২১—ইলীশায়ের শেষ পরিচর্যা কার্য
আহাব রাজার শাসনামলে ভাববাদী পদ অলংকৃত করে ইলীশায় ইস্রায়েল রাজ্যে অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করলেন। সুরীয় আমলে রাজত্বকালে বিচারের উপর বিচার ইস্রায়েল সন্তানদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটায়, যিনি ভ্রষ্ট জাতির ঐশ্বরিক শাস্তি দানের হাতিয়ার রূপে অভিষিক্ত হয়েছিলেন। যেহু কর্তৃক সংস্কারের দৃঢ় পদক্ষেপের ফলে আহাবের কুলের সকলেই হত হল । PKBeng 211.1
সুরীয়দের সাথে অবিরাম যুদ্ধে যেহুর উত্তরশুরি যিহোয়াশ যদনের পূর্বে কয়েকটি নগর হারাল। কোন এক সময়ে মনে হয়েছিল, শরীয়রা গোটা সিরিয়া রাজ্য বশে আনবে। কিন্তু এলিয় কর্তৃক সংস্কার কার্য আরম্ভ হয়েছিল এবং ইলীশায়ই তা চালু রেখেছিলেন ফলে অনেকে ঈশ্বরের অন্বেষণে ব্রতী হল। বালের বেদী পরিত্যাক্ত হল, এবং ধীরে ধীরে কিন্তু নিশ্চিতরূপে, যারা সর্বান্তঃকরণে ঈশ্বরের সেবা মনোনয়ন করল, তাদের জীবনে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য পূর্ণতা লাভ হল । PKBeng 211.2
বিপথগামী ইস্রায়েলের জন্য ঈশ্বরের প্রেম হেতু তিনি তাদের শাস্তি প্রদানের জন্য সূরীয়দেরকে অনুমতি দিলেন। যাদের নৈতিক দুর্বলতা ছিল, তাদের জন্য তাঁর সমবেদনা প্রযুক্ত, ঈশ্বর যেহূকে মহীয়ান করলেন, ঈষেবলকে এবং আহাবের কুলের সকলকে হত্যা করার জন্য। আরও একবার, করুণাপূর্ণ দূরদর্শীতার মাধ্যমে, বালের পুরোহিতগণ এবং অষ্টারোতকে বের করা হল এবং তাদের বেদী সমূহ উচ্ছেদ করা হল । ঈশ্বর তাঁর জ্ঞান পূর্ব হতে দেখতে পেলেন যে, যদি প্রলোভন সরিয়ে নেয়া হয়, তবে কেউ কেউ পৌত্তলিকতা পরিহার করে স্বর্গের দিকে মুখ ফেরাবে, এবং এই কারণ তিনি তাদের ওপরে দুর্দশার পর দুর্দশা আসার অনুমতি দিবেন। তাঁর বিচার ছিল অনুগ্রহ মিশ্রিত; এবং যখন তার উদ্দেশ্য পূর্ণ হল, তিনি তাদের দয়ায় জোয়ার ফিরিয়ে দিলেন যারা তাঁর অন্বেষণ করতে শিক্ষা করল । PKBeng 211.3
যখন ভাল ও মন্দের প্রভাব কর্তৃত্ব বিস্তারের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল, এবং শয়তান ও আহাব এবং ঈষেবলের রাজত্বকাল ব্যাপী সে যে ধ্বংস সম্পন্ন করার জন্য তার সর্বচেষ্টা প্রয়োগ করেছিল, তখন ইলীশায় তার সাক্ষ্য বহন করে যেতে লাগলেন। তিনি বাধার সম্মুখীন হয়েছেন, তথাপি কেউই তার বাক্য রোধ করতে পারেনি। রাজ্যের মধ্য দিয়ে তিনি শ্রদ্ধা ও সমাদর লাভ করেছেন। অনেকেই পরামর্শ গ্রহণের জন্য তার কাছে আসত। ঈষেবল তখনও জীবিত ছিলেন, ইস্রায়েলের রাজা যোরাম, তার পরামর্শ চেয়েছেন, এবং একদা, দম্মেশকে তার সাথে সূরীয় দেশের রাজা বিনহদদ-এর কাছ থেকে বার্তাবাহক এসে তার সাথে সাক্ষাৎ করে, যারা জানতে চেয়েছিল তার ব্যাধির কারণ, তার মৃত্যু হবে কি-না। ভাববাদী বিশ্বস্তভাবে সকলের কাছে সাক্ষ্য বহন করতেন, এমন সময় এল যখন সর্বদিকে লোকেরা সত্য ভ্রষ্ট হচ্ছিল এবং অধিকাংশ লোক প্রকাশ্যে স্বর্গের বিরোধীতা করছিল । PKBeng 212.1
আর ঈশ্বর কখনও তাঁর মনোনীত বার্তাবাহকদেরকে পরিত্যাগ করেননি। একবার একটি সূরীয় আক্রমণের সময়, সূরীয়ের রাজা ইলীশায়কে হত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন কেননা তিনি ইস্রায়েলের রাজাকে শত্রুর পরিকল্পনা জ্ঞাত করছিলেন। শরীয়ের রাজা তার ভৃত্যদের সাথে পরামর্শ করে বললেন, “অমুক অমুক স্থানে আমার শিবির করা হইবে।” এই পরিকল্পনা সদাপ্রভু কর্তৃক ইলীশায়ের কাছে প্রকাশিত হয়েছিল, যিনি “ইস্রায়েলের রাজার নিকট বলিয়া পাঠাইলেন, ‘সাবধান’ অমুক স্থান উপেক্ষা করিবেন না, কেননা সেখানে অরামীয়েরা নামিয়া আসিতেছে। তাহাতে ঈশ্বরের লোক যে স্থানের বিষয় বলিয়া তাহাকে সাবধান করিয়া দিতেন সেই স্থানে ইস্রায়েল রাজা সৈন্য পাঠাইয়া আপনাকে রক্ষা করিতেন; কেবল দুই একবার নয়।” PKBeng 212.2
“এই বিষয়ের জন্য অরামের রাজার হৃদয় উদ্বিগ্ন হইল, তিনি আপন দাসগণকে ডাকিয়া বলিলেন, আমাদের মধ্যে কে ইস্রায়েলের রাজার পক্ষীয়, তাহা কি তোমরা আমাকে বলিবে না। তখন তাহার দাসগণের মধ্যে এক জন বলিল, ‘হে আমার প্রভু মহারাজ, কেহ নয়; কিন্তু আপনি আপন শয়নাগারে যে সকল কথা বলেন, সে সকল ইস্রায়েলস্থ ভাববাদী ইলীশায় ইস্রায়েলের রাজাকে জ্ঞাত করেন।” PKBeng 213.1
ভাববাদীকে বধ করার জন্য আরাম রাজ আদেশ করলেন, “তোমরা গিয়া দেখ, সে কোথায় ; আমি লোক পাঠাইয়া তাহাকে আনাইব।” ভাববাদী দোথনে ছিলেন, আর একথা জানতে পেরে, রাজা “অনেক অশ্ব, রথ ও এক বৃহৎ সৈন্যদল সেখানে পাঠাইলেন। তাহারা রাত্রিতে আসিয়া সেই নগর বেষ্টন করিল । ” PKBeng 213.2
ইলীশায়ের ভৃত্যগণ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে তাকে খবর দিল। “হায়, হায়, হে প্ৰভু, আমরা কি করিব?” “তাহারা কি করিবে?” উত্তরে ভাববাদী বললেন, “ভয় করিও না, উহাদের সঙ্গীগণ অপেক্ষা আমাদের সঙ্গী অধিক।” অতঃপর চাকর জানতে পারল যখন “ইলীশায় প্রার্থনা করিয়া বলিলেন, ‘হে প্রভু বিনয় করি; তাহার চক্ষু খুলিয়া দেও, যেন এ দেখিতে পায়।’ তখন সদাপ্রভু সেই যুবকটির চক্ষু খুলিয়া দিলেন; এবং সে দেখিতে পাইল, আর দেখ, ইলীশায়ের চারিদিকে অগ্নিময় অশ্বে ও রথে পর্বত পরিপূর্ণ।” ঈশ্বরের দাস এবং শত্রুবাহিনীর মধ্যে স্বর্গীয় দূতবাহিনী ঘিরে রয়েছে। তারা মহা শক্তিতে নেমে এসেছেন, বিনষ্ট করার জন্য নয়, ভাক্ত ও শ্রদ্ধা আদায় করার জন্য নয়, সদাপ্রভুর দুর্বল এবং অসহায় ব্যক্তিবর্গকে বেষ্টন করে রাখবার জন্য ও পরিচর্যা করার জন্য । PKBeng 213.3
যখন ঈশ্বরের লোকবৃন্দ বিপদসংকুল স্থানে আনীত হয় এবং প্রকৃত পক্ষে তাদের জন্য উদ্ধার পাবার কোন পথ নেই; তখন সদাপ্রভুই হবেন তাদের ভরসা। যখন অরামীয় সৈন্যবাহিনী সাহসিকতার সাথে অগ্রসর হল, অদৃশ্য স্বৰ্গীয় বাহিনী উপেক্ষা করল, তখন “ইলীশায় সদাপ্রভুর নিকট প্রার্থনা করিয়া বলিলেন, ‘বিনয় করি, এই দলকে অন্ধতায় আহত করা । তাহাতে তিনি ইলীশায়ের বাক্যানুসারে, তাহাদিগকে অন্ধতায় আহত করিলেন। পরে ইলীশায় তাহাদিগকে বলিলেন, ‘এ সে পথ নয়, এবং এ সেই নগর নয়, তোমরা আমার পশ্চাতে পশ্চাতে আইস, যে ব্যক্তির অন্বেষণ করিতেছ, তাহার কাছে আমি তোমাদিগকে লইয়া যাইব’। আর তিনি তাহদিগকে শমরিয়ায় লইয়া গেলেন । তাহারা শমরিয়ায় প্রবিষ্ট হইলে পর ইলীশায় বলিলেন, “হে সদাপ্রভু, তাহাদের চক্ষু খুলিয়া দেও, যেন উহারা দেখিতে পায়’। তখন সদাপ্রভু তাহাদের চক্ষু খুলিয়া দিলেন, এবং তাহারা দেখিতে পাইল, আর দেখ, তাহারা শমরিয়ার মধ্যে উপস্থিত । আর ইস্রায়েল রাজা তাহাদিগকে দেখিয়া ইলীশায়কে বলিলেন, ‘হে পিতা, মারিব? মারিব’? ইলীশায় বলিলেন, ‘মারিও না। তুমি যাহাদিগকে খড়গ ও ধনুর দ্বারা বন্দি কর, তাহাদিগকে কি মারিয়া থাক? উহাদের সম্মুখে রুটী ও জল রাখ; উহারা ভোজন পান করিয়া উহাদের প্রভুর নিকট চলিয়া যাউক। তখন তিনি তাহাদের জন্য মহাভোজ প্রস্তুত করিলেন, এবং তাহারা ভোজন। পান করিলে তাহাদিগকে বিদায় করিলেন; তাহারা আপন প্রভুর নিকট গেল।” ২ রাজাবলি ৬। PKBeng 213.4
এর পরে কিছু কালের জন্য ইস্রায়েল অরামীয়দের আক্রমণ হতে মুক্ত ছিল। কিন্তু পরে এক জন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ রাজা, হসায়েলের শক্তিশালী পরিচালনাধীন, অরামীয় সৈন্যগণ শমরিয়া ঘিরে ফেলল এবং হস্তগত করল। এই নগর আক্রমণের সময় ব্যাপী ইস্রায়েল যেরূপ সংকটের সম্মুখীন হয়েছিল, এরূপ কখনও হয়নি। পিতৃগণের অপরাধের প্রতিফল পুত্রগণ এবং প্রপৌত্রগণ ভোগ করে। দীর্ঘ স্থায়ী দুর্ভিক্ষের আতঙ্কজনিত কম্পন ইস্রায়েলের রাজাকে ভীষণ হতাশায় ফেলে দিল, যখন ইলীশায় পরদিনই মুক্তির ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন । PKBeng 214.1
পরদিন ভোরে যখন, সদাপ্রভু “অরামিয়দের সৈন্যদলকে রথের শব্দ শ্রবণ করিয়েছিলেন; আর তারা ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে পড়িল ।” তাই তারা সন্ধ্যাকালে উঠে পলায়ন করেছিল; আপনাদের শিবির অর্থাৎ তাম্বু, অশ্ব ও গর্দভ সকল যেমন ছিল, যেখানে প্রচুর খাদ্য সামগ্রী ছিল। তারা প্রাণ রক্ষার্থে পলায়ন করল; যদন নদী পার না হওয়া পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করল না। PKBeng 214.2
পলায়নের রাতে, চারজন কুষ্ঠী শিবিরের প্রান্তভাগে প্রচন্ড ক্ষুধার তাড়নায়, এসে অরামীয়দের তাম্বুর মধ্যে প্রবেশ করল, যদি অবরোধকারীদের দয়ায় কিছু খাদ্য সামগ্রী পেতে পারে। শিবিরে প্রবেশ করে তারা অবাক হল, “সেখানে কেউ নেই।” কেউ তাদেরকে হাঁ ও বলে না, না-ও বলে না; তারা এক তাম্বুর মধ্যে গিয়ে ভোজন পান করল এবং তথা হতে রৌপ্য, স্বর্ণ ও বস্ত্র নিয়ে গিয়ে লুকিয়ে রাখল, পরে পুনঃরায় এসে আর এক তাম্বুর মধ্যে গেল, এবং তথা হতেও দ্রব্যাদি নিয়ে লুকিয়ে রাখল। পরে তারা পরস্পর বলল, “আমাদের একাজ ভাল নয়; অদ্য সুসংবাদের দিন, কিন্তু আমরা চুপ করিয়া আছি।” অতি সত্ত্বর তারা এই সুখবর নিয়ে নগরে ফিরে গেল । PKBeng 215.1
লুট দ্রব্য ছিল প্রচুর; সুতরাং দ্রব্যাদি এতই ছিল যে, ঐ দিন “শেকলে দুই পসুরী যব সৃজী, এবং শেকলে দুই পসুরী যব বিক্রী হইল,” যেমনি ইলীশায় কর্তৃক পূর্বের দিন বলা হয়েছিল। আরও সদাপ্রভুর বাক্যানুসারে ইস্রায়েলে একবার তাঁর ভাববাদীর মাধ্যমে পৌত্তলিকদের মধ্যে ঈশ্বরের নাম উন্নীত হল । ২রাজাবলি ৭:৫-১৬। PKBeng 215.2
এরূপে ঈশ্বরের লোক বছরের পর বছর পরিশ্রম করতে লাগলেন, বিশ্বস্ততার পরিচর্যার মাধ্যমে লোকদের সান্নিধ্যে আসতে লাগলেন, এবং সংকটের সময়ে একজন জ্ঞানবান পরামর্শ দাতারূপে রাজার পাশে দন্ডায়মান রইলেন। শাসনকর্তা এবং প্রজাগণের দীর্ঘ বছর সমূহের প্রতিমা উপাসনা, সৎপথ ত্যাগ দ্বারা, তাদের ধংসাত্মক কার্য সাধন করেছেন, ধর্মদ্রোহিতার কৃষ্ণছায়া তখনও প্রতিটি স্থানে দৃষ্ট হত, তথাপি নানা স্থানে বিক্ষিপ্ত লোকজন ছিল যারা দৃঢ়তার সাথে বালের সামনে জানু পাততে অস্বীকার করেছে। ইলীশায় যেমন তার সংস্কার কার্য করে যেতে লাগলেন, অনেককে পৌত্তলিকতার মধ্য হতে পুনঃরায় দাবি করা হল; এবং এরা সত্য ঈশ্বরের সেবায় আনন্দ করতে শিখল। ভাববাদী ঐশ্বরিক অনুগ্রহের অলৌকিক কার্য দ্বারা উল্লাসিত হলেন, এবং যারা অন্তরে সৎ, তাদের সকলের কাছে পৌছাবার জন্য এক মহান বাসনা দ্বারা অনুপ্রাণিত হল। তিনি যেখানেই থাকতেন, সেখানেই তিনি একজন ধার্মিকতার শিক্ষক হবার চেষ্টা করেছেন । PKBeng 215.3
একটি মানব দৃষ্টিভঙ্গী হতে, জাতির আত্মিক উদ্ভবের জন্য দৃশ্যটি ছিল; যারা পৃথিবীর অন্ধকারময় স্থানের কাজ করছেন, আজ ঈশ্বরের সেই দাসগণের সামনে দৃশ্যটি নিরাশাপূর্ণ। কিন্তু খ্রীষ্টের মণ্ডলী সত্য ঘোষণার জন্য ঈশ্বরের মাধ্যমে একটি বিশেষ কাজ করার জন্য ঈশ্বরের কর্তৃত্বকে শক্তিমন্ত করা হয়েছে; এবং যদি সে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত হয়, তাঁর আজ্ঞাসমূহের প্রতি আজ্ঞাবহ হয়, তাহলে তার মধ্যে ঐশ্বরিক শক্তি পরমোৎকর্ষে অবস্থান করবে। যদি সে তার আনুগত্যের প্রতি বিশ্বস্ত থাকে, তাহলে এমন কোন শক্তি নেই যে তার বিরুদ্ধে দাড়াতে পারে। তুষ যেমন ঘূর্ণিবাত্যা প্রতিরোধ করতে পারে না তদ্রূপ শত্রু শক্তি তাকে আর সম্পূর্ণরূপে নিমজ্জিত করতে পারবে না। জগতের প্রতি সর্বপ্রকার আনুগত্য হতে দূরে থেকে যদি সে খ্রীষ্টের ধার্মিকতার বসন পরিধান করে, তবে মণ্ডলীর সামনে একটি উজ্জ্বল প্রভাত, গৌরবময় দিন রয়েছে। PKBeng 216.1
যারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে, তার সেই বিশ্বস্ত লোকদের তিনি আহ্বান করছেন যেন তারা অবিশ্বাসী এবং আশাহীনদের উৎসাহের বাণী প্রচার করে। ঈশ্বরের কাছে, জীবন্ত ঈশ্বরের কাছে শক্তি অন্বেষণ করুন। তাঁর শক্তি, এবং পরিত্রাণ করতে তাঁর ইচ্ছার প্রতি একটি অটল এবং বিনম্র বিশ্বাস প্রদর্শন করুন। যখন আমরা বিশ্বাসে তাঁর শক্তি ধারণ করি, তিনি অতীব অসহায়, নিরুৎসাহ সূচক দৃশ্য পরিবর্তন করবেন, আশ্চর্য উপায়ে পরিবর্তন করবেন। তিনি তাঁর নামের গৌরবের জন্যই তা করবেন। PKBeng 216.2
এত দীর্ঘদিন যাবৎ ইলীশায় ইস্রায়েলে রাজ্যের মধ্য দিয়ে একস্থান হতে অন্য স্থানে ভ্রমণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন, তিনি ভাববাদীদের স্কুলের উন্নতিতে একটি সক্রিয় আগ্রহ সহকারে কাজ করেছিলেন। তিনি যেখানেই ছিলেন, ঈশ্বর তার সহবর্তী ছিলেন, তাকে বাক্য দিয়েছেন, এবং অলৌকিক কাজ করার ক্ষমতা প্রদান করেছেন। একবার “শিষ্য ভাববাদীগণ ইলীশায়কে বলিল, ‘দেখুন, আমরা আপনার সাক্ষাতে যে স্থানে বাস করিতেছি, তাহা আমাদের পক্ষে সংকীর্ণ। অনুমতি করুন, আমরা যদনে গিয়া প্রত্যেক জন তথা হইতে এক একখানি কড়িকাঠ আনিয়া আমাদের জন্য সেইখানে বাসস্থান প্রস্তুত করি।” ২ রাজাবলি ৬:১,২। ইলীশায় তাদের সাথে যদনে গেলেন, তার উপস্থিতি দ্বারা তাদের উৎসাহ প্রদান করলেন, তাদের নির্দেশ প্রদান করলেন, এবং এমনকি তাদের কাজে সাহায্য করার লক্ষ্যে একটি অলৌকিক কাজ সাধন করলেন। “একজন কড়িকাঠ ছেদন করিতেছিল, এমন সময়ে কুড়ালির ফলা জলে পড়িয়া গেল: তাহাতে সে কাঁদিয়া বলিল, ‘হায়, হায়! প্রভু; আমি ত উহা ধার করিয়া আনিয়াছিলাম’। তখন ঈশ্বরের লোক জিজ্ঞাসা করিলেন, “তাহা কোথায় পড়িয়াছে’? সে তাঁহাকে সেই স্থান দেখাইল । তখন ইলীশায় একখানি কাঠ কাটিয়া সেই স্থানে ফেলিয়া লৌহখানি ভাসাইয়া উঠাইলেন। আর তিনি বলিলেন, “উহা তুলিয়া লও’। তাহাতে হাত বাড়াইয়া তাহা লইল।” ৫-৭ পদ । PKBeng 216.3
তাঁর পরিচর্যা কাজ এতই সার্থক ছিল এবং প্রভাব এত ব্যাপক ছিল যে, যখন তিনি তার মৃত্যু শয্যায় হাত রাখলেন, অল্প বয়ষ্ক রাজা যোয়াশ, একজন পৌত্তলিক, ঈশ্বরের প্রতি যার সামান্যই শ্রদ্ধা ছিল, ভাববাদীকে ইস্রায়েলের একজন পিতা বলে চিনতে পারলেন, এবং উপলব্ধি করতে পারলেন যে, তাদের মধ্যে তাঁর উপস্থিতি ছিল, সংকটের সময়ে অশ্ব ও রথসহ একদল সৈন্য অপেক্ষা অধিক মূল্যবান। আমরা শাস্ত্রে এরূপ পাঠ করি: “ইলীশায় পীড়িত হইলেন, সেই পীড়াতেই তাহার মৃত্যু হয়; আর ইস্রায়েল রাজ যোয়াশ তাঁহার নিকটে গিয়া তাঁহার মুখের উপরে (হেট হইয়া) রোদন করিয়া বলিলেন, ‘হে আমার পিতা, হে আমার পিতা, ইস্রায়েলের রথসমূহ ও অশ্বারোহিগণ।” ২ রাজাবলি ১৩:১৪ । PKBeng 217.1
সাহায্যের প্রয়োজনে অনেক অস্থিরতাপূর্ণ একজন ব্যক্তির কাছে, ভাববাদী একজন জ্ঞানী, দরদী পিতার ভূমিকা পালন করেছেন। আর এই জরুরী অবস্থায়, তিনি তার সামনে এই ঈশ্বর বিহীন যুবকের কাছ থেকে দূরে চলে যাননি, যে পদের অযোগ্য ছিলেন, সেই পদই তিনি অধিকার করে আছেন, আর তথাপি তার পরামর্শের কত অধিকই না প্রয়োজন ছিল। ঈশ্বর তাঁর দূরদর্শীতায় রাজার কাছে একটি সুযোগ আনয়ন করছিলেন, যেন তিনি অতীতের ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে পারেন, তিনি তার রাজ্য সুবিধাজনক স্থানে আনয়ন করতে পারেন। অরামীয় শত্রুগণ, তখন যদনের পূর্বে যে রাজ্য অধিকার করেছিল, তা ফিরিয়ে দিল। আরও একবার বিপথগামী ইস্রায়েলের পক্ষে ঈশ্বরের ক্ষমতা প্রকাশিত হল । PKBeng 217.2
মৃতপ্রায় ভাববাদী রাজাকে বললেন, “আপনি ধনুৰ্ব্বান লউন। যোয়াশ ধনুর্ব্বাণ নিলেন। অতঃপর ভাববাদী বললেন, “ধনুকের উপরে হাত রাখুন।” যোয়াশ “হাত রাখিলেন; পরে ইলীশায় রাজার হাতের উপরে আপন হাত রাখিলেন, আর বলিলেন, ‘পূর্বদিকের বাতায়ন খুলুন। ” অরামীয়দের অধিকার যদনের পরে নগরসমূহের দিকে । রাজা জাফরি কাটা জানালা খুললে, ইলীশায় তাকে বাণ নিক্ষেপ করতে বললেন । বাণ বেগে চললে, ভাববাদী বললেন, “ইহা সদাপ্রভুর বিজয় বাণ, অরামের বিরুদ্ধে বিজয় বাণ, কেননা আপনি অফেকে অরামীয়দিগকে আঘাত করিবেন, করিতে করিতে তাহাদিগকে নিহত করিবেন।” PKBeng 218.1
আর এখন ভাববাদী রাজার বিশ্বাসের পরীক্ষা করলেন, যোয়াশকে তীর ধনুক নিতে বলে, বললেন, “ভূমিতে আঘাত করুন।” রাজা তিনবার আঘাত করে ক্ষান্ত হলেন। ইলীশায় ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, “পাঁচ ছয়বার আঘাত করিতে হইত, করিলে অরামকে নিঃশেষ করণ পর্যন্ত আঘাত করিতেন, কিন্তু এখন অরামকে তিনবার মাত্র আঘাত করিবেন। ২রাজাবলি ১৩:১৫-১৯। PKBeng 218.2
এই শিক্ষাটি দায়িত্ব গ্রহণকারী প্রত্যেকের জন্য । যখন ঈশ্বর কোন একটি নির্দিষ্ট কাজের জন্য পথ খুলেছেন এবং কৃতকার্যতার নিশ্চয়তা প্রদান করেন, তখন কার্যসাধনের জন্য হাতিয়ার তার সর্বশক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিজ্ঞাত ফলাফল আনয়নের চেষ্টা করবে। যে পরিমাণ উদ্যোগ এবং ধৈর্যের সাথে কাজের অগ্রগতি হবে, সেই পরিমাণে সাফল্য প্রদান করা হবে। ঈশ্বর তাঁর লোকদের জন্য আশ্চর্য কার্য সাধন করতে পারেন, কেবলমাত্র যদি তারা তাদের অক্লান্ত কর্মশক্তি দ্বারা তাদের ভূমিকা পালন করে। তিনি তাঁর কাজের জন্য আত্মনিবেদিত লোকদেরকে আহ্বান করেন। নৈতিক সাহস, আত্মাগণের জন্য অটল প্রেম, এবং একটি উৎসাহ যা কখনও দুর্বল হয় না। এরূপ কার্যকারীগণ দুঃসাধ্য কোন কাজ, অতিশয় নিরাশার কোন প্রত্যাশা; খুঁজে পাবে না; তারা নির্ভীকভাবে কাজ করবে, যাবৎ না, প্রতীয়মান পরাজয় গৌরবময় বিজয়ে পরিণত হয়। কারাগারের প্রাচীর, সাক্ষ্যমরের গোঁজ বা খুঁটি, তাঁর রাজ্য নির্মাণ কল্পে ঈশ্বরের সাথে একসঙ্গে কাজ করতে তাদের উদ্দেশ্য হতে তাদের এক পাশে সরিয়ে দিতে পারবে না। PKBeng 218.3
যোয়াশকে পরামর্শ এবং উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমেই ইলীশায়ের কাজ শেষ হল । যার ওপরে পূর্ণরূপে এলিয়ের ওপরে ভর করে থাকা আত্মা পতিত হয়েছিল, তিনি শেষ পর্যন্ত বিশ্বস্ত ছিলেন। তিনি কখনও বিচলিত ইননি। তিনি কখনও সর্বশক্তিমানে তার বিশ্বাস হারাননি। সর্বদা, যখন মনে হয়েছে তার সামনে পথটি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গিয়েছে, তিনি বিশ্বাসে সামনে অগ্রসর হয়েছেন, আর ঈশ্বর তার নির্ভরশীলতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছেন এবং তার সামনে পথ খুলে দিয়েছেন । PKBeng 219.1
ইলীশায়কে অগ্নিময় রথে করে তার প্রভুর অনুসরণ করতে বলা হয়নি। সদাপ্রভু তাকে দীর্ঘস্থায়ী পীড়া দিয়েছিলেন। দীর্ঘকাল ব্যাপী মানবিক দুর্বলতা এবং কার্যভোগ ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার ওপরে তার বিশ্বাস দৃঢ় ছিল এবং তিনি লক্ষ্য করেছেন স্বর্গময় বার্তাবাহদেরকে সর্বদা শান্তি এবং সান্ত্বনাসহ তার চতুষ্পার্শ্বে রয়েছেন। দোথনের পর্বত চূড়ায় তিনি স্বর্গীয় বাহিনীকে দেখেছেন, ইস্রায়েলের অগ্নিময় রথ এবং অশ্বারোহিদের দেখেছেন, সুতরাং এখন তিনি সহানুভূতিশীল দূতগণের সান্নিধ্যে রয়েছেন, আর তাকে তুলে নেয়া হল। তার জীবন ব্যাপী তিনি দৃঢ় বিশ্বাসের অনুশীলন করেছেন, এবং তিনি যেমন ঈশ্বরের দূরদর্শীতার একটি জ্ঞানে এবং তাঁর করুণাপূর্ণ দয়ায় অগ্রসর হয়েছেন, তার ঈশ্বরে একটি স্থায়ী নির্ভরশীলতার মধ্যে বিশ্বাস পরিপক্ক হয়েছে, এবং যখন মৃত্যু তাকে হাতছানি দিয়ে ডেকেছিল তখন তিনি তার শ্রম হতে বিশ্রাম লাভের জন্য প্রস্তুত ছিলেন । PKBeng 219.2
“সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে বহুমূল্য তাঁহার সাধুগণের মৃত্যু।” গীতসংহিতা ১১৬:১৫। “ধার্মিক মরণ কালে আশ্রয় পায়।” হিতোপদেশ ১৪:৩২। গীতরচকের সাথে ইলীশায় বলেন, “ঈশ্বর পাতালের হাত হইতে আমার প্রাণ মুক্ত করিবেন: কেননা তিনি আমাকে গ্রহণ করিবেন।” গীতসংহিতা ৪৯:১৫। আর আনন্দের সাথে তিনি এই সাক্ষ্য দেন, “আমি জানি, আমার মুক্তিকর্তা জীবিত; তিনি শেষে ধূলির উপরে উঠিয়া দাঁড়াইবেন।” ইয়োব ১৯:২৫। “আমি ত ধার্মিকতায় তোমার মুখ দর্শন করিব, জাগিয়া তোমার মূর্তিতে তৃপ্ত হইব।” গীতসংহিতা ১৭:১৫ । PKBeng 220.1