২২—“সেই মহানগর, নীনবী”
বিভক্ত ইস্রায়েলের দিনগুলোতে প্রাচীন বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ একটি নগরী অরামিয়ের রাজধানী ছিল নীনবী। টাইগ্রীস নদীর উর্বরা তীরে স্থাপিত, বাবিলের উচ্চ দূর্গের পতনের কেবলই পরে, বহু শতাব্দির মধ্য দিয়ে উন্নতি লাভ করেছিল যে, পর্যন্ত না সেটি “ঈশ্বরের দৃষ্টিতে মহা নগরীতে” পরিণত হয় । যোনা ৩:৩ ৷ PKBeng 221.1
অস্থায়ী উন্নতির সময়ে নীনবী ছিল জঘন্য অপরাধ এবং দুষ্টতার একটি কেন্দ্র। অনুপ্রেরণার লেখনী এর এরূপ বর্ণনা দিয়েছে- “রক্তপাতী নগর,... মিথ্যা ও দৌরাত্বে পরিপূর্ণ।” রূপক ভাষায় ভাববাদী নহুম নীনবীর লোকদেরকে একটি নিষ্ঠুর, সর্বগ্রাসী সিংহের সাথে তুলনা করেছিলেন । তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, “কেননা তোমার হিংসা (দুষ্টতা) কাহার উপরে না অবিরত রহিয়াছে?” নহূম ৩:১, ১৯। PKBeng 221.2
তথাপি নীনবী সম্পূর্ণরূপে মন্দতার কাছে সমর্পিত হয়নি। যিনি “সমুদয় মনুষ্য সন্তানকে নিরীক্ষণ করেন” (গীতসংহিতা ৩৩:১৩), এবং “যাহার চক্ষু সর্বপ্রকার মণি দর্শন করে” (ইয়োব ২৮:১০) তিনি ঐ শহরে অনেককে লক্ষ্য করলেন যারা উত্তম এবং উন্নতর কিছুর জন্য হাত বাড়াচ্ছে, এবং তারা জীবন্ত মন্দকার্য পরিত্যাগ করে তাঁর আরাধনা করবে। PKBeng 221.3
এই কাজের জন্য মনোনীত হাতিয়ার ছিলেন অমিত্তয়ের পুত্র, যোনা ভাববাদী। তার কাছে সদাপ্রভুর বাক্য এসেছিল, “তুমি উঠ, নীনবীতে, সেই মহানগরে যাও, আর নগরের বিরুদ্ধে ঘোষণা কর, কেননা তাহাদের দুষ্টতা আমার সামনে উঠিয়াছে।” যোনা ১:১,২। PKBeng 221.4
ভাববাদী, আদেশের সমস্যা এবং দৃশ্যত সম্ভাব্যতা চিন্তা করে, আহ্বানের জ্ঞান সম্পর্কে প্রশ্ন তুলতে প্রলোভিত হলেন। একটি মানব দৃষ্টিভঙ্গি হতে মনে হল, ঐ আবর্তিত নগরীতে বার্তা ঘোষণার ফল যদি কিছুই না হয়! তিনি সেই মুহূর্তের জন্য ভুলে গেলেন যে, যে ঈশ্বরের সেবা তিনি করেছেন, তিনি হচ্ছেন, সর্বজ্ঞানী এবং সর্বশক্তিমান। তিনি ইতঃস্তত করলেন, এবং সন্দেহ করছিলেন, শয়তান তাকে নিরুৎসাহ দ্বারা বিগড়িয়ে দিল । ভাববাদী এক মহা ভয়ে আক্রান্ত হলেন এবং “তিনি তর্শীশে পালিয়ে যাইবার জন্য উঠিলেন।” তিনি যাকোতে গিয়ে দেখলেন, একটি জাহাজ ছেড়ে যাবার জন্য প্রস্তুত, “তখন জাহাজের ভাড়া দিয়া... নাবিকদের সহিত তর্শীশে যাইবার নিমিত্ত সেই জাহাজে প্রবেশ করিলেন।” ৩ পদ । PKBeng 222.1
যোনার ওপরে একটি ভারী দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল; তথাপি যিনি তাকে যেতে আদেশ করেছিলেন, তিনি দাসকে রক্ষা করতে এবং কৃতকার্যতা দান করতে সমর্থ। ভাববাদী যদি কোন প্রশ্ন না করতেন, তাহলে তিনি অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতা এড়িয়ে চলতে পারতেন, এবং প্রচুররূপে আশীর্বাদ প্রাপ্ত হতে পারতেন। তথাপি যোনার নিরুৎসাহের সময়ে সদাপ্রভু তাকে ত্যাগ করেননি। কয়েকটি পরীক্ষা এবং অত্যাশ্চর্য দূরদর্শীতার মধ্য দিয়ে, রক্ষা করার জন্য ঈশ্বর এবং তাঁর অসীম শক্তি প্রত্যাশা পুনর্জীবিত হল । PKBeng 222.2
যখন প্রথম তার কাছে আহ্বান এসেছিল, তখন যদি যোনা থেমে নীরবে চিন্তা করতেন, তখন তিনি জানতে পারতেন, তার ওপরে ন্যাস্ত দায়িত্ব এড়িয়ে চলা কতই না মূর্খতার প্রমাণ। কিন্তু তার এই পাগলামি চালিয়ে যাবার সুযোগ আর তাকে দেয়া যায় না। “কিন্তু সদাপ্রভু সমুদ্রে প্রচন্ড বায়ু পাঠাইয়া দিলেন, সমুদ্রে ভারী ঝড় উঠিল, এমন কি জাহাজ ভাঙ্গিয়া যাইবার উপক্রম হইল। তখন নাবিকেরা ভীত হইল, প্রত্যেক জন আপন আপন দেবতার কাছে কাঁদিতে লাগিল, আর ভার লাঘবের নিমিত্ত জাহাজের মাল সমুদ্রে ফেলিয়া দিল। কিন্তু যোনা জাহাজের খোলে নামিয়া ছিলেন; শয়ন করিয়া ঘোর নিদ্রায় মগ্ন ছিলেন।” ৪,৫ পদ । PKBeng 222.3
নাবিকেরা সাহায্যের জন্য তাদের পৌত্তলিক দেবতাদের কাছে কাকুতি-মিনতি করতে লাগল। জাহাজের অধ্যক্ষ, ভীষণ ভেঙ্গে পড়লেন, যোনাকে খুঁজে পেলেন এবং বললেন, “ওহে, তুমি যে ঘুমাইতেছ তোমার কি হইল? উঠ, তোমার ঈশ্বরকে ডাক; হয়ত ঈশ্বর আমাদের বিষয় চিন্তা করিবেন, ও আমরা বিনষ্ট হইব না।” ৬ পদ । PKBeng 223.1
কিন্তু যে ব্যক্তি তার কর্তব্য হতে সরে দাঁড়িয়েছিল, তার প্রার্থনায় কোন কাজ হল না। নাবিকেরা এই চিন্তা করল যে, ঝড়ের এই প্রচন্ডতা তাদের দেবতার ক্রোধ হেতুই সৃষ্টি হয়েছে, তাই তারা অবশেষে গুলিবাঁট করল । “তাহলে জানিতে পারিব,” তারা বলল, “কাহার দোষে আমাদিগের প্রতি এই অমঙ্গল ঘটিতেছে। পরে তাহারা গুলিবাঁট করিল, আর যোনার নামে গুলি উঠিল । তখন তাহারা তাহাকে বলিল, “বল দেখি, কাহার দোষে আমাদের প্রতি এই অমঙ্গল ঘটিতেছে? তোমার ব্যবসায় কি? কোথা হইতে আসিয়াছ? তুমি কোন্ দেশের লোক? কোন্ জাতীয়?” PKBeng 223.2
“তিনি তাহাদিগকে বলিলেন, ‘আমি ইব্রীয়, আমি সদাপ্রভুকে ভয় করি, তিনি স্বর্গের ঈশ্বর, তিনি সমুদ্র ও স্থল নির্মাণ করিয়াছেন।” PKBeng 223.3
“তখন সেই লোকেরা অতিশয় ভীত হইয়া তাহাকে বলিল, “তুমি এ কি কর্ম করিয়াছ? কেননা তিনি যে সদাপ্রভুর সম্মুখ হইতে পলাইতেছেন, ইহা তাহারা জ্ঞাত ছিল, কারণ তিনি তাহাদিগকে বলিয়াছিলেন। PKBeng 223.4
পরে তাহারা তাঁহাকে বলিল, আমরা তোমাকে কি করিলে সমুদ্র আমাদের প্রতি ক্ষান্ত হইতে পারে? কেননা সমুদ্র উত্তরোত্তর প্রচন্ড হইয়া উঠিতেছিল। তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, ‘আমাকে ধরিয়া সমুদ্রে ফেলিয়া দেও, তাহাতে সমুদ্র তোমাদের পক্ষে ক্ষান্ত হইবে; কেননা আমি জানি, আমারই দোষে তোমাদের উপরে এই ভারী ঝড় উপস্থিত হইয়াছে।” PKBeng 223.5
“তথাপি সেই লোকেরা জাহাজ ফিরাইয়া ডাঙ্গায় লইয়া যাইবার জন্য ঢেউ কাটিতে যত্ন করিল; কিন্তু পারিল না, কারণ সমুদ্র তাহাদের বিপরীতে উত্তরোত্তর প্রচন্ড হইয়া উঠিতেছিল। এই জন্য তাহারা সদাপ্রভুকে ডাকিতে লাগিল, আর বলিল, ‘বিনতি করি, *এই ব্যক্তির প্রাণের নিমিত্ত আমাদের বিনাশ না হউক, এবং আমাদের উপরে নির্দোষের রক্ত অর্পণ করিও না কেননা, হে সদাপ্রভু, তুমি আপন ইচ্ছামত কর্ম করিয়াছ। পরে তাহারা যোনাকে ধরিয়া সমুদ্রে ফেলিয়া দিল, তাহাতে সমুদ্র থামিল, আর ঝড় প্রচন্ড হইল না। আর সেই লোকেরা সদাপ্রভু হইতে অতিশয় ভীত হইল; আর তাহারা সদাপ্রভুর উদ্দেশে বলিদান করিল, এবং নানা মানত করিল । ” PKBeng 224.1
আর সদাপ্রভু যোনাকে গ্রাস করণার্থে একটা বৃহৎ মৎস্য নিরূপন করেছিলেন। সেই মৎস্যের পেটে যোনা তিনদিন ও তিনরাত যাপন করিলেন । PKBeng 224.2
“তখন যোনা ঐ মৎস্যের পেটে থাকিয়া আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর নিকট প্রার্থনা করিলেন । তিনি বলিলেন, PKBeng 224.3
“আমি সংকট প্রযুক্ত সদাপ্রভুকে ডাকিলাম,
আর তিনি আমাকে উত্তর দিলেন;
আমি পাতালের উদর হইতে আর্তনাদ করিলাম,
তুমি আমার রব শ্রবণ করিলে ।”
“তুমি আমাকে অগাধ জলে
সমুদ্র গর্ভে নিক্ষেপ করিলে,
আর স্রোত আমাকে বেষ্টন করিল,
তোমার সকল ঢেউ; তোমার সকল তরঙ্গ,
আমার উপর দিয়া গেল ।”PKBeng 224.4
“আমি বলিলাম, আমি তোমার নয়ন গোচর হইতে দূরীভূত,
তথাপি পুনঃরায় তোমার পবিত্র মন্দিরের দিকে দৃষ্টিপাত করিলাম
জলরাজি আমাকে ঘিরিল,
প্রাণ পর্যন্ত উঠিল ।”
“জলধি আমাকে বেষ্টন করিল,
মৃণাল আমার মস্তকে জড়াইল
আমি পর্বতগণের মূল পর্যন্ত নিমিয়া গিয়াছিলাম;
আমার পশ্চাতে পৃথিবীর অর্গল সকল চিরতরে বদ্ধ হইল।”
“তথাপি হে আমার ঈশ্বর সদাপ্রভু,
তুমি আমার প্রাণকে কূপ হইতে উঠাইলে ।
আমার মধ্যে প্রাণ অবসন্ন হইলে
আমি সদাপ্রভুকে স্মরণ করিলাম,
আর আমার প্রার্থনা তোমার নিকট
তোমার পবিত্র মন্দিরে, উপস্থিত হইল।”
“যাহারা অলীক নিঃসার বস্তু মানে
তাহারা নিজ দয়া নিধিকে পরিত্যাগ করে,
কিন্তু তোমার উদ্দেশে স্তব ধ্বনি সহ
বলিদান করিব;
আমি যে মানত করিয়াছি, তাহা পূর্ণ করিব;
পরিত্রাণ সদাপ্রভুর কাছে।”PKBeng 225.1
৭-২:৯ পদ ।
অবশেষে যোনা জানতে পারলেন যে, “পরিত্রাণ সদাপ্রভুরই কাছে।” গীতসংহিতা ৩:৮। ঈশ্বরের ত্রাণকারী অনুগ্রহের অনুশোচনা এবং পরিচিতির সঙ্গে মুক্তি এল, যোনা মহা অতল গভীরতারূপ সংকট থেকে মুক্ত হয়ে শুষ্ক ভূমিতে নিক্ষিপ্ত হলেন । PKBeng 225.2
আরও একবার ঈশ্বরের দাসকে, নীনবীকে সতর্ক করে দেবার জন্য আহ্বান করা হল । “পরে দ্বিতীয়বার সদাপ্রভুর বাক্য যোনার নিকট উপস্থিত হইল; তিনি বলিলেন, তুমি উঠ, নীনবীতে, সেই মহানগরে যাও, আর আমি তোমাকে যা ঘোষণা করিতে বলি, তাহা সেই নগরের উদ্দেশে ঘোষণা কর। এই বার তিনি প্রশ্ন করেন নাই বা সন্দেহ করেন নাই কিন্তু ইতস্ততঃ না করিয়া আজ্ঞাবহ হইলেন, এবং উঠিয়া সদাপ্রভুর বাক্যানুসারে নীনবীতে গেলেন।” যোনা ৩:১-৩ । PKBeng 226.1
আর যোনা নগরে প্রবেশ করে, তৎক্ষণাৎ “ঘোষণা করিয়া বলিলেন, ‘আর চল্লিশ দিন গত হইলে নীনবী উৎপাটিত হইবে।” ৪ পদ। তিনি পথে পথে গিয়ে সতর্ক করে দিতে লাগলেন। PKBeng 226.2
বার্তা বিফলে যায়নি। যে উচ্চরব ঈশ্বরবিহীন নগরের মধ্য দিয়ে উচ্চারিত হয়েছিল, তা উর্ধ্ব হতে ওষ্ঠে অবস্থান্তরিত হয়েছিল, যে পর্যন্ত না সমস্ত অধিবাসীগণ বিস্ময়কর বিজ্ঞপ্তি শুনতে পেয়েছিল। ঈশ্বরের আত্মা গৃহের প্রতিটি অন্তঃকরণে অনুপ্রাণিত করেছিল এবং বিশাল জনতাকে তাদের পাপ হেতু কম্পান্বিত করে তুলেছিল এবং গভীর নম্রতায় অনুতপ্ত করেছিল। PKBeng 226.3
“তখন নীনবীর লোকেরা ঈশ্বরকে বিশ্বাস করিল, তাহারা উপবাস ঘোষণা করিল, এবং মহান হইতে ক্ষুদ্র পর্যন্ত সকলে চট পরিধান করিল। আর সেই বার্তা নীনবী রাজের নিকট পৌছাইলে তিনি আপন সিংহাসন হইতে উঠিলেন, গাত্রের বস্ত্র রাখিয়া দিলেন, এবং চট পরিধান করিয়া ভষ্মে বসিলেন। আর নীনবীতে রাজার ও তাঁহার অধ্যক্ষগণের আদেশে এই কথা উচ্চৈঃস্বরে প্রচার করিলেন, মনুষ্য ও গোমেষাদি পশু কেহ কিছু আস্বাদন না করুক, ভোজন কি জল গ্রহণ না করুক; কিন্তু মনুষ্য ও পশু চট পরিধান করিয়া যথাশক্তি ঈশ্বরকে ডাকুক, আর প্রত্যেকজন আপন আপন কুপথ ও আপন আপন হস্তস্থিত দৌরাত্ব হইতে ফিরুক। হয়ত, ঈশ্বর ক্ষান্ত হইতে, অনুশোচনা করিবেন, ও আপন প্রজ্জ্বলিত ক্রোধ হইতে নিবৃত্ত হইবেন, তাহাতে আমরা বিনষ্ট হইব না।” PKBeng 226.4
রাজা এবং মহান ব্যক্তিগণ, উচ্চ এবং ক্ষুদ্র লোকদের সাথে “যোনার প্রচারে মন ফিরাইয়ছিল” (মথি ১২:১৪) এবং স্বর্গের ঈশ্বরের কাছে ক্রন্দনের সামিল হয়েছিল, তাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ প্রদান দত্ত হল । “তাহারা যে আপন আপন কুপথ হইতে বিমুখ হইল তিনি তাহা দেখিলেন, আর তাহাদের যে অমঙ্গল করিবেন বলিয়াছিলেন তদ্বিষয়ে অনুশোচনা করিলেন।” যোনা ৩:১০। তাদের বিনাশ প্রতিহত করা হল। ইস্রায়েলের ঈশ্বর পৌত্তলিক বিশ্বে উন্নীত ও সমাদৃত হলেন, এবং তাঁর ব্যবস্থা পুর্বাবস্থায় ফিরে এল। বহু বছর পরে নীনবী, ঈশ্বরকে ভুলে যাবার এবং সদম্ভ গর্বের মাধ্যমে চতুষ্পার্শ্বস্থ জাতিগণের কাছে যুদ্ধের শিকার হয়ে পড়ল । [অশূরীয়দের পতনের একটি বিবরণের জন্য দেখুন ৩০ অধ্যায়।] PKBeng 227.1
নগরটির দুষ্টতা সত্ত্বেও, যোনা নগরটি রক্ষার পেছনে, উদ্দেশ্য জানতে পারলেন, নগরটির লোকেরা চট পরিধান করল, গায়ে ভষ্ম মাখল, অনুতপ্ত হল, তখন ঈশ্বরের আশ্চর্য অনুগ্রহের জন্য প্রথমতঃ তাঁর আনন্দ করা উচিত ছিল, কিন্তু তা না করে তিনি মনে মনে এই চিন্তা স্থান দিলেন, সম্ভবত তিনি একজন ভাক্ত ভাববাদী। তার সুখ্যাতির কারণে ঈর্ষান্বিত হয়ে দুর্ভাগা নগরটির মধ্যে আত্মাগণের অসীম, মহামূল্যের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেললেন । অনুতপ্ত নীনবীর প্রতি ঈশ্বর কর্তৃক প্রদর্শিত করুণা হেতু “যোনা মহা বিরক্ত ও ক্রুদ্ধ হইলেন।” “আমি স্বদেশে থাকিতে কি ইহাই বলি নাই? সেই জন্য ত্বরা করিয়া তর্শীশে পালাইতে গিয়াছিলাম; কেননা আমি জানিতাম, তুমি কৃপাময় ও স্নেহশীল ঈশ্বর, ক্রোধে ধীর ও দয়াতে মহান, এবং অমঙ্গলের বিষয়ে অনুশোচনাকারী।” যোনা ৪:১,২। PKBeng 227.2
তিনি আরও একবার তার ঝোঁকের বশবর্তী হলেন, প্রশ্ন করলেন, সন্দেহ করলেন, এবং আরও একবার নিরুৎসাহের মধ্যে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হলেন। অপরের স্বার্থের দৃষ্টিহারা হলেন, তিনি তার মৃত্যু কামনা করলেন, নগরটি রক্ষা পাক তা তিনি দেখতে চাইলেন না, তার নিরুৎসাহের মধ্যে বললেন, “অতএব এখন, হে সদাপ্রভু, বিনতী করি, আমা হইতে আমার প্রাণ হরণ কর, কেননা আমার জীবন অপেক্ষা মরণ ভাল।” PKBeng 228.1
“তুমি ক্রোধ করিয়া কি ভাল করিলে?” সদাপ্রভু বললেন। “তখন যোনা নগরের বাহিরে গিয়া নগরের পূর্বদিকে বসিয়া রহিলেন; সেখানে তিনি আপনার জন্য এক কুটির নির্মাণ করিয়া তাহার নীচে ছায়াতে বসিলেন, নগরের কি দশা হয় দেখিবার নিমিত্ত অপেক্ষা করিতে লাগিলেন। তখন সদাপ্রভু ঈশ্বর এক এরও গাছ নিরূপণ করিলেন; আর সেই গাছটি বাড়িয়া যোনার উপরে আনিলেন; যেন তার মস্তকের উপরে ছায়া হয়; যেন তাহার দুর্মতি হইতে তাহাকে উদ্ধার করা যায়। আর যোনা সেই এরও গাছটির জন্য বড় আহ্লাদিত হইলেন।” যোনা ৪:৩-৬। PKBeng 228.2
অতঃপর সদাপ্রভু যোনাকে দৃশ্যমান বস্তু থেকে একটি শিক্ষা দিলেন। “পরদিন অরুণোদয়কালে ঈশ্বর এক কীট নিরূপণ করিলেন, সেই এরন্ড গাছটিকে দংশন করিলে তাহা শুষ্ক হইয়া পড়িল। পরে যখন সূর্য উঠিল ঈশ্বর উষ্ণ পূর্বীয় বায়ু নিরূপন করিলেন, তাহাতে যোনার মস্তকে এমন রৌদ্র লাগিল যে, তিনি পরিক্লান্ত হইয়া আপন মৃত্যু প্রার্থনা করিয়া বলিলেন, ‘আমার জীবন অপেক্ষা মরণ ভাল ।” PKBeng 228.3
ঈশ্বর পুনরায় তার ভাববাদীকে বললেন, “তুমি এরণ্ড গাছটির জন্য ক্রোধ করিয়া কি ভাল করিলে?” তাতে তিনি বললেন, “মৃত্যু পর্যন্ত আমার ক্রোধ করাই ভাল ।” PKBeng 228.4
“সদাপ্রভু বলিলেন, ‘তুমি এই এরও গাছটির নিমিত্ত কোন শ্ৰম করনি, এবং বাড়াওনি; ইহা এক রাতে উৎপন্ন ও এক রাতে উচ্ছিন্ন হইল, তথাপি তুমি ইহার প্রতি দয়ার্দ্র হইয়াছ। তবে আমি কি নীনবীর প্রতি, ঐ মহানগরের প্রতি দয়ার্দ্র হইব না? তথায় এখন এক লক্ষ বিংশতি সহস্রের অধিক মনুষ্য আছে, যাহারা দক্ষিণ হস্ত হইতে বাম হস্তের প্রভেদ জানে না; আর অনেক পশুও আছে।” ৭-১১ পদ । PKBeng 229.1
কিংকর্তব্যবিমূঢ়, হতজ্ঞান, এবং নীনবী রক্ষায় ঈশ্বরের উদ্দেশ্য বুঝতে অক্ষম যোনা, তথাপি, ঐ বৃহৎ নগরটিকে সতর্ক করে দেবার জন্য আদেশ পূর্ণ করলেন আর যদিওবা ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ হয়নি, তথাপি সতর্ক করে দেবার বার্তা ঈশ্বর হতে এসেছিল। আর ঈশ্বরের পরিকল্পিত উদ্দেশ্য পূর্ণ হল। যারা দীর্ঘকাল যাবৎ “অন্ধকারে ও মৃত্যুচ্ছায়ায় বসিয়াছিল, দুঃখ পাশে ও লৌহ শৃঙ্খলে বদ্ধ ছিল,” “সঙ্কটে তাহারা সদাপ্রভুর কাছে ক্রন্দন করিল,” আর “তিনি তাহাদিগকে কষ্ট হইতে ত্রাণ করিলেন । তিনি অন্ধকার ও মৃত্যুচ্ছায়া হইতে তাহাদিগকে বাহির করিয়া আনিলেন, তাহাদের বন্ধন সকল ছেদন করিলেন।” “তিনি আপনার বাক্য পাঠাইয়া তাহাদিগকে সুস্থ করেন, তাহাদের খাত হইতে তাহাদিগকে রক্ষা করেন।” গীতসংহিতা ১০৭:১০, ১৩, ১৪, ২০ । PKBeng 229.2
খ্রীষ্ট তাঁর পার্থিব সেবাকাজের সময়ে নীনবীতে যোনার প্রচারের দ্বারা সাধিত উত্তম ফলাফলের প্রতি নির্দেশ করেছিলেন এবং পৌত্তলিক কেন্দ্রের অধিবাসীদেরকে তাঁর সময়ে ঈশ্বরের মুখে স্বীকারকারী লোকদের সাথে তুলনা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “নীনবীর লোকেরা বিচারে এই কালের লোকদের সহিত দাঁড়াইয়া উহাদিগকে দোষী করিবে, কেননা তাহারা যোনার প্রচারে মন ফিরাইয়াছিল, আর দেখ, যোনা হইতে মহান, এক ব্যক্তি এইখানে আছেন।” মথি ১২:৪০, ৪১। ব্যস্ত পৃথিবীর মধ্যে, ব্যবসার হৈচৈ এবং ক্রয়- বিক্রয়ের বাক-বিতণ্ডতা দ্বারা পূর্ণ, যেখানে লোকে স্বার্থ হাসিলের জন্য সমস্ত কিছুই করছিল, খ্রীষ্ট এলেন; এবং হট্টগোলের ঊর্ধে তাঁর কণ্ঠস্বর, ঈশ্বরের ভেরী নিনাদ তুল্য শোনা গেল:- “বস্তুতঃ মনুষ্য যদি সমুদয় জগ লাভ করিয়া আপন প্রাণ খোয়ায়, তবে তাহার কি লাভ হইবে? কিম্বা মনুষ্য আপন প্রাণের পরিবর্তে কি দিতে পারে?” মার্ক ৮:৩৬, ৩৭। PKBeng 229.3
যোনার প্রচার যেমন নীনবীর লোকদের কাছে একটি চিহ্ন ছিল, তদ্রূপ খ্রীষ্টের প্রচারও তাঁর সময়ে একটি চিহ্ন ছিল। কিন্তু বিশ্বের গৃহীত হওয়ার মধ্যে কি-ইনা একটি ব্যবধান ছিল! তথাপি উদাসীনতা এবং নিদারুণ ঘৃণার মধ্যে ত্রাণকর্তা শ্রম দিয়ে গেলেন, যে পর্যন্ত না তিনি তাঁর কার্যোদ্দেশ্য সম্পন্ন করলেন । PKBeng 230.1
ঈশ্বরের অদ্যকার বার্তাবাহকদের জন্য শিক্ষা: যখন জাতিগণের নগরসমূহের সত্য ঈশ্বরের জ্ঞানাবলী ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রকৃত পক্ষে একটি জ্ঞান লাভের আবশ্যক, যেমন পুরাতন নীনবীবাসীর আবশ্যক ছিল । খ্রীষ্টের রাজদূতগণ মনুষ্যদেরকে উন্নতর একটি বিশ্বের দিকে নির্দেশ করে দেবে, যার বিষয় তারা দৃষ্টিচ্যুত হয়েছে। পবিত্র শাস্ত্রের শিক্ষা অনুসারে, কেবলমাত্র যে নগরটি টিকে থাকবে যার গাঁথক নির্মাতা স্বয়ং ঈশ্বর । বিশ্বাস নেত্রে মনুষ্য স্বর্গের দ্বার প্রান্ত দেখতে পারে যা ঈশ্বরের জীবন্ত প্রতাপে দীপ্তিময় হয়ে থাকে। প্রভু যীশু তাঁর পরিচর্যাকারী ভৃত্যগণের মাধ্যমে মনুষ্যদেরকে আহ্বান করছেন যেন, পবিত্র ইচ্ছা নিয়ে প্রাণপণ চেষ্টা করে, যেন তারা অমর অধিকার লাভ করতে পারে। তিনি তাদের সবিনয় অনুরোধ করছেন যেন তারা ঈশ্বরের সিংহাসনের পাশে ধন সঞ্চিত রাখে। PKBeng 230.2
নগরসমূহের অধিবাসীদের ওপরে দ্রুত এবং নিশ্চিতরূপে একটি সার্বভৌম অপরাধ নেমে আসছে কেননা নিশ্চিত এবং পরিকল্পিত স্থায়ী দুষ্টতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিরাজিত ভ্রষ্টতা মানব লেখনীর ক্ষমতা দ্বারা বর্ণনা করা অসম্ভব। প্রতিদিন নিত্য নূতন যুদ্ধ, বিবাদ, ঘুষ, এবং প্রতারণার খবর আসছে: প্রতিদিন বিদ্রোহ এবং যথেচ্ছাচারিতা হৃদ-পীড়াদায়ক ঘটনা, মানব-দুঃখ কষ্টের প্রতি ঔদাসীন্য, মানব জীবনের বর্বরোচিত, দানবতুল্য বিনাশের ঘটনা ঘটছে। প্রতিদিন উন্মত্ততা, নরহত্যা, এবং আত্মহত্যা বৃদ্ধি লাভের খবর আসছে। PKBeng 230.3
যুগ যুগ ব্যাপী শয়তান যিহোবার হিতকর পরিকল্পনার বিষয়ে অবিদিত রাখবার চেষ্টা করেছে। সে তাদের দৃষ্টিপট থেকে ঈশ্বরের ব্যবস্থার মহৎ বিষয় সকল হতে অর্থাৎ ন্যায় বিচারের নীতিমালা, দয়া, প্রেম হতে দূরে সরিয়ে রাখবার চেষ্টা করেছে। মনুষ্য, যুগের আশ্চর্য উন্নতি এবং জ্ঞানের বিষয় গর্ব করে, যার মধ্যে আমরা এখন বসবাস করছি; কিন্তু ঈশ্বর দেখছেন পৃথিবী পাপ এবং তীব্র বিদ্রোহ দ্বারা পরিপূর্ণ। মনুষ্য ঘোষণা করে যে, ঈশ্বরের ব্যবস্থা বাতিল ঘোষিত হয়েছে, বাইবেল আর প্রকৃত এবং খাঁটি নহে; এবং ফলে, মন্দতার জোয়ার যা নোহ এবং ভ্রষ্ট ইস্রায়েলের সময় হতে দৃষ্ট হয়নি, যা পৃথিবীর উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। আত্মার মহত্ব, নম্রতা, দয়া, নিষিদ্ধ বস্তু সমূহের জন্য লালসা চরিতার্থ করার জন্য বিনিময় হয়েছে। লাভের খাতিরে সম্পাদিত জঘন্য অপরাধের কালো তালিকা, রক্ত শীতল করতে এবং আত্মাকে আতঙ্কিত করতে যথেষ্ট । PKBeng 231.1
আমাদের ঈশ্বর করুণাময় ঈশ্বর। তিনি দীর্ঘ সহিষ্ণুতা এবং নম্র সমবেদনায় তাঁর ব্যবস্থা লঙ্ঘনকারীর সাথে আচরণ করেন। আর তথাপি আমাদের এই সময়ে যখন নর-নারীগণের পবিত্র লেখনীর মধ্যে প্রকাশিত ঐশ্বরিক ব্যবস্থার সাথে পরিচিত হবার অনেক যোগাযোগ রয়েছে, তখন, নিখিল বিশ্বের শাসনকর্তা কোন দুষ্ট নগরীর সাথে পরিতৃপ্ত হওন দেখতে পারেন না, যেখানে প্রচন্ডতা এবং মহা অপরাধ বিরাজ করে। যার অবাধ্যতায় নাছোড়বান্দা, তাদের জন্য ঈশ্বরের ধৈর্য দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। PKBeng 231.2
একটি পতিত বিশ্বের অধিবাসীদের সাথে মহান, শাসনকর্তার আচরণের মধ্যে হঠাৎ এবং অপ্রত্যাশিত পরিবর্তনে মানুষের কি অবাক হওয়া উচিত? যখন আজ্ঞা লঙ্ঘন এবং ক্রমবর্ধনশীল অপরাধের শাস্তি হয়, তখন কি তাদের অবাক হওয়া উচিত? যারা প্রতারণা এবং ধূর্ততার মাধ্যমে অন্যায় লাভ করে তাদের ওপরে যে ঈশ্বর মৃত্যু আনয়ন করেন, তন্নিমিত্ত কি তারা অবাক হবে? এতদ্সত্ত্বেও, কথা হল এই যে, ঈশ্বরের করণীয় সম্পর্কে বাড়তি আলো তাদের চলার পথকে আলোকিত করছে, অনেকে যিহোবার শাসন উপলব্ধি করতে অস্বীকার করছে, এবং স্বর্গের সরকারের বিরুদ্ধে সকল বিদ্রোহের মূল হোতা এবং উদ্যোক্তার কালো পতাকার নীচে থাকতে মনোনয়ন করেছে। PKBeng 231.3
ঈশ্বরের মহা ধৈর্য এতই মহৎ যে, যখন আমরা অবিরত তাঁর পবিত্র আদেশমালার অবমাননার কথা চিন্তা করি, তখন অবাক হই। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর তাঁর নিজের গুণাবলীর ওপরে একটি ধারণকারী ক্ষমতা বিস্তার করছেন। কিন্তু তিনি অবশ্যই দুষ্টদেরকে শাস্তি প্রদান করবেন, যারা অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে দশ আজ্ঞার প্রতি প্রকাশ্য বিরোধিতা করে। PKBeng 232.1
ঈশ্বর মনুষ্যকে কিছুকাল সুযোগ দেন; কিন্তু একটি নির্দ্ধারিত সময় সীমার পরে ঐশ্বরিক ধৈর্য শেষ হয়ে যায়, এবং ঈশ্বরের নিশ্চিত বিচার কার্য সাধিত হয়। সদাপ্রভু, মনুষ্য এবং নগরসমূহের সাথে ধৈর্য ধরেন, ঐশ্বরিক ক্রোধ হতে রক্ষার জন্য তিনি করুণাপূর্ণভাবে সতর্ক করে দিচ্ছেন; কিন্তু একটি সময় আসবে যখন অনুগ্রহ লাভ করার অনুরোধ আর শোনা যাবে না, এবং বিদ্রোহী শক্তি যা অবিরত সত্যের আলো প্রত্যাখ্যান করছে, তা মুছে ফেলা হবে । PKBeng 232.2
সময় দ্বারে উপস্থিত, যখন পৃথিবীতে এমন দুঃখ নেমে আসবে যা কোন মানব-প্রস্তুত আরোগ্য সাধক ঔষধ উপশম দান করতে পারবে না। ঈশ্বরের আত্মাকে উঠিয়ে নেয়া হচ্ছে। সমুদ্র ও স্থল দ্বারা ধ্বংস এবং দুর্যোগ একের পর এক দ্রুত সাধিত হচ্ছে। কতবারই না আমরা ভূমিকম্প এবং ঝড়, অগ্নি এবং বন্যা দ্বারা ধ্বংস সাধন জীবন এবং সম্পদের মহা ক্ষতিসাধনের কথা শুনে থাকি! প্রকৃত পক্ষে এসকল দুর্যোগ প্রকৃতির বিশৃঙ্খল, অশুভ শক্তি সম্পূর্ণরূপে মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে, কিন্তু এই সকলের মধ্যে, আমরা ঈশ্বরের উদ্দেশ্য পাঠ করতে পারি। ঐ সকল কর্তৃত্বের মধ্যে যদ্বারা তিনি নর-নারীদেরকে তাদের মধ্যে একটি বিপদ বোধ সৃষ্টি করতে চান। PKBeng 232.3
বৃহৎ নগরীসমূহের মধ্যে ঈশ্বরের বার্তাবাহকের, দুষ্টতা, অন্যায় বিচার, নৈতিক বিচ্যুতির কারণে নিরুৎসাহিত হবে না, কেননা, পরিত্রাণের সুখবর ঘোষণা করার প্রচেষ্টার মধ্যে এই সকলের সম্মুখীন হতেই হবে। সদাপ্রভু ঐরূপ প্রত্যেক কার্যকারীকে একই বার্তা দ্বারা উৎসাহিত করবেন যা পাপপূর্ণ করিন্থে পৌলকে দত্ত হয়েছিল; “ভয় করিও না, বরং কথা বল, নীরব থাকিও না; কারণ আমি তোমার সঙ্গে সঙ্গে আছি, তোমার হিংসা করণার্থে কেহই তোমাকে আক্রমণ করিবে না; কেননা এই নগরে আমার অনেক প্রজা আছে।” প্রেরিত ১৮:৯, ১০। যারা আত্মালাভ কার্যে নিয়োজিত, তাদেরকে স্মরণে রাখতে হবে যে, অনেকে রয়েছে যারা তাঁর বাক্যে ঈশ্বরের পরামর্শে কর্ণপাত করবে না, সমুদয় পৃথিবী জ্যোতি এবং সত্য হতে একজন ধৈর্যশীল, সহনশীল ত্রাণকর্তার নিমন্ত্রণ হতে দূরে সরে যাবে না। প্রতিটি নগরে, প্রচণ্ডতা এবং মহা অপরাধে পরিপূর্ণ, সেখানে অনেকে রয়েছে যারা উপযুক্ত শিক্ষালাভের সাধ্যকে যীশুর অনুগামী হতে পারে। এরূপে সহস্র সহস্র লোকদের কাছে পৌঁছানো যেতে পারে এবং তারা খ্রীষ্টকে ব্যক্তিগত ত্রাণকর্তাকে লাভ করতে পারে। PKBeng 233.1
অদ্য পৃথিবীর অধিবাসীদের জন্য ঈশ্বরের বার্তা এই, “এই জন্য তোমরাও প্রস্তুত থাক, কেননা যে দন্ড তোমরা মনে করিবে না, সেই দন্ডে মনুষ্যপুত্র আসিবেন।” মথি ২৪:৪৪। সমাজে যে অবস্থা বিরাজ করছে, এবং বিশেষ করে দেশের বড় বড় নগরে, বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করছে যে, ঈশ্বরের বিচার সময় উপস্থিত, এবং পার্থিব সমস্ত কিছুর শেষ সন্নিকট। আমরা যুগের সংকটের দ্বার প্রান্তে দাঁড়িয়ে রয়েছি। অতি সত্ত্বর ঈশ্বরের বিচার একটির পর একটি এসে পড়বে অগ্নি এবং প্লাবন এবং ভূমিকম্প, যুদ্ধ এবং রক্তপাতের মাধ্যমে। এই সময়ে আমরা বড় বড় নিশ্চিত ঘটনাবলি দ্বারা অবাক হব না; কেননা অনুগ্রহের দূত অননুতাপীদের আর আশ্রয় দিতে পারেন না । “কেননা দেখ, সদাপ্রভু আপন স্থান হইতে নির্গমন করিতেছেন পৃথিবী নিবাসীদের অপরাধের প্রতিফল দিবার নিমিত্ত; পৃথিবী আপনার [উপরে পাতিত] রক্ত প্রকাশ করিবে আপনার নিহতদের আর আচ্ছাদিত রাখিবে না।” যিশাইয় ২৬:২১। ঈশ্বরের ক্রোধের ঝটিকা বৃদ্ধি পাচ্ছে; এবং যারা অনুগ্রহের আহ্বানে সাড়া প্রদান করবে কেবলমাত্র তারাই টিকে থাকবে, যেমন যোনার প্রচারে মানবীয় অধিবাসীরা ছিল, এবং স্বর্গীয় শাসনকর্তার ব্যবস্থার প্রতি আজ্ঞাবহতার মাধ্যমে পবিত্রীকৃত হবে। কেবলমাত্র ধার্মিকগণ খ্রীষ্টের সাথে ঈশ্বরে লুকিয়ে থাকবে যে পর্যন্ত না উসন্নতা দূরীভূত হয় । আত্মাগণের ভাষা এরূপ হোক : PKBeng 233.2
“নাহি মম আর আশ্রয়
দিলাম তোমায় মনঃপ্রাণ,
ছেড়ো নাকো দয়াময়,
দুঃসময়ে কদাচন ।
লুকাও আমায় ত্ৰাতা হে,
যাব ঝড় না চলে যায়,
তোমা বিনা কেমনে
বাঁচি আমি অসহায় !”PKBeng 234.1