এই ধনের মূল্য
ত্রাণকর্তা দেখেছিলেন যে, মানুষ লোভের অতল গহ্বরে ক্রমেই তলিয়ে যাচ্ছে এবং তারা অনন্ত জীবনের বাস্তবতাকে উপলব্ধি করতে পারছে না। তিনি এই ত্রুটি সংশোধনের সঙ্কল্প গ্রহণ করলেন। আত্মাকে যে অশুভ শক্তি অবশ করে রেখেছিল, তা থেকে তিনি তাদের মুক্ত করতে চাইলেন। তিনি তাঁর কণ্ঠ উচ্চকিত করে বলে উঠলেন, “মনুষ্য যদি সমুদয় জগৎ লাভ করিয়া আপন প্রাণ হারায়, তবে তাহার কি লাভ হইবে? কিম্বা মনুষ্য আপন প্রাণের পরিবর্তে কি দিবে?” মথি ১৬:২৬। অধঃপতিত মানুষের সামনে তিনি উপস্থাপন করেছেন সেই মহত্তর জগতকে, যা তারা তাদের দৃষ্টিপথ থেকে হারিয়ে ফেলেছিল, যেন তারা আবার তাদের অনন্তকালীন গন্তব্যের বাস্তবতাকে উপলব্ধি করতে পারে। তিনি তাদেরকে সামনে উন্মোচিত করেছিলেন অসীম সম্ভাবনার দ্বারে নিয়ে গিয়েছিলেন, যা ঈশ্বরের অবর্ণনীয় মহিমায় তাদেরকে ভাসিয়ে দিয়েছিল এবং তিনি তাদেরকে সেই ধন দেখিয়েছিলেন।COLBen 85.4
এই ধনের মূল্য সোনা বা রূপার চেয়েও বেশি। পৃথিবীর ভূগর্ভস্থ খনিতে যে সমস্ত ধন রত্ন পাওয়া যায় তার সাথে এর তুলনা চলে না।COLBen 86.1
“জলধি বলে, তাহা আমাতে নাই;
সমুদ্র বলে, তাহা আমার কাছে নাই।
তাহা উত্তম সুবর্ণ দ্বারাও প্রাপ্ত হওয়া যায় না,
তাহার মূল্য বলিয়া রৌপ্যও তৌল করা যায় না।
ওফীরের সুবর্ণ তাহার সমতুল্য নয়,
বহুমূল্য গোমেদক ও নীলকান্তমণিও নয়।
স্বর্ণ ও কাচ তাহার সমান হইতে পারে না,
তাহার পরিবর্তে কাঞ্চনের পাত্র দত্ত হইবে না।
তাহার কাছে প্রবাল ও স্ফটিকের নাম করা যায় না,
পদ্মরাগমণির মূল্য অপেক্ষাও প্রজ্ঞার মূল্য অধিক।”COLBen 86.2
ইয়োব ২৮:১৪-১৮।
এই সম্পদই আমরা পাই পবিত্র শাস্ত্র থেকে। বাইবেলই ঈশ্বরের মহা শিক্ষা সম্বলিত পুস্তক, তাঁর মত শিক্ষক। সমস্ত বিজ্ঞানের প্রকৃত ভিত্তি নিহিত রয়েছে বাইবেলে। ঈশ্বরের বাক্য অন্বেষণ করলে সব ধরনের জ্ঞানের শাখা প্রশাখার সন্ধান মিলবে। সর্বোপরি এতে রয়েছে, সকল বিজ্ঞানের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞান, পরিত্রাণের জ্ঞান। বাইবেল হচ্ছে খ্রীষ্টের সেই ধনের খনি, যা অন্বেষণ করেও খুঁজে পাওয়া যায় না।COLBen 86.3
সত্যিকার উচ্চ শিক্ষা লাভ করা সম্ভব ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন ও তার প্রতি অনুগত থাকার মধ্য দিয়ে। কিন্তু যখন ঈশ্বরের বাক্যকে সরিয়ে রেখে এমন সব পুস্তক পাঠ করা হয় যা আমাদেরকে ঈশ্বরের রাজ্য ও স্বর্গের পথে চালিত করে না, তখন সেখানে শিক্ষার নামে প্রভুর নাম করা হয়।COLBen 86.4
প্রকৃতির মাঝে অপূর্ব সত্য নিহিত রয়েছে। এই পৃথিবী, সমুদ্র, ও আকাশ ঐশ্বরিক সত্যে পরিপূর্ণ। এরাই আমাদের শিক্ষক। প্রকৃতি আমাদেরকে তার সম্ভারের মধ্য দিয়ে ঐশ্বরিক জ্ঞান ও চিরন্তন সত্যের বিষয়ে শিক্ষা দেয়। কিন্তু পতিত মানুষ তা অনুধাবন করতে পারবে না। পাপ তার দৃষ্টিকে করে রাখে আচ্ছন্ন এবং সে এই জ্ঞান উপলব্ধি করলেও প্রকৃতিকে ঈশ্বরের উপরে স্থান দেয়। যারা ঈশ্বরের বাক্যকে প্রত্যাখ্যান করেছে, তাদের অন্তরে সঠিক শিক্ষা কখনো কাজ করে না। প্রকৃতি প্রদত্ত শিক্ষাকে তারা এতটাই বিকৃত করে তোলে যে, তা সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে আমাদের অন্তরকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়।COLBen 87.1
অনেকেই মনে করেন, ঐশ্বরিক শিক্ষকের জ্ঞানের চেয়ে মানবীয় জ্ঞান আরও অনেক উচ্চ এবং ঈশ্বরের শিক্ষা সম্বলিত পুস্তককে তারা প্রাচীন ও যুগের সাথে অনুপযোগী, অচল, ও অনাকর্ষণীয় বলে মনে করে। কিন্তু যারা পবিত্র আত্মার দ্বারা নিজেদেরকে পরিপূর্ণ করবে তাদের মধ্যে এই মনোভাবটি দেখা দেবে না। তারা এই অমূল্য সম্পদকে চিহ্নিত করতে পারে এবং এই পৃথিবীতে তাদের যা কিছু আছে, তা বিক্রি করে দিয়ে তারা এই সম্পদ ক্রয় করার জন্য চেষ্টা করবে। জাগতিক ভাবে বিখ্যাত লেখকদের বই না পড়ে তারা সেই বাক্য পাঠ করেন, যা রচনা করেছেন নিখিল বিশ্বের সর্বোত্তম রচয়িতা ও সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক, যিনি আমাদের জন্য তাঁর জীবন দিয়েছেন, যেন তাঁর মধ্য দিয়ে আমরা অনন্ত জীবন লাভ করতে পারি। COLBen 87.2