন । কিছুটা পেছানে গিয়ে পূর্ববর্তী অধ্যায়ের শুরুতে তারা পাঠ করেন: “এই সমস্ত কথার সার এই আমাদের এমন এক মহাযাজক আছেন, যিনি স্বর্গে, মহিমা সিংহাসনের দক্ষিণ, উপবিষ্ট হইয়াছেন । তিনি পবিত্র স্থানের এবং যে তাম্বু মনুষ্যকৰ্তক নয়, কিন্তু প্রভু কর্তৃক স্থাপিত হইয়াছে, সেই প্রকৃত আধুর সেবক” (ইব্রীয় ৮:১,২)।GrHBen 106.4
এখানে নতুন নিয়মের ধর্মধামের বিষয়ে ব্যক্ত হয়েছে। প্রথম (পুরাতন) নিয়মের ধর্মধাম মােশি কর্তৃক নির্মিত ও মানুষের দ্বারা স্থাপিত হয়েছিল, কিন্তু নূতন নিয়মের ধর্মধাম প্রভু কর্তৃক স্থাপিত হয়েছে, মানুষের দ্বারা হয়নি । ঐ ধর্মধামে জাগতিক যাজকগণ তাদের সেবাকার্য পরিচালনা করতেন; কিন্তু এই ধর্মধামে আমাদের মহান মহাযাজক খ্রীষ্ট ঈশ্বরের দক্ষিণে বসে পরিচর্যা কাজ করছেন। একটি ধর্মধাম ছিল এই পৃথিবীতে, অন্যটি স্বর্গে ।GrHBen 106.5
তাছাড়া মােশি একটি আদর্শ (নমুনা) অনুসরণ করেছিলেন যা সদাপ্রভু তাকে নির্দেশ দান করলেনঃ “আবাসের ও তাহার সকল দ্রব্যের যে আল আমি তােমাকে দেখাই, তদানুসারে তােমরা সকলই করিবে” (যাত্রাপুস্তক ২৫৪৯)। পুনরায় এই কর্মভার দেয়া হলাে: “দেখিও, পর্বতে তােমাকে এই সালর যেরূপ আদর্শ দেখান গেল, সেইরূপ সকলই করিও” (যাত্রা ২৫:৪০)। আর পৌল বলেন যে প্রথম আবাস (তাম্বু); “এই উপস্থিত সময়ের নিমিত্ত দৃষ্টান্ত” সেই দৃষ্টান্ত অনুসারে এমন উপহার ও যজ্ঞ উৎসর্গকিরণ হয়” (ইব্রীয় ৯:৯)। সেই পবিছান, যাহা যাহা স্বর্গস্থ বিষয়ের দৃষ্টান্ত” (ইব্রীয় ৯:২৩)। আর যাজকগণ প্রদত্ত নিয়মানুসারে উপহার উৎসর্গ করতেন, “তাহারা স্বর্গীয় বিষয়ের দৃষ্টান্ত ও ছায়া লইয়া আরাধনা করতেন (ইব্রীয় ৮:৫)। কিন্তু “খ্রীষ্ট হস্তকৃত পবিত্র স্থানে প্রবেশ করেন নাই এ ৩ প্রকৃত বিষয়গুলির প্রতিরূপ মাত্র কিন্তু স্বর্গেই প্রবেশ করিয়াছেন, যেন তিনি এখন আমাদের জন্য ঈশ্বরের সাক্ষাতে প্রকাশমান হন” (ইব্রীয় ৯:২৪)।GrHBen 107.1
স্বর্গীয় ধর্মধামে, যেখানে যীশু আমাদের পক্ষে পরিচর্যা কাজে রত আছেন, সেটিই হল প্রকৃত মূল ধর্মধাম যা মােশি কর্তৃক নির্মিত অনুলিপি তাম্বুর (আবাস) । পার্থিব ধর্মধাম নির্মাতাদের ওপরে ঈশ্বর তাঁর আত্মাকে স্থাপন করেছিলেন । এটি তৈরী করতে যে শৈল্পিক নিপুণতা প্রদর্শিত হয়েছিল, তা ছিল ঐশ্বরিক প্রজ্ঞার প্রকাশ । দেয়ালের চেহারা ছিল বিশালাকার স্বর্ণের পাত সাদৃশ্য যার ওপরে স্বর্ণময় সপ্ত দীপ বক্ষে জ্বালিত মােমের আলাে পতিত হলে তা সর্ব দিকে প্রতিফলিত হত । দর্শন রুটির মেজ ও সুগন্ধি ধূপবেদী উজ্জ্বল স্বর্ণের ন্যায় ঝকঝক করত । নীল, বেগুনে ও টকটকে লাল বর্ণের সূতা দ্বারা কারুশিল্পিত দূতগণের আকৃতি বিশিষ্ট অতি চমৎকার আবরণ দ্বারা হালের ভিতরকার অংশ নির্মিত ছিল যা মন্দিরের সৌন্দর্যে আরও শােভা বর্ধন করত। আর দ্বিতীয় পর্দার ওপারে ছিল ঈশ্বরের প্রতাপের দৃশ্যমান অভিব্যক্তি ‘শিকাইনা’, যার সম্মুখে মহাযাজক ব্যতিত অন্য কেউ গিয়ে বেঁচে থাকতে পারত না।GrHBen 107.2
পার্থিব ধর্মধামের অতুলনীয় সৌন্দর্য বা আঁকজমক ঐ স্বর্গীয় ধর্মধামের মহিমা মানবীয় দর্শনে প্রতিফলিত হয়েছিল, যেখানে ঈশ্বরের সিংহাসনের সম্মুখে আমাদের অগ্রগামী খ্রীষ্ট আমাদের জন্য পরিচর্যা কাজে রত আছেন। এই সেই রাজাধিরাজের আবাসস্থল, যেখানে সহস্র সহস্র তাঁর পরিচর্যা করে এবং অযুতের অযুত তাঁর সম্মুখে দন্ডায়মান থাকে (দানিয়েল ৭:১০); ঐ মন্দির অনন্তকালীন সিংহাসনের প্রতাপে পরিপূর্ণ যেখানে এর দেদীপ্যমান তত্বাবধায়ক সরকগণ ভক্তি ভরে তাদের মুখমন্ডল আচ্ছাদন করে রাখেন। পার্থিব ধর্মধামটি ছিল মানুষের হস্ত নির্মিত সর্বকালের সর্বোৎকৃষ্ট সৌধ কিন্তু স্বর্গীয় ধর্মধামের বিশালতা ও মহিমার তুলনায় খুব ক্ষীণ প্রতিফলন মাত্র। তথাপিও স্বর্গীয় ধর্মধাম সম্পর্কও গুরুত্বপূর্ণ সত্যসমূহ এবং পরিচালিত হত, তা পার্থিব ধর্মধাম ও এর পরিচর্যা কার্য দ্বারা শিক্ষা দেয়া হত।GrHBen 107.3
পার্থিব ধর্মধামের দুটি কক্ষ দ্বারা স্বর্গীয় ধর্মধামের পবিত্র স্থানগুলােকে বর্ণনা করা হয়েছে। দর্শনে যেমন প্রেরিত যােহনকে স্বর্গে ঈশ্বরের মন্দিরের দৃশ্য দেখবার একটি সুযােগ দেয়া হয়েছিল, তিনি সেখানে। দেখেছিলেন, “সিংহের সন্মুখে অগ্নিময় সপ্ত প্রদীপ জ্বলিতেছে” (প্রকাশিত বাক্য ৪:৩)। এখানে ভাববাদীকে স্বর্গীয় ধর্মধামের প্রথম কক্ষটি দেখবার অনুমতি প্রদান করা হল, আর তিনি সেখানে দেখতে পেলেন “এক দূত আসিয়া বেদির নিকটে দাড়াইলেন, তাহার হস্তে স্বর্ণ ধুপধানী ছিল” (প্রকাশিত বাক্য ৮:৩), আর তিনি ভেতরের তিরস্করিণীর অভ্যন্তওে মহা পবিত্র স্থানে দৃষ্টিপাত করলেন। এখানে তিনি মােশির নির্মিত পবিত্র নিয়ম সিন্দুক দেখেছেন যার মধ্যে ঈশ্বরের নিয়মের প্রস্তর ফলক রাখা হয়েছিল তাঁর নিদর্শন বুঝিয়েছে।GrHBen 108.1
এইরূপে যারা এই বিষয়ে অধ্যয়ন ও গবেষণা করছিলেন, তারা স্বর্গে ধর্মধামের অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত প্রমাণ পেলেন । মােশি যে পার্থিব ধর্মধামটি নির্মাণ করেছিলেন, তা ছিল তাকে দেখান অন্য একটি ধর্মধামের নিদর্শন। পৌল শিক্ষা দিয়েছেন যে, সে নমুনাটি ছিল স্বর্গে স্থিত প্রকৃত ধর্মধামের আদর্শ। আর যােহন সাক্ষ্য দিয়ে বলেন যে, তিনি স্বর্গে সেটি দেখেছেন।GrHBen 108.2
ঈশ্বরের আবাসস্থল স্বর্গীয় মন্দিরে ধর্মশীলতায় ও ন্যায়পরায়ণতায় তাঁর সিংহাসন সুপ্রতিষ্ঠিত। মহাপবিত্রস্থানে তাঁর ব্যবস্থা রক্ষিত আছে, যা হল সত্যের (ন্যায়ের) মহান বিধান, দ্বারা তিনি সমগ্র মানব জাতিকে যাচাই করবেন। ব্যবস্থাফলক সংরক্ষিত নিয়ম সিন্দুকটি অনুগ্রহ সিংহাসন (পাপাবরণ) দ্বারা আবৃত, যার সম্মুখে খ্রীষ্ট পাপীর তরে তাঁর রক্তের বিনিময়ে মুক্তির জন্য ওকালতি করেন । এইরূপে মানব জাতির মুক্তি পরিকল্পনায় ন্যায়বিচার ও করুণার মিলন প্রদর্শিত হয়েছে। অসীম প্রজ্ঞাই কেবল এরূপ মিলনের উপায় উদ্ভাবন করতে সমর্থ এবং অসীম ক্ষমতাই তা সম্পন্ন করতে পারে । এরূপ মিলন সমস্ত স্বর্গব্যাপী বিস্ময়ে ও শ্রদ্ধা ভক্তিতে পরিপূর্ণ করে দেয়। পার্থিব ধর্মধামের করূবদ্বয় স্বসম্রমে পাপাবরণের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ। করে রাখা দ্বারা এটাই বুঝান হয়েছে যে, স্বর্গীয় বাহিনী মহা উৎসাহ ও আগ্রহের সাথে পরিত্রাণ পরিকল্পনার প্রতি তাদের মনােযােগ নিবদ্ধ করে আছেন। এটিই হল অনুগ্রহের রহস্য যার প্রতি দূতগণ দৃষ্টিপাত করতে বাসনা পােষণ করেন- যে ঈশ্বর ন্যায়পরায়নও হতে পারেন যখন তিনি অনুতপ্ত পাপীর প্রতি তাঁর সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং পতিত মানব জাতির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নবায়ন করেন; অগণিত লােককে/মানুষকে তাদের ধ্বংসের অতল গহবর থেকে তুলে এনে নিজ ধার্মিকতারূপ অমলিন বস্ত্রে তাদের সাজাতে পারেন এবং যে সমস্ত দূতগণ কখনও পতিত হননি, তাদের সাথে একত্র হয়ে ঈশ্বরের সাক্ষাতে চিরকাল বাস করতে পারেন, এ জন্যই যীশু খ্রীষ্ট আপনাকে অবনমিত করতে পেরেছিলেন ।GrHBen 108.3
মানুষের মধ্যস্থতারূপ খ্রীষ্টের কাজকে সখরিয় ভাববাদীর অপরূপ ভবিষ্যদ্বাণীতে তাঁর বিষয়ে তুলে ধরেছেন । ভাববাদী বলেন ঃ “যাহার নাম ‘পল্লব’ হঁ্যা তিনিই সদাপ্রভুর মন্দির গাঁথিবেন; তিনিই প্রভা ধারণ করিবেন, আপন [পিতার সিংহাসনে বসিয়া কর্তৃত্ব করিবেন এবং আপন সিংহাসনের উপবিষ্ট যাজক হইবেন, তাহাতে এই দুইয়ের মধ্যে শান্তির মন্ত্রণা থাকিবে” (সখরিয় ৬:১২, ১৩)।GrHBen 109.1
“তিনি...সদাপ্রভুর মন্দির গাঁথিবেন” (সখরিয় ৬:১৩) তাঁর আত্মবলিদান ও মধ্যস্থতার ভিত্তি ও নির্মাতা । প্রেরিত পৌল তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন: “তাহার প্রধান কোণস্থ প্রস্তর স্বয়ং খ্রীষ্ট যীশু । তাহাতেই প্রত্যেক গাথনি সুসংলগ্ন হইয়া প্রভুতে পবিত্র মন্দির হইবার জন্য বৃদ্ধি পাইতেছে,” তিনি বলেন, “তাহাতে আত্মাতে ঈশ্বরের আবাস হইবার নিমিত্ত তােমাদিগকেও একসঙ্গে গাঁথিয়া তােলা হইতেছে” (ইফিষীয় ২:২০-২২)।GrHBen 109.2
“তিনিই প্রভাধারণ করিবেন (সখরিয় ৬:১৩)। পতিত মানব জাতির জন্য মুক্তির মহিমা খ্রীষ্টেই প্রাপ্য অধিকার। অনন্তকাল ব্যাপিয়া মুক্তি প্রাপ্তদের গীত হবেঃ “যিনি আমাদিগকে প্রেম করেন ও নিজ রক্তে আমাদের পাপ হইতে আমাদিগকে মুক্ত করিয়াছেন,...তাহার মহিমা ও পরাক্রম যুগপর্যায়ের যুগে যুগে হউক।” (প্রকাশিত বাক্য ১:৫, ৬)GrHBen 109.3
তিনি “আপনি [পিতার] সিংহাসনে বসিয়া কর্তৃত্ব করবেন এবং আপন সিংহাসনের উপরে উপবিষ্ট যাজক হইবেন” (সখরিয় ৬:১৩)।”...তাহার মহিমার সিংহাসনের উপরে বসবার সময় এখনও উপস্থিত হয়নি। প্রতাপের রাজ্য এখন পর্যন্ত আসবার ঘােষণা দেয়া হয়নি। যে পর্যন্ত তাঁর মধ্যস্থতার কাজ/কার্য শেষ না হয় ততদিনে ঈশ্বর “তাহার পিতা দায়ূদের সিংহাসন তাহাকে দিবেন না”; এমন এক রাজ্য তাহাকে দিবেন, “তাহার রাজ্যের শেষ হইবে না”(লূক ১:৩২, ৩৩)। একজন যাজক হিসেবে খ্রীষ্ট এখন তাঁর পিতার সাথে তাঁর সিংহাসনে উপবিষ্ট আছেন (প্রকাশিত বাক্য ৩:২১)। চিরঞ্জীবী স্বয়ং বিরাজমান যিনি তাঁর সাথে তাঁর সিংহাসনে যিনি বসা আছেন তিনিই আমাদের যাতনা সকল তুলিয়া লইয়াছেন, “আমাদের ব্যথা সকল তিনি বহন করিয়াছেন” (যিশাইয় ৫৩:৪), তিনি “সর্ববিষয়ে আমাদের ন্যায় পরীক্ষিত হইয়াছেন, বিনা পাপে” (ইব্রীয় ৪:১৫); যেন তিনি “পরীক্ষিতগণের সাহায্য করতে পারেন” (ইব্রীয় ২:১৮), “আর যদি কেহ পাপ করে, তবে পিতার কাছে আমাদের এক সহায় (উকিল) আছেন” (১ যােহন ২:১)। তাঁর মধ্যস্থতা হল এক বিদ্ধ ও ভগ্ন দেহের, এক নিকলুষ জীবনের মধ্যস্থতা। পতিত মানবের পক্ষে তিনি তাঁর পেরেক বিদ্ধ হস্তদ্বয়, ক্ষত পদযুগল নিয়ে মধ্যস্থতা করছেন, কেননা তাদের মুক্তির মূল্য ছিল অসাম (অপরিমেয়)।GrHBen 109.4
“তাহাতে এই দুইয়ের মধ্যে শান্তির মন্ত্রণা থাকিবে” (সখরিয়। ৬:১৩)। পুর চেয়ে পিতার প্রেম কোন অংশে কম ছিল না, যা ছিল হারিয়ে যাওয়া জাতির জন্য পরিত্রাণের উৎস। যীশু চলে যাবার পূর্বে তিনি তাঁর শিষ্যদের কাছে বলেছিলেনঃ “আমি তােমাদিগকে বলিতেছি না যে, আমিই তােমাদের নিমিত্ত পিতাকে নিবেদন করিব; কারণ পিতা “আপনি তােমাদিগকে ভালবাসেন” (যােহন ১৬:২৬, ২৭)। “ঈশ্বর খ্রীষ্টে আপনার সহিত জগতের সম্মিলন করাইয়া দিতেছিলেন” (২ করিন্থীয় ৫:১৯)। আর উর্জেস্থিত (স্বর্গে) ধর্মধামের পরিচর্যা কাজে “এই দুইয়ের মধ্যে শান্তির মন্ত্রণা থাকিবে।” “কারণ ঈশ্বর জগতকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত পুত্রকে দান করিলেন, যেন যে কেহ তাহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়” (যােহন ৩:১৬)।GrHBen 110.1
ধর্মধাম কি? শাস্ত্রে এ প্রশ্নের উত্তর সুস্পষ্টভাবে দেয়া হয়েছে । “ধর্মধাম” শব্দটি যেভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, তাঁর দ্বারা স্বর্গীয় বিষয়ের আদর্শ অনুসারে পৃথিবীতে মােশির নির্মিত তাম্বুকে (আবাসকে) বুঝায়। আর দ্বিতীয়তঃ পার্থিব ধর্মধাম দ্বারা স্বর্গে অবস্থিত প্রকৃত তাম্বুকে নির্দেশ করে। খ্রীষ্টের মৃত্যুতে প্রতীকস্বরূপ পরিচর্যা কার্যের সমাপ্তি ঘটল। স্বর্গের “প্রকৃত ধর্মধাম” হল নূতন নিয়মের ধর্মধাম । আর ভবিষ্যত বানী অনুসারে দানিয়েল ৮:১৪ পদের ভাববাণীর কাল পূর্ণ হওয়ায় যে ধর্মধামের উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁর দ্বারা অবশ্যই নূতন নিয়মের ধর্মধামকে নির্দেশ করে । কেননা ১৮৪৪ খ্রীষ্টাব্দে ২৩০০ দিনের সমাপ্তির বহু শত বছর আগে থেকে পৃথিবীতে কোন ধর্মধাম ছিল না। সুতরাং “দুই সহস্র তিনশত সন্ধ্যা ও প্রাতঃকালের নিমিত্ত পরে ধর্মধামের পক্ষে বিচার নিষ্পত্তি হইবে,” ভবিষ্যদ্বাণীর এই বাক্য দ্বারা প্রশ্নাতীতভাবে স্বর্গীয় ধর্মধামকে নির্দেশ করে।GrHBen 110.2
কিন্তু সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটির উত্তর তাতেও পাওয়া যায় না। প্রশ্নটি হল “ধর্মধামের পক্ষে বিচার নিষ্পত্তি” (ধর্মধাম পরিষ্কারকরণ) দ্বারা কি বুঝায়? পার্থিব ধর্মধামের সাথে সম্পৃক্ত এ প্রকারের একটি সেবামূলক কাজের কথা পুরাতন নিয়মের শাস্ত্রীয় বচনে উল্লেখ আছে। কিন্তু স্বর্গে এমন কিছু আছে কি যা পরিষ্কার করার প্রয়ােজন আছে? ইব্রীয় পুস্তকের নবম অধ্যায়ে পার্থিব ও স্বর্গীয় ধর্মধাম উভয়ের ব্যাপারে সরলভাবে শিক্ষা দেয়া হয়েছে। “আর ব্যবস্থানুসারে প্রায় সকলই রক্তে শুচীকৃত হয় এবং রক্ত সেচন ব্যতিরেকে পাপমােচন হয় না । ভাল যাহা যাহা স্বর্গস্থ বিষয়ের দৃষ্টান্ত, সেগুলির ঐ সকলের (পশুর রক্ত)” দ্বারা শুচীকৃত হওয়া আবশ্যক ছিল; কিন্তু যাহা যাহা স্বয়ং স্বগীয়, সেগুলির ইহা হইতে শ্রেষ্ঠ যজ্ঞ দ্বারা শুচীকৃত হওয়া আবশ্যক” (ইব্রীয় ৯:২২, ২৩) এমন কি খ্রীষ্টের বহুমূল্য রক্ত দ্বারা শুচীকরণ। আবশ্যক।GrHBen 110.3
নিদর্শনমূলক (প্রতীক) ও বাস্তব পরিচর্যা উভয় ক্ষেত্রেই শুচীকরণের জন্য রক্ত আবশ্যকঃ পূর্বকারটি (প্রথমটি) পশুর রক্ত দ্বারা আর পরবর্তটি খ্রীষ্টের রক্ত দ্বারা । শুচীকরণ কেন আবশ্যক তাঁর কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে। প্রেরিত পৌল বলেন যে, শুচীকরণে রক্তের অবশ্যই প্রয়ােজন আছে, কেননা “রক্ত সেচন ব্যতিরেকে পাপমােচন হয় না।” পাপমােচন অথবা পাপ থেকে দূরে রাখা, এ কাজটি করা একান্ত আবশ্যক। কিন্তু ধর্মধামের সাথে পাপের সংযােগ কিভাবে হতে পারে সে স্বর্গীয় অথবা পার্থিব ধর্মধাম হােক? এ ব্যাপারে নিদর্শনমূলক পরিচর্যা কাজ থেকে শিক্ষা করা যেতে পারে, কারণ যাজকগণ যারা পার্থিব ধর্মধামে পৌরহিত্ব করতেন তারা “স্বর্গীয় বিষয়ের দৃষ্টান্ত ও ছায়া লইয়া আরাধনা করতেন (ইব্রীয় ৮:৫)।GrHBen 110.4
পার্থিব ধর্মধামের পরিচর্যা কার্য দু’টি ভাগে নিয়ে গঠিত ছিল। যাজকগণ প্রতিদিন পবিত্রস্থানে পরিচর্যা করত। কিন্তু প্রধান মহাযাজক ধর্মধান পরিস্কার করতেন বৎসরে একবার মহাপবিত্র স্থানে বিশেষভাবে মহাপ্রায়শ্চিত্ব কার্য সম্পাদন করতেন ও ধর্মধাম পরিষ্কার করতেন । এই অনুষ্ঠানটি ছিল ধর্মধামে তাঁর পাপ স্থানান্তরের প্রতীক। দিনের পরদিন অনুতপ্ত পাপীরা তাদের পার্থক বলি উৎসর্গ করতে নৈবেদ্য ধর্মধামের ফটকে নিয়ে আসত এবং উৎসর্গকৃত পশুটির মস্তকে হস্ত স্থাপন পূর্বক আপন আপন পাপ স্বীকার করত যেন তাহাদের পাপ নির্দোশ বলির জন্য পশুটির উপর পাপ স্থানান্তরিত হয়। তাঁর পর পশুটিকে বলি দেয়া হত । প্রেরিত বলেছেন, “রক্ত সেচন ব্যতিরেকে পাপের মােচন হয় না। কেননা রক্তে মধ্যেই শরীরের প্রাণ থাকে” (লেবীয় ১৭:১১)। ঈশ্বরের আজ্ঞা লঙ্ঘনকারীদেও প্রাপ্য মৃত্যু। রক্ত, পাপী মানবের জীবনকে নির্দেশ করে । পাপার্থক বলিকৃত পশুটির রক্ত যাজক বহন করে পবিত্র স্থানের পর্দায় ছিটাত, যে পর্দাটির পিছনে থাকত নিয়ম সিন্দুক, যার মধ্যে দশ আজ্ঞা রাখা ছিল, যে আজ্ঞা পাপী মানব লঙ্ঘন করেছে। এ পর্বের মাধ্যমে পাপের নিদর্শন রক্তের দ্বারা পাপকে ধর্মধামে স্থানান্তর করা হত। কোন বিশেষ অবস্থাতে রক্ত পবিত্রস্থানে নেয়া হােত না; কিন্তু মাংশ যাজক কর্তৃক ভক্ষিত হােত যেভাবে। মােশী হারুনের পুত্রদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, “তাহা ত অতি পবিত্র এবং মন্ডলীর অপরাধ বহন করতঃ সদাপ্রভুর সন্মুখে প্রায়শ্চিত করনার্থে তাহা তিনি তােমাদিগকে দিয়াছেন” (লেবীয় ১০:১৭)। উভয় পর্বের মাধ্যমে। প্রায়শ্চিত্তকারীর পাপ রক্তের নিদর্শনের দ্বারা ধর্মধামে স্থানান্তর করত।GrHBen 111.1
সারা বছর ব্যাপী দিনের পর দিন একই প্রকার কাজ সম্পাদিত হত । এই প্রকারে ইস্রায়েল জাতির সকল পাপ ধর্মধামে স্থানান্তরিত হত । আর সরিয়ে ফেলার জন্য এক বিশেষ কাজের প্রয়ােজন দেখা দিল। দুটি পবিত্র স্থানের প্রায়শ্চিত্ত সাধনের জন্য ঈশ্বর এক আদেশ দিলেন। “আর ইস্রায়েল সন্তানগণের নানাবিধ অশুচিতা ও অধৰ্ম্ম অর্থাৎ সর্বাধিক পাপপ্রযুক্ত সে পবিত্র স্থানের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করিবে এবং যে সমাগম তাম্বু তাহাদের সহিত তাহাদের নানাবিধ অশৌচের মধ্যে বসতি করে, তাহার নিমিত্তে সে তদ্রপ করিবে।” বেদিকে “শুচি” করবার জন্য এক প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে” ও ইস্রায়েল সন্তানদের অশৌচ হইত তাহা পবিত্র করিবে” (লেবীয় ১৬:১৬, ১৯)।GrHBen 111.2
বছরে একবার মহা প্রায়শ্চিত্তের দিনে মহাযাজক ধর্মধাম শুচিকরণার্থে মহাপবিত্র স্থানে প্রবেশ করতেন । যে কাজ/কার্য সেখানে সম্পাদিত হত তদ্বারা বার্ষিক পরিচর্যা কার্যক্রম সমাপ্ত হত। প্রায়শ্চিত্তের দিনে সমাগম তামুর দ্বারে দুটি ছাগ বৎস আনা হত এবং উভয়ের জন্যে গুলিবাট করা হত, “একটি সদাপ্রভুর নিমিত্তে, ও অন্যটি ত্যাগের নিমিত্তে” (লেবীয় ১৬:৮) করা হত। সদাপ্রভুর নিমিত্তে যে ছাগ বৎসটির ওপরে গুলি উঠত, সেটিকে লােকদের উদ্দেশে পাপার্থ বলিরূপে উৎসর্গ করা হত। আর মহাযাজক তাঁর কিছু রক্ত নিয়ে তিরস্করিণীর ভেতরে এসে পাপাবরণের উপর এবং কিছু রক্ত তিরস্করিণীর বাইরে স্থাপিত ধূপ বেদির ওপরেও ছিটান হত।GrHBen 112.1
“পরে হারােণ সেই জীবিত ছাগের মস্তকে আপনার দুই হস্ত অর্পণ করিবে এবং ইস্রায়েল সন্তানগণের সমস্ত অপরাধ ও তাহাদের সমস্ত অধর্ম অর্থাৎ তাহাদের সর্বাধিক পাপ তাহার উপরে স্বীকার করিয়া সেই সমস্ত ঐ ছাগের মস্তকে অর্পণ করিবে; পরে সে প্রস্তুত হইয়াছে, এমন লােকের হস্ত দ্বারা তাহাকে প্রান্তরে পাঠাইয়া দিবে । আর ঐ ছাগ নিজের উপরে তাহাদের সমস্ত অপরাধ বিচ্ছিন্ন ভূমিতে বহিয়া লইয়া যাইবে”(লেবীয় ১৬:২১, ২২)। ত্যাগের ছাগটি ইস্রায়েলদের তাম্বুতে আর কখনাে ফিরে আসত না। আর যে লােকটি ছাগটিকে দূর প্রান্তরে নিয়ে গিয়ে রেখে আসত তাম্বুতে প্রবেশের পূর্বে তাকে জলে স্নান এবং তাঁর পরিধেয় কাপড়ও জলে ধৌত করতে হত ।GrHBen 112.2
ঈশ্বরের পবিত্রতা ও পাপের প্রতি তাঁর অতিশয় ঘৃণা প্রকাশ দ্বারা ইস্রায়েলদের মনে গভীর ছাপ ফেলার জন্যই সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানটি পরিকল্পিত হয়েছিল; তদুপরি তাদের আরও দেখান হয়েছিল যে আপনাকে কলুষিত না। করে কেউ পাপের সংস্পর্শে আসতে পারে না। প্রায়শ্চিত্তের এই কাজ চলাকালে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তাঁর নিজ আত্মাকে ক্লেশভােগ করান আবশ্যক ছিল । সর্ব প্রকার কাজ কর্ম বা ব্যবসাদি ফেলে রেখে সমস্ত ইস্রায়েল। সমাজকে ঈশ্বরের সাক্ষাতে গভীর শ্রদ্ধাসহ বিনম্রতায়, প্রার্থনা সহকারে, উপবাস থেকে আত্মশুদ্ধির জন্য নিজ নিজ আত্মার অনুসন্ধানে দিনটি অতিবাহিত করতে হত।GrHBen 112.3
এই নিদর্শনামূলক পরিচর্যা কাজের দ্বারা প্রায়শ্চিত্ত সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সত্য সম্পর্কে শিক্ষা দেয়া হত। পাপীর বদলে একটি বিকল্পকে গ্রহণ করা হত কিন্তু ঐ বলিকৃত পশুর রক্তে পাপ মােচন বা বাতিল করা হত না। কেবল একটি উপায়ই করে দেয়া হয়েছিল যার মাধ্যমে পাপকে ধর্মধামে স্থানান্তর করা যেত। রক্তের নৈবেদ্য উৎসর্গের দ্বারা পাপী ব্যবস্থার ক্ষমতাকে স্বীকার করত, ব্যবস্থা লজ্ঞানের দ্বারা যে পাপ ক্ষমা লাভের বাসনা ব্যক্ত করত; তখনও সে ব্যবস্থার দন্ডাজ্ঞা থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্তি লাভ করেনি । মহা প্রায়শ্চিত্ত দিবসে মহাযাজক ইস্রায়েল সমাজ মন্ডলীর কাছ থেকে একটি উৎসর্গীকৃত বলির রক্ত নিয়ে মহাপবিত্র স্থানে যেতেন এবং ঐ রক্ত পাপাবরণের ওপরে সরাসরি ব্যবস্থার ওপরে ছিটাতেন। তৎপরে তাঁর মধ্যস্থতার ভূমিকায় তিনি আপনার ওপরে সমস্ত পাপ তুলে নিতেন এবং ধর্মধাম থেকে তা বাইরে নিয়ে আসতেন । ত্যাগের জন্য নিরূপিত ছাগটির ওপরে তিনি তাঁর হাত রেখে তাঁর ওপরে সমস্ত পাপস্বীকার করতেন। এভাবে। তাঁর ওপরে বয়ে আনা সমস্ত পাপ বহনকারী প্রতীক ছাগের ওপরে স্থানান্তর করতেন। ছাগটি তখন ঐ পাপ সকল বহন করে দূরে নিয়ে যেত এবং ধরে নেয়া হত যে, লােকদের থেকে পাপ চিরতরে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।GrHBen 112.4
এটিই ছিল “স্বর্গীয় বিষয়ের দৃষ্টান্ত ও ছায়া লইয়া” সম্পাদিত পরিচর্যা কার্য । আর পার্থিব ধর্মধামে নিদর্শনস্বরূপ যে পরিচর্যা কাজ সম্পাদন করা হত, স্বগীয় ধর্মধামে ঐ একই পরিচর্যা বাস্তবে সম্পাদন করা হয় এবং আমাদের পক্ষে মহাযাজকরূপে আমাদের পরিত্রাণ কৰ্ত্তা স্বর্গে আরােহন করার পর তাঁর কাজ শুরু করেন । পৌল বলেনঃ “খীষ্ট হস্তকৃত পবিত্র হানে প্রবেশ করেন করেন। পৌল বলেন: “...খ্রীষ্ট হস্তকৃত পবিত্রস্থানে প্রবেশ করেন। নাই, এ ত প্রকৃত বিষয়গুলির প্রতিরূপ মাত্র — কিন্তু স্বর্গেই প্রবেশ করিয়াছেন, যেন তিনি এখন আমাদের জন্য ঈশ্বরের সাক্ষাতে প্রকাশমান হন।” (ইব্রীয় ৯:২৪)GrHBen 113.1
বহিঃপ্রাঙ্গন থেকে ধর্মধামকে পৃথক করা দ্বারের যবনিকার ভেতরে পবিত্র স্থানে সারা বছর ব্যাপী যাজক যে পরিচর্যা কাজ করত খ্রীষ্টের স্বর্গারােহণের পরে যে পরিচর্যা কাজ করছেন — ঐটিরই নিদর্শন ছিল এটি। দৈনিক পরিচর্যা কাজে যাজকের কর্তব্য ছিল পাপার্থ বলির রক্ত ও সুগন্ধি ধূপের ধূম ঈশ্বরের সম্মুখে তুলে ধরা। অনুরূপভাবে পাপীদের পক্ষে নিজ রক্ত নিয়ে পিতার কাছে খ্রীষ্ট ওকালতি করেন এবং তাঁর সাক্ষাতে অনুতপ্ত বিশ্বাসীর প্রার্থনাসহ নিজ ধার্মিকতার অমূল্য সৌরভ উপস্থাপন করেন। স্বর্গীয় ধর্মধামের প্রথম কক্ষে এটিই ছিল পরিচর্যামূলক কার্য ।GrHBen 113.2
খ্রীষ্ট যখন তাঁর শিষ্যগণের দৃষ্টিগােচরে স্বর্গারােহণ করছিলেন তখন তাদের বিশ্বাস তাঁর সাথে সেখানে অনুসরণ করে। এখানে তাদের প্রত্যাশা কেন্দ্রীভূত ছিল যার বিষয়ে প্রেরিত পৌল বলেনঃ “আমাদের সেই প্রত্যাশা আছে তাহা প্রাণের লঙ্গরস্বরূপ অটল ও দৃঢ়, এবং তিরস্করিণীর ভেতরে যায় । আর সেই স্থানে আমাদের নিমিত্ত অগ্রগামী হইয়া যীশু প্রবেশ করিয়াছেন... অনন্তকালীন মহাযাজক হইয়াছেন” (ইব্রীয় ৬:১৯, ২০)। “ছাগদের ও গােবৎসদের রক্তের গুণে নয় কিন্তু নিজ রক্তের গুণে- একবার পবিত্রস্থানে। প্রবেশ করিয়াছেন, আমাদের জন্য “অনন্তকালীন মুক্তি উপার্জন করিয়াছেন” (ইব্রীয় ৯;১২) ।GrHBen 113.3
আঠার শতাব্দি ব্যাপী ধর্মধামের প্রথম কক্ষে পরিচর্যার এই কাজ চলতে থাকে । অনুতপ্ত বিশ্বাসীদের পক্ষে খ্রীষ্টের রক্ত মধ্যস্থতা করে আসছে, পিতার কাছ থেকে পাপের ক্ষমা লাভ করেছে ও তাঁর কর্তৃক গৃহীত হয়েছে, তথাপিও তাদের পাপ স্মরণ পুস্তকে লেখা থেকে যায় । নিদর্শনমূলক পার্থিব ধর্মধামে যেমন বছরের সমাপ্তিতে মহা প্রায়শ্চিত্তের পরিচর্যা কাজ সম্পন্ন করা হত, তদ্রুপভাবে খ্রীষ্ট কর্তৃক মানুষের মুক্তি কার্য সম্পন্ন করতে ধর্মধাম থেকে পাপ বিদূরিত করতে একটি মহা প্রায়শ্চিত্ত কাজের প্রয়ােজন ছিল। এই পরিচর্যা কাজটি ২৩০০ দিনের (বছরের) সমাপ্তিতে শুরু হয়। ঐ সময়ে। যেমন দানিয়েল ভাববাদী কর্তৃক ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল, তেমনিভাবে আমাদের মহাযাজক মহা পবিত্রস্থানে প্রবেশ করলেন তাঁর গৃঢ় গাম্ভীর্যপূর্ণ ধর্মধাম পরিস্কারকরণের শেষ রাতটিGrHBen 113.4
প্রাচীনকালে যেমন লােকদের পাপ সকল বিশ্বাস দ্বারা পাপার্থক বলির ওপরে ন্যস্ত করা হত, এবং তাঁর রক্তের মাধ্যমে প্রতীক হিসেবে পার্থিব ধর্মধামে স্থানান্তরিত হত; তেমনিভাবে নূতন নিয়মে অনুতপ্তদের পাপ সকল বিশ্বাস দ্বারা খ্রীষ্টের ওপরে ন্যস্ত হয় এবং বাস্তবে স্বর্গীয় ধর্মধামে স্থানান্তরিত হয়। আর যেমনি করে পাপে কলুষিত পার্থিব ধর্মধাম থেকে প্রতীকী শুচিকরণের মাধ্যমে পাপ দূর করা হত, তেমনি করে স্বর্গীয় ধর্মধামের পাপ সকলের বাস্তব শুচিকরণ কাজ সম্পন্ন হবে লিপিবদ্ধ পুস্তক থেকে পাপ সকল মুছে ফেলা বা অপসারণের মাধ্যমে। কিন্তু এ কাজটি সম্পন্ন করবার পূর্বে কে কে প্রকৃত পাপের অনুতাপ ও খ্রীষ্টে বিশ্বাস দ্বারা তাঁর প্রায়শ্চিত্ত সাধক আত্ম। বলিদানের সুফলের অংশী হতে পারবে কি-না তা যাচাই করে দেখে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হবে। সুতরাং স্বর্গীয় ধর্মধাম পরিষ্কারকরণ কাজের সাথে অনুসন্ধান কার্য জড়িত। তাই এ কাজটি তাঁর প্রজাদের মুক্তি দিতে খ্রীষ্টের আগমনের পূর্বে অবশ্যই সম্পাদন করতে হবে; কেননা তিনি যখন আসবেন, তখন প্রত্যেক মানুষের নিজ নিজ কর্মানুসারে দাতব্য পুরস্কারসহ আসিবেন । (প্রকাশিত বাক্য ২২:১২)।GrHBen 114.1
অতএব যারা ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্যের আলােকে অগ্রসর হয়েছেন, তারা দেখতে পেয়েছেন যে ১৮৪৪ খ্রীষ্টাব্দে ২৩০০ দিনের সমাপ্তিতে খ্রীষ্টের এ জগতে আসার পরিবর্তে তাঁর আগমন পূর্ব প্রায়শ্চিত্ত সাধক প্রস্তুতির সমাপণী কার্য সাধনাৰ্থে স্বর্গীয় ধর্মধামের মহাপবিত্র স্থানে প্রবেশ করেছেন ।GrHBen 114.2
আরও দেখা গেছে যে, পাপার্থক বলি দ্বারা খ্রীষ্টের আত্মবলিদানকে নির্দেশ করে, আবার মহাযাজকের প্রতিনিধিত্বকারী রূপে মধ্যস্থতাকারী খ্রীষ্টকে বুঝান হয়েছে; ত্যাগের ছাগ দ্বারা পাপ প্রবর্তক শয়তানকে বুঝান হয়েছে, যার ওপরে প্রকৃত অনুতাপীর সমস্ত পাপ অবশেষে তাঁর ওপরে বর্তান হবে । যখন মহাযাজক পাপার্থক বলিদানের রক্তের গুণে ধর্মধাম থেকে পাপ অপসারণ করে ত্যাগের ছাগটির ওপরে সব পাপ বর্তাতেন, তেমনি খ্রীষ্ট তাঁর নিজ রক্তের গুণে তাঁর প্রজাদের সমস্ত পাপ অপসারণ করে তিনি শয়তানের ওপরে বর্তাবেন এবং বিচার কার্য নিষ্পত্তিকালে অন্তিম দন্ড তাকে ভােগ করতে হবে । যেমন ত্যাগের ছাগটিকে জনমানবশূণ্য স্থানে পাঠিয়ে দেয়া হত, সে কখনও আর ইস্রায়েল সমাজে ফিরে আসত না, তদ্রুপ শয়তানকে ঈশ্বরের ও তাঁর প্রজাদের সম্মুখ হতে চিরতরে নির্বাসিত করা হবে এবং পাপীদের ও পাপের শেষ বিনাশের সময় তাঁর অস্তিত্ব চিরতরে মুছে ফেলা হবে ।GrHBen 114.3