Loading...
Larger font
Smaller font
Copy
Print
Contents
খ্রীষ্টের দৃষ্টান্তমূলক শিক্ষা - Contents
  • Results
  • Related
  • Featured
No results found for: "".
  • Weighted Relevancy
  • Content Sequence
  • Relevancy
  • Earliest First
  • Latest First
    Larger font
    Smaller font
    Copy
    Print
    Contents

    তাড়ীর তুল্য

    মথি ১৩:৩৩; লূক ১৩:২০, ২১ পদের উপর ভিত্তি করে রচিত

    অনেক শিক্ষিত ও প্রভাবশালী মানুষ গালীলের ভাববাদীর কথা শুনতে তাঁর কাছে এসেছিল। এদের মধ্যে অনেকেই সাগর পারে খ্রীষ্টের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণের জন্য আগত জনতার দিকে কৌতূহলী দৃষ্টি প্রক্ষেপণ করছিলেন। এই বিশাল জনারণ্যে সব ধরনের শ্রেণী ও পেশার মানুষ সমাগত হয়েছিল। সেখানে গরীব, অশিক্ষিত, সম্বলহীন ভিখারী, মুখে অপরাধবোধের ছাপ পড়া দস্যু, পঙ্গু, অসহায়, ব্যবসায়ী, এবং অলস মানুষ, উঁচু ও নিচু, ধনী ও দরিদ্র সব ধরনের মানুষ এক জায়গায় জড়ো হয়ে খ্রীষ্টের মুখের কথা শুনছিল। সুশীল ব্যক্তিরা এই মিশ্র জন সমাগমের দিকে দৃষ্টিপাত করে নিজেদের মধ্যে এ কথা বলাবলি করছিল, ঈশ্বরের রাজ্য কি এদের মত লোকদেরকে দিয়ে তৈরি হবে? তখন ত্রাণকর্তা যীশু আরেকটি দৃষ্টান্ত বললেন: COLBen 74.1

    “স্বর্গ-রাজ্য এমন তাড়ীর তুল্য, যাহা কোন স্ত্রীলোক লইয়া তিন মাণ ময়দার মধ্যে ঢাকিয়া রাখিল, শেষে সমস্তই তাড়ীময় হইয়া উঠিল।”COLBen 74.2

    যিহূদীদের মধ্যে তাড়ী অনেক সময় পাপের প্রতীক হিসেবে ধরা হত। নিস্তারপর্বের সময় লোকেরা তাদের ঘর থেকে সমস্ত তাড়ী বের করে ফেলে দিত। এটি ছিল তাদের অন্তর থেকে পাপ দূর করে দেয়ার প্রতীক। খ্রীষ্ট তাঁর শিষ্যদেরকে সাবধান করে দিয়ে বলেছিলেন, “তোমরা ফরীশীদের তাড়ী হইতে সাবধান থাক, তাহা কপটতা,” লূক ১২:১। প্রেরিত পৌল “হিংসা ও দুষ্টতার তাড়ী” সম্পর্কে বলেছেন, ১ করিন্থীয় ৫:৮। কিন্তু যীশুর এই দৃষ্টান্তে তাড়ীকে তুলনা করা হয়েছে স্বর্গরাজ্যের সাথে। এটি নির্দেশ করে ঈশ্বরের অনুগ্রহের জীবন দানকারী ও সৃষ্টিকারী শক্তিকে।COLBen 74.3

    কিন্তু মানুষ তার নিজের ইচ্ছাশক্তি দিয়ে নিজেকে রূপান্তরিত করতে পারে না। এই পরিবর্তন যে শক্তিতে ঘটে তার উপরে তার কোন ক্ষমতা নেই। তাড়ী এমন একটি উপাদান যা ভেতর থেকে পুরো জিনিসটির পরিবর্তন সাধন করে। এ কারণে খাবারের মধ্যে সেই পরিবর্তনটি আনার আগে তাড়ী মেশাতে হয়। ঠিক সেভাবেই একজন পাপীকে ঈশ্বরের গৌরবময় রাজ্যের উপযোগী হতে হলে আগে তাকে ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভ করতে হবে। এই পৃথিবীর সমস্ত সংস্কৃতি ও শিক্ষা একটি পাপীয় শিশুকে স্বর্গের জন্য উপযুক্ত নিষ্পাপ একটি শিশুতে পরিণত করতে ব্যর্থ হবে। নবায়ণকারী লাভের শক্তি অবশ্যই ঈশ্বরের কাছ থেকে আসতে হবে। এই শক্তি শুধুমাত্র পবিত্র আত্মার লাভ করা যায়। উঁচু বা নিচু, ধনী বা দরিদ্র যে কেউ পরিত্রাণ পেতে হলে তাকে অবশ্যই এই কার্যকারী শক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে।COLBen 75.1

    তাড়ী যখন খাবারে মেশানো হয়, তখন ভেতর থেকে কাজ করে ও তা পরে বাইরে প্রকাশ পায়। কাজেই একইভাবে অন্তরের নতুনীকরণের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের অনুগ্রহ মানুষের জীবন রূপান্তর করে থাকে। ঈশ্বরের সাথে মিলিত হতে গেলে কেবল বাহ্যিক পরিবর্তনই যথেষ্ট নয়। এমন অনেকে আছে যারা নিজেদের বাজে অভ্যাসগুলো খুঁজে বের করে সেগুলোকে সংশোধন করে নিজেদেরকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করে থাকেন এবং তারা আশা করেন এই প্রক্রিয়ায় তারা উপযুক্ত খ্রীষ্টান হতে পারবেন। কিন্তু তারা আসলে গোড়াতেই ভুল করেছেন। পরিবর্তনের প্রম ধাপটি শুরু হয় আমাদের অন্তর থেকে।COLBen 75.2

    -------------------------------

    “ধন্য তাহারা, যাহারা আচরণে সিদ্ধ, যাহারা সদাপ্রভুর ব্যবস্থা-পথে চলে। ধন্য তাহারা, যাহারা তাঁহার সাক্ষ্যকলাপ পালন করে; যাহারা সর্বান্তঃকরণে তাঁহার অন্বেষণ করে। আবার তাহারা অন্যায় করে না, তাহারা তাঁহার সকল পথে গমন করে। তুমি আপন নির্দেশমালা আদেশ করিয়াছ, যেন আমরা যত্নপূর্বক তাহা পালন করি। আহা! আমার পথ সকল সুস্থির হউক, যেন আমি তোমার বিধিকলাপ পালন করি।” গীতসংহিতা ১১৯:১-৫।

    বিশ্বাসে জীবন ধারণ করা এবং আত্মায় সত্যকে লালন করা দুটো আলাদা বিষয়। সত্য সম্পর্কে নেহায়েত জ্ঞান কেবল যথেষ্ট নয়। আমরা হয়তো সত্যকে লালন করতে পারি, কিন্তু তাতে করে আমাদের চিন্তাধারা পরিবর্তিত নাও হতে পারে। অবশ্যই অন্তরকে পরিবর্তিত হতে হবে এবং পবিত্রীকৃত হতে হবে।COLBen 76.1

    যে ব্যক্তি কেবলমাত্র বাধ্যবাধকতা হিসেবে বিবেচনা করে ঈশ্বরের আদেশ পালন করতে চাইবে-সে কখনোই তাঁর বাধ্যতার অধীন আনন্দের স্বাদ উপভোগ করতে পারবে না সে ঈশ্বরের আদেশ পালন করে না। মানবীয় প্রবৃত্তির বিপক্ষে যাওয়ার কারণে ঈশ্বরের কোন আদেশ যখন মানুষের কাছে বোঝাস্বরূপ হয়ে পড়ে, তখন আমরা হয়তো বুঝতে পারি যে, সেই দায়বদ্ধতার জীবন কোন খ্রীষ্টিয় জীবন নয়। প্রকৃত বাধ্যতার অর্থ হচ্ছে জাগতিক সমস্ত নিয়ম নীতির উর্ধ্বে থেকে ঈশ্বরের আদেশ পালন করা। এই বাধ্যতা আসে ধার্মিকতার প্রতি ভালবাসা থেকে, ঈশ্বরের বিধানের প্রতি ভালবাসা থেকে। সমস্ত ধার্মিকতার মূল উপাদান হচ্ছে আমাদের ত্রাণকর্তার প্রতি আনুগত্য। এটা আমাদেরকে সঠিক কাজটি করতে পরিচালনা দান করবে। কারণ এটাই ন্যায্য যা ঈশ্বরের কাছে প্রীতিজনক।COLBen 76.2

    নীকদীমকে বলা যীশুর কথাগুলোর মধ্যে পবিত্র আত্মার দ্বারা অন্তরের পরিবর্তন সংক্রান্ত মহান সত্যটির পরিচয় পাওয়া যায়: “সত্য সত্য, আমি তোমাকে বলিতেছি, নূতন (উপর হইতে) জন্ম না হইলে কেহ ঈশ্বরের রাজ্য দেখিতে পায় না। . . . যদি কেহ জল এবং আত্মা হইতে না জন্মে, তবে সে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করিতে পারে না। মাংস হইতে যাহা জাত, তাহা মাংসই; আর আত্মা হইতে যাহা জাত, তাহা আত্মাই। আমি COLBen 76.3

    -------------------------------

    “অনন্তকালের নিমিত্ত, হে সদাপ্রভু, তোমার বাক্য স্বর্গে সংস্থাপিত। তোমার বিশ্বস্ততা পুরুষে পুরুষে স্থায়ী; তুমি পৃথিবীকে স্থাপন করিয়াছ, তাহা স্থির রহিয়াছে। . . . আমি তোমার নির্দেশমালা কখনও ভুলিয়া যাইব না, কারণ তদ্দ্বারা তুমি আমাকে সঞ্জীবিত করিয়াছ। . . . আমি সমস্ত সিদ্ধির অন্ত দেখিয়াছি; তোমার আজ্ঞা অতিশয় প্রশস্ত।” গীতসংহিতা ১১৯:৮৯-৯৬। যে তোমাকে বলিলাম, তোমাদের নূতন জন্ম হওয়া আবশ্যক, ইহাতে আশ্চর্য জ্ঞান করিও না। বায়ু যে দিকে ইচ্ছা করে, সেই দিকে বহে, এবং তুমি তাহার শব্দ শুনিতে পাও; কিন্তু কোথা হইতে আইসে, আর কোথায় চলিয়া যায়, তাহা জান না; আত্মা হইতে জাত প্রত্যেক জন সেইরূপ।” যোহন ৩:৩-৮।

    পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণায় চালিত হয়ে প্রেরিত পৌল বলেছেন, “কিন্তু ঈশ্বর, দয়াধনে ধনবান বলিয়া, আপনার যে মহাপ্রেমে আমাদিগকে প্রেম করিলেন, তৎপ্রযুক্ত আমাদিগকে, এমন কি, অপরাধে মৃত আমাদিগকে, খ্রীষ্টের সহিত জীবিত করিলেন—অনুগ্রহেই তোমরা পরিত্রাণ পাইয়াছ—এবং তিনি খ্রীষ্ট যীশুতে আমাদিগকে তাঁহার সহিত উঠাইলেন ও তাঁহার সহিত স্বর্গীয় স্থানে বসাইলেন; উদ্দেশ্য এই, খ্রীষ্ট যীশুতে আমাদের প্রতি প্রদর্শিত তাঁহার মধুর ভাব দ্বারা যেন তিনি আগামী যুগপর্যায়ে আপনার অনুপম অনুগ্রহ-ধন প্রকাশ করেন। কেননা অনুগ্রহেই, বিশ্বাস দ্বারা তোমরা পরিত্রাণ পাইয়াছ; এবং ইহা তোমাদের হইতে হয় নাই, ঈশ্বরেরই দান।” ইফিষীয় ২:৪-৮।COLBen 77.1

    ময়দার ভেতরে লুকিয়ে থাকা তাড়ী অদৃশ্যভাবে পুরো ময়দার তালকে প্রক্রিয়াজাত করে ফেলে। একইভাবে ঈশ্বরীয় সত্যও গোপনে, নীরবে, দৃঢ়ভাবে আত্মাকে রূপান্তর করে তোলে। তা মানুষের স্বভাবগত প্রবণতাগুলোকে সংযত করে ও ধীরে ধীরে বিলীন করে দেয়। সেখানে জায়গা করে নেয় নতুন চিন্তা, নতুন অনুভূতি ও নতুন প্রেরণা। চরিত্রের একটি নতুন আদর্শ তার মাঝে স্থাপিত হয় Ñ খ্রীষ্টিয় জীবনের আদর্শ। তখন মন হয় পরিবর্তিত এবং তার চিন্তাধারার পরিবর্তন ঘটার ফলে কাজেও পরিবর্তন আসে। তাকে যে নতুন কোন ক্ষমতা বা যোগ্যতা দান করা হয় তা নয়, কিন্তু তার পূর্বের সমস্ত যোগ্যতা ও সক্ষমতাকে নতুনীকৃতCOLBen 77.2

    -------------------------------

    “যখন তোমার ধর্মময় শাসনকলাপ শিক্ষা করি, তখন আমি সরল চিত্তে তোমার স্তব করিব। আমি তোমার বিধিকলাপ পালন করিব; আমাকে একেবারে পরিত্যাগ করিও না।” গীতসংহিতা ১১৯:৭, ৮। ও পবিত্রীকৃত করে তোলা হয়। তার বিবেককে জাগ্রত করে তোলা হয়। আমাদের চরিত্রে এমন বৈশিষ্ট্য সংযুক্ত করা হয় যা আমাদেরকে ঈশ্বরের পরিচর্যা করার জন্য সক্ষম করে তোলে।

    অনেক সময় এই প্রশ্নটি দেখা দেয় যে, যাদের কথায়, কাজে, আত্মায়, ও চরিত্রে পরিবর্তনের কোন চিহ্ন পরিলক্ষিত হয় না, এমন বহু সংখ্যক মানুষ কেন তবে এ কথা দাবী করে যে, তারা ঈশ্বরের বাক্যে বিশ্বাস করে? কেন এমন অনেক মানুষ দেখা যায় যারা তাদের নিজস্ব লক্ষ্য ও পরিকল্পনার বিপক্ষে কোন কিছু সহ্য করতে পারে না, যাদের মধ্যে মন্দ ক্রোধ দেখা যায় এবং যাদের মুখের কথা অত্যন্ত কর্কশ, অশ্রাব্য, ও ইন্দ্রিয়পরায়ণ? তাদের জীবনেও দেখা যায় সেই একই ধরনের স্বার্থপরতা, নিজের প্রতি অন্ধ ভালবাসা, সেই একই ধরনের বদ মেজাজ ও কর্কশ আচরণ, যা দেখা যায় জগতের অধীনস্থমানুষের মধ্যে। তাদের মধ্যে সেই একই ধরনের গর্ব ও ঔদ্ধত্য দেখা যায়, মানবীয় প্রবৃত্তির প্রতি ঝোঁক দেখা যায়, সেই একই ধরনের চারিত্রিক বৈকল্য দেখা যায়, যা দেখা যায় সত্যের পরিচয় না পাওয়া মানুষের মধ্যে। এর কারণ তাদের মন পরিবর্তিত হয়নি। তারা তাদের অন্তরে সত্যের তাড়ী ধারণ করেনি। সে কারণে তাদের অন্তরও পরিবর্তিত হওয়ার কোন সুযোগ পায়নি। মন্দতার প্রতি তাদের স্বভাবগত প্রবণতাগুলোর রূপান্তর ঘটানো সম্ভব হয়নি। তাদের জীবনে খ্রীষ্টের অনুগ্রহের অনুপস্থিতি এবং তাদের চরিত্র পরিবর্তনের জন্য তাঁর ক্ষমতার প্রতি অবিশ্বাস চরমভাবে প্রকাশ পায়।COLBen 78.1

    “অতএব বিশ্বাস শ্রবণ হইতে এবং শ্রবণ খ্রীষ্টের বাক্য দ্বারা হয়।” রোমীয় ১০:১৭। চরিত্রের রূপান্তরে এই শাস্ত্রাংশ গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। খ্রীষ্ট এই প্রার্থনা করেছেন, “তাহাদিগকে সত্যে পবিত্র COLBen 78.2

    -------------------------------

    “সদাপ্রভু, তোমার বিধি-পথ আমাকে দেখাও, আর আমি শেষ পর্যন্ত তাহা পালন করিব। আমাকে বিবেচনা দেও, আমি তোমার ব্যবস্থা মানিব, সর্বান্তঃকরণে তাহা পালন করিব। তোমার আজ্ঞা-পথে আমাকে গমন করাও, কারণ তাহাতেই আমার প্রীতি। . . . তোমার দাসের পক্ষে সফল কর তোমার বচন, যাহা তোমার প্রতি ভয় সম্বন্ধীয়। দূর কর আমার দুর্নাম, যাহার বিষয় আমি ভয় করি, কেননা তোমার শাসনকলাপ উত্তম।” গীতসংহিতা ১১৯:৩৩-৩৯। কর; তোমার বাক্যই সত্যস্বরূপ।” যোহন ১৭:১৭। ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন ও মান্য করা হলে তা অন্তরে কাজ করে এবং প্রত্যেকটি অশুভ ও মন্দ কাজকে প্রতিহত করে। পবিত্র আত্মা আমাদের অন্তরে পাপের বিরুদ্ধে সচেতনতা জাগ্রত করেন এবং অন্তরে উত্থিত হওয়া বিশ্বাস খ্রীষ্টের প্রতি আমাদের ভালবাসার মধ্য দিয়ে কাজ করে, যা তাঁর নিজ প্রতিমূর্তিতে আমাদের দেহ, মন ও আত্মাকে রূপান্তরিত করে। তখনই কেবল ঈশ্বর আমাদেরকে তাঁর ইচ্ছা পূরণের জন্য ব্যবহার করতে পারেন। আমাদেরকে যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তা আমাদের ভেতর থেকে কাজ করে এবং সে সত্য আমাদেরকে ধারণ করতে দেয়া হয়েছে, তা নিজে থেকেই অন্যদের কাছে প্রকাশ পায়।

    ঈশ্বরের বাক্যের মাঝে নিহিত সত্য মানুষের সবচেয়ে বড় বাস্তব প্রয়োজন মিটিয়ে থাকে Ñ বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে আত্মার রূপান্তর। এই মহান আদর্শকে অনেক বেশি পবিত্র ও শুচি হিসেবে বিবেচনা করে দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ না ঘটানো অনুচিত হবে। এই সত্যের পরিধি স্বর্গ পর্যন্ত এবং তা অনন্তকাল স্থির থাকে। তথাপি এই সত্যের মূল লক্ষ্য মানবীয় অভিজ্ঞতাকে প্রভাবিত করা, তা মানুষের জীবনের বড় ও ছোট সমস্ত বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।COLBen 79.1

    অন্তরে ধারণ করার পর এই সত্যের তাড়ী সকল মানবীয় কামনাবাসনাকে প্রশমিত করে, চিন্তাকে পরিশুদ্ধ করে এবং মুখের কথা সুমিষ্ট করে। এই সত্য মনকে করে সঞ্জীবিত ও আত্মাকে করে উজ্জীবিত। অনুভূতি ও ভালবাসার সক্ষমতাকে তা আরও বাড়িয়ে তোলে।COLBen 79.2

    এই আদর্শ যাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে, সেই ব্যক্তিকে এই পৃথিবী এক রহস্য হিসেবে বিবেচনা করে। স্বার্থপর ও অর্থলোলুপ মানুষ কেবল তারCOLBen 79.3

    -------------------------------

    “যুবক কেমন করিয়া নিজ পথ বিশুদ্ধ করিবে? তোমার বাক্যানুসারে সাবধান হইয়াই করিবে। আমি সর্বান্তঃকরণে তোমার অন্বেষণ করিয়াছি, আমাকে তোমার আজ্ঞা-পথ ছাড়িয়া ঘুরিয়া বেড়াইতে দিও না। তোমার বচন আমি হৃদয়মধ্যে সঞ্চয় করিয়াছি, যেন তোমার বিরুদ্ধে পাপ না করি। . . .আমি তোমার নির্দেশমালা ধ্যান করিব, তোমার সকল পথের প্রতি দৃষ্টি রাখিব। আমি তোমার বিধিকলাপে হর্ষিত হইব, তোমার বাক্য ভুলিয়া যাইব না।” গীতসংহিতা ১১৯:৯১৬। নিজের আরাম-আয়েশ নিশ্চিত করার জন্য এই পৃথিবীর ধন-সম্পদ, সম্মান, ও বিলাসিতার পেছনে ছুটে বেড়ায়। সে তার কর্মফলের কারণে অনন্ত জীবন হারায়। কিন্তু যারা খ্রীষ্টকে অনুসরণ করে তাদের জীবনে এই সমস্ত পার্থিব ঐশ্বর্যের বাহুল্য দেখা দেবে না। কারণ খ্রীষ্টের জন্য তাঁর অনুসারীরা নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করেন এবং নিজ স্বার্থকে অস্বীকার করেন, যেন খ্রীষ্টের কাছ থেকে বিচ্যুত আত্মাগণ আবার তাঁর সাথে একত্রিত হতে পারে, এবং এই আশাহীন পৃথিবী যেন আশা খুঁজে পেতে পারে। এ ধরনের মানুষকে পৃথিবী বুঝতে পারে না; কারণ তার দৃষ্টিপথে আছে শুধুই অনন্ত জীবনের বাস্তবতা। খ্রীষ্টের ভালবাসা ও তার পরিত্রাণ দানকারী শক্তি তার অন্তরে নিহিত রয়েছে। এই ভালবাসা সমস্ত মানবীয় প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে ও এই পৃথিবীর সমস্ত মন্দ শক্তিকে পরাহত করে।

    সারা পৃথিবী জোড়া এই মানবীয় পরিবারের সাথে আমাদের সম্পর্কের মাঝে পবিত্রতা বজায় রাখার জন্য ঈশ্বরের বাক্য এক চমৎকার ভূমিকা পালন করেন। সত্যের তাড়ী কখনো বিপক্ষতার আত্মা, উচ্চাকাক্সক্ষার প্রতি মোহ, এবং নিজেকে সর্বশ্রেষ্ঠ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার উচ্চাভিলাসকে প্রশ্রয় দেয় না। সত্যিকার স্বর্গজাত ভালবাসা কখনো স্বার্থপর ও পরিবর্তনশীল হয় না। তা কোন মানুষের প্রশংসার উপর নির্ভর করে না। যার অন্তরে সদাপ্রভুর ভালবাসা থাকে, তার ভেতর থেকে ঈশ্বরের প্রতি ও যাদের জন্য যীশু মৃত্যু বরণ করেছিলেন, সেই সকল মানুষের জন্য ভালবাসা অনবরত প্রবাহিত হতে থাকে। খ্রীষ্টের অনুসারীরা কখনো নিজেকে জাহির করার চেষ্টা করেন না। অন্যরা তাকে ভালবাসে ও সম্মান করে, কিংবা তার গুণের প্রশংসা করে বলে যে তিনিও তাদের ভালবাসেন তা নয়, বরং তারা খ্রীষ্টের ক্রীত অধিকার বলেই তিনি তাদের ভালবাসেন। যদি তার উদ্দেশ্য, কথা বা কাজ মানুষ ভুল বোঝে বা ভুল ব্যাখ্যা করে, তাহলে তিনি দুঃখার্ত হন না, বরং আরও দ্বিগুণ উৎসাহে তিনি তার কাজে নিজেকে নিযুক্ত করেন। তিনি দয়ালু ও মানুষের জন্য চিন্তা করেন, তিনি তার কথায় ও কাজে নম্র। তথাপি তিনি অত্যন্ত আশাবাদী এবং সব সময় তিনি ঈশ্বরের দয়া ও ভালবাসার উপরে নির্ভর করেন।COLBen 80.1

    প্রেরিত আমাদেরকে উৎসাহ দিয়ে বলেছেন, “কিন্তু যিনি তোমাদিগকে আহ্বান করিয়াছেন, সেই পবিত্রতমের ন্যায় আপনারাও সমস্ত আচার ব্যবহারে পবিত্র হও; কেননা লেখা আছে, ‘‘তোমরা পবিত্র হইবে, কারণ আমি পবিত্র”। ১ পিতর ১:১৫, ১৬। খ্রীষ্টের অনুগ্রহ আমাদের আবেগ ও কণ্ঠকে নিয়ন্ত্রণ করবে। ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের নম্রতা, ও ভালবাসাপূর্ণ আচরণ, এবং সহানুভূতিশীল বাক্যের মধ্য দিয়ে এর কাজ আমরা দেখতে পাব। আমাদের গৃহে একজন স্বর্গদূতের উপস্থিতি আমরা অনুভব করতে পারব। জীবন যেন এক সুমিষ্ট সুবাস ছড়াবে, যা ঈশ্বরের কাছে এক সুগন্ধি উৎসর্গ হয়ে উৎসারিত হবে। দয়া, নম্রতা, ধৈর্য ও দীর্ঘসহিষ্ণুতার মধ্য দিয়ে ভালবাসা প্রকাশিত হয়।COLBen 80.2

    মানুষের আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক রূপ পরিবর্তিত হয়েছে। যারা খ্রীষ্টকে ভালবাসেন এবং তাঁর আদেশ মান্য করেন তাদের অন্তরে খ্রীষ্ট সব সময় অবস্থান করেন বলেই তাদের চেহারায় এক উজ্জ্বল আলো পরিলক্ষিত হয়। সেখানে প্রকাশ পায় ঈশ্বরীয় সত্য। তাদের অন্তরে স্বর্গের প্রতিকৃতি প্রকাশিত হয়। মানুষের প্রতি ভালবাসা ও স্বভাবগত নম্রতা হয়ে দাঁড়ায় তাদের সহজাত আচরণ।COLBen 81.1

    সত্যের তাড়ী একজন মানুষের সমগ্র সত্তার পরিবর্তন সাধন করে, তার সমস্ত ত্রুটি পরিশুদ্ধ করে, কর্কশকে মৃদু করে তোলে, স্বার্থপরকে করে দয়ালু। এই সত্যের মধ্য দিয়ে অপবিত্র মানুষ পরিষ্কৃত হয়, মেষশাবকের রক্তে ধৌত ও পবিত্র হয়। এর জীবন দানকারী শক্তির মধ্য দিয়ে প্রত্যেক মানুষের অন্তরে ও আত্মায় একতাবদ্ধ হয়ে স্বর্গীয় জীবন যাপনের প্রেরণা সঞ্চারিত হয়। মানুষ তার মানবীয় স্বভাবের পাশাপাশি স্বর্গীয় সত্ত্বার অংশীদার হয়ে ওঠে। খ্রীষ্ট তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের যথাযোগ্য সম্মান ও মর্যাদা লাভ করেন এবং তাঁর চরিত্রের পূর্ণতা সাধন হয়। এই সমস্ত পরিবর্তন ঘটার কারণে স্বর্গের দূতগণ আনন্দ সঙ্গীতে মগ্ন হন এবং পৃথিবীতে স্বর্গীয় বৈশিষ্ট্য ধারণকৃত আত্মাদের দেখে ঈশ্বর ও খ্রীষ্ট উল্লসিত হন।COLBen 81.2

    -------------------------------

    “তোমার বাক্য আমার চরণের প্রদীপ, আমার পথের আলোক। আমি শপথ করিয়াছি, স্থির করিয়াছি, তোমার ধর্মময় শাসন সকল পালন করিব। . . . তোমার সাক্ষ্যকলাপ আমি চিরতরে অধিকার করিয়াছি, কারণ সেই সকল আমার চিত্তের হর্ষজনক। আমি তোমার বিধিকলাপ পালন করিতে মনকে লওয়াইয়াছি, চিরকালের জন্য, শেষ পর্যন্ত।” গীতসংহিতা ১১৯:১০৫-১১২।

    Larger font
    Smaller font
    Copy
    Print
    Contents